যুব সমাজের অবক্ষয়, কারণ ও প্রতিকার (পর্ব-৪)
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৭:৪৫:০৭ সন্ধ্যা
যুব সমাজের অবক্ষয়, কারণ ও প্রতিকার (পর্ব-৩) যারা পড়েন নি তারা পড়ে আসুন।
বিজাতীয় সংস্কৃতি আগ্রাসন যুব সমাজ ধ্বংসের অন্যতম কারণ:
বিজাতীয় সংস্কৃতির অগ্রাসন আমাদের যুব সমাজ ধ্বংসের অন্যতম কারণ। কারণ, আজ আমরা আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও তমদ্দুন থেকে অনেক দূরে সরে গিয়ে বিজাতিদের সংস্কৃতির দ্বারস্থ হয়েছি এবং আমরা আমাদের নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে অমুসলিম কাফের ও বিজাতিদের সংস্কৃতির অন্ধানুকরণে ব্যাকুল হয়ে পড়েছি। বর্তমান সময়ে মুসলিম দেশসমূহে ইসলামী সংস্কৃতির সম্পূর্ণ বিপরীত চর্চা হচ্ছে।
এমনকি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে পাঠ্যসূচী করা হয়েছে। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, মুসলিমরা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য কি তা ভুলেই গেছে। তাদের নিকট পশ্চিমা সংস্কৃতি ছাড়া কোনো কিছুই মনে হয় যেন গ্রহণযোগ্য নয়। একজন মুসলিম কেন যেন মনে করে, পশ্চিমা সংস্কৃতি ছাড়া নিজেকে আধুনিক বা অভিজাত হিসেবে প্রকাশ করা যায় না।
ফলে মুসলিমরা তাদের নিজেদের হাজার বছরের আত্মপরিচয়কে ভুলে গিয়ে চোখ ধাঁধানো মরীচিকার পেছনে ছুটছে। তাদের প্রাত্যহিক ব্যাবহারিক জীবনের পশ্চিমাদের অনুকরণ করা একটি মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ইসলামী সভ্যতাই সারা দুনিয়ার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বশ্রেষ্ঠ। ইসলামই মানুষকে মানবতা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি শিখিয়েছে।
ইসলামের মহান আদর্শ ও মুসলিম সভ্যতা সংস্কৃতিকে অনুকরণ করে বিজাতিরা সারা দুনিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর আমরা মুসলিমরা তাদের অন্ধ অনুকরণ করে বেড়াচ্ছি এবং সারা দুনিয়ার মধ্যে সব ধরনের অপমান সহ্য করে যাচ্ছি।
আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের সতর্ক করে বলেন,
﴿وَلَا تَرۡكَنُوٓاْ إِلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ فَتَمَسَّكُمُ ٱلنَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِنۡ أَوۡلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ ١١٣ ﴾ [هود: ١١٣]
“তোমরা সীমালঙ্ঘনকারীদের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ো না, অন্যথায় অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। আর এই অবস্থায় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোনো বন্ধু থাকবে না এবং তোমরা সাহায্যও পাবে না”। {সূরা হূদ, আয়াত; ১১৩}
তাছাড়া সমাজ-বিজ্ঞানী প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من تشبه بقوم فهو منهم»
“যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত হবে”। {আহমাদ ২/৫০, আবূ দাঊদ ৪০৩১, সহীহুল জামে’ ৬০২৫ নং}
ভালো-মন্দ বাচ-বিচার না করে অন্ধভাবে অপরের ভঙ্গিমা নকল করে চলা, সব কাজে অপরের হুবহু অনুকরণ করা মানুষের জন্য নিন্দনীয়। কারণ, এমন স্বভাব কেবল বানরেরই হয়ে থাক। যে জাতি কোনো প্রকার বিচার-বিশ্লেষণ না করে চোখ বুজে অপরের অনুকরণ করে তৃপ্তি পায়, সে বানরের স্বভাবের অধিকারী বললে ভুল হবে না।
কিন্তু মানুষ, বিশেষ করে কোনো মুসলিম পারে না বিজাতির কোনো অসভ্য ভঙ্গিমা নকল করে চলতে। কারণ, মুসলিমের আছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য। আর তা বিনাশ করে অপরের বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করার মানেই হল, নিজেকে ধ্বংস ও বিলীন করা।
বিজাতিদের সভ্যতা সংস্কৃতিতে মানবতার জন্য অনিবার্য ধ্বংস ও নিশ্চিত অশান্তি। তার প্রমাণ আমরা পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই- আজ তাদের দেশে মানবতা কত অসহায়, নারীরা কতনা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত। তাদের দেশের মানুষ তাদের বাবা-মায়ের পরিচয় কি তা জানে না। বৃদ্ধ মাতা পিতাদের খোজ খবর নেওয়ার মত কেউ নেই।
আবার মা বাবার নিকট তাদের সন্তানেরও কোনো হিসেব নেই। ভাই বোনের কোনো পরিচয় নাই। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো বন্ধন নেই। মানসিক অশান্তি তাদের নিত্য দিনের সাথী। তাদের জীবন যে কত দূর্বিসহ তা দেখলেই বুঝা যাবে। আত্মহত্যা পারিবারিক কলহ তাদের নিত্য দিনের সঙ্গী।
এ কারণেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উম্মতকে বিজাতিদের অনুকরণ করা থেকে সতর্ক করেন।
তিনি বলেন,
«لتتعن سنن من كان قبلكم حذو القذة بالقذة وشبرا بشبر وذراعا بذراع حتى لو دخلوا جحر ضب لدخلتموه .قالوا اليهود والنصارى؟ قال: فمن !
“অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অনুসরণ করবে বিঘত-বিঘত এবং হাত-হাত (সম) পরিমাণ। এমনকি তারা যদি ষাণ্ডার গর্তে প্রবেশ করে, তাহলে তোমরাও তাদের পিছনে পিছনে যাবে।” সাহাবিগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ইয়াহুদ ও নাসারার অনুকরণ করার কথা বলছেন?’ তিনি বললেন, “তবে আবার কার?” {বুখারী, মুসলিম ২৬৬৯, হাকেম, আহমাদ, সহীহুল জামে’ ৫০৬৭ নং}
সাহাবী হুযাইফা ইবন ইয়ামান বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অবলম্বন করবে জুতার মাপের মত (সম্পূর্ণভাবে)। তোমরা তাদের পথে চলতে ভুল করবে না এবং তারাও তোমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে চলতে ভুল করবে না। এমন কি তাদের কেউ যদি শুকনো অথবা নরম পায়খানা খায়, তাহলে তোমরাও (তাদের অনুকরণে) তা খেতে লাগবে !’ {ইবনে ওয়াদ্দাহ, আল-বিদাউ অন্নাহইয়ু ‘আনহা, নং ১৯৩; পৃ. ২/১৩৭।}
তিনি মুসলিম জাতিকে সতর্ক করে বলেন, “সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদেরকে ছেড়ে অন্য কারো সাদৃশ্য অবলম্বন করে। তোমরা ইয়াহুদীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না, আর খ্রিষ্টানদেরও সাদৃশ্য অবলম্বন করো না।” {তিরমিযী, সহীহুল জামে, হাদিস; ২৬৯৫। }
তাছাড়া রাসূল বলেন, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা রোযা রাখে, কিন্তু সেহেরী খায় না। তাই ইসলাম তাদের অন্ধ অনুকরণ করে সেহেরী খাওয়া ত্যাগ করতে নিষেধ করল। {মুসলিম, হাদিস: ১০৯৬। }
রোযা রাখার পর ওরা ইফতার করে, কিন্তু বড্ড দেরী করে। ইসলাম তাদের অনুকরণ বর্জন করতে নির্দেশ দিয়ে সূর্য ডোবার সাথে সাথে সত্বর ইফতার করতে মুসলিম জাতিকে উদ্বুদ্ধ করল। {আবূ দাঊদ, হাদিস: ২৩৫৩, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬৯৮, হাকেম, হাদিস: ১/৪৩১}
সূর্য পূজকরা সূর্যের উদয় ও অস্তের সময় তার পূজা করে থাকে। তাই ঐ সময়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যেও নামায পড়াকে ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করল । {মুসলিম, হাদিস: ৮৩২ }
যাতে মুশরিকদের সাথে তওহীদ বাদী মুসলিমদের কোনো প্রকার সাদৃশ্য ভাব না ফুটে ওঠে।
বৈরাগ্যবাদ বিজাতীয় আচার। ইসলামে তা নিষিদ্ধ হল।{আবূ দাঊদ, হাদিস: ৪৯০৪}
পাশ্চাত্য-সভ্যতার ছোঁয়া লাগা মানুষ হীনমন্যতার শিকার হয়ে পশ্চিমা-বিশ্বের অনুকরণ করে। কাফেরদের বিভিন্নমুখী বিভব ও প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং পার্থিব উন্নয়ন দেখে মুসলিম নিজেদেরকে হেয় ও তুচ্ছজ্ঞান করে বসেছে।
ভেবেছে, দুনিয়ায় ওরা যখন এত উন্নত, তখন ওদের সভ্যতাই হলো প্রকৃত সভ্যতা। সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণে এটাই ধরে নিয়েছে যে, ওরা যেটা করে, সেটাই উত্তম ও অনুকরণীয়। ওদের মত করতে পারলে তারাও ঐরূপ উন্নতির পরশমণি হাতে পেয়ে যাবে।
মনে করেছে যে, ওদের ঐ ছন্নছাড়া, লাগামছাড়া, বাঁধনহারা যৌন-স্বাধীনতাপূর্ণ জীবনই হলো ওদের উন্নতির মূল কারণ এবং প্রগতির মূল রহস্য।
আসলে এটা একটা মোহ মাত্র। যা দুনিয়াতেই শেষ আখেরাতে কিছুই নেই।
রসুল (সা) বলেছেন: দুনিয়া মুমনের জন্য জেলখানা, আর কাফেরের জন্য জান্নাত
====
চলবে.....
বিষয়: বিবিধ
১৫৮১ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 8870
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 8870
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> লিটুয়ারা লিখেছেন : তাহলে বিজাতিয় সংস্কৃতি নিয়ে এত হায়হুতাস ক্যান?A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 8870
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> লিটুয়ারা লিখেছেন : আসলেই, হায়হুতাস করে লাভ নেই। মুমিনদের সবচেয়ে বড় আল্লা হছ্ছে আমেরিকা। আল্লার খুরমা, খেজুর, আরবী........ দিয়ে হবে না, এটা বুঝেন তো?তারপরেও আমাদের মন ছুটেই চলে –
কি যেন কি পাবার মোহে ..... (অনেক আগে শোনা একটা গানের লাইন)
আল্লাহ আপনার ইমানকে আপ করুন সাথে আমাদেরও। আমীন।
মুসলামানদের ইসলামি সংস্কৃতি হচ্ছে পবিত্র। তাতে নাই কোন কলুষতা শুধু আছে পবিত্রতা।
জাজাকাল্লাহু খায়রান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন