"ফেরারী"

লিখেছেন লিখেছেন বিশ্বাসী হৃদয় ২২ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:১৩:০৫ রাত

কয়েকদিন ধরে বাড়ির পরিবেশ ভালো যাচ্ছেনা। মনটাও ভালো নেই আনিকার। একের পর এক বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তার উপর চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে আম্মুর যেন আর তর সইছেনা।কত তাড়াতাড়ি মেয়েকে বিদায় করা যায় তাই নিয়ে তার যত চিন্তা।এ বিষয় নিয়ে আনিকার সাথে কয়েক round ঝগড়াও হয়েছে।।

-“তুমি আমাকে তাড়াতে পারলেই বাঁচো,তাই না?আমি তোমাদের উপর খুব বোঝা হয়ে গেছি কিনা...

-নারে মা।তুই এমন করে ভাবছিস কেনো?বাড়িতে মেয়ে থাকলে সব মায়েরাই চিন্তা করে।।

-তোমার মত কেউ করেনা? একটাই মেয়ে তাও এত চিন্তা,আর কয়েকটা থাকলে যে কি করতা কে জানে।।

-তা অবশ্য ঠিকই বলেছিস।আর মেয়ে না হয়ে ভালোই হয়েছে?

-মানে,কি বলতে চাইছো তুমি,আমি না থাকলেও ভালো হতো?

-এক মেয়েই কথা শুনতে চাই না।আরো থাকলে আমি সামলাতেই পারতামনা...।

-হুম,আমার চেয়ে ভালো একটা মেয়ে খুজে পেলে তারপর বলো......”।

এরকম হাজারো কথার ছড়াছড়ি.........।

কি করবো?একেতো পড়াশুনার এত ঝামেলা তারপর আবার আমার এই স্বপ্নের জগত,যাকে ঘিরে আমার হাজারো দায়িত্ব আর কর্তব্য ।এত কিছুর ভিড়ে অন্য কিছু চিন্তাই করতে পারছিনা।বারবার এক অনিশ্চিত ভয় কাজ করে,নতুন মানুষগুলো যদি আমার স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়??

আর চিন্তা করতে পারছে না,আনিকা।।

-যা ছাই! যা হবার হবে।এত চিন্তা করে কি লাভ? আল্লাহ যা করবে ভালোর জন্যই করবে ইনশাল্লাহ।

নিজেকে নিজেই বলল আনিকা।

কয়েকদিন থেকেই একটা প্রস্তাব নিয়ে কথা বলছেন আনিকার বাবামা। বায়োডাটা দেখাতে চাইলে

সে শুধু বললো,

-আমার আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক কেউ না হলেই হবে।অনেক বেশী অর্থসম্পদের আমার প্রয়োজন নেই,কিন্তু আমি এমন একজন জীবন সাথী চাই যে পাশে থাকলে প্রতি মুহুর্তে আমার ঈমান আরো বেশী বেড়ে যাবে,যার সাথে আমি অনন্তকাল জান্নাতে থাকতে পারবো।

আনিকার আব্বু মুচকি হেসে বললেন,

-তাই হবে ইনশাল্লাহ।

কয়েকদিন পর,

সকালে ক্লাসে যাওয়ার সময় আনিকার আম্মু বললেন,

-আজ বিকেলে কোথাও যাওয়ার প্ল্যান আছে নাকি তোর?

-তেমন প্রোগ্রাম নাই,তবে ভাবছি আশেপাশের পিচ্চিগুলোর সাথে একটু দেখা করতে যাবো।

-তার আর দরকার নাই।আজ বিকেলে বাসায় থাকিস।

-কেন??

-ঐ যে তোকে সেদিন বললাম না ঐ ছেলেটার কথা ওরা আজ বিকেলে আসবে।।

-আরে এটা কি? হঠাত করে বলা নাই কওয়া নাই ছেলে আসবে মানে?আমি ছেলের সাথে এখনই দেখা করবোনা।।মেয়েরা এসে আগে দেখে যাবে তারপর,সব ঠিকঠাক হলে ছেলের সাথে দেখা।।

এক সাথে অনেকগূলো কথা বললো আনিকা। অস্থিরতা চেপে রাখতে পারলোনা।

-সে নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবেনা।ঐ বাড়ির মেয়েরা already তোকে দেখেছে।

-কবে? চিৎকার দিয়ে উঠলো আনিকা।

-ঐ যে সেদিন দুইটা আপা আসলো না সাথে আরোও একটা ছোট মেয়ে??

-রায়েরবাজার বাড়ী বললো ওরা।

-হুম, ওদের মধ্যে ছেলের মা,বড়বোন আর বড়বোনের মেয়ে ছিলো। ওরা জানিয়েছে ওদের তোকে পছন্দ।আজ ছেলে আসবে।

-আমার Conditions গুলো সবগুলো বলেছো।

-হ্যাঁ,বলেছি।ছেলেতো তোর Conditions গুলো শুনেই নাকি বেশী খুশী হয়েছে।

-আজীবতো!

ঘড়ির দিকে তাকালো আনিকা...কথা বলতে বলতে বাসটা মিস হয়ে গেলো সেদিকে খেয়ালই করেনি সে। সালাম দিয়ে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা দিলো।

ক্যাম্পাসে পৌছে ক্লাসে যাওয়ার পরও normal হতেই পারছেনা।স্যারের কাছে গল্প শুনে সবাই হো হো করে হাসছে আর সে যেন কিছুই শুনতে পাচ্ছেনা।কোনমতে ক্লাসগুলো শেষ করে বাড়ি ফিরে আসলো।

বিকেল ৩টার দিকে ছেলেরা আসলো।আম্মু এসে বললেন,

-আনিকা,ওরা এসেছে।

-কয়জন এসেছে?

-সব মিলে ১০ জন।

-কে কে?

-ছেলে,ছেলের বাবা,মা,দুই ভাই, বড়বোন,দুলাভাই,বড়ভাবী আর বড়ভাই ও বোনের দুই ছেলে মেয়ে।।

একটু পর আসলো তারা।মেয়েরা যেহেতু আগেই দেখে গেছেন তাই আনিকার সাথে তালহার দেখা করানোটাই এখন তাদের মূল উদ্দেশ্য।আনিকা আগেই বলে দিয়েছে শুধুমাত্র ছেলে ছাড়া অন্য গায়েরমাহরাম পুরুষদের সাথে নেকাব মেইন্টেইন করবে সে। তাই একটু পরে আনিকার সাথে তালহার আলাদাভাবে কথা বলার সুযোগ করে দেয়া হলো।মাহরাম হিসেবে আনিকার ছোট মামা তাদের সাথে থাকলেন ।

কথা শেষে তালহা তার বাবা-ভাইদের সাথে কথা বলে বললো,

-আপনারা চাইলে আমি এখনি বিয়ে করতে চাই।

সবাই একটু অবাকই হলো।

-এত তাড়াহুড়ো কিসের?আর আমাদেরতো একটু সময় দেয়া দরকার তাই না? আনিকার বাবা বললেন।

-তা দরকার,এটা ঠিক চাচা।কিন্তু দেশের যা পরিস্থিতি,কখন কি হয়?আমার যে ফেরারী জীবন?আমি চাইছিলাম যত দ্রুত হয় ততই ভালো।।তবে আনিকা কি চাই সেটা জানা দরকার।ও রাজি থাকলে আজি......

-আচ্ছা ঠিক আছে,দেখি কি বলে আনিকা।।

আনিকার বাবা আনিকার রুমের দিকে গেলেন।

একটু পর হাসি মুখে ফিরে আসলেন।ছেলের ভাই আর বোন বাজারে গেলেন...

এদিকে আনিকার অবস্থা যাই যাই।হঠাত করে এত দ্রুত সব হয়ে যাচ্ছে যে সে কি করবে বুঝতে পারছেনা।সে জুঁইকে কল করে তাড়াতাড়ি আসতে বললো।জুঁই তার দীর্ঘদিনের চলার সাথী।

পরের ৩ ঘন্টায় বিয়ের সাধারন আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে এমন সময়, জুবায়েরের ফোন,তালহার মোবাইলে......।

-আসসালামু আলাইকুম তালহা ভাই।

-ওয়ালাইকুম আসসালাম,কি খবর জুবায়ের?কন্ঠ এমন উদ্বিগ্ন শোনাচ্ছে কেন??

-ভাই,আপনি এখনি ওখান থেকে বের হন।এই মুহুর্তে পুলিশ যাচ্ছে আপনাকে গ্রেফতার করতে...।

-ও,আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলো তালহা।ওর শুকনো মুখের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে?

বাবা বললেন,

-কি হলো,কোন দুঃসংবাদ?

-বাবা,আমাকে এখনই বের হতে হবে?

-তা কি করে হয় বাবা?

-আমাকে ধরার জন্য পুলিশ রওনা দিয়েছে,আমাকে এখনি বের হতে হবে...।আমি একটু আনিকার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।

-আচ্ছা,আসো।

আনিকা খবরটা পেয়ে গেছে।এই মুহুর্তে অনুভুতি কেমন হওয়া উচিত বুঝতে পারছেনা।।

তালহা ঘরে এসে আনিকার পাশে বসলো,

-আনিকা!

-হুম।

-আল্লাহ মনে হয় আমাদের একটু বেশীই পছন্দ করেছেন,তাই আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন। অনেক কষ্ট দিয়ে ফেললাম তোমাকে। আমি আমার অনিশ্চিত জীবনের সাথে তোমাকে জড়িয়ে কি খুব ভুল করেছি?

-না না,এভাবে বলবেন না।আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবেই পাবেন ইনশাল্লাহ।মুখে বললেও চোখের পানিকে আটকাতে পারলোনা আনিকা।

তালহা কিছু না বলে শুধু আনিকার দুহাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে তাকে কাঁদতে দিলো...।

সম্বিত ফিরে পেয়ে আনিকা বললো,

-আপনি তাহলে আসেন।আর কোথায় যাচ্ছেন এটা কি আমাকে জানানো যাই?

-জানাবো ইনশাল্লাহ...আজ উঠি।।আল্লাহ হাফেয।।

-ফিয়ামানিল্লাহ,আসসালামু আলাইকুম।

-ওয়ালাইকুম আসসালাম।

বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো তালহা।এর আগে এই একি কারনে বহুবার বাড়ি থে্কে হঠাত করে সরে যেতে হয়েছে তাকে।কিন্তু এত খারাপ আর নিজেকে এতটা অসহায় তার কখনই মনে হইনি।। পেছন ফিরে তাকাবে ভেবেও তাকানোর সাহস পেলোনা,কারন সে জানে দুটি অশ্রুসিক্ত চোখ অপলক চেয়ে আছে তার গমনপথের দিকে.................. ।

বিষয়: বিয়ের গল্প

১৮৬৩ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

166021
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:০৮
আফরা লিখেছেন : চমৎকার হয়েছে গল্প ।ধন্যবাদ ।
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:১১
120167
বিশ্বাসী হৃদয় লিখেছেন : কষ্ট করে পড়ে মন্তব্য করার জন্য শুকরান আপু । Happy Happy
166026
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:২৪
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:৩২
120177
বিশ্বাসী হৃদয় লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। Happy
166032
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:৫৭
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : খুব ভাল হয়েছে , কিছু কিছু জায়গায় টাইপিং মিস্টেক হয়েছে মনে হয় । অনেক ধন্যবাদ
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৫১
120336
বিশ্বাসী হৃদয় লিখেছেন : কষ্ট করে পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। Happy
166061
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৩:৩৯
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আজকের বাংলাদেশের অবস্হা ফুটে উঠেছে আপনার গল্পে।ধন্যবাদ
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৫২
120337
বিশ্বাসী হৃদয় লিখেছেন : কষ্ট করে পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। Happy
166132
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:২৭
আলোকিত ভোর লিখেছেন : চমৎকার গল্প। ধন্যবাদ Thumbs Up Rose
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৫২
120338
বিশ্বাসী হৃদয় লিখেছেন : কষ্ট করে পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। Happy
166149
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:৪১
সাইদ লিখেছেন : চমৎকার লিখেছেন!!! অনেক ভালো লাগলো।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
২৩ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৫২
120340
বিশ্বাসী হৃদয় লিখেছেন : কষ্ট করে পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। Happy
166977
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:৪৮
২৯ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৯
123393
বিশ্বাসী হৃদয় লিখেছেন : আমিও দুঃখিত আপু। Crying Crying আপনাকে আনন্দ দিতে পারলাম না। আমার জন্য দোয়া করবেন.। Praying Praying Praying
৩০ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:৪০
123803
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying
171197
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:১৮
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : ভালো লিখেছেন Rose Good Luck
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:০৩
126649
বিশ্বাসী হৃদয় লিখেছেন : অনেক অনেক শুকরিয়া আপনাকে।। Happy Happy Happy Happy
176084
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৫:২৭
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:৪০
133313
বিশ্বাসী হৃদয় লিখেছেন : পড়লাম।।অনেক ধন্যবাদ।।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:৪১
133314
বিশ্বাসী হৃদয় লিখেছেন : পড়লাম।।অনেক ধন্যবাদ।।
১০
179412
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:২৪
নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা লিখেছেন : পড়ে ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:৪২
133315
বিশ্বাসী হৃদয় লিখেছেন : কষ্ট করে পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।। Happy Happy
১১
329344
০৯ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৭
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : দারুন তো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File