কর্ণ-যে ভাবে আমরা শব্দ শুনতে পাই,আভ্যন্তরীন কর্ণ COCHLEA, HAIR CELL, পর্ব-৩১ (৫)

লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ০১ আগস্ট, ২০১৪, ০৭:৫৬:১০ সন্ধ্যা

কর্ণ-যে ভাবে আমরা শব্দ শুনতে পাই,আভ্যন্তরীন কর্ণ COCHLEA, HAIR CELL, পর্ব-৩১ (৫)

কর্ণ-যে ভাবে আমরা শব্দ শুনতে পাই,আভ্যন্তরীন কর্ণ COCHLEA, HAIR CELL, পর্ব-৩১ (৫)

আপনারা ৩০ পর্বে জানতে পেরেছেন শব্দ তরঙ্গ কী ভাবে আমাদের মধ্য কর্ণে (MIDDLE EAR)পর্যন্ত পৌছে গেছে।(চিত্র-১) সেখানে আরো দেখেছেন শব্দ তরঙ্গ মধ্য কর্ণে কী ভাবে ৩ খানা হড্ডি (কঠিন পদার্থ)এর মধ্য দিয়া প্রসারিত হইয়া আভ্যন্তরীন কর্ণে COCHLEA নামক অর্গানে পৌছে যায়।(চিত্র-১)

এবার আমাদের বর্ণনার বিষয় বস্তু আভ্যন্তরীন কর্ণ। আমরা দেখব আভ্যন্তরীন কর্ণ কী? কী কী কাজ করে? ও কী ভাবে কাজ করে?

আভ্যন্তরীন কর্ণ দুইটা কাজ করে থাকে, যেমন-

১)শ্রবনের কাজ- এই কাজটি করে COCHLEA নামক একটি অর্গান।(১)

২)ভারসাম্য বজায় রাখা- এই কাজটি করে VESTIBULE নামক অর্গানটি।এই অর্গানটি আমাদের শরীর কে মাধ্যাকর্ষন শক্তির বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখতে সয়ায়তা করায়। এই কারণে কারো কানের উপর একটা জোরে থাপ্পড় মারিলে সে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ভূমিতে পড়ে যাবে। এই অর্গানে কারো ত্রুটি দেখা দিলে তার মস্তিস্ক ঘুরাতে পারে, তার কাছে মনে হতে পারে, তার চতুর্পার্শের সমস্ত স্থির পদার্থ চতুর্দিকে ঘুরতেছে (১)(চিত্র-১,২)

COCHLEA কী ভাবে শ্রবনের কাজ করে?

আপনারা পূর্বের পর্বে জানতে পেরেছেন,শব্দ তরঙ্গ মাধ্যম হিসাবে বহিকর্ণ পর্যন্ত বায়ূ মন্ডলকে,মধ্য কর্ণে কঠিন পদার্থ ৩টি হাড্ডিকে ব্যবহার করে, সর্বশেষ এবং শরীরের সবচেয়ে ক্ষুদ্র হাড্ডি STAPES এ পৌছায়।(চিত্র ১ ও ২)(১)

আর এই STAPE টা COCHLEA এর ROUND WINDOW নামক একটি পাতলা পর্দার সংগে আটানো থাকে।

COCHLEA একটি ঠিক শামুকের মত আড়াই প্যাচের একটি অর্গান। COCHLEA এর অভ্যন্তরে PERILYMPH নামক একটি তরল পদার্থ থাকে।এটা শরীরের অন্যান্য EXTRACELLULAR তরল (যেমন PLASMA.CSF ইত্যাদি) এর মত একটি তরল পদার্থ।

এবার তাহলে বুঝতেই পারছেন,STAPE হাড্ডিটা যখন তরঙ্গের আঘাত টি COCHLEA এর পর্দায় আঘাত করে, তখন তরঙ্গটা COCHLEA এর অভ্যন্তরে এই PERILYMPH তরলের মধ্যে তরঙ্গ উৎপাদন করে, ঠিক যেমন একটি পানি ভর্তি পাতলা রাবারের বলের উপর আঘাত করলে যেমনটা ঘটে।

COCHLEA একটা জটিল অর্গান। এর মধ্যে বিশেষ স্থানে HAIR CELL নামক কোষ আছে যা দুই প্রকার-

১)HAIR CELL INNER

২) HAIR CELL OUTER

এই HAIR CELL INNER এর চুড়ায় চুলের ন্যায় অসংখ্য আঁস আছে। যখন COCHLEA এর PERILYMPH তরলে তরঙ্গ আরম্ভ হয়ে যায়, তখন এই আঁস গুলী তরঙ্গের আঘাতে নড়া চড়া আরম্ভ করে।

আর আঁসের এই নড়াচড়া তরঙ্গ আকারে HAIR CELL INNER গ্রহন করে লয়।

তখন এই HAIR CELL INNER এই তরঙ্গকেই বৈদ্যুতিক তরঙ্গে রুপান্তরিত করে VESTIBULO COCHLEAR বা AUDITORY স্নায়ু এর মাধ্যমে মস্তিস্কের শ্রবন কেন্দ্রে পৌছে দেয়।

তখন মস্তিস্কের বিশ্লেষন কেন্দ্র শব্দটি কী, তা বিশ্লেষন করে ফেলে।

এরপর আমরা বুঝতে পারি শব্দটি কী?কী বলতে চায় ইত্যাদি।

আর হ্যা, HAIR CELL INNER কী ভাবে বাহ্যিক তরঙ্গকে বৈদ্যুতিক তরঙ্গে রুপান্তরিত করে?

এখানেও ম্যাজিকের মত কোন ব্যাপার ঘটেনা।এটাও আর একটা শুক্ষ্ম কলা কৌশল ঘটে।

ওটা বুঝতে চাইলে ১৭ তম পর্ব পড়ুন।

তাহলে এবার নিশচয়ই বুঝতে পারছেন বাইরে উৎপাদিত একটি শব্দ আপনি যত সহজে শুনতে ও বুঝতে পারছেন বলে মনে করছেন, আসলে ব্যাপারটা তা নয়। এর জন্য কর্ণকে অত্যন্ত জটিল কলা কৌশল প্রয়োগ করতে হচ্ছে।

কিন্তু আমরা তা মোটেই উপলদ্ধি করতে পারিনা। আমাদের কাছে মনে হয় সব কিছু অতি সহজেই আপনা আপনি হয়ে হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু ঘটনাটা মোটেই সহজে ঘটতেছেনা।

HAIR CELL OUTER এটা কী কাজ করে?

এটার কাজ আরো অদ্ভুত!!

আমরা বা আমাদের কর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় একটি নির্দিষ্ট FREQUENCY মাত্রার শব্দ তরঙ্গ শুনতে সক্ষম মাত্র।এই রেঞ্জটা ১২ HZ হইতে ২০ KHZ FREQUENCY পর্যন্ত(বিস্তারিত ২৯ পর্ব দেখুন)

এই মাপের নীচের তরঙ্গ আমাদের আভ্যন্তরীন কর্ণে পৌছাইলে তা HAIR CELL এর কোষগুলী সংগ্রহ করতেও পারেনা ও স্নায়ুর দ্বারা মস্তিস্কেও পাঠাতে পারেনা, তখন আমরা ঐ শব্দ শুনতে বা উপলদ্ধি ও করতে পারিনা। কিন্ত শব্দ তরঙ্গের অস্তিত্ব আপনার আভ্যন্তরীন কর্ণে পৌচাচ্ছে।

HAIR CELL OUTER স্বাভাবিক অবস্থায় তেমন একটা কার্য করেনা বা করার দরকার হয়না।

এই HAIR CELL OUTER কখনো কখনো কারো পূর্ণ মাত্রায় ACTIVE হয়ে গেলে, এই ক্ষুদ্র বা শুপ্ত তরঙ্গকে শক্তিশালী বা উচ্চপর্যায়ের তরঙ্গে রুপান্তরিত করে দেয়। তখন এই উন্নীত তরঙ্গ HAIR CELL INNER সংগ্রহ করে আপনার মস্তিকে পাঠিয়ে দিলে আপনি সেই শব্দটি একেবারে পরিস্কার শুনতে পাবেন।(২,৩,৪)

কিন্তু আপনার পার্শে উপবিস্ট বন্ধুগুলী সেই শব্দ মোটেই শুনতে পাইবেনা।কারন তাদের স্বাভাবিক কর্ণের অতটা ক্ষুদ্র তরঙ্গ ধরার ক্ষমতা নাই। আপনার বন্ধু গুলী আপনাকে তখন মানসিক রোগী হিসাবে আখ্যায়িত করতে পারে।

আপনার বিশ্বাষ হচ্ছেনা?

তাহলে আমার দেখা একটি বাস্তব ঘটনা বলি-

আমরা চার পাচজনে একটা বড় বিল্ডিংএর একটি রুমে বসে কথা বার্তা বলতে ছিলাম। আমাদের মধ্যে একজন ইঞ্জিনীয়ার ছিলেন যিনি ছাত্র জীবনে পুকুরে গোছল করার পূর্বে অন্য ছেলেদের সংগে খেলাচ্ছলে ডিগবাজী খেয়ে পুকুরে ঝাপ দিয়ে পড়ার খেলা খেলতে গিয়ে এক পর্যায়ে একবার তার মস্তিস্ক পুকুরের তলার শক্ত মাটিতে খুব জোরে চোট লাগে।

এর ফলে তার মেরুদন্ডের স্নায়ু মজ্জায় মারাত্মক আঘাত পেয়ে তার কোমর হতে দুই পা সহ নিম্নাংস পঙ্গু হয়ে যায়। পরে হুইল চেয়ার ব্যবহার করতেন।

আমাদের দুইটা রুমের পরে আর একটা রুমে আর কয়েকজন লোক দরজা আটকিয়ে আস্তে আস্তে নিজেরা কিছু আলোচনা করতে ছিলেন।

তাদের কোন কথার শব্দই আমাদের কানে আসতেছিলনা, বা আসা সম্ভব ও ছিলনা।

হঠাৎ আমাদের ঐ ইঞ্জিনীয়ার বন্ধু আমাদের বল্লেন “আমি ঐ রুমের সমস্ত কথা বার্তাই শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু আপনারা শুনতে পাচ্ছেননা। দুর্ঘটনার পর হতে আমার এভাবে শ্রবন শক্তিটা বেড়ে গিয়েছে।

তখন এর ব্যাখ্যা না জানলেও তাকে অবিশ্বাষ করতে পারি নাই।কারন তিনি অবিশ্বাষ করার মত ব্যক্তি ছিলেননা। কিন্তু ২০ বৎসর পর আজ এর ব্যাখ্যা পেয়ে গেলাম। অর্থাত তার আভ্যন্তরীন কর্ণের HAIR CELL OUTER দুর্ঘটনার পরে যে কোন ভাবে হোক পূর্ণ মাত্রায় ACTIVE হয়ে গিয়েছে।

শুধু এইটাই নয়, মানব শরীরে বয়সের বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু কিছু কোষ ACTIVE ও IN ACTIVE হয়ে থাকে।

আমাদের বার্ধক্য তার সংগে জড়িত।(এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ৫ম পর্ব পড়ুন)

শ্রবনের সংগে DNA এর কী কোন সম্পর্ক আছে?

হ্যা, অবশ্যই আছে। ১৩ নং ক্রোমোজোমের GJB2 জ্বীন যাকে Connexin 26 (abbreviated CX26) প্রোটীন ও বলা হয়, COCHLEAR এর HAIR CELL INNER কে সঠিক ভাবে বৃদ্ধি করায় এবং শব্দতরঙ্গকে বৈদ্যুতিক তরঙ্গে রুপান্তরে সহায়তা করায়।

কারো জন্মগত ভাবে এই জ্বীনে ত্রুটি থাকলে অথবা MUTATION(১২ তম পর্ব) হলে সে বধির হয়ে যাবে, এবং এই জ্বীনটা শরীরের অন্যান্য যেখানে (যেমন চক্ষু কর্ণিয়া,চর্ম)কাজ করে,সেখানেও ত্রুটি দেখা দিবে।(৫,৬)চিত্র-৩।

কর্ণ পর্ব এখানেই সমাপ্ত।



চিত্র-১, লক্ষ করুন,কানের পর্দার (TYMPANIC MEMBRANE)এর ঠিক অভ্যন্তরে লাল রংএর অংশ টুকুই মধ্য কর্ণ। এবং তার অভ্যন্তরেই আভ্যন্তরীন কর্ণ বা COCHLEA।



চিত্র-২) ককলিয়া।আভ্যন্তরীন কর্ণ।মধ্য কর্ণের ভিতরেই

Where is the GJB2 gene located?

Cytogenetic Location: 13q11-q12

Molecular Location on chromosome 13: base pairs 20,187,462 to 20,194,465



চিত্র-৩, GJB2 জ্বীন, ১৩ নং ক্রোমোজোম এর দীর্ঘ (q) বাহুর ১১-১২ নং অবস্থানে অবস্থিত।

আরো সূক্ষ্ম ভাবে, GJB2, ক্রোমোজোম ১৩ এর base pair 20,187,462 হইতে base pair 20,194,465 পর্যন্ত বিস্তৃত।

পূর্বের পর্ব সমূহ-

http://chkdr02.wordpress.com/

৩১ তম পর্বের সুত্র সমূহ-

১) http://en.wikipedia.org/wiki/Ear

২) COCHLEA

http://en.wikipedia.org/wiki/Cochlea

৩) HAIR CELL

http://en.wikipedia.org/wiki/Hair_cell

৪) HAIR CELL

http://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK11122/

৫) GENETIC CAUSE –GJB2 Connexin 26 (abbreviated CX26)

http://www.babyhearing.org/hearingamplification/causes/genetics.asp

৬) GENE

http://ghr.nlm.nih.gov/gene/GJB2

বিষয়: বিবিধ

১১৪০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

249948
০১ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:৫৭
ভিশু লিখেছেন : ভালো লাগ্লো..Happy Good Luck বলতে ইচ্ছে করে: রব্বানা মা খালাক্বতা হা যা বাত্বিলা...Praying ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুর অবস্থাটি মনে হয় ট্রম্যাটিক হাইপার-অ্যাকিউসিসের (Hyperacusis) একটি ভ্যারাইটি!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File