কী আবিস্কার করিয়া এই ৩ বিজ্ঞানী ২০১১ সনে মেডিসিনের উপর নোবেল বিজয়ী হলেন? আমাদের শরীর রোগ জীবানু কী ভাবে প্রতিরোধ করে? ৪১ (১) তম পর্ব।

লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ০২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:২৭:১৬ সন্ধ্যা

কী আবিস্কার করিয়া এই ৩ বিজ্ঞানী ২০১১ সনে মেডিসিনের উপর নোবেল বিজয়ী হলেন?

আমাদের শরীর রোগ জীবানু কী ভাবে প্রতিরোধ করে?

৪১ (১) তম পর্ব।



Bruce A. Beutle

জম্ম: ১৯৫৭, Chicago, IL, USA

পুরস্কার প্রাপ্তির সময় যেখানে কর্ম রত ছিলেন: University of Texas Southwestern Medical Center at Dallas, Dallas, TX, USA, The Scripps Research Institute, La Jolla, CA, USA

যে আবিস্কারের উপর ভিত্তি করিয়া পুরস্কার পেয়েছিলেন: "for their discoveries concerning the activation of innate immunity"

আবিস্কারের ক্ষেত্র: Immunity (শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা।

পুরস্কারের অংশ: ১/৪

Jules A. Hoffmann

জন্ম: ১৯৪১, Echternach, Luxembourg

পুরস্কার প্রাপ্তির সময় যেখানে কর্ম রত ছিলেন: University of Strasbourg, Strasbourg, France

যে আবিস্কারের উপর ভিত্তি করিয়া পুরস্কার পেয়েছিলেন: "for their discoveries concerning the activation of innate Immunity"

পুরস্কারের অংশ: ১/৪

Ralph M. Steinman

জন্ম: ১৯৪৩, Montreal, Canada

মৃত্যু: ৩০ September ২০১১

পুরস্কার প্রাপ্তির সময় যেখানে কর্ম রত ছিলেন: Rockefeller University, New York, NY, USA

যে আবিস্কারের উপর ভিত্তি করিয়া পুরস্কার পেয়েছিলেন: "for his discovery of the dendritic cell and its role in adaptive immunity"

আবিস্কারের ক্ষেত্র: Immunity (শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা।

পুরস্কারের অংশ: ১/২

এই ৩ বিজ্ঞানী শরীরের রোগ প্রতিরোধ এর কোন্ বিষয়টি আবিস্কার করিয়া ২০১১ সনে মেডিসিন এর উপর নোবেল বিজয়ী হয়েছিলেন, সেটা বুঝতে হলে তারপূর্বে একটু জানার দরকার আছে, শরীর কী ভাবে রোগ প্রতিরোধ করে?

আসুন তাই আমরা কিছুটা জেনে লই শরীরের রোগ প্রতিরোধ বলতে কী বুঝায়, আর এর গুরুত্বই বা আমাদের জীবনের উপর কতটুকু?

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হয় IMMUNITY.

IMMUNITY কে অন্য ভাবে বলা যায় শরীর এর বহিশত্রুর সংগে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে টিকে থাকার অদম্য প্রচেষ্টার ক্ষমতাকে।

শরীরের বহিশত্রু কারা?

জী হ্যা, আমরা যে পরিবেশে বসবাস করতেছি এর সর্বত্র আমাদের অলক্ষে অসংখ্য শত্রু কিলবিল করছে। এরা আমাদেরকে অনবরত আক্রমন করার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি লয়ে বসে আছে। বলতে পারেন, এরা বাঘের চাইতেও বেশী ভয়ংকর ও শক্তিশালী। কারন বাঘকে আমরা খালি চোখে দেখে বা তার শব্দ শুনে সতর্ক হওয়ার সুযোগ পাই কিন্তু এরা আমাদের দৃষ্টির বাইরে অবস্থান করে সহসা বিনা নোটীসে শরীরের অভ্যন্তরকে আক্রমন করে আমাদের জীবন প্রকৃয়া স্তব্ধ করে দেয়।

আমাদের একজন হতে আর একজনের মধ্যেও আমাদের অলক্ষ্যে সংক্রমিত হয়ে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে দিতে পারে। কাজেই এরা বাঘের চেয়েও বেশী ভয়ংকর ও ক্ষমতাবান। এরা বাঘকেও কাবু করে বা মেরে ফেলে দিতে পারে।

এই শত্রুদের তাহলে একটু চিনে রাখুন।এরা হল-

১) ভাইরাস ২)জীবানু (BACTERIA) ৩)ফাংগাছ ৪) প্যারাছাইট

এদের রাজ্য ও বাসস্থান কোথায়?

হ্যাঁ, এদের রাজ্য ও বাসস্থান বলতে পারেন সর্বত্রই। এদের শত্রু হল উত্তাপ (অধিকাংশের ক্ষেত্রে অন্ততঃ ১OO ডিগ্রী C)ও ANTI SEPTIC রাসায়নিক পদার্থ (যেমন DETTOL SAVLON,SOAP ইত্যাদি),সূর্যরশ্মীর ULTRAVIOLET RAY ও আরো অনেক রাসায়নিক পদার্থ।

আমার কথা বিশ্বাষ হচ্ছেনা? তাহলে বাস্তব দেখুন।

এটা দেখার জন্য খুব বেশী দুরে যাওয়ার দরকার নেই, এই মুহুর্তেই আপনি কোন একটি MICROBIOLOGY ল্যাবরেটরীতে গিয়ে আপনার যে কোন একটি আঙ্গুলের বা আপনার চর্মের যে কোন জায়গার ছাপ,বা আপনার শ্বাষ নালীর কিছু তরল নিঃসরন জীবানু পরীক্ষার জন্য দিয়া আসেন।

ল্যাবরেটরী এটা NUTRIENT BROTH পেট্রিডিসে জীবানু জন্মাতে INCUBATOR এ বসিয়ে দিবে।

৪৮ ঘন্টা পর আপনি এই পেট্রিডিস টি যদি নিজ চোখে অবলোকন করেন, তাহলে দেখে অবাক হয়ে যাবেন, যে আপনার শরীররের ঐ অতি ক্ষুদ্রস্থান টুকু কী পরিমাণ অসংখ্য জীবানুর দখলে রয়েছে।

আপনি যে রুমটিতে এই মূহুর্তে বসবাস করতেছেন, সেই রুমটার বায়ুমন্ডল ও জীবানু পুর্ণ।

এটাও আপনি আজই পরীক্ষা করে প্রমান করতে পারেন।

পদ্ধতি- ল্যাবরেটরী হতে ৫টি NUTRIENT BROTH পেট্রিডিস এনে এর ঢাকনাটা সরিয়ে, এই পাচটি পেট্রিডিসকে রুমের পাচ স্থানে ২৪ ঘন্টা রেখে দিন। এরপর ঐ পেট্রিডিস গুলীকে একটি INCUBATOR এ ৩৬ ডিগ্রী C এ রেখে ৪৮ ঘন্টা INCUBATE করুন।

এরপর ঐ পেট্রিডিস গুলীকে আপনি দেখলে অবাক হয়ে যাবন, আপনার রুমের বায়ুমন্ডল থেকে এই ডিস অসংখ্য জীবানু সংগ্রহ করে ফেলেছে।

অর্থাৎ আপনি এই সব জীবানুর মধ্যে অনবরত বসবাস করতেছেন। এরা আপনার চির সঙ্গী।

তাহলে এবার বুঝেন, চতুর্পার্শের আসবাব পত্রের কথা বাদ ই দিলাম, আমাদের শরীরের বহি SURFACE এ ও আভ্যন্তরীন অংস যেগুলী বাহিরের বায়ু মন্ডলের সংগে সরাসরি সংস্পর্ষে রয়েছে, যেমন শ্বাষ নালী, খাদ্য নালী ইত্যাদি জায়গা অসংখ্য জীবানুদের পূর্ণ দখলে।

তার মানে দাড়াল আমাদের জন্য বসবাসের কোন নিরাপদ পৃথক জগৎ নাই। আমরা অনবরত বসবাস করতেছি আমাদেরই ঘাতক এই জীবানুকুলের জগতে, এদের দয়ার উপর নির্ভর করে।

দেখুন তাহলে এদের নিকট আমরা মূলতঃ কতবড় অসহায়।

তবে এদের সবাই রোগ সৃষ্টিকারক (PATHOGENIC) নয়। PATHOGENIC ও NON PATHOGENIC (যারা সরাসরি রোগ সৃষ্টি করেনা) জীবানু মিশ্রিত থাকে।

যদি আজ বিজ্ঞানীদের অদম্য পরিশ্রমে ANTIBIOTIC (জীবানু নাসক) ঔষধ, রাসায়নিক পদার্থ ও রোগ প্রতিরোধক VACCINE (টীকা) আবিস্কার না হইত, তাহলে আমরা যে কত বড় অসহায় ছিলাম তা কিছুটা বুঝতে সক্ষম হতাম।

অতএব আমার মনে হয় এই সব বিজ্ঞানীদের প্রতি আমাদের অন্ততঃ কিছুটা হলেও কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ।

নীচে কয়েকটা PATHOGENIC জীবানুর মাইক্রোস্কোপিক চিত্র দেখুন।



চিত্র-১ মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস- এই জীবানু ঘাতক যক্ষা রোগ সৃষ্টি করে।

চিত্র-২ CHLOSTRIDIUM TETANI- এই জীবানু ভয়ংকর টিটেনাছ রোগ সৃষ্টি করে।



এই সমস্ত PATHOGENIC জীবানু গুলী বিভিন্ন পথে, যেমন যেমন টিবি জীবানু, বা ইবোলা ভাইরাছ শ্বাষ প্রশ্বাষের মধ্য দিয়ে ফুসফুষে, AID VIRUS যৌন মিলনের মাধ্যমে, টিটেনাছ জীবানু, কোথাও কেটে গেলে, সেখান দিয়ে রক্তের মধ্যে, টাইফয়েড, কলেরা জীবানু, দুষিত পানি ও খাদ্যের মধ্য দিয়ে, HEPATITIS-B VIRUS, আক্রান্ত রোগীর সিরিঞ্জ বা রক্ত ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে আমাদের অজান্তে ঢুকে পড়ে।

এই জীবানু গুলীর কোন বার্ধক্য ও নাই মৃত্যু ও নাই।

কীভাবে এরা চিরঞ্জীব? এরা অনুকুল পরিবেশ পেলে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে বিভাজন হতে থাকে। অর্থাৎ ১>২>৪>৮>১৬>৩২>৬৪>১২৮>২৫৬>৫১২……………..

তাহলে দেখলেনতো ১টি মাত্র জীবানু যদি কোন ভাবে আমাদের রক্তে ঢুকে যায়, আর যেহেতু শরীরের রক্ত এদের বংশ বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত অনুকুল পরিবেশ, তাই একটি মাত্র জীবানুই মাত্র আড়াই ঘন্টার মধ্যে ৫১২ টি জীবানুতে রুপান্তরিত হয়ে গেল।

আর একটি কাটার খোচায় এক সংগে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ জীবানু এক সংগে রক্তের মধ্যে ঢুকে পড়তে পারে।

শরীরে এভাবে জীবানু ঢুকে বংশ বিস্তার করার অবস্থাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় “INFECTION” বলা হয়।

এরুপ হলে তখন আমরা অশুস্থ বা রোগাক্রান্ত হয়েছি বলে থাকি।

অর্থাৎ INFECTION হলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে আমাদের রক্তে এরা দ্রুত বংশ বিস্তার করে করে ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন সংখ্যায় হয়ে যেতে পারে। আরো বিপদ্জনক হল, এরা রক্তের মধ্যে শুধু নিস্ক্রীয় হয়ে বসে থাকেনা। এরা এক একটা জীবন্ত প্রাণী, এদের রীতিমত খাওয়া দাওয়া, পয়ঃবর্জ নিস্কাসন,এদের জৈব নিসরন ইত্যাদিও ও লাগে। শুধু তাইই নয় এদের অনেক প্রজাতি তাদের শরীর হতে মারাত্মক মারাত্মক TOXIN বা বিষাক্ত পদার্থও নিসঃরন করে।

কী ধরনের TOXIN (বিষাক্ত পদার্থ) নিঃসরন করে?

এদের এক এক জন এক এক ধরনের TOXIN নিঃসরন করে যেমন ধরুন-

STREPTOCOCCUS HAEMOLYTICAS GROUP A নামক একটি জীবানু শিশুদের টনছিল গ্রন্থীকে আক্রমণ করে, গলায় ব্যাথা, কাশী, বাতজ্বর (RHEUMATIC FEVER)ঘটায়। এটা আক্রান্ত করে জিহ্বার পার্শে অবস্থিত টনছিলকে, কিন্তু মারাত্মক ব্যাপার হল, এরা এখানে থেকেই রক্তের মধ্যে এক ধরণের TOXIN ছেড়ে দেয়, যে TOXIN রক্তের মধ্য দিয়ে আক্রান্ত রোগীর হৃদপিন্ডে পৌছে হৃদপিন্ডের গুরুত্বপূর্ণ অংশ “ভালভ” গুলীকে স্থায়ী ভাবে ধংশ করে দেয়। (হৃদপিন্ডের ভালভ সম্পর্কে ৩৪ ও ৩৫ পর্ব দেখুন)।

এভাবে সময়মত উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে, হৃদপিন্ডের ভালভ অকালে নষ্ট হয়ে গিয়ে আমাদের দেশে অসংখ্য শিশু কিশোর অকালে অকেজো হয়ে যায়, অথবা মৃত্যুবরন করে।

এরা আর কী করে?

যেহেতু এই ঘাতক শত্রুরা রক্তের মধ্যে ঢুকে পড়েছে, তখন এই রক্তের মধ্য দিয়েই আমাদের গুরুত্ব পূর্ণ অর্গান, যেমন মস্তিস্ক, হৃদপিন্ড,ফুসফুস, লিভার, কিডনী, এর যে কোনটাকেই আক্রমণ করে আমাদের চরম ভাবে ঘায়েল করে দিতে পারে।

অর্থাৎ এই ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ঘাতক শত্রু আমাদেরর রক্তের মধ্যে আমাদের ধংষের এক হরিযজ্ঞ আরম্ভ করে দিয়ে আমাদের জীবনাবসান করে দিতে চায়।

কিন্ত তাদের এই আমাদেরকে লয়ে হরিযজ্ঞ খেলতে দেয়না, আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যুহ।

কী সেই প্রতিরক্ষা ব্যুহ?

এই প্রতিরক্ষা ব্যুহই হইল আমাদের নিরাপত্তা বিভাগ (IMMUNITY) বা যাকে বলা যায় এই ঘাতক বহি শত্রুর সংগে মোকাবেলা করিয়া পরাস্ত করার ক্ষমতা।

এদের মোকাবেলা করার জন্য কী আছে?

এদের কী নাই? এদের সব ব্যবস্থাই রয়েছে,

এদের আছে-

১) প্রথম সারির নিরাপত্তা প্রহরী বর্ডার গার্ড-

এই বর্ডার গার্ড গুলী প্রথমে ঢুকবার পথে এদের সংগে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে এদেরকে ঠেকিয়ে রাখার অদম্য চেষ্টা চালায়। প্রথম সারির এই প্রতিরোধকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলে “INNATE IMMUNITY”

আর যখন দেখে যে এদের সংগে পেরে উঠতেছেনা, তখন শরীরের অভ্যন্তরের, রিজার্ভ ও আরো উন্নত বাহীনিকে বার্তা পাঠিয়ে দেয়, যুদ্ধের পূর্ণ প্রস্তুতির জন্য। এরা শরীরের আভ্যন্তরীন বাহিনীকে বার্তা পাঠিয়ে দেয় “তোমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও, ঘাতক শত্রুরা দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে, সব ধংস করে দিবে”।

২) আভ্যন্তরীন রিজার্ভ বাহিনী, একে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলে "ADAPTIVE IMMUNITY"-

আভ্যন্তরীন রিজার্ভ বাহিনী বর্ডার গার্ডদের বার্তা পাওয়ার সংগে সংগে যুদ্ধের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে। তাই এই ঘাতক শত্রু বাহিনী বর্ডার গার্ডদের পরাস্ত করিয়া রক্তের মধ্যে ঢুকে পড়ার সংগে সংগে আভ্যন্তরীন বাহিণীর সৈনিকেরা বিভিন্ন উন্নত কলা কৌশল প্রয়োগ করে করে এর এক একটা বহি শত্রু জীবানুকে সরাসরি ধরে ফেলতে থাকে ও মেরে ফেলতে থাকে।

এভাবে শত্রু বাহিনীকে আভ্যন্তরীণ সেনা বাহিনী নিশ্চিহ্ন করিয়া বাংলাদেশ কে শত্রুমুক্ত করার ন্যায় আমাদের শরীরকেও ঘাতক শত্রুমুক্ত করে ফেলে।

আভ্যন্তরীন বাহিনী আরো কী করে জানেন?

সেটা আরো উন্নত পর্যায়ের কলা কৌশল। আমরা তো জানি, এক এক দেশের শত্রু এক এক ধরনের অস্ত্র লয়ে এক এক কলা কৌশল অবলম্বন করে যুদ্ধ করে। যেমন ধরুন চাইনীজ শত্ররা চাইনীজ রাইফেল লয়ে চাইনীজ কৌশলে আক্রমন করতে থাকবে, জাপানী শত্রুরা ঢুকলে জাপানী রাইফেল ও কৌশল লয়ে আক্রমন করবে।

তাই শরীরের আভ্যন্তরীন বাহিনী এদের শুধু পরাজিত ও নিশ্চিহ্ন করিয়াই ক্ষান্ত হয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকেনা। এদের একটি বিভাগ আর একটা কাজ করে ফেলে। তাহল যে দেশের যে অস্ত্র ও কৌশল লয়ে ওরা ঢুকেছিল, ধরা যাক চাইনীজ শত্রুরা ঢুকেছিল, তখন আভ্যন্তরীন বাহিনী ঠিক চাইনীজ বাহিনী যে অস্ত্র ও যে কৌশল অবলম্বন করে যুদ্ধ করেছিল, ঠিক তাদেরই অস্ত্র ও কৌশল যে ভাবে ধংশ করা যায় তদ্রুপ একটি বিশেষ ANTI চাইনীজ বাহিনীর অসংখ্য সেনা তৈরী করে রক্তের জলীয় (SERUM)অংশে ছড়িয়ে রাখে। এর পর আর কখনো দ্বিতীয় বার ঐ চাইনীজ শত্রু রক্তে ঢুকে পড়লে এই ANTI চাইনীজ বাহিনী তাদের সংগে সংগে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

এই ANTI চাইনীজ বাহিনীকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ANTI CHINEESE ANTIBODY.

অর্থাৎ ঠিক একই ভাবে রোগ জীবানুর ক্ষেত্রেও তাইই ঘটে।

যেমন কারো শরীরে হাম (MEASLE) রোগের জীবানু ঢুকে হাম সৃষ্টি করল, রোগী শুস্থ হওয়ার পর আর দ্বিতীয় বার তার শরীয়ে হাম জীবানু ঢুকে হাম রোগ করতে পারবেনা, কারণ তার প্রথম আক্রমনের পরপর ই তার IMMUNITY বিভাগ হাম জীবানূর বিরুদ্ধে উপযুক্ত হাম বিরোধী সৈনিক ANTI MEASLE ANTIBODY তৈরী করে রেখেছে।

এখানে মনে রাখবেন, এই ANTI MEASLE ANTIBODY শরীরের নিজস্ব প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী VACCINE, বিজ্ঞানীরা এটা অতি উন্নত কলা কৌশল প্রয়োগ করে ল্যাবরেটরীতে উৎপাদন করেন। আর স্বাস্থ বিভাগ সেই VACCINE রোগ প্রতিরোধক হিসাবে ব্যবহার করেন। বর্তমান বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম উপায়ে ল্যাবরেটরীতে উৎপাদন করে বড় বড় রোগ যেমন ইবোলা ভাইরাস এর প্রতিষেধক হিসাবেও ব্যবহার করতেছেন।

VACCINE সম্পর্কে পরে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন।

আর তাছাড়াও ঠিক একটি দেশের নিরাপত্তা বিভাগের কম্পিউটারে তাদের শত্রুদের রেকর্ড ধরে রাখার মতই, আভ্যন্তরীণ IMMUNITY বা (ADAPTIVE IMMUNITY), রক্তে কোন কোন বহি শত্রু ঢুকে পড়লে, অতিরিক্ত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য, তাদের পরিচিতি ও কলা কৌশল রেকর্ড করে এদের কম্পিউটারের MEMORY তেও ধরে রেখে দেয়।

এদের কম্পিউটারের বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় নাম “MEMORY CELL”.

কোন পূর্ব শত্রু রক্তে পুনরায় ঢুকে পড়লে নিরাপত্তা বিভাগকে তখন এই MEMORY কোষগুলীও তাদের পরিচিতি তুলে ধরে।

তাতে নিরাপত্তা বিভাগের শত্রুর সংগে আরো বেশী দ্রুত যুদ্ধ আরম্ভ করতে সহজ হয়।

আমাদের শরীরের এত বড় উন্নত নিরাপত্তা বাহিনী না থাকলে আমরা বহু পূর্বেই এই ধরনী হতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতাম, তাতে কোন সন্দেহ নাই-তা সহজে নিশ্চয়ই এতক্ষনে বুঝতে পেরেছেন।



চিত্র-৩ EBOLA VIRUS- এই ইবোলা ভাইরাছ ই বর্তমানে বিশ্ববাসীকে আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অবশ্য বিজ্ঞানীদের অবদানে ইতিমধ্যে এর প্রতিরোধক আবিস্কার হয়ে গিয়েছে।

পর্ব বড় হয়ে যাচ্ছে এ কারণে এখানেই সমাপ্ত করতে হল।

বিজ্ঞানীত্রয় IMMUNITY এর উপর কী অবদান রেখে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন, তা জানতে আরো একটু ধৈর্য ধারণ করে সংগে থাকুন। ইনসা আল্লাহ সব জানতে পারবেন।(১,২)

পূর্বের পর্ব সমূহ এখানে দেখুন-

http://WWW.CHKDR02.WORDPRESS.COM

৪১ তম পর্বের সূত্র সমূহ-

NOBEL PRIZE

1.http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2011/

2. INNATE & ADAPTIVE IMMUNITY

1http://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK27090/

বিষয়: বিবিধ

১১৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File