পারিবারিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি ইহসান ও ইলহাম
লিখেছেন লিখেছেন সুমাইয়া হাবীবা ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০২:৫৬:২৪ দুপুর
http://www.timenewsbd.com/news/detail/70174
টাইমনিউজবিডি ডট কম। প্রকাশকাল- ০৪ফেব্রুয়ারী, ২০১৬।
জাবির বিন আবদুল্লাহ(রা) হতে বর্ণিত-তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা) কোন ব্যক্তির সফর থেকে ফিরে এসে রাতের বেলায় নিজ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করা অপছন্দ করতেন। দীর্ঘ সফর শেষে যখন আমি মদীনার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হলাম তিনি আমাকে বললেন অপেক্ষা করো যাতে মহিলারা প্রস্তুত হতে পারে।(বুখারী:৪৮৫৯-৪৮৬৪)
এটি একটি সহীহ হাদীস। সহীহ হাদীস অনুসরন জরুরী। কিন্তু বর্তমানের যুগ এবং পরিস্থিতির আলোকে এর অনুসরন কিছুটা জটিল। যে প্রেক্ষাপটে এটি বলা হয়েছিলো সেটা মানানসই ছিলো। তখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গার দুরত্ব ব্যপক ছিলো এবং ছিলোনা যাতায়াতের সুব্যবস্থা, ছিলোনা যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা, এবং মোস্ট ইম্পর্টেন্ট ইলেকট্রিসিটি ছিলোনা। কেউ সফরে বের হলে বাইরে রাত কাটানোর সরঞ্জাম নিয়েই বের হতেন। বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে ইলেকট্রিসিটি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, আধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রতিটি মুহুর্ত মূল্যবান। তাই এখানে আমরা শরনাপন্ন হই আজমাঈনদের। তারা কি বলেছিলেন। অতপর বর্তমান আলেমদের। তারা কি বলেন? তারা বলেন যে, ওই যুগের জন্য এটা প্রযোজ্য ছিলো। কারন, কোন পুরুষ যখন তার স্ত্রীর থেকে দুরে থাকেন তখন স্বাভাবিকভাবেই স্ত্রীকে কাছে পাবার আকাংখা তার মনে জাগে। এবং স্ত্রীও চান নিজেকে সুন্দররুপে সাজিয়ে স্বামীর সামনে পেশ করতে। যেটা দিনের আলোয় খুবই সহজ ছিলো। আর বাস্তবিকভাবেই দিনের বেলা মহিলারা সুশৃঙ্খলভাবেই থেকে থাকেন। কিন্তু সে যুগে সন্ধ্যা মানেই রাত ছিলো। এশার নামাজের পরই অনেক রাত গন্য করা হতো। তাই স্বামী রাতে বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখে কষ্ট বা রাগান্বিত হতে পারে। এতে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যও হতে পারতো। তাই আল্লাহর রাসুল(সা) এই নির্দেশ দিলেন। স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্ককে সুন্দরভাবে রক্ষা করলেন। সুবাহানআল্লাহ! কত সুন্দর কত প্রজ্ঞাময় চিন্তা। বর্তমানে স্বামী বাইরে থাকলেও স্ত্রী সেটা জানেন তো বটেই বরং প্রতি মুহুর্তের আপডেটও পান। তাই স্বামীর জন্য নিজেকে সুন্দররুপে প্রস্তুত করা কোন ব্যপার নয়। তাই এটা পালনের আবশ্যকতা নেই। স্বামী শহরে প্রবেশ করেই নিজ বাড়িতে যেতে পারে।
এবার আসি ইলহামের প্রসংগে। আল্লাহ বলেন-”আমি মানুষকে বিবেক বুদ্ধি দান করেছি যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে।” আল্লাহ কেন মানুষকে নিজস্ব চিন্তা ভাবনার শক্তি দিয়েছেন? কেন নিজের বিবেচনাবোধ দিয়েছেন? কেন ইজতিহাদী ক্ষমতা প্রদান করেছেন? এগুলো অবশ্যই ভাবনার বিষয়। প্রাকৃতিক নিয়মেই স্তীলোকদের কিছু সময়ের সীমাবদ্ধতা থাকে। তখন তার করনীয় কি হবে? এ সম্পর্কে হযরত আয়শা(রা) হতে বর্ণিত অনেক সুস্পষ্ট হাদীস আছে। তথাপি, প্রতিটি মানুষের প্রকৃতি, পছন্দ অপছন্দ, রুচি আলাদা আলাদা হয়। একজন স্ত্রীই জানেন তার স্বামী কিসে সন্তুষ্ট হন। তাই তিনিই ঠিক করেন কিভাবে তিনি তার স্বামীকে ভালোবাসবেন। এটা কোন আলেম কোন স্কলারের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তারা কেবল মৌলিক নীতিমালাই বলতে পারেন। সাধারন মানুষ সেই নীতিমালার আলোকে সেই সীমারেখা মেনে নিজ নিজ করনীয় ঠিক করে নেন। এটাই ইলহাম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই কারনেই মানুষকে বিবেক বুদ্ধি জ্ঞান প্রজ্ঞা দান করেছেন। আল্লাহ বলেন-”বুদ্ধিমানদের জন্যই রয়েছে নিদর্শন।”(যুমার:৯, ইমরান:৭, রা’দ:১৯)
বলা হয়ে থাকে, ”নারীরা হলো ঘরের শোভা।” সত্যিই কি তাই নয়? ব্যচেলর মেসের কোন শোভা থাকেনা। কারন সেখানে কোন মহিলার ছোঁয়া থাকেনা। তাই সেখানে কোন শৃংখলাও থাকেনা। কিন্তু অনান্য ঘরে তা হয়না। দিনের শেষে প্রতিটি মানুষই ঘরে ফিরতে চায় আকুলভাবে। দিনের শেষে পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলোর দিকে লক্ষ্য করলেই এর সত্যতা পাওয়া যায়। কারন সেখানে মায়া আছে। শান্তি আছে। শোভা আছে। স্ত্রীলোককে বলা হয় স্বামীর অর্ধাঙ্গীনি। অর্থাৎ স্ত্রী ছাড়া একজন স্বামী অসম্পূর্ন। একইভাবে স্ত্রীও। মানুষের পূর্ণাঙ্গতা তখনই সম্ভব যখন সে তার স্বীয় দায়-দায়িত্ব, কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে পারে। তার কাজগুলো পূর্ণরুপে সুন্দরভাবে সমাধা করতে পারে। আর এটা পারষ্পরিক সহযোগীতা ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়। এই সহযোগীতা পাবার ক্ষেত্রে অবশ্যই জীবনসঙ্গী অগ্রাধিকার পাবেন। সেক্ষেত্রে জীবনসঙ্গীর পরিবারের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্যও পড়ে। একজন ছেলেকে তার বাবা-মায়ের দায়িত্ব পালনের জন্য যতটা কঠোরভাবে ধরা হবে একজন মেয়েকে ততটা হবেনা। কারন মেয়েরা বিয়ের পর আরেক বাড়িতে চলে যায়। দুর দুরান্ত থেকে এসে বাবা-মার খিদমত করা কষ্টসাধ্য। এটিও ইসলামের ভারসাম্যগত সৌন্দর্য।
তথাপি, যে ছেলেটির জবাবদিহিতা কঠোর হবে তাকেতো করতেই হবে। অথচ তাকে জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে যেতেই হবে। দুর দুরান্তেও যেতে হতে পারে। সেসময় তার দায়িত্ব পালন সম্ভবপর নয়। তার ওয়াজিব তরক হচ্ছে। বৃদ্ধ বাবা-মা ঘরে একলা অবস্থায় থাকেন। অসুস্থ হলেতো আরো অসহায় হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় একজন স্ত্রীই পারে স্বামীর অবর্তমানে তার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে তাকে সহযোগীতা করতে। নিজ গুনে স্বামীর অপারগতাকে ঢেকে দিতে। ঠিক তেমনি যেসব বাবা-মার ছেলে সন্তান নেই বা ছেলে জালিম হয়ে গেছে তাদের মেয়ে জামাইদেরও উচিৎ ছেলের দায়িত্ব পালন করে স্ত্রীকে সহযোগীতা করা। তাকে মানসিক প্রশান্তি দেয়া। কিন্তু এর ব্যাত্যয় ঘটতেই পারে। মানব জীবনের সমস্ত বিষয় পরিকণ্পনা মাফিক ঘটেনা। কিন্তু তার জন্য জীবনের পথচলা থামেনা।
শশুড় শাশুড়ি আপন বাবা-মার স্থলাভিষিক্ত নাকি নয় এ বিতর্ক যুগ যুগ ধরে চলতে পারে। কিন্তু আপনি এক জীবনে মানুষ হিসেবে কতটুকু সফল কতটুকু মানবতাবাদী কতটুকু শিষ্ঠাচারী কতটুকু ইহসানকারী তা এক জীবনেই নির্ধারন হয়ে যাবে। আর এটাতেতো ঐক্যমত রয়েছেই যে তারা আমাদের আপনার আত্মীয়। বিশেষত প্রকৃতিগত বাস্তবতা যে একজন নারীর ভালোবাসা, মমতা ইহসানই পারে একটি বাসগৃহকে জান্নাতে রুপান্তরিত করতে পারে।
আল্লাহ মানুষকে প্রজ্ঞা, জ্ঞান, বিবেক দিয়েছেন তার সদ্ব্যবহার করার জন্য। আলেমগন স্কলারগন মৌলিক কথা বলতে পারেন। আম নীতি বলতে পারেন। কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে খাস নীতি কি হবে তা নির্ধারন ব্যক্তিকে নিজেই করতে হবে। যেমনটা করা হয়ে থাকে রান্নায় লবনের পরিমান নির্নয়ে।
আমি আগে বহুবার আমার লেখায় বলেছি যে জ্ঞান হলো সমুদ্র। আর মানুষ হলো তাতে পিপাসা মেটাতে যাওয়া তৃণ মাত্র। মাসয়ালা বা নীতির ব্যপকতা বিশাল। তাই এ নিয়ে মতামত প্রদান, দলীল প্রদান চলতেই থাকবে। আর অবশ্যই মত পার্থক্যও থাকবে। এটাই ইজতিহাদী সৌন্দর্য। কে সঠিক এবং কে বেঠিক এটা নির্নয়ের দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা ইজতিহাদকারীদের দেননি। এটা কুরআন সুন্নাহ পরিপন্থি। ”ইয়াহুদীরা বলে খ্রীষ্টানদের কাছে কিছুই নেই। আর খ্রীষ্টানরা বলে ইয়াহুদীদের কাছে কিছুই নেই। অথচ উভয়েই কিতাব পড়ে।” (বাকারা:১১৩) তাই মাত্রতিরিক্ত কটু বাক্যের মাধ্যমে বিতর্ক তৈরী বাহুল্য এবং বোকামী মাত্র।
কে কাকে কখন কিরুপে ট্রিট করেছেন বা করছেন তার উপর নির্ভর করে কারো প্রতি কারো দায়িত্ব কমবেশি করা হয়না। রাসুল(সা) বলেন- কেউ তোমার সাথে ভালো আচরন করলো আর তুমিও তার সাথে ভালো আচরন করলে এটা ইহসান নয়। বরং কেউ তোমার সাথে খারাপ করলো আর তবু তুমি তার সাথে ভালো আচরন করলে। এটাই ইহসান।” রাসুল(সা) আরো বলেন- ”(বুকের দিকে নির্দেশ করে)তাকওয়া এখানে। তাকওয়া এখানে। তাকওয়া এখানে।”(মুসলিম) আর আমার আল্লাহ বলেন-”প্রত্যেকে তার যাররাহ পরিমান ভালো কাজের প্রতিদান পাবে। এবং প্রত্যেকে তার যাররাহ পরিমান খারাপ কাজের হিসাব পাবে।” (যিলযাল:৭-৮।)
তবে অবশ্যই আপনি কাকে ইহসান করবেন আর কাকে করবেন না তা আপনার উপরই। হিসাব তো একান্তভাবেই নিজ নিজ হবে। সিদ্ধান্ত তো আপনারই।
আল্লাহ বলেন- ”আজ আপন কর্মের রেকর্ড পড়ো। আজ তোমার হিসাব করার জন্য কেবল তুমিই।(বনী ইসরাঈল:৭৪) আল্লাহ আরো বলেন-”ইহসানকারীদের জন্য বিনিময় ইহসান ছাড়া আর কিইবা হতে পারে!!” (রহমান:৬০)
-সুমাইয়া হাবীবা
সোশ্যাল এন্ড হিউম্যান রাইটস এক্টিভিষ্ট
জাবির বিন আবদুল্লাহ(রা) হতে বর্ণিত-তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা) কোন ব্যক্তির সফর থেকে ফিরে এসে রাতের বেলায় নিজ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করা অপছন্দ করতেন। দীর্ঘ সফর শেষে যখন আমি মদীনার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হলাম তিনি আমাকে বললেন অপেক্ষা করো যাতে মহিলারা প্রস্তুত হতে পারে।(বুখারী:৪৮৫৯-৪৮৬৪)
এটি একটি সহীহ হাদীস। সহীহ হাদীস অনুসরন জরুরী। কিন্তু বর্তমানের যুগ এবং পরিস্থিতির আলোকে এর অনুসরন কিছুটা জটিল। যে প্রেক্ষাপটে এটি বলা হয়েছিলো সেটা মানানসই ছিলো। তখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গার দুরত্ব ব্যপক ছিলো এবং ছিলোনা যাতায়াতের সুব্যবস্থা, ছিলোনা যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা, এবং মোস্ট ইম্পর্টেন্ট ইলেকট্রিসিটি ছিলোনা। কেউ সফরে বের হলে বাইরে রাত কাটানোর সরঞ্জাম নিয়েই বের হতেন। বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে ইলেকট্রিসিটি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, আধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রতিটি মুহুর্ত মূল্যবান। তাই এখানে আমরা শরনাপন্ন হই আজমাঈনদের। তারা কি বলেছিলেন। অতপর বর্তমান আলেমদের। তারা কি বলেন? তারা বলেন যে, ওই যুগের জন্য এটা প্রযোজ্য ছিলো। কারন, কোন পুরুষ যখন তার স্ত্রীর থেকে দুরে থাকেন তখন স্বাভাবিকভাবেই স্ত্রীকে কাছে পাবার আকাংখা তার মনে জাগে। এবং স্ত্রীও চান নিজেকে সুন্দররুপে সাজিয়ে স্বামীর সামনে পেশ করতে। যেটা দিনের আলোয় খুবই সহজ ছিলো। আর বাস্তবিকভাবেই দিনের বেলা মহিলারা সুশৃঙ্খলভাবেই থেকে থাকেন। কিন্তু সে যুগে সন্ধ্যা মানেই রাত ছিলো। এশার নামাজের পরই অনেক রাত গন্য করা হতো। তাই স্বামী রাতে বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখে কষ্ট বা রাগান্বিত হতে পারে। এতে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যও হতে পারতো। তাই আল্লাহর রাসুল(সা) এই নির্দেশ দিলেন। স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্ককে সুন্দরভাবে রক্ষা করলেন। সুবাহানআল্লাহ! কত সুন্দর কত প্রজ্ঞাময় চিন্তা। বর্তমানে স্বামী বাইরে থাকলেও স্ত্রী সেটা জানেন তো বটেই বরং প্রতি মুহুর্তের আপডেটও পান। তাই স্বামীর জন্য নিজেকে সুন্দররুপে প্রস্তুত করা কোন ব্যপার নয়। তাই এটা পালনের আবশ্যকতা নেই। স্বামী শহরে প্রবেশ করেই নিজ বাড়িতে যেতে পারে।
এবার আসি ইলহামের প্রসংগে। আল্লাহ বলেন-”আমি মানুষকে বিবেক বুদ্ধি দান করেছি যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে।” আল্লাহ কেন মানুষকে নিজস্ব চিন্তা ভাবনার শক্তি দিয়েছেন? কেন নিজের বিবেচনাবোধ দিয়েছেন? কেন ইজতিহাদী ক্ষমতা প্রদান করেছেন? এগুলো অবশ্যই ভাবনার বিষয়। প্রাকৃতিক নিয়মেই স্তীলোকদের কিছু সময়ের সীমাবদ্ধতা থাকে। তখন তার করনীয় কি হবে? এ সম্পর্কে হযরত আয়শা(রা) হতে বর্ণিত অনেক সুস্পষ্ট হাদীস আছে। তথাপি, প্রতিটি মানুষের প্রকৃতি, পছন্দ অপছন্দ, রুচি আলাদা আলাদা হয়। একজন স্ত্রীই জানেন তার স্বামী কিসে সন্তুষ্ট হন। তাই তিনিই ঠিক করেন কিভাবে তিনি তার স্বামীকে ভালোবাসবেন। এটা কোন আলেম কোন স্কলারের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তারা কেবল মৌলিক নীতিমালাই বলতে পারেন। সাধারন মানুষ সেই নীতিমালার আলোকে সেই সীমারেখা মেনে নিজ নিজ করনীয় ঠিক করে নেন। এটাই ইলহাম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই কারনেই মানুষকে বিবেক বুদ্ধি জ্ঞান প্রজ্ঞা দান করেছেন। আল্লাহ বলেন-”বুদ্ধিমানদের জন্যই রয়েছে নিদর্শন।”(যুমার:৯, ইমরান:৭, রা’দ:১৯)
বলা হয়ে থাকে, ”নারীরা হলো ঘরের শোভা।” সত্যিই কি তাই নয়? ব্যচেলর মেসের কোন শোভা থাকেনা। কারন সেখানে কোন মহিলার ছোঁয়া থাকেনা। তাই সেখানে কোন শৃংখলাও থাকেনা। কিন্তু অনান্য ঘরে তা হয়না। দিনের শেষে প্রতিটি মানুষই ঘরে ফিরতে চায় আকুলভাবে। দিনের শেষে পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলোর দিকে লক্ষ্য করলেই এর সত্যতা পাওয়া যায়। কারন সেখানে মায়া আছে। শান্তি আছে। শোভা আছে। স্ত্রীলোককে বলা হয় স্বামীর অর্ধাঙ্গীনি। অর্থাৎ স্ত্রী ছাড়া একজন স্বামী অসম্পূর্ন। একইভাবে স্ত্রীও। মানুষের পূর্ণাঙ্গতা তখনই সম্ভব যখন সে তার স্বীয় দায়-দায়িত্ব, কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে পারে। তার কাজগুলো পূর্ণরুপে সুন্দরভাবে সমাধা করতে পারে। আর এটা পারষ্পরিক সহযোগীতা ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়। এই সহযোগীতা পাবার ক্ষেত্রে অবশ্যই জীবনসঙ্গী অগ্রাধিকার পাবেন। সেক্ষেত্রে জীবনসঙ্গীর পরিবারের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্যও পড়ে। একজন ছেলেকে তার বাবা-মায়ের দায়িত্ব পালনের জন্য যতটা কঠোরভাবে ধরা হবে একজন মেয়েকে ততটা হবেনা। কারন মেয়েরা বিয়ের পর আরেক বাড়িতে চলে যায়। দুর দুরান্ত থেকে এসে বাবা-মার খিদমত করা কষ্টসাধ্য। এটিও ইসলামের ভারসাম্যগত সৌন্দর্য।
তথাপি, যে ছেলেটির জবাবদিহিতা কঠোর হবে তাকেতো করতেই হবে। অথচ তাকে জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে যেতেই হবে। দুর দুরান্তেও যেতে হতে পারে। সেসময় তার দায়িত্ব পালন সম্ভবপর নয়। তার ওয়াজিব তরক হচ্ছে। বৃদ্ধ বাবা-মা ঘরে একলা অবস্থায় থাকেন। অসুস্থ হলেতো আরো অসহায় হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় একজন স্ত্রীই পারে স্বামীর অবর্তমানে তার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে তাকে সহযোগীতা করতে। নিজ গুনে স্বামীর অপারগতাকে ঢেকে দিতে। ঠিক তেমনি যেসব বাবা-মার ছেলে সন্তান নেই বা ছেলে জালিম হয়ে গেছে তাদের মেয়ে জামাইদেরও উচিৎ ছেলের দায়িত্ব পালন করে স্ত্রীকে সহযোগীতা করা। তাকে মানসিক প্রশান্তি দেয়া। কিন্তু এর ব্যাত্যয় ঘটতেই পারে। মানব জীবনের সমস্ত বিষয় পরিকণ্পনা মাফিক ঘটেনা। কিন্তু তার জন্য জীবনের পথচলা থামেনা।
শশুড় শাশুড়ি আপন বাবা-মার স্থলাভিষিক্ত নাকি নয় এ বিতর্ক যুগ যুগ ধরে চলতে পারে। কিন্তু আপনি এক জীবনে মানুষ হিসেবে কতটুকু সফল কতটুকু মানবতাবাদী কতটুকু শিষ্ঠাচারী কতটুকু ইহসানকারী তা এক জীবনেই নির্ধারন হয়ে যাবে। আর এটাতেতো ঐক্যমত রয়েছেই যে তারা আমাদের আপনার আত্মীয়। বিশেষত প্রকৃতিগত বাস্তবতা যে একজন নারীর ভালোবাসা, মমতা ইহসানই পারে একটি বাসগৃহকে জান্নাতে রুপান্তরিত করতে পারে।
আল্লাহ মানুষকে প্রজ্ঞা, জ্ঞান, বিবেক দিয়েছেন তার সদ্ব্যবহার করার জন্য। আলেমগন স্কলারগন মৌলিক কথা বলতে পারেন। আম নীতি বলতে পারেন। কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে খাস নীতি কি হবে তা নির্ধারন ব্যক্তিকে নিজেই করতে হবে। যেমনটা করা হয়ে থাকে রান্নায় লবনের পরিমান নির্নয়ে।
আমি আগে বহুবার আমার লেখায় বলেছি যে জ্ঞান হলো সমুদ্র। আর মানুষ হলো তাতে পিপাসা মেটাতে যাওয়া তৃণ মাত্র। মাসয়ালা বা নীতির ব্যপকতা বিশাল। তাই এ নিয়ে মতামত প্রদান, দলীল প্রদান চলতেই থাকবে। আর অবশ্যই মত পার্থক্যও থাকবে। এটাই ইজতিহাদী সৌন্দর্য। কে সঠিক এবং কে বেঠিক এটা নির্নয়ের দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা ইজতিহাদকারীদের দেননি। এটা কুরআন সুন্নাহ পরিপন্থি। ”ইয়াহুদীরা বলে খ্রীষ্টানদের কাছে কিছুই নেই। আর খ্রীষ্টানরা বলে ইয়াহুদীদের কাছে কিছুই নেই। অথচ উভয়েই কিতাব পড়ে।” (বাকারা:১১৩) তাই মাত্রতিরিক্ত কটু বাক্যের মাধ্যমে বিতর্ক তৈরী বাহুল্য এবং বোকামী মাত্র।
কে কাকে কখন কিরুপে ট্রিট করেছেন বা করছেন তার উপর নির্ভর করে কারো প্রতি কারো দায়িত্ব কমবেশি করা হয়না। রাসুল(সা) বলেন- কেউ তোমার সাথে ভালো আচরন করলো আর তুমিও তার সাথে ভালো আচরন করলে এটা ইহসান নয়। বরং কেউ তোমার সাথে খারাপ করলো আর তবু তুমি তার সাথে ভালো আচরন করলে। এটাই ইহসান।” রাসুল(সা) আরো বলেন- ”(বুকের দিকে নির্দেশ করে)তাকওয়া এখানে। তাকওয়া এখানে। তাকওয়া এখানে।”(মুসলিম) আর আমার আল্লাহ বলেন-”প্রত্যেকে তার যাররাহ পরিমান ভালো কাজের প্রতিদান পাবে। এবং প্রত্যেকে তার যাররাহ পরিমান খারাপ কাজের হিসাব পাবে।” (যিলযাল:৭-৮।)
তবে অবশ্যই আপনি কাকে ইহসান করবেন আর কাকে করবেন না তা আপনার উপরই। হিসাব তো একান্তভাবেই নিজ নিজ হবে। সিদ্ধান্ত তো আপনারই।
আল্লাহ বলেন- ”আজ আপন কর্মের রেকর্ড পড়ো। আজ তোমার হিসাব করার জন্য কেবল তুমিই।(বনী ইসরাঈল:৭৪) আল্লাহ আরো বলেন-”ইহসানকারীদের জন্য বিনিময় ইহসান ছাড়া আর কিইবা হতে পারে!!” (রহমান:৬০)
-সুমাইয়া হাবীবা
সোশ্যাল এন্ড হিউম্যান রাইটস এক্টিভিষ্ট
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ এখনকার মেয়েরা সাজগোজ করে পারলারে গিয়ে , তারা স্বামীর জন্য সাজগোজ করে না । সাজগোজ করে পর পুরুষের চোখে নিজেকে আকর্ষনীয় করে তুলে ধরার জন্য এবং অন্য মেয়েদের চোখে ঈর্ষা জাগানোর জন্য - এবং এটার খরচ তারা স্বামীর কাছ থেকেই নেয় ।
০ সংসারের অশান্তিরও মূল কারিগর নারীরা
০ এটা মেয়েদের জন্য খুবই মজার এটা বিষয় । কারণ তার ভাইকেই তার বাবা মায়ের দ্বায়িত্ব নিতে হয় । ভাইও ব্যাপারটাতে কোন কার্পন্য করে না । কিন্তু ভাইয়ের এই দ্বায়িত্ব পালনে ঝামেলা করে তারই স্বজাতি , তার ভাবী ।
সেও কিন্তু যে সংসারে যার স্ত্রী হয়ে যায় তার শশুড় শাশুড়িকে তারই ভাবীর মত দৌড়ের উপর রাখে ।
ঝামেলা পাকায় , অশান্তি করে নারিরাই এবং এটাকে ঠিকঠাক ম্যানেজ করতে না পারলে পাকড়াও হবে ছেলেরাই , অথচ তাদের চেষ্টার অন্ত থাকেনা ব্যালেন্স করে চলার - আল্লাহ কি নারীদের এরকম চুকলিবাজিকে ক্ষমার চোখে দেখবেন পরকালে ? সংসারে শান্তি বজায় রাখা কি শুধু ছেলেদেরই কর্তব্য করে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা ?
০ মেয়েরা ঘরের কাজ করে বলে তারা মনে করে যে সংসার শুধু সেই চালায় ।
একজন স্বামী যে জীবিকার জন্য বাইরে বের হয় তা শুধু সংসারের জন্যই নয় , স্ত্রী - সন্তান ও আপনজনদের ভরণ পোষনের জন্যই । ঘরে থাকা নারীদের উপর বেশী কর্তব্য বাইরে যাবার চেয়ে এবং তার এই ঘরে থেকে সংসার চালানো যদি ১০ নম্বর হয় তাহলে স্বামীরও সংসার চালানোর জন্য বাইরে কাজ করা মিনিমাম ১১.
আর পুরুষেরা লাক্সারী করে না আয়ের টাকা দিয়ে যেটা মেয়েদের স্বভাব ।
স্বামীর বাবা মায়ের সেবা করাটা যদিও স্ত্রীর জন্য ম্যান্ডেটরি না , তাহলে স্ত্রীকেও তার চাহিদা মত চালানোও স্বামীর উপর ফরজ না ।
বিয়ের পর একজন স্বামী তার স্ত্রীদের কাছ থেকে শুধু সেক্স-ই পায় আর কিছু সে পায় না । তাও আবার নিরবিচ্ছিন্ন না ।
বিপরীতে একজন স্ত্রী তার সারা জীবনের সব ভরনপোষন পায় স্বামীর কাছ থেকে , যেটা পেলে একজন মানুষের জীবনে খুব কমই দুনিয়াবী চিন্তা অবশিষ্ট থাকে ।
যথার্থ বলেছেন, সহমত
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকিল্লাহ..
মন্তব্য করতে লগইন করুন