ডিএনএ কী? ১৬ তম পর্ব। ফিজিওলজী অথবা মেডিসিনে ২০১৩ এর নোবেল বিজয়ীগন, কোষ কী? (১)
লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ০২ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৪:৩৬:০৯ বিকাল
ডিএনএ কী? ১৬ তম পর্ব। ফিজিওলজী অথবা মেডিসিনে ২০১৩ এর নোবেল বিজয়ীগন, কোষ কী? (১)
ফিজিওলজী অথবা মেডিসিনে ২০১৩ এর নোবেল বিজয়ীগন, কোষ কী? (১)
Figure source- http://www.nytimes.com/2013/10/08/health/3-win-joint-nobel-prize-in-medicine.html?_r=0
চিত্র-১
বাম হতে: Randy W. Schekman, Thomas C. Südhof and James E. Rothman
১।Randy W. Schekman
জন্ম: ৩০ ডিসেম্বর ১৯৪৮, St. Paul, MN, USA
২। Thomas C. Südhof
জন্ম: ২ ২ ডিসেম্বর ১৯৫৫, Goettingen, Germany
৩। James E. Rothman
জন্ম: ৩রা নভেম্বর ১৯৫০, Haverhill, MA, USA
উক্ত ৩ জন বিজ্ঞানীদের জন্য নোবেল প্রাইজ অর্গানাইজেসন ২০১৩ সালের মেডিসিন অথবা ফিজিওলজীর উপর ৭ই অক্টোবর,সোমবার নোবেল প্রাইজ অর্জনের ঘোষনা দিয়েছেন।
তাদের আবিস্কারটা ছিল কোষ (CELL)এর কাজের উপর।
কোষ(CELL)কী বস্তু?
কোষ পাণী দেহ গঠনের অতি ক্ষুদ্র জীবন্ত মৌলিক একক।একটি পরিপূর্ণ মানব দেহে এরুপ প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ থাকে।আর এই ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ এর আদি প্রারম্ভিক কোষ মাতৃ জরায়ূতে মাত্র ১ টি কোষ যার নাম ZYGOTE.
তাহলে মোদ্দা কথা দাড়ালো, আমাদের এই ১০০ ট্রিলিয়ন বিশিষ্ট অসিম ক্ষমতার বিশাল অস্তিত্বটি মাত্র একটি শুধুমাত্র অনুবীক্ষনে দৃশ্যমান কোষ (CELL)হতে MITOTIC বিভাজনের মাধ্যমে কপি হয়ে হয়ে বর্দ্ধিত হওয়া অস্তিত্ব। (চিত্র-২ দেখুন)(MITOSIS বিভাজন দেখতে পর্ব ৬ ও ৭ দেখুন)
তারা কী আবিস্কার করেছেন?
আমাদের শরীর পরিচালনা করার জন্য শরীরকে অনবরত অসংখ্য রকমের রাসায়নিক পদার্থ ঊৎপাদন করা লাগে। এই সমস্ত রাসায়নিক পদার্থ গুলী শরীরের কোষ নামক, অতি ক্ষুদ্রাকৃতির ও জটিল কারখানায় তৈরী করা হয়।
এই সমস্ত পদার্থ গুলী কী কী? এরা হল হরমোন, এনজাইম,প্রোটীন, NUROTRANSMITTER, SIGNALS, CYTOKINE, ANTIBODY ইত্যাদি।
এই সমস্ত পদার্থগুলী কোষকে শুধু উৎপাদন করে ফেল্লেই দায়িত্বটা সম্পাদন হয়ে যায়না।
কোষের মধ্যে উৎপাদন করার পর, এই পদার্থগুলীকে কোষের অভ্যন্তরের এক প্রকোষ্ঠ (ORGANELLE) হতে অন্য প্রকোষ্ঠে, কখনো তার পার্শবর্তী কোষে, আবার কখনো দুরবর্তী কোষেও পাঠানো লাগে। এগুলো পাঠাতে গেলে ছোট,বড়, মাঝারী সব ধরনের মাল পরিবহন কারী ট্রাকের প্রয়োজন হয়। কোষের তাও আছে।
কোন কোন ক্ষেত্রে SHUTTLE পরিবহন, অর্থাত দুই পরিবহনের মাঝখানে সাহায্য কারী পরিবহন, এর দরকার হয়, তারও ব্যবস্থা কোষের আছে।
শূধূ কী তাই? ব্যবসায়িরা যেমন সায়াবীন তৈল উৎপাদন করে ছোট ছোট প্লাস্টিক ব্যাগের ভিতর প্যাক করে করে বাজার জাত করে থাকে এবং দূরবর্তী বিভিন্ন স্টোরে মাল বাহী ট্রাকের মাধমে সরবরাহ করে থাকে, ঠিক তদ্রুপই, কোষ তার উৎপন্ন দ্রব্যও দুরবর্তী কোন লক্ষবস্তু কোষের ব্যবহারের জন্যও এরুপ প্লাস্টিক ব্যাগ যার নাম, VESICLE, এর মধ্যে প্যাক করে করে পাঠিয়ে থাকে।
শুধু তাই ই নয়, কোষের উৎপন্ন দ্রব্য শুধু মাত্র তার লক্ষ্য করা দূরবর্তী সেই কোষই সেই পদার্থটিই পাইবে, অথচ তার সন্নিকটস্থ অন্য কোন কোষই সেই বস্তু পাইবেনা, এমন সূক্ষ্ম কারিগরি ব্যবস্থাও কোষের রয়েছে যা RECEPTOR নামক জটিল পদার্থের মাধ্যমে করে থাকে।
শুধু তাই ই নয়,
আবার এই দূরবর্তী কোষগুলীকে ঠিক কাজের সময়ই পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।অর্থাৎ ধরুন সেই কোষটির ঠিক যেই মূহুর্তে প্রয়োজন, ঠিক তৎক্ষনাৎ সেই মুহুর্তেই যদি সে সরবরাহ না পেয়ে, পাঠানো বস্তুটি পথিমধ্যে ট্রাফিক জ্যামের কারণে এসে পৌছাতে ক্ষনকালের জন্য হলেও দেরী হয়ে যায়, তাহলেও শরীর অচল হয়ে পড়বে।
এ ধরনের সমস্যা এড়াবার লক্ষে, কোষ তার জন্য পূর্ব হতেই ব্যবস্থা করে রেখেছে।কারণ বলা তো যায়না কখনো যদি পাঠানো মালামালটি ব্যস্ত শহরের রাস্তার ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বিলম্ব করিয়ে দেয়।
এর জন্য কোষ মালামাল তার লক্ষবস্তু কোষের কাছাকাছি এমন নিয়ন্ত্রিত অবস্থানে তার প্রয়োজনের সময়ে ব্যবহারের জন্য আগেভাগে প্রস্তুত করে VESICLE (প্যাকেট) এর মধ্যে জমা রেখে দেয়। তারপর প্রয়োজনের ঠিক মুহুর্তেই মস্তিস্কের সাংকেতিক নির্দেশের মাধ্যমে মালামালটি তৎক্ষনাৎ এই VESICLE এর মধ্য হতে বের করে তার পার্শবর্তি লক্ষ বস্তু কোসের RECEPTOR এ সরবরাহ করে দেয়।
যদি কোষের ঠিক প্রয়োজনের সময় এরুপ তাৎক্ষনিক সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকত
তাহলে সেই লক্ষ্য বস্তু-কোষ, শরীর পরিচালনার জন্য তাৎক্ষনিক ভাবে যে অতি প্রয়োজনীয় কাজ করে থাকে তা ব্যাহত হয়ে যাবে। শরীর অসুস্থ হয়ে যাবে। ব্যক্তিটি বড় বড় ব্যাধি যেমন ডায়াবেটিছ,পারকিনছনিজম,মায়েছথেনিয়াগ্রাভিছ ইত্যাদি বা আরো বহু রকমের মারাত্মক জটিল জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে যাবে।
স্নায়ু কোষ এই কাজটি করে থাকে।
এর জন্য এভাবেই কোষটি যাতে ঠিক তার প্রয়োজনের সময় মত পেতে পারে, তার ও নিশ্চয়তা বিধান করে, এই কোষ।
এই তিনজন বিজ্ঞানী, ঠিক এই বিষয়টিই আবিস্কার করেছেন যে, কোষ তার উৎপন্ন দ্রব্য কীভাবে তার নিকটের ও দূরের লক্ষ্য বস্তু-কোষে এত দ্রুত সুন্দর ভাবে ও সঠিক সময়ে সরবরাহের ব্যবস্থা করে থাকে।
তাদের আবিস্কারটা DNA এর কাজের সংগে কোষের কাজ এর সরাসরি সম্পর্ক প্রমান করিয়েছে।
অতএব তাদের আবিষ্কারটা বুঝতে গেলে কোষ ও তার কার্যাবলী সম্পর্কে ও একটু পূর্ব ধারনা থাকার দরকার আছে। তা না হলে ওটা বুঝা কারো কারো পক্ষে কঠিন হতে পারে।
এ কারণে “কোষ” সম্পর্কে আগে ভাগে একটু ধারনা দিতে চাচ্ছি।
আজ একটি কোষ তার সাধারন (অবিশেষায়িত) কাজ গুলী কী ভাবে চালায় সেটা দেখুন।
বিশেষায়িত কোষ যেমন, স্নায়ূ কোষ বা NEURONE, LIVER কোষ, হৃদপিন্ড মাংসপেশী কোষ ইত্যাদির সাধারণ কাজ ছাড়াও নিজস্ব বিশেষ বিশেষ কাজ করা লাগে, ঠিক যেমন একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনীয়ার তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় স্বাভাভিক কাজ কাম ছাড়াও তাদের নিজস্ব বিশেষ বিশেষ কাজ করে থাকেন।
আসুন তাহলে আমরা আগে কোষ-জগতের মধ্য দিয়ে একটু ঘুরে আসি এবং কোষের আশ্চর্যজনক কাজ কাম ও দেখে আসি।
আর তাছাড়া ১১ তম পর্বে ,কোষ কী ভাবে RIBOSOME নামক ORGANELLE এর মাধ্যমে প্রোটীন তৈরী করে জীবন চালায়, এবং ১২তম পর্বে, জ্বীন MUTATION হয়ে গেলে, তা অকেজো হয়ে শরীরের কার্য ব্যহত করে দেয়, সেটাকে একটু পুনরায় পড়ে নিলেও এটা বুঝতে আরো কিছুটা সাহায্য কারী হইবে।
একটি সাধারণ প্রাণী কোষ।
Figure source- http://waynesword.palomar.edu/lmexer1a.htm
চিত্র-২, একটি সাধারন (অবিশেষায়িত) প্রাণী কোষের CROSS SECTION।
আমাদের শরীর ১০০ ট্রিলিয়ন অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ এর সমন্বয়ে গঠিত। এরা আকারে অতি ক্ষুদ্র হলেও এরা প্রত্যেকেই এক একটা যেন অতি বড় জটিল কারখানা। এরা যেন প্রত্যেকেই এক একটা বিশ্ব।
শুধু তাইই নয়, আমাদের শরীরে রয়েছে ২২০ রকমের বিশেষায়িত কোষ। তাই এই ২২০ প্রকার কারখানার জটিল কাজ কাম ও অন্তত ২২০ প্রকারের।
উপরের চিত্র-১ এ একটি অতি সাধারণ অবিশেষায়িত কোষকে লক্ষ্য করুন। এতে কী কী আছে?
১। CELL MEMBRANE(চিত্র-১ দেখুন)- এটা কোষের বাইরের আবরন। আমাদের শরীরে চর্ম যেমন বাইরের আবরণ হিসাবে কাজ করে, CELL MEMBRANE টাও কোষকে তদ্রুপ আবরণ দিয়া নিরাপদে রাখে। তবে এই কোষ প্রাচীর শুধু কোষকে আবরণ ই দেয়না, এটার মধ্য দিয়ে বহু রকমের জটিল ও প্রয়োজনীয় কাজ সমাধা হয়ে থাকে।
এটা একটা SEMI PERMEABLE MEMBRANE যার মধ্য দিয়ে কোন পদার্থের OSMOTIC PRESSURE GRADIENT এর অধিক ঘনত্বের পদার্থ নিম্ন ঘনত্বের পদার্থের দিকে গিয়ে মিশে যেতে পারে।
কোষের অভ্যন্তরে প্রয়োজনীয় উৎপন্ন ক্ষুদ্র দ্রব্য কনা গুলী কোষের অভ্যন্তরের অন্য অংশে পাঠানো হয়। আবার এক কোষ হতে অন্য কোষে ব্যবহারের জন্য ও পাঠানো হয়।এক কোষের মধ্য হতে অন্য কোষে পাঠাবার সময় পদার্থগুলীকে তো অবশ্যই আপন কোষের প্রাচীর ভেদ করে, তবে অতি কৌশলে ছিদ্র না করে, বের হয়ে যেতে হবে।
খুব আশ্চর্য লাগছে, তাইনা ?
হ্যা, অবশ্যই । পদার্থগুলীকে প্রথমে প্লাস্টিক ব্যাগের মত VESICLE এর মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এরপর VESICLE গুলী কোষ প্রাচীর ফুড়ে ও ভেদ করে ও প্রাচীর ছিদ্র না করে,কোষের বাহিরে বেরিয়ে পড়ে।
VESICLE গুলী কীভাবে পদার্থ কনাগুলীকে তার অভ্যন্তরে লয়ে কোষ প্রাচীর ফুড়ে বেরিয়ে আসে, সেটা চিত্র-৩ এ দেখুন।(৫)
আবার এই VESCLE গুলীই পদার্থ গুলী সহ তার লক্ষ্য বস্তু-কোসের নিকট পৌছে যায়।
তখন এই VESICLE সেই কোষের RECEPTOR (গেট) এর মধ্য দিয়া সেই কোষের অভ্যন্তরে সংকেৎ পাঠিয়ে কাজ চালায়।
RECEPTOR কী?
RECEPTOR হল বিশেষ প্রোটীন যৌগ, যার উপরে বসতে পারে এমন আর একটি যৌগ, যা তার সংগে খাপ খাইয়ে মিলাতে পারে।যাকে ঐ RECEPTOR এর LIGAND বলে। RECEPTOR এর সংগে তার LIGAND আটকে থেকে তারা যার যার কাজের সংকেৎ কোসের অভ্যন্তরে পাঠাতে থাকে এবং কোষ তখন ঠিক সেই অনুসারে কাজ করতে থাকে।
RECEPTOR কে তুলনা করতে পারেন, গেটের একটি তালা ও চাবির সংগে। যেমন গেটের বন্ধ তালাটার নির্দিষ্ট সঠিক চাবিটা না আনলে,চাবিটা তালার ছিদ্রে যথাযথ ভাবে ঢুকতেও পারবেনা এবং তালাটাও খুলে ভিতরে কোন কাজের সংকেৎ পাঠানো যাবেনা, ঠিক তদ্রুপ কোন একটি নির্দিষ্ট RECEPTOR এর ঠিক তার জন্য নির্দিষ্ট সংকেৎ বাহকটি না আসলে, তার কাছে সেই দরজার তালার চাবিটা তার কাছে থাকবেনা।অতএব দরজার তালার সংগে তার চাবী ও খাপ খাইবেনা, এবং তার দরজা দিয়ে কোন সংকেৎ কোষের অভ্যন্তরে পাঠাতেও পারবেনা।
অন্য কথায় ধরে নিন নির্দিষ্ট সংকেৎ বাহক যৌগটির নিকট থাকে নির্দিষ্ট RECEPTOR এর তালার সুনির্দিষ্ট চাবিটা।
অতএব সংকেৎ বাহক যৌগটির নিকট এর চাবি, এবং RECEPTOR এর তালা, পরস্পর ম্যাচ করলে তখন কাজ চলবে।
এটাকে প্যান্ট এর দুই পার্শের ZEEPER এর সংগেও তুলনা করতে পারেন। এক পার্শের ZEEPER থাকে RECEPTOR এ, এবং তার সংগে সঠিক ভাবে ফিট করার ZEEPER টি থাকবে তার জন্য নির্ধারিত সকেৎ বহন কারী রাসায়নিক যৌগের নিকট। উভয়ের ZEEPER পরশ্পর ফিট হলে তখন তারা একত্র আটকে যেতে সক্ষম হবে এবং কাজ ও চালাতে পারবে। অন্য কেহ এলে তালা-চাবি তে অথবা ZEEPER-ZEEPR এ খাপ খাইবেনা।
একটা কোষ পাচীরে অনেক ধরনের RECEPTOR বা গেট থাকে। কোষের অভ্যন্তরে ও NUCLEUS এ ও RECEPTOR থাকে। (১৩,১৭)
অতএব আপনারা আপাততঃ RECEPTOR কে একটি কোষের তালাবদ্ধ গেট ধরে নিতে পারেন।
এই গেটের কী কাজ?
এক একটা গেট যা এক একটা বস্তু ঢোকার জন্য তৈরী হয়েছে। যার যার গেট দিয়ে শুধুমাত্র সেই সেই বস্তুই ঢুকতে পারবে বা সংকেৎ পাঠাতে পারবে। একজনের গেট দিয়ে আর একজনের ঢুকার উপায় নাই।
কেন একটি পদার্থ আর একটি পদার্থের গেটে ঢুকতে পারেনা?
কারন, এই গেটের তালার যার যার চাবি শুধু মাত্র তার তার কাছেই থাকে।
কে এই তালা ও চাবি তৈরী করেছে?
জী,হ্যাঁ,
DNA, বিশেষ গ্রুপের জ্বীন দ্বারা এই তালা ও এই চাবি উৎপাদন করেছে। এবং DNA এক একটা RECEPTOR এর দরজায় এক একটা ভিন্ন ভিন্ন তালা মেরে আটকিয়ে দিয়েছে।
তারপর DNA কী করে জানেন?
এরপর DNA যখন কোন ENZYME বা হরমোন টা উৎপাদন করে অথবা উৎপাদন করবার নির্দেশ দিয়ে কোন রাসায়নিক যৌগ কোষের মধ্যে ঢুকার জন্য VESICLE এ করে পাঠিয়ে দেয়, তখন এই VESICLE টি তার ENZYME বা হরমোন বা রাসায়নিক যৌগ সহ, সেই কোষের যে দরজা দিয়ে ঢুকতে হবে, তাকে শুধুমাত্র সেই দরজা (RECEPTOR)টির চাবিটা একেবারে সরাসরি তার হাতে তুলে দেয়।
যাকে যে দরজার চাবি দেওয়া হয়েছে তাকে শুধু সেই দরজা দিয়েই ঢুকতে হবে। তার পক্ষে অন্য কোন দরজা দিয়ে ঢুকা সম্ভব নয়।
DNA একজনের তালার চাবিটা আর একজনকে কখনো দেয়না। এমন ভূল DNA করলে জীবন সাথে সাথে অচল হয়ে যাবে। তবে DNA যদি কখনো MUTATION হয়ে যায় তাহলে ভিন্ন কথা।(MUTATION পর্ব-১২ দেখুন)
তাহলে দেখলেন তো, কতবড় ধুরন্ধর এই DNA?
এটা, ঠিক যেমনটি ধরুন, আপনারা ৩ কর্মচারী ঢাকার কোন একটি বড় কোম্পানীর কাজে, মালিক আপনাদেরকে কক্স বাজারে পাঠাচ্ছেন। সেখানে থেকে কাজ করার জন্য আপনার মালিকের বিরাট হোটেলের অসংখ্য কক্ষ্ রয়েছে।সে সমস্ত বিভিন্ন কক্ষের কাজ ও ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু প্রত্যেকটা কক্ষই ভিন্ন ভিন্ন তালাদ্বারা আবদ্ধ। আর সেই সমস্ত তালা গুলীর চাবী রয়েছে আপনার মালিকের হাতে।
এবার আপনাদের মালিক আপনাদের ৩ কর্মচারীর হাতে ৩টি ভিন্ন ভিন্ন রুমের ভিন্ন ভিন্ন চাবী হাতে দিয়ে যার কক্ষে প্রবেশ করে, সেখানে থেকে তার তার নিজস্ব কার্য সম্পাদন করতে নির্দেশ দিয়ে দিল।
এখানে একজনের কক্ষে আর একজনের প্রবেশ করার কোনই সুযোগ থাকিলনা। যদি তা করতে পারে তাতে মালিকের ক্ষতি হবে।
DNA, তার সুনির্দিষ্ট কাজকাম ঠিক এভাবেই কোষ প্রাচীরের RECEPTOR এর মধ্য দিয়ে করায়।
হ্যাঁ, কী ভাবে VESICLE গুলী তার পদার্থ সহ কোষ প্রাচীরের দরজার তালা তার হাতের চাবী দ্বারা খুলে খুলে কোষের অভ্যন্তরে সংকেৎ পাঠিয়ে দিচ্ছে, সেটা চিত্র- ৪ এ দেখুন।(৭,৮,৯,১৪)
কী সেই চাবী? কী সেই তালা?
হ্যা এইটাই এই বিজ্ঞানীদের আবিস্কার।
পরবর্তী পর্বে বিষয়টা আপনাদের নিকট আরো পরিস্কার হয়ে যাবে।
নীচের চিত্র-৩ এ লক্ষ করুন।
Fiure source- http://learn.genetics.utah.edu/content/cells/vesicles/
চিত্র-৩,কোষ প্রাচীর।
এখানে লক্ষ্য করুন, কোষের অভ্যন্তরে উৎপন্ন মালামাল লয়ে VESICLE (প্লাশ্টিক ব্যাগ) গুলী কী ভাবে কোষ প্রাচীর ফুড়ে ফুড়ে ভেদ করে কোষ প্রাচীরের বাইরে আসতেছে। এই মালামাল সহ VESICLE গুলী নিকটবর্তী অথবা দূরবর্তী লক্ষবস্তু কোষের কোষ প্রাচীরে অবস্থিত RECEPTOR বা গেটে ঢুকে ,সেখানকার প্রয়োজনীয় কাজ কাম চালাবে।
এবার লক্ষ করুন VESICLE গুলী ঐ মালামাল বহন করে এনে তাদের লক্ষ্যবস্তু কোষটির প্রাচীরের গেট বা RECEPTOR এর মধ্য দিয়ে,কোষের RECEPTOR এ বসে কীভাবে কোষের অভ্যন্তরে কাজের সংকেৎ পাঠাচ্ছে।(চিত্র-৪)
Figure source- http://hubpages.com/education/How-drugs-act-tyrosine-kinase-receptors-hormone-receptors
চিত্র-৪, কোষ প্রাচীরে RECEPTOR কাজ চালাচ্ছে।
এখানে লক্ষ্য করুন কোষ প্রাচীরের গেট,RECEPTOR ,এর মধ্য দিয়ে পদার্থ কোষের অভ্যন্তরে কী ভাবে কাজের সংকেৎ পাঠাচ্ছে।(১৪)
এতক্ষনে শুধুমাত্র কোষ প্রাচীরের বর্নণা দেওয়া হইল।
এবার কোষের বাকী ক্ষুদ্রাংসের বিষয় জানুন।(চিত্র-২ দেখুন)
২। CYTOPLASM- কোষ প্রাচীরের অভ্যন্তরে বৃহৎ জেলীর (CYTOSOL) মত জলীয় পদার্থকে CYTOPLASM বলে।এটা এবং অন্যান্য সমস্ত পদার্থ NUCLEUS এর চতুর্পার্শে থাকে।(১২)
৩। NUCLEUS-কোষের কেন্দ্রে সাইটোপ্লাজম এর মধ্যে কিছুটা গাড় এবং প্রাচীর দ্বারা ঘেরা পদার্থ টাকে NUCLEUS বলে। এর মধ্যে আরো একটি গোলাকার প্রাচীর হীন পদার্থ থাকে তাকে NUCLEOLUS বলে। NUCLEOLUS, RIBOSOME ও RNA তৈরী করে।
এই NUCLEUS এর মধ্যেই আমাদের অতি গুরত্বপূর্ণ বস্তু, ২৩ জোড়া CHROMOSOME থাকে।যা আমাদের শরীরের সব কিছু নিয়ন্ত্রন করে।(১২)
৪। MITOCHONDRION- কোষের সাইটোপ্লাজম এর মধ্যে যথেষ্ঠ সংখ্যক MITOCHONDRIA থাকে। মাইটোকনড্রিয়া শরীরের টিকে থাকা ও কাজ কাম পরিচালনার শক্তি উৎপাদন করে। শক্তিটা সঞ্চিত রাখে রাসায়নিক উপাদাদান ATP বা ADENOSINE TRYPHOSPHATE নামের একটি রাসায়নিক যৌগ পদার্থ রুপে।
কোষের DNA ছাড়া এদের নিজস্ব DNA রয়েছে,যা এরা নিজেরাই বিভাজন করতে পারে।
শক্তি উৎপাদনের কাচা মাল হিসাবে ব্যবহৃত হয় আমরা যে খাদ্য বস্তু খাই তা হতে। (১২)
৫। RIBOSOME- এটা একটা কোষের সাইটোপ্লাজম এর মধ্যে প্রাচীর হীন ক্ষুদ্র একক (ORGANELLE)।এর কাজ DNA এর নির্দেশ অনুসারে প্রোটীন তৈরী করে শরীরকে পরিচালনা করা।DNA শরীরের সমস্ত প্রোটীন এখানে উৎপাদন করে, ENDOPLASMIC RETICULAM ও GOLGI APPARATUS এর মাধ্যমে VESICLE এ করে, কোষের অভ্যন্তরে ও বাহিরে, সর্বত্র কোষের উৎপন্ন মালামাল প্রেরণ করে। এরা কোষের অভ্যন্তরে স্বাধীন ভাবে ঘুরাফিরা করতে পারে এবং ENDOPLASMIC RETICULAM এর সংগে মিলিত হয়ে একত্রে কাজ চালাতে পারে। (১২) (RIBOSOME কী ভাবে প্রোটীন উৎপাদন করে ১১ তম পর্ব দেখুন)।
৫. ENDOPLASMIC RETICULUM OR (ER)- এটা দুই প্রকার- ROUGH ER ও SMOOTH ER.
ROUGH ER- RIBOSOME এর সংষ্পর্ষে থাকে।
এটা MEMBRANE (পাতলা পর্দা) এবং SECRETORY PROTEIN (নিঃসরন গামী আমিস),যেমন এনজাইম, হরমোন) ইত্যাদি উৎপন্নে সাহায্য করে। রক্তের কিছু কিছু শ্বেত কনিকায় ANTIBODY (প্রতিরোধক) কোষ ও তৈরী করতে সহযোগিতা রে। PANCREAS এ এটা INSULINE নামক হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে।
ROUGH ER এবং SMOOTH ER পরস্পর সংযুক্ত।
SMOOTH ER এর ও অনেক কাজ আছে। এটা শরকরা ও চর্বি উৎপাদনে সাহায্য করে। ROUGH ER এ উৎপন্ন দব্য অন্যত্র পাঠানোর জন্য প্রথমে, VESICLE (PROTEIN দ্বারা তৈরী আমাদের প্লাস্টিক ব্যাগ বা প্যাকেটের ন্যায়) এর মধ্যে ভর্তি করে SMOOTH ER এ আনা হয়। এজন্য এই VESICLE টাকে TRANSITIONAL VESICLE বলা হয়।
ঠিক যেমনটা আমরা মালামাল কোন মালবাহী ট্রেনে পাঠাবার পূর্বে আমরা মালামাল গুলীকে প্যাক করে প্রথমে ট্রেনের প্লাটফর্মের উপর তুলি। এর পর মালামাল ট্রেনে তুলে দিলে ট্রেন মালামাল গুলীকে গন্তব্যে লয়ে যায়।
লিভার কোষে ER একটা এনজাইম উৎপন্ন করে যেটা কোন কোন যৌগের বিষ ক্রিয়াকে নিস্ক্রীয় করে থাকে।
মস্তিস্ক কোষে ER পুরুষ ও স্ত্রী হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে।(১১)
৬। GOLGI APPARATUS-
এটা দেখতে কতকটা PANCAKE এর মত। ER এ প্রস্তুত কৃত TRANSITIONAL VESICLE, GOLGI এর একটা এক পার্শের প্রাচীর এর মধ্যে ফুড়ে ভেদ করে ঢুকে যায়। (চিত্র-৩ ) এই TRANSITIONAL VESICLE, GOLGI এর মধ্যে ঢুকার পর, এর মধ্যের পদার্থকে বৃদ্ধি করা হয় ও ভাজ করা হয়। এবার এই পদার্থকে একটা বড় VESICLE এর মধ্যে প্যাক করা হয়।
এই VESCLE কে এখন বলা হয় SECRETORY VESICLE। এই SECRETORY VESICLE টা এখন CYTOPLASM এর মধ্যে GOLGI এর অপর পার্শ যেদিকে কোষ প্রাচীর অবস্থিত,সেদিকে বেরিয়ে পড়ে।(চিত্র-৩ )
এরপর এই SECRETORY VESICLE কোষ প্রাচীর পেরিয়ে, যার যেটা গন্তব্য স্থল,সেদিকে রওনা দেয়।(চিত্র-৩)
এই VESICLE গুলী, GOLGI বেড়ী ও কোষ বেড়ী কী ভাবে পেরোয়?
এটা বেড়ী পেরোয় BUDDING বা ঠিক ফুলের কুঁড়ীটা ডগা থেকে যে ভাবে ফুঁড়ে ভেদ করে বেরিয়ে আসে, অথচ প্রাচীর ছিদ্র না করে। (৫)
কোষের অভ্যন্তরে মালামাল পস্তুত ও প্যাক করে VESICLE এর অভ্যন্তরে ভর্তি করে দিয়ে, কোষ কী ভাবে তার প্রাচীর ভেদ করে দিয়ে যথাযথ গন্তব্য স্থলের দিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে, তা উপরে চিত্র-৩ এ একটু লক্ষ করুন।
৭। CYTOSKELEON- এটা কোষের অভ্যন্তরে সূক্ষ্ম আঁস জাতীয় পদার্থ। এটা কোষের গঠন ও আকৃতিকে ধরে রাখে।এটা কোষ বিভাজন (পর্ব ৬,৭,৮ দেখুন) ও কোষের চলাচলে সাহায্য করে।
কোষের আভ্যন্তরীন ORGANELLE ও অন্যান্য পদার্থের একস্থান হতে অন্যত্র চলাচলের ট্রাক-লাইন হিসাবেও ব্যবহৃত হয়।(১২)
৮। LYSOSOSOME ও PEROXISOME - এই ORGANELLE গুলীকে কোষ ডাস্টবিন হিসাবে ব্যবহার করে। বাইরের কোন জীবানু কোষের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লে এরা তাকে পরিপাক করে ফেলে।
কোন বিষাক্ত পদার্থ ঢুকে পড়লে তাকে এরা নির্বিষ করে ফেলে। কোষের ব্যবহৃত বর্জ্য পদার্থকে কোষ এর মধ্যে ফেলে দেয়(১২)। এরপর LYSOSOME, alpha-galactosidase A.নামক একটি এনজাইম দ্বারা বর্জ পদার্থকে বিশেষ করে GLOBOTRIAOSYLCERAMIDE নামক একটি ত্রিশর্কারা-চর্বি জাতীয় পদার্থকে পরিপাক করে কোষকে সুস্থ রাখে। Alpha-galactosidase A.নামক এনজাইমটিকে উৎপন্ন করে জ্বীন GLA. এই জ্বীন এর কোষীয় অবস্থান Xq22. এই জ্বীনটি MUTATION হয়ে গেলে কোষের মধ্যে আবর্জনা ও চর্বি জমে কোষ অশুস্থ হয়ে যেতে থাকে। তখন সেই ব্যক্তি FABRY নামক রোগে আক্রান্ত হয়। এই রোগে যে কোন অর্গান যেমন মস্তিস্ক,হৃদপিন্ড, লিভার, কীডনী ইত্যাদি আক্রান্ত হতে পারে (১৫)।
৯। VACUOLES-কোষের আভ্যন্তরীন চাপ রক্ষা করে। কোষের অপ্রয়োজনীয় পদার্থ এর মধ্যে জমা করে,বাহির করিয়া দেয়।ইহা কোষের আভ্যন্তরীন PH রক্ষা করে। (১৩)
পর্ব অধিক দীর্ঘ হয়ে যাতে পাঠকদের প্রতি বেশী বোঝা না হয়ে যায়, এজন্য বাকী অংশ আগামী পর্বের জন্য রেখে দিয়ে এ পর্ব এখানেই সংক্ষিপ্তাকারে শেষ করিলাম। আর এখানে সব বিস্তারিত বর্ণনা করা সম্ভবও নয়। যারা আরো বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক তারা রেফারেন্স গুলীতে গিয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন।
মানব দেহের রহস্য জানতে সংগে থাকুন।
অন্যান্য পর্বগুলী এখানে দেখতে পারেন- https://chkdr02.wordpress.com/
UPDATED ON- 1/1/2016
১৬ তম পর্বের সূত্র সমূহ-
Nobel prize org.
১. http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2013/press.html
২. Science Daily
http://www.sciencedaily.com/releases/2013/10/131007102609.htm?utm_source=feedburner&utm_medium=feed&utm_campaign=Feed%3A+sciencedaily%2Fhealth_medicine%2Fdiseases_and_conditions+(ScienceDaily%3A+Health+%26+Medicine+News+–+Diseases+and+Conditions)
৩ http://www.nytimes.com/2013/10/08/health/3-win-joint-nobel-prize-in-medicine.html?_r=0
৪.function of cell wall
http://www.biologycorner.com/APbiology/cellular/notes_cell_membrane.html
৫. FUNCTION OF VESICLESS
http://learn.genetics.utah.edu/content/begin/cells/vesicles/
৬. NUROTRANSMITTER
http://webspace.ship.edu/cgboer/genpsyneurotransmitters.html
৭. SIGNALLING
http://www.nature.com/scitable/topicpage/cell-signaling-14047077
৮. ACETYLCHOLINE
http://psychology.about.com/od/aindex/g/acetylcholine.htm
৯. ACETYLCHOLINE
http://neuroscience.uth.tmc.edu/s1/chapter11.html
১০. ANATOMY OF NUROMUSCULAR JUNCTION
http://neuroscience.uth.tmc.edu/s1/chapter04.html#fig4_1
১১, ENDOPLSMIC RETICULUM
http://biology.about.com/od/cellanatomy/ss/endoplasmic-reticulum.htm
১২. CYTOSKELETON
http://ghr.nlm.nih.gov/handbook/basics/cell
১৩. VACUOLE
http://en.wikipedia.org/wiki/Vacuole
১৪. RECEPTOR
http://hubpages.com/education/How-drugs-act-tyrosine-kinase-receptors-hormone-receptor১৫. LYSOSOME,FABRY
http://ghr.nlm.nih.gov/gene/GLA
বিষয়: বিবিধ
১৬০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন