ফল, দেশি-বিদেশী, জানা-অজানা কিছু ফল ও গুনাগুন । (ছবি ব্লগ) পর্বঃ-২

লিখেছেন লিখেছেন মরহুম সাদেক ২৬ আগস্ট, ২০১৩, ০১:২৯:০৬ রাত



পূর্ব প্রকাশের পর

সতর্কতা : ফরমালিন যুক্ত ফলমূলে বাজার এখন সয়লাব। সুতরাং এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকা উচিৎ।

হরীতকীঃ





হরীতকী মধ্যম থেকে বৃহদাকারের পাতাঝরা বৃক্ষ। আমাদের দেশের বনাঞ্চলে বা গ্রামাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে এ গাছ দেখা যায়। উচ্চতা ৪০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে পাতা ঝরে নতুন পাতা গজাতে থাকে।

হরীতকীর বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia chebula. বাংলাদেশ ও ভারতে এর আদি নিবাস। বাকল গাঢ় বাদামি। বাকলে লম্বা ফাটল থাকে। পাতা লম্বা-চ্যাপ্টা, কিনার চোখা, লম্বায় পাঁচ-ছয় ইঞ্চি।

ফুল ফোটে ডালের শেষ প্রান্তে। রং হালকা হলুদাভ সাদা। ফল লম্বাটে, মোচাকৃতি। লম্বায় প্রায় দেড় ইঞ্চি। কাঁচা ফল সবুজ, পরিপক্ব ফল হালকা হলুদ। শুকালে কালচে খয়েরি রং হয়। ফলের ত্বক ভীষণ শক্ত। এই ফল বছরের পর বছর ভালো থাকে। ফলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত লম্বা লম্বা পাঁচ-ছয়টি শিরা থাকে। ফলের বাইরের আবরণ কুঁচকানো। ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা হয়। ফলের ভেতর একটিমাত্র ভীষণ শক্ত বীজ থাকে।

হরীতকীর কাঠ খুব মজবুত। এই কাঠ ফ্রেম, খুঁটি, আসবাব তৈরিতে ব্যবহূত হয়। বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়।

প্রচলিত আছে, প্রতি সকালে এক কাপ পরিমাণ হরীতকী ভেজানো পানি ব্যবহার করলে রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। আমলকী ও বিভীতকীর (বহেড়া) সঙ্গে হরীতকী ভেজানো পানি, সব রোগের আশ্চর্য মহৌষধ।

হরীতকী চূর্ণ ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে, পিত্তশূল দূর হয়। পাইলস, হাঁপানি, চর্ম রোগ, ক্ষত রোগ, কনজাংটিভাইটিস রোগে হরীতকী ব্যবহূত হয় বিশেষভাবে পরিশোধনের মাধ্যমে।

হরিতকী তিতা গন্ধ বিশিষ্ট। ইহা ট্যানিন, এ্যামাইনো এসিড, ফ্রুকটোজ, সাকসিনিক এসিড এবং বিটা সাইটোস্টেরল সমৃদ্ধ। ইহা রক্ত চাপ এবং অন্ত্রের খিঁচুনি হ্রাস করে। হৃদপিন্ড ও অন্ত্রের অনিয়ম দূর করে। ইহা রেচক, কষাকারক, পিচ্ছিলকারক, পরজীবীনাশক, পরিবর্তনসাধক, অন্ত্রের খিঁচুনি রোধক এবং স্নায়বিক শক্তিবর্ধক। তাই ইহা নতুন ও পুরাতন কোষ্ঠকাঠিন্য, স্নায়বিক দুর্বলতা, অবসাদ এবং অধিক ওজন এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। হরিতকীতে এ্যানথ্রাকুইনোন থাকার কারণে ইহা রেচক বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ।

------------------------------------------------------

তেতুলঃ





তেঁতুলের নাম শুনলেই জিভে জল আসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। টক তেঁতুল মুখে দিলে আমাদের যে ভিন্ন এক অনুভূতি হয় তা নিশ্চয়ই বলতে হবে না। আমাদের অনেকেরই ধারণা তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তেঁতুল কোনোভাবেই আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। বরং হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে খুব উপকারী। তেঁতুল বসন্ত-কালের ফল হলেও বছরের সব সময়ই পাওয়া যায়।

তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর ভেষজ ও পুষ্টিগুণ:

• তেঁতুল দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগীদের জন্য খুব উপকারী

• রক্তের কোলেস্টেরল কমায়

• শরীরের মেদ কমাতেও কাজ করে তেঁতুল

• পেটে গ্যাস, হজম সমস্যা, হাত-পা জ্বালায় তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী

• খিদে বাড়ায়

• গর্ভাবস্থায় বমি বমি বমি ভাব দূর করে

• মুখের লালা তৈরি হয়

• তেঁতুল পাতার ভেষজ চা ম্যালেরিয়া জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়

• শিশুদের পেটের কৃমিনাশক

• তেঁতুল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে

• পাইলস্ চিকিত্সার জন্য ব্যবহার করা হয়

• মুখে ঘাঁ ও ত্বকের প্রদাহ সারাতে সাহায্য করে

• তেঁতুল রক্ত পরিস্কার করে

• বাত বা জয়েন্টগুলোতে ব্যথা কমায়

• ভিটামিন সি-এর বড় উৎস

• পুরনো তেঁতুল খেলে কাশি সারে

• পাকা তেঁতুলে খনিজ পদার্থ অন্য যে কোনো ফলের চেয়ে অনেক বেশি

• খাদ্যশক্তিও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে

------------------------------------------------------

ডাবঃ





ডাবের পানির ব্যপারে নতুন করে কিছু বলার নেই। সুস্বাদু এই পানীয়টি গোটা এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার মানুষের কাছে এটি সমান প্রিয়। তবে কেবল পানীয় হিসাবেই নয়, ডাবের পানির মধ্যে বিজ্ঞানীরা ওষুধিগুণও খুঁজে পেয়েছেন। ডায়রিয়াতে এর পানি উপকার অনেক বেশী। এটি হার্টের পক্ষেও ভালো কাজ করে। এখন আবার জানা গেছে ডাবের পানি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে অনেক বেশী সক্ষম। বছরের পর বছর ব্যবহার করার ফলে চলতি এন্টিবায়োটিক ওষুধ রোগজীবাণু প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। ফলে এই সমস্যা মোকাবিলায় বিজ্ঞানীরা

নজর দিয়েছেন শরীরে রোগ প্রতিরোধ গড়ে তোলার মূল বস্তু বিভিন্ন প্রোটিনের প্রতি। যখন কোনো রোগজীবাণূ শরীরে প্রবেশ করে, আমাদের দেহের প্রতিরোধ কোষ প্রোটিন দিয়ে তৈরি এন্টিবড়ি উত্পন্ন করে।

বিজ্ঞানীরা গাছপালার বিভিন্ন অংশ যেমন ফুল, পাতা, মূল ইত্যাদি থেকে রোগজীবাণু ধ্বংসকারী প্রোটিন তৈরি করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ ও ব্রাজিলের একদল গবেষক ডাবের পানির মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন তিনটি নতুন ধরনের বিভিন্ন গুণসম্পন্ন পেপটাইজম যা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া যারা খাদ্যকে বিষিয়ে দেয়, দুধ ও মাংসকে নষ্ট করে তাদের মেরে ফেলে। আগামী দিনে এইসব পেপটাইজম ভবিষ্যতের এন্টিবায়োটিক ওষুধের উপাদান হিসেবে ব্যবহূত হবে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।

-------------------------------------------------------

আমলকীঃ





আমলকী গাছ ৮ থেকে ১৮ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট হতে পারে, পাতা ঝরা প্রকৃতির। হালকা সবুজ পাতা, যৌগিক পত্রের পত্রক ছোট, ১/২ ইঞ্চি লম্বা হয়। হালকা সবুজ স্ত্রী ও পুরুষফুল একই গাছে ধরে। ফল হালকা সবুজ বা হলুদ ও গোলাকৃতি ব্যাস ১/২ ইঞ্চির কম বেশি হয়। কাঠ অনুজ্জল লাল বা বাদামি লাল। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে ই দেখা যায়। গাছ ৪/৫ বছর বয়সে ফল দেয়। আগষ্ট - নভেম্বর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। বীজ দিয়ে আমলকির বংশবিস্তার হয়। বর্ষাকালে চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। আমলকির ভেষজ গুণ রয়েছে অনেক। ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ থাকে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। আমলকিতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। একজন বয়স্ক লোকের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার। দিনে দুটো আমলকি খেলে এ পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। আমলকি খেলে মুখে রুচি বাড়ে। স্কার্ভি বা দন্তরোগ সারাতে টাটকা আমলকি ফলের জুড়ি নেই। এছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তহীনতার জন্যও খুবই উপকারী।

----------------------------------------------------

আমড়াঃ





বৃক্ষগুলি ২০-৩০ ফুট উঁচু হয়, প্রতিটি যৌগিক পাতায় ৮-৯ জোড়া পত্রক থাকে পত্রদন্ড ৮-১২ ইঞ্চি লম্বা এবং পত্রকগুলো ২-৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। কাঁচা ফল টক বা টক মিষ্টি হয়, তবে পাকলে টকভাব কমে আসে এবং মিষ্টি হয়ে যায়। ফলের বীজ কাঁটাযুক্ত। ৫-৭ বছরেই গাছ ফল দেয়। এই ফল কাচা ও পাকা রান্না করে বা আচার বানিয়ে খাওয়া যায়। ফল, আগস্ট মাসে বাজারে আসে আর থাকে অক্টোবর পর্যন্ত। আমড়া কষ ও অম্ল স্বাদযুক্ত ফল। এতে প্রায় ৯০%-ই পানি, ৪-৫% কার্বোহাইড্রেট ও সামান্য প্রোটিন থাকে। ১০০ গ্রাম আমড়ায় ভিটামিন-সি পাওয়া যায় ২০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৭০ মাইক্রোগ্রাম, সামান্য ভিটামিন-বি, ক্যালসিয়াম ৩৬ মিলিগ্রাম, আয়রন ৪ মিলিগ্রাম। আমড়ায় যথেষ্ট পরিমাণ পেকটিনজাতীয় ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টজাতীয় উপাদান থাকে। আমড়া একটি ভিটামিন-সি-সমৃদ্ধ ফল (প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ২০ মিলি গ্রাম পাওয়া যায়)। ইহা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ওজন কমাতে সহায়তা করে, রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টজাতীয় উপাদান থাকায় আমড়া বার্ধক্যকে প্রতিহত করে।

-------------------------------------------------------

বেতফলঃ





বেতের ফল আঙুরের মতো থোকায় ধরে। একটি থোকায় ২০০টি পর্যন্ত ফল ধরে। ফুল আসে কার্তিক মাসে আর ফল পাকে চৈত্র মাসে। বেতফল দেখতে গোলাকার, লম্বায় হয়। বেতফল একটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং উপাদেয় জাতীয় ফল। বেত গাছে এই ফল ধরে বলে তাকে বেতফল বলে। একটি পূর্ণবয়স্ক বেতগাছ ৪৫ থেকে ৫৫ ফুটেরও বেশি লম্বা হয়ে থাকে। দেশে ছয় প্রজাতির বেতফল পাওয়া যায়। একটি থোকায় ২০০টি পর্যন্ত ফল ধরে। ফলের খোসা পাতলা ডিমের খোসার মতো। পাকা ফলের শাঁস নরম, খেতে টক-মিষ্টি।

----------------------------------------------------------

চালতাঃ





চালতা ফল দিয়ে চাটনি ও আচার তৈরি হয়। এটি স্থানবিশেষে চালিতা, চাইলতে ইত্যাদি নামেও অভিহিত। গাছটি দেখতে সুন্দর বলে শোভাবর্ধক তরু হিসাবেও কখনো কখনো উদ্যানে লাগানো হয়ে থাকে। চালতা গাছ মাঝির আকারের চিরহরিৎ বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। এ গাছ উচ্চতায় ১৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। গাছের গায়ে লালচে রঙের চকচকে বাকল থাকে। পাতার কিনারা খাঁজ কাটা, শিরা উঁচু সমান্তরাল। চালতার সাদা রঙের ফুল দেখতে সুন্দর ; এটি সুগন্ধযুক্ত। ফুলের ব্যাস ১৫-১৮ সেন্টিমিটার। ফুলে পাঁচটি মোটা পাঁপড়ি থাকে ; বৃতিগুলো সেসব পাঁপড়িকে আঁকড়ে ঘিরে রাখে। বছরের মে-জুন মাসে ফুল ফোটার মৌসুম। ফল টক বলে চালতার আচার, চাটনি, টক ডাল অনেকের প্রিয় খাদ্য। পাকা ফল পিষে নিয়ে নুন-লংকা দিয়ে মাখালে তা বেশ লোভনীয় হয়। গ্রাম এলাকায় সাধারণত জঙ্গলে এ গাছ জন্মে ; কখনো কখনো দু’একটি গাছ বাড়ির উঠানে দেখা যায়। চালতা ফলের যে অংশ খাওয়া হয় তা আসলে ফুলের বৃতি। প্রকৃত ফল বৃতির আড়ালে লুকিয়ে থাকে। ফল বাঁকানো নলের মত ; ভিতরে চটচটে আঠার মধ্যে বীজ প্রোথিত থাকে। চালতা অপ্রকৃত ফল; মাংসল বৃতিই ভক্ষণযোগ্য।

--------------------------------------------------------

ডেউয়াঃ





ডেউয়া এক ধরনের অপ্রচলিত টক-মিষ্টি ফল। বর্ষাকালের মাঝামাঝির দিকে হলুদরঙা, এবড়োথেবড়ো আকারের কিছু ফল বিক্রি করতে দেখা যায় রাস্তার ধারে বসা ফল বিক্রেতাদের। বুনো বলে ভদ্রস্থ ফলের দোকানে স্থান পায় না এই ফলটি। পথ চলতে থাকা পথচারী এই ফল দেখে হঠাত্‍ই থমকে দাঁড়ান, কৌতূহলের বশে কেউ কেউ কিনেও ফেলেন। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটির নাম ডেউয়া। ডেউয়া গাছ বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট, বড় আকারের বৃক্ষ। প্রায় ২০-২৫ ফুট উঁচু হয়, এর ছাল ধূসর-বাদামী রঙের। ফল কাঁঠালের ন্যায় যৌগিক বা গুচ্ছফল। বহিরাবরন অসমান। কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে বহিরা বরণ হলুদ। ভিতরের শাঁস লালচে হলুদ। ফলের ভেতরে থাকে কাঁঠালের ছোট কোয়ার (কোষের) মত কোয়া এবং তার প্রতিটির মধ্যে একটি করে বীজ থাকে। গ্রাম বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় ফলডেউয়া । ফুল গুলো অতি ক্ষুদ্র, হলুদাভ, একসাথে জড়িয়ে একটি গোলাকৃতির হয়। ফল অনেকটা অনিয়মিত গোলাকৃতির, ২-৫ ইঞ্চি চ্ওড়া হয়, পাকলে হলুদ রঙ ধারন করে।

-----------------------------------------------------

ফলসাঃ





ফলসা বাংলাদেশের একটি অপ্রচলিত ফল। এটি প্রধানতঃ দক্ষিণ এশিয়ার ফল। পাকিস্তান থেকে কম্বোডিয়া পর্যন্ত এর দেখা মেলে। অন্যান্য ক্রান্তীয় অঞ্চলেও এর ব্যাপক চাষ হয়। ফলসা গাছ 'গুল্ম' বা ছোট 'বৃক্ষ', যা আট মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর ফুল হলুদ, গুচ্ছাকারে থাকে। ফলসা ফল ড্রুপ জাতীয়, ৫-১২ মিমি ব্যাস বিশিষ্ট, পাকলে কালো বা গাঢ় বেগুনি রঙের হয়।

-------------------------------------------------

গাবঃ





বাংলাদেশে দুই ধরনের গাব বেশি দেখা যায়। একটি সুস্বাদু ও মিষ্টি, একে বিলাতি গাব বলা হয়। ইংরেজিতে একে বলা হয় Mabolo, Korean mango বা Velvet-apple (Diospyros discolor বা Diospyros blancoi)। পাকলে এর রঙ হয় গাঢ় লাল। খোসার উপরটা মখমলের মত। ফলের ভেতরটা সাদা। এটি বহুল পরিমাণে বাজারজাত করা হয় এবং জনপ্রিয় একটি ফল। অন্যটিকে দেশি গাব বলা হয়। এর ইংরেজি নাম Indian Persimmon (Diospyros peregrina)। এটি খেতে হালকা মিষ্টি ও কষযুক্ত। কাঁচা ফল সবুজ এবং পাকলে হলুদ হয়ে যায়। পাকা ফলের ভেতরটা আঠালো ও চটচটে। বাংলাদেশ ও উপকূলীয় পশ্চিম বঙ্গে এটি প্রচুর জন্মে। এটি সাধারণতঃ খাওয়া হয়না, ভেষজ চিকিৎসায় এর কিছু ব্যবহার আছে। এই গাব হতে আঠা প্রস্তুত করা হয় যা বাংলাদেশের মৎসজীবিরা তাদের জালে ব্যবহার করেন। ফলে জাল টেকসই হয়, পানিতে সহজে নষ্ট হয়না। দেশি গাবের প্রধান ব্যবহার এটাই।

---------------------------------------------------------

অড়বড়ইঃ





অড়বড়ই', 'অরবরই' বা 'অরবড়ই' একটি ছোট অপ্রচলিত টক ফল। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে একে নলতা, লেবইর, ফরফরি, নইল, নোয়েল, রয়েল, আলবরই, অরবরি ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। ফলটির ব্যাস ০.৫ থেকে ১ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। দেখতে হাল্কা হলুদ রং এর এই ফল এর ত্বক খাঁজ কাটা থাকে। পৃথীবির অনেক স্থানে অরবড়ই গাছ লাগানো হয় সৌন্দর্য-বৃক্ষ হিসেবে। অরবড়ই গাছ গুল্ম এবং বৃক্ষের মাঝামাঝি আকারের হয়, যা দুই থেকে নয় মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।

-------------------------------------------------------

সাতকরাঃ





সাতকরা লেবু জাতীয় এক প্রকার টক ফল এবঙ ঘ্রানযুক্ত, যা রান্নায় ব্যবহৃৎ হয় সব্জির আনুষাঙ্গিক হিসেবে। সাতকরা একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল এবঙ এর পুষ্টিমান অনেক উন্নত। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। এটি ঔষধী হিসেবেও ব্যবহৃৎ হয়ে থাকে।

---------------------------------------------------

সফেদাঃ





সফেদা ফল বড় উপবৃত্তাকার 'বেরি' জাতীয়। এর ব্যাস ৪-৮ সেমি হয়। দেখতে অনেকটা মসৃণ আলুর মত। এর ভেতরে ২-৫ টি বীজ থাকে। ভেতরের শাস হালকা হলুদ থেকে মেটে বাদামি রঙের হয়। বীজ কালো। সফেদা ফলে খুব বেশি কষ থাকে। এটি গাছ থেকে না পাড়লে সহজে পাকে না। পেড়ে ঘরে রেখে দিলে পেকে নরম ও খাবার উপযোগী হয়। সফেদা ফল বেশ মিষ্টি। কাঁচা ফল শক্ত এবং 'স্যাপোনিন' (saponin) সমৃদ্ধ। সফেদা গাছ উষ্ণ ও ক্রান্তীয় অঞ্চল ছাড়া বাঁচে না। শীতল আবহাওয়ায় সহজেই মরে যায়। সফেদা গাছে ফল আসতে ৫-৮ বছর লাগে। এতে বছরে দুইবার ফল আসতে পারে যদিও গাছে সারা বছর কিছু কিছু ফুল থাকে।

---------------------------------------------------

কলাঃ





বারো মাস পাওয়া যায় বলে ফল হিসেবে কলাকে অনেকেই গুরুত্ব দেন না। কিন্তু অত্যন্ত উপকারী এই ফলটি যথেষ্ট গুরুত্বের দাবিদার! সারা বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফলগুলির একটি হলো কলা। পাকা কলা ফল হিসেবে তো বটেই, কাঁচা কলা সবজি হিসেবেও খাওয়া হয়। শুধু কলা নয়, খাদ্য হিসেবে খাওয়া হয় কলাগাছের কাণ্ড এবং ফুলও! কলাগাছের কাণ্ডের একদম ভেতরের নরম অংশকে তরকারি হিসেবে খেতে পছন্দ করেন অনেকেই। কুঁচো চিংড়িমাছ দিয়ে কাণ্ডের ভাজি বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার। কলার ফুলকে বলা মোচা বা থোড়। কলার মোচারও বেশ চমত্‍কার ভাজি হয়। কাঁচা কলার ঝোল অত্যন্ত বলকারক জিনিস। কাঁচা কলার তরকারি ও ভাজি পেটের অসুখের জন্য খুবই উপকারী। আজকাল কাঁচা কলা দিয়ে তৈরি চিপসও তৈরি হচ্ছে।

পাকা কলা এমনিতে তো খাওয়া হয়ই, ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের খাবার তৈরির উপকরণ হিসেব। যেমন - বিস্কুল, পিঠা, আইসক্রিম, ফ্রুট সালাদ, কাস্টার্ড, ফালুদা, মিল্কশেক, লাচ্ছি, কেক, চকলেট ইত্যাদি।

কলায় রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান যা মানুষের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কলায় রয়েছে -

খাদ্যশক্তি- ৮৯ কিলোক্যালরি

শর্করা- ২২.৮৪ গ্রাম

চিনি- ১২.২৩ গ্রাম

খাদ্যআঁশ- ২.৬ গ্রাম

চর্বি- ০.৩৩ গ্রাম

আমিষ- ১.০৯ গ্রাম

থায়ামিন- ০.০৩১ মিলিগ্রাম

রিবোফ্লেভিন- ০.০৭৩ মিলিগ্রাম

নিয়াসিন- ০.৬৬৫ মিলিগ্রাম

প্যানটোথেনিক অ্যাসিড- ০.৩৩৪ মিলিগ্রাম

ভিটামিন বি৬- ০.৪ মিলিগ্রাম

ফোলেট- ২০ আইইউ

ভিটামিন সি- ৮.৭ মিলিগ্রাম

আয়রন- ০.২৬ মিলিগ্রাম

ম্যাগনেসিয়াম- ২৭ মিলিগ্রাম

ম্যাংগানিজ- ০.২৭ মিলিগ্রাম

ফসফরাস- ২২ মিলিগ্রাম

পটাশিয়াম- ৩৫৮ মিলিগ্রাম

সোডিয়াম- ১ মিলিগ্রাম

জিংক- ০.১৫ মিলিগ্রাম

ফ্লুরাইড- ২.২ আইইউ

কলাতে উপস্থিত এসব খাদ্য উপাদান মানুষের শরীরের নানা উপকার সাধন করে। যেমন -

দীর্ঘদিনের আলসারের যন্ত্রণা উপশমে কলা সহায়তা করে। পরিপাকতন্ত্রকে হজমে সহায়তা করতে সাহায্য করে কলা। কলায় উপস্থিত খাদ্যআঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। কলায় উপস্থিত আমিষ ও অন্যান্য উপাদান টিস্যু গঠনকারী প্রয়োজনীয় উপাদান।

পেটের ভেতরের ক্ষতিকর জীবাণুকে উপকারী ব্যাকটেরিয়ায় রূপান্তরিত করে কলা। বাতের রোগীদের জন্য কলা খুবই উপকারী। বিশেষ করে গেটে বাতের ব্যথা দূরীকরণে কলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কলাতে রয়েছে আয়রন, ফসফরাস ও ফোলেট যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

কলা হতাশা কাটাতে সাহায্য করে। মানুষের শরীরে সেরোটোনিনের মাত্রা কমে গেলে মানুষ অবসাদ ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কলায় রয়েছে ট্রিপ্টোফ্যান নামক উপাদান যা সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়ে হতাশা কাটাতে সহায়তা করে।

মাসিক পূর্ববর্তী বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা কাটাতে কলার ভূমিকা অপরিসীম।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কলা প্রাকৃতিক এন্টাসিড হিসেবে কাজ করে। বুকে জ্বালা পোড়া কমাতে সাহায্য করে কলা।

কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, প্রতিদিন তিনটি করে কলা খেলে দৈনন্দিন পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়, যা স্ট্রোকের সম্ভাবনা একুশ শতাংশ কমিয়ে দেয়।

গর্ভবতী মায়ের মানসিক চাপের ফলে যে অতিরিক্ত তাপমাত্রার উত্‍পাদন হয়, তা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে কলা।

ধূমপান ত্যাগ করার জন্য কলা অত্যন্ত উপকারী। কলাতে রয়েছে ভিটামিন বি৬, বি১২, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম যা নিকোটিনের ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।

মানসিক চাপ কমাতেও কলা সাহায্য করে। কলা মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহে সহায়তা করে। ফলে মানসিক চাপ কমে।

কলায় রয়েছে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুকরোজ ও ফাইবার যা তাত্‍ক্ষণিক শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে।

কলা ওজন কমাতেও সাহায্য করে। ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে কলা ওজন কমায়।

-------------------------------------------------

আঙ্গুরঃ





আঙ্গুর আমাদের অতি পরিচিত একটি সুস্বাদু ফল। এ ফলের নানা খাদ্য ও ভেষজগুণ আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষকরা আঙ্গুরে নানা খাদ্যগুণ ও ভেষজগুণের সন্ধান পেয়েছেন। তারা আঙ্গুরকে একদিকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন অন্যদিকে ভেষজ শিল্পেও ব্যবহার করছেন।

পৃথিবীর প্রায় সব দেশে যে ফল পাওয়া যায় তার অন্যতম আঙ্গুর। এ ফলের সুমিষ্ট স্বাদ অনেককেই ফলটির গুণগ্রাহী করে তুলেছে। কালো, সবুজ ও লাল এই তিন রঙের আঙ্গুর সাধারণভাবে দেখতে পাওয়া যায়। আঙ্গুরের প্রায় ৭৯ শতাংশই পানি। এ ছাড়া, এতে ফ্রুকটোজ এবং খনিজ উপাদানসহ দেহের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান আছে।এ ফল পছন্দ করেন না এমন মানুষ বোধহয় তেমন একটা পাওয়া যাবে না।

ভিটামিন এ, বি, সি ছাড়াও আঙ্গুরে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, লৌহ, আয়োডিন এবং ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদান। আঙ্গুরের ফ্রুকটোজ সহজে রক্তে প্রবেশ করতে পারে এবং একে গুরুত্বপূর্ণ শর্করা হিসেবে গণ্য করা হয়।

চিকিৎসা ও পুষ্টিবিদরা আঙ্গুর, খেজুর এবং কিশমিশকে পূর্ণাঙ্গ খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করেন। এ তিনটি খাদ্য থেকে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন পাওয়া যায়। আঙ্গুর গোত্রীয় ফল দেহের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করতে পারে। তাই অল্প পরিমাণে আঙ্গুর বা কিশমিশ খেয়ে মানুষ দৈহিক ও মানসিক পরিশ্রমের জন্য প্রচুর শক্তি পেতে পারেন।

------------------------------------------------------

আপেলঃ





আপেল এমনই একটি ফল যা খেতে মজা, স্বাস্থ্যকর এবং নানাভাবে খাওয়া যায়৷ আপেলের ব্যবহার অনেকভাবে হয়ে থাকে৷ ফল হিসেবে তো খাওয়া হয়ই, এছাড়া ভাজি হিসেবে, অন্য রান্নার সঙ্গে, জেলি, সালাদ, আচার, ওয়াইন, জুস, কেক, চকলেট এবং আরো অনেক রকমভাবে!

আপেলে রয়েছে মিনারেল, আয়রন এবং প্রচুর ভিটামিন যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন৷ যারা নিয়মিত আপেল খায় তাদের শারীরিক সমস্যাও হয় কম৷ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, আপেল কোলেস্টেরল কমাতে এবং ক্যানসার রোধেও সহায়তা করে৷

আপেলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’, যা প্রতিদিন মানুষের শরীরে প্রয়োজন৷ সম্ভবত পরিবেশ দূষণের কারণে আজকাল অনেক মানুষের আপেল-অ্যালার্জি দেখা দেয়৷ সেক্ষেত্রে আপেল সরাসরি না খেয়ে সেদ্ধ বা রান্না করে খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা ৷

আপেলের শতকরা ৭০ ভাগ ভিটামিনই থাকে আপেলের খোসা এবং খোসার ঠিক নীচে ৷ তবে আজকাল অনেকে অবশ্য এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করেন ৷ কারণ, আপেল উৎপাদনে আজকাল অনেক সময় কেমিক্যাল ব্যবহার করার ফলে আপেলের খোসাতেও তার প্রভাব পরে৷ তাই খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া ভালো বলেই পরামর্শ দেন অনেক খাদ্য বিশেষজ্ঞ ৷

---------------------------------------------------

১ম পর্বের লিঙ্ক নিচে

Click this link

৩য় পর্বের লিঙ্ক নিচে

Click this link

ধন্যবাদ সবাইকে Happy

বিষয়: বিবিধ

৯৪৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File