ফল, দেশি-বিদেশী, জানা-অজানা কিছু ফল ও গুনাগুন । (ছবি ব্লগ) পর্বঃ-৩
লিখেছেন লিখেছেন মরহুম সাদেক ২৬ আগস্ট, ২০১৩, ০৫:০০:১৪ বিকাল
পূর্ব প্রকাশের পর
সতর্কতা : ফরমালিন যুক্ত ফলমূলে বাজার এখন সয়লাব। সুতরাং এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকা উচিৎ।
ড্রাগন ফলঃ
স্ট্রবেরীর পরে বাংলাদেশে যে বিদেশী ফল স্থান পেয়েছে সেটি হলো ড্রাগন ফ্রুট। চায়নায় এটি ফায়ার ড্রাগন ফ্রুট, ভিয়েতনামে থানহ্ লং ( সবুজ ড্রাগন), মালেয়শিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় ক্রিস্টাল ড্রাগন নামে পরিচিত। ড্রাগন ফ্রুট পিথায়া, স্ট্রবেরী পিয়ার নামেও পরিচিত।
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ড্রাগন ফ্রুট সেন্ট্রাল আমরেকিাতে ও বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে মালেশিয়াতে প্রবর্তিত হয়| প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বে ফরাসিদের মাধ্যমে ভিয়েতনামে ড্রাগন ফ্রুটের চাষ শুরু হয়| এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডে ড্রাগন ফ্রুট বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়| বাংলাদেশে ২০০৭ সালে প্রথম ড্রাগন ফ্রুট প্রবর্তন করে বাংলাদেশ কৃষি বাউ জামপ্লাজম সেন্টার
ড্রাগন ফ্রুটের পুষ্টিগুণ:
১. রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
২. ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
৩. রুচি বৃদ্ধি করে।
৪. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
৫. চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে ।
৬. ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৭. ত্বকের জন্য উপকারী।
৮. এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
৯. হজমে সাহায্য করে।
১০. কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে।
১১. দাঁত ও হাঁড় জোরালো করে।
১২. ড্রাগন ফ্রুটের এত গুণাগুণ যে বলে শেষ করা যাবেনা। আরও বিস্তারিত জানতে Click this link
-------------------------------------------------
পেঁপেঃ
পেঁপের আরেক নাম পাওয়ার ফ্রুট। কারণ, এতে রয়েছে অনেক রোগের নিরাময়ক্ষমতা। এর পেপেইন নামের উপাদান আমিষকে হজম করে সহজেই এবং পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করে। ওজন কমাতেও বেশ সহায়ক। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘ই’, ক্যারোটিনয়েড, লুটিনও লাইকোপিন আছে পেঁপেতে।
১৫০ গ্রামের ছোট একটি পেঁপের ফালিতে তিন হাজার মাইক্রোগ্রাম লাইকোপিন থাকে। গবেষকদের মতে,
লাইকোপিন ক্যানসার প্রতিরোধী। পুষ্টি বিবেচনায় পেঁপে অনেক ফলের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। কমলার চেয়ে পেঁপেতে ৩৩ শতাংশ বেশি ভিটামিন ‘সি’ এবং ৫০ শতাংশ বেশি পটাশিয়াম রয়েছে।
# আপেলের চেয়ে পেঁপেতে ১৩ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ এবং দ্বিগুণ পরিমাণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান।
#আপেল ও কমলার চেয়ে পেঁপেতে ভিটামিন ‘ই’-এর
পরিমাণও চার গুণ বেশি।
#১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে পানি ৯০গ্রাম, প্রোটিন শূন্য দশমিক ৫ গ্রাম, ফ্যাট শূন্য দশমিক১গ্রাম,ক্যালসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২৩০ মিলিগ্রাম এবং বিটাক্যারোটিন, রিবোফ্লাবিন, নিয়াসিন, থায়ামিন, সোডিয়াম পভৃতি উপাদান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে। পাকা পেঁপে কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে সাহায্য করে। প্রচুর আঁশ ও
ক্যারোটিন থাকায় এটি অন্ত্রের ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়। পেঁপে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকিকমায়।
প্রতিদিন দুই কাপ পেঁপে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
-------------------------------------------------
স্ট্রবেরিঃ
অনেকে হয়তো ভাবছেন দেশীয় এত ফল থাকতে এই স্ট্রবেরির গুনাগুন কেন? এই স্ট্রবেরি ফলটি বিদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও হেলদি ফল|কারণ এই ফলটি নি:সন্দেহে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে অনেক ভালো| তাছাড়া অনেক খাবারেই এটি ব্যবহৃত হয়|
দেশে এখন স্ট্রবেরির চাষ হচ্ছে| তাই এই বসন্তে এটি প্রায় সব জায়গায় আমাদের দেশে এখন পাওয়া যাচ্ছে|অনেকে হয়তো জানেন না এর গুনাগুন কত বা এই ফলটি যে কত পুষ্টি সমৃদ্ধ|
এই ফলে প্রচুর স্বাস্থ্যকর phyto-nutrients, minerals ও vitamins আছে, যা স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যে খুবই দরকারী|
এতে chemical compound– phenol আছে| Anthocyanin নামক একটি phenol এতে থাকার জন্যে এটি দেখতে টকটকে, সুন্দর লাল দেখায়| তাছাড়া আরো অনেক এন্টি-অক্সিডেন্ট এতে আছে, যেমন: ellagic acid, -benzoic acids, Hydroxy-cinnamic acids, Tannins, Stilbenes Flavonols, anthocyanins, terpenoids, phenolic acids,ইত্যাদি যা অনেক ফলে নেই|
আমাদের শরীরে প্রতিদিন অনেক ভিটামিন সির দরকার হয়, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়| স্ট্রবেরির ভিটামিন সি শরীরে খুব তাড়াতাড়ি মিশে যায় ও কাজ করে| এক কাপ স্ট্রবেরিতে প্রচুর পরিমনে ভিটামিন সি আছে, যা রক্ত চাপ কমানো ছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়| তাছাড়া ভিটামিন সি মানসিক চাপ, প্রদাহ, ঠান্ডা লাগা, ক্ষতিকর free radicals, সংক্রমন, ইত্যাদি প্রতিরোধ করে ।
----------------------------------------------------
আনারসঃ
বাংলাদেশে সাধারণত চার জাতের আনারস চাষ করা হয়। জায়েন্ট কিউ, কুইন, হরিচরণ ভিটা ও বারুইপুর। বাংলাদেশে ঘোড়াশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় এসব জাতের চাষ সবচাইতে বেশি হয়।
গ্রীষ্মের সময় আনারস গাছে ফুল ফুটে এবং বর্ষা শেষে ফল পাকা শেষ হয়। আনারস বছরে দু'বার তোলা হয়। আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে গাছে প্রধান ফল পাওয়া যায়। কিন্তু যেসব গাছে ফুল দেরিতে আসে সেখানে শীতের সময় ফল পাকে। বর্ষাকালে ফল সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হয় আর রসে টইটম্বুর থাকে। এছাড়া শীতের ফল ছোট ও টক হয়।
পুষ্টিগুণ-
পুষ্টিগুণে আনারস অতুলনীয়। এতে ভিটামিন এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ১০০ গ্রাম আনারসে ০.৬ ভাগ প্রোটিন, শ্বেতসার ৬.২ গ্রাম, ০.১ ভাগ সহজপাচ্য ফ্যাট, ০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১২.০ গ্রাম শর্করা, ০.১১ গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৪ মি. গ্রাম ভিটামিন-২, ভিটামিন সি ২১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০২ গ্রাম এবং ১.২ মিলি গ্রাম লৌহ রয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি ফল থেকে ৫০০ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
উপকারিতা-
সাধারণত আনারস খেলে যেসব উপকার পাওয়া যায় তা হলো-
১. গরম-ঠাণ্ডার জ্বর, জ্বর-জ্বর ভাব দূর করে এই ফল। এতে রয়েছে ব্যথা দূরকারী উপাদান। তাই শরীরের ব্যথা দূর করার জন্য এর অবদান গুরুত্বপূর্ণ।
২. আনারস কৃমিনাশক। কৃমি দূর করার জন্য খালি পেটে (সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে) আনারস খাওয়া উচিত।
৩. দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল। ফলে শিরা-ধমনির (রক্তবাহী নালি) দেয়ালে রক্ত না জমার জন্য সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত যেতে পারে। হৃদপিন্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। আনারস রক্ত পরিষ্কার করে হৃদপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে।
৪. এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। জিহ্বা, তালু, দাঁত, মাড়ির যে কোনো অসুখের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আনারস।
৫. এতে রয়েছে খনিজ লবণ ম্যাঙ্গানিজ, যা দাঁত, হাড়, চুলকে করে শক্তিশালী। গবেষণা করে দেখা গেছে, নিয়মিত আনারস খান এমন ব্যক্তিদের ঠাণ্ডা লাগা, গলা ব্যথা, সাইনোসাইটিসজাতীয় অসুখগুলো কম হয়।
৬. এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, যা আমাদের শক্তি জোগায়। প্রোটিন খাবার এ ফলটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচায়। আনারস টাটকা খাওয়াই ভালো।
৭. আনারস জ্বরের ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী।
৮. দেহের তৈলাক্ত ত্বক, ব্রণসহ সব রূপলাবণ্যে আনারসের যথেষ্ট কদর রয়েছে।
মোট কথা, দেহের পুষ্টি সাধন এবং দেহকে সুস্থ-সবল ও নিরাময় রাখার জন্য আনারসকে একটি অতুলনীয় এবং কার্যকরী ফল বলা চলে।
কিছু কিছু আনারস জ্বরের ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী। দেহের তৈলাক্ত ত্বক, ব্রণসহ সব রূপলাবণ্যে আনারসের যথেষ্ট কদর রয়েছে। মোট কথা, দেহের পুষ্টি সাধন এবং দেহকে সুস্থ সবল ও নিরাময় রাখার জন্য আনারসকে একটি অতুলনীয় এবং কার্যকরী ফল বলা চলে।
----------------------------------------------------
নাসপাতিঃ
নাসপাতি ( Pyrus communis) - বাংলার একটি পরিচিত সুস্বাদু ফল । এটি মাঝারি আকারে গাছ। বিদেশী ফল আপেলের চেয়ে দ্বিগুণ ভিটামিন সি ও প্রোটিন সম্পন্ন নাসপাতি পার্বত্য এলাকায় একটি নতুন সম্ভাবনাময় ফল হিসেবে কৃষকের মাঝে পরিচিতি পেয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে, খাগড়াছড়ি বারি-১ জাতের নাসপাতি এখানকার মাটি ও আবহাওয়া এই ফলের জন্য বেশ উপযোগী ।
পাবর্ত্য চট্টগ্রামের পতিত ছোট ছোট পাহাড়ি দোঁ-আশ ও বেলে মাটিতে নাসপাতি চাষ খুবই উপযোগী। পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র খাগড়াছড়ি সম্ভাবনাময় এই জাতের ফলের চাষাবাদ সম্প্রসারণে বেশ কয়েক বছর ধরে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে গুটি কলম বিতরণ করে আসছে।
এখানের আবহাওয়া নাসপাতি’র ফলন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অন্যান্য ফলের চেয়ে বেশি হওয়ায় এই ফলের চাষবাদ দিনদিন বাড়ছে। তাছাড়া নাসপাতি অপেক্ষাকৃত শক্ত ফল হওয়ায় সংরক্ষণ ক্ষমতাও বেশি। কৃষকদের দেরিতে বাজারে সংরক্ষণ করার সুযোগ থাকায় অনেকেই এটি অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনা বলে মনে করছেন। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে রোপণের ৫ বছরেই প্রতিটি নাসপাতির গাছ থেকে ৩০ থেকে ৬০ কেজি ফল উৎপাদন সম্ভব।
অন্যান্য নামের মধ্যে - Pear, Common Pear, European Pear, Bhutan Pear উল্লেখযোগ্য। এর ফুল গুলি দেখতে খুব সুন্দর।
-------------------------------------------------------
কমলাঃ
মৌসুমি ফল হিসেবে আমরা সবাই কমবেশি কমলা খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা হয়তো অনেকেই জানি না এর ভিতর কি কি গুণাগুণ রয়েছে। কমলায় প্রচুর ভিটামিন 'সি' এবং 'এ' রয়েছে। ভিটামিন সি বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তির ওপরেও প্রভাব পড়ে। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কমলা সাহায্য করে। যাদের বয়স ৫ থেকে ১২ বছর তারা প্রতিদিন ৩টি কমলা খেতে পার। গর্ভবতীরা ২টি এবং চল্লিশের ওপরে যাদের বয়স তারা ২টি করে কমলা খেতে পারেন। দুই বছরের কম বয়সী শিশুরা কমলার রস খেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দুই চামচ রসে ১ চামচ পানি দিতে হবে। কমলা লেবু সকাল-দুপুরের মাঝামাঝি এবং সন্ধ্যায় খাওয়ার জন্য উপযুক্ত সময়। কাস্টার্ড, ফ্রুট সালাদ, ক্ষীর বানাতে কমলা ব্যবহার করতে পারেন।
-----------------------------------------------------
কাউফলঃ
বেশী মোটা নয়, মাঝারী বৃক্ষ। গাছের রংটা কিছুটা কালো, ডালপালা একদম কম, গাছের আগার দিকে ঝুপড়ির মতো কিছু ডাল-পালা দেখা যায়। সাধারনতঃ হেলে থাকে না-খালের কিনারায়, পুকুরের কিনারায় থাওলে হেলে থাকে। জঙ্গলে বেশী দেখা যায়।
ফলটি কাচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ। সাইজ একটা টেবিল টেনিস বলের (পিংপং) সমান থেকে সামান্য বড় হতে দেখা যায়। পাকা ফল হলুদ বা কমলা রঙ এর হয়। ফলের ভিতরে ৪/৫টি দানা থাকে। ফল পাকার পর এই দানা চুষে খেতে হয়।
ফলটির স্বাদ টক—শুধু টক বললে ভুল হবে, অনেক বেশী টক। কিন্তু খেতে ভাল লাগে।
ঔষধিগুনঃ
সর্দিজ্বর ও ঠান্ডা প্রশমনে কাউফল উপকারী। এছাড়া এটি অরুচি দূর করে।
বাংলা নামঃ কাউ (কুমিল্লা) /কাউয়া (সিলেট, মৌল্ভীবাজার) /কাউ-গোলা (চাকমারা বলে থাকে) /কাগলিচু/তাহগালা (মারমা)/ক্যাফল (বাগেরহাট)।
ইংরেজী নামঃ Cowa (mangosteen)
বৈজ্ঞানিক নামঃ Garcinia cowa
জাতঃ
বাংলাদেশে কাউফলের অনুমোদিত কোন জাত নেই।
উৎপাদন এলাকাঃ
সিলেট, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি আর রাঙ্গামাটিতে এই ফল হতে দেখা যায়। কুমিল্লা অঞ্চলেও আমি এ ফলটি হতে দেখেছি। বাগেরহাটেও প্রচুর হয়।
-----------------------------------------------------
বঁইচি ফলঃ
দক্ষিণাঞ্চলের একটি জনপ্রিয় ফল কাঁটাবহরী বা বঁইচি। ছোট গোলাকার ফলের মালা গেঁথে ছোট ছেলেমেয়েরা তা মজা করে খায়।
গ্রামেগঞ্জে সাধারণত খেতের পাশে ঝোপঝাড়ে বঁইচি বেশি জন্মায়। অনেক সময় পাহাড়ের ঢালেও জন্মে। গাছ ঝোপালো এবং গাছের শাখা কাঁটাযুক্ত। এ কারণে বঁইচি কাঁটাবহরী নামেও পরিচিত। বর্তমানে বন উজাড় হওয়ায় গাছটি বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়।
সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বঁইচিগাছে ফুল ধরে। পাঁচ পাপড়িযুক্ত ক্ষুদ্রাকৃতির ফুল। জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে ফল পাকতে শুরু করে। কাঁচা ফল গোলাকার সবুজ। পাকলে রক্ত বেগুনি রং ধারণ করে। গোলাকার আঙুরের মতো বঁইচি খেতে অম্ল ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত। বৈজ্ঞানিক নাম Slacourtia Indica, পরিবার Slacourtiaceae।
বঁইচি গাছের মূলের রস নিউমোনিয়া এবং পাতার নির্যাস জ্বর, কফ ও ডায়রিয়া নিরাময়ে ব্যবহূত হয়। পাতা ও মূল অনেকে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করে। বাকলের অংশ তিলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বাতের ব্যথা নিরাময়ে মালিশ তৈরি করা হয়।
----------------------------------------------------
আলুবোখারাঃ
ঢাকার ফলের দোকানগুলোতে কদাচিৎ পাকা আলুবোখারার দেখা মেলে। ফলটি আসে ভারত কিংবা পাকিস্তান থেকে। তবে শুকনো ফল সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়। ছেলেবেলায় জ্বর হলে মুখে রুচির জন্য আমলকীর পাশাপাশি এই ফলটিও আমাদের খাওয়ানো হতো। এসব ছাড়াও এই ফলের ব্যবহার বহুমাত্রিক। এই ফলগাছটি প্রথম দেখি ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে। এটি রোজেসি পরিবারের গাছ, চেরি ফুলের নিকটাত্মীয়। প্রাক-বসন্তে নিষ্পত্র গাছে সাদা রঙের অসংখ্য ফুল ফোটে। আয়তাকার পাঁচ পাপড়ির ফুলগুলোর মাঝখানে থাকে এক থোকা পরাগকেশর। পরিপূর্ণ প্রস্ফুটিত গাছের এই সৌন্দর্যও মনোহর। কিন্তু যেহেতু গাছটি ফলের, সেহেতু ফুলের এই সৌন্দর্য আমাদের খুব একটা আগ্রহী করে না। আমরা বরং অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি, কখন আসবে সেই কাঙ্ক্ষিত ফল। জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই ফল (Prunu domestica) পাকতে শুরু করে।
উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের গুল্ম বা ছোট আকৃতির গাছ। কাণ্ড ও ডালপালা ধূসর রঙের। ডালপালার বিন্যাস অনেকটা বিক্ষিপ্ত ধরনের। পাতা ঘনবদ্ধ, ডিম্বাকৃতির; কিনারা করাতের দাঁতের মতো অমসৃণ। সরু ডালপালার গায়ে ঝুলে থাকা ফলগুলো অনেক সময় পাতার আড়ালে অদৃশ্য থাকে। ফল আয়তাকার বা ক্ষেত্রবিশেষে লম্ব-আয়তাকার। পাকা ফলের রং কালচে লাল, ওপরে একধরনের সাদা আবরণ তৈরি হয়; টক-মিষ্টি স্বাদের। ভেতরের শক্ত বীজ থেকে চারা হয়। বিশেষ করে, পোলাওয়ের সঙ্গে মুখরোচক হিসেবে ব্যবহার্য; ঔষধি গুণেও অনন্য।
----------------------------------------------------
চেরিঃ
সারা পৃথিবীতে অসংখ্য জাতের চেরি পাওয়া যায়। শুধু পৃথিবীর উত্তরাঞ্চলেই সংখ্যাটি প্রায় ৪৫০। ব্যাপকতার কারণে এই গণে গুল্ম থেকে শুরু করে উঁচু বৃক্ষও রয়েছে। তবে গাছ সর্বোচ্চ ৩০ মিটারের মতো উঁচু হতে পারে। সেই সঙ্গে ফুলের অসংখ্য রকমফেরও চোখধাঁধানো। মূলত ফুল, ফল ও আলংকারিক শোভাই এই গাছের জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ। এরা পিচ ও এপ্রিকট ফলের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। জাপানে চেরি ফুলের স্থানীয় নাম ‘সাকুরা’ (জাকুরা)। প্রজাতিভেদে চিরসবুজ ও পত্রমোচি—দুই ধরনের গাছ দেখা যায়। Prunus cerasoides জাতের গাছ হিমালয় অঞ্চলের বুনো চেরি হিসেবেই পরিচিত। চীন, মিয়ানমার ও ভারতে এই জাতের গাছ সহজলভ্য।
চেরি (Prunus spp) গাছের কাণ্ড অসমান, ডালপালা বিক্ষিপ্ত ও নোয়ানো স্বভাবের। পাতা সবুজ, লম্ব আয়তকার, ১০ সেন্টিমিটার বা ততোধিক অথবা বিচিত্র গড়নের, কিছু জাতের পাতা দেখতে অনেকটা পাটপাতার মতো, শিরা স্পষ্ট, কিনারা দাঁতানো, কোনো কোনোটি বিপ্রতীপভাবে বিন্যস্ত। প্রস্ফুটন মৌসুমে অনেকটাই পত্রহীন। গুচ্ছবদ্ধ ফুলগুলো প্রধানত গোলাপি, সাদা ও লালচে। পাপড়ি ও ফুলের গড়ন বিচিত্র। অসমান পাপড়িসংখ্যা সাধারণত পাঁচ, মাঝখানে সোনালি একগুচ্ছ মুক্ত পুংকেশর। সারা বিশ্বে এদের কিছু জাত ফুল ও কিছু জাত ফলের জন্য বিখ্যাত।
জাপানে মার্চের শেষ ভাগ থেকে এপ্রিলজুড়ে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী চেরি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। চেরি ফুলকে বরণ করে নেওয়ার এই অনুষ্ঠানের স্থানীয় নাম ‘হানামি’। ধারণা করা হয়, ৭১০ সাল থেকে জাপানে চেরি উৎসব শুরু হয়েছে।
আমাদের দেশে অনেকেই ‘ক্রেব’ বা ‘ফুরুস’ (Lagerstroemia indica) ফুলকে ভুলবশত চেরি ফুল নামে ডাকে। আদতে চেরি ফুলের সঙ্গে এই গাছের কোনো সম্পর্ক নেই।
------------------------------------------------------
খেজুরঃ
খেজুর শুধু একটি খাবারই নয়, এর পুষ্টিমান ও অন্যান্য গুণাগুণ রোজাদার ও অন্যদের শরীরের অনেক চাহিদা যেমন পূরণ করে, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি উপশমেও বেশ কার্যকর। খেজুরের মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম, সালফার, আয়রন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬, ফলিক এসিড, আমিষ, শর্করাসহ একাধিক খাদ্যমান। খেজুরের বিভিন্ন ধরনের গুণাবলি নিয়ে দেখুন গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।
** ক্যানসার প্রতিরোধ
খেজুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক আঁশে পূর্ণ। এক গবেষণায় দেখা যায়, খেজুর পেটের ক্যানসার প্রতিরোধ করে। আর যাঁরা নিয়মিত খেজুর খান, তাঁদের বেলায় ক্যানসারের ঝুঁকিটাও অনেক কম থাকে।
** দুর্বল হূৎপিণ্ড
খেজুর হূৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তাই যাঁদের হূৎপিণ্ড দুর্বল, খেজুর হতে পারে তাঁদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধ।
** মুটিয়ে যাওয়া রোধে
মাত্র কয়েকটি খেজুর ক্ষুধার তীব্রতা কমিয়ে দেয় এবং পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। এই কয়েকটি খেজুরই কিন্তু শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে দেয় ঠিকই।
** মায়ের বুকের দুধ
খেজুর বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য সমৃদ্ধ এক খাবার। এই খেজুর মায়ের দুধের পুষ্টিগুণ আরও বাড়িয়ে দেয় এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
** হাড় গঠনে
ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে মজবুত করে।
** অন্ত্রের গোলযোগ
অন্ত্রের কৃমি ও ক্ষতিকারক পরজীবী প্রতিরোধে খেজুর অনেক সহায়ক এবং খেজুর অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে।
** দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে
খেজুর দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। সেই সঙ্গে রাতকানা রোগ প্রতিরোধেও খেজুর সহায়ক। তাই চোখের সমস্যায় ভোগা রোগীরা সচ্ছন্দে খেতে পারেন খেজুর।
** কোষ্ঠকাঠিন্য
খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ, যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।
** সংক্রমণ
যকৃতের সংক্রমণে খেজুর উপকারী। এ ছাড়া গলা ব্যথা, বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি এবং ঠান্ডায় খেজুর উপকারী।
** বিষক্রিয়া রোধে
খেজুর অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়ায় বেশ উপকারী। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়ায় দ্রুত কাজ করে।
** শিশুদের রোগবালাই
শিশুদের জন্যও খেজুর খুব উপকারী। খেজুর শিশুদের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও প্রতিরোধ করে। তাই শুধু রমজান মাসে কেন, সারাটা বছর জুরেই খাদ্য তালিকায় থাকুক খেজুর।
-----------------------------------------------------
লেবুঃ
সারাবিশ্বে যত ধরনের ফল জন্মে, তার মধ্যে লেবু একটি। এটি অত্যন্ত পরিচিত একটি ফল। এ ফলটি সাইট্রাস লেমন নামেই বিশ্বজুড়ে পরিচিত। কারণ, এতে আছে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক এসিড, যা হজমে সহায়ক। লেবুর রয়েছে নানা জাত। তবে সবার কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত কাগজি, বাতাবি বা জাম্বুরা, মোসাম্বি, গন্ধরাজ এবং কমলা লেবু। সাইট্রিক এসিড ছাড়াও লেবুর ছাল ও খোসা থেকে পাওয়া যায় পেকটিন, যা সাধারণত জেলি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, লেবুজাতীয় ফলে রয়েছে গ্গ্নুকাসাইড বা তিতা জাতীয় পদার্থ। নানা জাতের লেবুর মধ্যে বাতাবি বা জাম্বুরাও অনেক জাতের হয়ে থাকে। কমলা দেখা যায় কয়েক ধরনের। তবে মিষ্টি কমলার কদরই সবচেয়ে বেশি। ফলে এটি বিক্রিও হয় চড়া দামে। টক কমলা জ্যাম-জেলি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পেকটিন। এ ছাড়া লেবুতে রয়েছে ভিটামিন এবং বিভিন্ন খাদ্য উপাদান। এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের নানা গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, প্রতি ১শ' গ্রাম কাগজি লেবুতে ভিটামিন-সি'র পরিমাণ ৬২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি২ ০.০৩ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯০ মিলিগ্রাম এবং প্রোটিন ১.৫ গ্রাম।
খাদ্য উপাদান ও ভিটামিন ছাড়াও লেবুতে আছে এমন অনেক ভেষজ গুণ, যা মানবদেহের নানা রোগ-ব্যাধি নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ভারতীয় বনৌষধিতে উল্লেখ আছে, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং জ্বরে শরীরকে সি্নগ্ধ করতে কমলার খোসা ব্যবহার করা ভালো। তাতে রোগী অনেকটা আরামবোধ করে। সর্দি, কাশি ও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় লেবু অত্যন্ত কার্যকর। লেবু ও কমলার পাতার গন্ধে বমিভাব দূর হয়। পিত্ত বিকারজনিত বমনে বিষদোষ ও পিপাসা দূর করতে কাগজি লেবু অত্যন্ত সহায়ক। মাথার খুশকি নিবারণে লেবুর রয়েছে অসাধারণ ক্ষমতা। সুগন্ধি দ্রব্য তৈরিতেও কাগজি লেবু ব্যবহৃত হয়। প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে লেবুরস খেলে মুখে রুচি আসে; রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। আমাদের ফলটির গুণ সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে কিন্তু লেবু ছাড়া কোনো রান্নাই হয় না। ইউরোপীয় দেশগুলোতে রান্না-বান্নায় মূল উপাদান থাকেই তিনটি_ লেবুর রস, গোলমরিচ ও লবণ। নানা ধরনের রোগ-বালাই থেকে রক্ষা পেতে আসুন আমরা প্রতিদিন খাবারে লেবু রাখি।
-------------------------------------------------
শসাঃ
শসায় বিদ্যমান ক্যাফিক এসিড, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি ত্বকের কোমলতা ও লাবণ্য বৃদ্ধি করে। শসা শীতলকারক, প্রশান্তিদায়ক ও তৃষ্ণা নিবারক। শসায় প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ থাকায় কোষ্ঠ পরিষ্কারক হিসেবে এর জুড়ি নেই। শসা দেহের কোলেস্টেরল এর মাত্রা হ্রাস করে।
-----------------------------------------------------
জাম্বুরাঃ
জাম্বুরাতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। হাল্কা টক স্বাদের সুস্বাদু এই ফল ফলটি অত্যন্ত পুষ্টিকর। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে গেলেও এই ফল পাবেন ভারত, চীন, জাপান, ফিজি, দক্ষিণ আফ্রিকা, এমনকি আমেরিকাতেও। তবে আলাদা আলাদা যায়গায় আপনি আলাদা আলাদা রকমের বাতাবী লেবু পাবেন। কোথাও কোথাও জাম্বুরার ভেতরের রসাল কোষগুলো হলুদ আবার কোথাও লাল বা গোলাপি হয়ে থাকে। তবে জাম্বুরার ভেতরের রসাল কোষগুলোর ঘনত্ব বেশি তাই খুব সহজেই এসব দিয়ে রস বা জুস তৈরি করা যায়।
আজকে জানুন জাম্বুরা আমাদের কত উপকারী।
## এতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি তাই রক্তনালীর সংকোচন প্রসারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
## ডায়াবেটিস, জ্বর, নিদ্রাহীনতা, মুখের ভেতরে ঘা, পাকস্থলী ও অগ্ন্যাশয়ের বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
## প্রতিদিন এক গ্লাস করে বাতাবি লেবু জুস করে খান। ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করবে এটি।
## জাম্বুরা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। সাথে বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগের থেকে রক্ষা করে।
## রক্ত পরিষ্কার করে।
## ওজন কমাতে সাহায্য বিশেষভাবে সাহায্য করে।
## বাতাবী লেবুতে বায়োফ্লভনয়েড থাকে তাই ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ।
## এটি এসিডিটি বা গ্যাস প্রতিহত করে।
বাতাবী লেবু সাধারণত খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের কোষগুলো খাওয়া হয়। এছাড়া জুস করে, ফ্রুট সালাদ হিসেবে, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্ডি বা চকোলেট তৈরিতে বাতাবি লেবু ব্যবহার করা হয়। মিষ্টি স্যুপ তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় বাতাবী লেবু।
---------------------------------------------------
আতাফলঃ
সাধারনত মার্চ মাসে ফুল আসে। আপ্রিলে ফল হয়। সে ফল মে-জুন মাসে পাকে। এবং সংগ্রহ করা হয়।
আবাদি অনাবাদি ও বনজ সব ধরনের হয়ে থাকে।
প্রাপ্তিস্থানঃ- এই ফলটি বহু বছর পুর্বে আমেরিকা থেকে ভারতবর্ষে আসে। এখন পুরো উপমহাদেশে এই ফল দেখা যায়।
এটি বহু শাখা বিশিষ্ট মাঝারি ধরনের গাছ। প্রায় ১০/১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। ছাল ধূসর বর্ণের এবং কান্ড খুব শক্ত নয়।পাতা ৩/৪ ইঞ্চি লম্বা এবং ১-১/২ ইঞ্চি চওড়া হয়ে থাকে। এর ফল এবড়ো থেবড়ো গোলাকার, সবুজ বর্ণের, পাকলে সুগন্ধ যুক্ত ও স্বাদে মধুর। ফলের ভিতর শাঁসালো কোয়া আছে। বীজ ঈষৎ ডিম্বাকৃতি ও চ্যাপ্টা কালো রঙের।
ব্যবহার্য অংশঃ- ফল, পাতা, বীজ ও গাছের ছাল
ঔষধি গুণাগুণ:- আতাফলে নানান ঔষধী গুনাগুন রয়েছে। আমাশয়ে, রক্তে বল কমে গেলে, অপুষ্টিজনিত কৃশতায়, রক্তপিত্তজনিত দাহরোগে, ফোঁড়ায়, ক্ষতের পোকায়, মূর্ছা রোগে এবং মাথার উকুন সারাতে আতার ব্যবহার হয়।
আমাশয়েঃ- আতা গাছের মূলের ছালের রস ২০/২৫ ফোঁটা ৭/৮ চা চামচ দুধ সহ খেতে হবে, তবে ছাগলের দুধ হলে ভাল হয়। আথবা আতা গাছের মূলের ছাল চূর্ণ ২০০ মিলিগ্রাম একবার বা দুইবার খেতে হবে। এর দ্বারা ২/৩ মধ্যে আমাশয় ভালো হয়ে যাবে।
রক্তে বল কমে গেলেঃ- যদি শ্লেষ্মাবিকারের কোনো ব্যধি না থাকলে পাকা আতাফলের শাঁসের রস ২/৩ চা চামচ করে সকালে ও বিকালে ২ বার খেলে রক্তের নিস্তেজ ভাবটা সেরে যায়। যদি রস করা সম্ভব না হয় তাহলে পাকা আতা এমনি খেলেই চলবে।
অপুষ্টিজনিত কৃশতায়ঃ- শিশু, যুবক যুবতী বৃদ্ধ যে কোনো বয়সেরই হোক এ ক্ষেত্রে পাকা আতাফলের রস ২/৩ চা চামচ করে একটু দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে ধীরে ধীরে পুষ্টি সঞ্চার হয় এবং কৃশতাও দূর হয়।
রক্তপিত্তজনিত দাহরোগেঃ- অল্প রক্তচাপের কারনে মাঝে মাঝে বমির সংগে রক্ত বের হয় আবার বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক মনে হয়, আবার কারো কারো আগ্নির বলও থাকেনা। এ ক্ষেত্রে পাকা আতার রস ২/৩ চা চামচ করে খাওয়ালে সেরে যাবে।কারো কারো দেহে সর্বোদা একটা দাহ ভাব আসে এভাবে খেলে সেটাও চলে যাবে।
ফোঁড়ায়ঃ- যে ফোঁড়া দড়কচা যাকে বলে পাকছেওনা বসছেওনা। না কাঁচা না পাকা এ ক্ষেত্রে আতার বীজ বা পাতা বেটে সামান্য লবন মিশিয়ে প্রলেপ দিলে ফোঁড়া পেকে ফেটে পুঁজ বের হয়ে যাবে।
ক্ষতের পোকায়ঃ- পিত্তশ্লেষ্মাপ্রধান শরীরে ক্ষত হলে তাড়াতাড়ি শুকাতে চায়না। দীর্ঘদিন থাকলে পোকা জন্মে।সে ক্ষেত্রে কাঁচা আতাফল বীজসমেত শুকিয়ে মিহি গুড়া করে ঐ ক্ষতে ছড়িয়ে দিলে ক্ষতের কীট মরে যাবে এবং ঘাও শুকিয়ে যাবে। তবে এই গুড়ো দেবার আগে কালমেঘের পাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে ঐ ক্ষতটা ধুয়ে নিলে আরো তাড়িতাড়ি সেরে যাবে।
মূর্ছা রোগেঃ- আনেক সময় মাসিক ঋতুর দোষে মূর্ছা রোগ হয়। এই রোগাক্রমন হলে সেই সময় আতাপাতার রস ২/১ ফোঁটা নাকে দিলে ২/৩ মিনিটের মধ্যে মূর্ছা ভেঙে যায়। রস দেয়ার সময় ড্রপারে করে দিতে হবে।
উকুনেঃ- মাথায় উকুন হলে নির্বংশ করতে আতাপাতার রস ২ চা চামচ তার সঙ্গে ২/১ চা চামচ পানি মিশিয়ে চূলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখলে উকুন মরে যাবে।একদিনে না গেলে ২/৩ দিন পর আবার লাগাতে হবে। এ ছাড়া পাতা বেটে লাগালেও উকুন মরে যাবে। তবে সাবধানে ব্যবহার করতে হবে যেন চোখে না লাগে, তাহলে চোখ জ্বালা করবে ও লাল হয়ে যাবে।তাছাড়া এই রস লাগানোর পর মাথা ঘুরতে থাকলে না লাগানো উচিৎ।তবে প্রথমে আধা চামচ পানি মিশিয়ে লাগিয়ে দেখা ভালো।
সাবধানতাঃ- কোনো গর্ভবতী নারীর আতার পাতা বা বীজ কোনো কিছুই ব্যবহার করা উচিৎ নয়। এতে গর্ভের ক্ষতি হয়ার সম্ভবনা থাকে।
-------------------------------------------------------
জলপাইঃ
দেশি টক ফলের মধ্যে জলপাই অনেকেরই খুব পছন্দের। আমরা রান্না করে, স্যুপে, কাঁচা আচারের সালাদে, ভর্তা করে, চাটনি করে জলপাই পরিবেশন করি। জলপাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ভিটামিন ই, কে, কপার, লৌহ ও খাদ্য আঁশ। স্বাস্থ্যরক্ষায় জলপাই উপকারী। নানা সমস্যায় জলপাই ভেষজ ওষুধ।
উপকারী জলপাই
* ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
* হৃদরোগে, রক্তে এলডিএলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
* হজমক্রিয়ার সুস্থতা রক্ষা করে।
* স্নায়ু ও শ্বাসতন্ত্রের স্বাভাবিকতা রক্ষা করে।
* ডায়াবেটিস রোধে ভূমিকা রাখে।
* ব্যথা, আর্থ্রাইটিস হ্রাসে সহায়তা করে।
* পিত্তথলির পাথর তৈরিতে বাধা দেয়।
* চামড়ার যত্নে জলপাই বিশেষ উপকারী।
টিপস
* যাঁরা কাঁচা জলপাই খেতে পারেন না, তাঁরা স্যুপে, ডালে বা সবজিতে যোগ করে জলপাই খাওয়ার অভ্যাস করবেন। কিন্তু বাদ
দেবেন না।
-----------------------------------------------------
১ম পর্বের লিঙ্ক নিচে
Click this link
২য় পর্বের লিঙ্ক নিচে
Click this link
ধন্যবাদ
বিষয়: বিবিধ
২০১৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন