৫৩(৫) তম পর্ব।কী আবিস্কার করিয়া এই ৩ বিজ্ঞানী ২০১৫ সনে রসায়নের উপর নোবেল বিজয়ী হলেন? DNA এর নিজেরই অস্তিত্ব অনবরত হুমকীর সম্মুখীন।
লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ২৬ অক্টোবর, ২০১৫, ০৬:৪২:১৪ সন্ধ্যা
৫৩(৫) তম পর্ব।কী আবিস্কার করিয়া এই ৩ বিজ্ঞানী ২০১৫ সনে রসায়নের উপর নোবেল বিজয়ী হলেন? DNA এর নিজেরই অস্তিত্ব অনবরত হুমকীর সম্মুখীন।
কোষ অনবরত সেই হুমকী যেভাবে মুকাবেলা করে DNA তথা সমগ্র প্রানী জগৎকে রক্ষা করে রাখে।
Figure source- http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/chemistry/laureates/2015/
Figure-1
1) Tomas Lindahl (Left)
Born: 1938, Stockholm, Sweden
2) Paul Modrich (Middle)
Born: 1946
3) Aziz Sancar (Right)
Born: 1946, Savur, Turkey
পর্ব-৫১ তে দেখেছেন বিজ্ঞানী Tomas Lindahl এর আবিস্কারটা কোথায় এবং কী ছিল।
ইতিপূর্বে আপনারা
১)Tomas Lindahl (Left) ও ২) Paul Modrich (Middle) এর আবিস্কারদ্বয় দেখেছেন।
এবার বর্ণনা করা হচ্ছে বিজ্ঞানী
৩) Aziz Sancar (Right)- তিনি দেখিয়েছেন DNA এর NUCLEOTIDE ULTRAVIOLET RAY অথবা কোন ক্যানসার উৎপাদক পদার্থের দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হলে কোষ যে ভাবে NUCLEOTIDE EXISION REPAIR পদ্ধতি এর মাধ্যমে NUCLEOTIDE কে মেরামত করে।
পদ্ধতিটার নামের দ্বারাই সহজে বুঝা যাচ্ছে পদ্ধতি, অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে NUCLEOTIDE কেটে ফেলে দিয়ে DNA কে মেরামত করা হয়।
NUCLEOTIDE টা DNA এর কোন অংস তা জানার জন্য পর্ব-৫০ টা আর একবার দেখে লউন।
এক কথায় NUCLEOTIDE টা DNA এর মৌলিক ইউনিট, যা দ্বারা DNA গঠিত , যেমন একটা ভবন ইট দ্বারা নির্মান করা হলে সেই ভবনটার ইউনিট হইল ইট।আর প্রতিটা NUCLEOTIDE গঠিত হয় ১টি BASE, ১টি ছুগার ও একটি ফসফেট অনু দ্বারা। (চিত্র-৩ দেখুন)
এখানে পুনরায় বর্ণনা করতে গেলে পর্বটা অনর্থক দীর্ঘ হয়ে যাবে, তাই এখানে আর বর্ণনা করলামনা।
তাহলে এবার আসুন দেখা যাক, এই বিজ্ঞানী একটা ত্রটিপূর্ণ NUCLEOTIDE কে কোষ যে ভাবে মেরামত করে তা আবিস্কার করেছেন ও ম্যাপ আকারেও দেখিয়ে দিয়েছেন।
আর এই ধরনের ত্রুটিপূর্ণ NUCLEOTIDE উৎপন্ন হয়, ULTRA VIOLET RAY, সিগারেট এর Benzo a Pyrene অথবা অন্য কোন রাসায়নিক পদার্থের আঘাতে।
তার আবিস্কারটা পরিস্কার করে দিয়েছেন, চিত্র- ২ এ ম্যাপটা একে ও ঐ ম্যাপে ৪টি ফটো দেখিয়ে ও তার প্রতিটা ফটোয় কোথায় কী ঘটতেছে তার বিষদ বর্ণনা দিয়ে।
পূর্বেরটার মতই আমি যদি আপনাদের সম্মুখে শুধু মাত্র ঐ ফটো গুলীর বর্ণনা পরিস্কার ভাবে তুলে ধরতে পারি তাহলেই আপনাদের জন্য তার আবিস্কারটা বুঝার জন্য যথেষ্ঠ হইবে।
এবার তাহলে আসুন আমরা একটু ধৈর্য সহকারে দেখি তিনি চিত্র- ২ এর ফটো গুলী দ্বারা কী বুঝিয়েছেন।
তার মেরামতটার নাম দিয়েছেন NUCLEOTIDE EXISION REPAIR অর্থাৎ যে ভাবে কোষ তার ইঞ্জিনীয়ারদের (ENZYME) দ্বারা একটা ত্রুটিপূর্ণ NUCLEOTIDE কে কেটে ফেলে দিয়ে মেরামত করে থাকে।
তা হলে এবার আসুন আমরা চিত্র-২ এর ৪টি ফটো, ১টা ১টা করে বিশ্লেষন করে দেখি।
Figure source-http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/chemistry/laureates/2015/fig_ke_en_15_mismatchrepair.pdf
Figure-2, NUCLEOTIDE EXCISION REPAIR.
উপরের চিত্র-২ এর ফটো গুলী (৪ টি ) দেখতে থাকুন ও একই সংগে সংশ্লিষ্ট ফটোর বর্ণনাও পড়তে থাকুন, তাহলে সহজে বুঝতে পারবেন।
ফটো-১
লক্ষ্য করুন, DNA এর উপরের চেইনটায় ২টা পাশাপাশি অবস্থিত THYMINE(T) যাকে সবুজ রং দ্বারা রঞ্জিত করা হয়েছে ও সাংকেতিক কোড T দ্বারা দেখানো হয়েছে, ULTRAVIOLET RAY আঘাত করে, পরশ্পরের সংগে সংযুক্ত করে দিয়েছে।
এর বিপরীত চেইনে হলুদ রংএর দুইটি ADENINE (A) বেছ , যা A সাংকেতিক কোড দ্বারা চিহ্নিত করে দেখানো হয়েছে। কারণ আগেই বলা হয়েছে THYMINE সর্বদা পার্শবর্তী সম্পূরক চেইনের ADENINE এর সংগে যোড়ন বাধে।(পর্ব-৫০ দেখুন)
এভাবে একই পার্শের চেইন এর পাশাপাশি ২টা বেছ একত্রে মিশ্রিত হয়ে গেলে DNA এর ফর্মুলা ভেঙ্গে যায় ও DNA কাজ করতে পারেনা।
এটা কতকটা এরুপ ঘটনা মনে করতে পারেন যেমন আপনার দুইটা পৃথক তালার দুইটা পৃথক চাবি যদি একত্রে এটে যায় তাহলে এই সংযুক্ত চাবীদ্বয় দ্বারা ২টা তালার কোনটাই খুলা যাবেনা। উভয় চাবীই অকেজো হয়ে যাবে। তালা খুলার জন্য অবশ্যই নূতন চাবীর দরকার হবে।
এখানে ঠিক তাইই হয়েছে।দুইটা বেছ একত্রে সংযুক্ত হয়ে অকেজো হয়ে গিয়েছে। এদের কাজ আর করতে পারতেছে না।
ফটো-১ এর বর্ণনা শেষ।
এবার চলুন ফটো-২ এ কী বর্ণনা করেছে দেখা যাক।
ফটো-২,
লক্ষ্য করুন, এবার কোষ তার ত্রুটিপূর্ণ NUCLEOTIDE কেটে ফেলার কাজে বিশেষ প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ও দক্ষ ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ারকে পাঠিয়ে দিয়েছে। তার এই ইঞ্জিনীয়ারের নাম ENZYME “EXINUCLEASE’.
এই MR. “EXINUCLEASE’. ওখানে পৌছে ঐ ত্রটিপূর্ণ NUCLEOTIDE টাকে পেয়ে গেছে ওটাকে সহ ওর আসে পাশের মোট ১২টি NUCLEOTIDE কাউচী দিয়ে কাটার মত করে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধমে কেটে সরিয়ে ফেলেছে।
১২টি NUCLEOTIDES কেন কেটেছে?
কারণ এর আশে পাশের গুলীও পদার্থের আঘাতে আংশিক ত্রুটিপূর্ণ হয়ে থাকতে পারে, পরবর্তিতে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
দেখলেনতো, এই দক্ষ ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ার কোন ক্ষতির ঝুকিটাও রাখতে চায়না। কতবড় আন্তরিক দায়িত্ব পালণে।
ফটো-২ এর কাজ শেষ।
এবার চলুন দেখা যাক ফটো-৩ এ কী ঘটতেছে।
ফটো-৩,
এবার কোষ এই ফাকা জায়গা পূরণ করবে সম্পূর্ণ নূতন DNA খন্ডাংস দ্বারা। আর আগেই জানতে পেরেছেন কোষের খালি জায়গা পূরণ করার জন্য বিশেষ ইঞ্জিনীয়ারের নাম। তার নাম Mr. ENZYME “POLYMERASE”.
এবার কোষ ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ার Mr. “POLYMERASE”. কে ওখানে পাঠিয়ে দিয়েছে, সে ঐ ফাকা জায়গা নব নির্মিত DNA খন্ডাংস তৈরী করে পূরণ করে দিল।
ফটো-৩ এর কাজ শেষ।
এবার চলুন দেখা যাক সর্বশেষ ফটো-৪ এ কী ঘটতেছে।
ফটো-৪,
লক্ষ্য করুন, ফটো-৩ এ নব নির্মিত ও স্থাপিত DNA খন্ডাংশ ও পার্শবর্তী মূল DNA খন্ডাংসের মাঝখানে কিছুটা ফাক রয়ে গিয়েছে। আগেই জানতে পেরেছেন, এই ধরনের ফাক ফোক্কর জোড়া লাগানোর জন্য কোষের বিশেষ ইঞ্জিনীয়ার রয়েছে। তার নাম MR. ENZYME“LIGASE”. এবার কোষ এই MR. “LIGASE” কে ঐ ফাকা জায়গাটা পূরণের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে।
আর সে আটা দিয়ে আটকানোর মত করে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ওখানে এটে দিয়েছে।
অতএব এভাবে ত্রুটি পূর্ণ DNA টিকে কোষ মেরামত করে ফেল্ল।
বুঝতেই পারছেন কাজটি ততটা সহজ নয়।
আর এই মেরামতের উপর আমাদের জীবনের সব কিছু নির্ভর করে।
----উল্লেখিত ৩ বিজ্ঞানীর আবিস্কার এখানেই সমাপ্ত----
Figure source- - http://en.wikipedia.org/wiki/DNA
Figure - 3
একটি কয়েল উন্মুক্ত উভয় চেইনে ৪ টি NUCLEOTIDE বিশিষ্ট DNA খন্ডাংশ। এই খন্ডাংশকেই উপরের চিত্র-২ এর বক্সে সংক্ষিপ্তাকারে, HORIZONTAL পছিশনে লয়ে ৪ বার দেখিয়ে কোষের NUCLEOTIDE মেরামতের পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে।
মানব দেহের রহস্য জানতে সংগে থাকুন।
পূর্বের পর্ব গুলী এখানে দেখুন-http://www.Chkdr02.wordpress.com
পর্ব- ৫৩ এর Reference-
1)
http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/chemistry/laureates/2015/
বিষয়: বিবিধ
১০৮৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন