DNA কী? ১০ম পর্ব।ক্রোমোজোম-পুস্তকে DNA কোন ভাষা ব্যবহার করেছে?DNA ও প্রোটীন যখন জীবন্ত রোবট।

লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:১০:৫৭ রাত

DNA কী? ১০ম পর্ব।ক্রোমোজোম-পুস্তকে DNA কোন ভাষা ব্যবহার করেছে?DNA ও প্রোটীন যখন জীবন্ত রোবট।



Figure source-http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/1962/

চিত্র-১

ছবি- Francis Harry Compton Crick– CODON আবিস্কারক,নোবেল বিজয়ী-১৯৬২

আবিস্কার-যে সকল বিজ্ঞানীগন আজীবন পরিশ্রম করে DNA এর CODON আবিস্কার করে মানব জাতির কল্যান সাধন করে গেছেন তাদের নিকট আমাদের অন্ততঃ কিছুটা হলেও কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ। এরা হলেন-

১. Francis Harry Compton Crick- উপরে চিত্র।(বামে)

(জুন ৮,১৯১৬-জুলাই ২৮,২০০৪)- an English molecular biologist, biophysicist, and neuroscientist

২. James Dewey Watson- ( এপ্রিল-৬, ১৯২৮, Chicago, IL, USA)(মাঝে) Affiliation at the time of the award: Harvard University, Cambridge, MA, USA

৩. Maurice Hugh Frederick Wilkins- (জন্ম -ডিসেম্বর-১৫, ১৯১৬, Pongaroa, New Zealand

মৃত্যু: অক্টোবর,৫, ২০০৪, London, United Kingdom)(ডানে)

এরা ৩ জন মেডিসিন অথবা ফিজিওলজী এর উপর নোবেল বিজয়ী হন ১৯৬২ সনে। (১,২ ও ৩)

এবার আসুন একটু দৃষ্টি দেওয়া যাক,DNA এর বই দুইটির পৃষ্ঠা গুলীতে GENETIC নির্দেশ গুলী লিখতে কোন দেশীয় ভাষার অক্ষর ব্যবহার করে শব্দ ও বাক্য গঠন করা হয়েছে,ইংলিস,ফ্রান্স অথবা জার্মানী ভাষা?এই ভাষায় দুইটি শব্দের মধ্যে কী কোন SPACE থাকে? একটি বাক্য বা নির্দেশ হতে আর একটি কে কী ভাবে পৃথক রাখবে, বাক্যটি ডান দিক হতে পড়া আরম্ভ করতে হয়,নাকী বাম দিক হতে পড়তে হয়? ইত্যাদি আমাদেরকে খতিয়ে খতিয়ে দেখতে হবে।

আসুন তাহলে এগুলী দেখা যাক।

অক্ষর কয়টি ও কী নির্দেশ করে?

অক্ষর চারটি-A,U, (or T), G, C.

নিম্ন লিখিত NUCLEIC ACID বা BASE এর সংক্ষিপ্ত চিহ্ন হিসাবে এই অক্ষর গুলী এসেছে,যেমন-

১.A=ADENINE NUCLEOTIDE কে নির্দেশ করে।

২.U=URACIL NUCLEOTIDE. (DNA এর THYMINE (T) NUCLEOTIDE,এর বদলে)

৩.G=GUANINE NUCLEOTIDE কে নির্দেশ করে।

৪.C=CYTOSINE NUCLEOTIDE কে নির্দেশ করে।

(৬) পর্ব-২,৩, দেখুন

শব্দ কী ভাবে তৈরী হয়,মোট কতটি শব্দ হয়?

শব্দ বা কডন মোট ৬৪ টি

প্রতিটা শব্দ এই চারটি অক্ষরের যে কোন ৩টি অক্ষর লয়ে তৈরী হয়। তা হলে এবার অংকের সোজা হিসাব ৪ X ৪ X ৪ = ৬৪ টা সর্বমোট শব্দ উৎপন্ন হওয়া সম্ভব।এই ৩ অক্ষর বিশিষ্ট রাসায়নিক সাংকেতিক শব্দকে CODON বলে। যেমন- AUC AGC UGC ইত্যাদি শব্দ।(১) (৩য় পর্ব দেখুন)

প্রতিটা শব্দের অর্থ কী?

হ্যাঁ, DNA এর শব্দের অর্থ দেখতে DNA এর শব্দকোষ দেখুন।(নীচে চিত্র-২)

এই ৬৪ টি শব্দের ৬১টির অর্থ ২০ টি STANDARD AMINO ACID (প্রোটীন একক).যেহেতু ২০ টি STANDARD AMINO ACID কে ৬১ টি CODON এ নির্দেশ করে,অতএব বুঝাই যাচ্ছে, এর অর্থ এক একটি AMINO ACID কে একাধিক CODON নির্দেশ করে থাকে।

আর বাকী ৩টি অন্য কাজে ব্যবহৃত হয়। তাহলে এই CODON শব্দগুলীর অর্থ কী ভাবে AMINO ACID (প্রোটীন একক) গুলীকে বুঝাচ্ছে, তা নীচের চিত্র-১ টেবিলটার অভিধানে একটু দেখে নিন।

প্রশ্ন করতে পারেন, শরীরে তো আরো বহু রকমের জৈব পদার্থ ছিল যেমন CARBOHYDRATE (শর্করা),FAT (চর্বি)। তাহলে DNA এগুলী বাদ দিয়ে তার শব্দকোষে ও কাজের জন্য একমাত্র প্রোটীন কে কেন বেছে নিল।

উত্তর-কারণ, প্রোটীন ও অন্য পদার্থের মধ্যে বিরাট পার্থক্য দেখা যায়।প্রোটীন এমন একটি জৈব পদার্থ যাকে কোড অনুসারে ফর্মূলা দিয়ে তৈরী করে দিলে সেই বিশেষ বিশেষ ফর্মুলার প্রোটীন বিশেষ বিশেষ কাজ করতে সক্ষম। কিন্ত অন্য যৌগের মধ্যে সেই গুনাগুন নাই।

এই প্রোটীন গুলী DYNAMIC বা কর্ম তৎপর, এরা যেন প্রতেকেই এক একটা জীবন্ত রোবট, এদের কাজ কাম দেখলে মনে হয়, এদের মধ্যে যেন বিবেক ,অনুভূতি ও বিবেচনা কাজ করে।প্রতিটা ক্ষেত্রেই এদের এই বিশেষ গুনাগুনের প্রকাশ ঘটায়।

বলা বাহুল্য এই প্রোটীন কে বাদ দিলে DNA নিজেই অকেজো হয়ে যাবে। DNA এর কোনই ক্ষমতা থাকবেনা, ঠিক যেমনটা একজন প্রধান মন্ত্রী, তার একটা কার্যকরী মন্ত্রী পরিষদ ব্যতিরেকে রাস্ট্র পরিচালনা করতে পারবেননা।

দেখা যায়, DNA এর এই বিশেষ ফর্মুলায় তৈরী প্রোটীন গুলী নিজেরাই দল বেধে বেধে পরশ্পর সমন্বয় রক্ষা করে, স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে জটীল কাজ গুলী সম্পন্ন করতে সক্ষম।

এর দ্বারা এটাও প্রতীয়মান হয়ে যায় যে DNA এর খুব ভাল করেই জানা আছে কোন কাজের জন্য কোন GENETIC CODE এর তৈরী প্রোটীনটা সেই কাজ সম্পন্ন করতে যথোপযোগী, আর তখন ঠিক সেই GENETIC CODE এর তৈরী প্রোটীনটাকেই সেখানে পাঠায়, ঠিক যেমনটা দেশে কোথাও চিকিৎসা সমস্যা দেখা দিলে তখন দেশ পরিচালনা বিভাগ তাদেরকেই পাঠায় যাদেরকে চিকিৎসা বিজ্ঞান কলেজের ফর্মূলায় গড়া হয়েছে, আবার কোথাও বৈদ্যুতিক বিভ্রাট দেখা দিলে, সেখানে তাদেরকেই পাঠানো হয়, যাদেরকে বৈত্যুতিক কলাকৌশল শিক্ষা বিভাগের ফর্মুলায় গড়া হয়েছে।

অন্য যৌগের দ্বারা এই কাজ করানো সম্ভবপর নয়। ঠিক যেমনটা, চিকিৎসা বিজ্ঞান বা কলা কৌশল বিজ্ঞ্যান যে কোন উচ্চমাধ্যমিক পাশ ছাত্রকে দিয়ে পড়ানো সম্ভবপর নয়।

কোড বিশ্লেষনের অভিধান।



Source of Figure- http://bioinfo.bisr.res.in/cgi-bin/project/crat/theory_codon_restriction.cgi

চিত্র-২, কডন টেবিল, ডি এন এর অভিধান বা শব্দ কোষ।

উপরে লক্ষ্য করুন,UUU ও UUC এর অর্থ PHENYL ALANINE নামক এমাইনো এসিড।

UUA ও UUG এর অর্থ হল LEUCINE নামক এমাইনো এসিড।

AUG এর অর্থ হল METHIONINE নামক এমাইনো এসিড। একই সংগে এটা আবার START CODON হিসাবেও ব্যবহৃত হয়।

UAA, UAG ও UGA এই ৩টাই শুধু মাত্র STOP CODON হিসাবে ব্যবহৃত হয়। (১)

DNA এর সমস্ত শব্দ ও তার বিশ্লেষনের অভিধান পেয়ে গেলেন। এবার আসুন দেখা যাক DNA পুস্তকে কী ভাবে নির্দেশ বাক্যটি যাকে আমরা GENE (জ্বীন) বলি, তৈরী থাকে।

আগেই বলেছি, সমস্ত GENETIC নির্দেশ ২ টি বইয়ের পাতায় পূর্ব হইতেই ভাগ্য আকারে লিখিত রয়েছে। DNA এর কাজ শুধু সেখান থেকে CODE করা নির্দেশ এর কপি করে পাঠানো। আপনার ভাগ্য পুস্তকে লিখিত বস্তুর বাইরে, DNA আপনাকে অতিরিক্ত কিছুই দেওয়ার ক্ষমতা রাখেনা।(১) VIDEO ১নং ও ২ নং দেখুন।

এখানে আর একটি বিষয় পরিস্কার হচ্ছে। তা হল, আমাদের শরীরের সমগ্র কাজ কাম DNA তার ঐ মাত্র ৬১টি CODON বা রাসায়নিক সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে মাত্র ২০ টি AMINO ACID প্রোটীন একক উৎপাদন করে।

আর DNA এই মাত্র ২০টি প্রোটীন একক দ্বারা, তার সুনির্দিষ্ট GENETIC CODE ব্যবহার করিয়া অসংখ্য বিভিন্ন ধরণের প্রোটীন উৎপাদন করে, যাকে GENE EXPRESSION বলা হয় (কী ভাবে GENE EXPRESSION ঘটায় পর্ব-১১ দেখুন)।

আর সেই প্রোটীন ই DNA এর সমগ্র কাজ কাম চালানোর একমাত্র হাতিয়ার।

প্রোটীন একক (Amino Acid) এবং প্রোটীন (আমিশ)এর পার্থক্য কী?

প্রোটীন একক কে যোগ করে প্রোটীন তৈরী করা হয়, যেমন টি ইট খন্ড যোড়া লাগিয়ে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের ও আকারের স্থাপনা তৈরী করা হয়।

তাহলে এভাবে কত প্রকারের, আকৃতির, গুনাগুন বা কার্যকরী ক্ষমতা সম্পন্ন প্রোটীন উৎপাদন সম্ভব?

উত্তর- অসংখ্য প্রকারের যা এই পৃথিবীর কোন সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা সম্ভব নয়, একই ভাবে তাদের গুনাগুন ও কার্য ক্ষমতাও অসংখ্য প্রকারের।

কাজেই দেখা যাচ্ছে DNA এই জটীল জীবন প্রকৃয়ার অসংখ্য জটীল জৈবিক কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য সবচাইতে সঠিক ও যোগ্য হাতিয়ারটাকেই বেছে নিয়েছে, যা হল প্রোটীন।

আর শুধু তাই ই নয় তাকে অতি নিখুত ভাবে উৎপাদনের জন্য আগে ভাগেই তার সঠিক ফর্মূলাটাকে কোড আকারে GENE এর মধ্যে নিরাপত্তার সংগে রেখে দিয়েছে।

তারপর শরীর এর যেখানে যে কাজের জন্য যে ধরণের গুনাগুন ও কার্যকরী ক্ষমতা সম্পন্ন প্রোটীন দরকার হয় Ribosome নামক প্রোটীন উদপানের ফ্যাক্টরী দ্বারা সময় মত ঠিক সেই ধরনের প্রোটীন উৎপাদন করে দিচ্ছে।

এর দ্বারা এটাও পরিস্কার হয়ে যায় যে আমাদের এই জীবন পরিচালিত হয় প্রোটীন কে মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে। প্রোটীন বাদে আমাদের জীবন অচল।

আরো একটি মজার ব্যাপার হল, আগেই বলেছি প্রোটীন এর ফর্মূলা অনুসারে কার্যকরী ক্ষমতা ও অসংখ্য ধরনের, আর DNA তার নিজস্ব ফর্মূলা দিয়ে নিজস্ব ফ্যাক্টরীতে নিজের মত করে তৈরী করা প্রোটীন গুলী এক আশ্চর্যজনক গুনাগুন ও ক্ষমতা রাখে।

তাহল যেমন ধরুন কোষের বহু জটিল কাজ, যেমন ধরুন কোষ বিভাজন, DNA বিভাজন, GENE EXPRESSION ইত্যাদির মত জটিল কাজ গুলী সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে অনেক গুলী জটিল স্তর অত্যন্ত দক্ষতা ও পরশ্পরের কাজের সমন্বয়ের সহিত পার হওয়া লাগে।

আর এই প্রত্যেকটি স্তর সুষ্ঠু ভাবে পার হতে একসংগে কয়েকটি প্রোটীন এর সুসমন্বীত ভাবে কাজ করার প্রয়োজন হয়। এরা যথাযথ ভাবে সেটা করে।

আবার এক স্তরের কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত পরবর্তী স্তরের কাজটি করার জন্য আর একদল প্রোটীন অপেক্ষা করতে থাকে। প্রথম দলের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার সংগে সংগে পরবর্তী অপেক্ষ্য মান প্রোটীন দল কাজটি হাতে লয়ে লয়। এভাবে চলতে থাকে।

প্রোটীন গুলী শরীরের অত্যন্ত জটিল জৈবিক কাজ গুলী করে।

প্রোটীন এর এই আশ্চর্যজনক ধরনের গুনাগুন সম্ভবতঃ প্রোটীনগুলীর বিশেষ ফর্মূলার মধ্যে নিহীত থাকে, আর এই প্রোটীন গুলীতো DNA তার থেকে নির্দিষ্ট বিশেষ GENETIC CODON এর ফর্মূলা দ্বারাই করায়।

এখানে এরুপ মনে হয় যে DNA এর ভাল ভাবে জানা আছে কোন্ ফর্মূলার প্রোটীন কী কাজ করতে পারবে, তাই সে সেভাবেই জায়গা মত ঠিক সেই প্রোটীনটাই তার GENETIC ফর্মুলা দিয়েই করায়।

DNA তার এই আশ্চর্য জনক ক্ষমতার প্রকাশ অনবরত ঘটাচ্ছে।

আরো একটা উদাহরণ দেখতে পারেন। শরীরে কখনো কোন জীবানু ঢুকে পড়লে, সেই জীবানূর প্রোটীন, কোষ সংগ্রহ করে MEMORY তে রেখে দেয়।

এরপর ঐ জাতের জীবানূর প্রোটীনকে ধংস করতে তার বিপরীতে আর একটি প্রোটীন উৎপাদন করতে হয়। তাকে তার ANTIBODY বলে।

এই ANTIBODY টাও একটা বিশেষ ধরনের IMMUNOGLOBULIN প্রোটীন। এই প্রোটীনটাও DNA শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যুহের কোষে উৎপাদন করে দেয়।(এ ব্যাপারে জানতে ৪১তম পর্ব পড়ুন)

অতএব দেখতে পেলেন প্রোটীন এর অসীম ক্ষমতা। আর DNA অত্যন্ত দক্ষতার সংগে তার ৩ অক্ষর বিশিষ্ট সাংকেতিক শব্দ CODON এর দ্বারা বাক্য তৈরী করিয়া নির্দেশ নামা পাঠিয়ে উৎপাদন করাচ্ছে।

আর সেই নির্দেশ নামাকে আমরা জ্বীন বলি। .

এবার আসুন দেখা যাক DNA তার নির্দেশের বাক্য গুলী কী ভাবে তৈরী করে?

তাহলে আসুন আমরা কয়েকটা নমুনা বাক্যের চর্চা করে দেখি,কী ভাবে এই জেনেটিক বাক্য গুলী তৈরী হয়।

আপনাদের জানতে হবে ডিএনএ এর বই এর পাতার শব্দগুলী আমাদের লিখিত বই এর পাতার শব্দগূলীর মধ্যে যেমন একটা SPACE থাকে তদ্রুপ কোন SPACE বা GAP থাকেনা। এরুপ GAP রাখা DNA নিস্প্রয়োজন মনে করে। কারণ DNA তো আর আমাদের মতন কখনোই বিভিন্ন সংখ্যক অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ ব্যবহার করেনা।

তার প্রতিটা ৩ অক্ষরই এক একটা অর্থবহ শব্দ, যার অর্থ উপরোল্লিখিত অভিধানে বর্ণিত ২০টা AMINO ACID সমূহের মধ্য হইতে যে কোন একটি AMINO ACID হইবে। এভাবে এই শব্দের সংখ্যা নির্দেশটার প্রকার ভেদে কয়েক শত হইতে কয়েক হাজার পর্যন্ত হইতে পারে। DNA কে ধরে নিতে পারেন সর্বাধুনিক প্রযুক্তির রোবটের চাইতেও অনেক উন্নত প্রযুক্তির ও অনেক সূক্ষ্ম রোবট।তার ফরমেটটা এমন ভাবে তৈরী যে সমস্ত কাজ ই এই ফরমেটের মধ্যে থেকে সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে হতে পারে।

এবার দেখুন DNA এর বাক্য কী ভাবে তৈরী হয়।

তাহলে আগে একটা নমুনা বাক্য দেখুন একটি SPACE বিহীন শব্দ দ্বারা তৈরী করা,আমাদের নিকট অর্থহীন বাক্যকে, DNA তার FORMAT এ ফেলে দিয়ে, প্রতিটা ৩ অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ তৈরী করে, একটি অর্থপূর্ণ বাক্য বানিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়,যা আমরাও পারবনা।

বাক্যটি-

Thesunwashotbuttheoldmandidnotgethishat.

এই বাক্যটির অর্থ আপনি কিছুই বুঝতে পারতেছেন না? DNA এর নিকট এটা কিন্তু একটা অর্থ বোধক বাক্য।

তাহলে এবার আমরা বাক্যটি DNA এর নিকট দিয়ে দেই,দেখুন কী ভাবে DNA তার নিজস্ব FORMAT ব্যবহার করে এর দ্বারা একটি সুন্দর অর্থপূর্ণ বাক্য বেরিয়ে দেয়।

এবার ঐ বাক্যটি থেকে DNA বুঝতে পারবে-

The sun was hot but the old man did not get his hat.

দেখুন তো DNA কোন অক্ষর এর পরিবর্তন ছাড়াই প্রতিটা ৩ অক্ষর লয়ে লয়ে কী চমৎকার একটি অর্থপূর্ণ বাক্য গঠন করে ফেল্ল।(৪)

তাহলে এতক্ষনে নিশ্চয়ই উপলদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন, DNA শুধু কারীগরী বিদ্যায়ই আমাদের অনেক উর্দ্ধে নয়, ভাষা জ্ঞান ব্যবহারের দিক দিয়েও আমাদের অনেক উর্দ্ধে।

তাহলে DNA এর নিকট BODY কে লিখিত নির্দেশ পাঠাতে আর কোন অসুবিধা থাকে?

হ্যাঁ একটু চিন্তা করে দেখুন আর একটু অসুবিধা এখনো রয়ে গিয়েছে,তা হল- DNA এর বই এর সম্পূর্ণ পৃষ্ঠায় হাজার হাজার রকমের নির্দেশ রয়ে গিয়েছে। সেখানে এক ধরণের নির্দেশ হতে আর এক ধরণের নির্দেশের মধ্যেও ঠিক একই ভাবে কোনই GAP বা প্যারা দ্বারা পার্থক্য করা নাই, অক্ষর গুলী CONTINUOUS বা বিরতী হীন ভাবে বসে চলে গিয়েছে।

এখন তাহলে DNA কী ভাবে বিশেষ নির্দেশটি BODY এর জন্য নির্বাচন করে দিবে?

মনে করা যাক PANCREAS (অগ্নাশয়) নামক অর্গান টি INSULIN নামক হরমোন উৎপাদন করে,BLOOD GLUCOSE নামিয়ে আমাদের DIABETES হতে বাধা প্রদান করে, আবার এই PANCREAS ই GLUCAGON নামক হরমোন ও উৎপাদন করে,যেটা BLOOD GLUCOSE LEVEL কে বাড়িয়ে DIABETES হতে সহযোগিতা করে।

এবার ধরা যাক, যে GENE বা নির্দেশটায় INSULIN উৎপাদনের নির্দেশ দেয় এবং যে GENE টায় GLUCAGON উৎপাদনের নির্দেশ দেয় ঘটনা ক্রমে এরা পাশাপাশি কোন SPACE ছাড়াই রয়ে গেছে।(এ উদাহরণ টা শুধু বুঝাবার জন্য।এটা প্রকৃত ঘটনা নয়)।

তাহলে কী DNA, INSULIN এর জন্য নির্দেশ দেওয়ার সময়, এর ঠিক পার্শেই একত্রে SPACE হীন থাকা, GLUCAGON হরমোন এর নির্দেশ কারী GENE টার ও কিছু অংশ মিশ্রিত করে ফেলবে?

ঐ রুপ মিশ্রিত নির্দেশ পাঠালে, সেটা একটি ভূল নির্দেশ হয়ে যাবে। তখন BODY আর INSULIN উৎপাদন করতে পারবেনা।

তখন ব্যক্তিটি DIABETES রোগে আক্রান্ত হয়ে যাবে।

কোন ভাবে GENETIC SEQUENCE এর মধ্যে এধরনের পরিবর্তন স্থায়ী হলে তাকে GENETIC MUTATION বলে।

GENETIC MUTATION এর জন্য পর্ব-১২ দেখুন।

এবার মূল বিষয় বস্তুতে ফিরে আসা যাক।

না, স্বাভাবিক সুস্থ অবস্থায় DNA কখনোই একটা জ্বীন এর সংগে আর একটা জ্বীন মিশ্রিত করে ফেলবেনা।

কীভাবে এক ধরনের নির্দেশকে আর এক ধরনের নির্দেশ হতে পৃথক করে ফেলে তা একটু দেখুন।

DNA এবার প্রয়োজনীয় নির্দেশটা কোথা থেকে এর আরম্ভ, অর্থাৎ সোজা সাপটা কথায়, কোন্ CODON বা শব্দটা হতে তার নির্দেশটা শুরু হয়েছে, এবং কোন্ CODON পর্যন্ত গিয়ে তার নির্দেশটা শেষ হয়ে গিয়েছে তা চিহ্নিত করে ফেলবে।

কী করে চিহ্নিত করবে?

DNA এর CODON ই ডিএনএ কে চিনিয়ে দিবে।

আগেই বলা হয়েছে, DNA এর নির্দেশ চূড়ান্ত পর্যায়ে জ্বীন উৎপাদন করে বাস্তবায়িত করে RIBOSOME, এবং সেই RIBOSOME ই প্রোটীন বা জ্বীন উৎপাদনের সময় পূর্ণ নিয়ম কাণুন অনুসরন করে।অর্থাৎ রাইবোছোম এর নিকট mRNA, DNA হতে যে নির্দেশটা লয়ে গিয়েছে RIBOSOME সেই নির্দেশটা TRANSLATION RNA বা tRNA এর মাধ্যমে DECODING (ভাষায় রুপান্তর)করে ফেলবে ও AMINO ACID উৎপাদনের সময় বিশেষ ভাবে লক্ষ রেখে START CODON হতে আরম্ভ করে STOP CODON এর ঠিক পূর্ব পর্যন্তই প্রোটীন উৎপাদন করবে।

নীচে লক্ষ্য করুন কীভাবে নির্দেশ নির্বাচন করা হয়।

“5′-GUCCCGUGAUGCCGAGUUGGAGUAGAUAACUCAGAAU-3′”

লক্ষ্য করুন ডিএনএর পাতায় GENETIC নির্দেশাবলী এভাবেই সাজানো আছে। এবং mRNA এই নির্দেশটাই কপি করে সাইটোপ্লাজম এর মধ্যে RIMOSOME এর নিকট DECODING (TRNSLATION) ও PROTEIN উৎপাদনের জন্য লয়ে গেল। তখন RIBOSOME প্রোটীন উৎপাদনের জন্য বাক্যের সম্পুর্ণ অংশটুকু ব্যবহার করবেনা। সে শুধু মাত্র এর যেখান থেকে START CODON (AUG) আরম্ভ হয়েছে, তাকে অন্তর্ভুক্ত করে যেখানে STOP CODON (UAA) পেয়েছে তাকে বহির্ভূত রেখে, তার পূর্বে অবস্থিত AGA CODON (*** চিহ্নিত) পর্যন্ত জ্বীন উৎপাদন করবে।

আর RIBOSOME নির্দেশটি পড়া আরম্ভ করবে ডান দিক হতে নাকী বাম দিক হতে?

না এরা আমাদের মত ডান/বাম চিনেনা।

এদের পড়ার এবং সমস্ত কাজ কাম করে FROM “5’PRIME END TO 3’PRIME END” অভিমুখে। (এ ব্যাপারে জানতে দ্বিতীয় পর্ব দেখুন)।

এবার দেখুন RIBOSOME উপরের বাক্য হতে কী ভাবে তার প্রয়োজনীয় অংশ টুকু বেছে নীচের বাক্যে বেছে নিয়েছে।



Figure source-

চিত্র-৩

এখানে দেখুন বামে 5’ PRIME END হতে ৮ টা অক্ষর পরে START CODON AUG (RED UNDER LINED) হতে RIBOSOME,AMINO ACID উৎপন্ন করতে করতে প্রথমে UAA, STOP CODON (RED UNDER LINED) পেয়ে গেছে। এই পর্যন্তই অর্থাৎ STOP CODON”UAA” এর পূর্ব পর্যন্ত, নির্দেশের জন্য RIBOSOME প্রোটীন উৎপাদন করবে ।

আর বাকী অংশ টুকু ছুড়ে ফেলে দিবে,ঠিক আমরা যেমনটা অপ্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ডাষ্টবিনে ছুড়ে ফেলে দেই।

ও,ভাবতেছেন কোষ আবার ডাষ্টবিন কোথায় পাইবে? (নীচের কোষ চিত্র-৪ টা দেখুন)। ওখানে LYSOSOME নামে ORGANELLE টাই কোষ ডাষ্টবিন হিসাবে ব্যবহার করে থাকে।

তাহলে এবার নিশচয়ই বুঝতে পারলেন, DNA কী ভাবে তার রাসায়নিক অক্ষর হতে শব্দ ও বাক্য তৈরী করিয়া নির্দেশ নামা বা GENE পাঠিয়ে দিয়ে বিশেষ বিশেষ ধরনের প্রোটীন উৎপাদনের মাধ্যমে শরীর এর জটীল কাজ কাম চালায়।

তবে DNA একার পক্ষে এই কাজ চালানো সম্ভব নয়। তাকে সাহায্য লওয়া লাগে কোষের অভ্যন্তরের অন্যান্য ক্ষুদ্রাঙ্গ বা ORGANELLE এর যেমন, RIBOSME. ENDOPLSMIC RETICULAM, MICROTUBULES, GOLGI ইত্যাদির।(নীচের চিত্র-৪ দেখুন)

ঠিক যেমনটা একটি রাস্ট্রকে চালাতে প্রধান মন্ত্রনালয়ের অফিস অন্যান্য মন্ত্রনালয়ের অফিস এর সাহায্য লয়ে থাকে।



Figure source- https://commons.wikimedia.org/wiki/File:0312_Animal_Cell_and_Components.jpg

চিত্র-৪ একটি প্রাণী কোষ

তাহলে এতক্ষনে বুঝতে পারলেন DNA কতবড় উন্নত প্রযুক্তির অথচ অতি সূক্ষ্ম যেন একটি জীবন্ত রোবট।

সম্প্রতি এম আই টি (MIT) ও হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের বিজ্ঞানীরা মানুষের শরীরে এমন একটি জ্বীনের সন্ধান পেয়েছেন যা মোটা হয়ে যাওয়ার জন্যে দায়ী। তারা বলছেন, যেসব মানুষের শরীরে FTO জ্বীন আছে তাদের শরীরেই চর্বি জমা হয় সবচে বেশি।কারণ FTO ও জ্বীন চর্বিকে ব্যবহার না করে, শরীরে জমা রাখার জন্যে সক্রিয় থাকে।

(৬)

মানব দেহের রহস্য জানতে সংগে থাকুন।

অন্যান্য পর্ব এখানে দেখুন- https://chkdr02.wordpress.com/

Edited on- 8/22/2015

ভিডিও-

১নং ভিডিও লিংক- http://www.youtube.com/watch?v=ztPkv7wc3yU

২নং ভিডিও লিংক- http://www.youtube.com/watch?v=h3b9ArupXZg

দশম পর্বের সূত্র সমূহ-

১) http://en.wikipedia.org/wiki/Genetic_code

২) http://en.wikipedia.org/wiki/Francis_Crick

৩) NOBEL PRIZE

http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/1962/

৪) MUTATION

http://learn.genetics.utah.edu/archive/mutations/

৫) DNA

http://en.wikipedia.org/wiki/DNA

6) FTO GENE-

http://www.bbc.com/bengali/multimedia/2015/09/150901_mrk_science_september1

বিষয়: বিবিধ

১০৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File