দ্যা এডিটোরিয়াল-বৈরুত থেকে প্যারিসঃশিল্পীর আঁকা শহর আজ রক্তাক্ত এক কফিন- বিশ্বের সুন্দর ও আধুনিক নগরীগুলোর মধ্যে অন্যতম লেবাননের রাজধানী বৈরুত এবং ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। বৈরুতঃবৈরুত লেবাননের রাজধানী ও শাশ্বত শহরের একটি, কখনও মরে না যে শহর, যে শহর উজ্জ্বল রং এবং স্পন্দনশীল জীবনের শহর,অবিস্মরণীয় শহরের তালিকায় লেবাননের এই রাজধানী বৈরুতকে প্রথমে রাখা হয়েছে।তবে শহরটির সবচেয়ে বড় অনন্য দিক হলো এর বয়স। পৃথিবীর তাবৎ রাজধানীর মধ্যে এর বয়স সবচেয়ে বেশি। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর বয়স এই নগরীটির। খ্রিস্টের জন্মেরও প্রায় তিন হাজার ৩০০ বছর আগে এই নগরীটি গড়ে উঠতে শুরু করে। নগরটির প্রথম অধিবাসী ছিল ফিনিশীয়রা। এরপরে একে একে হেলেনিস্টিক, রোমান, আরব ও তুর্কীদের শাসন চলেছে এই শহরে।বর্তমানে সুন্নি,শিয়া আর খ্রিস্টিয়ানদের ঐক্যমতের সরকার। বৈরুত অন্যতম পর্যটন কেন্দের প্রাচীন শহর।অথচ সেই বৈরুত আজ এক রক্তাক্ত উপত্যকার লাভায় পরিনত হয়েছে।গত শুক্রবার দুপুরে আবারো প্রকম্পিত হয় বৈরুতের সৌন্দর্য।বিস্ফোরণের শব্দ এত প্রচন্ড ছিল যে প্রায় পুরো বৈরুত শহর জুড়েই তা শোনা গেছে। সারা রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে থাকে মানব দেহের অংশ, ভাঙা কাঁচ ও ধাতব টুকরো।ঝরে গেলো ৬০ টি তাজা প্রান।কই পৃথিবী তো সরব হলনা??উল্লেখ্য সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে লেবাননে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে লেবাননে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু বোমা হামলা ঘটেছে।সেই হামলার শিকার থেকে বাদ যাননি লেবাননের প্রিয় প্রেসিডেন্ট রফিক হারিরি।তবে হারিরির হত্যাকাণ্ডে শিয়া আর ইস্রায়েলের হাত ছিল বলে হারিরির পুত্র সাদ হারিরি অভিযোগ করেছেন। প্যারিসঃ প্যারিসকে বলা হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক শৈলীর রাজধানী।প্যারিস নগরী সত্যিই অপূর্ব। জুড়ি এর মেলা ভার। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, যেন মোনালিসার হাঁসির মতো আঁকা একটি শহর। আলোয় আলোকিত ব্যস্ত নগরী প্যারিসে স্বল্প সময়ের জন্য বেড়াতে এসে মন ভরে না কোনো পর্যটকের। শুধু প্যারিসে কেন গোটা ফ্যান্সে দেখা এবং জানার মত নিদর্শনের শেষ নেই। প্যারিস নগরীতে ঘুরে বেড়ানোর স্থান বহু। আইফেল টাওয়ার, প্যারিস গেট, প্রেসিডেন্টের বাস ভবন এলিজী প্যালেস, এনভারস্‌ এ মোমার্থ পার্লামেন্ট হাউজ লুক, যাদুঘর, নটরডেম গীর্জা, কর্নকড টাওয়ার, গীমে যাদুঘর, নেপালিয়ানস্‌ টুম ইত্যাদি না দেখলে প্যারিস সফর অর্থহীন হয়ে যায় যেন। আইফেল টাওয়ারে না উঠে সম্পূর্ণ প্যারিস শহরটাকে অতি সহজে দেখা সম্ভব নয়। তাই আইফেল টাওয়ারে উঠা চাই। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ইউরোপের দর্শনীয় শহরগুলোর মধ্যে প্যারিস অন্যতম। শুক্রবার রাতে এই নান্দনিক আর ঐতিহাসিক সুন্দর শহর পরিনত হয়েছে এক রক্ত পুরিতে,বোমা আর গুলির শব্দে প্রকম্পিত শান্ত আর আলোকিত প্যারিস,লাশের সারি,রক্তে গড়ানো পিচ্ছিল ফ্লোর আর কালো পিচ ঢালা রক্তকে মাড়িয়ে দিক বিদিক ছুটছে মানুষ,নিজেকে রক্ষা করার কি আপ্রান চেষ্টাই না করছে শান্ত আর উচ্ছ্বাসিত মানুশগুলি,যা না দেখলে বিশ্বাস করানো যাবেনা কাউকেই।ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের বাটাক্লঁ নাইটক্লাবে লোকসমাগম হচ্ছিল।সাপ্তাহিক ছুটির আগের রাতে প্লেস দ্য লা রিপাবলিকের কাছেই অবস্থিত এই কনসার্ট হলে ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত হার্ড রক ব্যান্ড ঈগলস অব ডেথ মেটালের কনসার্ট শুনতে অনেক মানুষ জমা হয়েছে। কিন্তু প্যারিসের উৎসবের রাত পরিণত হয় এক রক্তাক্ত ভূখণ্ডের। প্যারিসের এই ভয়াল রাতে গুলি ও বোমা হামলায় এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর শুধু এই নাইটক্লাবেই ১০০ জন নিহত হয়েছে।কম্বোডিয়ান রেস্টুরেন্ট এ ১৪ জন, প্যারিস ন্যাশনাল স্টেডিয়াম এর কাছে ৩৫ জন।স্টেডিয়াম এ খেলা দেখছিলেন প্রেসিডেন্ট হল্যান্ড এবং জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রী ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার।প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে সেখানে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের নৃশংসতা। বাটাক্লঁ নাইটক্লাব হামলায় বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শী ইউরোপ ওয়ান রেডিওর সাংবাদিক জুলিয়েন পিয়ার্স তুলে ধরেন সেই বীভৎস চিত্র। তিনি বলেন, মুখোশবিহীন দুই অথবা তিনজন মানুষ হাতে কালাশনিকভের মতো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে ভিড়ের মধ্যে অন্ধের মতো গুলি চালাতে শুরু করে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট এটি স্থায়ী হয়েছিল। এটা ছিল প্রচণ্ড ভয়ংকর এবং হলরুম জুড়ে আতঙ্কের ঢেউ খেলছিল। তিনি বলেন, প্রত্যেকেই বিভিন্ন দিক থেকে দৌড়ে স্টেজের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। সবাই ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দিচ্ছিল এবং আমি তাদের পায়ের নিচে পড়ে যাই। বন্দুকধারীরা কমপক্ষে তিনবার রাইফেলে গুলি ভরে। তাদের কোনো মুখোশ ছিল না। তারা কী করছে, সেটি তারা জানত। তারা ছিল একেবারেই তরুণ। পিয়ার্স বলেন, হামলার সময় বন্দুকধারীরা একটি শব্দও বলেনি। তবে ঘটনার অন্য প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরা ওই সময় ‘এটা সিরিয়ার জন্য’ বলে চিৎকার করছিল। একপর্যায়ে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় তিন আত্মঘাতী হামলাকারী। মুহূর্তের মধ্যে পুরো হলরুম যেন নরকে পরিণত হয়। মেঝেজুড়ে শুধু রক্ত আর মৃতদেহ। প্রতিবাদের রং হোক এক এবং দৃষ্টি হোক সমান... ===================================== হামলাকারীদের যত যুক্তিই থাকুক, ফ্রান্স ট্র্যাজেডি দুঃখজনক, মর্মান্তিক ও নিন্দনীয়; অবশ্যই। যেমনটি ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া, সুদান, ফিলিস্তিন, লেবাননের নিরীহ জনসাধারনের উপর নানা অজুহাতে টনে টনে বোমা ফেলে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের শিকার সকল মজলুম-নির্যাতিত অধিকারহারা মানুষের প্রতিই আমার দৃঢ় সমবেদনা, সহমর্মিতা ও সমর্থন রয়েছে।কিন্তু এটা প্রমাণ করার জন্য নতুন করে ফ্রান্সের জাতীয় পতাকা দিয়ে চেহারা রাঙাতে হবে কেন??!!!! প্রশ্নটা ওঠতো না, যদি ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে ওঠে ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া, সুদান, ফিলিস্তিন, লেবান, কাশ্মির, জিনজিয়াং, আরাকানসহ আরো সকল নিপীড়িতদের পক্ষেও এমনভাবে প্রতিবাদ হয়ে আসত!!! আবেগ-বিবেক, নীতি-আদর্শ, ন্যায়-ইনসাফ, অধিকার ও মনবতাবোধ জেগে ওঠুক পৃথিবীর সর্বত্র, সব মানুষের জন্য, সমানভাবে........ স্থান, কাল ও অবস্থানে রঙ পাল্টানোর নীতি পরিহার করে প্রতিবাদের রং হোক একটি!!!! সমস্যার মূলে না গিয়ে বন্ধ হোক সন্ত্রাস দমনের নামে আরো নতুন নতুন সন্ত্রাসের দরজা উন্মুক্তের খেলা.... সর্বশেষ এইটুকুই , বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের শিকার সকল মজলুম-নির্যাতিত অধিকারহারা মানুষের প্রতি আমার দৃঢ় সমবেদনা, সহমর্মিতা ও অকুণ্ঠ সমর্থন আছে এবং থাকবে। হামলাকারীদের যত যুক্তিই থাকুক, ফ্রান্স ট্র্যাজেডি দুঃখজনক, মর্মান্তিক ও নিন্দনীয়; অবশ্যই। কোন হত্যাই সুখের নয় বরং এর পরিনতি হয় অত্যন্ত ভয়াবহ, বছরের পর বছর ধরে পশ্চিমা আগ্রসনে যে সিরিয়া,ইরাক,মিশর,লিবিয়া,বার্মা,ভারত,ইয়েমেন,আফগান,লেবানন,সুদান,চেচনিয়া,ককেশাস,আলবেনিয়া,আলজেরিয়া,আজারবাইজান,বসনিয়ায় লাখ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, সেটি কেন তাদের অনুভূতিকে আঘাত করে না?এই সব জনপদের নিরীহ জনসাধারনের উপর নানা অজুহাতে টনে টনে বোমা ফেলে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা। এটা কি অনুভূতির পশ্চিমা ভার্সন? মানবতা কি শুধু উন্নত দেশের?নাকি মানবতা শুধুই তথাকথিত ধনীদের ?? সিরিয়ায় যুদ্ধের নামে চলতেছে আমারিকা ও রাশিয়ার সমর প্রদর্শনী। কার অস্ত্র কত শক্তিশালী, কতটা সফলভাবে লক্ষবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম তার একটা প্রদর্শনী ও পরীক্ষা চলতেছে মাত্র। এই প্রদর্শনীর পড়েই রাশিয়ার অস্ত্রের বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। ডলারের বিপরীতে রাশিয়ার মূদ্রা " রুবল" এর অব্যাহত দরপতন ঠেকাতে অস্ত্রের বাজার প্রসার করা ছাড়া রাশিয়ার আপাতত কোন বিকল্প নাই। ফ্রান্সের এই হামলার ব্যাপারে অনেক ব্যাখা বিশ্লেষন হচ্ছে, হবে। তারপরেও কেন জানি মনে হয় আরেকটা যুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছেনাতো ??? শান্তির পৃথিবীর দেখা হয়তোবা আর হবেনা কারোরই।তাঁর পর ও চেয়ে আছি একটু শান্তির জন্য,মানবতার জন্য।

লিখেছেন লিখেছেন জিসান গাজি ১৮ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:১৫:৩৩ দুপুর





বিষয়: আন্তর্জাতিক

১২৪১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

350171
১৮ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:১৯
কুয়েত থেকে লিখেছেন : লেখাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ভালো লাগলো অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য
১৮ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৬
290677
জিসান গাজি লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাইয়া।
350179
১৮ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:৫১
এমরুল কায়েস ভুট্টো লিখেছেন : পশ্চিমারা গনতন্ত্রপ্রতিষ্টার নামে যেভাবে বোমা মেরে লাখ লাখ বেসামরিক মানুষ হত্যা করেছে ঠিক তেমনি জঙ্গিরাও কিছু নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে ইসলামের নামে। এখনে পুরো ইউরোপ জুড়ে মুসলিমদের বিরোদ্ধে হেট ক্রইম বেড়ে যাবে। ইউরোপ জুড়ে যে ইসলামের গনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল তা অনেকটা ব্যাহত হবে।
350233
১৮ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:১৯
জিসান গাজি লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাইয়া

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File