ফল, দেশি-বিদেশী, জানা-অজানা কিছু ফল ও গুনাগুন । (ছবি ব্লগ) পর্বঃ-১
লিখেছেন লিখেছেন মরহুম সাদেক ২৫ আগস্ট, ২০১৩, ০৫:৪৮:০৬ বিকাল
সতর্কতা : ফরমালিন যুক্ত ফলমূলে বাজার এখন সয়লাব। সুতরাং এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকা উচিৎ।
হালা ফল বা কেয়া ফলঃ
এটি আমাদের কাছে একটি অপরিচিত নাম। বাংলায় এটি কেয়া নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Pandanus tectorius. এটি একটি অদ্ভুত সুদর্শন ফল। হালা ফল সাধারণত পূর্ব অস্ট্রেলিয়া ও প্যাসিফিক আইল্যান্ডস, ভারত ও আমাদের বাংলাদেশেও পাওয়া যায়। এটিকে প্রবালপ্রাচীরও বলা হয়। এটি স্থানীয়ভাবে খুবই জনপ্রিয় ঔষধ ও ফল হিসেবে পরিচিত। হালা গাছ ফল শুধুমাত্র মহিলা গাছ উপর বৃদ্ধি. এটি হলুদ রং হলে খাওয়া যায়. এটা দুর্ভিক্ষের সময় একটি খাদ্য হিসাবে পলিনেশিয়া সর্বত্র ব্যবহৃত হয়। হালা গাছ সাধারণত লম্বায় ৪-১৪ মিটার পর্যন্ত হয়। এটির পাতা সাধারণত ৯০-১৫০ সে.মি. হয়।
ব্যবহারঃ
1. ফল কাঁচা বা রান্না খাওয়া যায়.
2. ফলের FIBROUS প্রকৃতির একটি প্রাকৃতিক দাঁতের রেশমের ফেঁসো তোলে.
3. গাছ এর পাতার প্রায়ই যেমন কায়া জ্যাম হিসাবে খাওয়া হয়। এর মিষ্টি গন্ধ থালা - বাসনের জন্য ব্যবহৃত হয়.
4. পাতার ঔষধি বৈশিষ্ট্য, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় মাথাব্যাথা এবং ফুলের নিরাময় তেল আছে.
5. এটির পাতার গন্ধ curries বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার করা হয় যেখানে শ্রীলংকান পাকপ্রণালীর, ব্যবহার করা হয়.
6. পাতার ঝুড়ি, মাদুর পাল - খাটানর দণ্ডবিশেষ নৌকো পালের, তালপাতা ছাদ, এবং ঘাস skirts করতে পলিনেশিয়রাও দ্বারা ব্যবহার করা হয়.
7. শুষ্ক ফাইবার পেইন্টিং এর জন্য ব্রাশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়. এর কাপা/টাপা (একধরনের পেইন্ট) মুছে ফেলা কঠিন।
--------------------------------------------------------
বেলঃ
বেল একটি পুষ্টিকর ফল। এতে থাকে প্রচুর শর্করা, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ লবণ। গ্রীষ্মের কাঠফাটা দুপুরে এক গ্লাস বেলের শরবত খেলে কার না প্রাণ জুড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেলের জুড়ি নেই।
---------------------------------------------------
লিচুঃ
গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে লিচু আগে বাজারে ওঠে এবং জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। খাদ্যমানের দিক থেকে লিচু একটি উত্কৃষ্ট ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শ্বেতসার, ভিটামিন ও খনিজ লবণ। রূপে-গুণে লিচু সবার প্রিয় ফল।
-----------------------------------------------------
পানি ফলঃ
গরমকালে পানি ফল আরেকটি পুষ্টিকর ফল। এতে শতকরা ৪.৭ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায় যা আপেল, আঙ্গুর, কলা ও পেয়ারা থেকে বেশি। এছাড়া রয়েছে শ্বেতসার, খনিজ লবণের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি। খাদ্যশক্তি পাওয়া যায় ১১৫ কিলোক্যালরি।
-------------------------------------------------------
লটকনঃ
লটকন জাতীয় টক-মিষ্টি ফলে একসঙ্গে টক ও মিষ্টি ফলের গুণ রয়েছে। এ ধরনের ফল খেলে মানুষের শরীরের টক ও মিষ্টির ঘাটতি যথেষ্ট পরিমাণে পূরণ হয়। বলা হয়ে থাকে প্রতিদিন দু’চারটি লটকন জাতীয় ফল আমাদের দেহের ভিটামিন-সি এর ঘাটতি পূরণ করার জন্য যথেষ্ট। কোনো কারণে বমি বমি ভাব অনুভব হলে তা খেলে দ্রুত সেরে যায়। শরীরে ক্ষত বা ঘা থাকলে তা খেলে দ্রুত ক্ষত বা ঘা শুকায়। অত্যাধিক তৃষ্ণা নিবারণে বন্ধুর মতো কাজ করে এই টক জাতীয় ফলটি।
----------------------------------------------------
জামরুলঃ
বাংলাদেশের অনেক জেলায় এই ফলটি প্রচুর পরিমাণে জন্মে। একেক দেশে ফলটি একেক নামে পরিচিত। ফিলিপাইন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং সামোয়ার নিম্নভূমিতে প্রচুর পরিমাণে জামরুল জন্মে। এই ফলটি দেখতে বেশ সুন্দর। ফলের ভেতরে কোনো আঁশ থাকে না। তবে রসে থাকে ভরপুর। জামরুল পুষ্টিগুণে অনন্য। এতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খনিজ পদার্থ।
----------------------------------------------------
বাঙ্গিঃ
বাঙ্গি একটি পুষ্টিকর ফল। বাঙ্গির পুষ্টিগুণ অনেক, এতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ক্যারোটিন ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
-----------------------------------------------------
তরমুজঃ
প্রথমেই আসি তরমুজের কথা নিয়ে। গ্রীষ্মের শুরু থেকেই বাজারে এবং রাস্তার পাশে অনেক জায়গায় স্তূপ আকারে সাজানো থাকে তরমুজ। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে তরমুজকে বলে ফলের রাজা। তরমুজে রয়েছে ত্বকে আর্দ্রতা জোগানোর অসীম ক্ষমতা। তরমুজ ভিটামিন এ ও সি সমৃদ্ধ ফল। এতে রয়েছে ৯৭ ভাগ জলীয় অংশ, সেজন্য গরমে তরমুজ খাওয়া ভালো। কারণ ক্রমাগত ঘাম হওয়ার জন্য যে জলীয় অংশ শরীর থেকে বেরিয়ে যায় তা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এছাড়া তরমুজ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হজমে সাহায্য করে ও কিডনির কাজকর্ম ঠিক রাখে।
--------------------------------------------------
করমচাঃ
ভীষণ টক স্বাদের এই ফলটি আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হলেও শহুরে বাজারে এর দেখা খুব কম মেলে। গ্রীষ্মের শেষ এবং বর্ষা শুরুর সন্ধিক্ষণে পথে-ঘাটে বিক্রেতার ডালায় দেখতে পাওয়া যায় করমচা। টক স্বাদের বলে লবণ দিয়ে মাখিয়ে করমচা খেতে ভীষণ ভালো লাগে। নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হলেও করমচা আমাদের দেশে মোটামুটি অবহেলিতই বলা চলে!
---------------------------------------------------
কামরাঙ্গাঃ
কামরাঙ্গা ফল বিশ্বে বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন_ স্টার ফ্রুট (তারা ফল) ক্যারামবোলা প্রভৃতি। এই ফলটির উৎপত্তি মূলত শ্রীলঙ্কায়। পরবর্তী সময়ে ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, চীনসহ ইউরোপ-আমেরিকা মহাদেশে চাষ হয় এবং এটি বিশ্বব্যাপী টক-মিষ্টি ফল হিসেবে বেশ পরিচিত। কিন্তু উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কামরাঙ্গায় উল্লেখযোগ্য আরো রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি৯ (ফোলেট) মিনারেল হিসেবে রয়েছে পটাশিয়াম ফসফরাস জিংক প্রভৃতি।
এটি এন্টি অক্সিডেন্টের ভালো উৎসই শুধু নয় এর রয়েছে এন্টি মাইক্রোবিয়াল এবং ক্যানসার বা অস্বাভাবিক কোষ অপরাসরণের ক্ষমতা। কামরাঙ্গা ফলের মধ্যে যতই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং মিনারেল থাকুক না কেন, পাকা কামরাঙ্গা জুস যতই সুস্বাদু লাগুক না কেন কামরাঙ্গার মধ্যে এমন দুইটি উপাদান রয়েছে যা মানব শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ ঘটাতে পারে এবং অতীতে বহু মানুষের কামরাঙ্গা খাবার কারণে মৃত্যু ঘটেছে এমন কি এই ফল খাবার ১ ঘণ্টা পরেই মৃত্যু ঘটার মতো ঘটনা ঘটেছে। খাবার পর যে সব লক্ষণ বা প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তার মধ্যে বিরামহীন হেচকি , বমি বমি ভাব, মাথা ঘুরানো, মানসিক ভারসাম্যহীনতা প্রভৃতি।
--------------------------------------------------
কুল বা বরইঃ
বরই গাছ ছোট থেকে মাঝারি আকারের ঝোপাল প্রকৃতির বৃক্ষ। বরই গাছের স্বাভাবিক উচ্চতা ১২-১৩ মিটার। এই গাছ পত্রঝরা স্বভাবী অর্থাৎ শীতকালে পাতা ঝরে, বসন্তে নতুন পাতা আসে। বরই গাছের ডাল-পালা ঊর্ধ্বমুখী। বৎসরের সেপ্টেম্বরে - অক্টোবরে মৌসুমে গাছে ফুল আসে। ফল ধরে শীতে। ফল গোলাকার, ছোট থেকে মাঝারি। ফল আকারে ছোট, কমবেশী ২.৫ সেন্টিমিটার। ফল পাকলে রঙ হলুদ থেকে লাল বর্ণ হয়। কাঁচা ও পাকা উভয় পদের বরই খাওয়া হয়। স্বাদ টক ও কাঁচামিঠা জাতীয়। বরই রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। পাকা বরই শুকিয়ে চাটনী প্রস্তুত করা হয়।
----------------------------------------------------------
কাঁঠালঃ
কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল হলেও এই সুস্বাদু ফলের পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। পাকা কাঁঠালের ক্যালরি মূল্য প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ কিলোক্যালরি এবং মোট খনিজ লবণের পরিমাণ প্রায় ০.৯। কাঁচা কাঁঠালের ফাইবারের পরিমাণ পাকা কাঁঠালের চেয়ে বেশ কয়েক গুণ বেশি। তাই ডায়াবেটিক মানুষের জন্য কাঁচা কাঁঠাল উপকারী। রক্তের চিনির মাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য কাঁচা কাঁঠালের জুড়ি নেই। কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে মাছ অথবা মাংসের মজাদার রেসিপি তৈরি করা যায় যা একদিকে যেমন মুখরোচক তেমনি অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পাকা কাঁঠালের কোয়া পরিমিত পরিমাণে খাওয়া ভালো।
-------------------------------------------------------
আমঃ
পুষ্টিগুণ: প্রচুর ক্যারোটিন, ভিটামিন সি ও ক্যালোরি আছে।
ঔষধিগুণ: আয়ুর্বেদীয় ও ইউনানী পদ্ধতির চিকিৎসায় পাকা ফল ল্যাকজেটিভ, রোচক ও টনিক বা বলকারকরূপে ব্যবহৃত হয়। লিভার বা যকৃতের জন্য উপকারী। রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে পাকা এবং কাঁচা, উভয় প্রকার আমই মহৌষধ। রক্ত পড়া বন্ধকরণে আমগাছের বিভিন্ন অঙ্গের রস উপকারী। কচি পাতার রস দাঁতের ব্যথা উপশমকারী। আমের শুকনো মুকুল পাতলা পায়খানা, পুরাতন আমাশয় এবং প্রস্রাবের জ্বালাযন্ত্রণা উপশম করে। গাছের আঠা পায়ের ফাটা ও চর্মরোগে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। জ্বর, বুকের ব্যথা, বহুমূত্র রোগের জন্য আমের পাতার চূর্ণ ব্যবহৃত হয়।
ব্যবহার: আম থেকে চাটনি, আচার, আমসত্ত্ব, মোরব্বা, জেলি ও জুস তৈরি হয়।
-----------------------------------------------------
পেয়ারাঃ
পুষ্টিগুণ: প্রচুর ভিটামিন সি আছে।
ঔষধিগুণ: শিকড়, গাছের বাকল, পাতা এবং অপরিপক্ক ফল কলেরা, আমাশয় ও অন্যান্য পেটের পীড়া নিরাময়ে ভাল কাজ করে। ক্ষত বা ঘা-এ থেঁতলানো পাতার প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। পেয়ারার কচি পাতা চিবালে দাঁতের ব্যথা উপশম হয়।
ব্যবহার: পেয়ারা থেকে জ্যাম, জেলি ও জুস তৈরি হয়।
----------------------------------------------------
জামঃ
পুষ্টিগুণ: ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, লৌহ ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ।
ঔষধিগুণ: জামের কচি পাতা পেটের পীড়া নিরাময়ে সাহায্য করে। জামের বীজ থেকে প্রাপ্ত পাউডার বহুমূত্র রোগের ঔষধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। পাকা জাম সৈন্ধব লবণ মাখিয়ে ৩-৪ ঘন্টা রেখে চটকিয়ে ন্যাকড়ার পুঁটলি বেঁধে টানিয়ে রাখলে যে রস বের হয়, তা পাতলা দাস্ত, অরুচি বমিভাব দূর করে। জাম ও আমের রস একত্রে পান করলে বহুমূত্র রোগীর তৃষ্ণা প্রশমিত হয়।
ব্যবহার: জাম থেকে রস, স্কোয়াশ ও অন্যান্য সংরক্ষিত খাদ্য তৈরি করা যায়।
-----------------------------------------------------
লুকলুকি বা পাইন্ন্যাগুলাঃ
লুকলুকি বা পাইন্ন্যাগুলা একটি মিষ্টি ও সুস্বাদু দেশীয় ফল। দেখতে আঙুর ফলের মতো। এ ফলে রয়েছে প্রচুর টসটসে রস। তাই স্থানীয় ভাষায় এর নাম ‘পাইন্ন্যাগুলা’।
পাইন্ন্যাগুলা ফলে রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ আয়রন। সালফার, ফসফেট ছাড়াও ১০ ভাগ রয়েছে ভিটামিন সি। অন্যান্য উপাদানও রয়েছে সমভাবে।
ওষুধি ফল হিসেবে পাইন্ন্যাগুলার বেশ কদর রয়েছে। এ ফল খেলে হজমশক্তি ও লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। হৃদরোগীদের জন্য এটি উপকারী ভেষজ ঔষধের কাজ করে। তাছাড়া এর পাতা ও ফল ডায়রিয়া রোগের প্রতিরোধক। শুকনো পাতা ব্রংকাইটিস রোগের জন্য বিশেষ উপকারী। এর শিকড় দাঁতের ব্যাথা নিরাময়ে কাজ করে।
-----------------------------------------------------
২য় পর্বের লিঙ্ক নিচে
Click this link
৩য় পর্বের লিঙ্ক নিচে
Click this link
ধন্যবাদ
বিষয়: বিবিধ
৮২৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন