ঈগল ভাইয়ের দুইটি প্রশ্ন ও তার সহজ উত্তর...

লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ১১ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৮:২৭:৫৯ রাত

"আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস সলাত ওয়াস সালাম আলা রাসুলিল্লাহ"


আমাদের এক ব্লগার ভাই নাম ঈগল এক পোস্টে দুইটি প্রশ্ন করেছেন, আমি যদিও তার উত্তর সেই পোস্টে দেবার চেস্ঠা করেছি তার পর সকল মুসলিমের উপকার হবে ভেবে পোস্ট আকারে দিলাম।

আল্লাহ আমাদেকে সরল পথ দেখান আমিন।

ঈগল লিখেছেন : লিখাটি পড়লাম না। কারণটি হল, আমি মাযহাব মানার পক্ষে। কিন্তু আমি নিজে আমার সমস্যার সমাধানগুলি সহীহ বুখারী এবং মুসলিম থেকে গ্রহণ করি। কারণ অতীত বর্তমান প্রায় সব ফকীহই এই দুই গ্রন্থকে কালামে পাকের পরে সর্বোচ্চ সহীহ বলে সীকৃতি দিয়েছেন। এই দুই গ্রন্থ থেকে সমাধান না পেলে তখন আমি হানাফি মাযহাবের দারস্থ হয়। প্রশ্ন হচ্ছে আমি কি অন্যায় করছি?

=========

প্রশ্ন নং ২- শত শত হাদিস রয়েছে যেগুলি একদল মুহাদ্দেস বলেছেন সহীহ আরেক দল বলেছেন দয়ীফ। উদাহণ স্বরুপ- রফয়ুুল ইয়াদাইন না করার হাদিস সমূহ। রফইল ইয়াদাইন না করার হাদিস সমূহ নিয়ে মুহাদ্দিস এবং ফকীহগনের মধ্যে চরম বির্তক রয়েছে, সহীহ নাকি দয়ীফ, কোনটি বেশি উত্তম ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রশ্নটি হচ্ছে আমি কি বির্তকের দিকে যাব নাকি সর্বজন গৃহিত সহী বুখারীর হাদিস আমল করবো? আমার জন্য কোনটি উত্তম হবে? আশা করছি উত্তর পাব।

==========

মন্তব্য- ভাই, আমি দেখছি আপনি মাযহাব নিয়ে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এটাকি ঠিক হচ্ছে। আমার ধারণা,এর থেকেও কঠিন সমস্যার মধ্যে আমরা রয়েছি। মাযহাব মানা না মানা নিয়ে শত শত শতাব্দী থেকে বির্তক চলে আসছে। কোন সমাধান হয়েছে কি? সুতরাং বাদ দেন না। নতুন কিছু, ক্রিয়েটিভ কিছু করুন না।


আমার দেয়া উত্তরঃ

ঈগল ভাই, আপনি যাই জানতে চান, তাদের উত্তর হবে মাযহাব আগে মানা। তারপরেও আপনি না মানলে আপনি হয়ে যাবেন আহলে হাদিস,সালাফি,ওহাবী ইত্যাদি..

শেষমেষ না পারলে গালাগালি শুরু....

১ম উত্তরঃ

সমাধানগুলি সহীহ বুখারী এবং মুসলিম থেকে গ্রহণ করেন কোন সমস্যা নাই। তারপর যা পাবেন না তা ৪ ইমামের এবং অন্যান্ন আহলে ইলম যে সমাধান দিয়েছেন তাদের মধ্যে যেটি কোরআন ও সহিহ হাদিসের বেশি সামযস্য পূর্ন তা গ্রহন করুন। ইমাম মুসলিম তার সহিহ মুসলিমের মুকাদ্দামা অধ্যায়ে তার ছাত্রকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, "তোমার আশা আছে-আল্লাহ তাআলা তোমাকে এর মাধ্যমে (সহিহ মুসলিম গ্রন্থের) হেদায়েত দান করবেন"



আল্লাহ আপনাকে সরল পথ দেখান আমিন।

২য় উত্তরঃ

রফউল ইয়াদাঈন সম্পর্কে,

আপনার উত্তরের জন্য এখানে দেখতে পারেন...সালাতে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অন্যত্র হাত উত্তোলন প্রসঙ্গে একটি প্রশ্নের জবাব

তার পরও একটু বলেদেই,

আহলে ইলমরা রফউল ইয়াদাঈনকে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ মর্মে অভিহিত করেছেন। তবে এটি কেউ না করলেও তার নামায হবে। যদিও এটির না করার কারণে তাঁর সুন্নাহর অনুসরণ হলো না। তাই আমাদের উচিত সুন্নতকে আকড়ে ধরা। কেননা,

রসুল (সা) বলেছেন,

"তারাকতু ফিকুম আমরাইণ, লানতাদিল্লু মাতামসসাকতুম বিহিমা কিতাবাল্লাহি ওয়া সুন্নাতি রাসুলীহ"

অর্থঃ তোমাদের জন্য আমি দুইটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতক্ষন তোমরা সে জিনিসদুটি আকড়ে ধরে থাকবে তোমরা কখনও পথভ্রস্ট হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব (কোরআন) ও রসুলের (সা)সুন্নাহ (অর্থাৎ সহিহ হাদিস)।

(ইমাম মালেকের মুয়াত্তা,হাদিসটি সহিহ)

নতুন সংযোজনঃ

কোরআনে আল্লহ সুবহানাহু তাআলা সুরা নিসায় ৮০ নং আয়াতে বলেছেন,

"যে কেউ [b]রসুলের অনুগত হয় নিশ্চই সে আল্লাহরিই অনুগত হয়ে থাকে; এবং যে ফিরে যায় আমি তার জন্য তোমাকে (মুহাম্মদ সা) রক্ষক প্রেরন করিনি"[/b]

এই আয়াতের তাফসিরে ইমাম ইবনু কাসির (রহ) বলেন,

"আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-আমার বান্দা ও [b]রসুল মুহাম্মদ (সা) এর যে অনুগত প্রকারন্তরে সে আমারই অনুগত। তার যে অবাধ্য সে আমারই অবাধ্য। কেননা আমার নবী নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলে না। আমার পক্ষথেকে তার উপর যে অহি করা হয় তাই সে বলে।" [/b]

(আরোও বিস্তারিত দেখুন তাফসির ইবনে কাসির সুরা নিসা ৪৯২ পৃস্টা)

অন্য আয়াতে আল্লাহ সুবাহনাহু তাআলা বলেন,

"বলুন (হে মুহাম্মদ) তোমরা জদি আল্লাহকে ভালো বাসতে চাও তাহলে আমাকে অনুসরন করো তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালো বাসবেন...."

তাই আমাদেরকে রসুল (সা) কে ভালো বাসতে হবে তার সুন্নাহ পালনের মাধ্যমে শুধু মুখের মাধ্যমে নয়। কারন সুন্নাহ পালন করতে গিয়ে অনেক সময় বাধা বিপত্তি, বিরুদ্ধবাদীদের অনেক কথাই সুনতে হয়।

সেই সকল বিরুদ্ধবাদীদের কথাকে ছুরে ফেলে আসুন আমরা রসুল (সা) এর সুন্নাহ পালনে সচেস্ট হই এবং তাকে ভালবাসার পরীক্ষায় উত্তির্ণ হই তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ভালোবাসবেন ইনশাআল্লাহ।

নবী ﷺ বলেন, তোমাদের সামনে অপেক্ষা করছে ধৈর্যের দিন। বর্তমানে তোমরা যে আমলের উপর রয়েছো ঐ সময়ে যে ব্যাক্তি এই কাজগুলো দৃঢ়ভাবে করবে সে তোমাদের পঞ্চাশ জনের সওয়াব পাবে। তারা বললো, হে আল্লাহর নবী ﷺ তা কি তাদের পঞ্চাশ জনের মত? তিনি ﷺ বললেনঃ না, বরং তোমাদের পঞ্চাশ জনের মত। তারা বরলো, হে আল্লাহর নবী! তা কি তাদের তাদের পঞ্চাশ জনের মত? তিনি ﷺ বললেনঃ না, বরং তোমাদের পঞ্চাশ জনের মত। কথাটি তিনবার বা চরবার পুনরাবিত্তি করেন।

(হাদিস সহিহ, ত্বাবারাণী হা/১৩৭৬, সিলসিলাহি সহিহা হা/১২২১৫ “অন্য বণনায় রয়েছে ”তোমাদের পঞ্চাশ জন শহীদের সমান”-কিন্তু এর সানাদ যঈফ দেখুন সহিহা হা/৪৯৪ যঈফা হা/৩৯৫৯, তাহকীক মিশকাত হা/৫১৪৪)

রসুল ﷺ বলেছেন,

"দ্বীন ইসলাম সূচনায় যেমন অপরিচিত ও প্রভাবহীন ছিল তেমনি অবস্থা পরেও দেখা দিবে। এই সময়কার এই অপরিচিত লোকদের জন্য সুসংবাদ। আর এই অপরিচিত লোক হচ্ছে তারা, যারা আমার পরে আমার সুন্নাতকে বিপর্যস্ত করার যাবতীয় কাজকে নিমূল করে সুন্নাতকে পুনঃপ্রতিস্ঠা করতে চেস্ঠিত হবে"

(তিরমিজি, শায়খ আলাবানী হাদিটিকে সহিহ বলেছেন)

হারিয়ে যাওয়া প্রায় একটি সুন্নাত তা জনতে হলে এখানে আসুন এবং একদিন হলেও তা পালন করুন ইনশাআল্লাহ

আল্লাহ আমাদেরকে বোঝার তাওফিক দিন আমিন।


বিষয়: বিবিধ

১৬৭৫ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

161450
১১ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৪৯
শহীদ ভাই লিখেছেন : "ওয়া আনা আউয়ালুল মুসলিমিন।"
- যতদিন না আমরা নিজেকে শুধু মুসলিম বলে পরিচয় না দিতে পারব ততদিন বিভেদ দুর হবে না। আর কোন ইমাম ও মাজহাব বানাতে বলেন নি। আমরা আহলে হাদিস-তাও বলার দরকার নেই। কারন মুসলিম মানেই হল আহলুল কোরান, আহলুল হাদিস।
অতএব, আমি প্রথমে মুসলিম এবং শেষে ও মুসলিম।
বি:দ্র: আর ইমাম গন আমাদের শিক্ষক। তবে তারা ভুলের উর্দ্ধে নন। ভুলের উর্দ্ধে একমাত্র নবীগন (তাও আল্লাহ তাদের হেফাজত করেছেন তাই তারা ভুলের উর্দ্ধে)।
১১ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:০৪
115759
ইমরান ভাই লিখেছেন : শহীদ ভাই, আপনি ঠিকই বলেছেন। আমার ছবিটা দেখেন উত্তর অনেক আগে থেকেই দিয়ে রাখছি। তবে আমি আহলে হাদিস,সালাফী,ওহাবী কোন দলের ই নই। বাংলাদেশে হকপন্থি দল থাকলে আহলে হাদিসরাই আছে আমার দেখা মতে। তাই তাদের পক্ষে কথা বলি মুসলিম হিসেবে

আমার ছবিতে লেখা আছে দেখেন....
"আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি একজন মুসলিম-আলহামদুল্লিাহ"
161470
১১ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:৪৭
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ভালো নিয়্যতে জ্ঞানের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আমল করা যেতে পারে বলে আমার মত এবং মনে হয় করতেও হবে তাই – যদিও আমি আপনাদের মতো ইসলামের সূক্ষ্মবিষয়ে পারদর্শী না।
১১ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:০২
115768
ইমরান ভাই লিখেছেন : ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ..
সওয়াবের আশায় ভালো নিয়তে যে আমলি-ই করেন তার প্রমান থাকতে হবে রসুল (সা)অথবা তার সাহাবা (রা) দের পক্ষ থেকে নাহলে তা বিদআ'ত হিসেবে গন্য হবে। তাই প্রমানিত আমল করাই যথেস্ট বলে মনে করি।

মা আয়েশা (রাআ)বর্ণনা করেন রসুল (সা) বলেছেন,
"মানআমিলা আমালান লাইসা আলইহিম আমরুনা ফাহুয়া রদ্দুন"
অর্থঃ যে কেউ এমন কোন আমল করলো যা আমাদের (রসুল সা)দ্বারা প্রমানিত নয় তা বাতিল

তাই আমল করার আগে জানতে হবে যে তা রসুল (সা) ও সাহাবা (রা) থেকে প্রমানিত।

জাজাকাল্লাহু খাইরান...
১১ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:০৪
115771
ইমরান ভাই লিখেছেন : হাদিসটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন তার সহিহ আল মুসলি এ
161553
১২ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৪:১৫
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : অনেক কিছু শিখলাম। ধন্যবাদ
১২ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:২২
115868
ইমরান ভাই লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খাইরান.....Love Struck Love Struck
168826
২৮ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৩৪
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : ধন্যবাদ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:০৪
132239
ইমরান ভাই লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ Love Struck
179193
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:৪৮
মুমতাহিনা তাজরি লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:০৪
132240
ইমরান ভাই লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File