দুআ’র ফজিলতঃ পর্ব ২.২
লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ০৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:১৮:৪৩ সকাল
দুআ’র ফজিলতঃ পর্ব ১ দুআ’র ফজিলতঃ পর্ব ২.১
"আলহামদুলিল্লাহ"
পূর্বের পোস্টে আমরা জেনেছি দুআ’র ফজিলতঃ পর্ব ২.১ ১১ টি দোয়ার আদব।
এই পর্বে আমরা জানবো বাকি ১৮ টি আদব কি কি?।
পরবর্তী ২.৩ পর্বে জানবো দুআর ক্ষেত্রে কি কি সীমালংঘন হতে পাড়ে।
আল্লাহ আমাদেরকে জানার ও সে অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দিন আমিন।
পূর্ববতী ১১ টি আদব
১২) নিজের অপরাধকে স্বরণ করে দুআ’ করাঃ
নিজের অপরাধকে স্বরণ করে নির্জনে নিভৃতে দু চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার কাছে ক্ষমা চাওয়া ও দুআ’ করা।
১৩) ছন্দ বানিয়ে দুআ’ না করাঃ
ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, প্রত্যেক জুমআয় লোকদেরকে মাত্র একবার ওয়াজ করো। যদি না মানো তাহলে দুইবার। তাও যদি না মানো তাহলে তিন বার। লোকদেরকে এই কুরআনের উপর বিরক্ত করোনা। আর আমি যেনো তোমাকে না পাই যে, কোন সমপ্রদায় তাদের নিজেদের কোন কথায় ব্যাস' থাকলে তুমি তাদের নিকট গিয়ে নিজের বয়ান শুরু করে দাও এবং তাদের কথা কেটে তাদেরকে বিরক্ত কর। বরং তুমি সেখানে উপসি'ত হয়ে চুপ থাক; অতপর তারা সাগ্রহে আদেশ করলে তুমি বয়ান করো। খেয়াল করে ছন্দযুক্ত দুআ থেকে দূরে থাক। যেহুতু আমি রসুল (সা) ও তার সাহাবাবর্গের নিকট উপলব্ধি করেছি যে, তারা এটাই করতেন। অর্থাত ছন্দ বানিয়ে দুআ’ উপেক্ষা করতেন” (বুখারী ১৫৩)
১৪) বিশুদ্ধ চিত্তে তওবা করা:
তওবা করে (অর্থাৎ বিশুদ্ধ চিত্তে পাপ বর্জন করে লজ্জিত হয়ে পুনঃ ঔ পাপে না ফিরার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে এবং অন্যায় ভাবে কারো মাল হলফ করে থাকলে তা ফেরৎ দেয়া ও কারো প্রতি জুলুম করে থাকলে তার প্রতিশোধ দিয়ে অথবা ক্ষমা চেয়ে তারপর) দুআ’ করা। যেহুতু, পাপে লিপ্ত থাকলে দুআ’ কবুর হয় না।
১৫) হালাল রুজী অর্জন করা হারাম থেকে দুরে থাকা:
হালাল পানাহার করা ও হালাল পরিধান করা এবিষয়ে আল্লাহর রসুল (সা) বলেন, হে লোক সকল! আল্লাহ পবিত্র তিনি পবিত্র জিনিসই গ্রহণ করেন। নিশ্চই আল্লাহ মুমিনদেরকে সেই আদেশ করেছেন যে আদেশ রসুলগণকে করেছেন তিনি বলেন হে রসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু আহার কর ও সৎকাজ কর তোমরা যা কর সে সম্মন্ধে আমি সবিশেষ অবহীত” (২৩/৫১), মহান আল্লহ আরোও বলেন, হে মুমিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা দান করেছি তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার কর---(২/১৭২), অতপর রসুল (সা) সেই ব্যাক্তির কথা উল্লেখ করেন, যে ব্যাক্তি ধুলোধুসরিত আলুথালু বেশে (সৎকাজের উদ্দেশ্যে) সফর করে। তার হাত দুটিকে আকাশের দিকে তুলে বলে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! ঊলে (দুআ’ করে) কিন' তার আহার্য হারাম, তার পরিধেয় হারাম, হারাম খাদ্যে সে প্রতিপালিত হয়েছে। সুতরাং কেমন করে তার প্রার্থনা মঞ্জুর হবে?” (মুসলিম ৭০৩)
১৬) দুআ’র বাক্য তিন বার করে বলা:
খুব গুরুত্বপূর্ন দুআ’ হলে ফিরিয়ে ফিরিয়ে ৩ তিন বার করে বলা। যেমন, আল্লাহর রসুল(সা) যখন কুরাইশের উপর বদ্দুআ করেছিলেন তখন ৩ তিন বার করে বলেছিলেন। ( বুখারী ৪/৬৫, মুসলিম ৩/১৪১৮)
১৭) ওযু করা:
দুআ’র পূর্বে ওযু করা। অবশ্য প্রত্যেক দুআ’ বা যিকিরের জন্য ওযু বা গোসল করা জরুরী নয়। তবে সাধারণ প্রার্থনার জন্য মুস্তাহাব। (বুখারী ৫/১০১, মুসলিম ৪/১৯৪৩)
১৮) কিবলা মুখী হওয়া:
কিবলা মুখী হয়ে দুআ’ করা । এ আদবটি ও সকল ক্ষেত্রে জরুরী নয়।
১৯) দুই হাত মুখ বরাবর তোলা:
মুখ বরাবর দুই হাত তুলে দুআ’ করা। এ আদবটি সেখানে ব্যাবহৃত যেখানে রসুল (সা) নির্দেশ দিয়েছেন। অথবা যেখানে কোন নির্দেশ নেই সেখানে সাধারণ প্রার্থনার ক্ষেত্রে এ আদবের খেয়াল রাখা উচিত। কিন' হাত তুলে দুআ’র শেষে মুখে হাত বুলানোর প্রসঙ্গে কোন সহীহ হাদিস নাই। তাই মুখে হাত বুলানো বিদআত। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, ইস্তিগফার করার সময় একটি আংগুল তুলে ইশারা করে এবং সকাতর, বিনয়ী প্রার্থনার সময় দুই হাত মাথা বরাবর লম্বা করে দুআ’ করতে হয়। (আবু দাউদ, সহীহুল জামে’ ৬৬৯৪ নং হাদিস)
২০) চোখের পানি ফেলা:
দুআ’র সময় চোখের পানি ফেলা। এবং আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার কাছে দোয়া করা অনৱর দিয়ে দুআ’ করা। (মুসলিম ১/১৯১)
২১) অপরের আগে নিজের দুআ’ করা:
অপরের জন্য দুআ’ করলে নিজের জন্য প্রথম দুআ’ শুরু করা। যেমন নবী (সা) কারোর জন্য দুআ’ করলে নিজের জন্য প্রথম শুরু করতেন। (তিরমিজি ৫/৪৬৩)
২২) দুআর ক্ষেত্রে সীমালংঘন না করা:
দুআ’য় সীমালংঘন বা অতিরঞ্জন না করা। যেমন, হে আল্লাহ! আমি জান্নাতের সম্পদ, সৌন্দর্য, হুর-গেলমান, দুধের নহর চাই” অথবা হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের আগুন থেকে, তার শিকল থেকে, বেড়ি থেকে, ফুটানো পানি পুজ থেকে পানাহ চাই---” ইত্যাদি বলে দুআ’ করা। এখানে সংক্ষিপ্ত ভাবে জাহন্নাম থেকে রেহাই পেতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চাওয়াই যথেষ্ট। তাই তো দুআ করা উচিত, যার শব্দ কম অথচ অর্থ অনেক ব্যাপক।(আবু দাউদ ১/২৪,২/৭৭)
২৩) কোন পাপ কাজ করার উদ্দেশ্যে বা জ্ঞাতি বন্ধন ছিন্ন করতে দুআ’ না করা।
২৪) সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে দুরে থেকে দুআ’ করা
২৫) সৎকাজে আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দেয়্
২৬) যে সময়, স্থান ও অবস্থানকালে দুআ’ কবুল হয় সে সময় দুআ’ করার সুযোগ গহন করা
২৭) ছোট না চেয়ে বড় কিছু চাওয়া।
২৮) এমন কিছু না চাওয়া যা সহ্য করার ক্ষমতা নেই । যেমন, আখেরাতের আযাব দুনিয়াতেই না চওয়া। (মুসলিম ২৬৭৯)
২৯) দুঃখ কষ্টে ধৈয্য প্রার্থনার চেয়ে সরাসরি দুঃখ কষ্ট থেকে পানাহ চাওয়া।
চলবে..........>
বিষয়: বিবিধ
৩৪৩৪ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন