রামাযান পোস্ট: খুশু-খুযু
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ০৭ জুলাই, ২০১৪, ০৭:১৮:৫৯ সকাল
তারাবীহ্ সালাত হচ্ছে ইমাম সাহেব কোরআন থেকে পড়ছেন সুরা ওয়াকিয়ার আয়াত গুলো। ইমরানের সুরার আয়াত গুলো যেন হৃদয় ছুয়ে যাচ্ছে। যখনি কোন আয়াত আসছে তখনি তার হয় খুশি না হয় ভয় লাগছে। যখন ইমাম সাহেব পড়া শুরু করলেন আয়াত নাম্বার ......
৪১: বামপাশ্বস্থ লোক, কত না হতভাগা তারা।
৪২: তারা থাকবে প্রখর বাস্পে এবং উত্তপ্ত পানিতে,
৪৩: এবং ধুম্রকুঞ্জর ছায়ায়।
৪৪: যা শীতল নয় এবং আরামদায়ক নয়। …….
৫২: তোমরা অবশ্যই ভক্ষন করবে যাক্কুম বৃক্ষ থেকে,
৫৩: অতঃপর তা উদর পূর্ণ করবে
৫৪: অতঃপর তার উপর পান করবে উত্তপ্ত পানি।
৫৫: পান করবে পিপাসিত উঠের ন্যায়।
৫৬: কিয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন
ঠিক তখন থেকে ইমরানের চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু করলো সে ভয়ে কাঁদতে লাগলো। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর ভিতরে যেন ফেটে যাচ্ছে তার রবের ভয়ে। চোখের পানি দাড়ি ভিজিয়ে বুক বয়ে পড়া শুরু করছে।
পাশেই ছিল তার ছোটভাই হারিকেন। নামায শেষে সে জিজ্ঞেস করলো তুমি কাদাছিলে কেন? তখন ইমরান বললো এটাই হচ্ছে বিনয় অবনত হয়ে সালাত আদায় করা। একেই বলে খুশু-খুযু।
কোরআনে আল্লাহ বলেন: ﴿وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨﴾ [البقرة: ٢٣٨] “আর তোমরা আল্লাহর জন্য বিনীতভাবে দণ্ডায়মান হও”।(সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৩৮)
তিনি সালাত সম্পর্কে আরও বলেন,﴿وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى ٱلۡخَٰشِعِينَ ٤٥﴾ [البقرة: ٤٥] “নিশ্চয় সালাত বিনয়ী ছাড়া অন্যদের উপর কঠিন”।(সূরা বাকারাহ, আয়াত: ৪৫)
প্রত্যেক মুসলিমের উচিত নামাযে বিনয়ী হয়ে সালাত আদায় করা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিনত হওয়া।
আল্লাহ আরো বলেন:
﴿قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ١ ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي صَلَاتِهِمۡ خَٰشِعُونَ ٢﴾ [المؤمنون : ١، ٢]
ঐ সকল মুমিনরা সফল যারা তাদের সালাতে বিনয়াবনত।(সুরা মুমিনুন)
অর্থাৎ যারা তাদের সালাতে ভীত-সন্ত্রস্ত ও প্রশান্ত। আর সালাতে ‘খুশু খুযু’র অর্থই হচ্ছে, প্রশান্ত থাকা, সুস্থির থাকা, ধীরতা অবলম্বন, বিনম্র ও গাম্বীর্যতা অবলম্বন। আর আল্লাহর ভয় ও তাঁর যথাযথ আল্লাহ সচেতনতা বান্দাকে খুশু অবলম্বন করতে উৎসাহ দেয় এবং সাহায্য করে।(তাফসির ইবনে কাসির) আর খুশুর প্রকৃত রূপ হচ্ছে, মহান রব্বের সামনে হীন ও বিনয়ের সাথে অন্তরকে দাঁড় করানো এবং কাঁদা।(মাদারেজুস সালেকীন)
তখন হারিকেন বললো তাই!!! আমি তো জানতাম না!! ইমরান বললো হ্যা এটাই খুশু-খুযু। আর তুমি যান শয়তান চায় বান্দা যেন তার নামাযে খুশু-খুযু না রাখতে পারে, তাইতো সে বান্দাকে নামাযের মাঝে তার নামাযকে ভুলিয়ে দেয়। অনেক অজানা কথা স্বরন করিয়ে দেয়। হারিকেন বললো এজন্যই তো আমার নামাযের সময় কাজের কথা বেশি স্বরণ পরে। আর আমার নামাযের মধ্যেই তো কাজের প্লান সব স্থির হয়ে যায়। ইমরান বললো, এভাবেই শয়তান তোমাকে খুশু-খুযু হতে বিরত রাখে। হারিকেন বললো ওহ এখন বুঝেছি আর ভুল হবে না ইনশাআল্লাহ।
ইমরান বললো তুমি জানো: হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ বলতেন,
إياكم وخشوع النفاق فقيل له : وما خشوع النفاق قال : أن ترى الجسد خاشعا والقلب ليس بخاشع.
“তোমরা মুনাফেকি খুশু‘ হতে বেঁচে থাক। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, মুনাফেকি খুশু‘ কি? বলল, তুমি দেহকে বিনয়াবনত দেখাবে, অথচ মন বিনয়াবনত নয়”।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. ঈমানী খুশু ও মুনাফেকী খুশুর মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ঈমানী খুশু হল, সম্মান, বড়ত্ব, মহত্ত্ব, ভয় ও লজ্জা করার মাধ্যমে হৃদয় আল্লাহর জন্য বিনয়ী হওয়া। ফলে ভয়, অপমানবোধ, ভালোবাসা, লজ্জা, আল্লাহর নেয়ামতসমূহ প্রত্যক্ষ করা এবং তার পক্ষ থেকে আল্লাহর নাফরমানীর অনুভূতিতে বান্দার অন্তর পরিপূর্ণ ভেঙ্গে পড়বে। আর যখন বান্দার মধ্যে এ ধরনের অবস্থা তৈরি হয়, তখন বান্দার অন্তর বিনয়াবনত হয়, আর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও অন্তরের সাথে সাথে বিনয়াবনত হয়। পক্ষান্তরে মুনাফেকী খুশু হল, কৃত্রিম ও লোক দেখানো খুশু, যা শুধুমাত্র তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যেই প্রকাশ পায়, অন্তর সম্পূর্ণ খালি। কোনো কোনো সাহাবী এ বলে দো‘আ করতেন, হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট নেফাকী খুশু থেকে আশ্রয় চাই। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, নেফাকী খুশু কি? বলল, ‘দেহ বিনয়ী দেখবে, কিন্তু অন্তর বিনয়ী নয়।’
হারিকেন বললো দারুন বলেছো দাদা আমি এখন থেকে এভাবেই সালাতে খুশু-খুযু আনার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। ইমরান বললো দারাও তুমিকি জানো রসুল (সা) কি বলেছেন? হারিকেন বললো না দাদা আমি তো তা জানি না!!!
ইমরান বললো,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أول شيء يرفع من هذه الأمة الخشوع ، حتى لا ترى فيها خاشعا.»
“এ উম্মত থেকে সর্বপ্রথম যে জিনিষটি তুলে নেয়া হবে, তা হল সালাতের খুশু বা বিনয়াবনত হওয়া। ফলে তুমি কাউকে সালাতে বিনয়াবনত দেখতে পাবে না”।(মাজমাউয যাওয়ায়েদ, সহীহুত তারগীব, আলবানী হাসান বলেছেন)
হারিকেন কেঁদে দিয়ে বললো, দাদা তাহলে কেমন করে কি করবো? ইমরান বললো ভয় পেওনা.....
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خمس صلوات افترضهن الله تعالى، من أحسن وضوءهن وصلاهن لوقتهن ، وأتم ركوعهن وخشوعهن كان له على الله عهد أن يغفر له ، ومن لم يفعل ، فليس له على الله عهد، إن شاء غفر له وإن شاء عذّبه»
“আল্লাহ তা‘আলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওজু করে, ওয়াক্ত মত সালাতগুলো আদায় করে এবং ভালোভাবে রুকু-সেজদা করে ও খুশুকে পরিপূর্ণ রূপ দেয়, তাকে ক্ষমা করে দেয়ার বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা প্রতিশ্রুতি-বদ্ধ। আর যে ব্যক্তি এগুলো করে না, তাকে ক্ষমা করার ব্যাপারে আল্লাহর কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি চান ক্ষমা করবেন অথবা তাকে আযাব-শাস্তি- দেবেন।(আবু দাউদ হাদিসনং ৪২৫ সনদ সহীহ)
হারিকেন বললো দাদা, বুঝলামতো ঠিকই কিন্তু খুশু-খুযু কি ভাবে বৃদ্ধি করবো? ইমরান বললো,
নামাযে যেসকল কাজ করো তা বোঝার চেষ্টা করো যেমন: কুরআনের আয়াত বোঝা,যিকির করা, তাকবির/তাসবিহ অর্থ যানা, দোআ করা ইত্যাদি
নামায আদায়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করা
নামাযে স্থিরত অবলম্বন করা
নামাযের মাঝে মৃত্যুকে স্বরণ করা
তিলাওয়াত কৃত আয়াতে প্রভবিত হওয়া
নামাযে কেরাতকে থেমে থেমে পড়া
তারতীল সহকারে কোরআনকে পড়া
এ কথা খেয়াল রাখা যে নামাযে আল্লাহ তার কথার উত্তর দেন
সেজদার দিকে দৃাষ্ট রাখা
আল্লাহর নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়া
সালাফেসলেহীনদের নামায কেমনছিল সে বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা ও চিন্তা করা
সেজদার সময় বেশি বেশি দুআ করা
নামায শেষে হাদীসে বর্ণিত মাসনুন দুআ করা
যা নামাযে অমনোযোগী করে তা দুরে রাখা
তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে নামায আদায় থেকে বিরত থাকা
অযথা নড়া চড়া পরিহার করা
নামাযে হাই না তোলা
ইনশাআল্লাহ এগুলো খেয়াল রাখলে তোমার সালাতে খুশু-খুযু আসবেই। তাই তুমি চিন্তা করোনা ইনশাআল্লাহ আজথেকে তুমি যখন খুশু-খুযু অবলম্বন করবে ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তোমাকে তাওফিক দান করবেন। এ কথা শুনে হারিকেনের মুখে একটুকরো চাদের হাসি দেখা গেল যেন ওর মুখের সামন থেকে মেঘ অনেক দুরে চলেগেল। ইমরানের সবথেকে প্রিয় হাসি ছিলো সেই হাসিটি।
সবশেষে ইমরান বললো,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো‘আতে বলতেন,
«اللهم إني أعوذ بك من قلب لا يخشع..»
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এমন অন্তর থেকে আশ্রয় কামনা করি, যাতে খুশু নেই।”(তিরমিযি/২৭৬৯)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট আমাদের বিনীত প্রার্থনা এই যে, তিনি যেন আমাদের সালাতে খুশু অবলম্বন কারীদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আর যে ব্যক্তি এ আলোচনা শুরু করিয়ে দিয়েছেন(ভিশু), আল্লাহ যেন তাকে উত্তম বিনিময় দেন এবং এ কথাগুলো যারা পড়েন, তাদের উপকার পৌঁছান। আমীন।
[নোট: গল্পের চরিত্র কাল্পনিক নয় ব্লগীয় চরিত্র তবে ইমরান ভাই নামাযের ব্যাপারে সত্যই বলেছেন। খুশু-খুযু সম্মন্ধ্যে সংক্ষেপে বলার ভাষা অসম্ভব মনে হয়েছে, তাই যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। উৎসুক সকল ব্লগারকে খুশু-খুযু সম্মন্ধ্যে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংক থেকে বইটি ডাউনলোড করে পড়ার জন্য অনুরোধ রইলো। আল্লাহ আপনাদের উত্তম জাজায়েখায়ের দান করুন।আমীন।]
আলহামদু লিল্লাহি রাব্বুল আলামীন। সকল হামদ তথা প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্যই।
প্রতিশ্রুত লিংক: সালাতে বিনয়ী হওয়ার উপায়, শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জেদ
বিষয়: বিবিধ
১৯১২ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
( হারিকেন কে খুঁজে পেয়েছেন তো !)
শুকরিয় জানবেন রাইয়ান বোনজি। জাজাকাল্লাহু খায়রান।
হ্যারিকেনটাকে ব্লগে না দেখে ব্লগ ছেড়ে চলে যেতে মন চাচ্ছে....
আমার অন্তর থেকে দুয়া রইল আল্লাহ আপনার যোগ্যতা আরো বাড়িয়ে দেন ।
সুন্দর কমেন্টসের জন্য জাজাকাল্লাহ।
হারিকেনটাকে পাচ্ছিনা অনেক দিন। তাই আমার মনটা অনেক খারাপ। তুমি কি একটু হারিকেনটাকে কমেন্টস করে ব্লগে আবার আসার জন্য একটা অনুরোধ করেব প্লিজ
ছেলেটাযে কেমন আছে তাও জানি না।
সহিশুদ্ধভাবে নামায পড়ার তৌফিক দান করুন। আমিন
মনটা খারাপ হারিকেনের জন্য ছেলেটা সত্যিই খুব অভিমানী মেইলেও কোন উত্তর দিচ্ছেনা ৫-৬ দিন হলো।
কইযে গেল, আল্লাহ্ ই ভাল যানেন।
আল্লাহ ওকে ভালো রাখুন।
অফটপিক: আমাকে এই আইডিতে একটা মেইল করবেন প্লিজ। এখানে বলা ঠিক হবে না সেজন্য....প্লিজ।
সুন্দর কমেন্টসটি আমি ওর পক্ষে দিয়ে দিলাম।
আল্লাহ আমাদেরকে খুশু-খুযু নিয়ে সালাত আদায় করার তাওফিক দিন, আমীণ।
গল্পের মধ্যেও সুন্দর বিষয় উত্থাপন করেছেন ...
জাজাকাল্লাহু খায়রান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন