দুআ ( ইসলামী গল্প )
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ১৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ০১:৪৭:৪১ দুপুর
এক দেশে একজন বিশাল ধনী ব্যক্তি ছিলেন। কোন কিছুরই অভাব ছিল না তার। কিন্তু তিনি ছিলেন খুবই কৃপন ও অহংকারী। তার এত অঢেল সম্পদ থাকার পরও তিনি কাউকে একটি কানা কড়িও দিয়ে সাহায্য করতেন না। এমনকি তার নিকট আত্বীয়ওরা যদি বড় বিপদের সময় তার কাছে কিছু চাইত তিনি তাদের সাথে চামারের মত ব্যবহার করতেন। তার সবসময় চিন্তা ছিল কিভাবে এই সম্পদকে আরো বাড়ান যায়।
সেই কৃপনের এলাকায় একজন বৃদ্ধ ফকির এলেন। ফকিরটি ছিলেন খুব-ই বৃদ্ধ। ফকিরের একটি বড় গুন ছিলো, যদি কেউ তাকে সাহায্য করত তবে তিনি তার জন্য প্রান খুলে দোয়া করতেন।
বৃদ্ধ ফকিরটি একদিন ছাইয়ের প্রয়োজন হলো। বৃদ্ধ ফকির কৃপন লোকটির বাড়িতে গিয়ে বললেন বাবা তুমি যদি আমাকে একমুঠো ছাই দিতে তবে আমার বড়ই উপকার হতো। কৃপন লোকটি অহংকারের সুরে বল্ল। ঐ যে, ওখানে চুলা আছে ওখান থেকে নিয়ে দুর হও।
বৃদ্ধ লোকটি ছাই নিয়ে কৃপন লোকটির সামনে এসে দুহাত তুলে দোয়া করতে থাকলেন এভাবে: হে আল্লাহ্ যে ব্যক্তি আমাকে একমুঠো ছাই দিয়ে উপকার করল তুমি তাকে এর বিনিময়ে মুঠো পরিমান স্বর্ণ দিয়ে হাত ভরিয়ে দাও। কৃপন লোকটি কিছুটা অবাক হলো তার এই দোয়া দেখে। সে চিন্তা করল সামান্য ছাইয়ের জন্য কেউ এইভাবে দোয়া করে। প্রতিদিন কতছাই না ফেলে দেই।
কিছুদিন পর বৃদ্ধ ফকির আবার তার বাড়িতে এল, এবং বল্ল বাবা এক গ্লাস পানি দিবে। আমার বড়ই তেষ্টা পেয়েছে। লোকটি চিন্তা করল এক গ্লাস পানি এ আর এমন কি, খুব বেশি কিছু না ভেবেই তাকে এক গ্লাস পানি দিল।
বৃদ্ধ পানি পান করে, দুই হাত তুলে দোয়া করতে থাকল| হে আল্লাহ যে দায়ালু ব্যাক্তি আমাকে এক গ্লাস পানি দিয়ে আমার তৃষ্ণা নিবারন করাল, হে দয়ালু আল্লাহ্ কাল কেয়ামতের দিনে যখন সবাই পানি তেষ্টায় কাতর থাকবে, সে দিন তুমি তোমার রহমতের পানি দ্বারা তার কষ্টকে নিবারন করো। আর এই দুনিয়াতে তার সকল অভাব দুর করে দাঁও। এই বলে বৃদ্ধ চলে গেল।
বৃদ্ধ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ল। তাই সে সেদিন ভিক্ষা করতে বের হতে পারলনা। এসময় তার ঘরে আর কোন খাবারও ছিল না। বৃদ্ধ ফকিরটি এলেন কৃপনের কাছে। বল্ল বাবা গতকাল রাত হতে কিছুই খাইনি। খুবই ক্ষিদা পেয়েছে দুমুঠো বাসি বা পচা ভাত হবে।
কৃপনের ঘরে কিছু বাসি ভাত ছিল| ভাতগুলো খাওয়ার মতো না একটু পরে ফেলেই দিতে হবে। তাই তেমন কিছু চিন্তা না করে সে বৃদ্ধকে একপ্লেট বাসি ভাত দিল। পরে আবার কি মনে হলো, তাকে আবার একটু তরকারি দিল। যদিও এই কৃপন পূর্বে এমনটি কখনও করেনি।
বৃদ্ধ লোকটি খাবার শেষ করে কৃপন লোকটির জন্য দোয়া করতে শুরু করল। হে আল্লাহ তোমার যে বান্দা আমাকে ভাত খাইয়ে আমার ক্ষুদার তীব্র যন্ত্রনাকে দুর করাল, হে দয়াময় আল্লাহ্ তুমি তার সকল ধরনের বিপদ আপদ দুর করে দাও, তাকে এমন সু-সন্তান দান কর যারা তার পিতার প্রতি বাধ্য থাকবে এবং তার পিতার সম্মান সারা দুনিয়ার বুকে বৃদ্ধি করবে| হে দয়াময় আল্লাহ্ তুমি তাকে এমন পাহাড় পরিমান সম্পদ দান কর যা কখনও শেষ হবে না। এভাবে বৃদ্ধ ফকির টি বিভিন্ন ভাবে দোয়া করতে শুরু করল।
ফকির টি অনেক সময় ধরে দোয়া করছিল একটা সময় ফকিরের দোয়া দেখে অহংকারী কৃপন লোকটির মন খুব নরম হয়ে গেল এবং তার চোখ থেকে দরদর করে পানি গড়িয়ে পড়ল মাটিতে। এমন ভাবে সেই পানি বের হতে লাগল তা যেন, আর থামতেই চাইছে না। কৃপন লোকটি খুব ভালভাবেই বুঝতে পারলেন মানুষের জন্য মানুষের দোয়া অনেক মূল্যবান যা পৃথিবীর সব সম্পদ দিয়েও কেনা যায় না।
তখন থেকে তিনি মনে মনে ঠিক করলেন এখন থেকে তিনি আর কোন গরীব লোককে খালি হাতে ফিরিয়ে দিবেন না। এবং কয়েক বছর পর দেখা গেল তিনি হয়ে উঠলেন সেই দেশের সবচাইতে দানশীল ব্যক্তি একই সাথে তিনি আল্লাহর রহমতে হয়ে উঠলেন সেই দেশের সবচাইতে ধনী ও সম্মানীত ব্যাক্তিতে।
উৎস
বিষয়: বিবিধ
২৯৪৬ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
JazakAllah khair.
মন্তব্য করতে লগইন করুন