কী আবিস্কার করিয়া এই ৩ বিজ্ঞানী ২০১১ সনে মেডিসিনের উপর নোবেল বিজয়ী হলেন? INNATE IMMUNITY কী? ৪২ (২) তম পর্ব।

লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৬:৪৪:৩৮ সকাল





এই ৩জন বিজ্ঞানী শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার (IMMUNITY) উপর কিছু আবিস্কার করিয়া ২০১১ সনে নোবেল বিজয়ী হয়েছিলেন। ইনাদের আবিস্কারটা বুঝতে গেলে শরীরের IMMUNITY সম্পর্কে কিছুটা পূর্ব ধারনা থাকার দরকার আছে।

তাই ৪১ পর্বে শরীরের IMMUNITY সম্পর্কে আপনারা কিছুটা ধারনা পেয়েছেন। সেখানে আপনারা জানতে পেরেছেন আমাদেরকে এই গ্রহে বেচে থাকতে হচ্ছে আমাদের পারিপার্শিক ভয়ংকর অসংখ্য শত্রু জীবানুকুলের সংগে যুদ্ধ করে করে।

আমাদের শরীর আমাদেরই অজান্তে অনবরত এই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। যদি কখনো আমাদের শরীর কোন কারনে এই শত্রুর সংগে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে যায়, এবং এদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত জীবানু নাসক ঔষধকেও প্রতিহত (RESIST) করে দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে তখন আমাদের অবস্থা এদের কাছে এরুপ হয়, যেমন আফ্রিকার জঙ্গলে একটা মহিষের উপর এক ঝাক সিংহ ঝাপিয়ে পড়লে যা হয়।

তখন ঐ আক্রান্ত মহিষটির ন্যায় আমরাও এদের কাছে অতি সহজেই পরাভূত হয়ে মূত্যু কোলে ঢলে পড়ি।

আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে এই জীবানুকুল কে সর্ব প্রথম যে অর্গান সর্বক্ষন রক্ষক হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে, সেই অর্গান হল আমাদের চর্ম, খাদ্য প্রনালী, শ্বাষ প্রণালী, মূত্র প্রণালী, ইত্যাদি জায়গার নালীর গাত্রের আভ্যন্তরীন কোষীয় আবরন যার নাম “মিউকাছ মেমব্রেন”।

এই আবরন ভেদ করে কোন ভাবে যদি জীবানু অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে, তাহলে সাথে সাথে আমাদের শরীরের নিরাপত্তা ব্যুহের দায়িত্বে নিয়োজিত সৈনিকেরা তাদের কলাকৌশল, ও অস্ত্র সস্ত্র লয়ে সেই ঢুকার বর্ডারেই তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।

অতএব এই বর্ডারেই এদের সংগে একটা যুদ্ধের কুরুক্ষেত্রে পরিণত হয়ে যায়।

ঢুকে পড়ার সংগে সংগে বর্ডারে এই যে যুদ্ধ্যের হত্যাযজ্ঞ্যটা চলে এইটাকে বলা হয় প্রথম সারির যুদ্ধ যার বৈজ্ঞ্যানিক নাম দেওয়া হয়েছে “INNATE IMMUNITY”

এর ফলে এখানে যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তার নাম প্রদাহ বা বৈজ্ঞানিক নাম INFLAMMATION।

কোন জায়গায় প্রদাহ হলে ৫টি লক্ষণ দেখা যায় যেমন,

১) লাল হয়ে যাওয়া।

২) ফুলে যাওয়া।

৩) তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া।

৪) ব্যাথা হওয়া।

৫) কার্য ক্ষমতা হারিয়ে যাওয়া।(দীর্ঘ দিন থাকলে)

এই INFLAMMATION পদ্ধতিটা কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যেশ্য সামনে রেখে অনবরত কাজ করে চলে যেমন-

১) শত্রুকে অভ্যন্তরে ঢুকতে না দিয়ে বর্ডারেই হত্যা করে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া. ঠিক যেমনটা একটা দেশের বর্ডারের সেনা বাহিনীরা দেশে শত্রু সেনা ঢুকা আরম্ভ করলে করে থাকে।

২) যে সমস্ত কোষ আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাদেরকে পূজ (PUS) কোষ আকারে বের করে পরিস্কার করা।

৩) ক্ষত বিক্ষত অংশটুকুকে পুনর্নির্মান করা।

শরীর আর এক ভাবে বহিশত্রুর সংগে মোকাবেলা করে, যেটা দ্বিতীয় সারির যুদ্ধ যার বৈজ্ঞানিক নাম “ADAPTIVE বা ACQUIRED IMMUNITY”। এ সম্পর্কে ৪১ পর্বে কিছুটা আভাষ পেয়েছেন। পরে আরো বিস্তারিত জানানো হবে।

আজ কিছুটা আলোচনা করা হচ্ছে, শরীরের INNATE IMMUNITY বা প্রথম সারির প্রতিরোধ সম্পর্কে।

প্রথম সারির IMMUNITY আপনাদের সহজে বোঝার জন্য, সর্বপ্রথম আমি একটা আমার সদ্য বাস্তব ঘটনার উদাহরন দিয়ে আরম্ভ করছি।

সপ্তাহ খানেক পূর্বে আমার কপালে চামড়ার নীচে বাম পার্শে উপরের দিকে হঠাৎ একটা ক্ষুদ্র অত্যধিক ব্যাথা পূর্ণ লাল গোটা (দানার মত) দেখা দিল। আমরা একে বিষ ফোড়া বলে থাকি। বৈজ্ঞানিক ভাষায় একে CARBANCLE বা BOIL বলে।

এবার দেখা যাক এটা কেন ও কী ভাবে হয়েছে, এখানে অভ্যন্তরে চামড়ার নীচে কী ঘটতেছে, আমার কী করা উচিত ও অনুচিৎ এবং এর ফলাফল ই বা কী?

এইটাকেই পর্যালোচনা করলে আপনারা প্রথম সারির INNATE IMMUNITY সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে যেতে পারবেন।

আসুন তাহলে এই বিষ ফোড়াটাকে খতিয়ে দেখা যাক।

১।এটা কেন হল-কারণ

ধরা যাক হাত দিয়ে ঐ জায়গায় চুলকানোর সময় হাতের নখ দ্বারা অথবা অন্য যে কোন ভাবে ঐ স্থানের চর্মের উপরের পাতলা স্তরের কোষ আঘাত প্রাপ্ত হয়ে জখম হয়েছে এবং সংগে সংগে বাহিরে চর্মে বা নখে অবস্থিত অসংখ্য PATHOGENIC জীবানুর কোন একটা বা একাধিক ঢুকে পড়েছে।

২। এখন ওখানে কী ঘটতেছে?

এখন ওখানে শরীরের প্রতিরক্ষা বাহিনী তাদের সাজ সরজ্ঞ্জাম সহ সাথে সাথে পৌছে গিয়ে ঐ জীবানূর সংগে মারাত্মক ধরনের যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে শত্রুদেরকে অভ্যন্তরে না ঢুকতে দিয়ে ওখানেই শেষ করে দিতে চাচ্ছে।

কেন এটা করতে চাচ্ছে? কারণ আমরা টের না পেলেও শরীরের সৈনিকেরা এটা বুঝতে পেরেছে এটা বহি শত্রু, এটা দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লে সব ছারখার করে দিবে।

তাই তখন শরীরের প্রতিরক্ষা সৈনিকেরা ঐ শত্রুবৃন্দকে ওখানেই ঘিরে ঘিরে মেরে ফেলার কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে।

এই যুদ্ধ বড় জটিল ও কলা কৌশল পূর্ণ যুদ্ধ। তা বলতে পারেন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের চাইতেও অনেক বেশী কলা কৌশলপূর্ণ যুদ্ধ।

সে কথা বর্ননার পূর্বে একটা কথা বলে রাখা প্রয়োযন।

আমার একজন আত্মীয় আমার ঐ ছোট্ট্ ফোড়াটা দেখে আমাকে সতর্ক করে দিলেন, যেন আমি ওখানে না চুলকাই, বা এর উপর কোন কিছু দিয়ে চাপাচাপি বা ঘষা ঘষি না করি। তিনি বল্লেন তার এক আত্মীয় ঐরুপ একটি ফোড়ার উপর দিয়া একটি রুলার দিয়ে ঘষে ঘষে দিয়েছিলেন। তার কিছুক্ষন পরেই তার আত্মীয় মারা যান।

আচ্ছা বলুনতো? এভাবে ঐ ফোড়া ঘষে দেওয়ার পর কেহ মরে যাওয়ার পিছনে কী কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি আছে?

উত্তর- অবশ্যই বৈজ্ঞ্যানিক কারণ রয়েছে।

কী বৈজ্ঞানিক কারণ জানেন?

জী,হ্যা, তার শরীরের প্রতিরক্ষা সৈনিকেরা তার ঐ ভয়ংকর শত্রুদেরকে শরীরের অভ্যন্তরে ঢুকার পূর্বেই, ঐ স্থানেই অত্যন্ত জটিল প্রকৃয়ার মধ্য দিয়ে এক ভয়াবহ যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিশ্চিহ্ন করে তাকে রক্ষার কাজে যখন নিয়োজিত ছিল, যার জন্য ওখানে প্রদাহ (INFLAMMATION)সৃষ্টি হয়ে, তাকে শত্রুদের হাত হতে রক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিল, ঠিক সেই সময়েই সে ঐ জায়গায় রুলার দিয়ে ঘষা ঘষি করে আভ্যন্তরীন সৈনিকদের কাজে বাধার সৃষ্টি করে দিয়ে, তারই শত্রদেরকে মুক্ত করে দিয়ে, শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

আর সাথে সাথে শত্রুগন রক্তের অভ্যন্তরে ঢুকে তাকে ধংশ করে দিয়েছে।

এভাবে আমরা জীবনের বহু ক্ষেত্রে নিজেই নিজেদের ধংশ করে থাকি, কিন্ত করার সময় আমরা মনে করি আমরা ভাল করতেছি।

IMMUNITY বিষয়টি একটু জটিল আছে। তাই আপনাদের পক্ষে সহজ করার জন্য অল্প অল্প করে বর্ণনা করতে চাচ্ছি। কাজেই এখানেই শেষ করছি।

সংগে থাকুন পরবর্তি বিষয় জানার জন্য।

পূর্বের পর্ব সমূহ এখানে দেখুন-

http://WWW.CHKDR02.WORDPRESS.COM

VIDEOS-

1. INNATE & ADAPTIVE IMMUNITY

2. INFLAMMATION PART1

https://www.youtube.com/watch?v=8mEnyBdsrr8

৪২ তম পর্বের সূত্র সমূহ-

NOBEL PRIZE

1.http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2011/

2. INFLAMMATION

http://www.medicalnewstoday.com/articles/248423.php

3. INFLAMMATION

http://en.wikipedia.org/wiki/Inflammation

বিষয়: বিবিধ

১০৩৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

295094
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:২৪

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 10348

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> মুক্তিযুদ্ধের কন্যা লিখেছেন : তারা কিছুই আবিস্কার করেন্নি। এগুলো ইহুদী-নাসারা-নাস্তিক এর ধোকাবাজী মাত্র।
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
238685
আঃ হাকিম চাকলাদার লিখেছেন : কোরান থেকে সব বিজ্ঞান লওয়া হয়েছে।
295175
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৫১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
295265
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৪
আঃ হাকিম চাকলাদার লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File