লেখিকা (জল পড়ে পাতা নড়ে-৩)
লিখেছেন লিখেছেন সুমাইয়া হাবীবা ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৪:৫০:৪৩ বিকাল
জল পড়ে পাতা নড়ে-৩
ইদানীং মানুষের কাছে আর মুখ দেখাতে পারছিনা। মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে কথা। রুপবতী বা গুনবতী যে কোন একটাতো হতেই হয়। অথচ আমার বেলায় যেন এ দু’টোরই আকাল পড়েছে! আগের যুগে জন্মানোর দুখ আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।
আগের কালের মেয়েরা আমার মত নিষ্কর্মা হলেও চলতো। খাও দাও সংসার সামলাও ব্যস। আর একটু ঈমান আমল থাকলেই পাশ। সমাজে একটা স্ট্যাটাস ছিলো। আর এ যুগে নারীরা উড়োজাহাজ চালাচ্ছে, চাঁদেও বেড়াতে যায়। কিন্তু এই সেকেলে আমি পড়ে রইলাম আমার চৌহদ্দিতে। যেখানে সামনের রাস্তায় বিকেলে বাচ্চারা হইচই করে খেলে আর পেছনে এখন অবধি মোরগ ডাকে। টিনের চালায় লোভী হুলোটা বসে থাকে মিলনদের কবুতরের বাচ্চা ফোটার আশায়। দ্বীন বেদ্বীন সকলেই কিছু না কিছু করছে। পরিচিত মহলে ওয়ার্কিং লেডির সংখ্যাটা বেশ ভারী। হাতে গোনা যে ক’জন আমার মত বেকার তাদের সাথে আবার বয়স বিভাজনও বিস্তর। আর লেখালেখির বালাইয়ে কেহই নেই। পথ ভুলেও এ পথ মাড়ান না কেউ। বেকার আমার লেখালেখিই ভালো লাগে। পারার মধ্যে ওই একটি কাজই বোধহয় আমায় দিয়ে হয়। সবাই মোটামুটি সম্মানজনক পেশায় নিয়োজিত হওয়ার চেষ্টারত। নিজস্ব একটা আইডেন্টিটি তৈরীর আকাংখা প্রবল থেকে প্রবলতর হতে দেখি। পুরুষরাও দেখছি আজকাল প্রফেশনাল পাত্রী খুজছেন। অর্থাৎ, বিয়ের বাজারে আমি একেবারেই লাস্ট অপশন। সান্তনা পুরষ্কার। এই একটি ব্যপারে পরম শান্তি অনুভব করি। ভাগ্যিস, ওই কাজটি বহু আগেই সারা হয়ে গেছে। নচেৎ কপালে দুখই ছিলো! আমার প্রজন্ম তার পরের প্রজন্ম সকলকেই বেশ আত্ম সচেতন দেখছি। ভালোই লাগে। বিপত্তি ঘটে তখন যখন কোন আড্ডায় যোগদান করি। প্রতিষ্ঠিত নারীকূলের সামনে নিজেকে বড্ড বেমানান লাগে। যেন চিমসে যাওয়া মুড়ি। সাহিত্য চর্চায় নেই কোন পরীক্ষা পাশ দেয়ার দরকার, নেই কোন ইন্টারভিউ, নেই প্রমোশন। আর সবথেকে বড় হলো কেউ পয়সা দেয়না! তাই বৈষয়িক পরিমন্ডলে এটি কোন গুরুত্বই রাখেনা আলোচনার বিষয় হিসেবে। গত পরশু এক আত্মীয়ার সাথে তার সহকর্মীর বাসায় গিয়েছিলাম তার সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু দেখতে। আমার শিশু মাত্রই বেশ ভালো লাগে। খাওয়া দাওয়ার পর আড্ডা জমলো। আমার আত্মীয়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষিকা। সহকর্মীটির আরো দু’বোন আছে। একজন পড়ছে। মেঝোজন সরকারী চাকুরীতে ঢুকেছে ক’দিন হলো। তারাও যোগ দিলো। উনার মাও এলেন। উনিও একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। বেশ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। এসেই আসরের মধ্যমনি হয়ে উঠলেন। সবাইকে নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে ক্যারিয়ার সম্পর্কে অনেক জ্ঞান দিলেন। সকলে বাহবা দিচ্ছে। বুঝলাম এরা প্রত্যেকে নিজেদের প্রত্যেক সদস্যকে নিয়ে খুব গর্বিত। খুব প্রানবন্ত একটি আড্ডা চলছে। আমার কেন যেন মনে হলো, নানা বিষয়ে কথা হলেও ঘুরে ফিরে আড্ডার বিষয় কিন্তু ওই প্রফেশনাল আলোচনাতেই রুপ নিচ্ছে। প্রত্যেকেরই নানান অভিজ্ঞতা। ব্যতিক্রম কেবল আমি। সবার সঙ্গে তাল রেখে সচল থাকতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছিলো। নিজেকে বড় অপাংক্তেয় মনে হলো। প্রত্যেকের চোখে মুখেই আত্মতৃপ্তির আভা উজ্জ্বল। আমি ভেতরে ভেতরে দমে গেলেও বাকপটুতায় মোটামুটি একটা জায়গা নেবার চেষ্টা করলাম। এক পর্যায়ে ভদ্রমহিলা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- ”তুমি কোথায় আছো মানে কি করছো?” আমি মিষ্টি হাসি দিয়ে সরল স্বীকারোক্তি দিলাম ”আমি কোথাও নেই। মানে কোন জব করিনা। আমার লেখালেখি করতেই ভালো লাগে। ওটাই পারি বলে মনে হয়। তাই আমি লিখছি।” চোখ না ঘুরিয়েও বুঝলাম সবক’টা চোখ একযোগে আমার দিকে ঘুরে গেছে। অস্বস্তিকর পিনপতন নিরবতাই আমাকে বাধ্য করলো সবার দিকে তাকাতে। আমি হাসি হাসি মুখ করে সবার দিকে তাকালাম। সব জোড়া চোখ যেন আমায় একটি কথাই বললো-”আনাসও তো লিখছে!”
বি:দ্র: আনাস ভদ্রমহিলার ৩ বছর বয়েসী নাতী। যে আমাদের পাশেই বসে খাতা পেন্সিল নিয়ে আঁকিবুকি করছিলো। আর জিজ্ঞেস করলে বলছিলো আমি লিকশি! আমি লিকশি!
বিষয়: বিবিধ
১৫৭৯ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর আপনিতো আছেন জ্ঞানের তালাশে। সুতারাং ঐ প্রানবন্ত আড্ডাতে আপনিইতো সেরা।
জাজাকাল্লাহ খায়ের
একটানে পড়ে ফেললাম
আপনি লিখুন- লিখতে থাকুন,
পড়ার জন্য আমার মত অকর্মারা তো আছেই!
[যাঁরা লিখতে পারেন তাঁদের জন্য আমার ঈর্ষা হয়!]
আমি লিকশি!
সভ্যতার নিম্নতম স্তরও তারা অতিক্রম করতে পারেনি। ধিক বলি তাদের যারা নিজেদের বাইরে কাউকে এভাবে অপদস্থ করার পায়তারা করে।
আপু লিখতে থাকুন আপনি! কারণ লেখাই মানুষকে অমর করে তোলে। লেখা হবে আপনার ঢাল-তরবারি।
ব্যথা আসলে সাহায্য নিন কলমের।
অর্জন করুন রব্বুল কলমের দয়া।
ভরিয়ে দিন লেখার সুভাষে এ ভূবন।
ধন্যবাদ।
একটা সংশোধনী দিই অবশ্য কিছু মনে না করলে,বানানে অর্থ বদলে যায়,তাই বলা৷ 'কুঁড়ে' নয় কথাটা 'কুরে'হবে৷(৩য় লাইনের শেষে) ধন্যবাদ৷
আর হ্যা, জল পড়ে পাতা নড়ে আমার চলতে ফিরতে দেখা জীবনের নানা রং রুপ অভিজ্ঞতা।
যে কোন চাকরিদাতা-প্রতিষ্ঠান ও চাকুরের মধ্যে একটা চুক্তি হয় এবং সে মোতাবেক চাকুরেকে চলতেই হয় ।
তদ্রুপ , বিয়েও স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একটা চুক্তি , শরিয়তী চুক্তি । এখানে নিকাহনামার আকারে যে হার্ড কপি দিয়ে স্বামীকে দালিলিকভাবেও বাধ্য রাখা হয়, স্ত্রীও তেমনি বাধ্য শরিয়তের কারণে । এক্ষেত্রে সূরা নিসা এর ৩৪ নং আয়াত দ্রষ্টব্য।
একজন স্ত্রীর কাজ হচ্ছে তার স্বামীর সংসারের হেফাজত করা তার স্বামীর অবর্তমানে আল্লাহর হেফাজতের মাধ্যমে । এটার বাইরে সে যদি কোন অফিসে কাজ করে তাহলে নিশ্চিতভাবে(হোক তার স্বামীর অনুমতি নিয়ে বা না নিয়ে) এটা আল্লাহর আদেশের বিপরীত ।
অফিসে সে ঠিকই সঠিক সময়ে যাবে এবং সঠিক সময়ে ফিরবে । অফিসের ব্যাপারে সে ঠিকই রুলস্ ফলো করছে , কিন্তু বিয়ের ব্যাপারে শরিয়তের রুলস্ কি সে ফলো করে ? স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষন নেয় ঠিকই কিন্তু সিনসিয়ারলি কাজ করে অফিসের জন্য , স্বামীর জন্য নয় ।
কোন স্ত্রী কি এরকম বরদাস্ত করবে যে , সে তার স্বামীর জন্য খুব করে পরিশ্রম করছে আর তার স্বামী কি না আরেকজনের স্ত্রীকে শাড়ি গহনা দিচ্ছে ?
*********************
এসব কথা অপ্রাসঙ্গিক হলেও আপনার সেই চাকুরিজীবী মহিলাদের ব্যাপারে আমার এই কমেন্ট । পরকালে আল্লাহ মানুষের বিভিন্ন সত্তার বিচার করবেন , মহিলাদের বিভিন্ন সত্তার মধ্যে স্ত্রী সত্ত্বাও অন্যতম। স্বামীর সংসারের সময়ে / বাইরে অন্যের জন্য সময় দেওয়াটার বিচার (যা কি না আল্লাহর আদেশের পরিপন্হী)আল্লাহ কি করবেন না এসব আধুনিক মহিলাদের ?
**************************
মহিলারা মাশা আল্লাহ অনেক এগিয়ে গেছে - এটা অনস্বীকার্য ।
মানুষ যে চাঁদে গেছে সেটা ছোট কাল থেকেই শুনে আসছি : নীল আর্মস্ট্রং , মাইকেল কলিন্স , এডউইন অলড্রিন (মহাকাশযানে বসে ছিলেন)- এই তিন জনের নামই শুনেছি এতদিন আমি এই হতভাগা । এরা ৩ জনই পুরুষ ছিলেন । এর পর আর কেউ চাঁদে গিয়েছে / চাঁদে পা রেখেছে বলে আমি অন্তত শুনিনি ।
মহিলাদের মধ্যে ছোটকালে শুনেছিলাম ভেলেন্তিনা তেরেস্কোভার নাম আর এখন শুনেছি কল্পনা চাওলা ও সুনিতা উইলিয়ামসের নাম । এরা কেউই চাঁদে নামেন নি , মহাকাশে ঘোরাঘোরি করেছেন যেটা খুবই কমন ব্যাপার নাসাওয়ালাদের জন্য ।
আপু , আপনার কি জানা আছে ঐ ৩ জন বাদে আর কারা কারা কত সালে চাঁদে পা রেখেছে ? কোন কোন মহিলা এদের মধ্যে আছেন ?
বোঝাই যায় আপনি বেশ পড়াশোনা করেন লেখালেখির বিষয়ে । জানতে পারলে লিংক শেয়ার করতে ভুলবেন না ।
By the way ......
চাঁদে মানুষ গিয়েছে - এটা আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ।
আপনি চাঁদে বেড়াতে যাওয়ার কথাই মনে হল বলেছেন , মহাকাশে না ।
তাই আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বলতে হয়, চাকুরীটা কোন মহিলাকে না দিয়ে কোন পুরুষকে দিয়ে একটি পরিবারের ভরনপোষনের ব্যবস্থা করাটাই রাষ্ট্রের কর্তব্য।
যারা একান্ত অসহায় মহিলা আছেন, তাদের ব্যপারটা ভিন্ন হতে পারে। বা কোন মহিলাঙ্গনে মহিলারা দায়িত্ব পালন করতে পারে। তবে এসকল ক্ষেত্রেও অসহায় দরিদ্র শিক্ষিত মহিলাদের অগ্রাধিকার হওয়া দরকার।
মন্তব্য করতে লগইন করুন