নামাযে প্রচলিত ভুল-ত্রুটি।
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:৫৮:১৪ সকাল
ভূমিকা: সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত ছালাত আদায় করার ক্ষেত্রে মুমিন সর্বাধিক সতর্ক হবে। যথাসম্ভব নির্ভূলভাবে ছালাত সম্পাদন করতে সচেষ্ট হবে। ছালাতের ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত এবং ছালাতের পূর্বাপর বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিশুদ্ধভাবে পালন করবে। তার ছালাত নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছালাতের সাথে মিলছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নিবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা কি? বর্তমানে মুসলমানদের ছালাতের অবস্থা দেখলে মনে হয়না যে তারা ছালাতের মত শ্রেষ্ঠ ইবাদতটি আদায় করছেন না কি করছেন? দেখা যায় অধিকাংশ লোকের ছালাত বিভিন্ন ধরণের ভুলে ভরা।
আমরা নিম্নে এমন কিছু ভুল-ত্রুটির উল্লেখ করছি যেগুলো মুছল্লীদের মধ্যে দেখা যায়; অথচ তা থেকে সতর্ক থাকা সকলের জন্য জরুরী।
১) তাড়াহুড়া করে ওযু করাঃ
নামায ধরার জন্য তাড়াহুড়া করে ওযু করার কারণে অনেক সময় কোন কোন স্থানে পানি পৌঁছে না। শুকনা রয়ে যায় বিভিন্ন অঙ্গের কোন কোন স্থান। অথচ কোন স্থান শুকনা থেকে গেলে সেই ওযু দিয়ে ছালাত বিশুদ্ধ হবে না।
২) পেশাব ও পায়খানার চাপ রেখে ছালাত আদায় করাঃ
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لَا صَلَاةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ وَلَا هُوَ يُدَافِعُهُ الْأَخْبَثَانِ
“খাদ্য উপস্থিত হলে এবং দুটি নাপাক বস্তুর (পেশাব-পায়খানা) চাপ থাকলে ছালাত হবে না। (মুসলিম)
৩) দ্রুততার সাথে দৌড়িয়ে নামাযে শরীক হওয়াঃ
অনেকে ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরীমা পাওয়ার জন্য বা রুকু পাওয়ার জন্য দৌড়িয়ে বা দ্রুত হেঁটে ছালাতে শামীল হয়। অথচ এটা নিষিদ্ধ।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا تَأْتُوهَا تَسْعَوْنَ وَأْتُوهَا تَمْشُونَ عَلَيْكُمُ السَّكِينَةُ فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا
“যখন নামাযের ইকামত প্রদান করা হয় তখন তাড়াহুড়া করে নামাযের দিকে আসবে না। বরং ধীর-স্থীর এবং প্রশান্তির সাথে হেঁটে হেঁটে আগমণ করবে। অতঃপর নামাযের যতটুকু অংশ পাবে তা আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা (ইমামের সালামের পর) পূর্ণ করে নিবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
৪) জায়নামায পাক করার জন্য দুয়া পাঠ করাঃ
ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু … বলে জায়নামায পাক করার জন্য দুয়া পাঠ করা হয়। এটি একটি বিদআত। কেননা জায়নামায পবিত্র থাকলে দুয়া না পড়লেও ছালাত হবে। আর জায়নামায নাপাক থাকলে হাজার দুয়া পড়লেও তা পাক হবে না। তাছাড়া এঅবস্থায় দুয়া পাঠ করা নবীজীর ছালাতের পদ্ধতীতে প্রমাণিত নয়।
৫) ছালাত শুরুর সময় মুখে নিয়ত উচ্চারণ করাঃ
নাওয়াইতু আন… বলে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা আরেকটি বিদআত। কেননা এর পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ তো দূরের কথা কোন যঈফ হাদীছও পাওয়া যায় না। এ ভাবে নিয়ত না রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না ছাহাবায়ে কেরাম না তাবেঈন না তাবে-তাবেঈন না চার ইমামের কেহ করেছেন। এটা কোন বুযুর্গ ব্যক্তির তৈরী করা প্রথা। তার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং তা বর্জন করা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ফরয। নিয়ত শব্দের অর্থ-ইচ্ছা বা সঙ্কল্প করা। আর তা অন্তরে হয় মুখে নয়। সুতরাং কোন কিছু করার জন্য অন্তরে ইচ্ছা বা সঙ্কল্প করলেই সে কাজের নিয়ত হয়ে গেল। তা মুখে বলতে হবে না।
৬) নাভীর নীচে হাত বাঁধাঃ
এক্ষেত্রে আহমাদ ও আবু দাঊদ বর্ণিত হাদীছটি দলীল হিসেবে পেশ করা হয়।
আলী (রাঃ) বলেন, সুন্নাত হচ্ছে ছালাতে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে নাভীর নীচে রাখা। কিন্তু হাদীছটির সনদ দুর্বল, তাই উহা আমলযোগ্য নয়।
তার বিপরীতে ছহীহ হাদীছ হচ্ছে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর রাখা। (হাদীছটি ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) এর বরাতে আবু দাঊদে বর্ণিত হয়েছে।)
৭) সিজদার স্থানে দৃষ্টিপাত না করাঃ
আকাশের দিকে বা অন্য দিকে দৃষ্টিপাত করার ফলে ছালাতে ভুল হয়ে যায় এবং মনের মাঝে নানান কথার সৃষ্টি হয়। অথচ দৃষ্টি নত রাখা এবং সার্বক্ষণিক দৃষ্টি সিজদার স্থানে রাখার জন্য নির্দেশ রয়েছে। তবে তাশাহুদ অবস্থায় ডান হাতের তর্জনী খাড়া রেখে তা নাড়াতে হবে এবং তার প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“কি হয়েছে কিছু লোকের, তারা ছালাতরত অবস্থায় আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে? তারপর তিনি কঠোর শব্দ ব্যবহার করে বলেন, “তারা এথেকে বিরত হবে; অন্যথা তাদের দৃষ্টি শক্তি ছিনিয়ে নেয়া হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
ছালাত অবস্থায় ডানে-বামে দৃষ্টিপাতের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “এটা হচ্ছে বান্দার ছালাত থেকে কিছু অংশ শয়তানের ছিনিয়ে নেয়া।” (বুখারী)
৮) তাকবীর, কুরআন তেলাওয়াত ও ছালাতের অন্যান্য দুয়ার সময় ঠোঁট না নড়িয়ে শুধু মনে মনে বলাঃ
এটি একটি বহুল প্রচলিত ভুল। ইমাম নববী বলেন, ইমাম ছাড়া অন্য সবার জন্য সুন্নাত হচ্ছে সবকিছু চুপে চুপে পাঠ করা। চুপে চুপে বলার সর্বনিম্ন সীমা হচ্ছে নিজেকে শোনানো- যদি তার শ্রবণ শক্তি ঠিক থাকে এবং কথায় কোন জড়তা না থাকে। এ বিধান সকল ক্ষেত্রে ক্বিরাত পাঠ, তাকবীর, রুকু সিজদার তাসবীহ্ প্রভৃতি। তাছাড়া ঠোঁট না নাড়ালে তো তাকে পড়া বলা চলেনা। কারণ আরবীতে এমন অনেক অক্ষর আছে ঠোঁট না নাড়ালে যার উচ্চারণই হবে না।
৯) ছানা এবং আঊযুবিল্লাহ্ পাঠ না করে সরাসরি বিসমিল্লাহ্ পড়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করা।
ছানা ও আঊযুবিল্লাহ্ পাঠ করা মুস্তাহাব।
১০) সূরা ফাতিহা পাঠ না করাঃ
বিশেষ করে ইমামের পিছনে ছালাত আদায় করার সময় সূরা ফাতিহা অনেকে পড়ে না। অথচ সুরা ফতিহা ছাড়া ছালাত হয় না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি এমন ছালাত পড়ল যাতে সূরা ফাতিহা পড়ে নাই সে ছালাত ত্রুটিপূর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ তথা অসম্পূর্ণ। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) একদা ফজরের ছালাত শেষে মুছল্লীদের বললেন, তোমরা কি ইমামের পিছে পিছে কিছু পাঠ কর? আমরা বললাম, হাঁ, দ্রুত করে পড়ে নেই। তিনি বললেন, এরূপ করো না। তবে সূরা ফাতিহা পড়ে নিও। কেননা যে ব্যক্তি এ সূরা পড়বে না তার ছালাত হবে না। (আবু দাঊদ, তিরমিযী)
১১) ইমামের ওয়ালয্যওয়াল্লীন বলার পর কোন কোন মুছল্লী আমীন বলার পর আরো বাড়িয়ে বলে ওয়ালে ওয়ালি দাইয়্যা ওয়া লিল মুসলিমীন।
এটা সুন্নাত বহির্ভূত কাজ।
১২) দন্ডায়মান এবং বসাবস্থায় পিঠ সোজা না রাখাঃ
যেমন পিঠ কুঁজো করে রাখা বা ডানে-বামে হেলে থাকা। অনুরূপভাবে রুকু ও সিজদায় পিঠ সোজা না রাখা।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
যে ব্যক্তি রুকু-সিজদায় পিঠ সোজা করে না, আল্লাহ্ তার ছালাতের দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না। (ত্ববরানী ছহীহ সনদে)
তিনি আরো বলেন,
أَتِمُّوا الرُّكُوعَ وَالسُّجُودَ
“তোমরা রুকু ও সিজদা পরিপূর্ণরূপে আদায় কর। (বুখারী ও মুসলিম)
১৩) রুকু অবস্থায় প্রশান্তি ও ধীরস্থীরতা অবলম্বন না করাঃ
দেখা যায় অনেক মানুষ তাড়াহুড়া করে ছালাত আদায় করতে গিয়ে ভালভাবে রুকু-সিজদা করে না। রুকুর সময় পিঠ সেজা না করে মাথাটা একটু নীচু করে। মোরগের ঠোকর দেয়ার মত করে সিজদা করে। অথচ এভাবে ছালাত আদায়কারীকে হাদীছে নিকৃষ্ট ছালাত চোর বলা হয়েছে। আর তার ছালাতও বিশুদ্ধ হবে না।
যায়দ বিন ওয়াহাব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযায়ফা (রা) দেখলেন জনৈক ব্যক্তি অপূর্ণরূপে রুকু-সিজদা করছে। তিনি তাকে বললেন, তুমি তো ছালাত আদায় করো নি। তুমি যদি এ অবস্থায় মৃত্যু বরণ কর, তবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ্ যে ফিতরাত (বা বৈশিষ্ট বা ইসলাম) দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তুমি তা ভিন্ন অন্য ফিতরাতের উপর মৃত্যু বরণ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
আবু হুরায়রা (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি দেখলেন, এক ব্যক্তি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে (দ্রুত) ছালাত আদায় করল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, “তুমি ফিরে গিয়ে ছালাত আদায় কর। কেননা তুমি ছালাতই আদায় করো নি।” (বুখারী)
১৪) রুকু থেকে উঠার পর কোন শব্দ বাড়িয়ে বলাঃ
যেমন কেউ কেউ রাব্বানা লাকাল হামদু বলার পর ওয়াশ্ শুকরু শব্দ বাড়িয়ে বলে। এটা সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত নয়।
১৫) রফউল ইয়াদায়ন না করাঃ
অধিকাংশ মুছল্লী শুধুমাত্র তাকবীর তাহরীমা (ছালাত শুরুর সময় তাকবীর) বলার সময় রফউল ইয়াদায়ন বা হাত উত্তোলন করে থাকে; কিন্তু পরবর্তীতে রুকুর আগে ও পরে তা করে না। আবার অনেকে তাকবীর তাহরীমার সময়ও করে না। এটা সুন্নাত বিরোধী। কেননা ছহীহ্ বুখারী ও মুসলিমসহ বিভিন্ন গ্রন্থের একাধিক ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, উক্ত ক্ষেত্র সমূহে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাত উত্তোলন করেছেন।
আবদুল্লাহ্ বিন ওমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দেখেছি রাসূলুল্লাহ্ ছালাত পড়তে দাঁড়িয়ে দুহাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। রুকুর তাকবীর বলার সময় এমনটি করতেন এবং রুকু থেকে মাথা উঠাবার সময় এরূপ করতেন এবং বলতেন সামিআল্লাহু লিমান হামীদাহ্। (বুখারী হা নং/ ৬৯২)
সুতরাং মাযহাবের দোহাই দিয়ে এই সুন্নাতের প্রতি আমল না করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর আদর্শকে প্রত্যাখ্যান করারই নামান্তর।
১৬) ছালাতে সিজদা করার সময় সাতটি অঙ্গ পরিপূর্ণরূপে মাটিতে না রাখাঃ
আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করতে আদিষ্ট হয়েছেন। মুখমণ্ডল (নাক ও কপাল) দুহাত, দুহাঁটু, দুপা। (বুখারী)
কিছু লোক সিজদা করার সময় দুটি পা সামান্য একটু উঠিয়ে রাখে বা এক পা অন্যটির উপর রাখে। অনুরূপভাবে কেউ কেউ শুধু কপাল মাটিতে রাখে নাক রাখে না। এরূপ করা সুন্নাতের পরিপন্থী।
উল্লেখ্য যে, কেউ কেউ বলে থাকে সিজদা করার সময় আগে নাক রাখতে হবে তারপর কপাল রাখবে। আর সিজদা থেকে উঠার সময় আগে কপাল উঠাবে তারপর নাক। এরূপ খুঁটিনাটি পার্থক্য ইসলামে কোথাও নেই। এগুলো নিছক বাড়াবাড়ি।
১৭) দুসিজদার মধ্যে তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানোঃ
একাজ সুন্নাত থেকে প্রমাণিত নয়; বরং প্রমাণিত হচ্ছে, তাশাহ্হুদে বসে তাশাহ্হুদ পড়াবস্থায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তর্জনী আঙ্গুল নড়াতে হবে। আর এটাই হচ্ছে সুন্নাত।
১৮) তাশাহুদের সময় আঙ্গুল না নড়ানোঃ
অধিকাংশ মানুষ শুধুমাত্র আশহাদু আন লাইলাহা বলার সময় তর্জনী বা শাহাদত আঙ্গুল উঠায় এবং ইল্লাল্লাহু… বলার সময় আঙ্গুল নামিয়ে দেয়। এ ধরণের নিয়ম হাদীছে কোথাও বর্ণিত হয়নি। বরং ছহীহ্ হাদীছ অনুযায়ী নিয়ম হচ্ছে তাশাহ্হুদে বসে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উক্ত আঙ্গুল উঠিয়ে রাখতে হবে এবং নাড়াতে হবে।
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাম হাতের তালু বাম হাঁটুর উপর বিছিয়ে দিতেন, আর ডান হাতের সবগুলো অঙ্গুলী মুষ্টিবদ্ধ করে তর্জনী দ্বারা কিবলার দিকে ইঙ্গিত করতেন এবং সেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন।” (ছহীহ্ মুসলিম)
১৯) তাশাহ্হুদে বসে দরূদ পাঠ করার সময় [সাইয়্যেদেনা] শব্দ বৃদ্ধি করে পাঠ করাঃ
হাফেয ইবনু হাজার (রহ) বলেন, দুয়া যিকিরের ক্ষেত্রে হাদীছে প্রমাণিত শব্দাবলী উচ্চারণ করাই সুন্নাত সম্মত।
তাছাড়া কোন হাদীছ, ছাহাবী বা তাবেঈদের আমল থেকে এর কোন প্রমাণ নেই।
২০) তিন বা চার রাকাআত বিশিষ্ট ছালাতের শেষ তাশাহ্হুদে তাওর্য়ারুক না করাঃ
অধিকাংশ মুছল্লী সব ধরণের তাশাহ্হুদে বসে ইফতেরাশ করে। (ইফতেরাশ হচ্ছে, ডান পা খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসা। আর তাওর্য়ারুক হচ্ছে, ডান পা খাড়া রেখে বাম পাকে ডান পায়ের নীচ দিয়ে সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে নিতম্বের উপর বসা।)
আবু হুমাইদ সায়েদী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দুরাকাতে বসতেন তখন বাম পায়ের উপর বসতেন, ডান পা খাড়া রাখতেন। আর যখন শেষ রাকাতে বসতেন তখন বাম পাকে (ডান পার নীচ দিয়ে) সামনের দিকে বাড়িয়ে দিতেন এবং ডান পা খাড়া করতেন তারপর নিতম্বের উপর বসতেন। (ছহীহ্ বুখারী)
২১) দুদিকে সালাম ফেরানোর সময় মাথা ঝাঁকানোঃ
লক্ষ্য করা যায় কতিপয় মুছল্লী সালাম ফেরানোর সময় মাথাটা একটু উপর দিকে উঠয়ে আবার নীচে নামায়। উভয় দিকে এরূপ করে। অথচ এটা সুন্নাতে রাসূলের বিপরীত কাজ।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডান দিকে সালাম ফেরানোর সময় বলতেন, আস্ সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্। সে সময় তাঁর ডান গালের শুভ্র অংশ পিছন থেকে দেখা যেত। আর বাম দিকে সালাম ফেরানোর সময় বলতেন, আস্ সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্। সে সময় তাঁর বাম গালের শুভ্র অংশ দেখা যেত। (তিরমিযী, নাসাঈ, আবু দাউদ)
২২) সালাম ফেরানোর পর দু পাশের মুছল্লীকে সালাম দিয়ে মুসাফাহা করাঃ
এব্যাপারে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহ)কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ছালাত শেষ করে পাশের মুছল্লীর সাথে মুছাফাহা করা সুন্নাত নয়; বরং এটি একটি একটি বিদআত। (মাজমু ফাতাওয়া ২৩/২৩৯)
২৩) ছালাত শেষে জামাতবদ্ধভাবে দুআ (মুনাজাত) করাঃ
ফরয ছালাত শেষ হলেই ইমাম মুক্তাদি মিলে দলবদ্ধ হয়ে মুনাজাত একটি বহুল প্রচলিত কাজ। মুসলমানগণ ব্যাপকভাবে এভাবে দুআ করে আসছে। অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এব্যাপারে কোন হাদীছ পাওয়া যায় না। ছাহাবী তাবেঈদের যুগেও এর ছহীহ্ সনদ ভিত্তিক কোন প্রমাণ মিলেনা। এমনকি নবীজি থেকে ছহীহ্ তো দূরের কথা যঈফ বা মওযু বর্ণনাও পাওয়া যায় না। তাই একাজ সম্পূর্ণ সুন্নাত বিরোধী বা বিদআত। যা পরিত্যাগ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে মুসলামানগণ এই বিদআতটিকে একটি সুন্নাত তো বটেই বরং ফরযের মতই মনে করে। যার কারণে আপনি দেখবেন, যদি আপনি ফরয ছালাত শেষে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পঠিতব্য ছহীহ্ হাদীছে প্রমাণিত দুআ যিকিরে মাশগুল হন, ওদের সাথে বিদআতী মুনাজাতে শরীক না হন- তবে অন্যান্য মুছল্লীরা আপনার প্রতি বাঁকা নজরে দেখবে, যেন আপনি মস্তবড় একটি অপরাধ করছেন।! আর ইমাম সাহেব যদি কখনো এই মুনাজাত ছেড়ে দেয় তবে অনেক ক্ষেত্রে তার চাকুরী নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যাবে।
২৪) পূর্বের কাতার পূর্ণ না করেই নতুন কাতার শুরু করাঃ
মসজিদের প্রশস্থতা দীর্ঘ হয়ার কারণে বা তাড়াহুড়া করে রাকাআত ধরার জন্য অনেক মানুষ অলসতা করে আগের কাতার পূর্ণ না করেই নতুন একটি কাতার শুরু করে দেয়। ফলে পরবর্তীরা তাদের সাথে এসে শরীক হয় এবং অনেক সময় আগের কাতারের ডান দিক বা বাম দিক অপূর্ণই রয়ে যায়। অথচ এরূপ করা কোন ক্রমেই বৈধ নয়। কেননা,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
(مَنْ وَصَلَ صَفاًّ وَصَلَهُ اللهُ وَمَنْ قَطَعَ صَفاًّ قَطَعَهُ اللهُ)
“যে ব্যক্তি কাতার মিলিত করে আল্লাহ্ তার সথে সম্পর্ক জুড়ে দেন, আর যে ব্যক্তি কাতার বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ্ তার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেন।” (নাসাঈ, ইবনু খুযায়মা ও হাকেম।)
২৫) সরাসরি ইমামের সাথে ছালাতে শরীক না হয়ে অপেক্ষা করাঃ
অর্থাৎ- ইমাম সিজদায় থাকলে বাসার অপেক্ষা করা বা বসা অবস্থায় থাকলে দাঁড়ানোর অপেক্ষা করবে। তিনি যখন দাঁড়াবেন বা রুকুতে যাবেন তখন তার সাথে ছালাতে শামিল হবে। এটা সুন্নাত বহির্ভূত কাজ; বরং ইমাম যে অবস্থাতেই থাকুন তার সাথে ছালাতে শরীক হতে হবে।
মুয়ায বিন জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الصَّلاةَ وَالْإِمَامُ عَلَى حَالٍ فَلْيَصْنَعْ كَمَا يَصْنَعُ الْإِمَامُ
“তোমাদের কেউ যদি ছালাতে উপস্থিত হয়ে ইমামকে কোন অবস্থায় পায় তবে সেভাবেই তার সাথে ছালাতে শরীক হবে ইমাম যেভাবে থাকেন।” (তিরমিযী)
২৬) ইমামের সালাম শেষ হওয়ার আগেই বা সালাম ফেরানো শুরু করলেই মাসবূকের দাঁড়িয়ে পড়াঃ
(মাসবুক বলা হয় সেই মুছল্লীকে যে পরে এসে ইমামের সাথে জামাতে শরীক হয়।)
শায়খ আবদুর রহমান সাদী (রহঃ) বলেন, এরূপ করা জায়েয নয়। ইমামের দ্বিতীয় সালাম শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করা জরুরী। কেউ যদি ইমামের সালাম পূর্ণ হওয়ার আগেই দাঁড়িয়ে পড়ে তবে তার ছলাত নফল হয়ে যাবে। ফরয ছালাত তাকে পূণরায় পড়তে হবে। অবশ্য যদি আবার বসে পড়ে তারপর দাঁড়ায় তবে কোন অসুবিধা নেই।
২৭) ইমামের আগ বেড়ে কোন কাজ করাঃ
যেমন ইমামের আগেই রুকূ, সিজদা করা বা দাঁড়িয়ে পড়া ইত্যাদি। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে অনেকে এরূপ করে ফেলে। অথচ উচিত ছিল ধীরস্থিরভাবে ইমামের পরে পরে এসমস্ত কাজ করা। কেননা এক্ষেত্রে হাদীছে কঠিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
তোমাদের কোন ব্যক্তি কি এ ভয় করে না যে, যখন ইমামের আগে সে মাথা উঠাবে, তখন হতে পারে আল্লাহ্ তার মাথাটা গাধার মাথায় পরিবর্তন করে দিবেন অথবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতিতে পরিবর্তন করে দিবেন? (বুখারী ও মুসলিম)
২৮) দুস্তম্ভের মধ্যবর্তী স্থানে ছালাত আদায় করাঃ
কেননা এর মাধ্যমে কাতার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
র্ক্বরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে দুস্তম্ভের মধ্যখানে কাতার বন্দী হতে আমাদেরকে নিষেধ করা হত এবং সে স্থান থেকে আমাদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হত। (ইবনু মাজাহ্)
২৯) দেয়াল, স্তম্ভ প্রভৃতিতে হেলান দিয়ে ছালাত আদায় করাঃ
মান্যবর শায়খ আবদুল আযীয বিন বায (রহ)কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাবে বলেন, ফরয ছালাত আদায় করার সময় দেয়াল, স্তম্ভ প্রভৃতিতে হেলান দিয়ে ছালাত আদায় করা জায়েয নয়। কেননা ফরয ছালাতে ওয়াজিব হচ্ছে সামর্থবান ব্যক্তি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করবে। নফল ছালাতের ক্ষেত্রে এরূপ করতে অসুবিধা নেই। কেননা নফল ছালাত বসে আদায় করা বৈধ। সুতরাং বসে আদায় করার চাইতে দাঁড়িয়ে হেলান দিয়ে আদায় করা উত্তম।
৩০) কোন সুতরা ছাড়াই ছালাত আদায় করাঃ
অধিকাংশ মানুষ কোন পরওয়া না করে যেখানে সেখানে ছালাত আদায় করার জন্য দাঁড়িয়ে পড়ে। সুন্নাত হচ্ছে, কোন সুতরা সামনে রাখা। অর্থাৎ- কমপক্ষে অর্ধহাত বরাবর কোন উঁচু বস্তু সামনে রেখে ছালাতে দাঁড়ানো উচিত। আলেমদের মধ্যে অনেকে সুতরা গ্রহণ করা ওয়াজিব বলেছেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“সুতরাং ব্যতীত ছালাত পড়বে না, আর তোমার সম্মুখ দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে দিবে না, যদি সে অগ্রাহ্য করে তবে তার সাথে লড়াই করবে, কেননা তার সাথে ক্বারীণ (শয়তান) রয়েছে।” (ইবনু খুযায়মা, হাকেম, বায়হাক্বী)
৩১) নামাযীর সামনে দিয়ে চলে যাওয়াঃ
এবিষয়ে অনেক মানুষ ভীষণ শিথীলতা প্রদর্শন করে থাকে। অথচ এক্ষেত্রে কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।
আবুল জুহাইম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لَوْ يَعْلَمُ الْمَارُّ بَيْنَ يَدَيِ الْمُصَلِّي مَاذَا عَلَيْهِ لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ خَيْرًا لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ قَالَ أَبُو النَّضْرِ لَا أَدْرِي أَقَالَ أَرْبَعِينَ يَوْمًا أَوْ شَهْرًا أَوْ سَنَةً
“ছালাতের সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত এতে কি পরিমাণ পাপ রয়েছে। তবে তার সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করার চাইতে চল্লিশ (বছর) দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম হত।” হাদীছের বর্ণনাকারী আবু নযর বলেন, আমার মনে পড়ে না- চল্লিশ দিন না চল্লিশ মাস না চল্লিশ বছর বলেছেন।” (বুখারী)
৩২) অনর্থক বেশী নড়াচড়া করাঃ
সুন্নাত হচ্ছে মুমিন ব্যক্তি শরীর হৃদয়-মন সবকিছু উপস্থিত রেখে বিনয়-নম্র সহকারে ছালাত আদায় করবে। উক্ত ছালাত ফরয হোক বা নফল।
কেননা আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
নিশ্চয় মুমিনগণ সফলকাম হবে। যারা ছালাতে বিনয়ী একাগ্র থাকে। (সূরা মুমিনূন- ১/২)
সুতরাং আবশ্যক হচ্ছে অনর্থক নড়াচড়া না করে প্রশান্তি ও ধীরস্থিরভাবে ছালাত আদায় করা।
তাই ছালাত অবস্থায় বেশী হাঁটা হাঁটি করা, বেশী নাড়া-চাড়া করা, ঘড়ি দেখা, বোতাম লাগানো, আঙ্গুল ফুটানো, নাক, দাড়ী, কাপড় প্রভৃতি নাড়াচাড়া করা মাকরূহ। এগুলো নিয়ে খেলা করা যদি অধিকহারে লাগাতার হতে থাকে তবে ছালাত বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু তা যদি সাধারণভাবে অল্প হয় এবং লাগাতার না হয় তবে ছালাত বাতিল হবে না। (শায়খ বিন বায (রহ) অবশ্য কাতার বরাবর করার জন্য এবং ফাঁকা জায়গা পূরণ করার জন্য নাড়াচড়া করা ওয়াজিব।
৩৩) বিনা কারণে চোখ বন্ধ করে ছালাত আদায় করাঃ
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়েম (রহ) বলেন, “ছালাত অবস্থায় দুচোখ বন্ধ রাখা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হেদায়াত বহির্ভূত কাজ। তিনি তাশাহ্হুদে বসে ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুলের দিকে দৃষ্টি রাখতেন এবং দুআ পাঠ করতেন। অবশ্য মুছল্লীর সামনে যদি এমন কিছু থাকে যার দিকে দৃষ্টি পড়ার কারণে তার বিনয় ও একাগ্রতা বিনষ্ট হবে, তবে এক্ষেত্রে চোখ বন্ধ করতে কোন অসুবিধা নেই।
৩৪) ফরয ছালাতের একামত হওয়ার পরও নফল বা সুন্নাত আদায় করতে থাকাঃ
অনেক মানুষ সুন্নাত বিরোধী একাজটি করে থাকে। বিশেষ করে ফজরের সময় এটি ব্যাপক আকারে দেখা যায়। ইক্বামত হয়ে যাওয়ার পর বা ছালাত শুরু হয়ে গেলেও তাড়াহুড়া করে অনেকে দুরাকাআত ছালাত আদায় করে।
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
(إذاَ أُقِيْمَتِ الصَّلاَةُ فَلاَ صَلاَةَ إلاَّ الْمَكْتُوْبَةَ)
“যখন কোন ছালাতের ইক্বামত দিয়ে দেয়া হয়, তখন সেই ছালাত ব্যতীত আর কোন ছালাত নেই।” (মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ্)
ইবনু হযম (রহ) বলেন, ফরয নামাযের একামত হয়ে যাওয়ার পর যদি কেহ সুন্নাত নামায শুরু করে, আর এ কারণে তার তাকবীর বা এক রাকাত ছুটে যায় তবে উক্ত সুন্নাত শুরু করা তার জন্য জায়েয নয় এবং এ অবস্থায় সে আল্লাহর নাফারমান বলে গণ্য হবে।
৩৫) কাঁচা পিঁয়াজ-রসুন খেয়ে মসজিদে আসাঃ
ইবনু ওমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন
مَنْ أَكَلَ مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ يَعْنِي الثُّومَ فَلَا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا
“যে ব্যক্তি এ বৃক্ষ (পিয়াজ-রসুন) থেকে কোন কিছু খাবে সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটবর্তী না হয়।” (বুখারী)
অবশ্য রান্নার মাধ্যমে পিঁয়াজ-রসুনের দুর্গন্ধ দূর হয়ে গেলে কোন অসুবিধা নেই। অনুরূপভাবে ধুমপান করে (মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে) মসজিদে আসাও নাজায়েয।
৩৬) ইক্বামত দেয়ার সময় আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা বলাঃ
এ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ। তাই তার উপর আমল পরিত্যাগ করাই উত্তম।
৩৭) ছালাতরত অবস্থায় হাই প্রতিরোধ না করাঃ
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
(إذاَ تَثاَءَبَ أحَدُكُمْ فِيْ الصَّلاَةِ فَلْيَكْظِمْ ماَ اسْتَطاَعَ، فَإنَّ الشَّيْطاَنَ يَدْخُلُ)
”তোমাদের কোন ব্যক্তির ছালাত অবস্থায় যদি হাই আসে তবে সাধ্যানুযায়ী তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবে। কেননা ঐ অবস্থায় শয়তান ভিতরে প্রবেশ করে। (মুসলিম)
প্রতিরোধ করার পদ্ধতি হচ্ছে, ঐ অবস্থায় মুখে হাত দেয়া। যেমনটি অন্যান্য বর্ণনায় পাওয়া যায়।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে পূর্বোল্লিখিত সুন্নাত বিরোধী বিষয়গুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং সুন্নাত অনুযায়ী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছালাতের অনুরূপ ছালাত আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন॥
সংগ্রহ করা হয়েছে : Preaching Authentic Islam in Bangla থেকে
বিষয়: বিবিধ
৩৩৬৮ বার পঠিত, ৪২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
তবে আমাদের দেশের বিশেষ করে শহরের সম্ভাব্য প্রত্যেকটি মসজিদে মহিলাদের সালাত আদায়ের সুষ্টু ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া/উৎসাহ দেয় উচিত! ধন্যবাদ!
আপনার সাথে একমত সব মসজিদে মহিলাদের সালাত আদায়ের সুষ্টু ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া/উৎসাহ দেয় উচিত!
আচ্ছা ৮নং এ যে বল্লেন "ইমাম নববী বলেন"................. আল্লাহ'র নবী'র কোন রেফারেন্স কি নেই এ বিষয়ে? তা দিলে বেশি ভালো হতো না?
ধন্যবাদ তোমাকে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আমি হারামাইনের অনেক সমমানিত ইমামগণকে ছালাত আদায় করার ক্ষেত্রে বুকের উপর হাত রাখতে দেখি নাই। উনারা কি ভুলের মধ্যে আছে।
http://www.youtube.com/watch?v=nqc3itprlD0
যাই হোক, সহিহ হাদিসে আছে বুকের উপর হাত বাধা তাই বাধতে হবে। মুসিলিম কোন ব্যাক্তিকে অনুসরন করে না তারা কোরআন ও সহিহ সুন্নাহ পেলে তার অনুসরন করে।
ওয়াইল ইবন হুজুর (রা) হতে বণিত। তিনি বলেন : আমি রসুল (সা) এর সাথে সালাত পড়েছিলাম, তিনি তার ডান হাতকে বাম হতের উপর রেখে তার সিনার (বুকের) উপরে স্থাপন করলেন।
(হাদিস সহীহ, ইবনু খুযাইমা হা/৪৭৯; বুলুগুল মারাম হা/২১৭)
আপনাকে ধন্যবাদ।
হাদিসের স্কৃন শর্ট দিলাম দেখেন
আপনি ইমাম সুদাইসকে অনুসরন করেন নাকি কোরআন ও সহিহ হাদিস অনুসরন করেন??
আর, কার সালাত হলো না হলো তা আল্লাহই ভালো জানেন। এটা আমার দয়িত্ব নয়। আমার কাজ সহিহ হাদসি দেখানো বাকিটা আপনি মানেন অথবা না মানেন তা আপনার ব্যাপার।
উপরে সহিহ হাদিসের স্পস্ট স্কৃন শর্ট দেয়া আছে দেখেন।
আপনাকে ধন্যবাদ।
কিছু লোক শুদ্ধ হাদিস এর উপর দুর্বল হাদিসের প্রাধান্য দিতে গিয়ে বিভিন্ন আরব ইমামের ছবি কে কৌশলে ব্যবহার করে। আসলে নাভির উপরে আর নাভির নিচে এই দুটো কাছাকাছি বিধায় ওরা ছবি দেখিয়ে বলে যে, ”ওই যে মক্কার ইমাম নাভির নিচে হাত বেধেছে!”
আসলে কিন্তু মক্কার ইমাম নাভির নিচে নয় বরং নাভির উপরে হাত বেঁধেছেন যার দলিল সহিহ মুসলিম।
মূলত নাভির উপর থেকে শুরু করে বুকের উপর পর্যন্ত জায়গায় যেকোনো খানে সালাতে হাত বাধা যায়। এর মধ্যে বুকের উপর হাত বাঁধা হচ্ছে সর্বাধিক শুদ্ধ – বুখারী, আবু দাউদ, ইবনে খুযায়মা।
নাভির নিচে নয় বরং উপরে হাত বাঁধতে হবে- এ হাদিস সহিহ মুসলিমের।
নাভির নিচে হাত বাধার হাদিস এসেছে আবু দাউদ এ, ইবনে শায়বা তে – কিন্তু সে হাদিস বা আছার গুলো দুর্বল।
ইমাম আবু দাউদ স্বয়ং তাঁর আবু দাউদ কিতাবে উল্লেখ করেছেন নাভির নিচে হাত বাধার হাদিস দুর্বল।
এবং এর পর তিনিই উল্লেখ করেছেন বুকের উপর হাত বাধার হাদিস।
যখন সর্বাধিক শুদ্ধ বা বিশুদ্ধ বা শুদ্ধ হাদিস পাওয়া যাবে তখন এগুলো বাদ দিয়ে দুর্বল হাদিস নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিতান্তই দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি!
আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস গ্রহণ যোগ্য নয় – এটাই সকল মুহাদ্দিস ও হাদিস গবেষকদের ও মুফতিদের মূল নীতি !
আল্লাহু আ ‘লাম।
কোনটি মন জুড়ায়
ওয়াইল ইবন হুজুর (রা) হতে বণিত। তিনি বলেন : আমি রসুল (সা) এর সাথে সালাত পড়েছিলাম, তিনি তার ডান হাতকে বাম হতের উপর রেখে তার সিনার (বুকের) উপরে স্থাপন করলেন।
(হাদিস সহীহ, ইবনু খুযাইমা হা/৪৭৯; বুলুগুল মারাম হা/২১৭)
আপনাকে ধন্যবাদ।
১৮ নং তাশাহুদের সময় আঙ্গুলি নাড়ানোর ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস থাকলে তার রেফারেন্স এবং এভাবে আঙ্গুলি নাড়ানোর হাকিকত যদি জানা থাকে, জানালে উপকৃত হবো। (এক ব্যক্তিরে প্রশ্নে জবাব দানের জন্য)
১ম হাদিস: (যা উপরে বর্ণিত আছে) “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাম হাতের তালু বাম হাঁটুর উপর বিছিয়ে দিতেন, আর ডান হাতের সবগুলো অঙ্গুলী মুষ্টিবদ্ধ করে তর্জনী দ্বারা কিবলার দিকে ইঙ্গিত করতেন এবং সেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন।” (ছহীহ্ মুসলিম)
২য় হাদিস: ইবনু আবযা (রা) হতে বর্ণিত। রসুল (সা) সালাতে তার শাহাদাত আঙ্গুল দারা ইশারা করতেন। (আহমাদ হা/১৫৪০৫, সিলসিলাহী সহিহা হা/৩১৮১)
রসূল (সা) এই আঙ্গুল নাড়ানেরা মাধ্যমে দুআ করতেন (সহীহ মুসলিম)
অপর বর্ণনায় রয়েছে শয়তানের কাছে এই আঙ্গুলের চেয়ে ভারী আর কিছু নাই (রেফারেন্স মনে পড়ছে না পড়ে জানাবো ইনশাআল্লাহ)
আরোও বিস্তারিত জানতে আপনি এখানে ভিজিট করুন
আল্লাহ আমাদের উপর ও আপনার উপর রহম করুন। আমিন।
আপনি ইমাম সুদাইসকে অনুসরন করেন নাকি কোরআন ও সহিহ হাদিস অনুসরন করেন??
আর, কার সালাত হলো না হলো তা আল্লাহই ভালো জানেন। এটা আমার দয়িত্ব নয়। আমার কাজ সহিহ হাদসি দেখানো বাকিটা আপনি মানেন অথবা না মানেন তা আপনার ব্যাপার।
উপরে সহিহ হাদিসের স্পস্ট স্কৃন শর্ট দেয়া আছে দেখেন।
আপনাকে ধন্যবাদ।
কিছু লোক শুদ্ধ হাদিস এর উপর দুর্বল হাদিসের প্রাধান্য দিতে গিয়ে বিভিন্ন আরব ইমামের ছবি কে কৌশলে ব্যবহার করে। আসলে নাভির উপরে আর নাভির নিচে এই দুটো কাছাকাছি বিধায় ওরা ছবি দেখিয়ে বলে যে, ”ওই যে মক্কার ইমাম নাভির নিচে হাত বেধেছে!”
আসলে কিন্তু মক্কার ইমাম নাভির নিচে নয় বরং নাভির উপরে হাত বেঁধেছেন যার দলিল সহিহ মুসলিম।
মূলত নাভির উপর থেকে শুরু করে বুকের উপর পর্যন্ত জায়গায় যেকোনো খানে সালাতে হাত বাধা যায়। এর মধ্যে বুকের উপর হাত বাঁধা হচ্ছে সর্বাধিক শুদ্ধ – বুখারী, আবু দাউদ, ইবনে খুযায়মা।
নাভির নিচে নয় বরং উপরে হাত বাঁধতে হবে- এ হাদিস সহিহ মুসলিমের।
নাভির নিচে হাত বাধার হাদিস এসেছে আবু দাউদ এ, ইবনে শায়বা তে – কিন্তু সে হাদিস বা আছার গুলো দুর্বল।
ইমাম আবু দাউদ স্বয়ং তাঁর আবু দাউদ কিতাবে উল্লেখ করেছেন নাভির নিচে হাত বাধার হাদিস দুর্বল।
এবং এর পর তিনিই উল্লেখ করেছেন বুকের উপর হাত বাধার হাদিস।
যখন সর্বাধিক শুদ্ধ বা বিশুদ্ধ বা শুদ্ধ হাদিস পাওয়া যাবে তখন এগুলো বাদ দিয়ে দুর্বল হাদিস নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিতান্তই দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি!
আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস গ্রহণ যোগ্য নয় – এটাই সকল মুহাদ্দিস ও হাদিস গবেষকদের ও মুফতিদের মূল নীতি !
আল্লাহু আ ‘লাম।
তবে আপানার সামনে সহীহ হাদিস স্পস্ট আপনি মানেন কিনা??
কিছু লোক শুদ্ধ হাদিস এর উপর দুর্বল হাদিসের প্রাধান্য দিতে গিয়ে বিভিন্ন আরব ইমামের ছবি কে কৌশলে ব্যবহার করে। আসলে নাভির উপরে আর নাভির নিচে এই দুটো কাছাকাছি বিধায় ওরা ছবি দেখিয়ে বলে যে, ”ওই যে মক্কার ইমাম নাভির নিচে হাত বেধেছে!”
আসলে কিন্তু মক্কার ইমাম নাভির নিচে নয় বরং নাভির উপরে হাত বেঁধেছেন যার দলিল সহিহ মুসলিম।
মূলত নাভির উপর থেকে শুরু করে বুকের উপর পর্যন্ত জায়গায় যেকোনো খানে সালাতে হাত বাধা যায়। এর মধ্যে বুকের উপর হাত বাঁধা হচ্ছে সর্বাধিক শুদ্ধ – বুখারী, আবু দাউদ, ইবনে খুযায়মা।
নাভির নিচে নয় বরং উপরে হাত বাঁধতে হবে- এ হাদিস সহিহ মুসলিমের।
নাভির নিচে হাত বাধার হাদিস এসেছে আবু দাউদ এ, ইবনে শায়বা তে – কিন্তু সে হাদিস বা আছার গুলো দুর্বল।
ইমাম আবু দাউদ স্বয়ং তাঁর আবু দাউদ কিতাবে উল্লেখ করেছেন নাভির নিচে হাত বাধার হাদিস দুর্বল।
এবং এর পর তিনিই উল্লেখ করেছেন বুকের উপর হাত বাধার হাদিস।
যখন সর্বাধিক শুদ্ধ বা বিশুদ্ধ বা শুদ্ধ হাদিস পাওয়া যাবে তখন এগুলো বাদ দিয়ে দুর্বল হাদিস নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিতান্তই দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি!
আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস গ্রহণ যোগ্য নয় – এটাই সকল মুহাদ্দিস ও হাদিস গবেষকদের ও মুফতিদের মূল নীতি !
আল্লাহু আ ‘লাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন