চক্ষু- আলোক রশ্মী যে ভাবে চক্ষু অভ্যন্তরে ভ্র্রমন করে, পর্ব-২২ (২)

লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৭:১১:৫০ সকাল

চক্ষু- আলোক রশ্মী যে ভাবে চক্ষু অভ্যন্তরে ভ্র্রমন করে, পর্ব-২২ (২)

এই পর্বটা বুঝতে গেলে আপনাদের পর্ব ২১(১) টা একটু পড়ে আসতে হবে।

আমরা জানি দেখতে গেলে পদার্থ হতে বিচ্ছুরিত আলোক রশ্মী ৪টি বস্তুর মধ্যদিয়ে ভ্রমন করে রেটিনা পর্যন্ত পৌছানো লাগে।

এই পদার্থ গুলী হচ্ছে –

১) কর্নিয়া- চক্ষুগোলকের সর্ব প্রথমে গোলাকার পাতলা স্বচ্ছ পর্দার নাম কর্ণিয়া।কর্ণিয়া হইল চোখ দ্বারা বহির্বিশ্ব দেখার জানালা। আবার বহির্বিশ্ব হতে চক্ষু-অভ্যন্তরে আলোক রশ্মীর ভ্রমন সর্ব প্রথম কর্ণিয়ার মধ্য দিয়েই আরম্ভ হয়।

কর্নিয়া আলোক রশ্মীকে CONVERGE বা একত্রিত(REFRACTION) করে। এবং চক্ষুর অভ্যন্তরকে বাহিরের আবর্জনা হতেও রক্ষা করে। সর্ব প্রথম আলোক রশ্মী কর্নিয়া অতিক্রম করার পর একোয়াছ হিউমার (AQUEOUS HUMOR)-নামক একটি স্বচ্ছ তরল পদার্থকে অতিক্রম করতে হয়।

২)একোয়াছ হিউমার (AQUEOUS HUMOR)- ইহা একটি স্বচ্ছ তরল পদার্থ যা IRISH এর পিছনে ও সামনে থাকে ও চোখের অভ্যন্তরের চাপ নিয়ন্ত্রন করে। ইহার সঠিক প্রবাহে বিঘ্ন ঘটিলে

চোখের অভ্যন্তরে চাপ মাত্রা বেড়ে গিয়ে GLAUCOMA নামক লক্ষন হীন রোগের উৎপত্তি হয়।

চোখের স্বাভাবিক চাপ মাত্রার রেঞ্জ ১২-২২ MMHG (MILLIMETER MURCURY)।(৪)

GLAUCOMA কে চোখের SILENT KILLER ও বলা হয়। কারণ রোগী এটা টের পাওয়ার পূর্বেই তার সেই চক্ষুটি অন্ধ হয়ে যায়।

একারনে চক্ষু চিকিৎসকের নিকটে গিয়ে অন্ততঃ ২/৩ বছরে ১ বার ODOMETER দ্বারা চক্ষু চাপ পরীক্ষা করানো ভাল।

এরপর আলোকরশ্মী আইরিশ (IRISH) নামক একটি কালো রংএর পদার্থের মধ্যখানে পিউপিল নামক একটি নিয়ন্ত্রন যোগ্য গোলাকার ছিদ্র পথের মধ্য দিয়ে লেন্স এ পৌছায়।(চিত্র-৪)

আইরিশ টি ক্যামেরার SHUTTER এর ন্যায় কাজ করে।

আইরিশ এই পিউপিল (PUPIL) নামক ছিদ্র পথটিকে সংকুচিত বা প্রসারিত করিয়া প্রয়োজনানুসারে কম অথবা অধিক পরিমান আলোক রশ্মী অভ্যন্তরে প্রবেশ করায়। এভাবেই পিউপিল অভ্যন্তরে আলোক ঢুকানোর পরিমান কে নিয়ন্ত্রন করে।

এর পর পিউপিলের মধ্য দিয়ে পরিমিত ও একত্রিত আলোক রশ্মী সোজাসুজি লেন্স এর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।

৩)CRYSTALLINE LENSE (স্বচ্ছ লেন্স)- (চিত্র-৩) এই লেন্সটি একটি NATURAL এবং FLEXIBLE স্বচ্ছ CONVEX লেন্স। CONVEX লেন্স বলা হয় যার বক্রতা বাইরের দিকে অবস্থিত থাকে। এই CONVEX LENSE টির বক্রতা কিছু পেশী আস দ্বারা বাড়িয়ে কমিয়ে নিয়ন্ত্রন করা হয়। অর্থাৎ লেন্সটি একটি FLEXIBLE LENSE। ঠিক পাথরের মত একেবারে নিরেট শক্ত নয়।

লেন্সটির কাজ ঠিক ক্যামেরার লেন্স এর মত আলোক রশ্মীকে REFRACTION করা। অর্থাৎ সোজা পথে আসা আলোক রশ্মীকে বাকিয়ে একত্র করে একটি পয়েন্ট এ FOCUS করা।

লেন্সটির বক্রতা নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে পদার্থ হতে আগত আলোক রশ্মী হতে প্রতিফলিত ছবিটার সঠিক প্রতিফলনের স্থান (FOCAL POINT) নির্নিত করা হয়।(চিত্র-৪) স্বাভাবিক চোখে FOCAL POINT টি সোজাসোজি ঠিক রেটিনার উপর মধ্যখানে পড়ে। FOCAL POINT টি যদি ঠিক রেটিনার উপর না পড়ে রেটিনার পিছনে অথবা সামনে পড়ে তা হলে আপনার দুরবর্তি অক্ষর অথবা নিকট অক্ষর পরিস্কার দেখতে পাইবেন না। একে MYOPIA বা HYPEROMIA বলে।

বয়স বৃদ্ধির সংগে সংগে লেন্সটি তার ELASTICITY হারিয়ে ফেলে শক্ত হয়ে যেতে থাকে। ফলে তখন এর বক্রতাকে আর কমিয়ে বা বাড়িয়ে FOCAL POINT টিকে সঠিক স্থানে স্থাপনের নিশ্চয়তা বিধান করতে পারেনা।

এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিটি নিকট বা দুরের লেখা সঠিক ভাবে পড়তে পারেনা। তার কাছে নিকট অথবা দূরের অক্ষর গুলী পরিস্কার না হয়ে ঝাপসা ঝাপসা লাগে।

তখন চিকিৎসকের দ্বারা চক্ষু পরীক্ষা করিয়া সঠিক লেন্সটির চশমা ব্যবহার করতে হয়।

FOCAL POINT কী? (চিত্র -৪ দেখুন) CONVEX LENSE এর মধ্য দিয়ে আলোক রশ্মী অতিক্রম করিলে, রশ্মী গুলী সোজা সুজি না গিয়া বাকিয়া যায়। একে REFRACTION বলে। এক পয়েন্টএ আগত সমস্ত রশ্মীগুলী একত্রে মিলিত হয়ে যায়। এই পয়েন্টকেই FOCAL POINT বলে। বস্তুর পূর্ণ ও সঠিক চিত্রটি এখানেই অঙ্কিত হয়। অতএব বস্তুকে ভালো ভাবে দেখতে হলে FOCAL POINT টি RETINA এর উপর পড়তে হবে। (১)

লেন্স হতে FOCAL POINT এর দুরত্ব , যাকে FOCAL LENGTH বলে, কতটুকু হবে তা নির্ণয় করে লেন্স এর বক্রতা।

লেন্স এর বক্রতা কমিয়ে বা বাড়িয়ে FOCAL LENGTH বা FOCAL POINT এর দুরত্ব বাড়ানো বা কমানো হয়।

৪) ভিট্রিয়স হিউমার- আলোক রশ্মীটি লেন্স অতিক্রম করার পর সোজাপথে ভিট্রিয়স হিউমার নামক একটি জেলীর মত স্বচ্ছ জলীয় পদার্থের মধ্য দিয়া অতিক্রম করিয়া চক্ষু গোলকের সর্বশেষ প্রান্তে অবস্থিত “রেটিনা” নামক লেয়ারের মধ্যখানে FOVEA নামক স্থানে বস্তুটির আলোক চিত্রটি পৌছে দেয়।(৩)

এই ভিট্রিয়স হিউমার চক্ষুকোটর কে ভর্তি রাখিয়া এর আকৃতি ঠিক রাখে ও রেটিনাকে সংরক্ষনে সহযোগিতা করে।

,এরপর রেটিনার এক ধরনের বিশেষ কোষ আলোকে সাড়া দেয়। এদেরকে PHTORECETOR (আলোক গ্রহণকারী) বলা হয়।এদের নাম রডছ (RODS) ও কোনছ (CONES)। এই আলোক গ্রহন কারী কোষগুলী এই আলোক বস্তুকে বৈদ্যুতিক প্রবাহে রুপান্তরিত করিয়া OPTIC NERVE এর মধ্য দিয়া এই বৈদ্যুতিক প্রবাহ মস্তিস্কের পিছনে অবস্থিত দৃষ্টি কেন্দ্র (VISUAL CENTER) নামক স্থানে পৌছিয়া দিলেই আমরা বস্তুটিকে দেখে উপলদ্ধি করতে পারি।(১,২,৩)

নীচের চিত্র-১,২,৩ লক্ষ করুন।



চিত্র-১ চক্ষুগোলক ,পার্শ হতে মাঝখান দিয়ে আড়াআড়ি খন্ডন (SAGITTAL SECTION)



চিত্র-২, বস্তু হতে প্রতিফলিত আলোক রশ্মী সর্বপ্রথম ১) কর্নিয়া ২) AQUEOUS HUMOR FLUID ৩) পিউপিল নামক ছিদ্র ৪) স্বচ্ছ লেন্স ৪) VITREOUS (ভিট্রিওয়াস) এর মধ্য দিয়ে একত্রিত (CNVERGED) হয়ে রেটিনা নামক লেয়ারে পৌচাচ্ছে।



চিত্র-৩ ,একটি CONVEX LENSE আলোক রশ্মীকে কী ভাবে CONVERGE করিয়া FOCUS করে

লক্ষ করুন।



চিত্র-৪ লক্ষ করুন IRISH ও তার মধ্য খানে অবস্থিত ছিদ্র যাকে PUPIL বলা হয়।

চলতে থাকবে।

২২তম পর্বের রেফারেন্স সমুহ-

১) http://www.nkcf.org/how-the-human-eye-works/

২) http://www.webmd.com/eye-health/amazing-human-eye

3) NURO SCIENCE FOR KIDS

http://faculty.washington.edu/chudler/retina.html

4) GLAUCOMA

http://www.glaucoma.org/treatment/understand-your-glaucoma-diagnosis.php

বিষয়: বিবিধ

১৩২২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

172834
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৪৮
প্রিন্সিপাল লিখেছেন : সুন্দর বিষয়টি উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
172990
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৭
আঃ হাকিম চাকলাদার লিখেছেন : @প্রিন্সিপাল,
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File