বাপ-দাদার প্রচলিত নীতি কি কারনে আপনি ইসলামের জন্য ছেড়ে দিবেন???
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:০৫:০৫ রাত
সাহল ইবন সা’দ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা) কে বলতে শুনেছি যে, আমি হাউযের ধারে (হাউজে কাওসার) তোমাদের আগে হাজির থাকব।যে সেখানে হাজির হবে, সে সেখান থেকে পান করার সুযোগ পাবে। আর যে একবার সে হাউজ থেকে পান করবে সে কখনই পিপাসিত হবে না। অবশ্যই এমন কিছু দল আমার কাছে হাজির হবে যাদেরকে আমি (আমর উম্মত বলে) চিনতে পারব এবং তারা্ও আমাকে চিনতে পরবে। কিন্তু এরপরই তাদের ও আমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা দাড় করে দেয়া হবে।
আবু হাযিম (রহ) বলেন, আমি হাদিস বণনা করছিলাম, এমন সময় নুমান ইবনু আবু আয়াস আমার নিকট হতে এ হাদিসটি শুনে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি সাহল থেকে হাদিসটি এরুপ শুনেছেন? আমি বললাম, হ্যা। তখন সে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আবু সাঈদ খুদরী (রা) কে এ হাদিসে অতিরিক্ত বলতে শুনেছি যে, নবী (সা) তখন বলবেন: এরা তো আমারি অনুসারী। তখন বলা হবে, আপনি নিশ্চই জানেন না যে, আপনার পরে এরা দীনের মধ্যে কী পরিবতন করেছে। এ শুনে আমি বলব, যারা আমার পরে পরিবতন করেছে, তারা দুর হোক, দুর হোক।
(সহিহ আল বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, অধ্যায়: ৯২/১ ফিতনা অধ্যায়, যা নবী (সা) ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক করতেন, হাদিস নং: ৭০৫০-৭০৫১, আধুনিক প্রকাশনী: হা/৬৫৬১ ইফা: ৬৫৭৪ নোট: এসম্পর্কে আরোও অনেক সহিহ হাদিস প্রায় সব হাদিসের গ্রন্থেই আছে)
উপরের হাদিস থেকে জানা যাচ্ছে কিছু লোক হবে যারা দীনে নতুন নতুন অনেক কিছু বিদআত/আবিশ্কার করবে যা দীনের মধ্যে নেই এবং তারা হবে রসুলের (সা) উম্মতের মাঝ থেকে।কেননা হুযাইফা (রা) হতে বনিত, তিনি বলেন,
রসুল (সা) বলেছেন: আমার হাউজ (হাউজে কাওসার) আইলা থেকে আদানের দুরুত্ব পরিমান দীঘ। সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্র্রান! আমি তাথেকে মানুষকে এমন ভাবে তারাবো যেমন কোনো ব্যাক্তি অপরিচিত উটকে তার পানির কুপ খেকে তাড়িয়ে দেয়। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো: হে আল্লাহর রসুল (সা) আপনি কি আমাদেরকে সে দিন চিনতে পারবেন? তিনি বললেন, হ্যা। ওযুর প্রভাবে তোমাদের চেহারা ও হাত পা থেকে উজ্জল জ্যোতি ছড়িয়ে পড়া অবস্থায় তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হবে। এটা তোমাদের ছাড়া অন্য কারো জন্য হবে না। (সহিহ মুসলিম হা/৪৯০)
তাই, এ থেকে বোঝা যায় যে এই সকল বিদআতি যারা হাউজের ধারে দারাবে কিন্তু পানি পাবে না যাদেরকে তারিয়ে দেয়া হবে তারা ওযু/সালাত/রোজা/হজ/যাকাত সবিই করত কিন্তু রসুল (সা) এর বাতলানো পথের সাথে নতুন নতুন অনেক বিদআত বানিয়ে নিয়ে। ফলতো রসুল (সা) তাদেরকে দেখার পরে বলবেন ”সুহুকান সুহুকান লিমান বাদদালা বাআদী” অথাৎ, যারা আমার পরে পরিবতন করেছে, তারা দুর হোক, দুর হোক।
এখন আসেন কিছু নমুনা দেখি এই লোকদের মাঝে আমরা আছি কি না???
আমরা অনেকেই সালাত শুরু করার আগে একাটা নিয়ত পড়ি “নাউয়াইতুআন উছাল্লিয়া লিল্লাহী তাআলা আরবা…….” ইত্যাদি। এটা আমরা আমাদের বাপ দাদার আমল থেকে হুজুর/মুরুব্বী/বুজুর্গ/ ইত্যাদি আল্লাহর বান্দা দের থেকে শুনে আসছি এবং নিজেরাও শিখেছি। সালাত পরানো শিক্ষার আগে এই নিয়ত পড়া মুখস্ত করানো হয়েছে। ফলে আজ আমরা মনে করতে বসেছি এই নিয়ত পড়া সত্যিই বুঝি ইসলামের অংশ!!! কোন দিন খোজ খবর ও করি নাই কোন জ্ঞানোবানকেও জিজ্ঞাসা করি নাই এগুলো কি ইসলামের অংশ?? এর কারন হিসেবে বলবো “বাব-দাদারা করেছেন আমরাও করি” কিন্তু ইসলাম কি বাপ-দাদার ধর্ম?? অবশ্যই উত্তর না।
তাহলে আজথেকে বাপ-দাদার ধর্ম ভুলে যান এবং সঠিক সিদ্ধান্তটা জেনে নিন। আর নিজে আমল করুন এবং নিজের পরিবার/সমাজ/মুসলিম ভাইদেরকে ও এ সম্পর্কে সাবধান করুন।কেননা, হাউজে কাওসারের কাছ থেকে বাধাপ্রাপ্ত হওয়াকে কোন মুসলিম পছন্দ করবে??
নিয়ত পড়ার হুকুম কি?
নিয়ত করা ফরজ (অন্তরে) কিন্তু নিয়ত পড়া (মুখে) বিদআ’ত।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম (রহ) “রসুল (সা) সালাত” কিতাবে ”তাকবীরে তাহরীমা” অধ্যায়ে বলেন,
রসুল (সা) সালাতে দাড়িয়ে “আল্লাহু আকবার” উচ্চারণ করতেন। (এটাকে তাকবিরে তাহরীমা বলা হয়)। তিনি এই তাকবীর উচ্চারনের পূর্বে অন্য কিছুই পড়তেন না, বলতেন না, এমন কি নিয়ত উচ্চারন করতেন না।(নিয়ত হলো মনস্থির করা বা ইচ্ছা করার নাম)। এ ধরনের কিছুই তিনি বলতেন না যে, কিবলা মুখি হয়ে অমুক ওয়াক্ত এতো রাকাত ফরজ সালাত এই ইমামের পিছনে পড়ছি। কিংবা আদায় করছি বা কাযা আদায় করছি। এ ধরনের কথা রসুল (সা) ফরজ,সুন্নাত,নফল কোন সালাতেই পড়তেন না। তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে এসব কিছু বলা বিদআ’ত। কারন এগুলোর পক্ষ্যে রসুল (সা) থেকে কোন হাদিস নেই। সহীহ, জয়ীফ,মুসনাদ,মুরসাল,মারফু-কোন রখম হাদিস নেই। এমনকি সাহাবা (রা) কোন বক্তব্য নেই। তাবেয়ী গনের কোন কথা নেই।এমনকি চার ইমামের কউই এ সম্পর্কে বলেন নি এবং এগুলো পছন্দ করেন নি। তাই এগুলো থেকে সবাইকে দুরে থাকতে হবে কারন রসুল (সা) এর সুন্নত আর সাহবায়ে কিরামের পন্থা অনুসরণই আমাদের কর্মনীতি। তাদের দেখানো সবোত্তম পথই আমাদের পথ। আমরা বিনিত ভাবে কেবল তাদের থেকে প্রমানিত কমনীতিই অনুসরন করবো।
(আল্লাহর রসুল (সা) কি ভাবে সালাত পড়তেন, হাফিজ ইবনুল কাইয়ুম)
নবী (সা) বলেন, ”ইন্নামাল আয়মালু বিন নিয়াতি ওয়া ইন্নামা লি কুল্লুমরিই মানাওয়া” অথাৎ, কর্মের ফল নিয়তের উপর নিভরশীল প্রত্যেক ব্যাক্তির জন্য তাই রয়েছে যা সে নিয়ত করে। (বুখারীহা/১,মুসলিম)
নিয়ত আরবি শব্দ যার অথ হচ্ছে ইচ্ছা বা সংকল্প। নিয়তের স্থান হচ্চে অন্তর। তা মুখে উচ্চারন কারার কোন প্রয়োজন নাই। আপনি যখন ওযু করবেন তখন এটাই আপনার নিয়ত। একজন বিবেকবান, সুস্থ মস্তিস্ক, বাধ্য করা হয়নি এমন লোক কোন কাজ করবে আর সেখানে তার কোন নিয়ত বা ইচ্ছা থাকবে না এটা অসম্ভব।
তাছাড়া রসুল (সা) থেকে এ ব্যাপারে কোন দলীল প্রমানিত নয়। না প্রমানিত আছে সাহাবা (রা) দের খেকে। যারা মুখে উচ্চারন করে নিয়ত পাঠ করে দেখা যায় তারা বেশিরভাগ না জেনে অথবা অন্ধ অনুসরন করে তার মুরব্বী/আলেম/বুজুর্গ দের। তাদের যুক্তি হচ্ছে, অন্তরের সাথে মুখের কখা ও কাজের মিলের জন্য নিয়ত পাঠ করা উচিত। কিন্তু তাদের এ যুক্তি অসাড়। একাজ শরীয়ত সম্মত হলে রসুল (সা) এর কখা বা কাজ উম্মতের সামনে তার বর্ণনা পাওয়া যেতো।
(শায়খ সালেহ আল উসাইমীন, ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম)
আমার এই বিদআ’ত সম্পর্কে লেখার ইচ্ছা হলো কেন?
আমি একজন মসজিদের ইমাম কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম “নাওয়ই তুআন……ইত্যাদি, এভাবে নিয়ত পড়ার কোন সহিহ দলিল আছে?” তিনি আমাকে বললেন, এভাবে আমরা দেখে আসছি আমাদের মুরুব্বিরা করেছেন বুজুগানে দীন করেছেন তাই দলিল না থাকলেও করা যাবে। নিয়ত পড়া ভালো।(!!!??বিদআ’ত)
অপর এক ভাইকে বলেছিলাম, ”নিয়ত পড়ার কোন সহিহ/যইফ/জাল হাদিসও নাই” তিনি বলেছিলেন, আমি আপনাকে দেখাবো আছে, নাহলে আমরা কোথায় পেলাম? আমি বললাম, ঠিক আছে আপনি পরীক্ষা করুন। কিছুদিন পর আলহামদুলিল্লাহ তিনি আমাকে জানালেন যে ”আপনি ঠিক বলেছেন, কোন দলিল নাই তবে পড়া ভালো” এই পড়া ভালো কথাটি আমাকে এই বিষয় টি নিয়ে আলোচনা করার উৎসাহ যোগালো। কেননা এই ভালো শব্দটি (বিদআ’ত) ব্যাবহার করলে আামরা রসুল (সা) এর হাউজের পানি পান করার স্থান থেকে দুর দুর করে তাড়া খেতে পারি বিদআ’তি হবার কারনে।
খেয়াল রাখবেন, নিয়ত করা ফরজ (অন্তরে) কিন্তু নিয়ত পড়া (মুখে) বিদআ’ত।
অবশেষে, আল্লাহর কাছে তাওফিক চাই আল্লাহ আমাদেরকে বোঝার ও আমল করার ব্যাবস্থা করে দিন।আমিন।
কস্টকরে পড়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খায়রান।
(লেখাটি শেয়ার করতে পারেন সত্যকে জানানোর উদ্দেশ্যে)
সংগ্রহ: Message Of Messenger
বিষয়: বিবিধ
১৭৫৬ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাওলানা আব্দুল মালেক সাব এর লেখা।
মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়াহ।
সেই বইটি আবার ফিরে পেকে চাই।
দোয়া করবেন।
আল্লাহ তোমাকে বইটি ফিরে পেতে সহায়ক হউন। আমিন।
এই বইটি আমার কাছেও নাই। তবে ইবনুল কাইয়ুম (রহ) বইটি আছে দরকার পড়লে সাড়া দিয়ো।
জাজাকাল্লাহু খায়রান।
ধন্যবাদ ইমরান ভাই ।
জাজাকাল্লাহু খায়রান বোনজি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন