হরিষে বিষাদ..অতপর..

লিখেছেন লিখেছেন সুমাইয়া হাবীবা ১৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৪৭:৩৪ সন্ধ্যা

৫ জানুয়ারী ঐতিহাসিক ভোটের দিনে আমি আবার খালামণি হলাম। মেঝপুর ছেলে হলো। মাশাআল্লাহ রাজপুত্র একটা। ওটি থেকে বেড়িয়েই কপালটা কুচঁকে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো্। ভাবখানা এমন যে, এরা কারা! যারাই হও! ডোন্ট ডিস্টার্ব! ঘুমাতে দাও! যেমন নাতি তেমন নানী! আম্মাও বললো শোন ব্যটা রুপবান, আসার কথা ২০ তারিখ আসলা আজকে। চৌদ্দগোষ্ঠীরে নাজেহাল করলা! আবার কপাল কুচঁকাও মিয়া! নানীকে চরমভাবে অপমান করে ব্যাটা সাথে সাথেই ঘুমের দেশে চলে গেল।

কোন ট্রান্সপোর্ট না পাওয়ায় কি রকম ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে তা আর বলার প্রয়োজন বোধ করছিনা। জানা ব্যপার। যাই হোক, আশেপাশে কোথাও ডাক্তার না পাওয়ায় আমার নানুর বাসার পাশে এক ম্যাটারনিটি হসপিটালে ঠাই নিতে হলো। সবাই বলাবলি করলো এনজিও পরিচালিত বলেই এমন দিনেও ডাক্তার পাওয়া গেল। এটাও যাই হোক, আমরা থাকলাম। সরকারী হসপিটালের কার্বনকপি হলেও নতুন মেহমান আসার আনন্দে আমরা সেসব গায়ে মাখলামনা। তবে একটা ব্যপার অবশ্যই প্রশংসনীয় তা হলো ব্যবহার। আনহামদুলিল্লাহ অনেক মার্জিত এবং ভদ্র। যা সচরাচর দেখা যায়না। আমাদের বেবী খুব দুর্বল। তাই ওকে হিট দেয়া ছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশনের একটা কোর্স দেয়া হচ্ছে। ১২ঘন্টা পরে একটা করে। ওরা জানালো যে কোন জায়গা থেকে এবংযে কেউ ইনজেকশনটা দিতে পারবে। ওখানে থাকার আর প্রয়োজন নেই। ৮ তারিখ আমরা মা-বেটাকে নিয়ে খুশীমনে বাসায় আসলাম।

কিন্তু বিপত্তিটা বাধলো রাত্রিবেলায়। যখন কোন ডাক্তারকেই রাজী করানো গেলনা বাসায় এসে বাবুকে ইনজেকশন দেয়ার জন্য। বেশীরভাগই বাড়ি চলে গেছেন। যে কয়েকজন বাকী আছেন উনাদের সাফ কথা বাচ্চাকে আমার চেম্বারে নিয়ে আসেন। রোগী দেখি। ইনজেকশন দিব। তখন রাত ৯টা। মেঝ দুলাভাই উনাদের অনেক করে বোঝালেন যে আপনাদের চার্জ যা বলবেন তাই দেয়া হবে। শুধু বাসায় চলুন দয়া করে। এত কঠিন শীতে এত রাতে মাত্র ৩দিন বয়সের বাচ্চাকে বের করি কিভাবে! (কারো মনে আছে কিনা সেদিন প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছিলো। বড়দেরই অবস্থা খারাপ হযে যাচ্ছিলো।) বাট উনাদের কাহারো মন গলানো গেলনা! এদিকে ইনজেকশন দেয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ভাইয়া ছুটলেন সূর্যের হাসি স্বাস্হ্যকেন্দ্রে। যদিও অনেক রাত তবু মনে আশা যদি পাওয়া যায় ডাক্তার,, যদি রাজী হয়! ওখানে ডাক্তার না পাওয়া গেলেও প্রশিক্ষিত নার্স পাওয়া গেল যিনি রাতের ডিউটিতে থাকেন। মানুষের জরুরী বিপদ আপদের জন্য। তিনি শোনালেন আরো জটিল যুক্তি! উনাদের নাকি নিয়ম নাই অন্য হাসপাতালের বাচ্চাকে ইনজেকশন দেয়ার। শুধু উনাদের রোগীদের দিতে পারবেন। ভাইয়া বোঝালেন আমাদের প্রেসক্রিপশন সাথে আছে, আর ইনজেকশনও সাথেই আছে। জাস্ট পুশ করে দেয়া। নাহ! হবেনা। আপনারা এখানে না এনে ওখানে নিলেন কেন! ঠ্যাকায় পড়লে খালি আসেন! ভাইয়া ওনাদের চটাতে চাইলেন না। বললেন দেখুন, আমরা সব জায়গায় ট্রাই করেছি। আপনাদের এখানে যে ম্যাটারনিটি সুবিধা দিতে পারবেন সেটা ভাবিনি। (ওখানে প্রেগন্যানসীকালীন এবং প্রসূতীসেবা, নবজাতকসেবা, শিশুসেবা দেয়া হলেও ম্যাটারনিটি সেবাটি নেই। এই সেবার জন্য ওদের আঞ্চলিক ক্লিনিকে রেফার করা হয়। সেখানেই রোগীরা যান। এটা আমাদের জানা আছে।) তবু ভাইয়া নরম সুরেই কনভিন্স করার ট্রাই করলেন। কারন কথা সত্য। ঠ্যাকায় পড়েই যা্ওয়া! তবু উনাদের ঘুরে ফিরে একই বচন! সকালে আসেন, কার্ড করেন। আমরা তখন দিতে পারবো। আমাদের একটা হিসাব আসেতো! এইটা দিলে আমাদের হিসাবের বাইরে হবে। আমাদেরই ইনজেকশন আসে। ওই ইনজেকশন দরকার নাই! উনাদের এত যুক্তিযুক্ত এত ন্যায়সঙ্গত কথার পর আর কি বলা যায় বলুন!

আম্মাতো চিন্তায় পড়ে গেলেন। আর ভাইয়া ধৈর্য রাখতে না পেরে বলেই ফেললো আপনারা এই পর্যায়ের দায়িত্ববোধ নিয়ে চিকিসা সেবা দিতে আসছেন! দায়িত্ববোধও শিকায় দিলাম, আপনাদের মানবিকতা কোন পর্যায়ের! তিন দিনের একটা বাচ্চা! তাও এমন ঠান্ডার রাত! ইনজেকশনটা না দিলে বাচ্চাটার যে কত ক্ষতি হবে তাও আপনারা জানেন। তবু আপনাদের মন গলেনা! আপনারা মানুষ তো!

যাক, অবশেষে একজন দূর আত্মীয়ার অসীম আন্তরিকতায় বাসাতেই নজেকশন দেয়া গেল। আমাদের নতুন পাখী, আমাদের মুখের হাসি অমলিন রইলো। অবশ্য দূর ই বা বলি কি করে! যার এত আন্তরিকতা তিনি অবশ্যই নিকটের…অতি নিকটের….

বিষয়: বিবিধ

১১০৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

162496
১৪ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৬
সিটিজি৪বিডি লিখেছেন : ডাক্তারের পেশা হওয়া উচিত মানুষের সেবা করা। এখন ডাক্তাররা ও নাকি রাজনীতি করছে। কোন দেশে যে আমরা আছি?
১৪ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১২
116770
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : সেটাই!
162521
১৪ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৯
শেখের পোলা লিখেছেন : বাসার কেউ এ ব্যাপারটা পারলে অন্যের কাছে ধর্ণা দিতে হত না৷ শিখে রাখা উচিত৷ সবাই এখন অন্য চেতনায় বুঁদ হয়ে আছে৷ সেবা আর সহজ লভ্য নাই৷
১৬ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:২৩
117461
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : ঠিকই বলেছেন বোধহয়...
162584
১৪ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:১০
লোকমান বিন ইউসুপ লিখেছেন : আমার শক্ত হৃদয়টাও ছুয়ে গেল।
১৬ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:২৩
117460
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : Happy
162588
১৪ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:২০
ভিশু লিখেছেন : সব ডাক্তার এক না! অনেক কিছু বলার আছে, কিন্তু এখানে বললে অযথা বিতর্ক হবে। ঘটনাটি শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
১৬ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:২২
117459
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : তাতো অবশ্যই।নাহলে তো আর সমাজটা সমাজ থাকতোনা।।আপনাকেও ধন্যবাদ।Happy
১৭ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৪৫
117756
লোকমান বিন ইউসুপ লিখেছেন : আঁতে লাগছেরেররররররর.....
১৮ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৫৪
118094
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : উনি ডাক্তার নাকি!Winking) জানা ছিলনা।অবশ্যই সব ডাক্তার একই রকম নয়।যার ভেতর ইসলামী মূল্যবোধ আছে তিনি অবশ্যই মানবিকতা সম্পন্ন।শুধু ইসলামী না যে কোন ধর্মীয় মূল্যবোধ।কারন প্রতিটি ধর্মই মানবতার পক্ষে।
162659
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৫:২৮
রাইয়ান লিখেছেন : ছোট্ট বাবুটার খালামনিকে প্রানঢালা অভিনন্দন আর বাবুটিকে আদর অনেক অনেক ..... আপনাদের ঘটনাবলী শুনে তো ভয় ই লাগছে , ইনশা আল্লাহ , সপ্তাহখানেকের মধ্যে আমিও প্রথমবারের মত ফুপি হতে যাচ্ছি কিনা ! আমার মিষ্টি ভ্রাতৃবধুটির জন্য টেনশনেই আছি ! Sad Praying
১৬ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:২১
117458
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : আল্লাহ ভরসা বোন।
163047
১৬ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:২২
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : নাতির সাথে আপনার আম্মার কথাগুলো পড়ে খুব মজা পেলাম Rolling on the Floor Rolling on the Floor
মনুষ্যত্ব হারিয়ে যাচ্ছে বলেই তো আমাদের দেশের আজ এই দশা Yawn Yawn
১৬ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:২০
117457
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : আমার আম্মা খুবই মজার মানুষ।খুবই মিশুক।Happy
216375
০২ মে ২০১৪ সকাল ০৭:৫৫
ভোরের শিশির লিখেছেন : আমাদের এ দেশে কসাই আর ডাক্তারের মাঝে ডিফারেন্স তেমন একটা নেই বল্লেই চলে।
০২ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:০৮
164713
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : আসলেই। আপনাদের ভাই প্রায়ই এসে বলে এইরকম হাজারো কষ্টের কথা। অসহায় গরীব মানুষগলোর কষ্টের কথা।। এত খারাপ লাগে। মনে হয় আল্লাহ যদি সামর্থ দিত যে সবাইকে চিকিতসা করিয়ে দিতে পারতাম..Praying Praying

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File