কী আবিস্কার করিয়া এই ৩ বিজ্ঞানী ২০১১ সনে মেডিসিনের উপর নোবেল বিজয়ী হলেন? লিম্ফ তন্ত্র কী? ৪৪ (৪) তম পর্ব।
লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৯:০৬:০৫ সকাল
এই ৩ বিজ্ঞানী শরীরের রোগ প্রতিরোধ এর কোন্ বিষয়টি আবিস্কার করিয়া ২০১১ সনে মেডিসিন এর উপর নোবেল বিজয়ী হয়েছিলেন, সেটা বুঝতে হলে তারপূর্বে একটু জানার দরকার আছে, শরীর কী ভাবে রোগ প্রতিরোধ করে?
আসুন তাই আমরা কিছুটা জেনে লই শরীরের রোগ প্রতিরোধ বলতে কী বুঝায়, আর এর গুরুত্বই বা আমাদের জীবনের উপর কতটুকু?
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হয় IMMUNITY.
IMMUNITY কে অন্য ভাবে বলা যায় শরীর এর বহিশত্রুর সংগে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে টিকে থাকার অদম্য প্রচেষ্টার ক্ষমতাকে।
তবে রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে আরো সম্মুখে বুঝতে গেলে তার পূর্বে আমাদের শরীরের রক্ত ও LYMPHATIC SYSTEM (লিম্ফ তন্ত্র) সম্পর্কে অন্ততঃ অতি সংক্ষিপ্তাকারে কিছুটা জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
পূর্বের পর্বে রক্ত সম্পর্কে জেনেছেন।
এই পর্বে LYMPHATIC SYSTEM (লিম্ফ তন্ত্র) সম্পর্কে কিছুটা বর্ণনা করা হচ্ছে।
রক্ত সঞ্চালন তন্ত্রের পাশাপাশি LYMPHATIC SYSTEM বা লিম্ফাটিক তন্ত্র নামে একটি তন্ত্র যা রক্তকে ও শরীরকে প্রতিরক্ষার কাজে একটি SISTER ORGANIZATION এর ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতেছে।
কী এই লিম্ফ তরল?
এটা শরীরের রক্ত নয় তবে রক্ত হইতে নির্যাষিত একটি পরিস্কার স্বচ্ছ তরল অংস যার উপাদান হল জল, ELECTROLYTES ও ছোট আকারের PLASMA PROTEIN, এবং এর মধ্যে WBC, শরীরের খাদ্য ও হরমোন ও থাকে, যা শরীরকে বর্জ, বিষাক্ত, ও অনাকাংখিত পদার্থ মুক্ত রাখে। (৪)
লিম্ফ কী ভাবে ও কোথায় তৈরী হয়?
যেহেতু এর উৎপাদন ও সঞ্চালন রক্ত ও রক্ত সঞ্চালন এর সংগে সরাসরি সম্পর্কিত এই কারনে এই লিম্ফ এর উৎপাদন ও সঞ্চালন বুঝতে গেলে পূর্বেই “রক্ত” ও “রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র” সম্পর্কে আপনাদের একটু জ্ঞ্যান থাকা প্রয়োজন আছে। এই জন্য “রক্ত” সম্পর্কে কিছুটা জানতে পৃর্বের পর্ব- ৪৩ ও “রক্ত সঞ্চালন” পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে আগেই পড়ে নিন:
হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠ ও ভালভ সমূহ, হৃদপিন্ড যখন সম্প্রসারিত বা সংকুচিত হয়, তখন হৃদপিন্ডে যা ঘটে, ফুসফুস এর সহযোগিতা, ৩৫(৪) পর্ব
লিংক-https://www.amarblog.com/HAKIM-CHAKLADAR/posts/181204
ও
হৃদপিন্ড যে ভাবে RHYTHMIC সংকোচন-সম্প্রসারনের মধ্য দিয়ে রক্তকে সঞ্চালন করিয়া থাকে। পর্ব ৩৬(৫ )
লিংক -https://www.amarblog.com/HAKIM-CHAKLADAR/posts/181324।
আপনারা সেখানে দেখেছেন, “রক্ত সঞ্চালন” অনবরত হৃদপিন্ডের পাম্প এর মাধ্যমে একটা CLOSED CIRCUIT এর মধ্য দিয়ে বার বার আবর্তন করতে থাকে।
হৃদপিন্ড পাম্প এর মাধ্যমে অক্সিজেন মিশ্রিত রক্ত, খাদ্য দ্রব্য. হরমোন সহ সবকিছু শরীরের ১০০ ট্রিলিয়ন কোষের প্রতিটা কোষে (কেন্দ্রীয় স্নায়ুকোষ বাদে) ধমনীর মধ্য দিয়ে পৌছে দেয়।
এই সমস্ত অতি ক্ষুদ্র কোষে শেষ প্রান্তে রক্ত পৌছানো হয় অতি সূক্ষ্ম ও সরু রক্ত নালীর (CAPILLARY)এর মধ্য দিয়ে।
এই পর্যায়ে রক্ত এখানে এসে ৩টা কাজ করে থাকে-
১) রক্ত প্রতিটা কোষকে অক্সিজেন, খাদ্য দ্রব্য ও হরমোন ইত্যাদি সরবরাহ করে জীবিত ও কর্মক্ষম রাখে।
২)প্রতিটা কোষে খাদ্য ব্যবহার করে তাপ ও শক্তি উৎপাদনের সাথে সাথে বিষাক্ত বর্জ পদার্থ কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হতে থাকে। রক্ত এই ধরনের বিষাক্ত বর্জ পদার্থ গুলী কোষ হতে সংগ্রহ করে শিরার মধ্য দিয়ে পুনরায় হৃদপিন্ডে ফেরত লয়ে আসে।(বিস্তারিত পর্ব ৩৫ ও ৩৬ দেখুন)
৩) এই খানে রক্ত আর একটা কাজ করে তা হল রক্তের একটা জলীয় অংশ (কেন্দীয় স্নায়ূ তন্ত্র বাদে) CAPILLARY এর গাত্রের দুই কোষের মধ্যখানের অতিশয় সূক্ষ্ম ছিদ্রের মধ্য দিয়ে রক্তের INTRAVASCULAR COMPARTMENT হতে CAPILLARY এর বাইরে EXTRA VASCULAR COMPARTMENT এর INERSTITIAL COMPARTMENT বা টিসুর মধ্য স্থানে পাঠিয়ে দেয়। রক্তের মধ্যে কোন অপ্রয়োজনীয়, অনাকাঙ্খিত বা ক্ষতিকর পদার্থ বা জীবানু থাকলে তাও এখানে রক্ত সঞ্চালন এর মধ্য হতে (INTRA VASCULAR COMPARTMENT) হতে বের করে দিয়ে রক্তকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও নির্ভেজাল করে রাখতে থাকে।
এই তরল এর মধ্যে থাকে, জল, ELECTROLYTES, ছোট ছোট PLASMA PROTEIN, WBC. গ্লুকোজ ইত্যাদি।
এইটাকেই LYMPH FLUID বলে। একে আরো বলা যায়, INTERSTITIAL FLUID বা INTERCELLULAR FLUID বা TISSUE FLUID।
এই ভাবেই LYMPH ফ্লুইড ও LYMPHATIC CIRCULATION এর প্রারম্ভ হয় ।
এটা কেন করা হয়?
এটা রক্তকে পরিস্কার রাখার একটা ছাকনী পদ্ধতি। রক্তকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও নির্ভেজাল রাখার জন্য্ রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র এভাবে রক্তকে দুষন মুক্ত রাখার জন্য অনবরত ছাকতে থাকে, ঠিক যেমনটা আমরা চা-ছাকনি দ্বারা চা-দানা গুলীকে তরল বিশুদ্ধ চা নির্জাস হতে পৃথক করে ফেলি।
আর তা ছাড়া, LYMPH NODE, LYMPHOID TISSUE, ও LYMPHOID ORGAN, (যেমন SPLEEN বা প্লীহা) গুলী শরীর প্রতিরক্ষার কাজে ও রক্তকে পরিস্কার রাখার কাজে একটা বিরাট ভূমিকা রাখে, যা একটু পরেই জানতে পারবেন।
তা হলে এটা এক রকম পরিস্কার হয়ে গেল যে LYMPHATIC তন্ত্রের একমাত্র কাজ হল আমাদের রক্তকে নির্দোষ ও পরিচ্ছন্ন রাখা ও শরীর কে প্রতি রক্ষা করা। একই সংগে প্রকোষ্ঠ গুলীর জলীয় অংশের সাম্যতা বজায় রাখা।
এখানে একটা কথা জেনে নেওয়া দরকার যে BLOOD CAPILLARY এর গাত্রের এই ক্ষুদ্র ছিদ্র গুলী এমন মাপের যে এর মধ্য হতে রক্তের RBC বা PLATELET কনিকা বেরিয়ে আসতে পারেনা, কারণ এদের এখানে (EXTRA VASCULAR COMARTMENT এর INERSTITIAL COMPARTMENT বা টিসুর মধ্য স্থানে) কোন কাজ নাই। এখানে অপ্রয়োজনীয় ভাবে বেরিয়ে এলে, বরং WBC শরীর এর আবর্জনা ও ক্ষতিকর বস্তু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ কে ব্যাহত করবে।
WBC এর আয়তন এমন মাপের যে রক্তকোষ গূলীর মধ্য হতে একমাত্র WBC ই ঐ ক্ষুদ্র ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে।
পক্ষান্তরে RBC ও PLATELET কনিকার আয়তন CAPILLARY এর ছিদ্রপথ এর তুলনায় বড় হওয়ায় ঐ ছিদ্রপথ দিয়ে বাহিরে আসতে পারেনা। এদের যার যার আয়তন এই ছিদ্রপথের আয়তনের সংগে প্রয়োজনানুসারে খাপে খাপ মিলিয়ে মাফ মত সৃষ্ট।
যদি এই ছিদ্রপথের আকৃতি রক্ত কনিকার আকৃতির সংগে সংগতিপূর্ণ না হইতো, তাহলে বুঝতেই পারছেন শরীর অচল হয়ে যেত। অর্থাৎ ছিদ্র খুব বেশী ক্ষুদ্র হলে এর মধ্যদিয়ে WBC কনিকা ও চলাচল করতে পারতোনা, আবার খুব বেশী বড় হলে RBC, PLATELET কনিকা ও রক্ত হতে বেরিয়ে এসে পরিকল্পনা মাফিক কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি করিয়া দিত।
WBC এখানে কী গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে তা শীঘ্রই জানতে পারবেন।
এতক্ষনে জানতে পারলেন, রক্ত হতে নির্যাশিত হয়ে এই পরিস্কার স্বচ্ছ তরল পদার্থ বাইরে এসে “LYMPH FLUID” নাম ধারণ করল। এর সম্পূর্ণ উপাদান ই রক্তের মৌলিক উপাদানের একটি অংস মাত্র। ঠিক মনে করুন যেমন ঘোল ও মূল দুধেরই একটা অংস।
এখন প্রশ্ন আসে এই “LYMPH FLUID” -
১) এখানেই জমা থেকে যায়?
২) নাকী অন্য কোথাও প্রবাহিত হয়ে যায়?
উত্তর- জী,না, এটা এখানে জমা থাকেনা। বরং কোন কারন বসত: যদি এটা এখান থেকে LYMH নালীর মধ্য দিয়ে টিউমর বা PLAQUE ইত্যাদির কারণে আটকে গিয়ে প্রবাহিত না হইতে পারে তা হলে সেখানে রস জমে ফুলে যাবে। একে বিজ্ঞানের ভাষায় OEDEMA বলে। শরীরের নিম্নাংস পায়ে এটা কখনো কখনো ঘটে থাকে।
LYMPH SYSTEM এর কাজ এই তরলকে LYMPH CAPILLARY দ্বারা শোষন করে নিস্কাষন করে লয়ে স্থানীয় তরলের ভারসাম্য রক্ষা করা।
এখান থেকে এই LYMPH কোথায় যায়?
জী,হ্যা, এখান থেকে লিম্ফ CAPILLARY, LYMPH কে শোষন করে লয়ে, LYMPHATIC VESSEL (লিম্ফ নালী) ও লিম্ফ নোডের মধ্য দিয়া প্রবাহিত করাইয়া, ও সেখানে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও আবর্জনা মুক্ত করিয়া পুনরায় আবার সেই রক্তকেই তার সঞ্চালনের মধ্যে ফেরত দেয়।
অতএব দেখা গেল LYMPH সঞ্চালন টা রক্ত সঞ্চালন এর ন্যায় CLOSED CIRCULATION নয় বরং OPEN CIRCULATION. অর্থাৎ এক জায়গায় উৎপন্ন হয়, আর সেখান থেকে সংগ্রহ করে আর এক জায়গায় উদগীরন করে।
তা হলে এটা রক্তের কোথায় মিশে যায়?
জী,হ্যা.
আমাদের বোগলের নীচে দুই পার্শে দুইটি শিরা আছে যার নাম ডান পার্শে RIGHT SUBCLAVIAN VEIN ও বাম পার্শে LEFT SUBCLAVIAN VEIN । শরীরের উপরের অংশের লিম্ফ (কেন্দ্রীয় স্নায়ূকোষ বাদে) RIGHT SUBCLAVIAN VEIN এ ও শরীরের নীচের অংশের লিম্ফ LEFT SUBCLAVIAN VEIN এ এসে রক্তের মধ্যে ঢুকে পড়ে। নীচের ও উপরের LYMPH VESSEL এর সর্ব শেষ প্রশস্ত নালী ২ টি এখানে এসে মিলিত হয়ে গিয়েছে। এই ভাবে এই LYMPH যা মূলত রক্তের ই একটি অংশ ছিল তা আবার সেই রক্তের মধ্যেই ফিরে এল।
আবার একই ভাবে রক্তের আবর্তনের মধ্য দিয়ে পুনরায় সর্বশেষ প্রান্তিক সূক্ষ্ম CAPILLARY তে পৌছে আবার সেখান থেকে বাইরে একই পদ্ধতিতে রক্তের নির্যাস আকারে রক্ত সঞ্চালন তন্ত্রের বহি স্থানে (INTERSTITIAL SPACE)এ বের করে দিবে, আবার সেখান থেকে লিম্ফ নালী ও লিম্ফ নোড এর মধ্য দিয়ে পুনরায় SUBCLAVIAN শিরার মধ্যে ঢুকে রক্তে মিশে যাবে।
এভাবে এই LYMPH FLUID এর সঞ্চালন চলতে থাকে।
এই কর্মকান্ড চালাবার জন্য সমগ্র শরীর ব্যাপী রক্ত নালীর পাশা পাশি লিম্ফ নালী জালের ন্যায় বিস্তৃত রয়েছে।
চিত্র- ১ দেখুন।
(2)
চিত্র-১, সমগ্র শরীর ব্যাপী রক্ত নালীর পাশা পাশি লিম্ফ নালী বিরাজ করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
তাহলে আশাকরি আপনাদের নিকট এটা এক রকম পরিস্কার হয়ে গেল LYMPH CIRCULATION টা কীভাবে BLOOD CIRCULATION এর মত তার পাশা পাশি থেকেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে BLOOD CIRCULATION টা হৃদপিন্ড সরাসরি পাম্প এর মাধ্যমে করায়, আর LYMPH CIRCULATION হৃদপিন্ডের পাম্পের মাধ্যমে ঘটেনা।(তবে জীব বিজ্ঞানীদের মতে কিছু কিছু AMPHIBIAN প্র্রানীদের LYMPH CIRCULATION এর জন্য পৃথক HEART রয়েছে)(৩)।
LYMPH অনবরত অতি ধীর গতিতে অথচ নিয়মিত ভাবে শরীর এর নড়াচড়ার প্রভাবে ও LYMH VESSEL এর উপর চাপের মাধ্যমে সম্মুখ দিকে অগ্রসর হতে থাকে। আর LYMPH VESSEL এর VALVE এর গতি পথ নিয়ন্ত্রন করে এক মুখী রেখে শুধু সম্মুখেই অগ্রসর করিয়ে লয়, পিছনে যেতে দেয়না।
লিম্ফ নোড (LYMPH NODE)কী?
মনে রাখা দরকার LYMPH উৎপন্ন হওয়ার পর, LYMPH VESSEL এর মধ্য দিয়ে একেবারে সরাসরি প্রবাহের মাধ্যমে SUBCLAVIAN VEIN এর রক্তে গিয়ে ঢুকে পড়ে না। এরুপ ঘটলে LYMPH উৎপাদনের কোনই তাৎপর্য বা উদ্যেশ্য থাকতোনা।
তাহলে কী করে?
জী, হ্যাঁ,
এই বিশেষ উদ্যেশ্যটা সাধন করে LYMH NODE. LYMPH FLUID কে LYMPH NODE এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করতে হয়। লিম্ফ নোড লিম্ফ তরলকে ছেকে আবর্জনা ও দুষনমূক্ত করে।
লিম্ফ তরল লিম্ফ নালীর মধ্য দিয়ে চলার পথে এক ধরনের BEAN অথবা গোলাকৃতির, যার দৈর্ঘ কয়েক মিঃ মিঃ হতে কয়েক সেঃমিঃ হতে পারে, এমন গোটা গোটা বস্তুর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হয়, যার নাম “লিম্ফ নোড” (LYMPH NODE)।
যদি কখনো গলার পার্শের (CERVICAL LYMPH NODE) বা বোগলের নীচের (AXILLARY LYMPH NODE)প্রদাহ বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ফুলে বড় হয়ে যায়, তখন এটা চিকিৎসকেরা হাতের দ্বারা স্পর্ষ করে অনুভব করতে পারেন এবং ক্যান্সার সন্দেহ হইলে, এখান থেকে টিসু কেটে লয়ে ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা (TISSUE BIOPSY) করিলে ক্যানসার হয়েছে কিনা, পরীক্ষা রিপোর্টে বলে দেয়।
চিত্র-২, LYMPH NODE দেখুন।
(7)
চিত্র-২, একটা লিম্ফ নোডের CROSS SECTION এর চিত্র, যার মধ্য দিয়ে লিম্ফ তরল কে অতিক্রম করতে হয়।
এর এক দিকের পথ দিয়ে লিম্ফ তরল LYMPH NODE এর অভ্যন্তরে ঢুকে ও আর একদিকের পথ দিয়ে বাহির হয়ে যায়। ঢুকার পথকে AFFERENT ও বাহির হওয়ার পথকে EFFERENT LYMPH VESSEL বলে।
সমগ্র শরীরের LYMPH VESSEL জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় চলার পথে তা ছোট বড় আকৃতির সব মিলিয়ে অন্ততঃ ৬-৭ শত LYMPH NODE রয়েছে। এরা এমন ভাবে বিস্তৃত ভাবে সাজানো যে, শরীরের যেকোন স্থান হতে সংগৃহিত লিম্ফ তরলকে SUBCLAVIAN VEIN এ রক্তে ঢুকার পূর্বে এই LYMPH NODE এর মধ্য দিয়ে পার হয়ে আসতে হবে।
কেন নিম্ফ ফ্লুইড চলার পথে এই LYMPH NODE এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে?
লিম্ফ ফ্লুইড তো সরাসরি রক্তে চলে আসলেই তো আরো সহজ হতো?
জ্বী,না-জীবনকে তার শত্রু হতে রক্ষা করে রাখাটা অতটা সহজ সরল পথে হয়না, তাই এই ব্যবস্থা।
এটাকে (LYMPH NODE) মনে করতে পারেন এমন একটা ব্যবস্থা, যেমন ধরুন, বাংলাদেশ সরকার এমন একটা ব্যবস্থা করল যে প্রতিটা রুটের রেল লাইন এর কিছু কিছু ষ্টেষনে এমন বিশেষ ধরনের ষ্টেষন রাখা হল, যেখানে নিরাপত্তা পরীক্ষার অতি উন্নত যন্ত্রপাতি সহ, বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর বিশেষ প্রশিক্ষন প্রাপ্ত সৈনিকদের রাখা হল।
কারণ সমস্ত রেলপথ ধরে দেশের ক্ষতি সাধন কারী শত্রুরা চলা ফিরা করতেছে, আর সৈনিকদের নিকট এমন অত্যাধুনিক যন্ত্র দেওয়া হয়েছে, যা কারো চেহারার দিকে তাক করে ধরা মাত্রই, সাথে সাথে সেই যন্ত্র বলে দেয় ঐ ব্যক্তি দেশের শত্রু বা ক্ষতিকর কিনা। এবং সাথে সাথে বন্দী করে ফেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি নিতে পারে।
এ বিষয়ে পরে আলোচনা করা হবে।
এই LYMPH NODE গুলীকে এমনই এক বিশেষ ধরনের ষ্টেষন মনে করে নিতে পারেন, যদিও বিজ্ঞানীদের পক্ষে এমন উন্নত ধরনের DETECTION CENTER বা ষ্টেষন ক্যাম্প তৈরী করা আজো সম্ভব হয় নাই, তা করতে পারলে তো বিশ্বে আর অপরাধীরা সন্ত্রাস বা অপরাধ করতেই পারতোনা।
কিন্তু সত্যই আমাদের শরীরের নিরাপত্তা বিভাগের এমন উন্নত কলা কৌশল সম্বলিত প্রশিক্ষিত সৈনিকেরা রয়েছে, যারা এই কাজটি করতে পারে ও অনবরত করতেছেও।
আমি কোন গাজাখুরী গল্প বল্পতেছিনা। এখানে অতটা গভীরের আলোচনায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। সত্যিই DNA শরীর এর সৈনিক রক্তকোষ গুলীকে এমন জ্বীন প্রোটীন দিয়ে নির্মান করে দিয়েছে যে, সে যে কোন বহিঃশত্রু দেখতে পেলে সংগে সংগে তাকে চিনে ফেলতে ও ধংস করার জন্য বহু রকমের পদ্ধতি নিতে পারে।
আমাদের শরীরের কোন নিজস্ব কোষ যখন ক্যান্সার কোষে পরিণত হয়ে আত্মঘাতি হয়ে পড়ে, তখন শরীরের এই সৈনিক কোষগুলী এই ক্যান্সার কোষকেও একটা বহিশত্রু হিসাবে চিহ্নিত করে ফেলে ও আক্রমন করে।
নীচে চিত্র- ৩ দেখুন।
চিত্র-৩
(4)
তাই এই LYMPH NODE গুলী হল এমন সৈনিকদের একটা শক্ত ঘাটি।
এখান থেকে শরীর এর কোনই শত্রু বা ক্ষতিকারক, বা অনাকাংখিত পদার্ধকে পার হয়ে যাওয়ার উপায় নাই। কারন ঘাতক এখান থেকে পার হতে পারলেই তো LYMPH এর সংগে প্রবাহিত হয়ে SUBCLAVIAN VEIN এ রক্তে ঢুকে পড়বে।
বুঝা যাচ্ছে শরীর এটা আগে ভাগে ভাল করে বুঝে শুনেই এই ব্যবস্থা নিয়েছে।
তাহলে এই সৈনিকেরা কারা?
জী,হা.
এরা হল বেশীর ভাগ WBC কনিকা-
১) MACROPHAGE-
২) DENDRITIC কোষ-
৩) T- LYMPHOCYTE, T- CYTOTOXIC, T- MEMORY
৫) B-LYMPHOCYTE, PLASMA CELL, B-MEMORY CELL ইত্যাদি
(এদের সম্পর্কে কিছুটা পর্ব ৪৩ এ দেখুন)
LYMPH NODE এর অভ্যন্তরে GERMINAL CENTER নামক স্থানে এই সব দক্ষ রক্ত কনিকা সৈনিক গুলি বিশ্বের সব চাইতে উন্নত সামরিক যন্ত্রপাতির চাইতেও অনেক বেশী উন্নত যন্ত্রপাতি সহ ঘাটি করে বসে আছে।
(উপরে চিত্র-২ দেখুন।)
LYMPHOID ORGAN কী?
এখানে জেনে রাখা ভাল, শরীরে আরো কিছু কিছু অর্গান রয়েছে যারা রক্তকে তার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করাইয়া এই লিম্ফ নোডের মতই তারা সরাসরি অনবরত রক্তকে পরিস্কার ও আবর্জনা মূক্ত রাখতেছে। এদেরকে LYMPHOID TISSUE বা LYMPHOID ORGAN বলা হয়। যেমন¬
১) SPLEEN (প্লীহা) এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্গান হল প্লীহা বা SPLEEN, যার অবস্থান আমাদের পেটের বাম পার্শে উপরে। এই প্লীহা ও রক্তের জীবানুকে মারে ও আমাদের রক্তের মৃত RBC কে ভেঙ্গে এর হেমোগ্লোবীন এর হেম অংশকে BILIRUBIN (বিলিরুবিন)বানিয়ে বের করার জন্য লিভারে পাঠিয়ে দেয়, ও গ্লোবীন প্রোটীন কনাকে প্রোটীন আকারেই রক্তে রেখে দেয়। এটা রক্তের মৃত ও জীবানু আক্রান্ত কোষকেও পরিস্কার করে(চিত্র-৪ দেখুন)
চিত্র-৪-SPLEEN (প্লীহা) (11)
২) “টনছিল” নামক একটি LYMPHOID অর্গান আমাদের গলায় ঢুকার পথে দুই পার্শে রয়েছে, যা জীবানু প্রতিরোধ করে। টনছিল কখনো কখনো জীবানু বা ক্যনসার কোষ দ্বারা ও আক্রান্ত হয়ে থাকে।
৩) ADENOIDS-এটা শিশুদের গলার উপরি অংশে নাসিকার পিছনে থেকে রোগ প্র্রতিরোধ করে। ৫ বৎসর বয়সের পর হতে এটা ক্রমান্ববয়ে শুকিয়ে যায়। ১০ বৎসর পরে একেবারে শুকিয়ে যায়। (12)
৪) “থাইমাছ” নামক একটি অর্গান আমাদের বুকের মধ্যে ১৫ বৎসর বয়স পর্যন্ত থাকে। এটার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল, অপরিপক্ক LYMPHOCYTE (NAIVE T-CELL) কে জমা রেখে রেখে পরিপক্ক LYMPHOCYTE, বা T-CELL বানিয়ে কর্মক্ষম করে দেয়।
৫) APPENDIX নামক একটি LYMPHOID ORGAN আমাদের পেটের নীচে ডান পার্শে বৃহদান্ত্রের প্রারম্ভে থাকে। এটাও শরীরের প্রতিরোধ অর্গান হিসাবে কাজ করে। এটা কখনো কখনো জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হইয়া মারাত্বক প্রদাহ সৃষ্টি করিলে তাকে ACUTE APPENDICITIS বলা হয়। তখন এটাকে কেটে ফেলা লাগে।
৬) PEYER’S PATCHES নামক কিছু LYMPHOID TISSUE, সংখ্যায় ৩০টা পেটের নিম্নাংশে ক্ষুদ্রান্ত্রে, SUB MUCOSA LAYER এ থাকিয়া জীবানু বিধংসী কার্যে নিয়োজিত আছে।
মস্তিস্ক (CENTRAL NERVOUS SYSTEM)
মস্তিস্কে(CENTRAL NERVOUS SYSTEM)কী লিম্ফ চলাচলের ব্যবস্থা আছে?
উত্তর-
মস্তিস্কে(CENTRAL NERVOUS SYSTEM) লিম্ফ উৎপাদন বা চলাচলের ব্যবস্থা নাই। কারণ মস্তিস্ক কোষ শরীরের অন্যান্য জায়গার কোষের তুলনায় অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ওখানে নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আগেই জেনেছেন লিম্ফ তৈরী হয় প্রান্তিক সূক্ষ রক্তনালীর(CAPILLARY)এর গাত্রের কোষ গুলীর মাঝের সুক্ষ্ম ছিদ্রের বা ফাকা জায়গার মধ্য দিয়ে রক্তের একটি অংস বাইরে বেরিয়ে আসার মধ্য দিয়ে। কিন্ত মস্তিস্কের CAPILLARY এর গাত্রের কোষ গূলী এমন ভাবে আটানো থাকে যে এর মাঝে কোন ছিদ্র থাকেনা, তাই এখানে লিম্ফ উৎপাদন ও হতে পারেনা।
মস্তিস্কের নিজস্ব এই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বলা হয় BLOOD BRAIN BARRIER(BBB).
মস্তিস্কের আরো একটি নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে, তাহল সমগ্র মস্তিস্ক, মেরুমজ্জা সহ ৩টি পর্দা দ্বারা আবৃত করিয়া রাখা হয়েছে। এই পর্দাগুলীর নাম যথাক্রমে (বাহির হতে) ১)DURA MATTER ২)ARACHNOID MATTER ও ৩) PIA MATTER.
পূর্বের পর্ব সমূহ এখানে দেখুন-
http://WWW.CHKDR02.WORDPRESS.COM
৪৪ তম পর্বের সূত্র সমূহ-
1.NOBEL PRIZE
.http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2011/
.2. LYMPATIC SYSTEM- AID
http://www.lamission.edu/lifesciences/AliAnat1/Chap%2015-%20The%20Lymphatic%20System.pdf
3.WIKIPEDIA
http://en.wikipedia.org/wiki/Lymphatic_system
4.FUNCTION
http://www.livescience.com/26983-lymphatic-system.html
5. FUNCTION OF LYMH NODE
http://en.wikipedia.org/wiki/Lymph_node
6. LYMPH
http://www.news-medical.net/health/What-are-lymph-nodes.aspx
7. LYMH NODE STRUCTURE
http://apbrwww5.apsu.edu/thompsonj/Anatomy%20&%20Physiology/2020/2020%20Exam%20Reviews/Exam%202/CH20%20Histology%20of%20the%20Lymph%20Node.htm
8. KIDS HEALTH
http://kidshealth.org/parent/general/body_basics/spleen_lymphatic.html
9. BRITANICA LYMPHATIC SYSTEM
http://www.britannica.com/EBchecked/topic/352770/lymphatic-system/283753/Bone-marrow
10.BLOOD BRAIN BARRIER
https://faculty.washington.edu/chudler/bbb.html
11.SPLEEN
http://www.docticare.co.uk/pagine/Spleen.aspx
12) ADENOIDS
http://kidshealth.org/kid/ill_injure/sick/adenoids.html
13.PEYER’S PATCH
http://en.wikipedia.org/wiki/Peyer%27s_patch
.
বিষয়: বিবিধ
২০৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন