সহীহুল বুখারীর পূর্ন অর্থ আপনি জানেন কি?
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ১৫ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৫৬:২৮ সকাল
ইমাম বুখারীর (র) সংকলিত সহীহুল বুখারী হাদীস গ্রন্থের সম্পুর্ণ নাম এবং সেই নামের ব্যাখ্যা আমাদের জনা উচিত। কেননা আমারা যদি তা জানি তাহলে আমরা বুঝবো যে ইমাম বুখারী (র) তার সংকলিত হাদীসের গ্রন্থ দারা কি বুঝাতে চেয়েছেন।
====================================
গ্রন্থের পূর্ননাম:
আল-জামি’ আলমুসনাদ আসসহীহ আলমুখতাসার মিন উমূরি রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহী।
আল-জামি’:
হাদীসের প্রধান প্রধান বিষয়সমূহ সম্বলিত বলে একে ‘জামি’য়’ বা পূর্ণাঙ্গ বলা হয়। যে সকল হাদীস গ্রন্থে ১. আকিদা-বিশ্বাস ২. আহকাম ৩. আখলাক ও আদাব ৪. কুরআনের তাফসীর ৫. সীরত ও ইতিহাস ৬. ফিতনা ও আশরাত (বিশৃঙ্খলা ও আলামতে কিয়ামত) ৭. রিকাফ অর্থাৎ আত্বসুদ্ধি ৮. মানাকিব বা ফাজিলাত ইত্যাদি সকল প্রকারের হাদীস বিভিন্ন অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয় তাকে আল- জামি’ বলা হয়। ইমাম বুখারী (র) তার আল-জামে’ কে বিভিন্ন পর্ব হিসেবে সাজিয়েছেন যেমন: পর্ব (১): কিতাবুল ওয়াহী বা ওয়াহীর সূচনা, পর্ব (২): কিতাবুল ইমান বা ইমান (বিশ্বাস) ইত্যাদি। ইমাম বুখারী (র) এর আগে কেউ এরখম আল-জামি’ গ্রন্থ সংকলন করেন নাই। এবং ইমাম বুখারী (রা) এর মতো কেউ আল-জামি’ কে সাজাতেও পারেনাই। ইমাম বুখারী (র) তার এই জামে’ শব্দ দারা বুঝাতে চেয়েছেন যে তিনি এমন একটি কিতাব লিখতে চান যাতে ইসলামের সকল বিষয় সংযুক্ত থাকবে।
আল মুসনাদ:
আল মসনাদ বলতে তিনি বুঝিয়েছেন যে তিনি এই গ্রন্থের প্রত্যেকটি হাদীসের সুত্র উল্লেখ করবেন যাতে করে যে কেউ সহযে বুঝতে পারে যে হাদীসটি রসুল (সা) থেকে কিভাবে তার পর্যন্ত এসেছে। আল মুসনাদ অর্থ ইসনাদ (সুত্র) সম্বলিত। যেমন: A,B থেকে শুনেছে B,C থেকে শুনেছে C,D থেকে শুনেছে D, রসুল (সা) থেকে শুনেছে। ইমাম বুখারী (র) বলতেছেন যে তিনি পুরো ইসনাদ দিবেন যাতে কোন সন্ধেহ না থাকে এবং যানা যায় হাদীসটি কোথা থেকে কিভাবে এসেছে। (বি:দ্র: হাদীসের গ্রন্থের ক্ষেত্রে মুসনাদ আলাদা বিষয় যেমন: মুসনাদে আহমাদ)
আস-সহীহ:
তিনি বলতেছেন যে তিনি এই গ্রন্থে উচ্চ স্থরের সহীহ হাদীস গুলোকেই শুধু মাত্র সংকলিত করবেন। কেননা হাদীসের মাঝে অনেক স্থর রয়েছে যেমন: ১. সহীহ ২. হাসান ৩. যইফ ৪. যইফ জিদ্দান ৫. মওযু’ । তিনি এই গ্রন্থে শুধু মাত্র সহীহ হাদীস নিয়ে আসবেন সেটা তিনি বলেছেন আস-সহীহ দ্বারা। ইমাম বুখারী (র) প্রথম যিনি সহীহ হাদীসের গ্রন্থ লিখেছেন। তিনি ২ টা জিনিস করেছেন যা তার আগে কেউ করেননি ১. জামে’ গ্রন্থ কেউ সংকলন করেননি ২. শুধু সহীহ হাদীস হাদীস দারা কেউ গ্রন্থ সংকলন করেননি।
আল-মুখতাসার:
মুখাতসার মানে হচ্ছে উপসংহার বা সামারী বা সংক্ষিপ্ত । তিনি জামে’ লিখেছেন আর তার অনুচ্ছেদ লিখে তাকে মুখতাসার করেছেন। আল জামে’ হচ্ছে ট্রপিক্স আল মুখতাসার এর কনটেন্ট। আল মুখতাসার বলে তিনি আরোও বুঝিয়েছেন যে, তিনি পৃথিবীর সকল সহীহ হাদীস এই গ্রন্থের মধ্যে নিয়ে আসবেন না অর্থাৎ তিনি বলছেন যে তার এই সহীহর বাহীরেও সহীহ হাদীস থাকতে পারে। এবং এটা খুব গুরুত্বপূর্ন বিষয় যে ইমাম বুখারী (র) কখনই বলেন নাই যে তিনি পৃথিবীর সকল সহীহ হাদীস সংকলন করছেন, তবে তার কিতাবের সকল হাদীস সহীহ তিনি সেটাই বলেছেন। তিনি মুখতাসার করেছেন ফেকার বর্ণনা ধারায়। ইমাম বুখারী (র) একজন উচ্চমানের ফকিহ্ ও ছিলেন। তিনি নিজেই মুজতাহীদ ছিলেন।
মিন উমূরি রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহী:
রসূল (সা) জীবনী সময়ের তার কথা,কাজ,অনুমোদনে এর বর্ণনা । তিনি বলছেন যে এটা শুধু রসুল (সা) কথা নয় এটা রসুল (সা) জীবনে কি ঘটেছিল, তিনি কি করেছিলেন, সে সময়ে কি হয়েছিল তার সকল কিছু সংকলিত করা হয়েছে।
====================================
আমরা সংক্ষিপ্ত ভাবে এই গ্রন্থকে ”সহীহুল বুখারী” বলে থাকি কিন্তু তিনি এই গ্রন্থকে ”আল-জামি’ আলমুসনাদ আসসহীহ আলমুখতাসার মিন উমূরি রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহী” নামকরণ করার মাধ্যমে অনেক কিছুই বুঝাতে চেয়েছেন।
ইনশাআল্লাহ এই নামকরন জানার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারবো যে ইমাম বুখারী তার গ্রন্থকে কিভাবে সাজিয়েছেন মুসলিম উম্মার জন্য এবং সত্যি এই গ্রন্থ আমাদের কাছে এমন যেন আমরা রসুল (সা) বানী গুলো শুনতে পাই গ্রন্থ পড়ার মাধ্যমে। আল্লাহ সুবহানাহুতাআলা ইমাম বুখারীকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন সাথে আমাদেরকেও তার সহীহ থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দিন।আমিন।
তথ্যসুত্র: Click this link
বিষয়: বিবিধ
৩২৪৩ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি গ্রন্থের বিভিন্ন শব্দের বা শব্দমালার যে ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন সেটা কিন্তু আপনার (বা যেখান থেকে আপনি এই তথ্য সংগ্রহ করেছেন) নিজস্ব -- ইমাম বুখারী নিশ্চয়-ই তা করে যাননি তাঁর গ্রন্থে বিশেষত: 'আল-জামি' ও 'আল-মুখতাসার' শব্দটির যে লম্বা ব্যাখ্যা উপরে দেয়া হয়েছে সেগুলো । ইমাম বুখারী যা বলেননি তা তাঁর নামে চালিয়ে দেয়া যাবে না যেমনটি মহানবী (সাঃ) যা বলেননি তা তাঁর নামে চালিয়ে দেয়া হবে শক্ত গুণাহ'র কাজ ।
যাহোক, আমি যা জানতে আগ্রহী তা হচ্ছে,
১) মূল বুখারী শরীফটি কি কোথাও সংরক্ষিত আছে ?
২) মূল বুখারীতে মোট হাদীস সংখ্যা ছিলো কতো ?
৩) বাজারে যে বিভিন্ন বুখারীর সংকলন পাওয়া যায় সেগুলো নিশ্চয়-ই মূল বুখারী থেকে কপি করা নয়? তাছাড়া সবাই তাদের মর্জি মতো কাট-ছাঁট করে সংকলন করেন ; সে কারণে কোনো বিষয়ের সমস্ত হাদীসগুলো পাওয়া যায় না !
আপনার বিস্তারিত জানার ইচ্ছা থাকলে
বুখারীর বিখ্যাত সরাহ গ্রন্থ ফাতহুল বাড়ীতেও ইমাম ইবন হাজার আসকালানী (র)এই নামের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা আপনি দেখতে পারেন "ফাতহুল বাড়ী গ্রন্থে"
তার গ্রন্থের নামের আপনার কোন অর্থ জানা থাকলে বলতে পারেন আমাদেরও জানা হবে ইনশাআল্লাহ।
>>>
১) মূল বুখারী শরীফটি কি কোথাও সংরক্ষিত আছে ?
>>>
এটা আমার জানা নাই। তবে দেখি জানতে পারলে জানাবো ইনশাআল্লাহ।
>>>
২) মূল বুখারীতে মোট হাদীস সংখ্যা ছিলো কতো ?
>>>
সর্বমোট ৭৫৬৩ টি হাদিস সংকলিত হয়েছে। তাকরার বা পুনরাবিত্তি ছাড়া ২৫১৩ টি। আর মুআল্লাক ও মুতাবাআত যোগ করলে এর সংখ্যা দাড়ায় ৯০৮২
(বুখারীর সর্বপ্রধান বর্ণনাকারী ফারাববী (র) এর বর্ণনা অনুসারে বিখ্যাত ভাষ্যকার হাফিয ইবন হাজার (র) কর্তৃক গণনার সংখ্যা)
>>>
৩) বাজারে যে বিভিন্ন বুখারীর সংকলন পাওয়া যায় সেগুলো নিশ্চয়-ই মূল বুখারী থেকে কপি করা নয়? তাছাড়া সবাই তাদের মর্জি মতো কাট-ছাঁট করে সংকলন করেন ; সে কারণে কোনো বিষয়ের সমস্ত হাদীসগুলো পাওয়া যায় না !
>>>
সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ কিনবেন কোন প্রকাশনীর তা জানতে আপনি এই লিংটি দেখুন সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ কিনবেন কোন প্রকাশনীর
=====================
আপনি এই ভিডিওটি দেখতে পারেন তাহলে হয়তবা আপনার অনেক প্রশ্নর উত্তর পেয়ে যাবেন যা আমি দিতে পারছিনা।
Life of Imam Bukhari - An Explanation
যাহোক, আপনার উল্লেখিত বুখারীর পূর্ণ নামঃ আল-জামি’ আলমুসনাদ আসসহীহ আলমুখতাসার মিন উমূরি রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহী।
বিভিন্ন বই-তে এই নাম কিছুটা হের-ফের হয়ে এসেছে। যেমন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত বুখারীতে উল্লেখিত নামের সাথে প্রায় হুবহু মিলে যায় - “আল-জামিউল মুসনাদুস সহীহুল মুখতাসারু মিন উমুরি রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহি”।
কিন্তু আল্লামা জলিল আহসান নদভী রচিত ও হাফেয আকরাম ফারুক অনুদিত “রাহে আমল” গ্রন্থের ১ম খন্ডের ২৬নং পৃষ্ঠায় বুখারী শরীফের পূর্ণ নাম বলা হয়েছে, “আল-জামিউস সহীহুল মুসনাদুল মুখতাসারু মুন উমুরি রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়া আইয়্যামিহি” যা আপনার উল্লেখিত পূর্ণ নামের সাথে শব্দে শব্দে মিলছে না ।
আবার হাদীসের সর্বমোট সংখ্যার ব্যাপারে উপরোক্ত বই-এর ঐ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ৯,৬৮৪ যা আপনার দেয়া তথ্যের সাথে মিলছে না । তেমনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সর্বমোট হাদীস সংখ্যার ব্যাপারে (হাফিয ইবনে হাজার (রঃ)-এর গণনার ভিত্তিতে) বলেছে ৭,৩৯৭, তাকরার বাদে ২,৫১৩ আর মু'আল্লাক ও মুতাবা'আত যোগে ৯,০৮২ ।
এ ব্যাপারগুলো (গ্রন্থের নাম ও হাদীস সংখ্যার তারতম্য) নিয়ে অনেক আগে থেকে-ই আমার মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছিলো যার উত্তর আমি গত রাতে খুঁজে বের করেছি এবং এ নিয়ে একটি আলাদা পোষ্ট দিয়েছি যাতে আগ্রহী পাঠকরা পোষ্টের শিরোনাম দেখে-ই তড়িৎ জেনে নিতে পারেন ।
জামি' শব্দের অর্থ পূর্ণাঙ্গ হলে-ও ইমাম বুখারীর এ শব্দের ব্যপাবলিকেবহার এটা বোঝায় না যে, তাঁর সংকলনে-ই প্রথম ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বিষয়াদি ফূটে উঠেছে । উনি (তৃতীয় যুগের হাদীস সংকলক) তাঁর সময়ে ওভাবে ব্যাপারটাকে দেখেছেন যেমনটি দেখেছেন তাঁর পূর্বসূরী কিছু হাদীস সংকলকবৃন্দ এবং সে কারণে তারা-ও জামে' শব্দটি ব্যবহার করে গেছেন । যেমন, দ্বিতীয় যুগের কয়েকটি হাদীস সংকলনের নাম নিম্নরূপঃ
১। জামে' সুফিয়ান সাওরী (মৃ. ১৬১ হিজরী)
২। জামে' ইবনুল মুবারক (মৃ. ১৮১ হিজরী)
৩। জামে' ইবনে আওযাঈ (মৃ. ১৫৭ হিজরী)
৪। জামে' ইবনে জুরাইজ (মৃ. ১৫০ হিজরী)
জামি' ও সুনান শব্দদ্বয়ের ব্যাপারে আল্লামা জলিল আহসান ভিন্ন রকম কথা বলেছেন-- "বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী - এই তিনটি গ্রস্থকে একত্রে 'জামি' বলা হয় । অর্থাৎ আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদাত, নৈতিকতা, পারস্পরিক লেনদেন ও আচার-ব্যবহার ইত্যাদি শিরোনামের অধীন হাদীসসূহ এতে বর্তমান আছে । আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইবনে মাজাকে একত্রে সুনান বলা হয় । অর্থাৎ এই গ্রস্থগুলোতে বাস্তব কর্মজীবনের সাথে সম্পর্কিত হাদীসই বেশী স্থান পেয়েছে ।” [রাহে আমল, পৃষ্ঠা নং ২৭]
তেমনি ইমাম বুখারী-ই যে শুধুমাত্র সহীহ হাদীস দ্বারা-ই প্রথম হাদীস গ্রস্থ সংকলন করেছিলেন সেটা বোধ হয় ঠিক না । যেমন, হাম্মাম ইবনে মুনাব্বেহ (মৃ. ১০১ হিজরী) 'সহীফায়ে সহীহা' নামক একটি সংকলন তৈরী করেছিলেন । তাছাড়া বিভিন্ন সাহাবীদের দ্বারা সংকলিত গ্রস্থসমূহকে সহজে-ই সহীহ ক্যাটাগরীতে অন্তর্ভুক্ত করা যায় যদিও তাঁরা এক্সক্লুসিভলি 'সহীহ' শব্দটি তাঁদের সংকলনের নামে ব্যবহার করেননি । (দ্রষ্টব্যঃ রাহে আমল, পৃষ্ঠা নং ১৭-১৮)
খুব সুন্দর একটা পোস্টাইছো, কিন্তু প্রিয়দেরকে আমন্ত্রণ জানাইতে তুমার সমস্যা কোথায় বুঝিনা আমি আস্তে আস্তে বুঝি অহংবাস (কার নয়) ঢুকে যাচ্ছে তুমার ভেতরে
আসলে তুমাকে আমি এত ভালপাই যে আজকেই তোমাকে প্রথম প্রিয়তে রাখলুম
এখন থেকে নোটিফিকেশন পাবে। হি হি হি..
আরেক্ষান কথা.....
তুমিযে আমারে এত্ত ঘৃণা করতা আগে জান্তামা না আমি এত্তদিন পরে প্রিয় হলাম তোমার?
মন্তব্য করতে লগইন করুন