কর্ণ-আমাদের কর্ণ সব ধরনের শব্দও শুনতে সক্ষম নয়,চক্ষু ও সব ধরনের আলোক তরঙ্গ দেখতে সক্ষম নয়, ২৯(৩)

লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ০৬ জুন, ২০১৪, ০৫:৩৭:৫০ সকাল

আপনারা ২৭-১ পর্বে জানতে পেরেছেন শব্দ তরঙ্গ কী ভাবে উৎপত্তি হয় ও কীভাবে তা আমাদের কর্ণ কুহরে পৌছায়।(চিত্র-১)

এরপর ২৮-২ পর্বে জানতে পেরেছেন বায়ুমন্ডলীয় শব্দ তরঙ্গ কী ভাবে কর্ণ সুড়ঙ্গ দিয়ে কর্ণ-পর্দার বহি-তলে পৌছে তবলার পর্দার ন্যায় তরঙ্গ উৎপাদন করে।

আপনাদের মনে রাখতে হবে শব্দ হল একটা তরঙ্গ আকারের শক্তি মাত্র। আর একটি শব্দ আমরা তখনি শুনতে ও এর ধারনা পাইতে পারি যখন এই তরঙ্গ টা মস্তিস্কের শ্রতি কেন্দ্র (চিত্র-৩)পর্যন্ত নির্বিঘ্নে পৌছাইতে পারবে।

মস্তিস্কের শ্রুতি কেন্দ্র পর্যন্ত শব্দ তরঙ্গ না পৌছানো পর্যন্ত আমরা কিছুই শুনতে পারবনা।

অন্য ভাবে বলা যায় আমরা যা কিছু শুনি মস্তিস্ক দিয়েই শুনি।

যদি কারো কোন আঘাত বা মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের কারনে, শ্রুতি কেন্দ্রটা অকেজো হয়ে যায়,তখন সে আর কিছুই শুনতে পাইবেনা,যদিও তার কর্ণের ৩টি কক্ষ অক্ষত থাকে।

HERTZ (সংক্ষেপে HZ) কী?

এটা শবদ তরঙ্গ (বৈদ্যুতিক,ও রশ্মী তরঙ্গ ও)পরিমাপের আন্তর্জাতিক একক।

আবিস্কারক বিজ্ঞানী Heinrich Rudolf Hertz এর নাম অনুসারে এর নামকরন করা হয়েছে।

আমি পূর্বেই বলিয়াছি শব্দ তরঙ্গ আকারে অগ্রসর হতে থাকে।(২৭ পর্ব)।প্রতি সেকেন্ড পরিমান সময়ে যত সংখ্যক পূর্ণ তরঙ্গ ঘটে সেইটাকেই ঐ তরঙ্গের FREQUENCY বলে।

যেমন ধরুন কোন শব্দ অগ্রসর হওয়ার সময় যদি প্রতি সেকেন্ড সময়ে ২ হাজার পূর্ণ তরঙ্গ ঘটায় তাহলে ঐ শব্দ তরঙ্গের FREQUENCY হল ২ হাজার HZ বা ২ KILO HZ।(১)

শব্দের এই FREQUENCY এর সংগে কী আমাদের শ্রবনের কোন সম্পর্ক আছে?

হ্যাঁ,অবশ্যই আছে। শুনে আশ্চর্য হবেন, আমাদের চতুর্পার্শে অজস্র শব্দ ঘটে যাচ্ছে যা আমাদের কর্ণ দ্বারা DETECT করতে আমরা সম্পূর্ণ অক্ষম। ঐ শব্দের কাছে আমরা বধির।

কারণ, আমরা কিছুটা বয়স ও ব্যক্তিগত তারতম্য সহ.শুনতে সক্ষম হই ১২ HZ হইতে ২০KILO HZ FREQUENCY শব্দ তরঙ্গ পর্যন্ত।আমাদের স্বভাবিক শ্রতি ক্ষমতা ২০ HZ এর কাছাকাছি। (২)

কারণ আমাদের কর্ণ উক্ত রেঞ্জের FREEQUANCY এর শব্দ DETECT করার মত করেই সৃষ্ট।

কাজেই ঐ রেঞ্জের বাইরের শব্দ আমাদের কর্ণের DETECT করার ক্ষমতা নাই।

ঠিক একই ঘটনাটা ঘটে আমরা যখন চোখ দিয়া দেখি।(বিস্তারিত পর্ব ২১ দেখুন।

(চোখের বিষয়টি পুনরায় এখানে দিতে হল ভাল করে তুলনা করে বুঝাবার জন্য।)

আমাদের চক্ষু ও সমস্ত WAVE LENGTH বা FREQUENCY এর আলোক তরঙ্গ (Electromagnetic Spectra ) দেখতে সক্ষম নয়। মাত্র একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জ এর আলোক তরঙ্গ দেখতে সক্ষম।

এই VISIBLE অংশ টুকুকেই আমরা আলোক(LIGHT) বলে থাকি। এই VISIBLE আলোকের WAVE LENGH এর রেঞ্জটা হল 700 nanometers (abbreviated nm) to approximately 400 nm. অন্য ভাবে প্রকাশ করা হয়-from 7 x 10-7 meter to 4 x 10-7 meter (চিত্র-৪ দেখুন)।

ডাইনে ULTRAVIOLET RAY ও বামে INFRARED, শুধু মাত্র এর মাঝখানের VISIBLE রেঞ্জটুকুই আমাদের চক্ষু দেখতে সক্ষম হয়,এই অংশ টুকুই আমাদের নিকট আলোক এবং আমরা শুধু মাত্র এটুকুই দেখতে সক্ষম হই।.

এর বাইরে আমাদের চক্ষু আর কিছুই DETECT করতে সক্ষম নয়।

আর এই রেঞ্জ টুকুর মধ্যেই ৭টি রঙের আলোকের ৭ ধরনের WAVE LENGTH থাকে। একটি PRISM এর মধ্য দিয়ে আলোক রশ্মী পার করে দিলে বিভিন্ন WAVE LENGTH পৃথক হয়ে গিয়ে পৃথক রংএর আলোক রশ্মী ছড়িয়ে পড়ে। চিত্র-৫

আর বাকী গুলী যেমন ,GAMMA,X-RAY, ULTRAVIOLET RAY, INFRARED,MICROWAVE,RADIO RAY এগুলীর কোনটাই আমাদের চক্ষু DETECT করতে সক্ষম নয়। কারন ঐ মাত্রার WAVE ENGTH এর Electromagnetic Spectra ধরার মত করে আমাদের চক্ষু সৃষ্ট নয়।(৪)

যদিও আমরা এই রশ্মীর অল্প মাত্রার কাছা কাছি অথবা প্রভাবের মধ্যে থাকি তবুও আমরা এগুলী চোখ দ্বারা দেখতেও পাইনা এমন কি অনুভবও করতে সক্ষম নই। কারণ আমাদের চক্ষু এদের DETECT করার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্ট নয়।

বিজ্ঞানী গন এ সব রশ্মী যন্ত্র দ্বারা DETECT করে থাকেন

নাসার বিজ্ঞানীরা ছ্যাটেলাইটে স্থাপিত যন্ত্র দ্বারা সংগ্রহ করিয়া, কোটি কোটি আলোক বর্ষের দূরের কোন বিশ্ফোরিত নক্ষত্র বা BLACK HOLE হতে বিচ্ছুরিত কছমিক রে বিশ্লেষন করিয়া অনেক কিছু তথ্য বের করে ফেলেন।

তারা এটাও জানতে পারেন, কত হাজার হাজার কোটি বৎসর পূর্বে ঐ নক্ষত্রটির আয়ূ ফুরিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছিল। আর আমরা হাজার হাজার কোটি বৎসর পর তা সংগ্রহ করছি।

AUDIOMETER নামক যন্ত্র দ্বারা চিকিৎসক গন শ্রুতি ক্ষমতা পরীক্ষা করিয়া থাকেন।আপনি আপনার শ্রুতি ক্ষমতা কিছু ক্ষতি হয়েছে কিনা, তা একজন কর্ণ বিশেষজ্ঞের নিকট গিয়ে যাঁচাই করে দেখতে পারেন।

বাদুরের শ্রুতি ক্ষমতা মানুষের চাইতে ঢের বেশী। এদের দৃষ্টি শক্তি কম থাকায় শ্রবন শক্তি প্রয়োগ করে এটা পূরন করে থাকে। এরা শব্দের ECO (প্রতিফলন)ব্যবহার করিয়া এদের শিকার ধরে ও নিরাপদ পথে চলার পথ বেছে লয়।

এদের বিভিন্ন প্রজাতির পার্থক্য সহ, এদের শ্রবন ক্ষমতার রেঞ্জ ১ HZ হতে ২০০ KILO HZ পর্যন্ত।(২)

তাহলে দেখলেন তো শ্রুতির দিক দিয়ে বাদুর মানুষের চেয়ে অনেক বেশী ক্ষমতাবান।

এ ভাবে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর শ্রবন ও দৃষ্টি শক্তির মধ্যে ঢের পার্থক্য দেখা যায়।



চিত্র-১ AURICLE (কানের লতি)



চিত্র-২, কর্ণের ৩টি কক্ষ।



চিত্র-৩ মস্তিকে শ্রতি কেন্দ।



চিত্র-৪ ,The Electromagnetic and Visible ও non visible Spectra,Light Waves and Color

এখানে লক্ষ করুন, ডাইনে “Ultraviolet” ও বামে “infrared” এর মধ্য খানের “visible” তরঙ্গ রেঞ্জ টুকুই শুধু আমরা দেখতে সক্ষম। আর বাকী Wave length রেঞ্জ এর যেমন Gamma. X-ray,Ultraviolet ray,Infrared,Microwave, Radio wave, এগুলীর কিছুই আমাদের চক্ষূ Detect করতে সক্ষম নয়।



চিত্র-৫ ,PRISM এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন রংএর আলোক ছড়িয়ে পড়ে।

যখন একটি গ্লাসের Prism এর মধ্য দিয়া ঐ Visible ray (আলোক) অতিক্রম করিয়ে দেওয়া হয়, তখন এর মধ্যে বিভিন্ন Wave length এর রঙীন রশ্মী গুলী আর এক সংগে অতিক্রম করতে না পারার কারণে পৃথক হয়ে বিচ্ছুরিত হয়ে যায়।

পরবর্তী পর্বে মধ্য কর্ণ বর্ণনা করা হবে।

পূর্বের পর্ব সমূহ-

http://chkdr02.wordpress.com/

২৯ তম পর্বের সুত্র সমূহ-

HEARING RANGE-

১)HERTZ(HZ)

http://en.wikipedia.org/wiki/Hertz

২) HEARING RANGE-

http://en.wikipedia.org/wiki/Hearing_range

EAR

৩) http://en.wikipedia.org/wiki/Ear

AUDITORY & VESTIBULAR PATHWAYS

2) http://www.bioon.com/bioline/neurosci/course/audvest.html

3) HAIR CELL

http://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK11122/

ELECTRO MAGNETIC SXPECTRA,LIGHT

4) http://www.physicsclassroom.com/class/light/u12l2a.cfm

বিষয়: বিবিধ

১১৩৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

231416
০৬ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩০
নূর আল আমিন লিখেছেন : ভাল্লাক্সে অনেক
কিছু জানতে পারলাম

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File