আমার বাবা .....

লিখেছেন লিখেছেন লুবা হক ১০ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:৫৯:০২ সকাল

বাবাকে নিয়ে লিখবো কখনো ভাবিনি ।

জীবনে কখনো আমি বাবার রৃন শোধ করতে পরবো কিনা জানিনা । এই জীবনে তাকে কিছুই তো দিতে পারলাম না । পক্ষান্তরে আমি যখন যা চেয়েছি তা দিতে তিনি কখনো কুন্ঠাধাবোধ করেন নি। প্রতিদানে আমার কারণে তিনি আজ পেলেন বন্ছনা। তার মনের ভাষা আমি বুঝি । ছেলে বলে কথা । সে কখন কি চাই (অর্থ কিংবা অন্য কিছু নয়,শুধু মান-সম্মান) তা পুরোপুরি না বুঝলে ও ঠিক কিছু কিছু মনের ভাষা আমি বুঝি। তিনি আজ মনে খুবই ব্যাথা পেয়েছেন । অনেক আশা নিয়ে তিনি আজ আমার এক শুভ কাজের সূচনা করতে কিছুদিন আগে সুদূর প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছেন । শুধুমাত্র আমার চাওয়াকে প্রাধান্য দিতে । কিন্তু আমি অধম আমার বাবাকে সে ত্যাগের মূল্য দিতে পারলাম না। আমার কারণে তিনি আজ মনে খুবি ব্যাথা পেয়েছেন।

আন্তরিকতা-ভালোবাসা কি অর্থ কিংবা নীতির প্রশ্নে অটল দ্বারা মাপকাঠি করা যায় ? আমার তো মনে হয়না । মানুষের আথতিয়তায় মানুষকে আরো বেশি মহত করে তোলে। সেটা করতে মানুষের বেশী কিছু প্রয়োজন পড়েনা। শুধুমাত্র একটি উদার মনেই যতেষ্ট ।

নীতির প্রশ্নে অটল থাকাটা ভাল এবং আমি ও তা মনে প্রানে সমর্থন করে থাকি তবে অতি বাড়াবাড়ি কিন্তু ভাল না। অতি বাড়াবাড়ির কারণে মানুষকে শ্রদ্ধার দুয়ার থেকে পিছু টেনে নেয়।

আমার সাথে আজ বাবার দেখা হয়নি কিন্তু আমার মন বলছে তিনি ব্যাথাতুর মন নিয়ে আজ বাড়ি ফিরছেন। বিশাল একটা আশা নিয়ে গতকাল থেকে যে কাজ তিনি শুরু করেছিলেন সমাপ্তি দিনে তার হয়ত: অতি আশা পর্যবসিত হয়েছে। আমার আজ বুক ফেটে কান্না আসছে কিন্তু তা আমি কাউকে বুঝাতে পারছিনা। না পারছি সইতে না পারছি কারো সাথে শেয়ার করতে। কারণ , আমার চাপা স্বভাবটার কারণে। নিজেকে কোন প্রকারে শান্ত রাখতে পারছিনা। কেন এমন হল ? তিনি তো বেশি কিছু চাইনে। চেয়েছিল একটু আথতিয়তা ও ভালোবাসা কিন্তু আমি যা চেয়েছি তা পেয়েছি । আমি কত বড়ই না স্বার্থপর। নিজে ষোল আনা ঠিক রেখে বাবার চার আনা ও আদায় করে দিতে পারলাম না । মা-বাবার একমাত্র ছেলে হয়ে তাদের একমাত্র ছেলের উপর অনেক আশা - আখাংকাকে বাস্তবে রূপ দিতে না পারার বেদনা আমাকে সারা জীবন কষ্ট দিবে। আমি মনের দিক দিয়ে নিজে সুখে থাকলে ও বাবার কষ্টটা আমাকে প্রতিনিয়ত মনের ভিতর কুড়ে-কুড়ে খাবে।

আমার প্রশ্ন ! এক বাবা কি আরেক বাবার কষ্ট বুঝেনা ? বাবা হয়ে কেমনে আরেক বাবা কে কষ্ট দেয় ? সন্তানের সুখ মানে কি নিজের সুখ না ? আমি জানি পৃথিবীতে অনেক মানুষ খারাপ কিন্তু সব বাবা খারাপ না। সন্তানের কাছে পিতা অনেক বড়। আমি কিন্তু কোন বাবা কে খারাপ বলছি না । এক ব্যক্তির আচরণে আরেক ব্যক্তির মনের কষ্ট টা বুঝানোর জন্য এই অবতারণা, পৃথিবীতে যত বাবা আছে সব বাবা কে আমি শ্রদ্ধা করি কিন্তু ব্যক্তির হীন আচরণ কে আমি ঘৃনা করি। যে আচরণে সহজ-সরল মনের মানুষ কে আঘাতে জর্জরিত করে, যেমনি কোন মানুষ শরীরের কোথাও বিদ্যুতস্পৃষ্ট হলে সাথে সাথে পুরো শরীর নিস্তেজ হয়ে যায় সে আঘাত খুবই মর্মান্তিক। একটি আংগ বিচ্ছিন্ন হলে ও তা জোড়া লাগানোর সম্ভাবনা থাকে কিন্তু বিদ্যুতস্পৃষ্ট হলে তার বাচার কোন সম্ভাবনা নেই বল্লেই চলে। আমার বাবা আজ বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়েছেন । কিন্তু আমি নিরবে সহ্য করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারলাম না। শুধুমাত্র নিজের সুখের দিকে চেয়ে। এ ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিলনা আমার।ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য বৃহত স্বার্থ টি আমি ত্যাগ করলাম। আমি এক স্বার্থপর ছেলে। আমার স্বার্থপরতায় আজ বাবার মনে কষ্টের রেখাপাত একে দিলাম আমি নিজেই। দোষ করেছি আমি , আমার বাবাতো নয়। আমার দোষের কারণে কি তিনি অপমানিত হবেন ? কেন ?????

তবে আমি আজ আমার বিচরণ ক্ষেত্রটি সংকোচিত করে পেল্লাম। যে খানে কখনো আমার মনের গভীর থেকে বিচরণ না করার সংকল্পে আবদ্ধ হয়ে গেলাম। মনের তাগিদে নয় প্রয়োজনের তাগিদে পা ফেলে উল্টো পথে যাত্রা দিব মনের কষ্টের তীব্রতায়। সম্মানের চেয়ে অসম্মানের ভয়ে সারা জীবন পার করতে হবে জেনে ও সুখের আশায় বাকী জীবন পার করব। বাবা ক্ষমা করো আমায় ......না হয় তুমি তোমার ছেলের জন্য আরেকটি ত্যাগ শিকার করলে । বাবা তো বাবা---ই, সন্তানের জন্য জীবনটা তো কাটিয়েই দিলে । বাবার জন্য সন্তান, সন্তানের জন্য বাবা.....তবে মানুষের জন্য নয়, কেননা তারা বাবার মনের কষ্ট বুঝেনা।

বিষয়: বিবিধ

১৬০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File