তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহকে পাবে।
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ০৭ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:০৪:৫৭ সকাল
জীবনটা অতিরিক্ত কষ্টের মনে হচ্ছে? আর পারছেন না সহ্য করতে?
আল্লাহ ﷻ কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা কখনো দেন না। প্রত্যেকেই যা ভালো করেছে তার পুরস্কার পায়, যা খারাপ করেছে তার পরিণাম ভোগ করে। [আল-বাক্বারাহ ২:২৮৬]
তোমরা কি ভেবেছ যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে চলে যাবে, যখন কিনা তোমাদের পূর্বপুরুষদের উপর যা এসেছিল, তা তোমাদের উপর আসেনি? তাদেরকে কষ্ট-দুর্যোগ, দুর্ভোগ আঘাত করেছিল এবং তাদেরকে এমনভাবে কাঁপানো হয়েছিল যে, তাদের মধ্যে যে রাসুল ছিল, সে এবং তার সাথের বিশ্বাসীরা পর্যন্ত বলে উঠেছিল, “কবে আল্লাহর ﷻ সাহায্য আসবে?” চিন্তা করো না, আল্লাহর ﷻ সাহায্য কাছেই। [আল-বাক্বারাহ ২:২১৪]
জীবনটা শুধুই কষ্ট, আর কষ্ট? কোনো ভালো কিছু নেই?
প্রতিটি কষ্টের সাথে অবশ্যই অন্য কোনো না কোনো দিক থেকে স্বস্তি রয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই, অবশ্যই প্রতিটি কষ্টের সাথে অন্য দিকে স্বস্তি আছেই। [আল-ইনশিরাহ ৯৪:৫-৬]
চারিদিকে এত কষ্ট, এত কান্না — ভাবছেন আপনার কী দোষ?
তিনিই সেই সত্তা, যিনি মানুষকে হাসান এবং কাঁদান। তিনিই তো মৃত্যু দেন, জীবন দেন। [আন-নাজম ৫৩:৪৩]
তারা কি লক্ষ্য করে দেখে না যে, প্রতিবছর তাদের উপর দুই-একবার বিপদ আসছে? এরপরও ওরা তওবাহ করে না, উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না। [আত-তাওবাহ ৯:১২৬]
দেশে অরাজকতা, অশান্তি, অপরাধ দেখে অকালে মৃত্যুর ভয়ে আছেন? ভাবছেন বিদেশে চলে যাবেন?
তুমি যেখানেই যাও না কেন, মৃত্যু তোমাকে ধরবেই। তুমি যদি অনেক উঁচু দালান বানিয়েও থাকো। [আন-নিসা ৪:৭৮]
বলো, “তোমরা যদি নিজেদের ঘরের ভিতরেও থাকতে, যারা খুন হবে বলে নির্ধারণ করা হয়েছিল, তারা নিজেরাই বের হয়ে নিজেদের মৃত্যুর সাথে দেখা করতে যেত।” [আলে-ইমরান ৩:১৫৪]
আপনার কোনো নিকটজন অকালে প্রাণ হারালেন আর আপনি ভাবছেন— হায়, যদি সে অমুক করত, অমুক না করত, তাহলে সে বেঁচে যেত?
তোমরা যারা বিশ্বাস করেছ বলে দাবি করো, ওই সব কাফিরদের মতো হয়ো না, যারা তাদের ভাইদের সম্পর্কে বলে (যখন তারা ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়েছিল, ভ্রমণে গিয়েছিল) “হায়রে, যদি তারা আমাদের সাথে থাকতো, তাহলে তারা মারা যেত না, খুনও হতো না।” আল্লাহ ﷻ এই ধরনের চিন্তাভাবনাকে তাদের অন্তরে তীব্র মানসিক যন্ত্রণার উৎস করে দেন। শুধুমাত্র আল্লাহই ﷻ প্রাণ দেন, মৃত্যু ঘটান। তোমরা কী করো, তার সব তিনি দেখছেন। [আলে-ইমরান ৩:১৫৬]
অমুকের এত বাড়ি-গাড়ি-টাকা দেখে ভাবছেন: কেন তার মতো এমন নামে-মুসলিম-কাজে-কাফিরের জীবন এত আরামের?
ওদের এত ধনসম্পত্তি, সন্তানসন্ততি তোমাকে অবাক করতে দিয়ো না। এগুলো দিয়ে আল্লাহ ﷻ শুধুমাত্র ওদেরকে এই দুনিয়াতে পরীক্ষা নিতে চান, যেন তাদের আত্মা অবিশ্বাসী (কাফির) অবস্থায় এখান থেকে চিরবিদায় নেয়। [আত-তাওবাহ ৯:৮৫]
চাকরি হারিয়ে আপনার মাথায় হাত: কেন আপনার সাথে এমনটা হলো? কেন আপনার সন্তান এত গুরুতর অসুস্থ হলো? কেন আপনার বাবা এই দুঃসময়ে মারা গেলেন?
আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, সম্পত্তি, জীবন এবং ফসল হারানো দিয়ে পরীক্ষা করবই। জীবনে কোনো বিপদ আসলে যারা ধৈর্যের সাথে চেষ্টা করে এবং বিপদে পড়লে সাথে সাথে বলে, “আমরা তো আল্লাহরই সম্পত্তি। আল্লাহরই কাছে আমরা শেষ পর্যন্ত ফিরে যাবো” — তাদেরকে সুসংবাদ দাও! ওদের উপর তাদের প্রভুর কাছ থেকে আছে বিশেষ অনুগ্রহ এবং শান্তি। এধরনের মানুষরাই সঠিক পথে আছে। [আল-বাক্বারাহ ২:১৫৫-১৫৭]
মনে রেখ, তোমার যা ধনসম্পদ আছে এবং তোমার সন্তানরা, এগুলো শুধুই তোমার জন্য পরীক্ষা ছাড়া আর কিছু নয়। আর মনে রেখ, আল্লাহর ﷻ কাছে রয়েছে অপরিসীম পুরস্কার। [আল-আনফাল ৮:২৮]
তারা কি লক্ষ্য করে দেখে না যে, প্রতিবছর তাদের উপর দুই-একবার বিপদ আসছে? এরপরও ওরা তওবাহ করে না, উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না। [আত-তাওবাহ ৯:১২৬]
বার বার কেন আপনার জীবনেই এত কষ্ট আসছে? কেন আল্লাহ ﷻ এমন করছেন আপনার সাথে?
মানুষ কি ভেবেছে যে, তাদেরকে কোনো পরীক্ষা না করেই ছেড়ে দেওয়া হবে, কারণ তারা মুখে বলছে, “আমরা তো মুমিন!” [আল-আনকাবুত ২৯:২]
তোমরা কি ভেবেছিলে যে, তোমাদের মধ্যে থেকে কারা আল্লাহর ﷻ পথে আপ্রাণ চেষ্টা করে এবং কারা ধৈর্যের সাথে চেষ্টা করে — সেটা আল্লাহ ﷻ প্রকাশ না করে দেওয়ার আগেই তোমরা জান্নাত পেয়ে যাবে? [আলে-ইমরান ৩:১৪২]
যে-ই আমার পথনির্দেশ থেকে দূরে চলে যাবে, তার জীবন হয়ে যাবে ভীষণ কষ্টের। [ত্বাহা ২০:১২৪]
অশান্তিতে ছটফট করছেন? রাতে ঘুমাতে পারছেন না? ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন? ওষুধ খেয়েও মনে শান্তি আসছে না?
যাদের ঈমান আছে, তারা যখন আল্লাহর ﷻ কথা ভাবে, যিকির করে, তখন তাদের মন শান্তি খুঁজে পায়। মনে রেখ, আল্লাহর ﷻ কথা ভাবলে, যিকির করলে, অবশ্যই মন শান্তি খুঁজে পাবেই। [আর-রাদ ১৩:২৮-২৯]
তোমরা যারা বিশ্বাস করেছ, ধৈর্যের সাথে চেষ্টা কর, এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর ﷻ কাছে সাহায্য চাও, কারণ আল্লাহ ﷻ তাদের সাথে আছেন, যারা ধৈর্যের সাথে চেষ্টা করে। [আল-বাক্বারাহ ২:১৫৩]
আসুন আমরা কু’রআনের আয়াতগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি। আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে কু’রআন দিয়েছেন এক আত্মিক নিরাময় হিসেবে। আমাদের অনেক মানসিক সমস্যার সমাধান রয়েছে কু’রআনে। নিয়মিত বুঝে কু’রআন পড়লে আমরা খুব সহজেই ওষুধের উপর আমাদের নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারব। স্ট্রেস-ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত হয়ে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ জীবন যাপন করতে পারব — ইন শাআ আল্লাহ।
সূত্র: নওমান আলি খানের সূরা আল-বাকারাহ এর উপর লেকচার এবং বাইয়িনাহ এর কু’রআনের তাফসীর।
বিষয়: বিবিধ
২৮৪৬ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য, [সুরা বাকারা: ২]
মানব জীবনে সংঘটিত অযাচিত বিষয়াবলী এবং ধৈর্য্য-নিষ্ঠা ও রবের প্রতি পুর্ণ বিশ্বাসে অকল্পনীয় সীমাহীন প্রাপ্তির সম্ভাবনা ঐশী বানী সমৃদ্ধে অসাধারণ সুন্দর উপস্হাপনা হয়েছে!
জাযাকাল্লাহু তায়ালা খাইরান......।
নিশ্চিতই যারা কাফের হয়েছে তাদেরকে আপনি ভয় প্রদর্শন করুন আর নাই করুন তাতে কিছুই আসে যায় না, তারা ঈমান আনবে না। [সুরা বাকারা: ৬]
সুন্দর পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আল্লাহ তাদের অন্তকরণ এবং তাদের কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। [সুরা বাকারা: ৭]
আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়। [সুরা বাকারা: ৮]
তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না। [সুরা বাকারা: ৯]
মহা গ্রন্থ আলকোরআন
রাখতে হবে স্মরণ
আসবে একদিন মরণ ।
আলকোরআন থেকে আমরা অনেক দূরে চলে গেছি ।নিজেই নিজের উপর জুলুম করছি । আল্লাহ আমাদের সবাইকে তুমি মাফ করে দাও । আমীন
فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللّهُ مَرَضاً وَلَهُم عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ
তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন। [সুরা বাকারা: ১০]
আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্ গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি। [সুরা বাকারা: ১১]
أَلا إِنَّهُمْ هُمُ الْمُفْسِدُونَ وَلَـكِن لاَّ يَشْعُرُونَ
মনে রেখো, তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না। [সুরা বাকারা: ১২]
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُواْ أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاء أَلا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاء وَلَـكِن لاَّ يَعْلَمُونَ
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মত! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে না। [সুরা বাকারা: ১৩]
وَإِذَا لَقُواْ الَّذِينَ آمَنُواْ قَالُواْ آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْاْ إِلَى شَيَاطِينِهِمْ قَالُواْ إِنَّا مَعَكْمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُونَ
আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। আমরা তো (মুসলমানদের সাথে) উপহাস করি মাত্রা। [সুরা বাকারা: ১৪]
মন্তব্য করতে লগইন করুন