ডিএনএ কী? ১৫ তম পর্ব, আপনার প্রিয়জনকে কপি করে এই ধরনীর বুকে রেখে দিতে পারেন,কৃত্রিম CLONING কী?(৩)।
লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৭:৩৬:১৬ সন্ধ্যা
ডিএনএ কী? ১৫ তম পর্ব, আপনার প্রিয়জনকে কপি করে এই ধরনীর বুকে রেখে দিতে পারেন,কৃত্রিম CLONING কী?(৩)।
Figure source- http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2012/
Figure-1
Sir John B. Gurdon (বামে)
জন্ম: ১৯৩৩, Dippenhall, United Kingdom
Shinya Yamanaka (ডানে)
জন্ম: ১৯৬২,Osaka, Japan
তারা ২০১২ সালে মেডিসিন বা ফিজিওলজীর উপর এর সংগে একত্রে নোবেল বিজয়ী হয়েছিলেন।
Sir John B. Gurdon কী আবিস্কার করেছিলেন?
এই পর্বটি বুঝতে পর্ব ১৩ ও ১৪ আর একবার দেখে নিলে বুঝতে সহজ হবে।
আগে বিশ্বাষ করা হত একটা PLURIPOTENT STEM কোষের যাত্রা একমুখী ও অপরিবর্তনীয়। অর্থাৎ যেমন ধরুন আমাদের ভ্রণের PLURIPOTENT STEM কোষ হতে আমাদের শরীরের যাবতীয় বিশেষায়িত কোষ যেমন মস্তিস্ক কোষ,হার্ট কোষ,লিভার কোষ ইত্যাদি জন্মায় ও শুধু মাত্র সম্মুখে অর্থাৎ বার্ধক্য ও মৃত্যুর (APOPTOSIS) দিকেই অগ্রসর হতে থাকে। ( ১৪ তম পর্ব দেখুন)
এই বিশেষায়িত কোষ গুলী আর কখনো BACK GEAR করে ভ্রণ জীবনের PLURIPOTENT STEM কোষে পরিণত হতে পারেনা। আর যদি তা পারে তার অর্থ ঠিক এইরুপ দাড়ায় যেমন একজন ১০০ বৎসরের বৃদ্ধ তার জীবন চক্রকে BACK GEAR করে সে তার জন্ম কালের বয়সে ফিরিয়ে নিতে পারার মত একটি ঘটনা ঘটে যাওয়া।
Sir John B. Gurdon ১৯৬২ সালে ব্যাঙাচির উপর একটা পরীক্ষা চালিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষকে পিছনের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে PLURIPOTENT STEM কোষে পরিণত করে পুনরায় হুবহু নুতন ব্যাঙাচি ও ব্যাঙ তৈরী করা যায়।
এর কী অর্থ দাড়ালো সেটা কী একটু অনুধাবন করতে পেরেছেন?
এর অর্থ দাড়ালো একজন ১০০ বৎসরের বৃদ্ধ, তারই শরীরের ১০০ ট্রিলিয়নের যে কোন একটি কোষ সংগ্রহ করে, সেই কোষের নিউক্লীয়াসের মধ্যের তারই CHROMOSOME কে ব্যবহার করে তারই মত হুবহু একজনকে নব জন্ম দেওয়া সম্ভব হল।
কী ভয়ংকর কথা,একটু ভেবে দেখুন তো!!!
এটা কী বাস্তবে সম্ভব?
জী, হ্যাঁ,
সম্ভব। এই বিজ্ঞানীদ্বয় এহেন অসম্ভব বিষয়কে সম্ভবে পরিণত করেছেন।
তবে, বিশ্ব সমাজ, বিজ্ঞানীদেরকে বলেছে, তোমরা অন্ততঃ মানব জাতির উপর এই পরীক্ষা নীরিক্ষাটা চালিওনা, মানব সৃষ্টির ক্ষমতাটা নিজেদের হাতে লইওনা, তা করলে মানুষ সৃষ্টির পদ্ধতিকে ভূল পথে চালিত করে দিয়ে এই পৃথিবী হতে মানব জাতিকে ধংস করে দিবে।
এ কারণে মানব CLONING করাটা আইন করে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের উপর মানব CLONING নিষিদ্ব করা না হলে, এতদিনে আমরা অজস্র CLONE(কপি) মানব সমাজে চলা ফিরা করতে দেখতে পেতাম।
তবে অন্য প্রাণীদের উপর যত পার করতে বাধা নাই।
তার সেই থিওরীর উপর ভিত্তি করেই আজ উন্নত বিশ্বে অহরহ পশু এর CLONING করে উৎপাদন চলতেছে। সেই পশুর মাংসও বাজারজাত করা চলতেছে।
তাছাড়া সম্প্রতি , শুধু মাত্র প্রাণীর MUSCLE STEM কোষ উৎপাদন করে, সেই STEM কোষ হতে, প্রাণী হত্যা ব্যতিরেকেই, মাংস উৎপাদন করিয়া, সেই মাংসও ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে রেস্টুরেন্টে ব্যবহার করা হচে্ছ। তবে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চালু হতে আরো বেশ কিছু সময় লাগবে।
বিজ্ঞানীরা চাচ্ছেন মাংসের জন্য অনবরত প্রাণী হত্যা করার মত বাড়তি ঝামেলা না পোহায়ে, পরিবেশ দুষণ না করে, মাংসের চাহিদাটা, শুধু ফ্যাক্টরীর ল্যাবরেটরীতে উৎপাদিত মাংস দ্বারা পুরণ করা যায় কিনা। মন্দ নয় ধারনাটা।তবে চাহিদা মেটানোর মত পরিমান উৎপন্ন করে সহজলভ্য করাটা এখনো বেশ কিছু দুরের ব্যাপার (২)
Sir John B. Gurdon এর পরীক্ষাটা কী ছিল?
তিনি একটি ব্যাঙের অপরিপক্ক ডিমের NUCLEUS কে বের করে ফেলে দিয়ে, সেই ডিম্বের মধ্যে একটি ব্যাঙাচির পরিপাক তন্ত্রের নাড়ীর (INTESTINE) পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষের NUCLEUS ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি পর্যবেক্ষন করে দেখতে পেলেন ডিম হতে ঠিকই হুবহু ব্যাঙাচি জন্মও নিল এবং বর্ধিত হয়ে পূর্ণ ব্যাঙেও পরিণত হল। এরুপ অনেক গুলো পরীক্ষা করেছিলেন চিত্র-১ (১)
Sir John B. Gurdon এর এই ছোট্ট একটা পরীক্ষায় কতবড় রহস্যের দ্বার উন্মোচন হল তা কী ধরতে পেরেছেন?
এটা ভাল ভাবে বুঝতে গেলে, আসুন আগে আমরা কিছু কাল্পনিক নাম ধরে লই, তাহলে বুঝতে সহজ হবে।যেমন-
উক্ত অপরিপক্ক ব্যাঙের ডিম্ব হতে যদি NUCLEUS টি বের করে না ফেলা হত, ধরে নিন তাহলেও ঐ ডিম্ব হতে একটি ব্যাঙাচি ও ব্যাঙের সৃষ্টি হত, ধরা যাক উক্ত সম্ভাব্য ব্যাঙটির নাম “A’
যে ব্যাঙাচিটির পরিপাক তন্ত্রের নাড়ীর বিশেষায়িত কোষ হতে NUCLEUS সংগ্রহ করে উক্ত ডিমের মধ্যে বসিয়েছেন, সেই ব্যাঙাচিটির নাম ধরুন “B”
ডিমের NUCLEUS ফেলে দিয়ে ‘B” ব্যাঙাচির নাড়ীর বিশেষায়িত কোষের NUCLEUS ঢুকিয়ে দেওয়ার পর যে ব্যাঙাচিটি বা ব্যাঙটি উৎপন্ন হল, ধরুন তার নাম “C”।
মনে রাখতে হবে NUCLEUS এর মধ্যেই CHROMOSOME, যা প্রানীটির BLUE PRINT বা মডেল অবস্থিত থাকে। প্রানীটি ঠিক যেমন CHROMOSOME টি পাইবে, সে হু-বহু ঠিক তদ্রুপ ই হইবে। ক্রোমোজমের বাইরে তার কিছুই গড়ার ক্ষমতা নাই।
এবার তাহলে একটু চিন্তা করুনতো প্রথম সম্ভাব্য ব্যাঙ “A” ও তৃতীয় বাস্তব উৎপাদিত ব্যাঙ “C”এর মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?
এদের পার্থক্য মূল জায়গায় ক্রোমোজোমে। সম্ভাব্য “A’ ব্যাংটির একটা স্বাভাবিক নিজস্ব CHROMOSOME ও বৈশিষ্ট্য থাকত। যেটা ডিম্ব হতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
তার মধ্যে “B” ব্যাঙাচির CHROMOSOME ঢুকিয়ে দিয়ে বাস্তব “C” ব্যাঙাচি উৎপন্ন করা হয়েছে।
এর অর্থ দাড়াল “C’ ব্যাঙাচি টি “B” ব্যঙাচিটির একটি কপি বা হুবহু অনুরুপ প্রানী উৎপাদিত হইল। কারণ তাদের উভয়ের ক্রোমোজোম একই।
তাহলে এই পরীক্ষাটা কী কী রহস্য উন্মোচন করল?
১) এই পরীক্ষায় প্রমাণিত করল যে,আমরা একটি প্রানীর অনুরুপ কপি আর একটি প্রানী উৎপাদন করতে পারি।
কারন, একটি প্রানীর জীবনের সব কিছুই তার ক্রোমোজোমের মধ্যেই থাকে। আর এখানে একটি প্রানীর ক্রোমোজোম সংগ্রহের মাধ্যমেই আর একটি প্রানী উৎপাদন করা হল। অতএব “C” ব্যাঙাচির ক্রোমোজোম ও “B”ব্যাঙাচির ক্রোমোজোম হুবহু একই। তাই এরা একটা আর একটার হুবহু কপি প্রাণী।
২) আবার এই পরীক্ষায় এটাও প্রমাণিত করল যে,আমরা বয়স্ক বিশেষায়িত কোষকে ভ্রণের STEM কোষে পরিণত করতে পারি।
কারণ, “B” ব্যাঙাচির নাড়ী হতে পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষের ক্রোমোজোম সংগ্রহ করে নিউক্লীয়াছ-শূন্য ডিম্বের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার ফলে “C” ব্যাঙাচির জন্ম হয়েছে। এই নব জন্ম লওয়া “C” ব্যাঙাচিতে আর কোন পরিপক্ক বিশেষায়িত নাড়ীর কোষ নাই। যদিও তাকে সংগ্রহ করা হয়েছে পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষ নাড়ী হতে।
এখন এই নব জন্মিত “C” কোষে যত কোষ আছে সবই STEM কোষ।এরা অতি সত্বর সব PLURIPOTENT STEM কোষে পরিণত হয়ে, নূতন “C” ব্যাঙের জন্ম দিল। (পর্ব-১৪ দেখুন)
অতএব এই পরীক্ষায় এটাও প্রমাণিত হল যে পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষ অপরিবর্তনীয় নয়। বরং একে, এর আদি প্রাথমিক জীবনের কোষে (PLURIPOTENT STEM CELL) পত্যাবর্তন করানো যায়।(পর্ব-১৪ দেখুন)
Source of Figure- http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2012/press.html
চিত্র-২, উপরের অংশে, বিজ্ঞানী Sir John B. Gurdon এর ব্যাঙাচির উপর পরীক্ষা। নীচের অংশে, বিজ্ঞানী Shinya Yamanaka এর পরীক্ষা ।
Source of Figure- http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2012/press.html
চিত্র-৩
চিত্র-৩ এ দেখানো হয়েছে কীভাবে একটি বিশেষায়িত কোষে জ্বীন ঢুকিয়ে IPS (INDUCED PLURIPOTENT STEM CELL)তৈরী করা হয়।
উপরের চিত্র-২ এ লক্ষ করুন, বামে একটি ব্যাঙের ডিম্ব, যার মধ্য থেকে NUCLEUS বের করে ফেলা
একটু ডানে,NUCLEUS শুণ্য ডিম্বটির মধ্যে অন্য একটি ব্যাঙাচির নাড়ীর পরিপক্ক বিশেষায়িত কোষের NUCLEUS ঢুকানো হচ্ছে (২ নং)।
তার একটু ডানে, ডিম্বটি FERTILIZED হয়ে একটা ZYGOTE এ পরিণত হয়ে STEM কোষের ভ্রুণে পরিণত হয়ে গেছে (৩ নং) ।
তার ডাইনেই ডিম্বটি হতে প্রথমে ব্যাঙাচি ও পরে ব্যাঙের বাচ্চায় পরিণত হয় গেছে।
ঠিক এর নীচেই (২নং চিত্র) এই থিওরী প্রয়োগ করে পশু CLONING দেখানো হয়েছে।(পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে)।(১)
এটাই কৃত্রিম CLONING , যার পথ প্রদর্শক হচ্ছেন বিজ্ঞানী Sir John B. Gurdon.
IPS বা INDUCED PLURIPOTENT STEM CELL কী
এটা একটা কৃত্রিম স্টেম কোষ, যা সরাসরি জ্বীন ঢুকিয়ে করা হয়। একে IPS বা INDUCED PLURIPOTENT STEM CELL বলা হয়।
Shinya Yamanaka কী আবিস্কার করেছিলেন?
২০০৬ সালে Shinya Yamanaka একটি চর্মের পরিপক্ক বিশেষায়িত (FIBROBLAST) কোষে Oct3/4, Sox2, c-Myc, Klf4 নামক চারটি TRANSCRIPTION FACTOR জ্বীন ঢুকিয়ে দিয়ে EMBRYONIC PLURIPOTENT কোষে ফিরিয়ে লইতে সক্ষম হয়েছিলেন।
এই কৃত্রিম কোষ গুলিকেই IPS বা INDUCED PLURIPOTENT কোষ বলা হয়।
এই কৃত্রিম কোষ গুলী সঠিক জ্বীন গুলী পেয়ে যাওয়ার কারণে প্রাকৃতিক EMBRYONIC PLURIPOTENT কোষ গুলীর মতই এরা যে কোন বিশেষায়িত কোষে পরিণত হতে পেরেছিল।
Oct3/4, Sox2, c-Myc, Klf4 এই ৪টি এবং Oct3/4, Sox2, Nanog , Lin28, এই ৪টি, এই মোট ৮টি TRANSCRIPTION FACTOR জ্বীন, সাধারণ কোষকে PLURIPOTENT STEM কোষ হওয়ার যোগ্য করায়, যে PLURIPOTENT STEM কোষ হতে অন্য সমস্ত বিশেষায়িত কোষ তৈরী হয়।(পর্ব-১৪ দেখুন)
এভাবেও প্রানীকে CLONING করা যায়।
মানব দেহের রহস্য জানতে সংগে থাকুন।
অন্যান্য পর্ব সমূহ এখানে দেখুন- https://chkdr02.wordpress.com/
Edited on- 12/4/2015
১৫ তম পর্বের সূত্র সমূহ-
১)NOBEL PRIZE 2012
http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2012/
২)STEM CELL MEAT
http://www.americanthinker.com/2013/09/cultured_meat_peta_and_mandels_cow.html
বিষয়: বিবিধ
১২২৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হকিংয়ের কালের ইতিহাস বইটা সহজ সরল করে লেখার জন্য সারা দুনিয়াই জনপ্রিয় হয়েছিল। মনে হয় আপনার লেখাটাও বই আকারে প্রকাশ হবে, এবং এই ধরনের বই বাংলা ভাষায় বেশি বেশি প্রকাশ হওয়া উচিত।
সরল অন্তরে মতামত দিলাম মনে কিছু নিবেন না। বিনিত।
জাযাকাল্লাহ খায়ের।
মন্তব্য করতে লগইন করুন