শুধু ’আল্লাহু’ ’আল্লাহু’ বলে জিকির করা কি শরীয়ত সম্মত? তিনটি ফতোয়া ও কিছু প্রশ্নোত্তর

লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ১৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:০৪:৩২ সকাল



শুধু ‘আল্লাহু’ ’আল্লাহু’ বলে জিকির করা কি শরীয়ত সম্মত?

এ বিষয়ে তিনটি ফতোয়া ও কিছু কথোপকথন:

আজকাল আমাদের সমাজের অনেক কথিত ‘হাক্কানি পীর’ এবং ‘আল্লামা’ দের কিতাবে দেখা যায় যে, তাঁরা তাঁদের ভক্ত-আশেকানদের কে অসম্পূর্ণ বাক্য “আল্লাহ্‌-আল্লাহ্‌” শব্দ দ্বারা জিকির করতে বলেন! এ-ব্যাপারে সৌদি আরবের বর্তমানে অদ্বিতীয় আলেমে দ্বীন “শাইখ সালিহ আল ফাওযান” যাকে পুরো আরব বিশ্বের তালেবে এলেম তথা ইসলাম চর্চাকারী’রা চেনেন না এমন কোন আরব নেই! তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এইভাবে, ‘আল্লাহ-আল্লাহ” অসম্পূর্ণ বাক্য দ্বারা জিকিরের হুকুম কি! এর জবাবে উনি যা বলেন, তা নিন্মে পেশ করছিঃ

প্রশ্নঃ আল্লাহর বিশেষ কোন নাম ধরে কি তাঁর যিকির করা জায়েয আছে। যেমন মানুষ বলে, ‘আল্লাহ আল্লাহ’ অথবা ‘ইয়া গাফূরু, ইয়া গাফূরু’ ইত্যাদি বলে যিকির করা। আমি জানি ‘আল্লাহ আল্লাহ’ বলা বিদআত। কিন্তু ‘হা’ অক্ষরে পেশ দিয়ে ‘আল্লাহু আল্লাহু’ বলার হুকুম কি?

উত্তরঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যে। ‘আল্লাহ’ শব্দ দ্বারা যিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করতে চাইলে এই ইবাদতে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হেদায়াত কি ছিল তা আমাদের জানা দরকার। যেমনটি অন্যান্য ইবাদতের নিয়মও জানা দরকার। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতে যিকির ও দুয়ার ক্ষেত্রে শুধু ‘আল্লাহ’ শব্দ ব্যবহারের কোন প্রমাণ নেই। চাই আল্লাহ শব্দের ‘হা’ অক্ষরে পেশ দিয়ে হোক বা জযম দিয়ে হোক- কোন প্রমাণ নেই। অনুরূপভাবে শুধু আল্লাহর সুন্দর নামগুলো ধরে তাঁকে ডাকারও কোন দলীল নেই। যেমন মানুষ বলে থাকে, ইয়া লাতীফু ইয়া লাতীফু, অথবা ইয়া গারফূরু ইয়া গাফূরু.. ইত্যাদি।

তাছাড়া এ ধরণের যিকিরগুলোকে অর্থবোধক বাক্য বা কথা বলা হয় না। আর এতে উপকারী কোন অর্থও প্রকাশ পায় না। এটা একক শব্দ যাতে কোন উপকার পাওয়া যায় না। কেননা এই নামগুলো উল্লেখ করে ডেকে যদি কোন আবেদন বা প্রার্থনা পেশ না করা হয়, তবে এই ডাকটাই অনর্থক হয়ে যায়।

শাইখ সালেহ ফাওযান বলেন, এটা বিদআত। নামাযের পর বা বিশেষ কোন সময়ে আল্লাহর নাম সমূহ যিকির করা এবং তার অভ্যাস গড়ে তোলা বিদআত। যেমন ইয়া লাতীফু,ইয়া লাতীফু, বা এরকম কোন নাম বিশেষ সংখ্যা ও বিশেষ পদ্ধতিতে যিকির করা। এগুলো ইসলামে সবই নতুন সৃষ্টি তথা বিদআত। উত্তম হেদায়াত হচ্ছে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হেদায়াত। আর নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে এই দ্বীনের মাঝে নতুন কিছু সৃষ্টি করা। প্রত্যেক বিদআতই হচ্ছে ভ্রষ্টতা।

(আল মুনতাকা মিন ফাতাওয়া ফাওযান ২/৮)

তাই যখন বলবে ‘ইয়া আল্লাহ ইরহামনী’ অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাকে দয়া কর। ‘ইয়া গাফূরু ইগফির লী’ অর্থাৎ হে ক্ষমাশীল আমাকে ক্ষমা কর, ‘ইয়া রাজ্জাকু উরযুকনী’ হে রিযিকদাতা আমাকে রিযিকদান কর, তখন তা হবে অর্থবোধক বাক্য এবং সেটা বৈধ যিকির।

অনুবাদক: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার। সউদী আরব।


___________________(২)__________________

শুধু “আল্লাহ” শব্দের যিকর:

যিকর শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, স্মরণ। আল্লাহর স্মরণে যে সব শব্দ বা বাক্য মুখে উচ্চারণ করে বলতে হয়, সাধারণতঃ শরীয়ার পরিভাষায় তাহাই যিক্ র। অবশ্য আন্তরিক স্মরণকেও যিকির বলা যায়। আল্লাহ বলেনঃ (এবং তোমার প্রতিপালককে অধিক স্মরণ করবে এবং সকালে ও সন্ধায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে।) [আল ইমরান/৪১]

সর্ব্বোত্তম যিক্ রঃ জ্ঞানীগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, সব চেয়ে উত্তম যিকির হচ্ছে, কুরআনুল কারীম। ইমাম নবভী বলেনঃ ‘জেনে রাখো, কুরআনের তিলাওয়াত সর্ব শ্রেষ্ঠ যিকর আর তা হচ্ছে, চিন্তা-ভাবনার সাথে তিলাওয়াত করা। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে প্রমাণিত যিকর সমূহ(দুআই মাসূরাহ)। আর তা অনেক তন্মধ্যে উত্তম হচ্ছে, [সুব্হানাল্লাহ, ওয়াল্ হামদু লিল্লাহ্ ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আক্ বার।]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় বাক্য চারটি, [সুব্হানাল্লাহ, ওয়াল্ হামদু লিল্লাহ্ ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আক্ বার। এর মধ্যে যার দ্বারায় শুরু কর না কেন কোন অসুবিধা নেই।[মুসলিম]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ ‘সব্বোর্ত্তম যিকর হচ্ছে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। [ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন এবং ইবনু হিব্বান ও হাকেম সহীহ বলেছেন।]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ ‘আমি ও আমার পূর্বের নবীগণ সব্বোর্ত্তম যা বলেছি, [তা হল,] ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকা লাহু’। [মালেক তাঁর মুআত্তায় বর্ণনা করেন এবং তাববারানীও বর্ণনা করেন। সনদ হাসান]

উপরোক্ত হাদীসগুলির আলোকে একথা প্রমাণিত যে, শুধু আল্লাহ শব্দের মাধ্যমে যিকির করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে প্রমাণিত নয় আর না তাঁর কোন সাহাবা হতে এটা প্রমাণিত।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেনঃ ‘শুধু (আল্লাহর) নাম তা গোপনে হোক কিংবা প্রকাশ্যে তা একটি পূর্ণ কথা নয় আর না একটি পূর্ণ বাক্য। আর না এর সম্পর্ক কুফর বা ঈমানের সাথে আছে, না আদেশ কিংবা নিষেধের সাথে সম্পর্কিত। আর না সালাফ (পূর্বসুরী) থেকে প্রমাণিত আর না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৈধ করেছেন। [মাজমুউল ফাতাওয়া/১০/৫৫৬]

একারণে উক্ত যিক্ র কে অনেক উলামা বিদআত বলেছেন। দেখুন, সাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ হাফেযাহুল্লাহের ওয়েব সাইট। www.islam-qa.com

সংকলনে: আব্দুর রাকীব (মাদানী) দাঈ, আল খাফজী দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


__________________(৩) _________________

প্রশ্ন: শুধু ’আল্লাহু’ ’আল্লাহু’ বলে জিকির করা কি শরীয়ত সম্মত?

উত্তর: আল হামদুলিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়া সালামু আলা রাসূলিল্লাহ। আম্মা বাদ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দুয়া ও জিকিরের ব্যাপারে যতগুলো হাদীস পাওয়া যায় সবগুলোই পূর্ণাঙ্গ বাক্য। যেমন, সুবাহান আল্লাহ, আল হামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ ইত্যাদি। কতবার পড়তে হবে সংখ্যা সহ হাদীসগুলোতে উল্লেখ আছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

أفضل ما قلت أنا والنبيون قبلي: لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير.

“আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণের বলা শ্রেষ্ঠ জিকির হল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর।”

তিনি আরও বলেন:

أفضل الذكر لا إله إلا الله

“শ্রেষ্ট জিকির হল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” তিনি আরও বলেন:

أفضل الدعاء الحمد الله

“শ্রেষ্ঠ দুয়া হল, আল হমদুলিল্লাহ।” এভাবে বহু হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে জিকিরের শব্দাবলী শিক্ষা প্রদান করেছেন।

কিন্তু আল্লাহ তায়ালার একটি মাত্র নাম নিয়ে একক শব্দে, (যেমন, আল্লাহু আল্লাহু… বা আর রাহমানু আর রাহমানু… ইত্যাদি) জিকির করার ব্যাপারে একটি হাদীস পাওয়া যায় না। সাহাবী তাবেঈদের নিকট থেকেও এমন নজির খুঁজে পাওয়া যায় না।

একক শব্দে জিকির করা যদি শরীয়ত সম্মত হত তবে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের জন্য উল্লেখ করতেন। সাহাবীগণও তা পালন করতে পিছুপা হতেন না।

ভ্রান্ত আকীদার পীর-ফকীর ও সূফীগণ এভাবে জিকির করে থাকেন। তাদের কেউ কেউ তো আল্লাহ শব্দ বাদ দিয়ে কেবল হু হু বলে জিকির করে থাকে। এভাবে তারা দীনের মধ্যে বিদআত আবিষ্কার করেছে। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী।

একটি হাদীস ও তার জবাব:

—————————————————–

আল্লাহ আল্লাহ শব্দে জিকির করার ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদীসটি দ্বারা দলীল পেশ করা হয়:

« لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لاَ يُقَالَ فِى الأَرْضِ اللَّهُ اللَّهُ »

“কিয়ামত ততদিন পর্যন্ত সংঘটিত হবে না যত দিন না ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ বলা বন্ধ হয়। (সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ: শেষ যমানায় ঈমান চলে যাওয়া।)

এর উত্তরে বলব: উক্ত হাদীসটি অন্য শব্দে এভাবে বর্ণিত হয়েছে:

لا تقوم الساعة حتى لا يقال لا إله إلا الله

“কিয়ামত ততদিন পর্যন্ত সংঘটিত হবে না যত দিন না লা ‘ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা বন্ধ হয়।”

(দ্র: মাজমাঊয যাওয়ায়েদ ওয়া মামবাউল ফাওয়ায়েদ, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান, অনুচ্ছেদ: “কিয়ামত ততদিন পর্যন্ত সংঘটিত হবে না যত দিন না লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা বন্ধ হয়।)

এ হাদীসেগুলো অর্থ অত্যন্ত স্পষ্ট যে, কিয়ামত এমন এক সময় সংঘটিত হবে যখন পৃথিবীর বুকে এমন একজন মানুষও বিদ্যমান থাকবে না যে ’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বা ‘আল্লাহ’ শব্দটি মুখে উচ্চারণ করে। সব মানুষ যখন আল্লাহকে ভুলে শিরক, কুফুরী, নোংরামি, ও নানা পাপাচারে ডুবে যাবে তখন এ সকল নিকৃষ্ট মানুষদের উপর কিয়ামত সংঘটিত হবে।

উক্ত হাদীস থেকে ১০০, ২০০, ৫০০, ১০০০ বা এক লক্ষবার… আল্লাহু আল্লাহু জিকির করার বৈধতা আদৌ প্রমাণিত হয় না।

সুতরাং মুসলমানদের কর্তব্য, ইবাদত-বন্দেগী এখলাসের সাথে এমনভাবে করা যেভাবে দ্বীনের নবী শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। তার দেখানো পন্থাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানোন।

কতিপয় কথোপকথন/ প্রশ্নোত্তর:

উক্ত বিষয়ে আমার লেখাটা ফেসবুকে ছাড়ার পর কিছু ভায়ের সাথে কথোপকথন হয়েছে। এগুলোর মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথোপকথন নিচে তুলে দেয়া হল:

জনৈক প্রশ্নকারী:আল্লাহ তাআলা তাঁর কালামে ইরশাদ করেছেন:

وَلِلّهِ الأَسْمَاء الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا

“নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য সুন্দর নামসমূহ রয়েছে। তোমরা আল্লাহকে ঐ সমস্ত নামে ডাক।” (সুরা আ’রাফ) সুতরাং, যেখানে আল্লাহ স্বয়ং তাঁর কালামে তাঁকে এ সমস্ত নামে ডাকতে আদেশ দিচ্ছেন, সেখানে এ সমস্ত নামে ডাকা কিংবা বারবার জপা বা উচ্চারণ করা (অর্থাৎ যিকির করা) কে আপনি বিদআত কিভাবে বলেন?

আমার উত্তর: উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আদেশ করছেন, আমরা যেন তার নামের ওসীলায় তাঁর নিকট দুয়া করি। কোন কিছু চাইতে হলে তার নাম ধরে যেন চাই। তাঁকে যেন তাঁর সুন্দর সুন্দর নাম ধরে তাকে ডাকি। যেমন, রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ডাকার পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন এভাবে:

(১) কোন ব্যক্তির জীবনে যখন বিপদ-আপদ, দু:শ্চিন্তা বা পেরেশানী নেমে আসে তখন সে যেন বলে:

لا إله إلا الله العظيم الحليم ، لا إله إلا الله رب العرش العظيم ، لا إله إلا الله رب السماوات والأرض ورب العرش الكريم رواه الشيخان والترمذي والنسائي

(২) তিনি ফাতিমা রা.কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তুমি সকাল সন্ধায় এ দুয়াটি পাঠ করবে: : يا حي يا قيوم برحمتك أستغيث, হে চিরঞ্চিব, হে সব কিছুর সংরক্ষক, তোমার রহমতের ওসিলায় তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি। (তিরমিযী, সহীহ)।

(৩) অনুরূপভাবে সূরা হাশরেরর ২২, ২৩ ও ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়াল অনেকগুলো নাম বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত তিনটি আয়াত পাঠ করে আল্লাহর নিকট দুয়া করতে বলেছেন, (দারেমী, মাকাল ইবনে ইয়াসার রা. হতে বর্ণিত)

প্রশ্নকারী: আল্লাহ তাঁকে তাঁর সুন্দর নামে ডাকতে আদেশ দিয়েছেন। তাই আমি আল্লাহকে আল্লাহ, আর রাহমান, আর রাহিম নামে ডাকলাম এবং অনেক্ষণ ধরে ডাকলাম। এতে সমস্যাটা কোথায়? আপনার আলোচনা হতে পারে, নির্দিষ্ট সংখ্যাকে জরুরী মনে করা ঠিক না বেঠিক, আল্লাহ, আল্লাহ না বলে কেবল হু হু যিকির করা ঠিক না বেঠিক। কিন্তু একাধিকবার আল্লাহ আল্লাহ ডাকলেই সেটা বেদআত হবে কেন?

উত্তর: আল্লাহর নাম ধরে ডাকার ব্যাপারে তো আপত্তি করা হয় নি। ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাহমান, ইয়া হাইউ, ইয়া কাইয়ুমু, অথবা আল্লাহুম্মা.. এভাবে ডাকলে তো তখন সেটা আর অপূর্ণ বাক্য থাকল না। তবে কথা হল, এভাবে ডাকার পর নিজের চাহিদা তুলে ধরতে হবে। যেমন, ইয়া গাফুর, ইগফির লী অর্থাৎ হে ক্ষমাশীল, আমাকে ক্ষমা করুন। ইয়া রাযযাক, উরযুক নী..হে রিজিক দাতা, আপনি আমাকে রিজিক দিন। ডাকার পর যদি কোন কিছু না চাওয়া হয় তবে এই ডাকার কোন অর্থই থাকল না। আপত্তি হল, শুধু আল্লাহু আল্লাহু আল্লাহু বলে অপুর্ণ বাক্য দ্বারা জিকির করার ব্যাপারে। অনুরূপভাবে মুখস্ত করার উদ্দেশ্যে বারবার পড়া আর জিকির করা এক কথা নয়।

প্রশ্নকারী: রাসুল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: إن لله تسعة وتسعين اسماً من حفظها دخل الجنة رواه البخاري লক্ষ্য করুন এখানে حفظها বলা হয়েছে। তো হিফয করার জন্য কি এক শব্দ বারবার পড়তে হয় না। বারবার পড়া বেদআত হলে এগুলোকে হিফয করতে কেন বললেন?

আমার উত্তর: আমাদের আলোচনা একক শব্দে জিকির করা প্রসঙ্গে। আল্লাহর নাম মুখস্ত করার উদ্দেশ্যে বার বার পড়া আর জিকির করা এক কথা নয়।

আরেক জন প্রশ্নকারী: বিলাল রা. কে যখন তার মনীব পাথর চাপা দিয়ে নির্যাতন করছিলো তখন তিনি কেবল ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ বলেছিলেন? এ থেকে কি একক শব্দে আল্লাহর জিকির প্রমাণিত হয় না?

আমার উত্তর: খেয়াল করুন, বেলার রা. কে যখন উত্তপ্ত বালির উপর ফেলে বুকের উপর বিরাট পাথর চাপা দিয়ে এক আল্লাহর দাসত্ব পরিহার করার জন্য নির্যাতন করা হচ্ছিল তিনি তখন আল্লাহ আল্লাহ বলে জিরিক করেন নি। তিনি আহাদ আহাদ বলেছেন। অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন আহাদ মানে একক..আল্লাহ এককভাবে ইবাদতের যোগ্য। অন্য কেউ নয়। কারণ, তিনি জানতেন আরবের মুশরেকরা আল্লাহ অস্বীকার করত না। কিন্তু এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করাকে অস্বীকার করত। তাই তিনি এই কঠিন পরিস্থিতিতেও তাদেরকে এই একত্তবাদের স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। তিনি সেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কোন দিন আহাদ আহাদ বা আল্লাহ আল্লাহ বলে জিকির করেছেন মর্মে কি কোন প্রমাণ পাওয়া যায়?

-আব্দুল্লাহিল হাদী, দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার। সউদী আরব।


বিস্তারিত এখানে পাবেন দেখুন



অফটপিকঃ

এত সুন্দর একটি হাদিস থাকতেও আমরা ফরজ নামাজের সালাম শেষে দুই হাত তুলে সম্মিলিত দুআ করা শুরু করি। অথচ সালাম ফিরানোর পর সহিহ হাদিস অনুমদিত অনেক জিকির আছে যা পাঠ শুরু করলে সাধারন একজন মুসল্লির দুই রাকার সুন্নাত সালাত শেষ হয়ে যায় কিন্তু জিকির শেষ হয়না।

ইমাম বুখারী (র) তার সহিহ আলবুখারীতে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন "সালাতে সালামের পরে জিকির" হায় ইমাম বুখারী (র) যা বুঝলো আমাদের তার কাছে যেতেও শত বাধা। এখন এমন হয়ে গেছে যে, সালাতে সালাম ফিরানোর পর দুই হাত তুলে সম্মিলিত দুআ না করলে অনেকে বিদআতি মনে করে। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তাওফিক দিন।

বিষয়: বিবিধ

৭৯৯২ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

162699
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:১২
আবু আশফাক লিখেছেন : ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ণ ফতওয়া শেয়ার করার জন্য। বিষয়টি আগে জানা ছিল না। জাযাকাল্লাহ খাইরান, ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখেরাহ।
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:২৪
116959
ইমরান ভাই লিখেছেন : বারাকাল্লাহু ফিকুম ......Praying Praying Love Struck Love Struck
162709
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:১৭
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : চমৎকার শিক্ষণীয় পোস্টের জন্য আল্লাহ আপনাকে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করুন। আমীন Praying
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৪২
117012
ইমরান ভাই লিখেছেন : আপা আপনাকেও ধন্যবাদ। তবে শেষের অফটপিক টি আমার নিজস্ব লাগানো সবইকে একটি সুন্দর ম্যাসেজ দিলাম এর মাধ্যমে। Love Struck
162713
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:২৮
নেহায়েৎ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইর ফিদদুনিয়া ওয়াল আখিরাহ। ফেসবুকে একাউন্ট করেছেন?? এখানে যারা লেখেন তারা সবাই ফেসবুকে আছেন ভাইজান।
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩
117013
ইমরান ভাই লিখেছেন : বারাকাল্লহু ফিকুম,,,,...
Crying Crying আমি জানিনা আমরা ফেবুতে কখন আসা হবে কি না।Crying Crying
কোনদিন আসলে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।Love Struck Love Struck
162716
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:০৪
সিটিজি৪বিডি লিখেছেন : আমাদের সবাইকে ইসলামের সঠিক পথে চলার তওফিক দান করুন আমিন।
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩
117014
ইমরান ভাই লিখেছেন : আমিন....Love Struck Love Struck
162717
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:১০
বুড়া মিয়া লিখেছেন : সুন্দর ব্যাখ্যার জন্য ধন্যবাদ
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩
117016
ইমরান ভাই লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খাইর ধন্যবাদ আপনাকে। Love Struck
162729
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:০৩
শেষ বিকেলের লিখেছেন : এইসব বালছাল পোষ্ট ছাগলজাতির জন্য উপকারি।
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪
117017
ইমরান ভাই লিখেছেন : মানুষ জদি ছাগল হয় তা হলে তুমি কি?? ছাগী নাকি???
অবশ্য তোমরাতো নিজেদেরকে জারজ মনে করো।
=Happy =Happy =Happy
162761
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৪৪
আফরা লিখেছেন : হে আল্লাহ আমি ইমরান ভাই এর পোষ্ট থেকে অনেক কিছু শিখলাম আল্লাহ তুমি আমাকে আমল করার তৌফিক দিও আর ইমরান ভাইকে দুনিয়া ও আখিরতে এর উত্তম প্রতিদান দিও ।আমীন ।

ইমরান ভাই জিন্দাবাদ ।
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:১৮
117074
শর্থহীন লিখেছেন : আমিন --
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৩১
117109
ইমরান ভাই লিখেছেন : আল্লাহ তুমি আফরার দুআ’ কবুল করো আমিনন। PrayingPrayingPraying

আর হে আল্লাহ জিন্দাবাদ চাইনা
“যখন আমার তোমার কাছে যাওয়াই শ্রেয় হয় তখন আমাকে নিয়ে জেও আর আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দিও” আমিন।
162768
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:১৮
শর্থহীন লিখেছেন : আফরা লিখেছেন : হে আল্লাহ আমি ইমরান ভাই এর পোষ্ট থেকে অনেক কিছু শিখলাম আল্লাহ তুমি আমাকে আমল করার তৌফিক দিও আর ইমরান ভাইকে দুনিয়া ও আখিরতে এর উত্তম প্রতিদান দিও ।আমীন ।

ইমরান ভাই জিন্দাবাদ ।
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৩১
117110
ইমরান ভাই লিখেছেন : আল্লাহ তুমি আফরার দুআ’ কবুল করো আমিনন। PrayingPrayingPraying

আর হে আল্লাহ জিন্দাবাদ চাইনা
“যখন আমার তোমার কাছে যাওয়াই শ্রেয় হয় তখন আমাকে নিয়ে জেও আর আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দিও” আমিন।
163343
১৬ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:২১
ভিশু লিখেছেন : উপকারী শেয়ার!
Praying Good Luck Happy Rose
১৭ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:২১
117719
ইমরান ভাই লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই। Love Struck Love Struck
১০
164638
২০ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:৪০
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : শোকরিয়া সুন্দর একটি পোষ্টের জন্য।জিকিরের মানেই হলো সকল কাজে আল্লাহকে স্মরন করা।
২০ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৭:৫৫
118921
ইমরান ভাই লিখেছেন : শুকরান...Love Struck Love Struck
১১
168594
২৭ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৪৪
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ এবং পিলাচ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:০৫
132241
ইমরান ভাই লিখেছেন : Love Struck Love Struck
১২
179190
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:৪১
মুমতাহিনা তাজরি লিখেছেন : ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করার জন্য।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:০৬
132242
ইমরান ভাই লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

বোনজি আপনার প্রফাইল পিকচার টি কি আপনার কেউ? মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১৩
132487
মুমতাহিনা তাজরি লিখেছেন : আমার ভাগনী মুমতাহিনা তাজরি।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:৩৩
132642
ইমরান ভাই লিখেছেন : মাশাআল্লাহ শুনে ভালো লাগলো।
তাহলে ওর নামে আপনার একাউন্ট? ও বড় হলে ওকে দিয়ে দিবেন বুঝি?

আল্লাহ মুমতাহিনা তাজরি কে ইহকাল ও পরকালের জন্য কবুল করুন আমিন।Praying
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:১৫
132805
মুমতাহিনা তাজরি লিখেছেন : ওকে দিয়ে দেব কিভাবে ? কারন ওতো বাংলা লিখতে ও পড়তে পারবেনা।ওরা আমাদের সাথে ফ্রান্সে থাকে।Crying Crying আপনার দোয়ায় আমীন।Praying Praying
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৭
132849
ইমরান ভাই লিখেছেন : ওকে কি আপনারা বাংলা শেখান না?Surprised SurprisedFrustrated Frustrated
বাংগালী Thinking হয়ে বাংলায় ০০% Crying Crying
ওকে বাংলা পড়তে ও লিখতে শেখার দায়িত্ব আপনার উপর থাকলো। Waiting Waiting
তাহলে ভবিষ্যতে সে আমাদের একজন নতুন ব্লগার হবে ইনশাআল্লাহ। যে ইসলামের জন্য কলমের যুদ্ধ করবে। Praying Praying
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:১৯
132852
মুমতাহিনা তাজরি লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ!!চেষ্টা করব।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File