৫২(৪) তম পর্ব।কী আবিস্কার করিয়া এই ৩ বিজ্ঞানী ২০১৫ সনে রসায়নের উপর নোবেল বিজয়ী হলেন? DNA এর নিজেরই অস্তিত্ব অনবরত হুমকীর সম্মুখীন।
লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ২৫ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:১৬:১০ সকাল
৫২(৪) তম পর্ব।কী আবিস্কার করিয়া এই ৩ বিজ্ঞানী ২০১৫ সনে রসায়নের উপর নোবেল বিজয়ী হলেন? DNA এর নিজেরই অস্তিত্ব অনবরত হুমকীর সম্মুখীন।
কোষ অনবরত সেই হুমকী যেভাবে মুকাবেলা করে DNA তথা সমগ্র প্রানী জগৎকে রক্ষা করে রাখে।
Figure source- http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/chemistry/laureates/2015/
Figure-1
1) Tomas Lindahl (Left)
Born: 1938, Stockholm, Sweden
2) Paul Modrich (Middle)
Born: 1946
3) Aziz Sancar (Right)
Born: 1946, Savur, Turkey
পর্ব-৫১ তে দেখেছেন বিজ্ঞানী Tomas Lindahl এর আবিস্কারটা কোথায় এবং কী ছিল।
Tomas Lindahl (Left) , তিনি দেখিয়েছেন কোষ BASE EXISION REPAIR পদ্ধতির মাধ্যমে DNA এর BASE এর ভাংচুর যে ভাবে মেরামত করে।
এবার দেখাব –
2) Paul Modrich (Middle) এর আবিস্কারটা।
Paul Modrich দেখিয়েছেন কোষ বিভাজনের সময় DNA কেও যে এক অতি জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হুবহু কপি (REPLICATION) হওয়ার মাধ্যমে বিভাজন হওয়া লাগে, সেই কপিকৃত DNA এর CHAIN এর কিছু কিছু খন্ডাংস কখনো কখনো হুবহু কপি না হয়ে উল্টা পাল্টা ত্রটিপূর্ণ ভাবে কপি হয়ে গেলে, কোষ যেভাবে সেই ত্রুটিপূর্ণ CHAIN খন্ডাংসকে মেরামত করে থাকে।
কারণ একটা ত্রটিপূর্ণ CHAIN খন্ডাংস তো কখনোই তার COMPLEMENTARY CHAIN এর সংগে জোড় বাধতে পারবেনা। আর তাহলে DNA টি তথা কোষটি তথা আমাদের জীবনটাই বিপন্ন হয়ে পড়বে।
কোষ কতবড় জটিল প্রকৃয়ার মধ্য দিয়ে DNA কে কপি (REPLICATION) করে, সেটা জানার জন্য পর্ব- ৪ একবার দেখে লউন।
এখানে পুনরায় বর্ণনা করতে গেলে পর্বটা অনর্থক দীর্ঘ হয়ে যাবে, তাই এখানে আর বর্ণনা করলামনা।
তাহলে এবার আসুন দেখা যাক, এই বিজ্ঞানী এক খন্ড ত্রটিপূর্ণ কপিকৃত DNA CHAIN কে কোষ যে ভাবে মেরামত করে তা আবিস্কার করেছেন ও ম্যাপ আকারেও দেখিয়ে দিয়েছেন।
তার আবিস্কারটা পরিস্কার করে দিয়েছেন, চিত্র- ২ এ ম্যাপটা একে ও ঐ ম্যাপে ৫টি ফটো দেখিয়ে ও তার প্রতিটা ফটোয় কোথায় কী ঘটতেছে তার বিষদ বর্ণনা দিয়ে।
আমি যদি আপনাদের সম্মুখে শুধু মাত্র ঐ ফটো গুলীর বর্ণনা পরিস্কার ভাবে তুলে ধরতে পারি তাহলেই আপনাদের জন্য তার আবিস্কারটা বুঝার জন্য যথেষ্ঠ হইবে।
এবার তাহলে আসুন আমরা একটু ধৈর্য সহকারে দেখি তিনি চিত্র- ২ এর ফটো গুলী দ্বারা কী বুঝিয়েছেন।
তার মেরামতটার নাম দিয়েছেন MISMATCH REPAIR অর্থাৎ ভূল কপিকৃত DNA CHAIN খন্ডাংশ যা তার COMPLEMENTARY CHAIN এর সংগে MATCH করাতে পারেনা, তার মেরামত।
এ ধরনের অশুদ্ধ DNA খন্ডাংশ DNA এর সংগে অনেক ক্ষেত্রে ভূল বসতঃ যুড়ে যায়। তবে কোষ এর প্রায় সবই মেরামত করে ফেলে । প্রতি হাজারে হয়তো ১টি অশুদ্ধ রয়ে যায়।
এবার তাহলে চিত্র ২ এর ফটো গুলীতে যা যা দেখানো হয়েছে সেগুলী একে একে বর্ণনা করা যাক।
Figure source-http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/chemistry/laureates/2015/fig_ke_en_15_mismatchrepair.pdf
Figure-2, MISMATCH REPAIR.
উপরের চিত্র-২ এর ফটো গুলী (৫ টি ফটো) দেখতে থাকুন ও একই সংগে সংশ্লিষ্ট ফটোর বর্ণনাও পড়তে থাকুন, তাহলে সহজে বুঝতে পারবেন।
ফটো নং- ১
লক্ষ করুন, এই ফটোটিতে DNA এর ২ টা চেইন দেখা যাচ্ছে। উপরের চেইনটি মূল চেইন ও নীচের চেইনটা উপরের মূল চেইন হতে কপিকৃত কপি DNA CHAIN.
নীচের এই কপিকৃত চেইনটিতে ভূল BASE বসে যাওয়ার কারণে একটি ত্রটিপূর্ণ চেইন উৎপন্ন হয়ে গেছে। কারণ, আগের পর্বেই জানতে পেরেছেন DNA এর ২টি চেইনের পাশাপাশি বিপরীতে ২টা BASE এর সংযোজন হয়, এবং এই সংযোজন ঘটাতে এদের একটি বিশেষ ধারা মানতে হয়। যেমনটা BASE ADENINE সংযোজন ঘটাতে পারে শুধু মাত্র BASE THYMINE এর সংগে এবং BASE GUANINE সংযোজন ঘটাতে পারে শুধুমাত্র BASE CYTOISINE এর সংগে।
কিন্তু কপি করার সময় কপি চেইনে এই BASE গুলী যার যার সঠিক জায়গায় না বসে ভূল বসতঃ একটার জায়গায় অন্যটা বসে গিয়েছে।
যার ফলে এখন দুইটা চেইনের বিপরীতএর BASE গুলীর পক্ষে আর সংযোজন ঘটানো সম্ভব হচ্ছেনা।
এটা কতকটা এই রকম ঘটনা, যেমন ধরুন আপনার বাড়ীর ৪টা গেটে ৪ রকমের তালা লাগানো আছে । এখন গেট বন্ধ করার জন্য যে তালাটার জন্য যে চাবী নির্ধারিত আছে,এখন যদি এই তালাগুলীর বিপরীত চাবি দিয়ে গেট বন্ধ করতে চান, তাহলে যেমন MATCH করবেনা, তালা আটকাবেনা, ঠিক তেমনি যে BASE এর জন্য যে BASE টি MATCH করে তৈরী করে রাখা হয়েছে, তার বিপরীতে অন্য BASE টি সেখানে ভূল বসতঃ বসে গেলে এদের জোড়ন ঘটাতে MATCH করবেনা। তখন DNA CHAIN টি অকেজো হয়ে যাবে। এই কারনেই একে MISMATCH REPAIR বলা হয়েছে।
এবার লক্ষ করুন কোষ এই ত্রুটিপূর্ণ DNA CHAIN টিকে সংশোষন করার জন্য এখানে কী কী পদক্ষেপ লয়েছে।
উপরের মূল সঠিক চেইন টি যাতে করে ভূল চেইনটা হতে পৃথক করে চিনে রাখা যায়, মেরামতের সময় ইঞ্জিনীয়ার এনজাইম গুলী যাতে ভূল করে অশুদ্ধ চেইনটি না কেটে ফেলে যদি শুদ্ধ মূল চেইনটি কেটে ফেলে, সে জন্য মূল টেইনটিতে একটা ট্যাগ (গোলাকার লাল রংএর) মেরে চিহ্নিত করে দিয়েছে ।এই ট্যাগটি একটি রাসায়নিক যৌগ,METHYL GROUP, CH3.
এরপর কোষ ওখানে তার ঐ কাজে দক্ষ ২টা বিশেষ ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ার ENZYME পাঠিয়েছে তদন্ত করে দেখতে। এই ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ার ENZYME ২টি র নাম MutL ও MutS.
এই ২টি ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ার ENZYME ঘুরে ঘুরে তদন্ত করে দেখতেছে কপিকৃত চেইনটির কোথা থেকে কতদূর ত্রুটিপূর্ণ চেইন বসে গিয়েছে, ঠিক যেমনটি যদি পাকশী ব্রীজের কিয়দংশ ভেংগে গেলে আমেরিকান ব্রীজ ইঞ্জিনীয়ারের একটি দল এসে আগে ক্ষতিটার মাত্রা টা ক্ষতিয়ে দেখতে থাকে।
এদের পরবর্তী ধাপের কাজ ২য় ফটোতে দেখুন।
ফটো নং- ২
এখানে লক্ষ্য করুন, আর একটি ব্রিটিশ দক্ষ ইঞ্জিনীয়ার ENZYME এবার এসে গেছে। এর নাম হল MutH আর এর কাজ হল কোনটা সঠিক মূল চেইন তা, অন্য ইঞ্জিনীয়ার ENZYME দের চিনিয়ে দেওয়া যাতে ভূল করে সেটাকে না কেটে ফেলে।
তাই এই ENZYME, MutH ঐ লাল রংএর ট্যাগটির সাহায্যে (METHYL GROUP, CH3.) মূল চেইনটি কে নিজে আগে চিনে লয়েছে তারপর অন্য কর্মী ENZYME, MutL ও MutS.
কেও চিনিয়ে দিচ্ছে যাতে করে তারা এই মূল চেইনটিকে না কেটে অপর ত্রুটিপূর্ণ কপিকৃত চেইনটিকে কেটে ফেলে দেওয়ার জন্য বাছাই করে লয়।
তাহলে অবশ্যই দেখতে পাচ্ছেন পাকশী ব্রীজ মেরামত কারী আমেরিকান ইঞ্জিনীয়ারদের চাইতে কোষের পাঠানো ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ার ENZYME ও কম কলা কুশলী নয়।
দ্বিতীয় ফটো এর কাজ শেষ।
এবার তাহলে চলুন ফটো-৩ এ কোষের এই ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ার ENZYME গুলী কী কাজ করে তা দেখা যাক।
ফটো নং- ৩
এবার লক্ষ্য করুণ কোষের পাঠানো দক্ষ ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ার ENZYME MR. MutL ও MutS যখন তাদের কাজের পরিধি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছে অর্থাৎ কোথা থেকে কত টুক পরিমান ত্রুটিপূর্ণ DNA CHAIN সংজোযিত রয়েছে, তা কাউচি ধরে কেটে দেওয়ার মতই রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কেটে দিয়েছে।
ফটো-৩ এর কাজ শেষ।
এবার চলুন দেখা যাক কোষের পাঠানো দক্ষ ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ারদ্বয় ENZYME MR. MutL ও MutS ফটো- ৪ এ, সেখানে কী কাজ কাম চালাচ্ছেন।
ফটো নং- ৪
এবার লক্ষ্য করুণ কোষের পাঠানো দক্ষ ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ার ENZYME MR. MutL ও MutS সেই কেটে ফেলা অপ্রয়োজনীয় অংশটুকু সরিয়ে ফেলে জায়গা পরিস্কার করে ফেলেছে।
ফটো-৪ এর কাজ শেষ।
এবার তাহলে চলুন দেখা যাক ফটো- ৫ এ কোষ আবার কোন ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ার পাঠিয়ে কী কাজ করায়।
ফটো নং- ৫
এবার লক্ষ্য করুণ, যেহেতু ফটো-৪ এ DNA CHAIN এর ঐ অংশ ফাকা হয়ে গিয়েছে এবং এখন ঐ জায়গাকে পূরন করে এটে দিয়ে কাজের জন্য ফিট ফাট করতে হবে, আর এই কাজটা পূর্বের ঐ ইঞ্জিনীয়ারদ্বয়ের বিষয় বস্তু নয়। বরং এখানে এই বিষয়ের উপর যারা পড়া শুনা করেছে সেই ধরনের ইঞ্জিনীয়ার পাঠানোর প্রয়োজন। তাই এবার কোষ এখানে এই কাজে দক্ষ ২ জন ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ার পাঠিয়েছে।
এই ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ারদ্বয়ের নাম হল MR ENZYME “DNA Polymerase ও DNA Ligase”
এই ইঞ্জিনীয়ারদ্বয়ের কার কী কাজ?
হ্যা, এদের কে কোন কাজে দক্ষ তা আগের পর্বেই জেনেছেন।
Mr. “DNA Polymerase” ঐ ফাকা জায়গাটায় নূতন একেবারে সঠিক DNA CHAIN তৈরী করে বসিয়ে দিবে।
আর MR. “DNA Ligase” এই নূতন চেইন যাতে নড়বড়ে হয়ে খুলে যেতে না পারে তার জন্য চেইন পার্শবর্তী অংশ এর সংগে আঠা দিয়ে আটকানোর মত করে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আটকিয়ে দিবে।
এবার একটু তাকিয়ে দেখুন তাদের কাজ শেষ ও মেরামত এর কাজ ও সম্পূর্ণ।
তাহলে নিশ্চয় বোধগম্য হয়েছে, কোষকে তার এহেন জটীল DNA মেরামত কাজের জন্য কত বড়
উচ্চ মূল্য দিয়ে এই ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ারদের ভরন পোষন দিয়ে পালতে হয়?
আসুন আমরাও আমাদের তরুনদেরকেও এরুপ ধরণের ব্রিটিশ ইঞ্জিনীয়ার তৈরী করাই।
Figure source- - http://en.wikipedia.org/wiki/DNA
Figure - 3
একটি কয়েল উন্মুক্ত ৪ টি NUCLEOTIDE বিশিষ্ট DNA খন্ডাংশ। এই খন্ডাংশকেই উপরের চিত্র-২ এর বক্সে ছোট আকারে, HORIZONTAL পছিশনে লয়ে ৫ বার দেখিয়ে কোষের মেরামতের পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে।
মানব দেহের রহস্য জানতে সংগে থাকুন।
পূর্বের পর্ব গুলী এখানে দেখুন-http://www.Chkdr02.wordpress.com
পর্ব- ৫২ এর Reference-
1)
http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/chemistry/laureates/2015/
বিষয়: বিবিধ
১০৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন