ওগো রহমান..এ তোমারই দান
লিখেছেন লিখেছেন সুমাইয়া হাবীবা ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৮:১৬:১৭ রাত
আজ খুব ফুরফুরে মনে রান্না শেষ করলাম। রান্নাঘরের জানালা টা খোলা রেখেছি বাতাস আসার জন্য। অন্য সময় গান ছেড়ে দেই। একা একা থাকি তো, বোরিং লাগে। রান্না তো আরো। আজ লাগছেনা। পাশের মসজিদে অনুষ্ঠান হচ্ছে কি একটা। মাইকে ইসলামী সংগীত হচ্ছে। হামদ, নাত, দেশের গান সব রকমই। আমি বরাবরই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ। আর মাদরাসার স্টুডেন্ট হওয়াতে মাদরাসার প্রতি আলাদা একটা টান তো আছেই। বলতেই পারেন দুর্বলতা। তবে আলীয়া মাদরাসার জন্য যেমন টান আছে তেমনি কওমী মাদরাসার জন্যও আছে, যদিও আমি ওখানে পড়িনি তবু। কারন ওটাও মাদরাসা। বর্তমানের হিজিবিজি শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেও এই দুর্বল মাদরাসাগুলো আমাদের মাঝে একটু হলেও ইসলামের শিক্ষা দেবার চেষ্টা করছে। যদিও সেটা অনেকাংশেই বিশুদ্ধ এবং যথার্থ নয়, সীমিত এবং যুগপোযোগী নয়, তবু চেষ্টাতো করছে…নাই মামার থেকে কানা মামা তো ভালো!
মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থা কিংবা সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েই আরেকদিন লিখবো ইনশাআল্লাহ। আজ যে ব্যপারটা আমাকে নাড়া দিয়েছে সেটা বলি। আমি মসজিদের অনুষ্ঠানের অ্যারেঞ্জমেন্টে একটা নতুনত্ব আবিষ্কার করলাম। এই নতুনত্বটা আমার খুব চেনা ভার্সন! কিন্তু কওমী মাদরাসার অনুষ্ঠানের যে ধরন সচরাচর আমরা দেখে থাকি তার তুলনায় একেবারেই আধুনিক, অন্যরকম। ধরনটা ধরতে পেরে আমি খুবই পুলক অনুভব করলাম। প্রশান্তি পেলাম। অনেকটা আত্মতৃপ্তিও বলতে পারেন। কোন ধরন জানতে চাইছেন তো? যে ধরনটা আমি নিজে বহুবার ইউজ করেছি, যে স্টাইলটা বহুবার আমার দেখা হয়েছে পাবলিক লাইব্রেরী, ইনজিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট, শিল্পকলা, বিয়াম কিংবা ওসমানী অডিটোরিয়ামে। এদেশের শুদ্ধ সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কান্ডারী ইসলামী সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে। যারা ইসলামী কালচারকে শুধু তুলেই ধরছেনা বরং ইসলাম ও আধৃনিকতার মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে বিপথগামী সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষগুলোকে কক্ষপথে ফিরিয়ে আনছে। তথাকথিত আধুনিক যাদের মনে হয় ইসলাম ব্যকডেটেড, তাদের মুখে ঝামা ঘষার কাজটা কিন্তু তারাই করছে! যাদেরকে অনেকেই নামধারী মুসলিম, শিবির, এজেন্ট হাবিজাবি যা মনে আসে তাই বলে থাকেন। এমনকি কওমীরাও বলে থাকেন। আবার অনেক ইসলামপন্থীরাও এদের ঈমান আমল নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলে থাকেন। আর আজ তারাই ওদের দেখে শিখে ওভাবে অনুষ্ঠান করার চেষ্টা করছে!
অবশ্য এটা নতুন ব্যপার নয়। এর শুরুটা অনেক দিন আগেই। অনেকদিন ধরেই খেয়াল করেছি আমি মসজিদের অনুষ্ঠানগুলোয় ছাত্ররা যে ইসলামী গানগুলো গায় তার মধ্যে অনেক চেঞ্জ এসেছে। এরা ওই ইসলামী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীগুলোর প্রোডিউস করা গান ভালোবাসছে, পছন্দ করছে, পরিবেশন করছে। এবং সময়ের সাথে এর ব্যবহার অনেকাংশে বেড়েছে। আর সবচেয়ে আশার যে দিক তা হলো, ওরাও ইদানিং সাংস্কৃতিক ব্যপারে খুব সচেতন হচ্ছে। শুধু শিল্পীই না লেখক, নাট্যকার, গীতিকার সব তৈরী হচ্ছে। কওমীদের মধ্যে অনেক মেধা থাকা সত্তেও এতদিন যেটা হয়নি কেবল গুরুত্ব উপলব্ধির অভাবে। এর মানেতো একটাই দাড়ায়, যা ভালো যা সত্য তাকে আটকে রাখা যায়না। অপপ্রচার দিয়ে, শক্তি দিয়ে তাকে দমানো যায়না। আতরের শিশির মুখ আটকে রেখে দিলে লাভ কি। খুলে রাখলে সুবাস ছড়াবেই।কারো সাধ্য নেই তাকে আটকায়! আমরা আমাদের শিশির মুখ খুলে রেখেছি। আটকে দেইনি। কারন আমরা চাই ইসলামের সুন্দর দিকগুলো, ইসলামের সুন্দর কালচারগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক। আর আমাদের নিয়ত বিশুদ্ধ বলেই ধীরে ধীরে হলেও আমরা তার ফল পাচ্ছি।
একটু আগে বাড়িওয়ালী ভাবী এলো। এই কথায় সেই কথায় অনুষ্ঠানের কথা উঠলো।বললো-
-অনুষ্ঠানটা সুন্দর করতেসে না ভাবী!
-হ্যা
-অনেক আপডেট হইসে! আমার ছোটবেলায়ও হতো কিন্তু এমন না। খ্যাত টাইপ।(যারা সমালোচনা করে তাদের মুখে লাগাম থাকেনা। আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এভাবে লিখার জন্য) এই গানগুলা বারবার শুনতে ইচ্ছা করতেসে। আমি জীবনেও এদের অনুষ্ঠান এত মনোযোগ দিয়ে শুনিনাই!
আমি চুপ করে রইলাম। কিচ্ছু বললাম না। কোত্থেকে শিখলো, গানগুলো কে লিখলো, কে মূল শিল্পী, কে সুর দিয়ে ভরালো অক্ষরগুলো..কিচ্ছুনা! কারন আমরা কেউ তো ক্রেডিট নিতে চাইনি, নাম কুড়াতে চাইনি…তৃপ্তি চেয়েছিলাম। আলো ছড়ানোর তৃপ্তি…সুবাস ছড়ানোর তৃপ্তি..
ভাবী চলে যাওয়ার পরও অদ্ভুত একটা অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে রইলাম। মাইকে একটা ছোট্ট হুজুর গান গাইছে ও মদীনার বুলবুলি..তোমার নামের ফুলতুলি..যতন করে হৃদয় মাঝে, একা একা নিরিবিলি..
নীচে রাস্তায় বাচ্চারা খেলছে। প্রতিদিনেই খেলে আর গান গায়। নানান রকম গান। না বুঝেই গায়। হিন্দী,বাংলা প্রেমের গান, অশ্লীল গান। কারন আমাদের গলিতে এসব গান হরদম বাজে। যা শুনে তাই গায়।
আজও খেলছে। আর গাইছে.. ও মদীনার বুলবুলি..তোমার নামের ফুলতুলি..যতন করে হৃদয় মাঝে, একা একা নিরিবিলি..!
নাম চাইনি, ক্রেডিট চাইনি ঠিক তবু মাঝে মাঝে নিজেদেরই কিছু লোকেদের নানান কথা শুনে হতাশ লাগতো, কষ্ট লাগতো, অভিমানও হতো…আজকের এই প্রাপ্তিগুলো আমার সমস্ত খেদ, অতৃপ্তি যেন ধুয়ে মুছে দিল!
বিষয়: বিবিধ
১৬৮১ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার এই কথাটি মানতে পারলাম না।
ভালো লাগলো || ধন্যবাদ || পিলাচ || মাইনাস || অনেক ধন্যবাদ || স্বাগতম ||
কুইক কমেন্ট তৈরি করুন
মন্তব্য করতে লগইন করুন