চক্ষু,রেটিনা যে ভাবে কাজ করে পর্ব২৪(৪)

লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ০৫ মার্চ, ২০১৪, ০৭:০১:২৬ সকাল



বিজ্ঞানীদের চিত্র বাম হতে ডানে-

১)Ragnar Granit

জন্ম: ৩০ অক্টোবর ১৯00, হেলসিংকি, ফিনল্যান্ড।

মৃত্যু: ১২ই মার্চ১৯৯১, স্টকহোম, সুইডেন।

পুরস্কার প্রাপ্তির সময় যেখানে কর্ম রত ছিলেন: Karolinska Institutet, স্টকহোম, সুইডেন।

২) Haldan Keffer Hartline

জন্ম: ২২ডিসেম্বর ১৯০৩ , Bloomsburg, PA, USA

মৃত্যু: ১৭ইমার্চ ১৯৮৩, Fallston, MD, USA

পুরস্কার প্রাপ্তির সময় যেখানে কর্ম রত ছিলেন: Rockefeller University, New York, NY, USA

৩) George Wald

জন্ম:: ১৮ই নভেম্বর ১৯০৬, New York, NY, USA

মৃত্যু: ১২ইএপ্রিল ১৯৯৭, Cambridge, MA, USA

পুরস্কার প্রাপ্তির সময় যেখানে কর্ম রত ছিলেন: Harvard University, Cambridge, MA, USA

উপরোক্ত ৩ জন বিজ্ঞানী রেটিনার ফিজিওলজিক্যাল এবং কেমিক্যাল এর উপর কাজ করিয়া মেডিসিন অথবা ফিজিওলজীতে ১৯৬৭ সনে নোবেল বিজয়ী হন। (১)

রেটিনা কী?

পূর্বেই বলা হয়েছে,একটি ক্যামরার অভ্যন্তরে ছবি ধারনের জন্য যেমন ফিল্ম থাকে, যেখানে বস্তুটির ছবিটি পতিত হয়, চোখের রেটিনাটাও ঠিক তেমনি বাহিরের বস্তুটি হতে আলোক রশ্মী রেটিনার উপর পতিত হয়ে বস্তুটির ছবি তৈরী হয়।চিত্র-১

চোখের অভ্যন্তরে বস্তু হতে নির্গত আলোক রশ্মীর ভ্রমন এপর্যন্ত শেষ। কিন্তু তখনো আমরা কোন বস্তু দেখতে পারিনা। কারন, মূলতঃ আমাদের শুধু মাত্র এই চক্ষুগোলকের দ্বারা কোন কিছু ই দেখা সম্ভব নয়,

যতক্ষন না মস্তিস্কের দৃষ্টি-কেন্দ্র কাজ করতেছে।।

আমাদের এই চক্ষু গোলকটির সমস্ত কার্য মিলিয়ে একটি মাত্রই দায়িত্ব পালন করে, আর তাহল আমাদের দৃষ্ট বস্তুটি হতে নিসঃরিত আলোক রশ্মীকে সুসংহত করে সরাসরি জায়গা মত রেটিনাতে পৌছে দেওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করা।

আমরা যা কিছু দেখি আমাদের মস্তিস্ক দেখে, আমাদের মস্তিস্কের সর্ব পিছনের দিকে VISUAL CORTEX ব দৃষ্টি-কেন্দ্র নামক একটি কেন্দ্র আছে (চিত্র-২) সেই সব কিছু দেখে।

অতএব দেখার জন্য আলোক রশ্মী পৌছানো উচিৎ ছিল মস্তিস্কের পিছনে অবস্থিত VISUAL CORTEX নামক স্থানে। সেটা সম্ভব হলে অনেক ধরনের জটিল পদ্ধতি এড়ানো সম্ভব হতো।

কিন্ত তা মোটেই সম্ভব নয়। সেখানে আলোক রশ্মী পৌছাবার কোন পথ ই নাই। আর তা ছাড়াও এটা অত্যন্ত স্পর্ষ কাতর ও গুরুত্বপুর্ণ সংরক্ষিত এলাকা। এটা কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রের অংস বিশেষ। এর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অত্যন্ত জরুরী।

তাহলে তার সর্ববিধ নিরাপত্তা রক্ষা করে কী ভাবে রেটিনার আলোক চিত্র গ্রহন করে?

হ্যাঁ, তার জন্য অত্যন্ত সুন্দর, নিশ্চিত,অথচ অত্যাধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কী সেই অত্যাধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যবস্থা?

জী হ্যাঁ, VISUAL CORTEX বা দৃষ্টি কেন্দ্র বিশেষ বৈদ্যুতিক তার যার নাম OPTIC স্নায়ু (একটি বিশেষ ধরনের স্নায়ু) পাঠিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ্ রেটিনা জুড়ে জাল বিস্তার করে দিয়ে রেখেছে।

একটি স্নায়ু কোষ কী ভাবে কাজ করে বিস্তারিত এখানে গিয়ে স্ক্রল করে নীচে গিয়ে দেখুন।

“১৭ তম পর্ব। ডিএনএ কী? ফিজিওলজী অথবা মেডিসিনে ২০১৩ এর নোবেল বিজয়ীগন, স্নায়ু কোষ কী? (২) “

বা এই লিংকে দেখতে পারেন।

http://www.chkdr02.wordpress.com/

রেটিনাতে রয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন বিশেষ ধরনের গ্রহন-কারী স্নায়ু কোষ (RECEPTOR) যার নাম RODS & CONES CELL (রড ও কোন কোষ) (চিত্র-৩)

কী করে এই রড ও কোন কোষ?

একেবারে সোজা সাপ্টা উত্তর । আর তা হল এই বিশেষ RECEPTOR কোষগুলী, রেটিনার উপর পতিত

আলোক রশ্মীকে সরাসরি বৈদ্যুতিক প্রবাহে রুপান্তরিত করিয়া, সেখানে VISUAL CORTEX হতে প্রেরিত বিশেষ স্নায়ু OPTIC স্নায়ু তারের মধ্যদিয়ে VISUAL CENTER (দৃষ্টি কেন্দ্র) কে পাঠিয়ে দেয়।

তখন VISUAL CORTEX (দৃষ্টি কেন্দ্র) এই বিদ্যুৎ প্রবাহ টিকে বস্তুটির চিত্রে রুপান্তরিত করে ফেলে।

কেবল মাত্র তখনি আমরা বস্তুটিকে দেখতে সক্ষম হই।

কী ভাবে এই রডছ ও কোন কোষ আলোক চিত্রকে বি্দ্যুৎ প্রবাহে রুপান্তরিত করে ও দৃষ্টি-কেন্দ্র ও সেই বিদ্যুৎ প্রবাহ কে পুনরায় আলোক চিত্রে রুপান্তরিত করে?

একে বারে সোজা উত্তর। এরা অন্য কোষের মত সাধারন কোষ নয়। এরা বিশেষ ইজ্ঞিনীয়ারিং কৌশল সম্পন্ন ভাবে গঠিত কোষ।

এরা TRANSFORMER বা এক শক্তি কে অন্য শক্তিতে রুপান্তর কারী হিসাবে তৈরীকৃত হয়েছে। রেটিনায় অবস্থিত রড ও কোন কোষ আলোক শক্তিকে

সোজাসুজি বৈদ্যুতিক শক্তিতে রুপান্তরিত করতে পারে।

আবার মস্তিস্কের পিছনে অবস্থিত VISUAL CENTER (দৃষ্টি-কেন্দ্র) এর কোষ গুলী গৃহিত বৈদ্যুতিক বার্তাকে আলোক শক্তিতে রুপান্তরিত করিয়া দৃষ্ট বস্তুটির একেবারে হুবহু ছবিটি অঙ্কিত করতে পারে।

আর তখন আমরা সেই বস্তুটিকে দেখতে পারি। (২,৩,৪,৫,৬)

এই ইজ্ঞিনীরিং কৌশলটি আমরাও দৈনন্দিন জীবনে অনবরত কাজে লাগাচ্ছি। যেমন ধরুন, আপনি যখন ঢাকায় বসে আপনার লন্ডনে অবস্থিত এক বন্ধুর সংগে SKYPE এ ফোনালাপ করছেন বা টেলিভিষন কেন্দ্রে অনুষ্ঠান করছেন।

তখন আপনার লন্ডন প্রবাশী বন্ধু আপনাকে তার কম্পিউটার বা টেলিভিষন পর্দায় হুবহু আপনার ছবিকে দেখতে পাচ্ছে।

কারন এখানেও ঠিক একই ঘটনা ঘটতেছে। অর্থাৎ ঢাকার টেলিভিষন কেন্দ্রের বা আপনার কম্পিউটারের ট্রান্সফর্মার আপনার বিচ্ছুরিত আলোক রশ্মীকে বৈদ্যুতিক তরঙ্গে রুপান্তরিত করে বায়ুমন্ডলে ছেড়ে দিচ্ছে, আর আপনার লন্ডনে অবস্থিত বন্ধুটির কম্পিউটার বা টেলিভিষন এর ট্রান্সফর্মারটি ঐ তরঙ্গটিকে ধরে পুনরায় আলোক শক্তিতে রুপান্তরিত করিয়া আপনার বন্ধুটিকে হুবহু আপনার চিত্র অঙ্কন করে দিচ্ছে।

আর তাই আপনার বন্ধু লন্ডনে বসে আপনার হুবহু চিত্রটি দেখতে পাচ্ছেন।

আর যেহেতু দৃষ্টি-কেন্দ্রটি মস্তিস্কের একেবারে পিছনে অবস্থিত, তাই ওখানে কখনো খুব জোরে আঘাত লাগলে, ওটা অকেজো হয়ে গেলে চির জীবনের জন্য অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কাজেই সাবধান!



চিত্র-১-চক্ষু গোলকের ছেকসন।



চিত-২ (মস্তিস্কের পিছনে রেটিনা হতে 0PTIC স্নায়ুর মাধ্যমে কোন বৈদ্যুতিক বার্তা VISUAL CORTEX বা (দৃষ্টি কেন্দ্র) নামক স্থানে পৌছিলেই আমরা সেই বস্তু দেখতে সক্ষম হই।



চিত্র-৩ রড ও কোন (RODS &CONE) কোষ

চলতে থাকবে-

অন্যান্য পর্ব গুলী এখানে দেখতে পাবেন।

http://www.chkdr02.wordpress.com/

২৪ তম পর্বের রেফারেন্স সমূহ-

১) http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/1967/

২) http://en.wikipedia.org/wiki/Retina

RETINAL WORK

৩) http://www.vetmed.vt.edu/education/curriculum/vm8054/EYE/CNSPROC.HTM

৪) NURO SCIENCE FOR KIDS

http://faculty.washington.edu/chudler/retina.html

৫) http://www.nkcf.org/how-the-human-eye-works/

৬) http://www.webmd.com/eye-health/amazing-human-eye

বিষয়: বিবিধ

১১৫৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

187045
০৫ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:১৩
সজল আহমেদ লিখেছেন : কিছু শিখতে পারলাম।
০৫ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৪
138886
আঃ হাকিম চাকলাদার লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
187071
০৫ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:৩৫
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব অনেক কিছু জানতে পারলাম।
০৫ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
138889
আঃ হাকিম চাকলাদার লিখেছেন : পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File