সালাতের সঠিক সময় কোনটি?

লিখেছেন লিখেছেন ইমরান ভাই ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:১১:০৯ সকাল



আমাদের দেশে,

আপনারা হয়তো লক্ষ্য করবেন রামাযান মাসে ফজরের শেষ সালাতের আযান দেয়া হয়েছে ভোর ৪:০৭ মিনিটের মধ্যে। রামাযান শেষের পরদিন থেকে (ঈদের দিন) ভোরবেলা কিন্তু আযান ৪:০৮ এ দেয়া হয় নি (?) দেয়াহয়েছে ৪:৩০ মিনিটের পরে (?)

তাহলে কেউ যদি শাওয়াল মাসের ৬ রোজা রাখার জন্য নিয়ম অনুযায়ী আযানের অপেক্ষা করে ৪:৩০ এ সাহরি শেষ করে তাহলে কি তার রোজা হবে???

আশাকরি আপনাদের উত্তর হবে "হবে না"।

তাহলে কেন এই দুমুখো নিতি???

তাই আসুন জেনে নেই সঠিক সময়ে সালাত আদায় করার গুরুত্ব কি?

আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেছেন :

“নিশ্চয়ই সালাত মু’মিনদের জন্য উল্লিখিত সময়ে ফরয।” [সূরা আন-নিসা : ১০৩]


এ সম্পর্কে ইমাম আল-বুখারী (রহ.) বলেন :

“উল্লিখিত সময় হলো নির্ধারিত (সময়)। তিনি সালাতের জন্য সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।”


আবু আম্‌র আশ-শাইবানী থেকে বর্ণিত :
এই ঘরের মালিক (আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদের ঘরের দিকে ইশারা করে) বলেছেন : আমি রাসূলকে (সা) জিজ্ঞাসা করেছিলাম : কোন ‘আমলটি আল্লাহ্‌র নিকট সর্বাধিক প্রিয়?’ তিনি (সা) উত্তরে বলেছিলেন : “যথা সময়ে সালাত (আদায় করা)।” তারপর তিনি জানতে চাইলেন : তারপর কী?’ তিনি (সা) বলেন : “বাবা-মায়ের সাথে ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ করা।” তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তারপর কী?’ তিনি (সা) বললেন : “আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করা।” এসব বলার পর তিনি (আব্দুল্লাহ) বলেন : আমি আরও জানতে চাইলে তিনি (সা) আমাকে আরও বলতেন। [বুখারী, খণ্ড : ৮, অধ্যায় : ৭৩, হাদীস : ১]


এই হাদীসে রাসূল (সা) সুস্পষ্ট করেছেন যে, নির্ধারিত সময়কে সালাত আদায় করা আল্লাহ্‌র কাছে সর্বাধিক প্রিয় ‘আমল। এই ‘আমলটিকে তিনি (সা) বাবা-মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করা এবং আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন। এর প্রমাণ হলো হাদীসে ‘তারপর কী?’ ক্রমবাচক পদবাচ্যের ব্যবহার। এই শব্দগুচ্ছটি গুরুত্বের ক্রম বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয় এবং আরবি ভাষাভাষীদের কাছে বিষয়টি সুপরিচিত।

আল-হাফিয ইবনু হাজার তার ‘আল-ফাত্‌হ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন : “ইবনু বাযীযা বলেছেন : এক্ষেত্রে যা লক্ষণীয় তা হলো, সকল দৈহিক প্রচেষ্টার মধ্য থেকে জিহাদকে সর্বাগ্রে স্থান দেওয়া, কারণ এতে আত্মত্যাগের বিষয়টি জড়িত। তবে ধৈর্য ধারনের বিষয়টি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কারণ ফরজ সালাতগুলোকে রক্ষা করা, সেগুলোকে সঠিক সময়ে আদায় করা এবং নিজের মা-বাবার সাথে উত্তম আচরণ করার বিষয়টি ধৈর্যের সাথে সংশ্লিষ্ট যা একটি সার্বক্ষণিক বিষয়। সত্যবাদীরা (সদীকূন) ব্যতীত অন্যকেউ আল্লাহ্‌র আদেশ পালনের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিকভাবে ধৈর্যশীল থাকতে পারে না। আর আল্লাহ্‌ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ।”

আব্দুল ‘আযীযের ভাই, উসমান ইবনু আবি রাউওয়াদ বলেন : আমি যুহরীকে বলতে শুনেছি : একবার দামেস্কে আনাস ইবনু মালিকের কাছে গিয়ে দেখলাম তিনি কাঁদছেন। তাই জিজ্ঞাসা করলাম : আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি কিছুক্ষন থেমে বললেন : হায়! যা কিছু দেখেছিলাম এখন তার কিছুই দেখছি না। এমনকি এই সালাতকেও নষ্ট করা হচ্ছে। [আল-বুখারী, খণ্ড : ১, অধ্যায় : ৭ “ওয়াক্তমতো সালাত আদায় না করা সালাতকে বিনষ্ট করা”, হাদীস : ৩২৬]


‘ফাতহুল বারী -তে ইবনু হাজার (রহ.) বলেছেন : আল-মুহাল্লিব বলেছেন : ‘নষ্ট করা হচ্ছে’ এর অর্থ হলো উত্তম এবং নির্দেশিত সময় থেকে বিলম্ব করা। এর অর্থ এই নয় যে, তারা ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর সালাত আদায় করতেন।’ ইবনু হাজার এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন এবং বলেছেন, এর অর্থ হলো মূলত ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার পর সালাত আদায় করা।

সঠিক সময়ে সালাতের গুরুত্ব:

উবাদাহ ইনবু সামিত (রা) বলেন : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহ্‌র রাসূলকে (সা) বলতে শুনেছি : “আল্লাহ্‌ (আয্‌যা ওয়া জাল্লা) পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে বাধ্যতামূলক করেছেন। যে ব্যাক্তি তার অযুকে সুন্দর করে, নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করে এবং খুশূ‘ সহকারে রুকূ‘ ও সেজ্‌দা সম্পন্ন করে, তার সাথে আল্লাহ্‌র অঙ্গীকার হলো তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যাক্তি তা করলো না, আল্লাহ্‌র সাথে তার তেমন কোনো অঙ্গীকার নেই। আল্লাহ্‌ চাইলে তাকে ক্ষমাও করতে পারেন, আবার চাইলে তিনি তাকে শাস্তিও দিতে পারেন। [মালিক, আবূ দাঊদ এবং আন নাসা‘ঈ কর্তৃক সংকলিত। ইবনু হিব্বান এটিকে সহীহ বলে মত দিয়েছেন। সহীহুত তারগীব ওয়াত-তাহ্‌রীব (হাদীস : ৩৯৬) গ্রন্থেও রয়েছে]



আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রা) বলেন : একদিন নবী (সা) তাঁর সাহাবীদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন : “তোমরা কি জানো, তোমাদের রব (সুবহানাহু ওয়া ত‘আলা), কী বলেছেন?” আমরা বললাম : আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল (সা) ভালো জানেন। আল্লাহ্‌র রাসূল (সা) একথা তিনবার বলেন। অতঃপর বললেন : “আমার ক্ষমতা ও মহত্ত্বের কসম! যথা সময়ে সালাত আদায়কারী প্রত্যেককে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর যে নির্ধারিত সময়ের বাইরে অন্য কোনো সময় সালাত আদায় করবে, আমি তার প্রতি দয়াও করতে পারি আবার তাকে শাস্তিও দিতে পারি।” [আত-তাবারানী কর্তৃক আল-কাবীর গ্রন্থে বর্ণিত। সহীহুত তারগীব ওয়াত-তাহ্‌রীব (হাদীস : ৩৯৮) গ্রন্থেও রয়েছে।]


সালাতের স্থায়ী সময় সুচি দেয়া হল সবার সুবিধার্থে। (বাংলাদেশের আবহাওয়া অধীদপ্তরের সুর্য উদয়,আস্ত অনুযায়ী)

নিজের কাছে একটি কপি রাখুন ও সময় মত সালাত আদায় করুন



বিস্তারিত এখানে

বিষয়: বিবিধ

১৯৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File