ডিএনএ কী?-ষস্ঠ পর্ব- কোষ বিভাজন MITOSIS(১)
লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ১৯ আগস্ট, ২০১৫, ০১:১২:৫৭ রাত
ডিএনএ কী?-ষস্ঠ পর্ব- কোষ বিভাজন MITOSIS(১)
চিত্র-১
ছবি-ওয়ালটার ফ্লেমিং (Walther Flemming)- মাইটোসিস পদ্ধতির আবিস্কর্তা।
Source of figure- https://en.wikipedia.org/wiki/Walther_Flemming
মাইটোসিস (MITOSIS)কী?
মাইটোসিস কোষ চক্রের একটি ক্ষুদ্রাংস এবং কোষ বিভাজনের একটি পদ্ধতির নাম। আর একটা কোষ বিভাজন পদ্ধতির নাম মীওসিস (MEIOSIS)। আগে আলোচনা করা হবে মাইটোসিস সম্পর্কে।
মাইটোসিস আরম্ভ হওয়ার পূর্বে কোষ তার নিউক্লীয়াছের অভ্যন্তরে পিতৃ ও মাতৃ উভয় ক্রোমোজোম কে যাদের একটাকে আর একটার HOMOLOGOUS CHROMOSOME বলা হয়(৮), REPLICATION (৪র্থ পর্ব দ্রষ্টব্য) বা কপি করার পদ্ধতির মাধ্যমে ঠিক একেবারে একই রুপে সমান দুই অংসে বিভাজন করিয়া ফেলে। এই কপিকৃত নবীন
CHROMOSOME ও তার মাতৃ CHROMOSOME কে এখন একটাকে আর একটার SISTER CHROMATID বলা হয়। (১) চিত্র-২
Source of figure- https://en.wikipedia.org/wiki/Chromatid
চিত্র-২,
[চিত্র,২ এর বর্ণনা-
চিত্রে (১ চিহ্ন), এটা একটা CHROMATID: কোষ বিভাজনের সময় কপিকৃত CHROMOSOME এর একটা IDENTICAL COPY. একে SISTER CHROMATID বলা হয়। যে স্থানে এরা সংযুক্ত রয়েছে তাকে বলা হয় CENTROMERE (২ চিহ্ন)।MITOSIS এর ANAPHASE সময় কালে যখন এই SISTER CHROMATID গুলী একটা আর আর একটা হতে পৃথক হয়ে যায়, তখন এরা প্রত্যেকে নিজেরাই এক একটা নূতন পৃথক “ DAUGHTER CHROMOSOME” এ পরিণত হয়ে যায়।
CENTROMERE ক্রোমাটিড কে দুইটি বাহুতে (ARM) বিভাজন করেছে। একটি SHORT ARM যার নাম ‘P’ ARM, যেটা এখানে বাম CHROMATID এর (৩ চিহ্ন) দ্বারা দেখানো হয়েছে।আর একটা লম্বা বাহু বা LONG ARM যার নাম q ARM, যেটা এখানে ডান CHROMATID এ (৪ চিহ্ন) দ্বারা দেখানো হয়েছে । ]
এরপর কোষটি বিভাজিত CHROMOSOME,অতিক্ষুদ্র কোষ একক (ORGANELLE),ছাইটোপ্লাছম.ও কোষ প্রাচীর সহ প্রায় সমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুইটি শিশু কোষের জন্ম নেয়।
এই দুইটি শিশু কোষ ও এদের মাতৃ কোষের সম্পূর্ণ GENETIC INFORMATION হুবহু একেবারে একই থাকে।
কোষের প্রাচীর সহ CYTOPLASM বিভাজন হওয়াকে বলা হয় CYTOKYNESIS। এই পদ্ধতিটা হয় বহুকোষী (EUKARYOTIC) প্রাণীর মধ্যে।(২)
MITOSIS ঘটে কোষ চক্রের M PHASE এ। এই PHASE টি পূর্ণ CELL CYCLE (কোষ চক্র) এর ১০% মাত্র। (৩) (কোষ চক্র এর বিস্তারিত বর্ণনা পর্ব ৪ এ দেখুন)
ইউ টিউব টি দেখুন।
মাইটোসিস ও বিবর্তন বাদ:-
বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন, এই ভূমন্ডলে শুধু মাত্র এককোষী প্রাণী (PROKARYOTES) এর অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল এক বিলিয়ন (১,০০০,০০০,০০০) বৎসরের উর্ধকাল যাবৎ।এদের বংশ বিস্তার হয় কোষ সরাসরি বিভাজন (BINARY FISSION) পদ্ধতির মাধ্যমে। এরপর যখন বহু কোষ জাতীয় প্রাণীর (EUKARYOTES)আবির্ভার হতে থাকল তখন এই BINARY FISSION পদ্ধতি রুপান্তরিত হয়ে মাইটোসিস ও মীওসিস পদ্ধতিতে পরিণত হয়ে যায়।
আবিস্কার-
ওয়ালটার ফ্লেমিং (২১ এপ্রিল ১৮৪৩ – ৪ঠা আগষ্ট ১৯০৫ খৃ) একজন জার্মান জীব-বিজ্ঞানী এবং ছাইটোজেনেটিকস (Cytogenetics.)এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। (চিত্র-১)
ছাইটোজেনেটিকস (Cytogenetics.)-জীব বিজ্ঞানের ঐ শাখা কে বলা হয়, যেখানে কোষের নিউক্লীয়াছে অবস্থিত ক্রোমোজোম ও জেনেটিকছ সম্পর্কে আলোচনা করে।
তিনি ১৮৬৮ সনে University of Rostock, হতে মেডিসিনে গ্রাজুয়েসন অর্জন করেন। এর পর তিনি ১৮৭০-১৮৭১ পর্যন্ত ফ্রান্স-রাসিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। এরপর ১৮৭৩-১৮৭৬ পর্যন্ত University of Prague.এ শিক্ষক হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন।১৮৭৬ সনে University of Kiel এ এনাটমির প্রফেসর এর পদে যোগদান করেন।সেখানে তিনি এনাটমি ইনসটিটিউটের পরিচালক পদে উন্নীত হয়ে সেখানে তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কর্ম রত ছিলেন।
এখানে তিনি কোষের মাইটোসিস বিভাজন সর্ব প্রথম পর্যবেক্ষন ও বিশ্লেষন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
তার এই গবেষনার ফলাফল সর্বপ্রথম ১৮৭৮ ও ১৮৮২ সালে Seminal Book Zellsubstanz, Kern und Zelltheilung এ প্রকাশিত হয়েছিল।(৪)
ভ্রুণ বিকাশ ও শিশু বৃদ্ধির সংগে MITOSIS এর সম্পর্ক-
জরায়ূর FALLOPIAN TUBE এ OVUM এর সংগে একটি মাত্র শুক্রকীট সংযুক্ত হয়ে FERTILZED হয়ে এক কোষী ZYGOTE এর সৃষ্টি হয়I (চিত্র-৩)
Figure source- https://en.wikipedia.org/wiki/Zygote
চিত্র-৩, এক কোষী ZYGOTE।
এই ZYGOTE নামের এক কোষী প্রাণীটা MITOSIS পদ্ধতিতে বৃদ্ধি হতে হতে, এবং কোষ বিশেষায়িত (CELL DIFFERENTIATION) হওয়ার মধ্য দিয়ে,জরায়ূর মধ্যে শিশু বর্ধিত হতে থাকে। জরাহূতে ৯ মাস ১০ দিন অবস্থানের পর শিশু ভূমিষ্ঠ হয়। এর পর এই আমরাই ১০০ ট্রিলিয়ন (১০০,০০০,০০০,০০০,০০০) বিশিষ্ট পূর্ণ বয়স্ক মানবে পরিণত হই। এই সম্পূর্ণ বৃদ্ধি কোষচক্র ও তার MITOSIS পদ্ধতির মাধ্যমে হয়।
তবে সমস্ত SOMATIC কোষে (GERM CELL ছাড়া অন্য সমস্ত কোষ),যেমন চামড়া মাংস,অস্থি,সমস্ত অর্গান ইত্যদি MITOSIS পদ্ধতিতে বর্ধিত হয়।(৫)
এবং শুধুমাত্র পুরুষ ও স্ত্রী প্রজনন কোষ গঠনে (GERM CELL) মীওসিস (MEIOSIS) পদ্ধতির ব্যবহার হয়।
এই বিভাজিত CHROMOSOME কে বলা হয় CHROMATID বা SISTER CHROMATID। এই বিভাজিত CHROMATID দ্বয়ের GENETIC
INFORMATION পরশ্পরের মধ্যে এবং PARENT DNA এর GENETIC INFORMATION হুবহু একই থাকে।(১)
বিভাজিত CHROMATID দ্বয় ডিএনএর একটি অংশে COHESIN নামক একটি PROTEIN COMPLEX (৬) এর মাধ্যমে আটকানো থাকে,যাকে বলা হয় CENTROMERE।এই সদ্য জন্মানো CHROMATID গুলীই পরবর্তি বিভাজিত কোষে গিয়ে,পূর্নাঙ্গ CHROMOSOME এ পরিণত হয়।এবং বিভাজিত কোষ গুলীর ও GENETIC INFORMATION পরশ্পর হুবহু একই থাকে।
মনে রাখতে হবে MITOTIC বিভাজনে মাতৃ কোষটি যে ভাবে DIPLOID কোষ ছিল সদ্য বিভাজিত নবীন কোষ ২ টিও ঠিক তদ্রুপ DIPLOID কোষ হয়।
অর্থাৎ PARENT কোষ ও শিশু নবীন কোষে CHROMOSOME এর সংখ্যা ২৩ জোড়াই (জোড়ার একটি পিতৃ হতে আগত ও একটি মাতৃ হতে আগত) থাকে। এই পিতৃ হতে আগত ও একটি মাতৃ হতে আগত CHROMOSOME জোড়াকে HOMOLOGOUS CHROMOSOME বলে।(৮)
কিন্তু পুরুষ প্রজনন কোষ SPERM ও স্ত্রী প্রজনন কোষ OVUM, MEIOSIS পদ্ধতিতে বিভাজনের কারনে DIPLOID কোষ হতে HAPLOID কোষে পরিণত হয়।
অর্থাৎ MEIOTIC বিভাজনের পর প্রতিটা SPERM ও OVUM এ ২৩ জোড়া CHROMOSOME না থেকে,থাকে ২৩ টা CHROSOME। এই কারণে একে HAPLOID CELL বলে।
প্রজনন কোষে HOMOLOGOUS CHROMOSOME এর জোড় থাকেনা।
কিন্তু যদি একটা SPERM একটা OVUM কে FERTILIZED করে, তখন এই FERTILIZED OVUM একটি এক কোষী ZYGOTE এ পরিণত হয়, যাতে পিতা ও মাতা হতে HOMOLOGOUS CHROMOSOME এসে যায় ও এটা একটি DIPLOID কোষে পরিণত হয়ে যায়।(৫)(চিত্র- ৩)
অর্থাত এর মধ্যে পুনরায় ২৩ জোড়া CHROMOSOME এসে যায়।এবং এই এক কোষী ZYGOTE টি কোষ চক্রে এসে MITOSIS পদ্ধতিতে বর্ধিত হতে হতে পূর্নাঙ্গ ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ বিশিষ্ট মানবে পরিণত হয়। এবং এর প্রতিটা কোষের CHROMOSOME ও GENETIC INFORMATION হুবহু একই থাকে।
এ কারণে MITOTIC বিভাজন টি মানব জীবনের বৃদ্ধির একমাত্র পথ, অতএব এটা প্রানীর উপর অত্যধিক গুরুত্ব বহন করে।
মাইটোসিস এর পদ্ধতি-
মাইটোসিস এর পদ্ধতিকে কে ৫ টি স্তরে বিভক্ত করা হয়েছে, যেমন-
১) প্রোফেজ (PROPHASE) ২)প্রোমেটাফেজ (PROMETAPHASE) ৩) মেটাফেজ (METAPHASE) ৪) এনাফেজ (ANAPHASE) ৫) টেলোফেজ (TELOPHASE)
এর পরের স্তর CYTOKINESIS কে MITOSIS থেকে পৃথক ধরা হয়।
MITOSIS পর্বটি অতিদীর্ঘ হওয়ার কারনে এখানেই এই পর্বের সমাপ্তি করা হইল।
MITOSIS এর স্তর গুলী পরবর্তী পর্বে বর্ণনা করা হইবে।
নীচের ইউ টিউবটায় CELL CYCLE ও MITOSIS কী দেখতে পারেন-
ইউ টিউব- লিংক http://highered.mcgraw-hill.com/sites/0072495855/student_view0/chapter2/animation__how_the_cell_cycle_works.html
পূর্বের পর্ব সমূহ এখানে দেখতে পারেন- https://chkdr02.wordpress.com/
Edited on-7/10/2015
ষষ্ঠ পর্বের সূত্র সমূহ-
১) http://en.wikipedia.org/wiki/Chromatid
২) http://en.wikipedia.org/wiki/Cytokinesis
৩) http://en.wikipedia.org/wiki/Mitosis
৪) http://en.wikipedia.org/wiki/Walther_Flemming
৫) http://en.wikipedia.org/wiki/Zygote
৬) http://en.wikipedia.org/wiki/Cohesin
৮) http://en.wikipedia.org/wiki/Centrosome
৯) http://en.wikipedia.org/wiki/Homologous_chromosome
বিষয়: বিবিধ
১২০৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন