শিকার (শিশুতোষ)

লিখেছেন লিখেছেন সুমাইয়া হাবীবা ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০২:৩২:৫৩ দুপুর

টিটু! অ্যাই টিটু! মা ডেকেই চলেছে একটানা। কোন জবাব নেই। এ ডাল ও ডাল সব ডালই তো দেখা শেষ। টিটু তো নেই!



এবার টিটুর মার টেনশন শুরু হলো। এই সবে মাত্র উড়তে শিখেছে টিটু। ডানায় এখনও তেমন জোর হয়নি। কোন বিপদ ঘটেনিতো! টিটুর বাবার আসার সময় হয়ে গেল। এসে যদি দেখে টিটু বাসায় নেই, বাড়ি মাথায় তুলবে। আর ভাল্লাগে না। ছেলেটা এত দুষ্টু হয়েছে না! পাশের বাড়ি খুজতে যাওয়ার কথা ভাবছে এমন সময় টিটু হাজির। চুপিচুপি এসে মাকে চমকে দিতে চাইলো কিন্তু ওর ঘষটে ঘষটে ডানা ঝাপটানোর শব্দেই মা বুঝে ফেললো এটা তার আদরের টিটু। টিটু তো অবাক।

-ধুর! মা তুমি বুঝলে কিভাবে যে আমি!

-টিটু, কোথায় গিয়েছিলে দুষ্ট ছেলে! খুজে খুজে আমি হয়রান। বারবার বলেছি বেশি দুরে যাবেনা। তুমি এখনও ছোট। বেশি দুরে গেলে আর বাসা চিনে ফিরতে পারবেনা।

-সরি মা। আমি বেশি দুরে যাইনি। ঘুরতে ঘুরতে আমি বাড়ির ভেতর ঢুকেছিলাম।

-কেন রে বাপ! হায় হায় করে উঠলো মা। ছেলেটা আজ বাড়িটার ভেতর ঢুকেছিলো! এজন্যই বাসাটা বুনার আগে দ্বিধা করছিলো সে। একদম নিরুপায় হয়েই এমন ঘিঞ্জি জায়গায় সংসার পাতলো। শহরটা আর শহর নেই। দিনদিন গাছপালা কমছেই। কমতে কমতে এখন শূণ্যের কোঠায় পৌছেঁছে। আগের বাসাটা ছিল রামপুরার দিকে। বেশ ঝাঁকড়া একটা আম গাছে। বাড়িওয়ালা বিল্ডিং তুলবে। তাই গাছটা কেটে ফেললো। পোলাপানের যন্ত্রনায় তাড়া খেয়ে সেই যে দৌড় লাগালো দুজন, একদৌড়ে সারুলিয়া এসে থামলো। এখানে এখনও অতটা শহুরে হাওয়া লাগেনি। বেশ গাছপালাও আছে বাড়িতে বাড়িতে। মাথা গোজার ঠাঁই খুজতে খুজতে হঠাৎ এই বাড়িটা চোখে পড়ে। টিনশেড বাড়ির সামনেটায় একচিলতে ফাঁকা জায়গায় সবজির বাগান। টিনের চাল জুড়ে পুইঁয়ের মাচা তোলা হয়েছে। আর আছে কতগুলো বেগুন গাছ। বেশ ঘন হয়ে বড় হয়েছে। দেখেই পছন্দ করে ফেললো টিটুর বাবা। আহারে..কতদিন বেগুন গাছে বাসা বোনা হয়না। টুনটুনি হয়ে জন্মেছি আর বেগুন গাছেই সংসার পাতলামনা! বাপ দাদার ঐতিহ্য। চার পাচঁ মাস হয় ওরা এসেছে। এর মধ্যে টিটুর জন্ম হলো। বেশ নিরিবিলিতেই শান্তিতে দিন চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু টিটু এখন বড় হয়েছে। দুনিয়ার হালচাল বোঝেনা। এদিক সেদিক ছুটোছুটি করে। কখন যে কি হয়। মার চিন্তা হয় তাই।

-জানো মা, ওরা না একটা এইটুকু বিড়ালছানা এনেছে।

-কি বললি! বিড়াল! হায় আল্লাহ! টিটুতো মার কথা শুনে হেসেই খুন। বললো আরে মা! এটাতো ওই ডিপোর হুলোটার মত না। একদম পিচ্চি! এইটুকুন। বাড়ির মেয়েটা লম্বা একটা নলে করে দুধ খাওয়াচ্ছিলো। আর বিড়ালটাতো আমাকে দেখে ভয় পেয়েছে। কি মজা!

-ওরে বোকা ছেলেটা আমার। বিড়ালতো বিড়ালই।

-তাতে কি মা! ওতো পোষ মেনে যাবে। ওতো জানেইনা যে মাংস খাওয়া যায়। দুধ খায় তো ও। মা হেসে বলে একটু বড় হলেইতো খাবে। টিটু বলে কিন্তু মা ওকে শিকার শিখাবে কে! ওতো একা।

টিটু কিছুই বুঝতে পারেনা। মা বোঝায় ছেলেকে। বলে বাবা রে, ওপরওয়ালা সবাইকে নিজস্ব একটা প্রকৃতি মানে সিস্টেম দিয়ে পাঠিয়েছে। যে যার সিস্টেম অনুযায়ী চলে। তার বাইরে যাওয়াতো সম্ভব না। মায়ের কথা টিটুর খুব শক্ত লাগে। বলে মা প্রকৃতি মানে কি? প্রকৃতি মানে স্বভাব। ধরো আমরা টুনটুনি, আমাদের খাবার হলো শস্যদানা, বীজ। আমরাতো তাই খাই। এটা আমাদের স্বভাব। আমাদের যতই মাংস দিক আমাদের ভালো লাগবেনা। পেটে অসুখ করবে। ঠিক তেমনি বিড়ালের স্বভাব হলো শিকার করা। আর শিকার করে মাংস খাওয়া। তা সে একদিন না একদিন করবেই। শোন টিটু, তুমি খুব সাবধানে থাকবে। বাড়ির ভেতর যাবেনা। আর উঠানে একদম নামবেনা। মনে থাকবে? টিটুর এই কথাটা ভাল্লাগে না। কিন্তু কি আর করা, মার কথা শুনতে তো হবেই।

বেশ কিছুদিন কেটে গেল। টিটু বেশ বড় হয়েছে। বিড়ালটাও এর মধ্যে বেশ নাদুসনুদুস হযেছে।



টিটুরা এর মধ্যে বাসাও চেঞ্জ করেছে। এখন ওরা পেয়ারা গাছে থাকে। টিটু রোজ দুর থেকে বিড়ালটাকে দেখে। বেশ মায়া নিয়েই দেখে। ওর মতো বিড়ালটাও একটু একটু করে বড় হচ্ছে। কিন্তু টিটু এটা ভেবে পায়না যে বিড়ালটা ওর ছোট হয়েও এত বড় কি করে হলো! ইদানীং বিড়ালটা আর ওকে ভয় পায়না বরং ওর দিকে কেমন কেমন করে যেন তাকায়! বেশ একটা রাজা রাজা ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সেদিন আবার একটা ইঁদুরকে কামড়ে দিয়েছে! টিটুর বেশ খারাপ লেগেছে ব্যপারটা। নাহ! একদিন ওকে বুঝিয়ে বলতে হবে দ্যাখো বাপু, এখানে আমরা কজনইতো। মিলেমিশে থাকি চলো।

আজ বাড়িওয়ালী ডাল শুকাতে দিয়েছে উঠানে। বেশ খানিকটা ছড়িয়ে পড়েছে বাইরে। টিটু দেখলো কেউ নেই উঠানে। ফুরুত করে নেমে এসে পাশ থেকে খুটে খেতে লাগলো। হঠাত টিটুর মনে কু ডেকে উঠলো। খাওয়া থামিয়ে মুখ তুলে চাইলো। টিটুর মাথায় যেন আকাশটা ভেঙ্গে পড়তে লাগলো। তক্ষুনি ডানা ঝাপটালো টিটু। এক লাফে গিয়ে পেয়ারা গাছটার মগডালে বসলো। অল্পের জন্য রক্ষা পেল টিটু যদিও পায়ে খানিকটা লেগেছে। নীচে তাকালো টিটু। বিড়ালটা ফুঁসছে। শিকার হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায়। টিটুর মার কথা মনে পড়লো। মা ঠিকই বলেছিলো। মায়েরা যা বলে সবসময় ঠিকই বলে।

বিষয়: সাহিত্য

১৪১৯ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

305736
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:৩৭
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : কত দিন পর!!
আমার খাওয়াতো ভাই সাপ নিয়ে আপনাকে খোঁজ করছেন Tongue Tongue
কেমন আছেন আপু?
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:০১
247371
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : আর বলোনা সে কথা!!!! সে কি ভয়ংকর ব্যপার!!!Worried Worried Worried আর হ্যারীটাও ওনার সাথে যোগ দিয়েছে!Crying Crying Crying Crying Crying
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:০২
247372
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ ভালো রেখেছেন। Happy Happy Happy
১১ মার্চ ২০১৫ রাত ০১:৪৪
249336
বান্দা লিখেছেন : এখানেও খাওয়া দাওয়া হচ্ছে নাকি ??Smug
305737
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:৪০
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : লিখাটার শিক্ষা শতভাগ সত্য!
মায়েরা সবসময় সন্তানের ভালোচান।
Good Luck
বিড়ালগুলো নির্দয় এরা সব খেতে চায়!
Sad Sad Crying Crying
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৪:০০
247370
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : না না..এভাবে বলোনা ভাইয়াটা...বিল্লী আমার বহত পসন্দ হ্যায়!! কিছু কিছু বিল্লী দুষ্ট। হ্যারীর মত।Tongue Tongue দুষ্ট মিষ্টি হ্যারীটাকে খুব মিস করছি।।Worried Worried Broken Heart Broken Heart Broken Heart হ্যারীটা যে কোথায় উধাও হলো!!:Thinking :Thinking :Thinking
305740
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:০৭
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৬
247369
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : হুমম..সবসময় মনে রাখবা। তোমার জন্যই এই গল্প।Talk to the hand Talk to the hand Talk to the hand
305748
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:১০
মোঃ মাসুম সরকার আযহারী লিখেছেন : আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। "মায়েরা যা বলে সবসময় ঠিকই বলে।" আসলে কি তাই?
খুব সুন্দর লিখেছেন। ভাল লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ। জাযাকিল্লাহু খাইরান ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৫
247368
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : শিশুদের জন্য তাই। কারন শিশু বয়সটাতে মায়ের প্রতি বাবার প্রতি বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জন্মানোটা খুব জরুরী বলে আমি মনে করি। সে যে ধর্মানুসারীই হোক না কেন। আর বড় হয়ে বিবেক বুদ্ধি জাগ্রত হবার পর মায়ের কোন কথাটা ঠিক আর কোন কথাটা শিরক তা সন্তান এমনিতেই বুঝে যাবে।
কষ্ট করে পড়লেন আমি কৃতজ্ঞ। সম্ভবত প্রথম এলেন আমার বাড়ি।Happy Happy
305789
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বিড়াল টা কিভাবে বাঁচবে??
গোস্ত খেতে মজা বেশি!
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৩
247508
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : যে যেভাবে বাঁচতে চায় সেভাবেই বাঁচবে।Smug Smug তবুওতো জীবন বাঁচাতে সবাই চায়!!Happy Happy Happy
হুমমম...গরুর গোস্ত বেশি মজা। আমার শশুড়বাড়ীর মেজবানের গোস্ত খেলে কেউ ভুলবেনা।Happy Happy
305801
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ০৮:৫৫
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ইশ একটুর জন্য রক্ষা! মায়ের কথা আসলেই ঠিক হয়। একটুর জন্যে এসছিলাম, মামির লেখা দেখে না পড়ে পারলাম। দারুন হয়েছে শিশুতোষ গল্পটি।
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৪
247509
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : জাযাকাল্লাহু খাইরান ভাগ্নে। সেদিন পতেঙ্গা গিয়েছিলাম।Happy Happy Happy তোমার কথা বললাম। তোমার কি আর কোন নাম আছে? বা পরিচয়? যাতে সবাই চেনে?
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:২৮
247587
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : আলাউদ্দিনের ভাই সালাউদ্দিন। কাছের সবাই সালা‌উদ্দিনেই চিনে।
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৮:৫১
247656
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : সেটাই!!!Happy Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File