আমি শুধু একটা সত্য জানি।।
লিখেছেন লিখেছেন সুমাইয়া হাবীবা ২৪ জুন, ২০১৪, ০৭:৩৫:০৪ সন্ধ্যা
রোঁদ্দা কে? ছোট প্রশ্ন। প্রথমে তাম্মু। তারপর মুন্নী। অতপর আমি। আগের দুজন দাড়িয়ে। আমার কপালে কি আছে!
এইচ.এস.সি.তে উঠেই আমাদের পাখা গজালো। সবারই গজালো। তবে আমাদের তিনজনার একটু বড় পাখা। ইয়ার ফাইনালের কদিন আগে..ক্লাশে হা হা হি হি করতে করতেই অতি চালাকের গলায় দড়িটা পড়লো। একদম টাইট মত। যুঁথি আপার আগমন। আজ উনার ক্লাশ! মানে সোমবার! বরাবর উনার ক্লাশ ফাঁকি মারি। ভদ্র বাংলায় এড়িয়ে চলি। পড়া ধরা শুরু হলো। দাড়িয়েই বলা শুরু করলাম-বিশিষ্ট সাহিত্যিক, সুলেখক রোঁদ্দা ছিলেন ফরাসী সাহিত্যের রুপকার। তিনি ছিলেন ফরাসী পন্ডিত ব্যক্তি। পুরো ফ্রান্সে তার মত জ্ঞানী কেউ ছিলনা। চতুর্দিকে তার জয়জয়কার! আপা হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে সেকেন্ড বেঞ্চে তাকালেন। মানে হলো বাকীদুজনের মত আমাকেও দাড়াতে হবে। বললেন ওরা যা বলবে তোমরাও কি তাই বলবে? ওরা দুদিকে মাথা নাড়লো। কিন্তু আপা কি বুঝলেন কি জানি! আর পড়া না নিয়ে আমাদের তিনজনকে আলাদা করলেন। করে বললেন মেইন বইটা(টেক্সট বুক) বের করো। করলাম। প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যের খেলা প্রবন্ধ বের করে আমাকে পড়তে বললেন। আমি শুরু করলাম। প্রথম লাইন। ফরাসী..আমি বোবা হয়ে গেলাম। আপা বললেন কি হলো! পড়ো! আমি তাও চুপ। বললেন তোমার দুই সাথীরও শোনার দরকার তো। আর সেটা তোমার মুখ থেকেই। পড়ো! আমি দাঁতে দাঁত চেপে কোনমতে উচ্চারণ করলাম ফরাসী ভাস্কর রোঁদ্দা…….!
এরপর কি হলো তা আর বলার প্রয়োজন আছে বলেতো মনে হয় না। জীবনে আর দ্বিতীয়বার কোন পন্ডিতি করার শখ বা সাহস কোনটাই আমাদের আর হয়নি।
অংকে বরাবরই আমার মারাত্মক ভয়। তবে আমি অংকে বিশেষ ট্যালেন্ট। আমিই বোধহয় একমাত্র স্টুডেন্ট যে অংক পরীক্ষার আগের রাতেও পড়ে। ধুমসে পড়ে। পড়ে পড়ে শেখে। প্রতিভা বটে! পাটীগণিত, বীজগনিত কি জ্যামিতি। সব আমার জানা। একদম ঠোঁটের আগায়। মুখস্ত। ইন্টারের ফিজিক্সের অংকও আমার মুখস্ত ছিল।
জীবনে মানুষ অনেক রকম প্রক্সি দেয়। তবে আমার মত টিউশনে প্রক্সি দিয়েছে কি না জানা নেই। প্রক্সির স্টুডেন্ট পীথাগোরাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে এক বাক্যে উত্তর দিয়েছিলাম খুব খারাপ লোক!
জীবনের প্রথম বিয়ের প্রপোজাল পেয়েছিলাম এক হাই প্রোফাইল পত্রিকা সেলিব্রেটির কাছ থেকে। আমাদের যুগে পত্রিকার মানুষেরাই আমাদের চোখে স্বপ্নের মানুষ ছিলেন। কাঙ্খিত ব্যাক্তি হতেন। সেলিব্রেটি ভাবা হতো তাদেরই। যা হোক, কোনকিছু ভেবে ওঠার আগেই বললেন ম্যাথমেটিক্সের স্টুডেন্ট। ভাবনা শুরুর আগেই পালিয়ে গেল। ভদ্রলোক সারপ্রইজড!
ইন্টরমিডিয়েটে হৈমন্তী পড়তে পড়তে অনেক সহপাঠিনীকে দেখেছিলাম ভালোবাসার গবেষক হয়ে উঠতে। ধোঁয়াটে ভাবগ্রস্ততার বিকারের ভীড়ে আঁতেল আমার বিকারহীনতা কিছু কিছু সময় স্বয়ং আমাকেও ভাবিয়ে তুলত বৈকি! অনেক আগে একজন শ্রদ্ধেয়া বলেছিলেন আমি না চাইতেই অনেক ভালোবাসা পাই। তাই এর কদর বুঝিনা। হতে পারে। বক্তাকে কেবল কষ্ট ছাড়া আর কোন উপহার দেয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। একদা এক যুবক বলেছিল- কবিকে প্রত্যাখ্যান! আমি কেমন নারী??
প্রফেশনাল লাইফে প্রফেশনাল কের্সের বিরতিতে বিরতিতে চলতো ভালোবাসা শেখার নিমন্ত্রন। একদিন টের পেলাম আশপাশের সবাই বুকড! ক্লাসএন্ডে দুটো কথা বলার লোক নেই। সবাই গেছে বনে! পড়ে আছি একা আমি! চারপাশে নাকি বড়শীর ছড়াছড়ি। গাধী আমি কি আর অত বুদ্ধি রাখি! যে শকুনীর পাশা খেলার ধর্ম রক্ষার মত হিজাবের ওপাশে নিমন্ত্রন রক্ষা করতে চলবো! জুনিয়রদের পরামর্শ আমার বোঝা উচিত। বিয়ের বাজার যে চড়া!
বাস্তবতার পোড় খাওয়া এক ললনার ভাষ্য জীবনের আমি কিছুই বুঝিনা। আরেক লে হালুয়া টাইপ ছোট্ট ভাইটার বদ্ধমূল ধারনা আমি বুঝি সবই। বড়পুর চোখে চরম খেয়ালী। সন্তানতুল্য ছোট্ট বোনটার কৌতুহলী দৃষ্টিতে আইকন। সবটুকু শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পন করেও মাসে বছরে একটা ফোনের জন্য হাহাকার করা ফাতেমার চোখে বড্ড অহংকারী। মেজবানে জড় হওয়া রমনীকূলের কারো চোখে ধবধবে ফর্সা না হয়েও স্বামীর সবটুকু নিংরানো ভালোবাসা পাওয়ার কোন তাবিজের অধিকারী, কারো চোখে যতটা পাই ততটা পাওয়ার অযোগ্য। কারো দৃষ্টিতে বুদ্ধিমতি, কারোবা ভাগ্যবতী। মুন্নীর বিশ্লেষণে আতেঁল। হ্যামিলীর ভাবনায় না আন্দার না বাহার। মানে না যায় সওয়া না যায় ফেলা! আর একজন তো শিওর, আমি হেয়ালী।...?
এত লোকের জবাব আমার ঝুলিতে নেই। আমি নিজেই জানি না। জানার চেষ্টাও নেই। জানলেতো রোঁদ্দা কে সেটাই বলতে পারতাম।
আমি শুধু একটা সত্য জানি। আমার ভালোবাসার ভালোলাগার কাছের মানুষগুলোর কাছে আমি আমিই। হতে পারি ট্যালেন্ট, হতে পারি বিশেষজ্ঞ, হতে পারি অনেক ঈমানদার, ধার্মিক, সাহসী বীরাঙ্গনা। আকর্ষনী ক্ষমতার অধিকারী, সর্ব শ্রদ্ধেয়া অনন্যা। প্রবল মমতায় আচ্ছন্ন ওই চোখে হতেই পারি ভুবন ভুলানো রুপবতী কিংবা সবথেকে ভালো মেয়েটি, বোনটি। অথচ যদিও আমি তা নই। আমি তো জানি আমি কি। কতটুকু। তবু..
আমি এতে মোটেও দুখিত নই। আমি শুধু জানি আমি তৃপ্ত। হোক না ভালোবাসার নেশায় একটু বাড়তি ভাবা, চোখের কোন ঘেষে একটু বাড়তি দেখা..ক্ষতি কি!
বিষয়: বিবিধ
১৮৬১ বার পঠিত, ৫৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার জন্য কি উপহার?
হাহ হা রাগ করনা কিন্তু আবার
আপনিও কি কবি নাকি!!! আমার ভেতর নারীত্ব না দেখে পৌরষ দেখিতেছেন!! আপনাকে সাইজ কর্তে হপে!!
০ আমাদের সময় এগুলো ছিল ম্যাথ ফাস্ট পার্ট । আর স্থিতিবিদ্যা , গতিবিদ্যা ও ক্যালকুলাস নিয়ে ম্যাথ সেকেন্ড পার্ট । আপনাদের সময় কি এগুলো ছিল ?
ভিন্নধর্মী পোস্ট , অটো বায়োগ্রাফি মনে হল ।
ব্লগে রাজনীতি,ইসলাম নিয়ে ভারী ভারী আলোচনার মধ্যে অনেকদিন পর একটা গল্প পেলাম। ভালো লাগলো পড়ে সুহাপু'কে অনেক ধন্যবাদ
ভালো লেগেছে আপনার লেখার ঢং-বর্ননাশৈলি। ভালো লাগার পরশ ছুঁইয়ে গেলাম। ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আনন্দে থাকুন, জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত।
ভাবছি এই নামের সবাই প্রাকৃতিক প্রদত্ত ফাঁকিবাজ কিনা? এবারও অত্যন্ত যত্নের সাথে সুকৌশলে ব্লগীয় সুকন্যা সুমাইয়া লম্ফ দিয়ে পার হয়ে গেল প্রশ্নটায়। হায় বিধাতা এ কেমন ফাঁকিবাজ পাঠালে ধরায়!
এনিওয়ে আপনার এ লেখাটা আমার পড়া আপনার সর্বসেরা লেখা।
মাগার আপনার সাথে একটা মিল আছে, তবে সে মিলের অর্থ এই নয় যে,নিজেকেও আপনার স্তরে বলে প্রকাশ করার চেষ্টা চালাচ্ছি।....আমিও অংক মুখস্ত করতাম। আর মুখস্ত অংকে ভাল নাম্বরও পেয়েছি। মুখস্ত শক্তি খারাপ ছিলনা। জ্যামিতি তো এখনও কেউ বুঝালে বুঝব না।
আপনি একটা জিনিয়াস জিনিস। ....পাম দিচ্ছিনা,সত্যি কথা
তবে মিলখানা খুজিয়া পাইয়া ব্যপক পুলকিত হইলাম।
লেখার পুরো ভাবটুকু কেউ বুঝতে পারলে লেখকের সার্থকতা। এই সার্থকতার অনুভূতিটা বড় মায়াময়। তা বোঝানোর সাধ্য এই অধমের কারিকুলাম ভাইটায় নেই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন