ছালাতের ফজিলত সম্পর্কে জঈফ ও জাল হাদিস।
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ১০ মার্চ, ২০১৪, ১১:১৮:৩৬ সকাল
ছালাতের ফজিলত সম্পর্কে জঈফ ও জাল হাদিস
ছালাত জান্নাতের চাবি কথাটি সমাজে বহুল প্রচলিত । অনেকে বুখারিতে আছে বলেও চালিয়ে দেয়াই পছন্দ করে। আসলে এর কোন ভিত্তি নাই।
হাদিস নং ১।
জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (ছা) বলেছেন, জান্নাতের চাবি হল ছালাত। আর ছালাতের চাবি হল পবিত্রতা।
(মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৭০৩ তিরমিজি হা/৪ মিস্কাত হা/২৪৯ ফাজায়েলে আমাল ৮৮ পৃ)
তাহকিকঃ
হাদিস এর প্রথম অংশ জঈফ (জঈফুল জামে হা/৫২৬৫, সিলসিলা ই জঈফা হা/৩৬০৯) দ্বিতীয় অংশ পৃথক সনদ এ ছহিহ সুত্রে বর্ণিত আছে। (আবু দাউদ হা/৬১, তিরমিজি হা/৩)
হাদিসটির প্রথম অংশ জঈফ হবার কারন হল- উক্ত সনদ এ দুইজন দুর্বল রাবি আছে। (ক) সুলাইমান বিন করম ও (খ) আবু ইয়াহিয়া আল-কাত্তাত।
(আলবানি, মিস্কাত হা/২৯৪ এর টিকা দ্রষ্টব্য)
জ্ঞাতব্যঃ
জান্নাতের চাবি সম্পর্কে ইমাম বুখারি (রহ) একটি অনুচ্ছেদের বিষয়বস্তু আলোচনা করতে গিয়ে ওহাব ইবনু মুনাব্ববিহ (রহ) থেকে যে বর্ণনা এসেছে তা হল-
“লা ইলাহা ইল্লাল্লহ” কি জান্নাতের চাবি? তখন তিনি বলেন, হ্যাঁ। তবে প্রত্যেক চাবির দাত রয়েছে। তুমি যদি এমন চাবি নিয়ে আসো যার দাঁত রয়েছে, তাহলে তোমার জন্য জান্নাত খোলা হবে। অন্যথাই খোলা হবে না।
(বুখারি ১/১৬৫ পৃ হা/১২৩৭ এর পূর্বের আলোচনা দ্রষ্টব্য)
এছারাও আরও অন্নান্য ছহিহ হাদিস দারাও এটা প্রমানিত।
(বুখারি হা/৫৮২৭, মুসলিম হা/২৮৩, )
তাই, “লা ইলাহা ইল্লাল্লহ” হল জান্নাতের চাবি আর শরিয়াতের অন্নান্য আমল-আহাকাম অর্থাৎ ছালাত, সিয়াম, হাজ, যাকাত ইত্যদি ওই চাবির দাঁত।
হাদিস নং ২।
ছালাত হল দিনের খুঁটি। সুতারাং যে ব্যাক্তি ছালাত কায়েম করলো সে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করলো। আর যে ব্যাক্তি ছালাত ছেড়ে দিল সে দ্বীনকে ধ্বংস করল।
(কাশফুল খাফা ২/৩২ পৃ, তাযকিরাতুল মউজুয়াত পৃ ৩৮, ফাজায়েলে আমাল ২৯ পৃ)
তাহকিকঃ
সমাজে হাদিসটির সমাধিক প্রসার থাকলেও হাদিসটি গ্রহন যোগ্য নয়। ইমাম নাবাবি (রহ) বলেন, এটি বাতিল ও মুনকার।
(কাশফুল খাফা ২/৩১ পৃ,)
হাদিস নং ৩।
রসুল (সা) বলেছেন, ছালাত মুমিনের মিরাজ।
(তাফসিরে রাযি ১/২১৮ পৃ, তাফসিরে হাক্কি ৮/৪৫৩ পৃ, মিরকাতুল মাফাতিহ ১/১৩৪ পৃ, “ইমান” অধ্যায়)
তাহকিকঃ
উক্ত বর্ণনার কোন সনদ নাই। এটি ভিত্তিহিন ও বানোয়াট।
হাদিস নং ৪।
আনাস (রা) বলেন, রসুল (সা) বলেছেন, “ছালাত মুমিনের নুর”
(মুসনাদে আবি ইয়ালা হা/৩৬৫৫, ফাজায়েলে আমাল ২৯ পৃ)
তাহকিকঃ
বর্ণনাটি জইফ। মুহাদ্দিস হুসাইন সালিম আসাদ (রহ) বলেন, উক্ত হাদিসের সনদ অত্যন্ত দুর্বল।
(তাহকিক মুসনাদে আবি ইয়ালা হা/৩৬৫৫,)
উক্ত হাদিসের সনদে ইসা ইবনু মাইসারা নামে একজন দুর্বল রাবি আছে।
(সিলসিলাই জইফা হা/১৬৬০)
উল্লেখ্য, ছলাত নুর, সাদাকা দলিল মর্মে মুসলিমে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে তা ছহিহ।
(মুসলিম হা/৫৫৬, মিস্কাত হা/২৮১)
হাদিস নং ৫।
যে বাক্তি জামাতের সাথে ফজরের ছালাত আদায় করে সে যেন আদম (আ) এর সাথে পঞ্চাশ বার হজ করে এবং যে বাক্তি জামাতের সাথে যোহরের ছালাত আদায় করে সে যেন নুহ (আ) এর সাথে চল্লিশ কিংবা ত্রিশ বার হজ করে। এভাবেই অনন্যা ওয়াক্ত সে আদায় করে।
(হাসান ইবনু মুহাম্মাদ আস-ছাগানি, আল-মউজুয়াত হা/৪৮ পৃঃ ৪২)
তাহকিকঃ
বর্ণনাটি জাল ও মিথ্যা।
(আল-মউজুয়াত হা/৪৮ পৃঃ ৪২)
হাদিস নং ৬।
সালমান ফারসি (রা) বলেন, আমি রাসুল (সা) কে বলতে শুনেছি, যে বাক্তি ভোরে ফজরের ছালাতের দিকে আগিয়ে গেলো সে ইমানের পতাকা নিয়ে গেলো। আর যে বাক্তি ভোরে (ফজরের ছালাত আদায় না কওরে) বাজারের দিকে আগিয়ে গেলো সে শয়তানের পতাকা নিয়ে গেলো।
(ইবনু মাজাহ হা/২২৩৪, বঙ্গানুবাদ মিস্কাত হা/৫৮৯)
তাহকিকঃ
উক্ত হাদিসের সনদ অত্যন্ত দুর্বল। এর সনদে উবাইস ইবনু মাইমুন নামক রাবি রয়েছে। ইমাম বুখারি (রহ) সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছ গন তাকে মুনকার বলে অভিযোগ করেছে। ইবনু হিব্বান (রহ) বলেন, সে নির্ভরশীল বাক্তির নাম দিয়ে ধারনা পূর্বক বহু জাল হাদিস বর্ণনা করেছে।
(আলবানি, জইফ ইবনু মাজাহ হা/২২৩৪, মিস্কাত হা/৬৪০ টিকা দ্রষ্টব্য)
হাদিস নং ৭।
ইমরান ইবনু হুসাইন (রা) বলেন, রাসুল (সা) কে একদা জিজ্ঞাস করা হল, আল্লাহর এই বানি সম্পর্কে-“নিশ্চয়ই ছালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে” তখন তিনি বললেন, যাকে তার ছালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে না “তার ছালাত হয় না”।
(তাফসির ইবনে কাসির; সিলসিলা ই জইফা হা/৯৮৫, ফাজায়েল এ আমাল পৃঃ ১৭২)
তাহকিকঃ
হাদিসটি জইফ। উক্ত বর্ণনার সনদে ইবনু জুনাইদ নামে একজন মিথ্যুক রাবি রয়েছে। মুহাদ্দিসগণ বর্ণনাটিকে মুনকার বলেছেন।
(সিলসিলা ই জইফা হা/৯৮৫৫)
হাদিস নং ৮।
ইবনু আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেন, যার ছালাত তকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে না তাকে উহা ইসলাম থেকে দূরে সরে দেয়া ছারা আর কিছুই বৃদ্ধি করে না।
(ফাজায়েল এ আমাল পৃঃ ১৭৩, তাবারানি, আল-মুজামুল কাবির হা/১০৮৬২)
তাহকিকঃ
বর্ণনাটি বাতিল বা মিথ্যা। এর সনদে লইস ইবনু আবি সালিম নামক ত্রুতিপূর্ণ রাবি রয়েছে।
(সিলসিলা ই জইফা হা/২)
জ্ঞাতব্যঃ
উক্ত বর্ণনা প্রমান করে ত্রুটিপূর্ণ কোন বাক্তি ছালাত আদায় করলে ছালাত কবুল হয়না। সুতারাং ছালাত আদায় করে কোন লাভ নাই। কিন্তু উক্ত ধারনা সঠিক নয়। বরং ছালাত আদায়ের মাধ্যমে এক সময় সে আল্লাহর অনুগ্রহে পাপ কাজ ছেড়ে দিবে। ছহিহ হাদিসে বর্ণিত হইছে,
আবু হুরাইরা (রা) বলেন, জনৈক বাক্তি রাসুল (সা) এর নিকটে এসে বললেন, অমুক বাক্তি রাতে ছালাত আদায় করে আর সকাল হলে চুরি করে। তিনি উত্তরে বললেন, ছালাত তাকে অচিরেই তা থেকে বিরত রাখবে।
(আহামাদ হা/৯৭৭৭, মিস্কাত হা/১২৩৭, সনদ ছহিহ)
চলবে......
সংগ্রহ: Message Of Messenger থেকে একটু ঘুড়ে আসুন
বিষয়: বিবিধ
৪০৭২ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহপাক আমাদেরকে শিখার এবং মানার তৌফিক দিন।
২, এরকম কি হয়েছে একজন আলেম একটি হাদীসকে যয়ীফ বলেছেন আরেকজন আলেম বলেছেন এটা সহীহ ।
৩, কোন হাদীস শুদ্ধতা নিয়ে ইসলামিক স্কলার দের মধ্যে দ্বিমত ব্যাপারটা কি আছে??
তিরমিযি হা/১৩১২, আমি বলেছি হাদীসটির সানাদ যইফ। আর প্রকৃতপক্ষেই সানাদটি যইফ। কিন্তু আমি সুনান আবু দাউদে বলেছি সহীহ হা/২৮০৯ তা এজন্য যে, আমি তিরমিযীর কাজ শেষ করার পর আমার নিকট আয়িশাহ (রা) এবং অন্যদের বর্ণিত আরোও অনেক সানাদ একত্রিত হয়।.......এ সতর্ক আমি এ আশায় উল্লেখ করলাম যে, কোন পাঠক যখন এ রকম বৈপরিত্য পাবে-অবশ্যই পাবে-তখন যেন সে অতিদ্রুত সমালোচনার তীর না ছুড়ে তার কারণ উল্লেখ করার পারও। আর কেউ যদি তা করে, তবে কোন বিষয়ের কোন ইমামই নিস্তার পাবেন না এরুপ সামালোচনা হতে। কারণ ফিক্বহ,হাদীস,জারাহ, ওয়াত তাদীল সবক্ষেত্রে এ ধরনের অনেক কিছুই পাওয়া যায়। ফলে সমালোচনা কারী নিজেও এ ভুল হতে নিরাপদ নয়। (তাহক্বীক আবু দাউদ ভুমিকা দ্রস্ঠব্য) তাহক্কীক আবু দাউদ ১ম খন্ড এখানে পাওয়া যাবে
তোমাকে দেখার অনুরোধ করছি।
২। মুহাদ্দিসরা অনেক হাদিসে এরখম বলেছেন। তবে চুরান্ত হচ্ছে রিজাল দিয়ে অনুমোদন। রিজাল দিয়ে বিশ্লেষন করার পর যারটা সঠিক হবে সেটাই মানা জরুরী।
আরো বিস্তারিত জানতে হলে "সিলসিলাই যইফা গ্রন্থটি দেখতে পারো" সেখানে দেখবে আলবানী (রহ) সনদের চুলচেরা বিশ্লেষন করে দেখিয়েছেন কেন হাদিসটি অন্য মুহাদ্দিস সহীহ/হাসান বলার পরেও তা সঠিক হুকুমে যইফ/জাল।
সিলসিলাই যইফা এখানে পাওয়া যাবে তোমাকে দেখার অনুরোধ করছি।
৩। এই প্রশ্নের উত্তর ২ নয় উত্তরের অনুরুপ।
ওয়াল্লাহু আলাম।
প্রসঙ্গ বুকের উপর হাত বাঁধাঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলের হাদীস নিয়ে ধুম্রজাল
Posted on April 23, 2014 by Admin
প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম।
আপনাদের কাছে করা অনেক প্রশ্নেরই উত্তর আমি পাই নি, হয়ত আপনাদের সময় স্বল্পতা আর প্রশ্নের আধিক্যতার কারণে। যাই হোক, নিচের এই ভিডিওতে একজন দাবি করেছেন, সহীহ ইবনে খুযাইমাতে উল্লেখিত সুফিয়ান ছাওরী রাহ., আসেম ইবনে কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নামায পড়লাম … তিনি তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর বুকের উপর রাখলেন।
-সহীহ ইবনে খুযায়মা ১/২৭২, হাদীস : ৪৭৯
এই হাদীসটির রাবী মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলকে ইমাম বুখারী মুনকারুল হাদীস বলেননি, তিনি মুনকারুল হাদীস বলেছেন মুয়াম্মাল ইবনে সাঈদকে। কিন্তু আমি অনেক ইন্টারনেটে অনেক লিখাতে পড়েছি মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলকেই তিনি মুনকারুল হাদীস বলেছেন। দয়া করে কি ব্যাখ্যা করবেন কোনটা সঠিক ?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আসলে কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা তাদের থিউরী “কুরআন ও সহীহ হাদীসই দলীলযোগ্য” একথার দাবিতে অটল থেকে বুকের উপর কোন দলীল পেশ করতে সক্ষম নন। তাই এক্ষেত্রে চালাকীর আশ্রয় নিয়ে থাকেন।
কুরআন ও সহীহ হাদীসই যদি কেবল দলীলযোগ্য হয়, কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল ছাড়া কোন উম্মতীর বক্তব্যের অনুসরণ যদি শিরক পর্যায়ের তাকলীদ হয়ে থাকে, তাহলে সহীহ ইবনে খুজাইমার উক্ত হাদীসটি তাদের দাবি অনুযায়ী আল্লাহ ও রাসূল সাঃ থেকে কি সহীহ সাব্যস্ত করিয়েছেন?
যদি না করে থাকেন, তাহলে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ যে হাদীসকে সহীহ বলেননি, সে হাদীসকে কুরআন ও সহীহ হাদীসের রেফারেন্স ছাড়া কোন উম্মতীর বক্তব্য দিয়ে সহীহ বলাটা কি উক্ত মুহাদ্দিসের অন্ধ তাকলীদ নয়?
আমরা বিজ্ঞ মুজতাহিদের তাকলীদ করলে শিরক, আর তারা করলে সেটি কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল হয় কি করে?
মুখে মুখে কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল মানার স্লোগান, আর কাজেকর্মে উম্মতীর বক্তব্য কুরআন ও সহীহ হাদীস ছাড়াই অন্ধভাবে মেনে নেয়ার নাম আর যাই কিছু হোক, কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসরণ নয়, বরং ধোঁকাবাজী।
বুকের উপর হাত বাঁধার কোন দলীল যখন কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা কোথাও পেলেন না নিজেদের উদ্ভাবিত থিউরী “কুরআন ও সহীহ হাদীসই দলীলযোগ্য” অনুপাতে। তখন প্রথমেতো কুরআন ও হাদীসের দলীল ছাড়াই মুহাদ্দিসীনে কেরামের তাকলীদ করে সহীহ ইবনে খুজাইমার হাদীসটিকে সহীহ বলা শুরু করলেন।
কিন্তু যখনি আমরা তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলাম যে, যারা ইমাম বুখারী রহঃ এর সকল মন্তব্যকেই চূড়ান্ত ও হক বলে বিশ্বাস করে থাকে, তারা উক্ত বর্ণনাটির একজন রাবী মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈলকে ইমাম বুখারী রহঃ “মুনকারুল হাদীস বলে মন্তব্য করার পরও মানেন কি করে? তখন কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা নতুন বুদ্ধি বের করলেন। সেটি হল, মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাঈলকে মুয়াম্মাল বিন সাঈদ বানিয়ে দিলেন।
এ এক আজীব চালাকী।
চলুন, দেখি ইমাম বুখারী রহঃ মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল রহঃ কেই কি “মুনকারুল হাদীস” বলে মন্তব্য করেছেন নাকি না? সে ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনে কেরাম তাদের স্বীয় কিতাবে কি লিখেছেন?
১
আল্লামা মিজ্জী রহঃ লিখেছেন- وقَال البُخارِيُّ: منكر الحديث. তথা ইমাম বুখারী রহঃ বলেছেন, তিনি [মুআম্মাল বিন ইসমাঈল রহঃ] মুনকারুল হাদীস। {তাহযীবুল কামাল ফী আসমায়ির রিজাল, বর্ণনা নং-৬৩১৯}
২
ইমাম যাহাবী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ বলেছেন, মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল মুনকারুল হাদীস।
আলমুগনী ফিজ জুআফা, বর্ণনা নং-৬৫৪৭,
তারীখুল ইসলাম, বর্ণনা নং-৩৮০,
সিয়ারু আলামিন নুবালা, বর্ণনা নং-১৫৪৬,
জিকরু মান তাকাল্লামা ফীহি, বর্ণনা নং-৩৪৭,
মিযানুল ইতিদাল, বর্ণনা নং-৮৯৪৯।
৩
ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। {তাহযীবুত তাহযীব, বর্ণনা নং-৬৮, লিসানুল মিযান, বর্ণনা নং-৪৯৮৭}
৪
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। {মাগানিয়ুল আখয়ার, বর্ণনা নং-২৪১৯}
৫
আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ ইয়ামানী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। {খুলাসাতুল তাহযীবু তাহযীবিল কামাল}
এতগুলো গ্রহণযোগ্য জারাহ তাদীলের ইমামগণ এতসব কিতাবে ইমাম বুখারী রহঃ এর মন্তব্যটি নকল করেছেন। ইমাম বুখারী রহঃ মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈলকে নয়, মুয়াম্মাল বিন সাঈদ সম্পর্কে এ মন্তব্য করেছেন, এমন কথা কোন পূর্ববর্তী কোন গ্রহণযোগ্য জারাহ তাদীলের ইমাম কি বলেছেন?
কেউ বলেননি, সবাই মুআম্মাল বিন ইসমাঈল সম্পর্কেই ইমাম বুখারীর মন্তব্যটির নিসবত করেছেন। মুআম্মাল বিন সাঈদের কথা কেউ বলেননি।
একথা স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করে যে, বর্তমানের নামধারী আহলে হাদীস ভাইয়েরা নিজেদের দলীলহীন মাসআলা প্রমাণের জন্য এতসব গ্রহণযোগ্য জারাহ তাদীলের ইমামগণের অবস্থানকে ভুল সাব্যস্ত করার হীন কর্মকান্ডে নেমেছেন।
আল্লাহ তাআলা কথিত আহলে হাদীস নামধারী এসব ভ্রান্তদের চক্রান্ত থেকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের হিফাযত করুন। আমীন।
একটি মজার কথা
একই ব্যক্তি যখন কথিত আহলে হাদীস ভাইদের মাসআলার খেলাফ হন, তখন তিনি জঈফ ও অগ্রণযোগ্য সাব্যস্ত হয়ে যান, আবার উক্ত ব্যক্তিই যখন নিজেদের পক্ষের কোন মাসআলার দলীল হন, তখন তিনি কি করে গ্রহণযোগ্য হয়ে যান সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।
প্রথমে প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসটির সনদটির দিকে আমরা একটু দৃষ্টি বুলিয়ে নেইঃ
مؤمل عن سفيان عن عاصم بن كليب عن ابيه عن وائل بن حجر
অনুবাদ-মুআম্মাল সুফিয়ান ছাওরী রাহ থেকে, তিনি আসেম ইবনে কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন।
এবার কথিত আহলে হাদীস ভাইদের কয়েকটি ধুর্ততা লক্ষ্য করি।
ধুর্ততা নং-১
সহীহ ইবনে খুজাইমায় বর্ণিত হাদীসটির সূত্রে মুআম্মাল হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, সুফিয়ান সওরী রহঃ থেকে, আর সুফিয়ান সওরী রহঃ আসেম বিন কুলাইব থেকে বর্ণনা করেছেন।
আর এ সূত্রটিকে কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা সহীহ সনদ বলে প্রচার করছেন।
অথচ একই ধরণের সনদ তথা সুফিয়ান সওরী রহঃ আসেম বিন কুলাইব থেকে বর্ণনা সম্বলিত রফয়ে ইয়াদাইন রুকুতে গমণ ও উঠার সময় ছেড়ে দেয়ার বর্ণনা যখন আমরা আবু দাউদ, তিরমিজী ও নাসায়ী থেকে পেশ করি। তখন তারা বলে এ সনদ দুর্বল। কারণ সুফিয়ান সওরী রহঃ নাকি মুদাল্লিস। আর তিনি “আন” শব্দ দিয়ে বর্ণনা করেছেন, তাই হাদীসটি দুর্বল।
অথচ সহীহ ইবনে খুজাইমার মাঝে সেই সুফিয়ান সওরী রহঃ যখন “আন” শব্দের মাধ্যমে আসেম বিন কুলাইব থেকে বর্ণনা করছেন তখন এ হাদীস তাদের গলার মালা হয়ে গেল। এখন কোথায় গেল “আন” বললে জঈফ হয়, বা সুফিয়ান সওরী রহঃ মুদাল্লিস সম্বলিত বক্তব্য?
ধুর্ততা নং-২
রুকুতে গমণ ও উঠার সময় রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দেয়ার তিরমিজী, আবু দাউদ ও নাসায়ীর হাদীসটিকে তারা পরিত্যাজ্য আরেকটি কারণে বলে থাকে, সেটি হল, উক্ত হাদীসটির সনদে আসেম বিন কুলাইব “মুনফারিদ” তথা একাকী বর্ণনাকারী। আর আসেম বিন কুলাইব যখন মুনফারিদ হন, তখন তিনি দলীলযোগ্য হন না।
কিন্তু মজার বিষয় হল, সহীহ ইবনে খুজাইমায় বর্ণিত উক্ত সনদটিতেও আসেম বিন কুলাইব মুনফারিদ। এরকম বর্ণনা ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে আর কারো সূত্রে নেই। তাহলে তিরমিজী, নাসায়ী ও আবু দাউদের রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দেয়া সম্বলিত হাদীস আসেম বিন কুলাইব মুনফারিদ হওয়ার কারণে দলীলযোগ্য না থাকলে সহীহ ইবনে খুজাইমাতে আসেম বিন কুলাইবন মুনফারিদ হওয়া সত্বেও দলীলযোগ্য হয়ে গেলেন কিভাবে? বড়ই আশ্চর্য ভাইদের মানসিকতা!
ধুর্ততা নং-৩
সহীহ ইবনে খুজাইমায় বর্ণিত উক্ত হাদীসটির পরেই বর্ণিত হয়েছে কাছাকাছি সূত্রে আরেকটি হাদীস। সেটি হল,
عَاصِمُ بْنُ كُلَيْبٍ الْجَرْمِيُّ، حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّ وَائِلَ بْنَ حُجْرٍ أَخْبَرَهُ قَالَ: قُلْتُ: ” لَأَنْظُرَنَّ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ يُصَلِّي قَالَ: فَنَظَرْتُ إِلَيْهِ، قَامَ فَكَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى حَاذَتَا أُذُنَيْهِ،
আসেম বিন কুলাইব তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ বর্ণনা করেন, ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাঃ দেখছিলাম তিনি কিভাবে নামায আদায় করেন, তখন আমি দেখলাম, তিনি দাঁড়ালেন, তারপর তাকবীর দিলেন, তারপর উভয় হাত উঠালেন কানের লতি পর্যন্ত। {সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৮০}
আসেম বিন কুলাইব, তার পিতা, তিনি হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ এর সূত্রে প্রশ্নে বর্ণিত যে হাদীসটি উল্লেখ করা হল, সেটির নং হল, ৪৭৯, আর একই সূত্র তথা কুলাইব তার পিতা, পিতা হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাঃ নামাযে কান পর্যন্ত হাত উঠাতেন।
অথচ কথিত আহলে হাদীসরা মহিলাদের মত কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠায়। কান পর্যন্ত হাত উঠায় না। এ হাদীসটির মুখালাফাত করে থাকে। এক সূত্রে বর্ণিত হাদীসকে গলার মালা বানানো, আরেক সূত্রে বর্ণিত হাদীসকে বাদ দিয়ে দেয়ার নাম কি সহীহ হাদীসের উপর আমল না মনের পূজা?
ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস না বললেও উক্ত হাদীস কথিত আহলে হাদীসদের দলীল হতে পারে না। কারণ ২টি। যথা-
১ম কারণঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈল মুনফারিদ
আসেম বিন কুলাইব, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে। এ সূত্রের মাধ্যমে রাসূল সাঃ এর নামায সংক্রান্ত একাধিক সূত্র এসেছে।
কয়েকটি সূত্র উল্লেখ করছি-
১
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْوَلِيدِ، حَدَّثَنِي سُفْيَانُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ
আব্দুল্লাহ বিন ওয়ালীদ, তিনি সুফিয়ান থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৭১}
২
حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ،
শারীক বর্ণনা করেন আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৬৮}
৩
حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ
আব্দুর রাজ্জাক তিনি সুফিয়ান থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৫৮}
৪
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ،
আব্দুল্লাহ বিন ইদরীস আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৯১২}
৫
حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ،
বিশর বিন মুফাদ্দাল আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭২৬}
৬
عَنْ مُوسَى بْنِ أَبِي عَائِشَةَ عَنْ عَاصِم بْنِ كُلَيْبٍ، عَن أَبيهِ، عَن وَائِلِ بْنِ حُجْر، رَضِي اللَّهُ عَنْهُ،
মুসা বিন আবী আয়শা থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪৪৮৯}
৭
قُتَيْبَةُ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ،
কুতাইবা আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-১২৬৩}
৮
ابْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ
ইবনে ফুযাইল আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৭৮}
৯
شُعْبَةُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ
শুবা আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৭৮}
১০
عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ
আবু ইসহাক আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৭০৫}
মাত্র ১০টি সূত্র উল্লেখ করলাম। এরকম আরো অসংখ্য সূত্রে উক্ত বর্ণনাটি এসেছে। কিন্তু কোথাও বুকের উপর হাত বাঁধার কথা উল্লেখ করা হয়নি। একমাত্র মুআম্মাল বিন ইসমাঈলের সূত্রে এসেছে বুকের উপর কথাটি।
তাই তিনি বুকের উপর হাত বাঁধা বলার ক্ষেত্রে মুনফারিদ। আর সমস্ত জরাহ তাদীলের ইমামগণ একমত যে মুআম্মাল বিন ইসমাঈল প্রচুর ভুল করতেন। সুতরাং একথা সহজেই বুঝা যায় যে, উক্ত বর্ণনাটিতে বুকের উপর কথাটি তিনি হয়তো ভুলেই বলেছেন। নতুবা আর কারো সূত্রে একথা আসেনি কেন?
মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল রহঃ ভুল করে উক্ত বর্ণনাটি আনতে পারেন। দলীল মুহাদ্দিসীনে কেরামের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট-
১-
ইবনে সাদ রহঃ বলেন, তথা তিনি সিকা তবে প্রচুর ভুল করেন। {আততাবকাতুল কুবরা, বর্ণনা নং-১৬৫৬}
২-
মুহাম্মদ বিন হিব্বান রহঃ বলেন, তিনি প্রায় ভুল করতেন। {আসসিকাতুল লিইবনে হিব্বান, বর্ণনা নং-১৫৯১৫}
৩-
আল্লামা খতীব বাগদাদী রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর করতেন। {তারীখে বাগদাদ-৬}
৪-ইমাম আবু হাতেম রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করতেন। {আলজারহু ওয়াততাদীল, বর্ণনা নং-১৭০৯}
৫-
আল্লামা যাহাবী রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করতেন। {আলকাশশাফ, বর্ণনা নং-৫৭৪৭}
৬-
ইমাম আবূ জুরআ রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করতেন। {আলমুগনী ফিজ জুআফা, বর্ণনা নং-৬৫৪৭}
৭-
ইমাম দারা কুতনী রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করেন। {তাহযীবুত তাহযীব, বর্ণনা নং-৬৮}
২য় কারণঃ হাদীসটির বর্ণনাকারীই উক্ত হাদীসের বিপরীত আমল করেন
একথা সহজেই অনুমেয় যে, যিনি কোন কথা বর্ণনা করার পর উক্ত কথার বিপরীত কাজ করে থাকেন, তার কাছে তার বর্ণিত কথাটি আমলযোগ্য বা জরুরী নয় বলেই পরিস্কার বুঝা যায়।
আর সহীহ ইবনে খুজাইমার উক্ত হাদীসের সূত্রের একজন রাবী হলেন, হযরত সুফিয়ান সওরী রহঃ। আর খোদ তিনিই বুকের উপর হাত বাঁধার মতকে গ্রহণ করেননি। বরং তিনি নাভির নিচে হাত বাঁধতেন।
ইমাম নববী রহঃ শরহে মুসলিমে উল্লেখ করেছেন- وقال ابو حنيفة وسفيان واسحاق بن راهوية وابو اسحاق المروازى من اصحابنا يجعلهما تحت سرته তথা ইমাম আবু হানীফা রহঃ, সুফিয়ান সওরী রহঃ, ইসহাক বিন রাহুয়া রহঃ এবং আমাদের আসহাবদের মাঝে আবু ইসহাম মারওয়াজী রহঃ বলেন যে, উভয় হাতকে নাভির নিচে বাঁধতে হবে। {শরহে মুসলিম লিননববী-১/৭৩}
বর্ণনাকারী খোদ নিজেই যখন স্বীয় বর্ণনার খেলাফ আমল করেন, তখন উক্ত বর্ণনা আমলহীন তা স্পষ্টতই বুঝে আসে।
সুতরাং একথা পরিস্কার হয়ে গেল যে, আসলে বুকের উপর হাত বাঁধার কোন দলীলই নেই। যা কিছু কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা প্রচার করে বেড়ান, তা সবই তাদের নিজেদের তৈরীকৃত থিউরী অনুপাতেই ধোঁকাবাজী সাব্যস্ত হয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের কথিত আহলে হাদীসদের ফিতনা থেকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের হিফাযাত করুন। আমীন।
[ লোকবল ও পর্যাপ্ত উপকরণ কম থাকায় উত্তর দিতে দেরী হল, এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
http://jamiatulasad.com/?p=3111
তুমি এই কথাগুলোর কি সত্যতা যাচাই করেছো ভাই? এগুলা তুমি কোন আহলে হাদীসের শায়খের কাছে গিয়ে দেখাও তারা তোমাকে কি উত্তর দেয় তা জেনে নাও। কেননা তুমি জামিআতুল ফ্যাসাদেরটা দেখছো তাদের দলীল দেখনাই। আসলে তারা কি বলে তা তাদের কাছথেকে জেনে নাও সেটাই সব থেকে উত্তম।
তবে হ্যা এখানে একটু সমস্যা আছে...
"আমরা বিজ্ঞ মুজতাহিদের তাকলীদ করলে শিরক"
এসম্মন্ধ্যে জানতে নিচের লিংকে দেখ...
Click this link
ধরে নিলাম এই হাদীসের সনদ ই তুমি যে কপি পেস্ট করছ সেটাই তাই এদিকে গেলাম না।
এখন দেখ ইমাম বুখারী কি বলেছেন তার সহীতে...
এই হাদীসে ইমাম বুখারী "যিরাআ" শব্দ দারা পুরা একটা হাত কুনুই থেকে আংগুলের আগা পর্যন্ত বুঝাইছেন.
এক হাত মানে পুরা কুনুই থেকে আংগুলের আগা পর্যন্ত আর "যিরাআ" এর অর্থ ও তাই। দেখ...
এখন কেউ জদি সালাতে পুরা এক হাত কুনুই থেকে আংগুলের আগা পর্যন্ত দিয়ে অন্য হাত ধরে আর তার পরে জদি তার হাতকে নাভীর নিচে নিয়ে জেতে পারে তাহলে তো কোন আপত্তি নাই।
তুমি একদিন চেষ্টা করে দেখ যে এভাবে পুরা এক হাত কুনুই থেকে আংগুলের আগা পর্যন্ত দারা অন্য হাত ধরে নাভীর নিচে যাওয়া যায় কিনা?
যাইহোক, ইমাম বুখারী (রহ) তার তারীখ গ্রন্থে কি বলেছেন দেখ...
ইবনে খুজাইমার (রহ) কিতাবটা পেলে আরোও সত্যতা জাচাই করা জেত।
তোমার কাছে কি ইবনে খুজাইমা (রহ)এর কিতাবটি আছে? থাকলে বল?
তাই অনুরোধ করব জামিআতুল ফ্যাসাদ থেকে নিয়া আমার এখানে কোন কিছু কপিপেস্ট করার আগে নিজেই কিছুটা দলিল খোজাখুজি করে তার পরে কপি পেস্ট করো।
আর সেই মুফতি সাহেব "লুৎফর রহমান" ওনাকে অনেক বার দেখেছি ধরাশায়ী হতে ফেসবুকে। তাই তার ইবারত দেবার আগে চেক কইরো।
কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা কিভাবে বুঝবো??(!)
আল্লাহ আমাদের সঠিক পথ দেখান আমিন।
বুখারীতে বুকের উপর হাত বাঁধার কোন দলীল নেই!
Posted on April 10, 2014 by Admin
প্রশ্ন
Assalamu alaikum. I have an important question please. One of ahle hadith said that about a hadith of bukari who deals with the placing hands on salat,
كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُوْنَ أَنْ يَّضَعَ الرَّجُلُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى ذِرَاعِهِ الْيُسْرَى فِى الصَّلَوةِ، قَالَ أبو حَازِمٍ : لاَ أَعْلَمُ إِلاَّ يَنْمِىْ ذَالِكَ إِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ، رواه البخارىُّ-
hafez ibne hajar asqalani said in his fathul bari (2/124) and bulgulu maram (20) that this is hadith of the proof of placing hands in chest. and allama aini also in his umdatul qari (5/278) said similar.
Are these claims true ? Please reply soon.
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
এ হাদীস বুকের উপর হাত বাঁধার দলিল হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া কেউ বলতে পারে না। ইমাম বুখারী রহঃ যে শিরোনামের অধীনে হাদীসটি এনেছেন তা হল- باب وضع اليمنى على اليسرى তথা ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা অনুচ্ছেদ।
তারপর তিনি হাদীস এনেছেন-
عن سهل بن سعد قال : كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل اليد اليمنى على ذراعه اليسرى في الصلاة . قال أبو حازم لاأعلمه إلا ينمي ذلك إلى النبي صلى الله عليه و سلم . قال إسماعيل ينمى ذلك ولم يقل ينمي
সাহাল বিন সাদ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকদের নির্দেশ দেওয়া হত যে, নামাযে প্রত্যেক ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে। আবূ হাযিম রহঃ বলেন, সাহল হাদীসটি নবীজী সাঃ থেকে বর্ণনা করতেন বলেই জানি। ইসমাইল রহঃ বলেন, এ হাদীসটি নবীজী সাঃ থেকেই বর্ণনা করা হত। তবে তিনি এরূপ বলেননি যে, সাহাল নবীজী সাঃ থেকে বর্ণনা করতেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭০৭}
এবার বলুন! এ হাদীসের কোথায় বুকের উপর হাত বাঁধার কথা আছে? কোন দূরবর্তী বা অস্পষ্ট ইঙ্গিতও তো এখানে নেই। তাহলে এটি বুকের উপর হাত বাঁধার দলিল হল কি করে?
ইমাম বুখারী রহঃ তো স্পষ্টভাবে এটাকে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখার দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। স্পষ্টতার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত বুখারী শরীফের অনুবাদটি দেখতে পারেন। {বুখারী শরীফ-২/১০২,ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদীস নং-৭০৪}
আসলে কথিত আহলে হাদীস ভাইদের দাবি অনুপাতে সহীহ কোন হাদীস বুকের উপর হাত বাঁধার ক্ষেত্রে পাচ্ছেন না। তাই অহেতুক চাতুরী ও ধোঁকাবাজীর আশ্রয় নিতেও পিছপা হচ্ছেন না নামধারী আহলে হাদীস ভাইয়েরা।
ذراع [ যিরা] শব্দ নিয়ে ধুম্রজাল
ইসলামী ফিক্বহ এবং আরবী অভিধান সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে বা ইচ্ছেকৃত ধোঁকাবাজীর আশ্রয় নিয়ে এ শব্দ দিয়ে বুকের উপর হাত বাঁধা প্রমাণের ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়ে থাকে।
বলা হয় যে, “যিরা শব্দের অর্থ নাকি কনুই। ডান হাতকে বাম হাতের কনুইয়ের উপর রাখলে নাকি হাত বুকের উপর চলে যায়। আর হাদীসে যেহেতু যিরা শব্দ এসেছে। আর যিরা মানে কনুই। তাই বুকের উপর হাত বাঁধা জরুরী।”
হাস্যকর দলীল। যে কেউ নিজেই পরীক্ষা করে নিতে পারেন। যদি ওদের কথা মানাও হয় যে, “যিরা” শব্দের অর্থ কনুই। তাহলে ডান হাতকে বাম হাতের কনুইয়ের উপর রেখে হাত ছেড়ে দেখুন হাত কোথায় যায়? সুনিশ্চিতভাবে হাতটি যাবে নাভির উপর। বুকের উপরে থাকার প্রশ্নই উঠে না। হ্যা, বুকের উপর যাবে, যদি ডান হাতকে কনুয়ে না রেখে বাম হাতের কাঁধের কাছে ধরা হয়। তাহলে তারা একেতো “যিরা” শব্দের গলদ অনুবাদ করছে। আবার বুকের উপর কথা অনুল্লেখ থাকা সত্বেও হাদীসের শব্দের মাঝে বাড়িয়ে নাভির উপর রেখে বুকের উপর হাত রাখছে। তাহলে তাদের দলীল দেয়া হাদীস মানছে? না নিজের মনের খাহেশাতের পূজা করছে?
এবার দেখে নেই আসলে “যিরা” শব্দের অর্থ কি?
১- প্রসিদ্ধ আরবী লুগাত “লিসানুল আরব” গ্রন্থে লেখা হয়েছে- ذرع: الذِّراعُ: مَا بَيْنَ طرَف المِرْفق إِلى طرَفِ الإِصْبَع الوُسْطى، তথা যারউন ও যিরা বলা হয়, কনুই থেকে নিয়ে মধ্যমা আঙ্গুল পর্যন্ত অংশকে। {লিসানুল আরব-যাল অধ্যায়}
২- একই বক্তব্য উদ্ধৃত আলকামূসুল মুহীত গ্রন্থের যাল অধ্যায়ে- الذِّراعُ، بالكسر: من طَرَفِ المِرْفَقِ إلى طَرَفِ الإِصْبَعِ الوُسْطَى،
একই বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে আলকামূসুল ফিক্বহ নামক গ্রন্থের যাল অধ্যায়ে। الذراع: اليد من كل حيوان، لكنها من الانسان من طرف المرفق إلى طرف الاصبع الوسطى.
৩- একই অর্থ লেখা হয়েছে আলমুহকাম ওয়ালমুহীতুল আজম নামক লুগাত গ্রন্থে।
সমস্ত অভিধানগুলোতে একই অর্থ লিখিত হয়েছে।
তাহলে আঙ্গুলের মাথা থেকে নিয়ে কনুই পর্যন্ত হল “যিরা”। তাহলে নামধারী আহলে হাদীস ভাইয়েরা “যিরা” শব্দ দিয়ে শুধু কনুই উদ্দেশ্য নিচ্ছেন কি বুঝে? এ হাদীস দিয়েতো ডান হাত বাম হাতের মধ্যমা আঙ্গুল ধরাও প্রমাণিত হচ্ছে। হাদীসের এ ব্যাখ্যা না নিয়ে কনুই ধরার ব্যাখ্যাটি নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করছেন কেন? এখন থেকে হাদীসটির “যিরা” শব্দের অর্থ অনুপাতে বাম হাতের মধ্যমা আঙ্গুলের মাথা ধরে নামায আদায় করতে বলুন তাদের।
উপরোল্লিখিত অভিধানিক অর্থ অনুপাতে আমরা বুঝতে পারলাম যে, “যিরা” শব্দটি ব্যবহৃত হয়, হাতের কনুই থেকে নিয়ে মধ্যমা আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত।
এবার সর্বজনবিদিত একটি সহীহ হাদীসের দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে নেই-
أَنَّ وَائِلَ بْنَ حُجْرٍ الْحَضْرَمِيَّ، أخْبَرَهُ قَالَ: قُلْتُ: لَأَنْظُرَنَّ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَيْفَ يُصَلِّي؟ قَالَ: فَنَظَرْتُ إِلَيْهِ قَامَ فَكَبَّرَ، وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى حَاذَتَا أُذُنَيْهِ، ثُمَّ وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى ظَهْرِ كَفِّهِ الْيُسْرَى، وَالرُّسْغِ وَالسَّاعِدِ،
হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ বলেন, আমি একদা দেখতে লাগলাম রাসূল সাঃ কিভাবে নামায পড়েন? তিনি বলেন, আমি দেখলাম, রাসূল সাঃ দাঁড়ালেন, তারপর তাকবীর বললেন। হাত উঠালেন কানের লতি বরাবর। তারপর ডান হাতকে বাম হাতের তালুর উল্টো পিঠে, কব্জি এবং বাহুতে রাখলেন। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৭০, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৩৯৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭২৭, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৮০, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৮০}
হাদীসটির ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনে কেরামের মন্তব্য
১- ইমাম নববী রহঃ বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। {আলমাজমূ-৩/৩১২}
২- ইবনে হিব্বান রহঃ তার সহীহ গ্রন্থে তা এনেছেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৮০}
৩- ইমাম আবু দাউদ রহঃ সুনানে এ হাদীস এনে চুপ রয়েছেন, তিনি যে হাদীসে চুপ থাকেন, তা তার মতে তা সহীহ। {হাদীস নং-৭২৭}
৪- ইবনুল মুলাক্কিন রহঃ বলেন, হাদীসটি সহীহ-হাসান। {তুহফাতুল মুহতাজ-১/৩৩৫}
৫- আল্লামা ইবনে কাসীর রহঃ বলেন, হাদীসটির সনদ জায়্যিদ। {আলআহকামুল কাবীর-২/৩৫৪}
৬- কথিত আহলে হাদীসদের কাছে মান্যবর বিন বাজ রহঃ বলেন, হাদীসটি সনদ সহীহগ। {মাজমুআ ফাতাওয়া বিন বাজ-১১/১৩৩}
৭- কথিত আহলে হাদীসদের কাছে মান্যবর আলবানী রহঃ বলেন, হাদীসটি সহীহ মুসলিমের হাদীসের মত। {ইরওয়াউল গালীল-২/৬৮}
উল্লেখিত হাদীসটিতে ডান হাতকে বাম হাতের কব্জির উপর রাখার বিষয়টি পরিস্কার করার জন্য তিনটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। একটি হল,
কাফফুন, আরেকটি রুসগুন। আরেকটি হল, সায়িদ। তিনটি শব্দই স্পষ্টাক্ষরে কব্জিকে বুঝাচ্ছে।
“কাফফুন” মানে হল হাতের তালু। বা তালুর উল্টো পিঠ।
রুসুগুন মানে সরাসরি কব্জি। আর “সায়িদ” মানে হল বাহু। তাহলে এক কব্জি বুঝাতে উক্ত সহীহ হাদীসটিতে তিনি শব্দ ব্যবহার করা হল।
এবার প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসটির দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক।
প্রশ্নের হাদীসটিতে বলা হয়েছে ডান হাতকে রাখা হতো বাম হাতের “যিরা” এর উপর।
সেই যিরা মানে কি? “যিরা” তো হাতের মধ্যমা আঙ্গুলের ডগা থেকে একদম কনুই পর্যন্ত পুরোটাই “যিরা”। আমভাবে সেখানে হাত ধরার পদ্ধতি বলা হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে স্থান বলা হয়নি। তাহলে কি যেখানে ইচ্ছে সেখানে ধরলেই হবে?
মুসনাদে আহমদের হাদীসটি এসে সেই আমটাকে খাস করে দিল। তিনটি ভিন্ন শব্দ কিন্তু অর্থ একই এসে পরিস্কার জানাচ্ছে যে, বুখারীর “যিরা” এর দ্বারা উদ্দেশ্য হাতের কব্জি। কনুই নয়। কব্জির মাঝে “যিরা” শব্দ পরিপূর্ণভাবেই ফিট খায়। কারণ কব্জি যিরারই অন্তর্ভূক্ত থাকে।
তাহলে হাত ধরার স্থল কব্জি ধরা হলে, উভয় হাদীসের উপর আমল হচ্ছে। কিন্তু যিরা শব্দের অর্থ শুধু কনুই নিলে, একটি হাদীসের আংশিক অর্থ মানা হচ্ছে। আর কব্জি নিলে মানা হচ্ছে দুটি হাদীস। এবং হাদীসটির অর্থও হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ।
দুই হাদীস পূর্ণাঙ্গ মানার নাম হাদীসের অনুসরণ নয় বলে ওরা, অথচ একটি সহীহ হাদীসকে সম্পূর্ণ অস্বিকার করে, আরেকটিরও আংশিক মানার নাম দিচ্ছে সহীহ হাদীস অনুসরণ। এরকম অবাক করা দল আরো আছে কি না? আমাদের জানা নেই।
আর যিরা শব্দের অর্থ যদি হাদীস দিয়ে, এবং বিজ্ঞ ব্যক্তিদের ব্যাখ্যার আলোকে বুঝার চেয়ে শুধু শাব্দিক অর্থ দ্বারাই নিতে হয়, তাহলে “যিরা” শব্দের অর্থ শুধুই কনুই নেয়া চাতুরী ছাড়া আর কিছু নয়। বরং যিরা শব্দের অর্থ হাতের আঙ্গুলের মাথাও। তাই নামধারী আহলে হাদীসদের দাবি অনুপাতে ডান হাত দিয়ে বাম হাতের যিরা তথা আঙ্গুলের মাথা ধরে হাত বাঁধলেও বুখারীর সহীহ হাদীসের উপর আমল হয়ে যায়!? কিন্তু তারা সহীহ হাদীসটির উপর এভাবে আমল করছে না কেন?
দুই মহামনীষীর দিকে মিথ্যার নিসবত
উমদাতুল কারী সংকলক আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহঃ এবং ফাতহুল বারী সংকলক আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ উভয়জন বুখারীর ব্যাখ্যাকার। আলোচনা প্রসঙ্গে বুখারীর উক্ত আলোচনার শুরুতেই উভয়ে উল্লেখ করেছেন যে, হাতটা বাঁধবে কোথায়?
এ প্রসঙ্গে উভয়েই প্রথমে যে সহীহ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন, তাহলো উপরে উল্লেখিত মুসনাদে আহমদের হাদীসটি। যাতে বলা হয়েছে, হাত বাঁধবে বাম হাতের কব্জির উপর। তারপর প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা হয়েছে সহীহ ইবনে হিব্বানের বুকের উপর হাত বাঁধার মুনকার বর্ণনাটি।
কিন্তু তারা উভয়ে উমদাতুল কারী বা ফাতহুল বারীর কোথাও একথা বলেননি যে, বুখারীর হাদীসটি দ্বারা বুকের উপর হাত বাঁধা প্রমাণিত হয়। এটি তাদের প্রতি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। প্রসঙ্গক্রমে অন্য কিতাবের হাদীসের উদ্ধৃত আনা, আর বুখারীর উক্ত হাদীসটি দ্বারা একটি বস্তু প্রমাণিত হওয়ার দাবি করা কখনোই এক বস্তু নয়। একথা সাধারণ পাঠকমাত্রই জানেন।
কিন্তু সাধারণ মুসলমানদের ধোঁকা দেয়ার জন্য কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা এ ধোঁকার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। চাতুরী করে বুখারীর বর্ণনা দিয়ে বুকের উপর হাত বাঁধার কথা প্রমাণের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ এর নাম গন্ধও নেই।
আমরা চ্যালেঞ্জের সাথে বলতে পারি, ফাতহুল বারী বা উমদাতুল কারীর কোথাও বুখারীর হাদীসকে বুকের উপর হাত বাঁধার দলীল বলা হয়নি। সেই সাথে উক্ত দুই কিতাবের কোথাও উক্ত দুই সংকলকের মতে বুকের উপর হাত বাঁধাকে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত সুন্নত বলা হয়নি।
যদি প্রমাণ থাকে, তাহলে ওদের বলুন পেশ করতে। {দ্রষ্টব্য- ফাতহুল বারী-বর্ণনা নং-৭৪০, উমদাতুল কারী, বর্ণনা নং-১২৮}
যদি বলা হয়েও থাকে, তবু তা কথিত আহলে হাদীসদের বিশ্বাস ও মতবাদ অনুযায়ী তাদের দলীল হতে পারে না। কারণ তাদের মতে দলীল হওয়ার যোগ্য কেবল কুরআন ও সহীহ হাদীস। কোন উম্মতীর কথা বা ব্যাখ্যা মানা জায়েজ নয়। তাহলে নামাযের মত ইবাদতের বিষয়ে কেন আল্লামা আইনী বা ইবনে হাজারের মত উম্মতীর কথার আলোকে বিধান সাব্যস্ত করা হবে? সরাসরি কুরআন ও সহীহ হাদীস কোথায়?
মুখে এক কথা বলা আর কাজে ভিন্নতা প্রদর্শন আহলে হাদীসের কাজ নয় মিথ্যাবাদীর কাজ।
আল্লাহ তাআলা বিভেদ সৃষ্টিকারী এসব ফিরক্বা থেকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের দ্বীন ও ঈমান হিফাযত করুন। আমীন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
http://jamiatulasad.com/?p=3071
একেক জন একেক রকম দাবী করেন।
এই সব রেফারেন্স নিয়ে পড়তে হবে।
আমি অনলাইনে ইসলামিক শিক্ষা নেয়া বাদ দিয়া দেবো।
আর কিছু করার নাই।
আমি পুরাই মাথা গোল করা অবস্থা।
কি যে করি ..
রাখেন অনলাইন থেকে না নিয়ে ডাইরেক্ট কিতাব কিনবো।
আমার কাছে কোন ইবনে খুজাইমা (রহ)এর কিতাবটি নাই।
বোখারি শরিফ ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে কিনবো।
এদিক ওদিক টাকা খরচ না করে হাদিস এর কিতাব কিনবো।
ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুব সাব্বিত ক্বালবি আলা দ্বিনীক।
[তুমি একদিন চেষ্টা করে দেখ যে এভাবে পুরা এক হাত কুনুই থেকে আংগুলের আগা পর্যন্ত দারা অন্য হাত ধরে নাভীর নিচে যাওয়া যায় কিনা? ]
একই অর্থ তারা করেছে ঠিকই কিন্তু একটু ঘুড়ায় বলছে....তারা বলতেছে যে কুনুই থেকে আংগুল পুরাটাই যিরাআ। আর এর দারা তরা বুজাচ্ছে যে আপনি কুনুই থেকে আংগুল যেখানেই ধরেন সেটাই যিরাআ। এদের এটাই মানুষকে সুক্ষভাবে বিভ্রান্ত করার চালাকি।
যাইহোক, পুরা এক হাত বলতে কুনুই থেকে আংগুল পুরাটাই বুঝায় আর পুরা এক হাত দিয়ে অন্য হাত ধরে দেখ তা নাভীর নিচে যাবে না।
তবে ওদের বুদ্ধিতে যিরাআ এর অর্থ ধরলে তুমি আংগুল ধরেও নাভীর নিচে জেত পার।
আমি তোমাকে স্পস্ট হাদীসের স্কৃণ শর্ট দিছি তোমার ভাল লাগলে নাও না লাগলে আমি দায় থেকে মুক্ত।
তবে হ্যা আবার বলছি এই জামিআতুল ফ্যাসাাদ থেকে কোন কিছু কপি পেস্ট আমাকে করার আগে তুমি নিজেই চেক করে নিও।
জাজাকাল্লাহু খায়রান।
http://www.mediafire.com/view/93tjwak1y1bh170/imam_bukkhari.pdf
নবীজীর হাদীস ও ইমামগণের মতভেদ। শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা (অনুবাদ)
http://www.mediafire.com/view/az5p54vg8pm9315/নবীজীর_হাদীস_ও_ইমামগণের_মতভেদ__final_-_Copy.pdf
"আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমুহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার" (সুরা আল ইমরান/১০৩)
"তোমারা তাদের মত হয়োনা , যাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমান (কোরআন) আসার পরও ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে এবং কলহ কোন্দলে লিপ্ত হয়েছে"
(সূরা আল ইমরান/১০৫)
যারা তাদের দ্বীনকে (অর্থাৎ ইসলামকে) খন্ড – বিখন্ড করেছে এবং নিজেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের সাথে তোমার (মুহাম্মদ সাঃ এর) কোন সম্পর্ক নেই। (সূরা আন’আম/১৫৯)
".....তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কোরআনেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলির জন্যে...." (সুরা হাজ্জ/৭৮)
ভালো লাগ্লো...
মন্তব্য করতে লগইন করুন