পুরাতন যুগের কয়েকটি কবিতা.....
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ১৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৮:২৬:১৯ সকাল
পুরাতন যুগের কয়েকটি কবিতা
___________________(১)_______________
ষোল আনাই মিছে
………….সুকুমার রায়
বিদ্যে বোঝাই বাবুমশাই চড়ি সখের বোটে,
মাঝিরে কন, ”বলতে পারিস সূর্যি কেন ওঠে?
চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?”
বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফ্যালফ্যালিয়ে হাসে।
বাবু বলেন, ”সারা জীবন মরলিরে তুই খাটি,
জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি।”
খানিক বাদে কহেন বাবু, ”বলতো দেখি ভেবে
নদীর ধারা কেমনে আসে পাহাড় থেকে নেবে?
বলতো কেন লবণ পোরা সাগর ভরা পানি?”
মাঝি সে কয়, ”আরে মশাই অত কি আর জানি?”
বাবু বলেন, ”এই বয়সে জানিসনেও তা কি
জীবনটা তোর নেহাৎ খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁকি!”
আবার ভেবে কহেন বাবু, ” বলতো ওরে বুড়ো,
কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চুড়ো?
বলতো দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহণ লাগে কেন?”
বৃদ্ধ বলে, ”আমায় কেন লজ্জা দেছেন হেন?”
বাবু বলেন, ”বলব কি আর বলব তোরে কি তা,-
দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা।”
খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে,
বাবু দেখেন, নৌকাখানি ডুবলো বুঝি দুলে!
মাঝিরে কন, ” একি আপদ! ওরে ও ভাই মাঝি,
ডুবলো নাকি নৌকা এবার? মরব নাকি আজি?”
মাঝি শুধায়, ”সাঁতার জানো?”- মাথা নাড়েন বাবু,
মূর্খ মাঝি বলে, ”মশাই, এখন কেন কাবু?
বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে,
তোমার দেখি জীবন খানা ষোল আনাই মিছে!
___________________(২)_________________
মাথায় কত প্রশ্ন আসে
………….সুকুমার রায়
মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার -
সবাই বলে, ”মিথ্যে বাজে বকিসনে আর খবরদার!”
অমন ধারা ধমক দিলে কেমন করে শিখব সব?
বলবে সবাই ”মুখ্য ছেলে”, বলবে আমায় ”গো গর্দভ!”
কেউ কি জানে দিনের বেলায় কোথায় পালায় ঘুমের ঘোর?
বর্ষা হলেই ব্যাঙের গলায় কোত্থেকে হয় এমন জোর?
গাধার কেন শিং থাকে না, হাতির কেন পালক নেই?
গরম তেলে ফোড়ন দিলে লাফায় কেন তা ধেই ধেই/
সোডার বোতল খুললে কেন ফসফসিয়ে রাগ করে?
কেমন করে রাখবে টিকি মাথার যাদের টাক পড়ে?
ভূত যদি না থাকবে তবে কোত্থেকে হয় ভূতের ভয়?
মাথায় যাদের গোল বেঁধেছে তাদের কেন ”পাগোল” কয়?
কতই ভাবি এসব কথার জবাব দেবার মানুষ কই?
বয়স হলে কেতাব খুলে জানতে পাব সমস্তই
___________________(৩)__________________
কাজের ছেলে
……….যোগীন্দ্রনাথ সরকার
‘দাদখানি চাল, মুসুড়ের ডাল,
চিনি-পাতা দৈ,
দু’টি পাকা বেল, সরিষার তেল,
ডিম-ভরা কৈ।’
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি,
পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়,
ছিঁড়ে দেবে চুল।
‘দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল,
চিনি-পাতা দৈ,
দু’টি পাকা বেল, সরিষার তেল,
ডিম-ভরা কৈ।’
বাহবা বাহবা- ভোলা, ভূতো, হাবা
খেলিছে তো বেশ।
দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে,
কেনা হলে শেষ।
‘দাদখানি চাল, মুসুড়ের ডাল,
চিনি-পাতা দৈ,
ডিম ভরা বেল, দু’টা পাকা তেল,
সরিষার কৈ।’
ওই তো ওখানে ঘুড়ি ধরে টানে,
ঘোষেদের ননী:
আমি যদি পাই, তা হলে উড়াই
আকাশে এখনি।
দাদখানি তেল, ডিম-ভরা বেল,
দু’টা পাকা দৈ,
সরিষার চাল, চিনি-পাতা ডাল,
মুসুড়ের কৈ!
এসেছি দোকানে-কিনি এই খানে,
যদি কিছু পাই;
মা যাহা বলেছে, ঠিক মনে আছে,
তাতে ভুল নাই!
দাদখানি বেল, মুসুড়ের তেল,
সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দু’টা পাকা ডাল,
ডিম-ভরা দৈ।
__________________(৪)___________________
ইদুর আর বিড়াল....
ক্রিং ক্রিং টেলিফোন
হ্যালো হ্যালো হ্যালো,
কে তুমি কাকে চাই
বলো বলো বলো।
আমি ম্যাও হুলো ক্যাট
ইঁদুরকে চাই,
জরুরী আলাপ আছে
তুমি কে হে ভাই।
আমিই ইঁদুর তবে
কথা হল এই,
আমি গেছি মার্কেটে
বাড়ীতেই নেই।
ক্রিং ক্রিং টেলিফোন
শুন হে ইদুর,
শুনব না শুনব না
দূর দূর দূর…
কোথাও ভুল হলে জানাবেন আশা করি।salafibd.wordpress.com থেকে কালেকটেড
বিষয়: বিবিধ
২৫৯৮ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ফাস্টু হাবার জন্য
এরকম মৌলিক ভুল করলে হাতুড়ি হবে
চোখ দিয়ে দেখেই শুনে ফেলছেন
আমিও চোখ দিয়ে দেখেই শুনে ফেলছি..
স্কুলে থাকতে এরকম কবিতা পড়তে খুবই মজা লাগতো ।
সে সময় সব কবিতাতেই ছন্দ মেলানো থাকতো ।
আর এখনকার আধুনিক কবিতা দুই লাইন পড়ে ছন্দ না মেলানোতে আর পড়তেই ইচ্ছা হয় না ।
ভালোলাগলো আপনার কমেন্টস দেখে।.
পাউরুটি আর ঝোলা-গুড়!
এই কবিতাটা আমার খুব মজা লাগে...
মন্তব্য করতে লগইন করুন