দিগন্তের ওপারে রমজান (নয়া দিগন্ত)
লিখেছেন লিখেছেন সুমাইয়া হাবীবা ২৬ জুন, ২০১৬, ০৩:৩১:৩৩ দুপুর
বিশ্বের সব দেশের মুসলমানরাই রমজান মাসকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পালন করে থাকি। ভিনদেশের মুসলমানদের রোজা-ইফতার ও সাহরী নিয়ে লিখেছেন
সুমাইয়া হাবীবা
এক বছরে পাল্টে যায় কত চিত্র কত রূপ। তবু বছর ঘুরে রমজান তার আপন মহিমা নিয়ে উপস্থিত হয় পৃথিবীতে। এক দিকে, সুখের ঝলকানি অপর দিকেই যন্ত্রণার হানাহানি। তবু আপন রবের সান্নিধ্যে যাবার সব থেকে বড় মাধ্যম রমজানকে কেউ হাতছাড়া করে না। সাদা কালো, উচ্চ নিম্ন, প্রাচ্য পাশ্চাত্য সবখানে সবার মাঝেই রমজান পালিত হচ্ছে। এ যেন পুরো পৃথিবীর মিলনমেলা!
সুইজারল্যান্ড
ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডেও রয়েছে মুসলিম জনগোষ্ঠী। এবার তাদের রোজা রাখতে হচ্ছে প্রায় ১৮ ঘণ্টা। কারণ গ্রীষ্মে সুইজারল্যান্ডের রাতগুলো খুব ছোট হয়। বেশির ভাগ মুসলিমই কর্মজীবী। তার পরও নিষ্ঠার সাথে সিয়াম পালন করে থাকে সুইস মুসলিমরা। ইফতারের কয়েক ঘণ্টা পরই সেহরি খেতে হয় বলে ইফতারে সুইসরা হালকা খাবার খেয়ে থাকে। ফলের জুস, খেজুরসহ কয়েক রকম ফল, কেক পেস্ট্রি, ডেজার্ট ইত্যাদিই প্রধানত মেনুতে থাকে। এ সংক্ষিপ্ত দৈর্ঘ্যরে রাত হওয়া সত্ত্বেও সুইসরা তারাবিহ আদায় করতে পিছপা হয় না। রমজানের পালনের অংশ হিসেবে মাগরিব নামাজ আদায়ের পর কুরআন তিলাওয়াত শুরু হয়। মসজিদে আসা প্রায় প্রতিটি মুসল্লিই তিলাওয়াতে অংশ নেয়। তারাবিহর আজান পর্যন্ত তিলাওয়াত চলে। তারপর তারাবিহ পড়ে একেবারে ঘরে ফেরে মুসল্লিরা।
বুলগেরিয়া
বুলগেরিয়াতে সব থেকে সংখ্যালঘু হলেও মুসলিমরা নিজেদের ধর্মীয় চেতনায় উজ্জীবিত। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকলেও রমজান পালনে সচেতন ও আন্তরিক। রাজধানী সোফিয়ায় বসবাসরত ৭০ হাজারের অধিক মুসলিমের জন্য একটি মাত্র মসজিদ রয়েছে। ফলে দূর-দূরান্ত থেকেই মুসলিমরা মসজিদে জামাতে মাগরিব ও তারাবিহ আদায় করতে আসে। তাই মসজিদেই ইফতারের ব্যবস্থা করা হয় আগত মুসল্লিদের জন্য। নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণীই তারাবিহতে অংশ নিতে আসে। দান সাদাকা জাকাত ফিতরা সবই মসজিদ অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বণ্টন করা হয়ে থাকে।
কসোভো
বলকান অঞ্চলের ছোট্ট মুসলিম দেশ কসোভোতেও মুসলিম সম্প্রদায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রমজান পালন করে থাকে। রমজান শুরুর মুহূর্তে রাজধানীর মসজিদে দলে দলে মুসলিমরা জমায়েত হয়। ইসলামি হামদ নাত গেয়ে রমজানকে স্বাগত জানানোর রীতি রয়েছে কসোভোর মুসলিম কমিউনিটিতে। প্রতি বছরই রমজানের প্রথম রাতে ইসলামি কালচারাল প্রোগ্রাম আয়োজন হয়ে থাকে। তারপর অনুষ্ঠান শেষে তারাবিহ আদায় করে ঘরে ফেরে মুসল্লিরা। স্থানীয় নিয়মিত খাবার দাবারই প্রচলিত ইফতার ও সেহরিতে। গ্র্যান্ড মুফতির ফতোয়া অনুযায়ী কোনো বাহুল্যতা করা হয় না। রমজানে বারগুলোতে অ্যালকোহল বিক্রি করা হয় না কসোভোতে।
কঙ্গো
আফ্রিকার দেশ কঙ্গো। যার মোট জনসংখ্যার ১০% মুসলিম। যার বেশির ভাগই গ্রামাঞ্চলের অধিবাসী এবং অধিকাংশই নি¤œবিত্ত। মসজিদগুলো বেশির ভাগই মাটি বাঁশ বেড়ার তৈরি। কিছু হাতেগোনা কংক্রিটের তৈরি। ফলে রমজানে বেশির ভাগ মুসল্লিকে খোলা আকাশের নিচেই তারাবিহ আদায় করতে হয়। অপেক্ষাকৃত অবস্থা ভালো মসজিদগুলোতে তারাবিহতে নারীরাও অংশ নেয়। নি¤œবিত্ত শ্রেণী বেশি হওয়ায় রমজানে দান সাদাকাহর মাধ্যমে মসজিদগুলো পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয় প্রতিবছর। ইফতার ও সেহরি দলবদ্ধভাবে খাওয়ার রেওয়াজ চালু আছে কঙ্গোতে। রাজধানীতে প্রধান মসজিদে বিশাল জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় তারাবিহর এবং ইফতারের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন মুসলিম এনজিও খেজুর, কুরআন শরিফসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিলি করে থাকে কঙ্গোতে।
আয়ারল্যান্ড
উত্তর গোলার্ধের দেশ হওয়ায় দীর্ঘতম রোজা পালন করছে আয়ারল্যান্ডের মুসলিমরাও। সবমিলে প্রায় ৭০ হাজার মুসলিম আছে আয়ারল্যান্ডে। তাদের জন্য রয়েছে মুসলিম সোসাইটি। সোসাইটির পক্ষ থেকে রমজান পালনে উদ্বুদ্ধ করা হয় প্রত্যেককে। বিশেষ খুৎবা ও দোয়ার আয়োজন থাকে। হিফজ প্রতিযোগিতাসহ নানা আয়োজন করা হয়। বিনামূল্যে কুরআন ও লিফলেট বিলি করা হয়। যাতে রমজানের মাহাত্ম্য ও করণীয় বর্জনীয় উল্লেখ থাকে। বেশির ভাগ মানুষই কর্মজীবী হওয়ায় প্রতিটি মসজিদেই ইফতারের আয়োজন করা হয়। লোকজন মসজিদেই ইফতার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তবে বাসা বাড়িতেও ইফতার সেহরি করে অনেকে। ফলের জুস, সফট ড্রিঙ্কস, ইয়োগার্ট ইত্যাদি পানীয় ইফতারে আইরিশদের প্রধান পছন্দ। এ ছাড়াও স্যুপ পাউরুটি সবজি মাংশের বিভিন্ন আইটেমও থাকে।
গ্রিনল্যান্ড
মেরু অঞ্চলের দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড। এখানে বড় শহর ন্যুকে মুসলিম বলতে সেখানে বসবাসরত লেবানিজ শরণার্থী ওয়াসিম আজাকীরকেই সবাই বোঝে। ন্যুকের একমাত্র মুসলিম। বহু বছর ধরে আছেন সেখানে। একটি রেস্টুরেন্ট চালান সেখানে। বরফে মোড়া গ্রিনল্যান্ডে সূর্য দু-তিন ঘণ্টার জন্য ডোবে। অর্থাৎ রোজা প্রায় ২২ ঘণ্টা। আজাকীর নিজের রেস্টুরেন্টে কাজ করেও রমজানের প্রতিটি রোজাই রাখেন। ইফতারের পর মাগরিব ও ইশা নামাজ ও নিজের খাবার তৈরি করতে করতেই তার দুই ঘণ্টা চলে যায়।
কষ্টকর সিয়াম সাধনার জন্য সংবাদমাধ্যমের হেডলাইন হওয়ার পরও আজাকীরের ভাষ্য মতে, শহরের একমাত্র নামাজ আদায়কারী ও রোজা পালনকারী মুসলিম হতে পেরে সে গর্বিত এবং তিনি কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাকে গ্রিনল্যান্ডে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আল্লাহ যত দিন তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তিনি নামাজ রোজা নিষ্ঠার সাথেই পালন করে যাবেন। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে মনে হয় রমজানে গ্রিনল্যান্ড ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয়, আমি চলে গেলে শহরে নামাজ রোজা পালন করার আর কেউ থাকবে না, তখন থেকে যাই।
- See more at: http://m.dailynayadiganta.com/detail/news/130974#sthash.5qtfUhsW.dpuf
লেখার লিংক
http://m.dailynayadiganta.com/detail/news/130974
বিষয়: বিবিধ
১৩২৪ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকিল্লাহ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন