শেরে খোদা হযরত হামযা (রা.)-এর শাহাদাত
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ০১ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:৩৮:৪৬ রাত
মুসলিম এক বীরের ঘটনা যা আপনাকে নাড়া দিবেই হে ভাই/বোন।
হযরত হামযা (রা.)-এর আততায়ীর নাম ছিলো ওয়াহশী ইবনে হারব। আমি, হযরত হামযা (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনা আততায়ীর ওয়াহশীর ভাষায় প্রকাশ করছি। মুসলমান হবার পর তিনি বলেন,
আমি ছিলাম যোবায়ের ইবনে মোয়াত্তামের ক্রীতদাস। তার চাচা তুয়াইমা ইবনে আদী বদরের যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন। কোরায়শরা ওহুদ যুদ্ধে রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে যোবায়ের ইবনে মোয়াত্তাম আমাকে বললেন, যদি তুমি মোহাম্মদের চাচা হামযাকে আমার চাচার হত্যার প্রতিশোধস্বরূপ হত্যা করতে পারো, তবে তুমি মুক্তি পাবে।
এই প্রস্তাব পাওয়ার পর কোরায়শদের সাথে ওহুদের যুদ্ধের জন্যে আমি রওয়ানা হলাম। আমি ছিলাম আবিসিনিয়ার অধিবাসী। আবিসিনিয়দের মতো আমিও ছিলাম বর্শা নিক্ষেপে সুদক্ষ। আমার নিক্ষিপ্ত বর্শা কম সময়েই লক্ষ্যভ্রষ্ট হতো। ব্যাপকভাবে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর আমি হযরত হামযা (রা.)-কে খুঁজতে শুরু করলাম।
এক সময় তাঁকে দেখতেও পেলাম। তিনি জেদী উটের মতো সামনের লোকদের ছিন্নভিন্ন করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর সামনে কোন বাধাই টিকতে পারছিলো না। কেউ তাঁর সামনে দাঁড়াতেই পারছিলো না।
আল্লাহর শপথ, আমি হযরত হামযা (রা.)-এর ওপর হামলার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছিলাম এবং একটি পাথর অথবা বৃক্ষের আড়ালে ছিলাম, এমন সময় সাবা ইবনে আবদুল ওযযা আমাকে ডিঙ্গিয়ে তাঁর কাছে পৌছে গেলো। হযরত হামযা (রা.) হুঙ্কার দিয়ে সাবাকে বললেন, ওরে লজ্জাস্থানের চামড়া কর্তনকারীর সন্তান এই নে।
একথা বলে তিনি সাবার ঘাড়ে এমনভাবে তরবারির আঘাত করলেন এবং তার মাথা এমনভাবে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো যেন তার ঘাড়ে মাথা ছিলোই না। আমি তখন বর্শা তুলে হযরত হামযা (রা.)-এর প্রতি নিক্ষেপ করলাম। বর্শা নাভির নীচে বিদ্ধ হয়ে দুই পায়ের মাঝখান দিয়ে পেছনে পৌছে গেলো।
তিনি পড়ে গিয়ে উঠতে চাইলেন কিন্তু সক্ষম হননি। তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত আমি তাকে যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় রেখে দিলাম। এক সময় তিনি শেষে নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। আমি যখন তাঁর কাছে গিয়ে বর্শা বের করে কোরায়শদের মধ্যে গিয়ে বসে রইলাম।
হযরত হামযা (রা.) ছাড়া অন্য কাউকে আঘাত করার ইচ্ছা ও প্রয়োজনই আমার ছিলো না। আমি মুক্তি পাওয়ার জন্যেই হযরত হামযা (রা.)-কে হত্যা করেছি। এরপর মক্কা ফিরে এসেই আমি মুক্তি লাভ করলাম। [ইবনে হিশাম, দ্বিতীয় খন্ড, পৃ. ৬৯-৭২। সহীহ বোখারী দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্টা ৫৮৩।
তায়েফের যুদ্ধের পর ওয়াহশী ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত হামযা (রাঃ)-কে বর্শার আঘাতে হত্যা করেছিলেন, সেই বর্শা দিয়ে তিনি হযরত আবু বকর সিদ্দিকের (রাঃ) খেলাফতের সময়ে ইয়ামামার যুদ্ধে মোসায়লামা কাযযাবকে হত্যা করেন। রোমকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত ইয়ারমুকের যুদ্ধেও তিনি অংশ গ্রহণ করেন] ।
আর, আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হেন্দ বিনতে ওতবা হযরত হামযার (রা) বুক চিরে কলিজা বের করে চিবোতে লাগলো। গিলে ফেলার চেষ্টা করে না পারায় ফেলে দিলো। এছাড়া কর্তিত নাক ও কান দিয়ে মালা গেঁথে গলা এবং পায়ে মলের মতো পরিধান করলো।[ইবনে হিশাম, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ৯০]
অবশ্য আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হেন্দ বিনতে ওতবা (রা) পরবর্তিতে তওবা করে ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। তাই আল্লাহ তার পূর্বের গোনা মাফ করে দিয়েছেন।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে হযরত হামযা (রা) এর মতো শহীদ হবার তাওফিক দান করো। আমাদেরকে সঠিক জীহাদ করার ও শহীদ হবার তাওফিক দাও। আমাদেরকে ফেতনা থেকে রক্ষা করো আমীন
বিষয়: বিবিধ
৭৬৮৪ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিছু সংশোধনীঃ
১। মোহাম্মদ সঃ হামজা রাঃ কে বলেছিলেন আসাদুল্লাহ - আল্লাহর সিংহ। শের কিংবা বাঘ নয়।
২। সহী হাদিসের আলোকে আজকের স্কলার রা বলছেন 'হিন্দ' রাঃ হামজা রাঃ এর কলিজা চিবান নি। ওটা সিরাহ তে এসেছে - এক্সপ্রেশানে প্রকটতা বোঝাতে। ওনারা আরো বলেন - একজন মুসলিম হিসাবে একজন সাহাবী রাঃ যিনি ইতোমধ্যে আল্লাহর আয়াতানুযায়ী আল্লাহর সন্তুষ্টি পেয়েছেন - আমি কিংবা আপনি এমনভাবে এটা উপস্থাপন করা ইসলামের শিক্ষার আলোকে যথার্থ নয়।
আমি সিম্পলী শেয়ার করলাম - কারন আমার এই মতামতটিকে গ্রহনযোগ্য মনে হয়েছে। ধন্যবাদ।
আর হিন্দা (রা) এর কলিজা চিবানোর ঘটনা সহীহ হাদীসে নাই এটা ঠিক। আমার ভুল হয়েছে যে আমি হিন্দা (রা) এর পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহনের সংবাদটি লিখি নাই। অবশ্য আমি তার উপর কোন রাগ নিয়ে কোন কিছু প্রকাশ করি নাই। কেননা তিনি আল্লাহর দয়া প্রাপ্ত।
জাজাকাল্লাহু খয়রান।
ইসলামের এমন সব মহান সমর নায়কদের জীবনী ভুলেই যাচ্ছে আজকের প্রজন্ম। বেশী-বেশী পঠন-পাঠনে উনাদের সাথে আমাদের প্রজন্মকে পরিচিত করে তুলতে হবে।
জাযাকাল্লাহ জানাচ্ছি উপস্হানের জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন