কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর….শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহ)
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ১৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:০৮:৫৭ সকাল
প্রশ্নঃ তাসবীহ্ দানা দারা তাসবীহ্ পড়ার বিধান কি?
উত্তরঃ তাসবীহ্ দানা ব্যাবহার করা জায়েয। তবে উত্তম হচ্ছে, হাতের আঙ্গুল ও আঙ্গুলের কড় ব্যাবহার করা।
কেননা রসুল (সা) বলেন,
”আঙ্গুল দারা তাসবীহ্ গননা কর। কেননা (কিয়ামত দিবসে) এগুলো জিজ্ঞাসিত হবে এবং এগুলোকে কথা বলানো হবে” (মুসনাদে আহমাদ, আবুদাউদ, তিরমিযি অধ্যায়ঃ দুআ অনুচ্ছেদঃ তাসবীহ্ পাঠ করার ফযীলত)
তাছাড়া তাসবীহ্ ছরা হাতে নিয়ে থাকলে রিয়া বা লোক দেখানো ভাবের উদ্রেক হতে পারে। আর যারা তাসবীহ্ ছড়া ব্যাবহার করে সাধারনতঃ তাদের অন্তর উপস্থিত থাকে না। এদিক ওদিক তাকায়। সুতরাং আংগুল ব্যাবহার করাই উত্তম ও সুন্নাত।
[ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহ) ফাতাওয়া নং ২৬০]
প্রশ্নঃ সালাতের পর হাত উত্তলন করে দুআ করার বিধান কি?
উত্তরঃ সালাতের শেষে হাত তুলে দুআ করা শরীয়ত সম্মত নয়। দুআ করতে চাইলে সালাতের মধ্যে দুআ করা উত্তম। একারণে ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণিত তাশাহুদ শিক্ষার হাদিসে নবী (সা) নির্দেশ দিয়েছেনঃ ”তারপর ইচ্ছামত যে কোন দুআ পাঠ করবে” (বুখারী, আযান অধ্যায়, তাশাহুদের পর ইচ্ছা-স্বাধীন দুআ করা)
সাধারণ মানুষ অনেকেই ফরজ বা সুন্নাত যে কোন সালাতে হাত তুলে দুআ আরম্ভ করে। এমনকি এদের অধিকাংশ এ কাজ কখনই পরিত্যাগ করে না***
অনেক লোক এমন দেখবেন ফরজ সালাত শুরু হয়ে যাচ্ছে আর সে সুন্নাত নামাযের তাশাহুদে বসে আছে। সালাম ফেরানো হলেই হাত উঠাবে কিছু বলল কি না আল্লাহই জানেন আবার হাত মুখে মুছে ফেলবে। মনে করে সালাত শেষ করে হাত দুটো না উঠালে যেন সালাতটি সুন্দর হল না।
[ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহ) ফাতাওয়া নং ২৬২]
*** অথচ নবী (সা) থেকে সালাতে সালামের পরে সম্মিলিত ভাবে হাত উঠিয়ে দুআ করার ব্যাপারে কোন সহিহ হাদিস পাওয়া যায় না। সাহাবী (রা) তাবেঈ (রহ) দের যুগেও এর সহিহ সনদ ভিত্তিক কোন প্রমান মিলেনা। এমনকি নবীজি খেকে সহিহ তো দুরের কথা কোন যঈফ বর্ণনাও পাওয়া যায় না। তাই একাজ সমপূর্ণ সু্ন্নাত বিরোধী বা বিদআত। যা পরিত্যাগ করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে মুসলমানগন এই বিদআতটিকে একটি সুন্নাত তো বটেই বরং ফরজের মতোই মনে করে। যার কারনে দেখা দেখবেন, যদি আপনি ফরজ সালাতের শেষে রসুল (সা) এর পঠিতব্য সহিহ হাদিছে প্রমানিত দুআ যিকিরে মশগুল হন, ওদের সাথে বিদআতি মুনাজাতে শরীক না হন, তবে অন্যান্য মুছল্লীরা আপনার প্রতি বাকা নজরে দেখবে, যেন আপনি মস্তবড় একটি অপরাধ করেছেন! আর ইমাম সাহেব যদি কখনো এই মুনাজাত ছেড়ে দেয় তবে অনেক ক্ষেত্রে তার চাকুরী নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ ফরজ সালাত শেষে সমস্বরে (সম্মিলিত ভাবে) সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী প্রভৃতি পাঠ করার বিধান কি?
উত্তরঃ সালাতান্তে সকলে মিলে সমস্বরে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী বা অন্যান্য যিকির করা বিদআত।*** কেননা নবী (সা) এবং সাহাবীদের (রা) থেকে যেটা প্রমানিত হয়েছে, তারা ফরজ সালাত শেষ করে কিছুটা উচু আওয়াযে যিকির পাঠ করতেন। কিন্তু তারা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে পাঠ করতেন। সমস্বরে নয়। অতএব ফরজ সালাতানেৱ উচু কন্ঠে যিকির করা সহিহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, ”নবী (সা) এর যুগে লোকেরা ফরজ সালাত শেষ করলে উচু কন্ঠে যিকির পাঠ করতেন। ইবনু আব্বাস (রা) বলেন, উচু কন্ঠে যিকির শুনলে আমি বুঝতাম লোকেরা সালাত শেষ করেছেন” (বুখারী, সালাতের পর যিকির, মুসলিম, সালাতের পরে যেসকল যিকির মুসৱাহাব)
কিনতু সালাতের পর উচু কন্ঠে বা নিচু কন্ঠে সুরা ফাতিহা পাট করার ব্যাপারে নবী (সা) হতে কোন হাদিস আমি জানি না। তবে সহিহ হাদিসে প্রমানিত হয়েছে আয়াতুল কুরসী, ও মুআব্বেযাতাইন (সুরা ফালাক,নাস) পাঠ করতেন। (আবু দাউদ, নাসাঈ)
[ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহ) ফাতাওয়া নং ২৬৩]
***এই ফাতাওয়াটি টাইপ করার সময় একটা কথা মনে পড়ল। যা সবার সাথে শেয়ার করা জরুরী মনে করলাম।
ইমাম তিরমিজি (রহ) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, হাদিসটি হল সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত নিয়ে।
মালিক ইবনু ইয়াসার (রা)হতে বর্ণিত আছে, রসুল (সা) বলেন, যে ব্যাক্তি সকালে উপসি'ত হয়ে বলবে,”আউযুবিল্লাহিস সামিঈল আলিম মিমিনাশ শাইতানির রাজিম” তারপর সুরা আল হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য সত্তর হাজার ফিরিসৱা নিযুক্ত করবেন । তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য দুআ করতে থাকবেন। সে ঔদিন ইন্তিকাল করলে তার শহীদী মৃত্যু হবে । যে ব্যাক্তি সন্ধ্যায় এরূপ পাঠ করবে সেও এরখম গৌরবের অধীকারী হবে।
ইমাম তিরমিজি এই হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেনঃ এ হাদিসটি গারিব। আমরা শুধু মাত্র উপরিউক্ত সূত্রে এ হাদিস জেনেছি।
নাসিরুদ্দিন আলবানি বলেনঃ হাদিসটি যইফ। তালীকুর রাগীব (২/২২৫) (বিস্তারিত দেখুন যইফ আত তিরমিজি ২য় খন্ড, নাসিরুদ্দিন আলবানি হা/ ২৯২২)
প্রথমতঃ হাদিসটি যঈফ তা প্রমানিত, তাই এই হাদিসের উপর আমল করা যাবে না।(ইমাম মুসলিম (রহ) এর সর্ত অনুসারে)
দ্বীতিয়তঃ অথচ আমাদের দেশের প্রায় সকল মসজিদে ফজরের ফরজ সালাত শেষে ইমাম সাহেব জোরে জোরে সুারা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়েন আর তার সাথে মুক্তাদিরাও পড়ে থাকে। এটি সমপূর্ণ একটি নতুন আবিস্কার/কাজ যাকে বিদআত বলে। কারণ এভাবে সম্মিলিত ভাবে পড়ার সহিহ কোন রেওয়ায়েত নাই এমনকি যঈফ ও জাল রেওয়ায়েত নাই (উপরের ফাতাওয়া থেকে জানা যায়)। যেহুতু সওয়াবের আশায় করা হয় তাই এটি বিদআত না হয়ে পারে না। কেননা এটি প্রমানিত নয়। আবার কোন কোন মসজিদে দেখা যায় ইমাম সাহেব না পড়লে তার উপর মুছল্লিরা নাখোশ (মনখারাপ) হয়ে থাকে ফলে একসময় সেই ইমামের চাকুরী রাখা রড় দায় হয়ে যায়। তাই দ্বীনের ভিতর এই নব আবিস্কার থেকে আমাদের বেচে থাকতে হবে।
আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তওফিক দিন। আমিন।
বিস্তারিত এখানে ক্লিক করুন
বিষয়: বিবিধ
৪৫৯৬ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মনে করে বর্ণনা গুলো জানান, হতে পারে আমাদের অনেক উপকার হবে ইনশাআল্লাহ।
আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
পোড়া বাড়ীর চমচম খাওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
কারন যে খারাপ বিষয়গুলো যুগ যুগ ধরে মানুষের মাঝে চলে আসছে তা হুট করে দুর সম্ভব না। দাওয়াত, দোয়া, চেষ্টার দ্বারা এগুলো কমতে থাকে আলহামদুলিল্লাহ। কয়েক বছর আগে এক মাসজিদে মাগরিব এর নামাজ পড়ার পড় মুনাজাত না করে সুন্নতের দারিয়ে গিয়েছিলাম বিধায় অনেক কথা শুনেছিলাম আর সেইদিন জুম্মা পড়ে মুনাজাত না করে দেখলাম অনেকে নামাজে দাড়িয়ে গেছেন আলহামদুলিল্লাহ। তো ভাই মানুষ ভালো বিষয়টা চায় কিন্তু হিকমাহ্ অনুসারে দেয়ার লোক নাই।
অনেক সুন্দর কমেন্টস দিয়ে পোস্টটিকে আরোও সুন্দর করে দিয়েছো ভাই।
আসলেই ইদানিং মিলাদ পড়া কমে গেছে আর আগের মতো দেখা যায় না।
ইদানিং অনেক কেই পাওয়া যায় যারা সালাত শেষে সহিহ হাদিস দারা প্রমানিত জিকির করে মাশাআল্লাহ। খুব ভালোই উন্নতি হচ্ছে আমাদের আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর কাছে এ উন্নতির ধারা অব্যাহত চাই। আর এটি সম্ভব হয়েছে আল্লাহর সাহায্য, প্রচারনা তথা কোরাআন ও সহিহ সুন্নার দিকে তাবলিগের মাধ্যমে।
একটা বিষয়ঃ এমনটা যেনো না হয় যে, আমিতো সম্মিলিত মুনাজাত করবো না তাই সকলে মুনাজাত ধরেছে আর আমি সুন্নাত সালাতে দারিয়ে গেলাম।
আমার জানা মতে ইমামের সালাম ফেরানোর সাথে সাথেই কেউ যদি সুন্নাত সালাতে দারিয়ে যায় তাহলে সেটাও সুন্নাত বিরোধী।
সঠিক পদ্ধতি হলো, ইমামের সালাম ফিরানোর পর মুক্তাদি তার স্থানেই বসে সহিহ হাদিসের জিকির গুলো আমল করবে তার পর সে সুস্থির ভাবে সুন্নাত সালাতের জন্য দারাবে।
আল্লাহ আমাদেরকে ও তোমাকে উত্তম প্রতিদান "জান্নাত" দিন আমিন
সচেতনমূলক পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন