১২ তম পর্ব, ডিএনএ কী? MUTATION সম্পর্কে।
লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:২১:৪৪ রাত
১২ তম পর্ব, ডিএনএ কী? MUTATION সম্পর্কে।
মিউটেশন বলা হয় ডিএন এ এর জ্বীন SEQUENCE (ধারাবাহিকতা) এর স্থায়ী পরিবর্তন হয়ে যাওয়াকে।
DNA এর কোথায় MUTATION ঘটতে পারে?
উত্তর,
DNA এর যে কোন জায়গায় MUTATION ঘটতে পারে। যেমন ধরুন, DNA এর মূল একক BASE PAIR দুইটি চেইনে আছে ৬ বিলিয়ন, এবং একটি চেইনে আছে ৩ বিলিয়ন। মিউটেশন যে কোন একটি BASE PAIR এ ঘটতে ও পারে, আবার DNA এর বড় একটি খন্ডাংস জুড়েও ঘটতে পারে। (ভিডিও ১-৩ দেখুন)
মিউটেশন এর ফলাফল কী হতে পারে?
জ্বীন SEQUENCE প্রোটীন SEQUENCE গঠনের নির্দেশ দেয়। অতএব জ্বীন এর SEQUENCE পরিবর্তিত হয়ে গেলে প্রোটীন গঠনের SEQUENCE ও পাল্টে যায়।
ঠিক যেমনটা মনে করতে পারেন DNA এ হল প্রোটীন তৈরীর RECIPE. যেমনটা আমাদের খাদ্য তৈরীর RECIPE যদি একটু পরিবর্তন করে দেওয়া যায়, তাহলে তৈরীকৃত খাদ্যটাও তদনুসারে পরিবর্তিত হয়ে যায়, ঠিক তদ্রুপই MUTATION ঘটিয়ে DNA অথবা CHROMOSOME এর SEQUENCE পাল্টিয়ে দিলে তার থেকে উৎপন্ন দ্রব্য প্রোটীন এর SEQUENCE এর ও পরিবর্তন ঘটে যায়।
আর প্রোটীনের নির্দিষ্ট SEQUENCE এর উপর তার নিজস্ব বৈশিষ্ট ও কর্ম পরিচালনার ক্ষমতা নির্ভর করে।
অতএব DNA MUTATION এর মাধ্যমে বিশ্বের এই প্রানী জগতে বহু বৈচিত্র ঘটে যাওয়া সম্ভব।
আরো একটু পরিস্কার করে বলা যায়।
মানুষ জাতি হতে মানুষ জাতি কেন জন্মাচ্ছে?
উত্তর-
কারন মানুষ জাতি জন্ম নিচ্ছে তার পিতা মাতা হতে প্রাপ্ত ২৩ জোড়া সুনির্দিষ্ট CHROMOSOME এ প্রায় ২৫ হাজারের মত মানব জাতীয় সুনির্দিষ্ট GENE থাকার কারণে। ঐ সুনির্দিষ্ট CHROMOSOME ও ঐ সুনির্দিষ্ট GENE ই মানুষ কে মানুষ আকারে বানাচ্ছে।
এভাবেই একটি ঘোড়ার আছে ৬৪ জোড়া সুনির্দিষ্ট CHROMOSOME ও হাজার হাজার সুনির্দিষ্ট GENE, যা তাদেরকে ঘোড়া হিসাবে তৈরী করাচ্ছে।
আবার একটি গাভীর আছে ৩০ জোড়া সুনির্দিষ্ট CHROMOSOME ও হাজার হাজার সুনির্দিষ্ট GENE যা গাভীটাকে গাভী হিসাবে তৈরী করাচ্ছে।
এবার কল্পনা করুন এমন কোন উন্নত ও শক্তিশালী জাতের প্রানী বহির্জগৎ হতে এই বিশ্ব দখল করে নিল।যারা এই TECHNOLOGY টা ইতিমধ্যেই অর্জন করে ফেলেছে যে তারা ইচ্ছামত প্রানী কুলের CHROMOSOME ও GENE পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম।
তাহলে তারা কী করতে পারবে?
তারা তাদের পসু খামার ল্যাবরেটরীতে আমাদেরকে পরীক্ষার প্রাণী হিসাবে ব্যবহার করে একবার মানুষের পেটে গাভী ,ঘোড়া আর একবার গাভী ঘোড়ার পেটে মানুষ উৎপাদন করে করে পরীক্ষা নীরিক্ষা চালাতে থাকবে।
কারন এক প্রানী হতে অন্য প্রানীর পার্থক্য থাকার মূল চাবী কাঠিটা CHROMOSOME ও DNA এর মধ্যে পার্থক্য থাকা। এ ছাড়া আর কিছুই নয়।
এই ফর্মুলার পরেই ভিত্তি করে আজ বিজ্ঞানীগন যুগান্তকারী CLONING পদ্ধতি আবিস্কার করিয়াছেন। আর এই CLONING পদ্ধতির মাধ্যমে আজ আপনাকে বা আপনার কোন প্রিয়জনকে হুবহু কপি করে তার মৃত্যুর পরেও তাকে এই পৃথিবীতে জীবন্ত ধরে রেখে দিতে পারেন। (এ ব্যাপারে বিস্তারিত ১৫তম পর্বে দেখুন)
অতএব মহাকাশ বিজ্ঞানীদের বহির্বিশ্ব লয়ে ঘাটাঘাটি করতে একটু সতর্কও থাকতে হবে। বহির্বিশ্বের কোন অতি উন্নত ও শক্তিশালী প্রানী আমাদের এই সম্পদশালী গ্রহের সন্ধান পেয়ে গেলে, তারা আমাদেরকে দখল করে লয়ে তাদের পরীক্ষাগারের কীট হিসাবের ব্যবহার করতে পারে, ঠিক যেমনটা আমরাও বর্তমানে গরু, ভেড়ার উপর করতেছি।
প্রাকৃতিক MUTATION ও এভাবে প্রানী জগতের CHROMOSOME ও GENE এর পরিবর্তন ঘটিয়ে প্রাণী জগত পাল্টিয়ে দেয়, তবে তা অতি ধীরে ধীরে ও প্রাকৃতিক জগতের সংগে খাপ খাইয়ে খাইয়ে বিচিত্র পথে করে, কিন্তু আমাদের এই অতি স্বল্প জীবনের চোখে তা ধরা পড়েনা।
MUTATION এর মাধ্যমে DNA এর SEQUENCE পরিবর্তনের ধরন হিসাবে জায়গা বিশেষে এর ফলাফল ৩ প্রকারের হতে পারে, তাও আবার কখনো হতে পারে শুধু মাত্র ব্যক্তিটির উপর আবার কখনো হতে পারে পরবর্তী বংশধরদের উপর।
যদি ব্যক্তিটির SOMATIC কোষে (যৌন কোষ বাদে অন্য সমস্ত কোষ) MUTATION হয় তাহলে ফলাফলটি ব্যক্তিটির জীবনের উপর ই সীমাবদ্ধ থাকে। আর যদি MUTATION যৌন কোষে (SPERMATOZOA বা OVUM) এ হয়, তাহলে তাদের দ্বারা উৎপাদিত সন্তানদের মধ্য দিয়ে এর ফলাফল বংশানুক্রমিক ভাবে চলতে থাকে। একে বলে বংশানুক্রমিক পরিবর্তন বা INHERITED MUTATION।
মিউটেশন এর ফলাফল ৩ প্রকার হতে পারে যেমন-
১. ক্ষতিকর-
এক্ষেত্রে ক্ষতিটা মারাত্মক অথবা অল্প হতে পারে। যেমন নীচের চিত্র-১ এ লক্ষ্য করুন। উপরের লাইনের মাঝখানের CODON ছিল”GAG’ যার অর্থ ছিল GLUTAMINE নামক একটি AMINO ACID। যেটা রক্তের লোহিত কনিকার জন্য প্রয়োজনীয় সঠিক GLOBIN নামক প্রোটীন উৎপাদন করে। GLOBIN রক্তের IRON (FE2+) এর সংগে মিলিত হয়ে, শরীরে আক্সিজেন বাহক HAEMOGLOBIN নামক পদার্থ তৈরী করে। এটা একটা সুস্থ লোহিত কনিকা কোষ তৈরী করতো।
নীচের লাইনে MUTATION হওয়ার পরের অবস্থা লক্ষ্য করুন। সেখানে মাঝখানের CODON ”GAG’ এর স্থলে MUTATION এর মাধ্যমে হয়ে গেছে “GTG” যার অর্থ হল VALINE নামক অন্য একটি AMINO ACID।(GTG=GUG)
তাই এবার GENE এর নির্দেশ ও পাল্টে গিয়ে তার দ্বারা উৎপাদিত প্রোটীন ও পাল্টে যাবে। এই পরিবর্তিত (MUTATED) প্রোটীন টি আক্রান্ত ব্যক্তিকে SICKLE CELL বা একটা অস্বাভাবিক আকৃতির লোহিত কনা প্রস্তুতের নির্দেশ দিবে। যা একটা মারাত্মক রক্ত শুন্যতা রোগ তৈরী করে। (ভিডিও-৩ দেখুন)
Figure source- http://www.slideshare.net/mrtangextrahelp/09-mutations
চিত্র-১ , MUTATION এর কারণে মারাত্মক রক্তশূণ্যতা ব্যাধি SICKLE CELL ANAEMIA এর GENE.
২. উপকারী-
যেমন কখনো কখনো শরীর জ্বীন এর পরিবর্তনের মাধ্যমে কোন কোন রোগ জীবানুর প্রতিরোধক প্রোটীন (IMMUNOGLOBULIN)গড়ে তোলে। যার ফলে ব্যক্তি ও তার বংশ ধরেরা সেই রোগ কে প্রতিরোধ করতে পারে।
আর একটু ব্যাখ্যা করে বলা যায়, ধরুন আপনার বাড়ীতে সাউদী আরব হতে আপনার এক বন্ধু বেড়াতে এল। সে দেখতে অত্যন্ত সুস্বাস্বাস্থের ও অধিকারী। আপনার বাড়ীতে কয়েকদিন যত্ন সহকারে তাকে রাখলেন ও তার সান্যিধ্যেও আপনারা ঘুরা ফিরা করতে থাকলেন।
এরপর ঐ বন্ধু সপ্তাহ দুয়েক পরে চলে গেলেন। আপাতঃ দৃষ্টিতে সব কিছুই ঠিক থাকল। কোনই সমস্যা নাই।
এর ২/৪ সপ্তাহ পরে আপনাদের এমনটাও ঘটতে পারে যে আপনারা সবাই MERS FLUE VIRUS এ আক্রান্ত হয়ে সবাই মারা গেলেন ও আপনার প্রতিবেশীদের মধ্যেও রোগটা ম
মহামারী আকারে ছড়িয়ে গেল।
এর কী কারণ?
কারণ হল আপনার ঐ আরবীয় বন্ধু পূর্ব হতেই তার দেশের উট হতে ছড়ানো MERS VIRUS এ আক্রান্ত হয়েছিল। তবে তার শরীর এর DNA তার GENE কে ইতিমধ্যে MUTATE করে ঐ জীবানূর প্রতিরোধক ANTIBODY তৈরী করে তাকে ঐ রোগের আক্রমন হতে রক্ষা করে রেখেছিল। অথবা সে ঐ MUTATED GENE তার পূর্ব পুরুষ হতেই পেয়েছিল।
একারণে তার শরীর ঐ জীবানুর শুধুমাত্র CARRIER বা বহন কারী হিসাবে কাজ করতেছিল, কিন্তু তাকে আক্রমন করতে পারতেছিলনা।
কিন্ত সে যখন আপনাদের সান্নিধ্যে এসেছে, তখন যে কোন ভাবেই হউক তার শরীর হতে ঐ ভাইরাছ আপনাদের শরীরে ঢুকে গেছে। আর আপনাদের শরীরে এর কোন প্রতিরোধক ANTIBODY না থাকায় আপনারা সাথে সাথে আক্রান্ত হয়ে গিয়েছেন।
ধরা হয় MERSE VIRUS হাচী বা কাশির সময় গলঃনাসিকা হতে নিসঃরিত পদার্থের মাধ্যমে ছড়ায়, তবে প্রকৃত ছড়ানোর পথ এখনো বিজ্ঞানীগন নিশ্চিত হতে পারেন নাই।
একই ভবে আরবের উষ্ট্র গুলীও যারা আক্রান্ত হওয়ার পর বেচে আছে, তারাও প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মিয়ে এখন
CARRIER হিসাবে শুধু ঐ ভাইরাছ ছড়ানোর উপযুক্ত যন্ত্র হিসাবে কাজ করতেছে, যার জন্য আরব সরকার ২০১৫ সনের হজ্জ পালন কারীদের উষ্ট্র কোরবানী দেওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
ঠিক একই ভাবে জীবানুরাও জ্বীন MUTATION এর মাধ্যমে কোন কোন জীবানু বিধ্বংশী ঔষধের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। তখন সেই জীবানু নাসক ঔষধ আর ঐ জীবানুকে ধংস করতে পারেনা।যেমন বর্তমানে আফ্রিকার কোন কোন দেশে ম্যালেরিয়া জীবানু তার প্রতিষেধক QUININE নামক ঔষধের বিরুদ্ধে তার প্রতিরোধক জ্বীন তৈরি করে ফেলেছে।
আমাদের দেশেও এখন প্রচুর দেখা যায়, আগে যে সমস্ত বড় বড় এন্টিবায়োটিক গুলী জীবানু নাসক হিসাবে সুন্দর কাজ করত,এখন সেগুলী আর তেমন কাজ করেনা।
বিজ্ঞানীদের অনবরত গবেষনা করে করে নূতন নূতন জীবানুনাসক ঔষধ আবিস্কার করা লাগতেছে। একে বলা হয় DRUG RESISTANT।
কী ভাবে জীবানু DRUG RESISTANT বা প্রতিরোধী হয়ে উঠে?
জীবানু সকল প্রথম যখন কোন ANTIBIOTIC এর সংস্পর্শে আসে, তখন যে সব জীবানু সেই ANTIBIOTIC টায় পূর্ব হতে RESISTANT, তাদের কে ঐ ANTIBIOTIC টায় মারতে পারেনা। আর যে সব জীবানুবৃন্দ উক্ত ANTIBIOTIC টায় SENSITIVE বা স্পর্ষ কাতর, তাদের একটা অংস মারা যায়, এবং কখনো কখনো আর একটা অংস তাদের GENETIC MUTATION ঘটিয়ে ANTIBIOTIC টার বিরোধী ANTIDOTE (প্রতিরোধক) উৎপাদন করতে সক্ষম হয়ে যায়।
তখন ঐ ANTIBIOTIC টা তাদের কে আর মারতে সক্ষম হয়না। ফলে তারা উক্ত ANTIBIOTIC টায় RESISTANT (প্রতিরোধক) হয়ে যায়। এর পর এদের থেকে যত বংশ বিস্তার হতে থাকে, তাদেরও মধ্যে উক্ত DNA যাওয়ার কারনে তারাও উক্ত ANTIBIOTIC টার RESISTANT গুন সম্পন্ন হতে থাকে।
এভাবে ANTIBIOTIC RESISTANT (প্রতিরোধী) জীবানু পরিবেশে ছড়াতে থাকে।
আমাদের দেশে DRUG ADMINISTRATION বিভাগের ANTIBIOTIC ব্যবহারের উপর কোন নিয়ন্ত্রন না থাকায়, REGISTERED চিকিৎসকের ব্যবস্থা পত্র ব্যতিরেকে যে কোন ঔষধের দোকান হতে ANTIBIOTICS ঔষধ মরিচ,তেল,লবনের মত সহজে সংগহ করার সুযোগ থাকার কারনে, ANTIBIOTICS এর অপব্যবহারের ফলে, রোগ জীবানু গুলি দ্রুত ANTIBIOTIC RESISTANT হয়ে পড়তেছে।
উন্নত দেশে চিকিৎসা পত্র ব্যতিরেকে একটা ANTIBIOTIC ট্যাবলেট ও কারো পক্ষে দোকান হতে সংগ্রহ করার ক্ষমতা নাই।
আমরা আশা করব অদুর ভবিষ্যতে আমাদের দেশে ও ANTIBIOTICS সহ সকল গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ গুলী নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা হইবে।
মূলতঃ GENE MUTATION এর মাধ্যমে প্রাণীকুল বিরোধী প্রাকৃতিক পরিবেশের সংগে খাপ খাইয়ে বংশধরদেরকে বিপরীত পরিবেশে টিকে থাকার ব্যবস্থা করতে থাকে।
যেমন মনে করুন, ধীরে ধীরে, লক্ষ লক্ষ বৎসর ধরে প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন হতে থাকার কারণে, আমাদের এই ভূমন্ডলের স্থল অংস ক্রমান্বয়ে সমুদ্রের গর্ভে বিলীন হতে হতে এক সময় একেবারে বিলীন হয়ে গেল।
তখন ভূমন্ডলের এই সমস্ত স্থল প্রানীরা কী পানিতে ডুবে ডুবে সব মারা যাবে?
উত্তর-“না” সবাই নিশ্চিহ্ন হবেনা।
ধীরে ধীরে এটা হতে থাকলে এই প্রানীদের ঐ প্রাকৃতিক প্রতিকুল অবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে করে টিকে থাকার প্রতিযোগিতার কারনে, এই স্থল প্রাণীদের কারো কারো মধ্যে বংশানুক্রমিক ভাবে DNA এর মধ্যে MUTATION হয়ে হয়ে পানির পরিবেশের মধ্যে বেচে থাকার যোগ্যতা অর্জন করবে।
আবার কেহ বা পাহাড়ের উপরে বেচে থাকায় অভ্যস্ত হতে থাকবে।
যাদের মধ্যে এই পরিবর্তিত পরিবেশের মধ্য দিয়ে DNA এর সঠিক পরিবর্তন আসবেনা তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
আমি বলতেছিনা যে আজকেই এই পৃথিবী পানিতে তলিয়ে গেলেই ,স্থল প্রানীকুল আগামী কালই DNA পরিবর্তন করে ,পানির পরিবেশে বসবাসের যোগ্য হয়ে যাবে।
এটা ঘটতে গেলে ঘটনাটি লক্ষ লক্ষ বৎসর ধরে DNA কে MUTATION এর মধ্য দিয়ে অশংখ্য বংশ পরম্পরা অতিক্রম করতে হবে।যা কারো পক্ষেই পর্যবেক্ষন করা সম্ভব নয় বা কোন ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা করে ধরাও সম্ভব নয় ।
তবে এই ভূমন্ডলটাই আমাদের অজান্তে নিজেই একটা মহাকাল ব্যাপী অতি উত্তম পরীক্ষাগার হিসাবে কাজ করে চলেছে ।
যদি এই পৃথিবীতে এমন কোন বুদ্ধিমান প্রাণী বসবাস করত,যাদের আয়ুস্কাল থাকত ৫০-৬০ লক্ষ বৎসর, তাহলে তাদের পর্যবেক্ষনে এই ক্ষনজীবি প্রাণীর পরিবর্তন ধরা পড়ে যেত।
তারা দেখতে পেত আমাদের মত এই মনুষ্য জাতের ৬০ লক্ষ বৎসর পূর্ব পুরষরা দেখতে কেমন ছিল। আমাদের এই অতি ক্ষনজীবি মনুষ্য প্রানীর পক্ষে তা পর্যবেক্ষন করা মোটেই সম্ভব নয়।
আমাদের মত ৭০-৮০ বৎসরের আয়ুস্কালের প্রানীরা ৫০-৬০ লক্ষ বৎসর ব্যাপী ঘটনাকে কী করে পর্যবেক্ষন বা অনুভব করতে পারবে?
আমাদের প্রত্যেকের আয়ুস্কাল অতি মাত্রায় কম হওয়ার কারনে, আমাদের প্রত্যেকের কাছেই মনে হয় সব কিছু একই রকম আছে।
যেমন ধরুন ঢাকা শহরটাকে যারা এক বৎসর ব্যাপী দেখতেছে তাদের ঢাকা শহর সম্পর্কে মন্তব্য হবে “ঢাকা শহরে কোন পরিবর্তন হয়না”।
আর যারা ১০০ বৎসর ধরে ঢাকা শহরকে দেখতে পেরেছে ,তাদের মন্তব্য হবে “ঢাকা শহরে বিপুল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।“
তাহলে দেখলেন তো, উভয়ের বক্তব্যে, পর্যবেক্ষনের সময় কালের তারতম্যে কতবড় পার্থক্য হতে পারে?
আর প্রানীদের পরিবর্তন হয় প্রকৃতির সংগে খাপ খেয়ে খেয়ে,বংশ পরম্পরায় GENE এর MUTATION হয়ে হয়ে,৫০-৬০ লক্ষ বৎসর ব্যাপী সময় ধরে-যা আমাদের মত ৫০-৬০ বৎসরের আয়ুস্কাল সম্পন্ন মানব জাতির পক্ষে অবলোকন করা সম্ভবপর হয়না।
তবে আপনার পরিবেশের আশে পাশের ছোট ছোট কীট পতঙ্গের প্রতি একটু পর্যবেক্ষন করলে এই পরিবর্তনটা ২-৪ বৎসরের মধ্যেই আপনার চোখেও ধরা পড়ে যাবে।
যেমন ১টি ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষন,
আমার বাস গৃহে বিশেষ করে পাক ঘরে প্রচুর পরিমানে এক ধরনের ছোট ছোট কালো কালো কতকটা তেলাপোকার মত আকৃতির কীট দেখতে পাওয়া যায়। একটু সুযোগ পেলেই ফ্রীজে ও খাবার পাত্রে ঢুকে পড়ে। অত্যন্ত বিরক্তিকর। একটু সাড়া শব্দ বা তাড়া পেলেই অতি দ্রুত দৌড়িয়ে বা উপর থেকে নীচে ঝাপ দিয়ে পালিয়ে যায়।
এদের প্রথম দিকে কোনই ডানা দেখা যায় নাই। ৪-৫ বৎসর পরে এখন দেখা যাচ্ছে এদের কিয়দংশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডানা গজিয়ে গেছে যেটা ব্যবহার করতেছে উপর থেকে নীচে ঝাপ দেওয়ার সময় আবার তাদের আকৃতিও একটু বৃদ্ধি পেয়ে কারো দেখতে প্রায় মাছির মত ও কারো প্রায় তেলাপোকার মত হয়ে উঠতেছে।
দেখলে মনে হয় এদের থেকে কিছু অংশ মাছি ও কিছু অংশ তেলাপোকায় বিবর্তিত হতে চলেছে।
আর এটা একমাত্র আমার পরিবারে আমার দৃষ্টিতে ছাড়া আর কেহই এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ ও করেনা।
ঠিক এভাবেই আমাদের পরিবেশের ক্ষুদ্রপ্রানী গুলীর মধ্যে GENE MUTATION এর মাধ্যমে অনবরত বিবর্তন (EVOLUTION) ঘটে চলেছে।আমি আমার বদ্ধ পুকুরে
মাছের মধ্যেও বিবর্তন ঘটতে দেখেছি।
যে কেহই একটু পর্যবেক্ষনের দৃষ্টি রাখলে আশ পাশের ক্ষুদ্র প্রানী গুলীর মধ্যের এই অল্প সময় মেয়াদী বিবর্তন গুলী ধরতে পারবে।
৩) আবার কখনো কখনো CODON পরিবর্তনে কোন নির্দেশের কোনই পরিবর্তন হইবেনা, প্রাণীটির উপর উপকারী বা অপকারী কোনই প্রভাব পড়িবেনা।
যেমন ধরুন, একটি জ্বীন-
AUG GUC TAG CAU – MUTATION এর পূর্বের অবস্থা।
AUG GUG TAG CAU – MUTATION এর পরেরঅবস্থা ।
এখানে লক্ষ করুন, MUTATION এর পূর্বে প্রথম লাইনের দিতীয় CODON আছে “GUC”
কিন্তু দিতীয় লাইনে MUTATION এর পরে এখানে এসেছে “GUG”।
এই ধরনের MUTATION জ্বীন এর নির্দেশে কোনই পরিবর্তন আনবেনা। কারণ এখানে কডন “GUC” ও কডন “GUG” উভয় কডন একই AMINO ACID “ VALINE’ বুঝায় (চিত্র-২ কডন টেবিল দেখুন) (১,২,৩,৪)
ঠিক যেমন ধরুন, আপনি কারো নিকট এক গ্লাস “পানি” না চেয়ে এক গ্লাস “জল” চাইলে আপনার ও নির্দেশের কোন পরিবর্তন হইবেনা।
Source of Figure- http://bioinfo.bisr.res.in/cgi-bin/project/crat/theory_codon_restriction.cgi
চিত্র-২ কডন টেবিল
কী ভাবে DNA MUTATION হয়?
২ টা পদ্ধতিতে DNA MUTATION হয়ে থাকে,যেমন -
১. বাহ্যিক কোন কোন বস্তু যেমন,ULTRA VIOLET RAY, RADIATION, কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থ, যেমন সিগারেট (এর মধ্যের BENZO a PYRENE রাসায়নিক উপাদান), DNA এর CHEMICAL STRUCTURE এর ফর্মুলার উপর আঘাত করে অসংখ্য BOND (বন্ধন) এর যে কোন একটি বন্ধন কে ছিন্ন করে দিলেই, তখন DNA টার STRUCTURE ছিন্ন হয়ে গিয়ে একটা MUTATED বা রুপান্তরিত DNA তে পরিণত হয়ে যায় । নীচে চিত্র-৩ লক্ষ্য করুন।
Figure source- http://willience.com/doc/Brain%20Mutation.htm
চিত্র-৩ , বামে সঠিক DNA STRUCTURE, ডানে-MUTATED DNA STRUCTURE
এখানে লক্ষ্য করুন বায়ের সঠিক DNA STRUCTURE এর উভয় পার্শের PHOSPHATE BACK BONE এর অক্সিজেন এর সংযোগ রক্ষাকারী বন্ধন(BOND) কে ছিন্ন করে দেওয়ার পর ,ডাইনে DNA STRUCTURE টি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে MUTATED (রুপান্তরিত) হয়ে গিয়েছে।
২. আমাদের শরীরের কোষ গুলী অনবরত বিভাজিত হয়ে হয়ে আমরা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হই।কোষ বিভাজনের সময় আমাদের ১০০ ট্রিলিয়ন কোষের প্রতিটা কোষের NUCLEUS এর অভ্যন্তরের প্রতিটা DNA কেও অত্যন্ত জটিল পদ্ধতির মধ্য দিয়ে বিভাজিত হওয়া লাগে।(৭ম ও ৮ম পর্ব দেখুন)।
এই বিভাজনের সময়ও অসংখ্য রকমের উলট পালট এর যে কোন ধরনের একটা উলট পালট ঘটে যেতে পারে। যেমন নীচে চিত্র-৪ দেখুন-
Figure source- http://willience.com/doc/Brain%20Mutation.htm
চিত্র-৪, DNA বিভাজনের সময় অনিয়মিত বেছ সংযুক্ত।
এখানে লক্ষ্য করুন, উপরের DNA টি কপি হয়ে নীচের দুইটি DNA উৎপন্ন হয়েছে। বাম পার্শের কপি DNA টার BASE PAIR (C-G,G-C, ও T-A) এটা সঠিক নিয়মে হয়েছে , এবং এটা উপরের PARENT DNA এর হুবহু অনুরুপ ও হয়েছে।
কিন্তু ডান পার্শের টায় মারাত্মক ভূল সংযোগ দিয়ে ফেলেছে। এখানে ভূল করে প্রথমটায় দিয়েছে, T-G যেখানে হওয়ার কথা ছিল, উপরের PARENT DNA এর মত হুবহু C-G।
আর তা ছাড়া G (GUANINE) কখনই T (THYMINE)এর সংগে PAIR হওয়ার কথা নয়। G(GUANINE) সব সময়ই স্বাভাবিক অবস্থায় C(CYTOSINE) এর সংগে সংযুক্ত হতে হবে। পর্ব-২ দেখুন। (১-৪) ভিডিও ১,২,৩.৪দেখুন।
বিবর্তনের সংগে MUTATION এর সম্পর্ক।
বিজ্ঞানীগন যথেষ্ঠ প্রমান পেয়েছেন কোন প্রানীর বিবর্তন হতে গেলে CHROMOSOME ও DNA এর পরিবর্তনের মাধ্যমেই হয়। কারন আগেই তো বলেছি DNA তো RECIPE বা প্রানী উৎপাদনের ফর্মূলা। কাজেই উৎপাদিত বস্তু পরিবর্তন করতে চাইলে তাকে তো আগে ফর্মুলাটা পরিবর্তন করতে হবে। ফর্মূলা ছাড়া তো কোন বস্তুই তৈরী সম্ভব নয়।
বিজ্ঞানীদের একটা উদাহরণ-
শিম্পাঞ্জী জাতীয় প্রাণীদের ক্রোমোজোম সংখ্যা ২৪ জোড়া।
মানব জাতীর ক্রোমোজোম সংখ্যা ২৩ জোড়া।
DNA বিজ্ঞানীরা মনে করেন কখনো কখনো দুইটি ক্রোমোজোম একত্রে মিশে গিয়েও DNA এর MUTATION হয়ে নূতন প্রানীর আবির্ভাব ঘটতে পারে।
এ
র স্বপক্ষে বিজ্ঞানীগণ জোরালো ভাবে বিশ্বাষ করেন যে শিম্পাঞ্জী জাতীয় প্রানীর দুইটা ক্রোমোজোম প্রান্তে-প্রান্তে সংযুক্ত হয়ে মানব জাতির ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম এর ক্রোমোজোম নং-২ (চিত্র-৬) সৃষ্টি হয়েছে। এর পিছনে তারা যুক্তি দেখান মানব ক্রোমোজোম নং-২ এবং শিম্পাঞ্জীর পৃথক দুইটা ক্রোমোজোমে হুবহু একই ধরনের জ্বীন অবস্থান করতেছে। (৪) নীচে-চিত্র-৫,৬ দেখুন।
Figure source- https://en.wikipedia.org/wiki/Chromosome_2_(human)
চিত্র-৫, বামে, শিম্পাঞ্জীর পৃথক ২টি ক্রোমোজোম। ডানে মানব ক্রোমোজোম নং-২,যা শিম্পাঞ্জীর পৃথক ২টি ক্রোমোজোম প্রান্তে-প্রান্তে সংযুক্ত হয়ে উৎপন্ন হয়েছে।
Figure source- http://ghr.nlm.nih.gov/chromosome/2
চিত্র-৬ ,মানব ক্রোমোজোম নং-২ (৮)
মানব দেহের রহস্য জানতে সংগে থাকুন।
অন্যান্য পর্ব এখানে দেখুন- https://chkdr02.wordpress.com/
Edited on- 9/27/2015
VIDEO
১ http://www.youtube.com/watch?v=kp0esidDr-c
২. http://www.youtube.com/watch?v=eDbK0cxKKsk
SICLE CELL ANAEMIA
৩. http://www.dnalc.org/resources/3d/17-sickle-cell.html
৪) Genotypes and Phenotypes
https://www.youtube.com/watch?v=OaovnS7BAoc
১২তম পর্বের সূত্র সমূহ-
১. http://www.yourgenome.org/dgg/general/var/var_3.shtml
২. http://en.wikipedia.org/wiki/Mutation
৩. http://ghr.nlm.nih.gov/handbook/mutationsanddisorders/genemutation
৪. https://en.wikipedia.org/wiki/Chromosome_2_(human)
৫. http://www.slideshare.net/mrtangextrahelp/09-mutations
বিষয়: বিবিধ
১১৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন