বাবা তো বাবাই তাই না!
লিখেছেন লিখেছেন সুমাইয়া হাবীবা ৩০ মার্চ, ২০১৪, ০১:০২:৩৮ দুপুর
বাবা মানে কি? আপনাকে জিজ্ঞেস করা হলে আপনি কি বলবেন? বলবেন আমাদের অভিভাবক। আমাদের নেতা বা কর্তা। বাড়ির প্রধান। আর কথ্য ভাষায় বাস্তব বলতে গেলে আমাদের বটবৃক্ষ যিনি মাথার উপর বিনে পয়সার আশ্রয়, আমাদের ব্যাংক যিনি কোনরকম দায় ছাড়াই সকল চাহিদা পূরণে বাধ্য, আমাদের পীর যিনি বুজরুকি ছাড়াই সকল প্রকার মুশকিলে আসান, আমাদের লাইফটাইম ছাতা যিনি লাইফটাইম ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে রক্ষাকারি, আমাদের পাওয়ার যিনি দুনিয়াবী যে কোন কাজে কোন দেনাপাওনা ছাড়াই সবথেকে বড় সুপারিশকারী, (যাকে আমরা অনেকে বাপের জোরও বলে থাকি), আমাদের সম্মান আমাদের মর্যাদা। এটার ব্যাখ্যা দেবার প্রয়োজন বোধ করছিনা। তবে সবথেকে বড় যে ব্যাপরটি সেটাই আপনি বলেননি। আপনার উৎস। আপনার মূল। আপনার বাবা আপনার উৎস। তার থেকেই আপনার উৎপত্তি। তিনি নাহলে আপনিই হতেননা। আপনার বাবার ক্রোমোজোম ঠিক করেছে আপনি নর না নারী হবেন। আপনি যতগুলো জিন বহন করছেন তার বেশিরভাগ আপনার বাবার। এতো গেল বিজ্ঞান। আর বাস্তব? বাস্তব তো এই যা আপনি উপরে বললেন আর যা কিছু বলা হয়নি সব। আপনি শত চেষ্টাতেও আপনার থেকে যে মানুষটির অংশ আলাদা করতে পারবেননা। যে মানুষটির অবদান অস্বীকার করতে পারবেননা।
আমরা অনেকেই বাবার কথা মনে করি অকেশনালি। মানে সিচুয়েশন আসলে। বাবার জন্য এটা করা উচিত ওটা করা উচিত। বাবা আমার জন্য অনেককিছু করেছেন ইত্যাদি। ব্যতিক্রম আছে তবে সেটা সংখ্যায় খুব কম। প্রকৃতপক্ষে বাবার প্রতি দায়িত্ব প্রতি মুহুর্তের জন্য। সুস্থ বা অসুস্থ অবস্থায়, সামর্থ বা অসমর্থ সব অবস্থায়। অনেকেই বাবাকে নিয়ে হিনমন্যতায় ভুগি। যেটা মোটেও ঠিক নয়। আবার অনেকেই বাবাকে নিয়ে বেশি গর্ব করে থাকি। গর্ব করাটা দোষের নয় তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অন্যের মনে কোন আঘাত না লাগে। এবং আমাদের অতিরিক্ত গর্ব যেন তাকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত না করে দেয়। আমরা প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকি তাহলেই কল্যান হবে আমাদের। অনেক সন্তান বাবার জন্য কিছু করতে গেলেও নিজের অবস্থার কথা ক্যরিয়ারের কথা চিন্তা করে আর্থিক সঙ্গতির কথা বিবেচনা করে পিছু হটে আসেন। একটু ভেবে দেখুনতো এক্ষেত্রে সাফারার হচ্ছে বাবা মা। আপনি যখন ছোট ছিলেন তখনও আপনার জন্য তাদের শখ আহ্লাদ সব বিসর্জন দিয়ে আপনার কথা ভেবেছেন। আপনার চাহিদা পূরন করেছেন। আর যখন আপনি বড় হলেন তখনও তারাই ত্যাগ করছেন। আপনি, আপনার স্ত্রী-পুত্রের চেয়ে তারাই বঞ্চিত হচ্ছেন। তাহলে তাদের প্রাপ্তি কি! আপনি যদি ভেবে থাকেন যে বাবামায়ের জন্য প্রাপ্তি হলো আখিরাতে তবে আপনাকে বলছি কি ধরে নিয়েছেন আপনি? আপনি চির যৌবনপ্রাপ্ত! যদি তা নাহয় তাহলে আপনাকেও কিন্তু প্রাপ্তির জন্য ওই আখিরাত অবধিই বসে থাকতে হবে! কারন ইতিহাসের তো পুনরাবৃত্তি হয়।
আমরা অনেক সময় মায়ের প্রতি কর্তব্য যদিওবা পালনের চেষ্টা করে থাকি কেন যেন বাবার ঝুলিটা শূণ্যই থেকে যায় সে তুলনায়। মা বেশি সময় কাছে থাকাতে এবং কিছুটা প্রশ্রয় দেয়াতে আমরা মাকেই অগ্রগন্য রাখি। অবশ্যই রাখবো। তবে বাবাকে পেছনে ফেলে দিলে দিয়ে নয়। একই সমান্তরালে। মা করছেন তবে বাবাও কিন্তু বসে নেই। দিনরাত পরিশ্রম করছেন, বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন আপনাদেরই জন্য। কথনও ভেবে দেখেছেন এই যে মানুষটি সারাটাদিন বাইরে থাকে, বাইরে খায়, অনেক সামাজিক অনুষ্ঠান মিস করে যায় কাজের জন্য, প্রতিদিন সেই নিরানন্দের একঘেয়েমীর অফিস, কাজ এসব কেবল আপনাদেরই জন্য। এগুলো ত্যাগ নয়? বাবারওতো ইচ্ছে করে আপনার মত ঘুরে বেড়াতে, আনন্দ করতে, বাড়িতে আরাম করে খেতে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে, একটু অবসর পেতে একটু বিনোদন পেতে। তিনিও রক্তে মাংসের মানুষ। তারও অনেক স্বপ্ন ছিল যা হয়তো আপনাদের জন্য সংসারের জন্য তিনি ভুলে গেছেন। আমরা ভাবতে পারিনা এগুলো। অথচ এগুলো আমাদের নিজেদের দিয়ে বিচার করা উচিত।
অমুকের বাবা অনেক কিছু করেছেন তার জন্য। আমার বাবাতো আমার জন্য এতকিছু করেনাই। তমুকের বাবা অনেক কষ্ট করেছে। আমার বাবা ধনী মানুষ। তার এসব কোন কষ্টই করতে হয়নি। তাকে কখনও সন্তানের জন্য না খেয়ে কাটাতে হয়নি। কিংবা শারীরিক বা মানসিক কোন কষ্ট সহ্য তিনি করেননি। কিংবা আপনি নিজ চেষ্টায় এই হযেছেন সেই করেছেন বা অন্যকিছু। আমাদের চিন্তাভাবনাগুলো কি করে যেন এমনধারার হয়ে যায়। অকৃতজ্ঞ না হলেও অনেকের মনের ভেতর এমনই ক্ষোভ দুঃখ জমা থাকে। আদতেই কি এটা বাস্তবসম্মত? মোটেও না। আপনার বাবা আপনার জন্য ততটুকুই করেছেন যতটুকু তার সাধ্যে আল্লাহ বরাদ্দ রেখেছিলেন। আল্লাহর এমনটাই ইচ্ছা ছিল যে আপনি আপনার যোগ্যতার প্রমাণ দিন। তাই বাবাকে তেমনকিছু করতে হয়নি। এখানেও কথা থাকে, যোগ্যতা ওহী নয় যে আসমান থেকে নাযিল হয়। যোগ্যতার সিংহভাগ আসে জেনেটিক্যালি। আপনি ঘষে-মেজে বাড়াতে পারেন কিন্তু সৃষ্টি করতে পারেননা। এটাও না ধরতে চাইলে বলি, সবচেয়ে বড় কাজটাই তিনি করেছেন যেটা না হলে আপনি আজকের আপনি হতেননা। কল্যানের দোয়া। বাবা যদি বদদোয়া করতেন আপনার জন্য আপনি কি কিছুই পারতেন? সফল হতেন?? আর আপনার বাবার দারিদ্রতা ছিল না সেটা আ্ল্লাহর অসীম দয়া। দরিদ্র বাবা হলেই তিনি বেস্ট বাবা এই থিউরি আপনি কোথায় পেলেন! অভাবে পড়ে অনেক বাবা সন্তানকে বিক্রিও করে দেন সেটা ভুলে যাবেন না। দারিদ্রতা আল্লাহর চরম পরীক্ষা সমূহের একটি। তাই শুকরিয়া আদায় করুন।
আসলে এসবই শয়তানের কুমন্ত্রনা আপনাকে আপনার দায়িত্ব থেকে দুরে সরিয়ে রাখার জন্য। বিপথগামী করার জন্য। তাই এমন চিন্তা থেকে মুক্ত থেকে নিজ অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। বাবা যাই হোক, যেমনই হোক, ভালো মন্দ, সাদা কালো, যোগ্য অযোগ্য সর্বাবস্থায় বাবার প্রতি কর্তব্য পালন করুন। একবার চলে গেলে আর কি ফিরে পাবেন!
হারিয়ে যাওয়ার আগেই জান্নাত নিশ্চিত করুন। তার হক পরিপূর্ণভাবে আদায় করার চেষ্টা করুন। বাবা তো বাবাই তাই না!
বিষয়: Contest_father
২০২৬ বার পঠিত, ৪৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
****************************
হায়াত বাবার ভাগ্যে আমার কামানো একটি টাকাও ভোগ করার সুযোগ দেয়নি,শুধু বাবাই দিয়ে গেছে অকাতরে কোনদিন এটি থাপ্পরও দিয়েছেন বলে মনে নেই বাবা যখন ছিলো তখন ঈদ মানেই আনন্দ ছিলো আর এখন ঈদ মানেই কিজানি বাপু....বরিং। পিলাচ
সুন্দর করে গুছানো লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো
ধন্যবাদ
অনেক ধন্যবাদ
আপনার লেখাটি খুব ভালো লাগলো।
হারিয়ে যাওয়ার আগেই জান্নাত নিশ্চিত করুন। তার হক পরিপূর্ণভাবে আদায় করার চেষ্টা করুন। বাবা তো বাবাই তাই না!
ভালো লাগলো অনেক অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন