আমার বাবা..ভিআইপি এবং সেলিব্রেটি..দুটোই।
লিখেছেন লিখেছেন সুমাইয়া হাবীবা ২৪ মার্চ, ২০১৪, ১০:৫৯:৩৩ রাত
১)
১আগষ্ট। সারা বাড়িতে খুশীর রোল। নতুন মেহমান এসেছে। গ্রামে খবর দেয়া হলো। নাম রাখা হলো ইসলামের প্রথম নারী শহীদের নামে। তিনদিনের মাথায় দাদী এলো নয়া নাতীর মুখ দেখতে। কোলে নিয়েই ভুল বুঝতে পারলো। প্রচন্ড বিরক্তিতে আম্মার দিকে তাকালো। আম্মার মুখ নীচু। বেশ ঝাজের সাথে নামিয়ে রাখলো নাতনীকে। হাবিব! এই ছ্যান দেখার জন্য আমারে খবর দিয়া আনলি!
-মা..আমারতো আরেকটা জান্নাত বাড়লো। আমার এখন তিন মেয়ে। আমার জান্নাতে যাওয়া কেউ আটকাতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ। আব্বার মুখে তৃপ্তির হাসি।
২)
১৯৯৪ সাল। আব্বার সাথে গিয়ে স্কুলে ভর্তি হয়ে বাসায় এলাম। আম্মা সব শুনে বাকরুদ্ধ। আব্বা নির্বিকার। আম্মা কিছুতেই মানতে পারছেনা। বললো:
-তুমি কোন আক্কেলে সুমুরে টুতে ভর্তি করলা!
-কি আশ্চর্য! আমি কি করলাম। ও ভুল করে ওয়ানের বদলে টু ক্লাসে ঢুকে গেসিলো। সবই পারসে। মাশাআল্লাহ। স্যারেরা বললো টুতেই দিয়ে দিতে। আব্বা আমার প্রতিভায় ব্যপক মুগ্ধ। কিন্তু আম্মা কিছুতেই ইমপ্রেসড হচ্ছেনা। যে মেয়ের কেজি ক্লাসে যাবার কথা টাকার অভাবে তাকে সরকারী স্কুলে ওয়ানে দেওয়া। ওখানে কেজি নেই। তাই বলে টু! এই লোকটা কি কোনদিনই সংসার বুঝবেনা!
৩)
১৯৯৯ সাল। হোষ্টেলে এলাম। দোতলায় ক্লাস হয়। আমি ক্লাস থেকেই বুঝি আব্বা আসছে। হ্যামিলী বলে কে বলসে! আমি আকর্ণ হেসে বলি আব্বার যে ভরাট গলা ওটাতো আমি ছয়তলায় থাকলেও শুনতাম।একটু পরেই ফাতেমা বুয়া হাঁক ছাড়ে ক্লাস সেভেনের সুমাইয়ার গার্জিয়ান আসছে। আমি লাফিয়ে নামি। কিরে মা কেমন আসো? শরীরটা ভালো আসে? আর দুএকটা কথা। শেষে একটা পলিথিন আরেক হাতে দশ টাকার একটা নোট। পলিথিনে এক প্যাকেট বিস্কিট, এক প্যাকেট টানাচুর, আর একটা পটেটো চিপস। প্রতি সোমবারের রুটিন। যখন আব্বা চলে যেত আমি পোটলাটা হাতে গেট ধরে কানতাম। আর সান্তনা দিতাম নিজেকে আর তো দুইটা দিন। বৃহস্পতিবারেতো সোজা মিরপুর!
৪)
২০০৩-৯ সাল। বিভিন্ন সামাজিক কাজে বাইরে ঘোরাঘুরি করি। আব্বার খুব অপছন্দ। তাও করি। চেষ্টা করি সন্ধার আগে আসতে। প্রায়ই পারিনা। বাসায় ঢুকেই বলি অফিসের গাড়ী দিয়ে গেসে। একটু শান্ত হয়। জানপ্রান দিয়ে কাজ করতাম। কে মূল্যায়ন করলো কে করলোনা ডোন্ট কেয়ার। নিজের মেধা যোগ্যতায় আন্তরিকতায় দায়িত্বের পরিধি বাড়তে থাকলো। বড় বড় যে কোন কাজে আমি। নানান অভিজ্ঞতা হয়েছে। সবচেয়ে বিচিত্র যেটা, সেটা হলো কোন চাচা বা খালাম্মার প্রশংসা শেষে জিজ্ঞাসা তুমি কি অমুক ভাইযের মেয়ে? কিংবা তুমি কার মেয়ে? নাম বললে উনাদের হতাশ চেহারা দেখে মায়া হতো। বুঝতাম ওনারা এমন কারো নাম আশা করছেন যাকে নাম শুনলেই চেনা যায়। কি আর করা। অনেক সময় দেখতাম বাবার পরিচয়ের কারনে কতজনকে কত আহ্লাদ পেতে। নানান প্রয়োজনে বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠান বড় মানুষজনদের কাছে গেছি। যাওয়ার আগে আমার দায়িত্বশীলার ফোন অমুককে না তমুককে(হোক একদম নিষ্ক্রিয় তবু) সাথে নিয়ে যাও। কেন আপু! ওতো অমুক চাচার মেয়ে সুবিধা হবে। বৃহত্তর স্বার্থে সামি’না ওয়াত’না। কিন্তু মনের মাঝে কিলবিলিয়ে উঠতে চায় একটা জিজ্ঞাসা আমার যোগ্যতা আমার পজিশনটা কতটা পলকা..অইটুকুনই। এরপর আর মাথায় থাকতনা। কারন আমি বুঝতাম দায়িত্বশীলারোতো কিছু করার ছিলনা। আর আমার ঘরানায় যোগ্যতাই আসল নইলেতো আমি আমার পজিশনে আসতামনা।
অনেকে মেয়ে খুজতে বলতো। আমার সাদাসিধে আম্মা বলতো তুই বলতি তোর বড় বোন আছে। মনে হতো জমিন ফাঁক হোক আমি ঢুকে যাই… ক্যামনে বুঝাই উনারা কি চান! তখন বড়পুকে খুব ফিল করতাম। বুঝতাম ওর কেমন লাগে যখন ওকেই বলা হয় ওর চেয়ে ছোট কোন মেয়ের বিয়ের ঘটকালি করার কথা। শুধুমাত্র বাবার পজিশনের কারনে। আমি হলফ করে বলতে পারি আমার বোনেরা তার চেয়ে বহুগুন ভালো ছিল দেখতে শুনতে। কেউ কেউ কুফুর মাসয়ালা শুনাতেন। মাঝে মাঝে ভাবতাম একই ঘরানার লোক হয়েও মানসিকভাবে কত গোত্রে বিভক্ত এরা! বড়পুর বিয়ে হলো দেশের নামকরা একটা প্রাইভেট ভার্সিটির মালিকের ঘরে। মেঝপুরও প্রথম সারির ব্যাংকের পরিবার, আর আমার স্বনামধন্য হসপিটাল পরিবার। প্রত্যেকটি বিয়ে আব্বার ধার্মিকতা, ইসলামপ্রিয়তাকে সম্মান দেখিয়েই হয়েছে। এই পরিবারগুলোর কুফুর শিক্ষা নেই। উনারা অতটা ইসলাম বোঝেননা কি না!
৫)
২০১১ সাল। আব্বা রিটায়ার করলেন। পেনশনের টাকার ভাগ হলো। আমার আর মেঝপুর বিয়ে, কিছু ধার শোধ, হজ্ব। সারাজীবন একটা বই আব্বা এতবেশীবার পড়েছেন যে কোন পৃষ্ঠায় কোন শব্দ সব মুখস্ত! ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হজ্বের বই। কে একজন দিসিলো। আর টিভিতে কাবার ছবি দেখলেই উল্লাসে ফেটে পড়তেন। কি কি চেঞ্জ হইসে বলতেন। আর দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন আহারে আল্লাহ! কবে নিবা! তোমার ঘর দেখাইবা!
গ্রামের মেহমান এলো। গ্রামে ঘাট করতে হবে। সেই ভোলা গিয়ে লঞ্চ ধরতে হয়। ভাড়া অনেক বেড়ে যায়। কেউ টাকা দেয়না। একজন দিলে কমিশন নিবে। আব্বা নাকচ করে দিলেন। নিতে হবেনা টাকা। তাহলে! বৃদ্ধবয়সের শেষ অবলম্বন পেনশনের টাকার চেক তুলে দিলেন। আম্মা নির্বাক। বললো তোমার হজ্ব! আল্লাহ চাইলে হবেই একদিন ইনশাআল্লাহ। এখনো চকচকে লোভাতুর চোখে সৌদি চ্যানেলে দিনরাত দেখেন তবে নীরবে। পাছে উনার সাদাকা নষ্ট হয়!
৬)
২০১৩ সাল। বিয়ের পর প্রথম আব্বা আমার বাসায় এলো। আমার রান্না খেয়ে খুবই আনন্দিত। এখনও খেতে বসলেই বলবে সুমুর বাসায় কলিজা খাওয়াইসিলো ইত্যাদি ইত্যাদি। আব্বা বিদায় নিল, বললো আসিরে মা, ভালো থাকো। ঠিক আগের মতো। আমার বাঁধটা যেন ভেঙ্গে গেল। আব্বা বেরোতেই মাটিতে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসলাম। ও আব্বাকে এগিয়ে দিয়ে এসে দেখে ঘরে এটো বাসন-কোসন। আমি মাঝখানে হাউমাউ করে কাঁদছি। কান্না আর থামেনা। ও পাশে বসে দেখছে। হড়বড় করে যা বললাম তার অনেকটাই বোঝা গেলনা। কোনমতে বললাম আব্বা আমাকে কই রেখে গেল! মাদরাসার হোষ্টেল থেকেতো একদিন বাসায় ফিরবো সান্তনা পেতাম। কিন্তু আমার সেই বাসাটাইতো আর নাই! এই হোষ্টেল থেকেতো আর কোনদিনই ফেরা হবেনা! কেন বড় হইলাম!
৭)
২০১৪ সাল। আব্বা মাহফিলে যাবে। বিদায় দিতে এলাম। দেখলাম আব্বা টাকা গুনছে। মাত্র দুহাজার টাকা। এতবার গোনার কিছু নাই। আসলে দেখছে আর ভাবছে ভাড়া, থাকা, খাওয়া…
যাবার সময় পকেট টিস্যু দিলাম এক প্যাকেট। একদিন পর আব্বা ফোন দিয়ে জানালো প্যাকেটের ভেতর কিছু টাকা পেয়েছে। আমি খুব অবাক হয়ে বললাম ও তাই! কত জায়গায় রাখি। ভুলে যাই। আল্লাহর ইচ্ছা। কত গরীব-দুঃখী আসবে না ওখানে। রেখে দ্যান। লাগবে তো। ফোন রাখতে চাইলাম। আব্বাও বুঝলো। রেখে দিল। আব্বাকে মিথ্যা বললাম। আল্লাহ নিশ্চই ক্ষমা করবে। কি করবো! যে ঘর্মক্লান্ত বাবা গুলিস্তান থেকে আরমানীটোলা পর্যন্ত হেটে যেয়ে আমাকে দশটাকা করে হাতে তুলে দিতো তাকে আজ হাতে হাতখরচ দেয়ার দুঃসাহস আমার কোনদিনই হবেনা। এরকমই নানানরকম ছলনার আশ্রয় আমায় নিতেই হবে। কারন যতই দেই পৃথিবীর সমস্ত টাকা উনাকে এনে দিলেও সেই দশটাকার সমান কোনদিন হবেনা…
৮)
আব্বা খুব রাগী মানুষ। না ধমকে কথা বলতে পারেনা। ফ্রেন্ডলী বাবা বলতে যা বুঝায় তা আমরা কল্পনাও করতে পারিনা। সবাই যখন বাবার কাছে বায়না করে আমরা তখন আব্বার ভয়ে অস্থির। যখন আদুরে বাবার হাত ধরে বেড়াতে যায় আমরা তখন জেনেছি মেয়েদের জন্য ঘরই উত্তম। যখন দামী জিনিসপত্র দেখায় আমরা তখন শিখেছি আধপেটা খেলেও আত্মীয়দের সাহায্য করতে হয়। সমবয়সীরা যখন ভাল স্কুলের বড়াই করে তখন জেনেছি মাদরাসার দ্বীনি শিক্ষা স্কুলের চাইতে উত্তম। সবার বাবা যখন স্বপ্ন দেখে ছেলে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে আব্বা তখন দেখে ভাইয়া হাফেজ হবে, বড় মুফতি মুহাদ্দিস হবে, সাঈদী সাহেবের মত দেশে-বিদেশে ওয়াজ করবে। আমরা একেকজন বিশ্ববরেন্য আলেম হবো। সবাই যখন আদুরে বাবার গল্প করে আমরা ভাইবোনেরা এ ওর দিকে তাকাই। সবার বাবা জন্মদিনে কেক আনে গিফট দেয় আর আমার আব্বা বলে দুনিয়া কিছুইনা! দুপুরবেলা দুইটাকার পুরি খেয়ে মাস শেষে বাড়িতে মায়ের খরচ দেয়। বাংলাবাজার থেকে মোহাম্মদপুর হেটে গিয়ে ছেলেকে বুখারী শরীফের অরিজিনাল কিতাব কিনে দিয়ে আসে। কিতাবের ভারে কাঁধ কুজো হয়ে যায় কিন্তু অন্তরের স্বপ্নবীজ নষ্ট হয়না।
সস্তা ফ্রেমের চশমা, মাথায় হিমকবরী তেলের দাগ পড়া টুপি, সাদা পাজামা পাঞ্জাবী(রিটায়ার করার আগে ইন ছাড়া শার্ট আর বানানো প্যান্ট), পায়ে তলা ক্ষয়ে যাওয়া রংচটা স্যান্ডেল, গায়ে জুমার দিনে মসজিদের সামনে থেকে কেনা আতরের কড়া ঘ্রান। আতরের গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে বলতাম আব্বা বড়পু যে আতর পাঠাইসে সেটা লাগান। উনার একটাই জবাব সারাজীবনতো এইটাই লাগাইসি। এখন বিদেশী জিনিস পায়া ওইটা না কিনলে ওদের সংসার চলে নাকি! ওইটা উঠানো থাক কোথাও বেড়াতে গেলে লাগাবো। এই আমার আব্বা।
৯)
বাবা দিবসে পত্রিকায় বিশেষ সংখ্যা বের হয়। এছাড়াও নানান আয়োজন হয়। সবখানেই একটা ব্যপার কমন। ভিআইপি বা সেলিব্রেটি হলে সেটাই মোস্ট প্রায়োরিটি। এদের কথা মানুষ জানতে চায়। যা তা হলেও সই। সুপার হিট। ভাত খেলেও সেটাই অনেক লাইক পায়। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়। আমিও হই। যখন ছোট ছিলাম তখন নাবুঝেই এসব দেখে মন খারাপ হতো। ভাবতাম যদি আব্বাও ভিআইপি নেতা বা সেলিব্রেটি হতো! অবুঝ মনের শুদ্ধ চাওয়া শুধু এটুকুই ছিল আব্বাকেও পুরো দেশ, বিদেশ সবাই চিনত আর গুরুত্ব দিত। পোলাপাইনী গবেষনা আর কি!
আব্বার সাথে আমাদের প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতে গেলে হতোইনা। বিয়ের আগে কোনদিন আব্বা কেমন আসেন টাও জিজ্ঞেস করা হয়নি। অথচ বটবৃক্ষ ছায়া ঠিকই দিয়েছে। অনেকেরই বাবার গল্পটা এমনই কিছু। হয়তো এমনই সাদাসিধে। যে মানুষ সারাটা জীবন শুধু শ্রম দিয়ে যায় বিনা বিনিময়ে। আমার কাছে সেইসব সাদাসিধে মানুষগুলোই ভিআইপি। সেলিব্রেটি। আমি গর্বিত আব্বাকে নিয়ে। আমাকে বিশুদ্ধভাবে পৃথিবীতে আনার জন্য। সেজন্যই আমি জারজ নই অনেকের মত! আমাকে ডাস্টবিনে না ফেলে পেলেপুষে বড় করার জন্য। যেমনটা কতই পাওয়া যায়! আমাকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য। নাহলে আমার দুনিয়া আখিরাত দুটোই নষ্ট হতো! কারো জানার দরকার নাই। কারো চেনার দরকার নাই। কারো আহ্লাদে গদগদ হওয়ারও দরকার নাই। আমার আব্বা আমার কাছে ভিআইপি। আমার কাছে সেলিব্রেটি। আমি আর আমার আল্লাহই যথেষ্ট আমার বাবার জন্য।
বিষয়: Contest_father
২২৫৯ বার পঠিত, ৮৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর কিছু বলতে পারছিনা।
আসলে বাবা-মায়ের ব্যপারগুলো খুব সেন্সেটিভতো। একদম ভেতরে গিয়ে লাগে। তাই লিখে ফেললাম।
কিতাবের ভারে কাঁধ কুজো হয়ে যায় কিন্তু অন্তরের স্বপ্নবীজ নষ্ট হয়না।
পড়লাম আর বুঝলাম , আমি কাঁদছি। আমরা যে কিভাবে আমাদের বাবা ছেড়ে থাকি , মাঝে মাঝে ভেবে অবাক ই লাগে !
এত্ত সুন্দর লিখেছেন , যে মন্তব্য করার মত যোগ্য কোনো ভাষাই আর খুঁজে পাচ্ছিনা ! আল্লাহ আপনার বাবাকে হায়াতে তাইয়েবা দান করুন।
পোস্টটি স্টিকি করার জন্য মডারেটরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অসম্ভব ভালো একটি লেখা।
ধন্যবাদ।
২) কোনমতে বললাম আব্বা আমাকে কই রেখে গেল! মাদরাসার হোষ্টেল থেকেতো একদিন বাসায় ফিরবো সান্তনা পেতাম। কিন্তু আমার সেই বাসাটাইতো আর নাই! এই হোষ্টেল থেকেতো আর কোনদিনই ফেরা হবেনা! কেন বড় হইলাম!
৩)কি করবো! যে ঘর্মক্লান্ত বাবা গুলিস্তান থেকে আরমানীটোলা পর্যন্ত হেটে যেয়ে আমাকে দশটাকা করে হাতে তুলে দিতো তাকে আজ হাতে হাতখরচ দেয়ার দুঃসাহস আমার কোনদিনই হবেনা। এরকমই নানানরকম ছলনার আশ্রয় আমায় নিতেই হবে। কারন যতই দেই পৃথিবীর সমস্ত টাকা উনাকে এনে দিলেও সেই দশটাকার সমান কোনদিন হবেনা…
৪) যে মানুষ সারাটা জীবন শুধু শ্রম দিয়ে যায় বিনা বিনিময়ে। আমার কাছে সেইসব সাদাসিধে মানুষগুলোই ভিআইপি। সেলিব্রেটি।
**************
প্রথমতঃ মডুদের ধন্যবাদ জানাই "প্রিয় বাবা" কে নিয়ে প্রতিযোগীতা দেয়ার জন্য। কারণ এ প্রতিযোগীতাটি না হলে এত হৃদয় ছোয়া একটি গল্প পড়া হতোনা।
এ গল্পের মুল্যায়ন আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে আমাকে যদি এ প্রতিযোগীতার বিচারক দেয়া হত, তাহলে এটি হতো প্রথম পুরস্কারপ্রাপ্ত। কারণ এটির মাঝে একজন সাদাসিদে বাবাকে যেভাবে সেলিব্রেটি করে তোলা হয়েছে, তুলে আনা হয়েছে জীবন চলার পথ হতে শিক্ষণীয় অনেকগুলো বিষয়, তা সত্যিই চমতকার।
আপনার ব্লগে এ প্রথম আসলাম। কি বলবো। লিখার মত একজন মানুষের যে দৃষ্টিভঙ্গী অনুভুতি তার সবটুকুনই আপনি মনের মাধূরী মিশিয়ে ঢেলে দিয়েছেন। আমি বিস্মিত হয়েছি স্বামীর বাড়ী হতে বাবার বিদায়ে আপনার কান্না আর চোখের পানিতে একাকার হওয়া মুহুর্তের অনুভমের উপমাটা দেখে। তাই এসব কোড করেছি আমার মন্তব্য।
আমার একটা মেয়ে আছে। ৭ম শ্রেণীতে। ওকে নিয়ে কাবা ঘরে তওয়াপের সময় দেখি বার বার আমার খালি দেহ থেকে ঘ্রাণ নি্চেছ।
- কেনরে মা এমন করছিস?
- বাবা। তোমার দেহের ঘ্রাণটা আমার খুব ভাল লাগে।
পিতা হওয়ার পর মেয়েদের অনুভুতির রাজ্য ঘুরতে ঘূরতে আমি অবাক হই। বিস্মিত হই। খোলা আকাশের নীচে স্বামী নামক মানুষটি জেলে থেকেও ওদের মিছে তৃুপ্তি...হায় আল্লাহ, ওদের জান্নাতে দেয়ার তোমার প্রতিশুতি এখন বুঝি।
ধন্যবা। সরি। অনেক বড় হয়ে গেল।
সবখানেই কিছু আতেল থাকে বুচ্ছেন যারা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ এবং পন্ডিত হিসেবে জাহির করতে গিয়ে নিজেদেরতো বটেই পুরো জিনিসটার বারোটা বাজায়!
ভালো লাগলো || ধন্যবাদ || পিলাচ || মাইনাস || অনেক ধন্যবাদ || স্বাগতম ||
কুইক কমেন্ট তৈরি করুন
আসলে রতনে রতন চিনে কি না!
মোবাইলে তো অনেকের সাথেই কথা হয় কিন্তু এফ এন এফ তো সবাই না। মনোযোগী পাঠকের(যদিও সবাই পড়েই ভালো লাগলো বলে আমার বিশ্বাস, তবু মি.গ্যাঞ্জামের উত্তরে বলছি) জন্য এফ এন এফ!
আপনার লিখা আর আপনার বাবার মান একই ,,মাশা আল্লাহ
ভালো লাগলো
আমিও বাবা এবং সম্প্রতি নানাও হয়েছি। তাই তোমাকে তুমি বলেই সম্বোধন করলাম।
দোয়া রইলো তোমাদের জন্য।
সমস্যা সব জায়গায় আছে..বাট ভালোটার দিকে দেখে কারাপগুলোকে মাথা থেকে ফেলে দেওয়া কি উত্তম না@
আর যাদের বাবা নাই তানা সেলিব্রিটি বাবা কোথায় পাবে?
আসলে বাবা নিয়ে পোষ্ট এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করি কেননা বুকের বা দিকটায় কেমন যেনো একটু আলতো ব্যাথা আর খালি খালি একটা ভাব লাগে।
একটু কষ্ট লাগে।
ধন্যবাদ সুমাইয়া আপু আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন