হাদিসের নামে জালিয়াতি......

লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:৩৯:৪৬ দুপুর

অনেকে নিচের এই কথা গুলোকে হাদিস হিসেবে বলে থাকেন।

তাদের জন্য বলছি...

যারা নামায পড়েনা তাদের জন্য আল্লাহ্ পাক পনেরটি আজাব নির্দিষ্ট করিয়া রাখিয়াছেন।পনেরটি আজাবের মধ্যে ছয়টি দুনিয়ায়, তিনটি মৃত্যুর সময়, তিনটি কবরের মধ্যে এবং বাকি তিনটি হাশরের মধ্যে দেয়া হইবে।

# দুনিয়াতে ছয়টি আযাবঃ

১. তাহার জীবনে কোনরূপ বরকত পাইবেনা।

২. আল্লাহ্ তার চেহারা হইতে নেক লোকের চিহ্ন উঠাইয়া লইবেন।

৩. যে যাহা কিছু নেক কাজ করবে, তাহার ছওয়াব পাইবেনা।

৪. তাহার দোয়া আল্লাহ্ পাকের নিকট কবুল হইবে না।

৫. আল্লাহ্ পাকের সমস্ত ফেরেশতা তাহার উপর অসন্তুষ্ট থাকবে।

৬. ইসলামের মূল্যবান নেয়ামত সমূহ হইতে বঞ্চিত করা হইবে।

# মৃত্যুর সময় আজাব তিনটিঃ

১. অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত হইয়া মৃতু্যবরণকরিবে।

২. ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যু বরন করিবে।

৩. মৃত্যুকালে তাহার এত পিপাসা পাইবে যে,তাহার ইচ্ছা হইবে দুনিয়ার সমস্ত পানি পান করিয়া ফেলিতে।

# কবরের মধ্যে তিনটি আজাবঃ

১. তাহার কবর এমন সংকীর্ণ হবে যে তাহার এক পাশের হাড় অপর পাশের হাড়ের সংগে মিলিত হইয়া চূর্ণবিচূর্ণ হইয়া যাইবে।

২. তাহার কবরে, দিনরাত্রি সবসময় আগুন জ্বালাইয়া রাখা হবে।

৩. আল্লাহ্ তাহার কবরে একজন আজাবের ফেরেশ্তা নিযুক্ত করিবেন। তাহার হাতে লোহার মুগুর থাকবে। সে মৃত ব্যক্তিকে বলতে থাকবে যে,দুনিয়ায় কেন নামায পড় নাই। আজ তাহার ফল ভোগ কর। এই বলিয়া ফজর নামায না পড়ার জন্য ফজর হইতে জোহর পর্যন্ত, জোহর নামাযের জন্য জোহর থেকে আছর পর্যন্ত, আছরের নামাযের জন্য আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত, মাগরিবের নামাযের জন্য মাগরিব হইতে এশা পর্যন্ত এবংএশার নামাযের জন্য এশা হইতে ফজর পর্যন্ত লোহার মুগুর দ্বারা আঘাত করতে থাকবে।


এই কথাগুলো কোন সহিহ হাদিস নয় এটা একটি ভিত্তিহীন জাল হাদিস

ইমাম যাহাবী,ইবনু হাজার আসকালানী, ইমাম সূয়ুতী, ইমাম ইবনু ইরাকি প্রমুখ মুহাদ্দিসগন এ বিয়য়ে আলোচনা করেছেন। (যাহাবী, মিনাযুল ইতিদাল ৬/২৬৪, লাআলী পৃ:৯৯, ইবনু্ ইরাকি তানযীহ ২/১১৩-১১৪, গৃহিত-হাদিসের নামে জালীয়াতী কিতাব থকে)

এই ভিত্তিহীন জাল হাদিসটি "ফাজায়েলে আমাল" গ্রন্থে ফাজায়েলে নামাজ অধ্যায়ে আল্লামা জাকারিয়া (আল্লাহ তাকে জান্নাত দিন) উল্লেখ করেছেন।এবং তিনি হাদিসের শুরুতে বলেছেন "কেউ কেউ বলেছেন, এই কথাটা নাকি হাদিসে আছে" এবং শেষে তিনি বলেছেন, "ইমাম যাহাবী, ইমাম সূয়ুতী প্রমুখ মুহাদ্দিস এই কথাগুলোকে জাল ও বাতিল বলেছেন" এর সনদে জালিয়াতের পরিচয় তারা তুলে ধরেছেন"

আশ্চর্যের বিষয় হলো তিনি আরবিতে তাহকিক দিলেও তার অনুবাদ উর্দুতে করেন নি। এবং বাংলায় অনুবাদ করার সময় জনাব সাখাওয়াত সাহেব যে অনুবাদটি করেছেন তাতে তিনিও এই কথাটি অনুবাদ করেন নিবরং এই জাল হাদিসের ফায়দা উল্লেখ করেছেন।

ফলশ্রুতিতে আজ জাল ও ভিত্তিহিন কথা সহিহ হাদিস হিসেবে চালিত হচ্ছে।

তাই আসুন জেনে নিন কেন আপনি এই হাদিস বর্ণনা করা থেকে বীরত থাকবেন যা আপনার ইমানী দায়িত্ব।

রসুল (সা) বলেছেন,

তোমরা আমার প্রতি মিথ্যারোপ করোনা, কেননা যে ব্যাক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে সে জাহান্নামে যাবে

(সহিহ মুসলিম মুকাদ্দমা অনুচ্ছেদঃ২)

রসুল (সা) বলেছেন,

যে ব্যাক্তি জেনে শুনে আমার উপর মিথ্যারোপ করবে, সে যেনো আগুনে তার বাসস্থান করে নেয়

(সহিহ মুসলিম মুকাদ্দমা অনুচ্ছেদঃ২)

তাই যখনি, রসুল (সা) এর নামে কোন কথা বলবেন তাহলে আগে জানুন কথাটি রসুল (সা) থেকে সহিহ সনদে প্রমানিত।


আল্লাহ আমাদের বোঝার তাওফিক দিন আমিন।

বিষয়: বিবিধ

১৬০২ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

172856
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫
প্রিন্সিপাল লিখেছেন : আমরা তো এটিকে হাদীস হিসেবেই জানতাম।
আমাদের সমাজে এ রকম কত হাদীস রয়েছে, আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন।
সতর্কমূলক লেখাটি উপহার দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:৩৯
126452
ইমরান ভাই লিখেছেন : সয়ং যাকারিয়া সাহেব (আল্লাহ তাকে জান্নাত দিন) তিনিও এই কথাগুলিকে জাল বলেছেন।

কিন্তু অনুবাদে ঘাপলা লাগাইছে। সেই কারনেই তো এটি হাদিস নামে প্রচার হচ্ছে। আর এখন প্রত্যেক মসজিদে এই জাল হাদিসের নিয়ামক কিতাবের তালিম হচ্ছে।
তাই সেই দলের কাছে আহব্বান থাকবে জাল হাদিস,যাইফ হাদিস গুলোকে চিন্হিত করে নতুন কিতাব প্রকাশ করার।

আপনাকেও ধন্যবাদ স্যারজি।
172943
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৪
শফিউর রহমান লিখেছেন : ফাজায়েল মানে কি? এটি কোন ভাষার শব্দ? জানলে শব্দ করেন প্লিজ।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০৮
126536
ইমরান ভাই লিখেছেন : ভাই, আপনি কি সত্যি এ সম্পর্কে জানতে চান?
না কি অন্য কিছু প্রমান করতে চান? একটু ক্লিয়ার করুন। ধন্যবাদ আপনাকে।
Love Struck Love Struck
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৫
126575
শফিউর রহমান লিখেছেন : আমি সত্যিই জানতে চাই। আমি জানি যে, তাবলীগের প্রায় সকল বই-ই ফাজায়েল শব্দ দিয়ে নামকরণ। এই শব্দটির অর্থ কি? এটি কোথা থেকে এসেছে?
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৩৬
126833
ইমরান ভাই লিখেছেন : ভাই,
রসুল (সা) আমাদেরকে যে সকল কাজ বাতলে দিয়েছেন এবং তা পালন করলে কি সওয়াব আমরা পাবো এই সওয়াব গুলোকে ফাজায়েল বলে। আর আমলের/কাজের বিনিময়ে তাই ফাজায়েলে আমাল বলে।

তবে এই ফাজায়েল গুলো হতে হবে কোরআন ও সহিহ হাদিস দিয়ে প্রমানিত।
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:২৩
128140
শফিউর রহমান লিখেছেন : ধন্যবাদ - যাজাহকাল্লাহ খাইরান
172954
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:১১
লাঠীপেটা লিখেছেন : আরে ভাই হাদিস সহি হোক আর জইফ হোক আর হাদিস না থাকুক তাতে কি?
বুজুর্গানে দ্বীন যা বলবে তাই পালন করতে হবে।
দেখেন না চল্লিশ দিনে চিল্লা, তিন চিল্লা ফরজ তার পর তুরাগের আবর্জনার উপর আখেরী মুনাজাত করতে হবে আরাফাতে দোয়া কবুল হোক আর না হোক তুরাগে ঠিকই কবুল হবে কারন,
ওকানে এক জন হলেও বুজুর্গানে দ্বীন আছে
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:১০
126538
ইমরান ভাই লিখেছেন : রসুল (সা) তোমাদেরকে যা দেন তা আকড়ে ধর আর তোমাদেরকে যা থেকে বিরত থাকতে বলেন তা থেকে বিরত থাক।
(আল কোরআন)

নিশ্চই রসুলের (সা) মাঝে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ
(আল কোরআন)

172968
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৯
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : আপনার লিখা ষ্টাইল ভাল। বেশ উপকার হল। কাউকে আঘাত না করে লিখা যায় তার প্রমান আপনার এই পোষ্ট। ইদানিং তাবলীগের বিরুদ্ধে যা লিখা হচ্ছে তার সবটুকুন যে সত্য এমন নয়। আপনাকে ধন্যবাদ।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:১৪
126540
ইমরান ভাই লিখেছেন : অবশ্যই তাদের মাঝে অনকে ভাল কাজ আছে এবং সমস্যাও আছে এক কথায় ধুম্রাচ্ছন্ন। তাই বেচে বেচে চলতে হবে। ঐ পথে পিছলানোর সম্ভাবনা বেশি। কোরআন ও সহিহ হাদিস দিয়ে চললে পিছলানোর সম্ভাবনা নাই।

জাজাকাল্লাহু খায়রান।Love Struck
172976
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০২
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : যাজাকাল্লাহু খাইরান Praying
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:১৪
126541
ইমরান ভাই লিখেছেন : বারাকাল্লাহু ফিকুম..Love Struck
172977
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:০৭
জবলুল হক লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ সুন্দর সতর্কতামূলক পোষ্টের জন্য।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৪১
126550
ইমরান ভাই লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইজান।
173013
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:১৯
126826
ইমরান ভাই লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ Love Struck
173028
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০০
বুড়া মিয়া লিখেছেন : এটা মনে হয় তাবলীগে গিয়েই শুনেছিলাম
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:২৮
126828
ইমরান ভাই লিখেছেন : হ্যা, আপনার ধারনা সঠিক। এই কথাগুলো ফাজায়েলে নামাজ অধ্যায়ে আছে। ফাজায়েলে আমল বইটা প্রতিদিন বিভিন্ন অধ্যায় থেকে কিছু কিছু পেজ পড়া হয় ফলে একসময় গোটা বইটাই পড়া শেষ হয় আর সাথে যারা শোনে তাদের মাথার ভিতরেও এই সকল ভ্রান্ত আকিদা যোগ হয়ে যায় তাদের অজ্ঞতাসারে। এবং তারা ভাবতে থাকে এটাই সঠিক। ফলে কোরআন ও সহিহ হাদিস দিয়ে তাদেরকে দেখালেও তাদের ভিতরের ভুল ভাংগেনা।(তবে আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন সে ব্যাতিত)

আরসেনিকের মতো ধীরে ধীরে এই ভুল আকিদাগুলো ঢুকে যায় সাধারন মানুষের ভিতরে।

পীর মুরিদের সিলসিলা এরা ফাজায়েলে আমল বইয়ের মাধ্যমে টিকিয়ে রেখেছে।
173222
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:৫৫
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:২৮
126829
ইমরান ভাই লিখেছেন : Love Struck Love Struck Love Struck
১০
173279
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:৫১
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আল্লাহ আমাদেরকে সমস্ত জালিয়াতির ক্ষপ্পর থেকে রক্ষা করু্ন। আপনাকে ধন্যবাদ জাল হাদিসটি তুলে ধরার জন্য উপস্থাপন করার জন্য।
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:১৭
126887
ইমরান ভাই লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকে জাজাই খাইর দান করুন আমিন।
ভালো লাগলো আপনার কমেন্টস দেখে।
Love Struck Love Struck
১১
173348
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৮
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ভালো লাগলো
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৫৫
127332
ইমরান ভাই লিখেছেন : ধন্যবাদ
১২
173844
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৯
আলোকিত ভোর লিখেছেন : যাজাকাল্লাহ।
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৫৫
127334
ইমরান ভাই লিখেছেন : বারাকাল্লাহু ফিকুম।
১৩
174274
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৮
আবু আশফাক লিখেছেন : সচেতনতামূলক পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:২৪
127665
ইমরান ভাই লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ। Love Struck Love Struck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File