ডিএনএ কী? ১৮ তম পর্ব। ফিজিওলজী অথবা মেডিসিনে ২০১৩ এর নোবেল বিজয়ীগন। (৩)

লিখেছেন লিখেছেন আঃ হাকিম চাকলাদার ০৬ নভেম্বর, ২০১৩, ০৮:৫২:১৬ সকাল

ডিএনএ কী? ১৮ তম পর্ব।

ফিজিওলজী অথবা মেডিসিনে ২০১৩ এর নোবেল বিজয়ীগন। (৩)



বাম হতে: Randy W. Schekman, Thomas C. Südhof and James E. Rothman.(NY TIMES)

১।Randy W. Schekman

জন্ম: ৩০ ডিসেম্বর ১৯৪৮, St. Paul, MN, USA

২। Thomas C. Südhof

জন্ম: ২ ২ ডিসেম্বর ১৯৫৫, Goettingen, Germany

৩। James E. Rothman

জন্ম: ৩রা নভেম্বর ১৯৫০, Haverhill, MA, USA

(প্রীয় পাঠক বর্গ- এই পর্বটি ঠিক এর পূর্বের ১৬ ও ১৭ তম পর্বের ধারাবাহিকতার শৈষ পর্ব বিশেষ। অতএব এই পর্বটি পড়ার পূর্বেই ১৬ ও ১৭ তম পর্ব অবশ্যই পড়ে লইবেন। অন্যথায় এই পর্ব বুঝা সম্ভব হইবেনা। এবং এই পর্বটাই ঐ বিজ্ঞানীদের আবিস্কারের আসল বিষয় বস্তু, যার উপর তারা নোবেল বিজয়ী হয়েছেন)

উক্ত ৩ জন বিজ্ঞানীদের জন্য নোবেল প্রাইজ অর্গানাইজেসন ২০১৩ সালের মেডিসিন অথবা ফিজিওলজীর উপর ৭ই অক্টোবর,সোমবার নোবেল প্রাইজ অর্জনের ঘোষনা দিয়েছেন।(১)

তারা কী আবিস্কার করেছেন?

১৬ তম পর্ব ও ১৭তম পর্ব ,মূল আবিস্কারটা বুঝবার জন্য সাহায্য কারী পর্ব হিসাবে দেওয়া হয়েছিল। Randy W. Schekman,ও Thomas C এর আবিস্কারটা বুঝতে ১৬ তম পর্ব আগে ভাল করে বুঝতে হবে। এই দুই জনের আবিস্কারটা ছিল সাধারণ কোষের সূক্ষ্ম ও সঠিক কার্যাবলীর উপর।

তাই ১৬ তম পর্বে আগে থেকেই সাধারণ কোষ সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করে লয়েছি।

Thomas Südhof এর আবিস্কারটা ছিল স্নায়ুকোষ কীভাবে মস্তিস্কে এক স্নায়ু কোষ হতে আর এক স্নায়ু কোষে সঠিক সময়ে সাংকেতিক বৈদ্যুতিক চার্জ পাচার করতে পারে।

এ কারণে, পাঠকদের কিছুটা সহজ করার লক্ষ্যে, আমি আগেই ১৭ পর্বে স্নায়ু কোষ সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করে লয়েছি।

মুলতঃ ১৬,১৭,ও ১৮ তম পর্বের লক্ষ্য বস্তু একই। এক সংগে সব লিখতে গেলে পর্ব অনেক বেশী বড় হয়ে যেত, সে কারণে পৃথক করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে লিখতে হল।

তাহলে আসুন,দেখুন বৈজ্ঞানিকত্রয় কী আবিস্কার করে ছিলেন?

আপনারা ১৬ তম পর্বে জানতে পেরেছেন, একটি সাধারণ কোষ, তার অভ্যন্তরে উৎপাদিত দ্রব্য VESICLE (প্রোটীনের তৈরী ব্যাগ) এ করে কোন ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি না করেই , কোষের অভ্যন্তরের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে ও কোষের বাহিরে দুরবর্তী কোন লক্ষ্য বস্তু-কোষের সঠিক RECEPTOR এ পৌছে দেয়।( RECEPTOR কী?-১৬ তম পর্ব দেখুন।)

আর ১৭ তম পর্বে ও দেখেছেন, একটা নিউরোন (স্নায়ু কোষ) আর একটা নিরোরোনে, কী ভাবে,SYNAPTIC CLEFT ( দুই নিউরোনের সংযোগ স্থলের মধ্য খানের সামান্য ফাকা স্থান) এ VESICLE এর মধ্যে অবস্থিত NEUROTRANSMITTER নামক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারে করে,বৈদ্যুতিক সাংকেতিক প্রবাহ পাচার করে থাকে।

এই তিন জন বিজ্ঞানী, তারা তিনটি স্তর আবিস্কার করে, কোষের এই সষ্ঠু, সঠিক জায়গায় ও ঠিক প্রয়োজনের মুহুর্তে এই মাল ভর্তি VESCLE গুলী পৌছাইয়া দেওয়ার মূল জেনেটিক রহস্য বা কারণ গুলী উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন।

তাহলে এবার দেখুন এরা এক একজনে এক একটা আবিস্কার করে করে কী ভাবে ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে, মূল রহস্যটা বের করে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন।

Randy Schekman এর প্রথম ধাপের আবিস্কারটা দেখুন।

১৯৭০ এর দশকে Randy Schekman, YEAST (এক ধরনের এক কোষী ফাংগাছ,CANDIDA ALBICANS) এর, কোষের আভ্যন্তরীন এই পরিবহন ব্যবস্থার উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে দেখতে পেলেন, কিছু সংখক ঈষ্ট এর আভ্যন্তরীন মালামাল পরিবহন ব্যবস্থায় জট পাকিয়ে কাজ কাম অচল হয়ে পড়ে গিয়েছে। (চিত্র-১ দেখুন)

এবার তিনি এই সমস্ত ঈষ্ট গুলীর জ্বীন পরীক্ষা করলেন। তিনি দেখতে পেলেন, এই সমস্ত ঈষ্ট গুলীর পত্যেকেরই তিনটা গ্রুপের মোট ২৩ টা জ্বীন MUTATION হয়ে গেছে। (MUTATION কী ?-১২ তম পর্ব দেখুন) আর যাদের এই জ্বীন গুলী MUTATION হয় নাই, তাদের কারোরই ট্রাফিক –জ্যাম হয় নাই।(চিত্র-১ দেখুন)

এখানে Randy Schekman এতটুকু মাত্র রহস্য ভেদ করতে সমর্থ হলেন যে কিছু সংখ্যক জ্বীন কোষের আভ্যন্তরীন পরিবহন ব্যবস্থা সঠিক ভাবে চালু রাখার দায়িত্ব পালন করে। যার ফলে তারা MUTATED হয়ে গেলে সেই দায়িত্বে আর কেহ না থাকার কারণে, কোষের অভ্যন্তরে মাল পরিবহনে ট্রাফিক-জ্যাম হয়ে সমস্ত জৈব কাজ কাম অচল হয়ে পড়ে।

তাই তিনি এক রকম নিশ্চিত হলেন যে ঐ তিনটি গ্রুপের জ্বীন ই কোষের সমস্ত মালামাল পরিবহন ব্যবস্থা স্বচ্ছ রাখতেছে।

কিন্ত শুধু এতটুকুতেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আসেনা।



চিত্র-১, লক্ষ্য করুন বামের (NORMAL) কোষটির জ্বীন সঠিক থাকার কারণে, কোষের অভ্যন্তর পরিস্কার আছে। কোন ট্রাফিক জ্যাম হয় নাই। ডান পার্শের (MUTANT) কোষটি লক্ষ করুন, এখানে জ্বীন MUTANT হয়ে যাওয়ার কারণে, কোষের উৎপন্ন মালামাল ট্র্যাফিক জ্যাম হয়ে আটকে পড়ে আছে।

সর্বনাষ! এরুপ যদি আমাদের কিছু কিছু কোষে ট্রাফিক জ্যাম ঘটে যায় তাহলে আমরা বড় বড় ব্যাধি যেমন ডায়াবেটিস,পারকিনছনছ, অটিজম, আলজেইমারছ নামক মারাত্মক মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে যাব।

Randy Schekman এর প্রথম ধাপের আবিস্কারটা এ পর্যন্তই শেষ।

এবার তাহলে James Rothman এর দ্বিতীয় ধাপের আবিস্কারটা দেখুন।

১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকের দিকে James Rothman, স্তন্যপায়ী প্রাণী কোষের আভ্যন্তরীন মালামাল পরিবহনের উপর পর্যবেক্ষন চালিয়ে দেখতে পেলেন যে, কিছু কিছু প্রোটীন, কোষের মালামাল পরিবহন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতেছে। (চিত্র-২ দেখুন)

কী এই প্রোটীন গুলী? কোথা থেকে এল এই প্রোটীন গুলী?

এই প্রোটীনগুলী আর কিছুই নয়। এরা হল DNA এর কোড আকারের জ্বীন এর নির্দেশের বাস্তব ত্রিমাত্রিক প্রোটীন আকারের রপ মাত্র। অর্থাৎ এই প্রোটীন ই DNA এর CODE এর বাস্তব জ্বীন।

(জ্বীন এর কাজ কাম সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা পেতে পড়ুন “ডিএনএ কী?১১শ পর্ব,GENE কী? DNA কী ভাবে লিখিত নির্দেশ পত্রের বাস্তব রুপ দেয়?RIBOSOME একটি প্রোটীন ফ্যাক্টরী”)

তিনি লক্ষ্য করলেন এই প্রোটীন (জ্বীন) গুলী, সঠিক ভাবে VESICLE কে সঠিক কোষটির সঠিক RECEPTOR এ পৌছে দেয়।(RECEPTOR কী?- ১৬ তম পর্ব দেখুন)

কোষ এই প্রোটীন (জ্বীন) কে ঐ মালামাল বহনকারী VESICLE এর উপর ট্যাগ লাগানোর মত লাগিয়ে দেয়। ঐ নির্দিষ্ট প্রোটীনটিই তখন ঐ নির্দিষ্ট VESICLE কে তার লক্ষবস্তু কোষের নিকট লয়ে যায়া। আর সেই কোষের একটি নির্দিষ্ট RECEPTOR এ, ঐ একই গ্রুপ এর আর একটা প্রোটীন ( জ্বীন) এর ট্যাগ লাগানো থাকে, যেটা প্রথমটার সহিৎ ঠিক তালা-চাবি এর মত ফিট করে লেগে যেতে পারে।

অর্থাৎ প্রতিটা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের VESICLE এর জন্য যার যার ভিন্ন ভিন্ন প্রোটীন (ট্যাগ) থাকে, এবং তারা তাদের ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্যবস্তু-কোষের যার যার ভিন্ ভিন্ন RECEPTOR এর প্রোটীনের(ট্যাগ) এর নিকট VESICLE কে পৌছে দেয় ও সেখান কার যার যার RECEPTOR এর সংগে ফিট করে কাজ করতে পারে।

এবার VESICLE টি তার সংগে বহনকৃত প্রোটীন টা চাবীর মত কাজ করে, তার RECEPTOR এর প্রোটীন টাকে আবদ্ধ তালা খোলার মত খুলে ফেলে, এবং তার বহন কৃত মালামাল বা নির্দেশ কোষের অভ্যন্তরে পৌছে দেয়। (১৬তম পর্বে বিস্তারিত দেখুন)

এই প্রোটীন গুলীকে কোষের MOLECULAR MACHINERY বলা হচ্ছে। কারন কোষ সঠিক ভাবে কাজ পরিচালনার জন্য এগুলীকে ব্যবহার করতেছে , ঠিক যেমন আমরা তালা-চাবি কে নিরাপত্তা রক্ষার জন্য একটা যন্ত্রের মত ব্যবহার করি।(চিত্র-২ দেখুন)

এই প্রোটীন গুলীর নাম SNARE (solubleN-ethylmaleimide-sensitive factor-activating protein receptor) প্রোটীন । এই প্রোটীন গুলী অনেক আগেই আবিস্কৃত হয়েছিল, তবে এরা যে এই ধরনের বিশেষ কাজ করে থাকে, এটা আগে জানা যায় নাই।(২)

James Rothman আরো লক্ষ করলেন, যে Randy Schekman এর ঈষ্ট হতে আবিস্কৃত কতক গুলী জ্বীন এর সংগে, তার স্তন্যপায়ী প্রাণীর কোষ হতে আবিস্কৃত কতকগুলী জ্বীন এর হুবহু মিল রয়ে গিয়েছে। এর দ্বারা বিজ্ঞানীগন বিলিয়ন বৎসর পূর্বে জীব বিবর্তনের সম্পর্ক খুজে পান।(১,২,৩,৪,৫,৬)

এখানে তাহলে DNA কত বড় কারিগরি কৌশল টা প্রয়োগ করল ধরতে পেরেছেন কী?

DNA এক দিকে কোষ সৃষ্টি- লগ্নে তার প্রাচীর এর উপর বিভিন্ন ধরনের RECEPTOR নামক দরজা বানিয়ে তার প্রতিটা দরজায় ভিন্ন ভিন্ন তালা লাগিয়ে আটকিয়ে রেখে দিয়েছে। যাতে করে চোর,ডাকাত বা বাইরের কোন শত্রু সহজে কোষের রাজ্যে ঢুকে পড়ে কোন ধরনের ক্ষতি সাধন করতে না পারে।

আর সে এটাও খুব ভাল ভাবে জানে যে কোন্ দরজা দিয়ে ঢুকতে গেলে কোন্ চাবিটা ফিট করবে। আর যখনই যে VESICLE কে যে নির্দিষ্ট উপাদান টি দিয়ে কোষের যে নির্দিষ্ট RECEPTOR দরজা দিয়ে ঢুকানোর জন্য পাঠিয়ে দেয়, তখন তার হাতে ঠিক সেই দরজার আবদ্ধ তালার চাবিটা ও তুলে দেয়।

কোন্ তালাটার কোন্ চাবিটা দরকার এটা যদি DNA এর সঠিক ভাবে জানা না থাকতো তাহলে কী করে যার যার সঠিক চাবিটা তার তার হাতে তুলে দিতে পারে, তাও আবার অত্যন্ত ভীড়ের মধ্যে অত্যন্ত মাথাটা ঠান্ডা রেখে অথচ অতি দ্রুততার সংগে কাজ করতে হয়?

DNA যদি তার এই সঠিক চাবি নির্নয় করতে কখনো ভূল করা আরম্ভ করে তাহলে আমরা অতি শীঘ্র জড় বস্তুতে পরিণত হয়ে যাব। বড় বড় ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ব।

বিষয়টি ভাল করে বুঝার জন্য ১৬তম পর্ব, বিশেষ করে RECEPTOR, ও “সাধারণ কোষ” অধ্যায়টি ভাল করে পড়ে নিন।(চিত্র-২ দেখুন)



চিত্র-২,বাম দিক থেকে দেখুন। VESICLE টি তার অভ্যন্তরে অন্য একটি কোষের প্রস্তুত কৃত মালামাল লয়ে, তার একটা লক্ষ্য বস্তু-কোষের প্রাচীর এর RECEPTOR, দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

VESICLE টির নীচের দিকে কমলা রংএর দুইটি হুক দেখা যাচ্ছে। এই হুক গুলীই DNA এর দেওয়া প্রোটীন, যা VESICLE টিকে পথ দেখিয়ে নীচের দিকে তার লক্ষ্য বস্তু কোষের RECEPTOR এর দিকে লয়ে যাচ্ছে।

আবার তার সোজা সুজি নীচের দিকে কোষ প্রাচীরেও দেখুন একই রকম ২টি কমলা রংএর হুক দেখা যাচ্ছে।

এই হুক দুটি কোষ প্রাচীরের RECEPTOR বা আবদ্ধ তালা।

২য় VESICLE টি দেখুন, তার সংগের চাবি, কোষ প্রাচীরের দরজার তালার সংগে খাপ খেয়ে গেছে।

৩য় VESICLE টি দেখুন, এবার কোষ প্রাচীরের RECEPTOR এর তালা, তার চাবি দিয়ে খুলে ফেলেছে ও তার বহন কৃত মালামাল নির্দিষ্ট কোষটির নির্দিষ্ট দরজা দিয়ে ঢুকিয়ে দিচ্ছে।

James Rothman এর দ্বিতীয় ধাপের আবিস্কারটা এতক্ষনে আশাকরি বুঝতে পেরেছেন। তার আবিস্কার এ পর্যন্তই শেষ।

এবার তাহলে Thomas Südhof এর তৃতীয় বা শেষ স্তরের আবিস্কারটা দেখুন।

Thomas Südhof এর গবেষনা ও আবিস্কারটা ছিল ১৯৯০ দশকের দিকে মস্তিস্কের স্নায়ূ কোষের উপর, তাই এটাকে ভাল ভাবে বুঝবার জন্য, আগে ১৭ তম পর্বের স্নায়ূ কোষ (NEURON ) সম্পর্কে, বিশেষ করে SYNAPTIC CLEFT, এর NEUROTRANSMITTER টা একটু ভাল করে পড়ে নিন।

তাহলে আসুন. Thomas Südhof এর আবিস্কারটা এবার দেখুন-

Thomas Südhof এর আবিস্কারটা ছিল মস্তিস্কের NEURON এর AXON TERMINAL END এ অবস্থিত NEUROTRANSMITTER ভর্তি VESLCLE গুলীকে কী ভাবে সঠিক সময়ে ও নিশ্চিত পদ্ধতিতে তা্ৎক্ষনিক ভাবে , NEURON এর কোষ বেড়ীকে ভেদ করিয়ে (EXOCYTOSIS পদ্ধতিতে) কোষ প্রাচীরের বাইরে অতি ক্ষুদ্র SYNAPTIC CLEFT (এক মিটারের ১ বিলিয়ন অংস প্রস্থ যার মধ্যে BODY FLUID থাকে)এ ঢেলে দেয়।

একটি NEURON এর SYNAPTIC CLEFT এ এ পর্যন্ত জানা মতে কীভাবে NEUROTRANSMITTRS বৈদ্যতিক চার্জ পার করে দেয়, তা ১৭ তম পর্বে ভাল করেই জানতে পেরেছেন।

তাহলে Thomas Südhof তার পরে বাড়তি আর কী আবিস্কার করলেন?

হ্যা উনি বাড়তি কিছু আবিস্কার করেছেন, সেইটাই তা হলে এখন দেখুন।



চিত্র-৩

চিত্র-৩, এই চিত্রটিতে AXON TERMIAL END হতে VESICLE গুলী কী ভাবে NEUROTRANSMITTER গুলীকে সময়ের সঠিকতা ও নিশ্চয়তার সংগে SYNAPTIC CLEFT এ বের করে দিচ্ছে, সেটা দেখাচ্ছে।

Thomas Südhof এর কাজ কাম ও বাড়তি নূতন কিছু আবিস্কার এই জায়গাটুকুর মধ্যেই।

তাহলে এবার দেখুন উনি এখানে অতিরিক্ত কী দেখতে পেয়েছেন।

এখানে সর্ব বামের উপরের ফুটবলের ন্যায় গোলাকৃতির VESICLE টির দিকে লক্ষ্য করুন। VESICLE টির অভ্যন্তরে গাঢ় নীল রংএর যে দানাগুলী দেখা যাচ্ছে সেগুলী NEUROTRANSMITTERS.

আমরা আগে হতেই জানি যে বৈত্যুদিক সাংকেতিক চার্জ AXON TERMINAL END এ পৌছাইলে, সেখানে তখন কোষের অভ্যন্তরে প্রচুর পরিমানে CA2+ আয়ন এর অনুপ্রবেশ (INFLUX) ঘটে।এর পর VESICLE গুলী তার অভ্যন্তরের NEUROTRANSMITTER গুলী SYNAFTIC CLEFT এ ঢেলে দেয়।(১৭ তম পর্বে এগুলী বর্নণা করা হয়েছে।

Thomas Südhof এর এখানে অতিরিক্ত আবিস্কারটা এই যে,

কোষ এই তাৎক্ষনিক কাজটি কী পদ্ধতিতে করে?

তিনি ধরতে পেরেছেন যে,

Schekman, ও Rothman এর আবিস্কৃত VESICLE এর MOLECULAR MACHINERY এর প্রোটীন এই তাৎক্ষনিক কাজটি সহসাই করা আরম্ভ করে যখনই CA2+ আয়ন এর উপস্থিতি টের পেয়ে যায়।

CA2+ আয়ন ঢুকে পড়ার পর পর ই সহসা কেন কাজ আরম্ভ করে?

এটা খুজতে গিয়ে তিনি অনুসন্ধান চালাতে থাকেন যে ,CA2+ আয়ন ও MOLECULAR MACHINARY প্রোটিন এর সংগে কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা দেখতে।

তিনি তখন, complexin ও synaptotagmin-1 নামের ২টা প্রোটীন কে সনাক্ত করতে সমর্থ হন, যারা CA2+ আয়ন কে মাধ্যম করে VESICLE, AXON CELL WALL এ FUSION (এটে যাওয়া) আরম্ভ করে দেয়।

synaptotagmin-1 প্রোটীনটা ক্যালসিয়াম আয়ন কে সনাক্তকারী (SENSOR) হিসাবে কাজ করে ।

এর পরেই complexin প্রোটীনটা VESICLE কে CLAMP দিয়ে শক্ত করে আটকিয়ে ধরার মত করে শক্ত করে আটকিয়ে ধরে ।

এর পরেই COMPLEXIN প্রোটিনটা VESICLE কে অত্যন্ত সুনিয়ন্ত্রিত ও জোরালো ভাবে কোষ প্রাচীর হতে বাইরে লয়ে আসে, যাতে কোন রকমের বাধা বিঘ্ন বা অনিশ্চয়তা বা অনর্থক সময়ের অপচয় না ঘটতে পারে।

এইটাই ছিল Thomas Südhof এর আবিস্কার। (১,২)

এ ভাবে সঠিক সময়ের নিশ্চয়তা না থাকলে NEUROTRANSMITTER গুলী SYNAPTIC CLEFT এ আসতে দেরীও ঘটাতে পারত। তাতে পরবর্তী NEURON এ বৈদ্যুতিক সংকেৎ পাঠাতে দেরী হয়ে যেত।

শরীরের স্নায়ু-তন্ত্রের সংগে সম্পর্কিত সমস্ত কাজ কামে বিশৃংখলা এসে যেত।

শরীর অচল হয়ে যেত।

এর পরের ঘটনা SYNAPTIC CLEFT এ কী ঘটে তা ১৭ পর্বেই বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে,দেখে নিন।।

এর পর ঐ NEUROTRANSMITTER গুলী পরবর্তী NEURON এর RECEPTOR এ গিয়ে সেখানে আবার ACTION POTENTIAL ঘটিয়ে বৈদ্যুতিক সাংকেতিক চার্জের প্রবাহ ঘটায়, যা আগের পর্বে বর্নণা করা হয়েছে।

তাহলে দেখলেন তো , আমাদের শরীরের কাজ কাম সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য DNA কে কতবড় সূক্ষ্ম ব্যাবস্থা রাখতে হয়েছে।

যদি DNA এ ধরনের তাৎক্ষনিক বৈদ্যুতিক সাংকেতিক চার্জ পাঠাবার এই সুক্ষ্ম ব্যবস্থা না রাখতো তা হলে কী ঘটতো?

তা হলে আমাদের জীবন পরিচালনায় অদ্ভুৎ অদ্ভুৎ ঘটনা ঘটতে থাকতো যেমন ধরুন, আপনি আপনার পা দ্বারা ফুটবলটাকে আঘাত করার ইচ্ছা করেছেন? আপনি সাথে সাথে ফুটবলকে আঘাত করতে পারতেননা। আপনি ফুটবলটায় লাথি মারার ইচ্ছা করার পর ধরুন হয়তোবা ৫-১০ মিনিট পর ফুটবলটায় আপনার পায়ের লাথি গিয়ে পড়তো।

তখন কেমন লাগতো?

কিম্বা আপনি কাকেও কিছু কথা বলতে ইচ্ছা করতেছেন, সে কথাটা বলার জন্য ৫-১০ মিনিট পরে আপনার মুখ খুলতো।

কিম্বা আপনি খাবার টেবিলে খেতে বসেছেন, আপনার হাত চলতো ৫-১০ মিনিট পর।

আবার শুধু তাইই নয়, এই সময়টা লাগতো প্রতিটা MOVEMENT এর জন্য।

তখন তা হলে কেমন হতো?

এরুপ কেন হতো?

তাহলে দেখুন ফুটবলটা একটা মাত্র লাথি মারতে গেলে স্নায়ু তন্ত্রের কী পরিমানে কলা কৌশল ও মাল মসল্লা ব্যবহার করতে হয়।

আমরা যখন ফুটবলটাকে একটা মাত্র আঘাত করার ইচ্ছা পোষন করি, তখন আমাদের এই “ইচ্ছা “টা মস্তিস্কের একটি অংস গ্রহন করে লয়।

এরপর আপনি যদি কোন ইচ্ছাকে বিচার বিবেচনা করতে চান, তখন এই ইচ্ছা কেন্দ্র তথ্যটি “বিচার বিবেচনা করার কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়।

আর যদি তৎক্ষনাৎ এই কাজ টি, ধরা যাক ফুটবলটিকে লাথি মারার মত কাজ, করতে চান, তখন এই “ইচ্ছা” বিভাগ তৎক্ষনাৎ “কার্য সম্পাদন বিভাগ” (MOTOR NEURON CENTER) কে পাঠিয়ে দেয় ।

তখন “কার্য সম্পাদন বিভাগ” মেরু মজ্জার স্নায়ু, তারের মধ্য দিয়ে, পায়ের এই কার্যের জন্য প্রয়োজনীয় মাংসপেষী গুলীকে বৈদ্যুতিক সাংকেতিক চার্জ পাঠিয়ে দেয়।

পায়ের পেশীগুলী তখন আপনার ইচ্ছানুসারে কাজ আরম্ভ করে।

তখন ই আপনার পা- ফুটবলকে একটি লাথি মারতে পারে।

এভাবে আপনি যতবারই ফুটবলটাকে লাথি মারতে চাইবেন, আপনার স্নায়ূতন্ত্রকে ঠিক ততবারই এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে হবে।

এর বিকল্পে আর কোনই সোজাসাপ্টা পথ খোলা নাই।

মস্তিস্কের এই একটি বার কাজের জন্যই , মস্তিস্কের অভ্যন্তরে অসংখ্য স্নায়ুকোষকে (NEURON) কে ব্যবহৃত হতে হয়। যথেষ্ঠ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ও ব্যবহার করতে হয়, যথেষ্ঠ পরিমানে রাসায়নিক দ্রব্য (NEURO TRANSMITTER) ব্যবহার করতে হয়।

এই গুলী করতে মস্তিস্কের কিছু সময়েরও প্রয়োজন হয়, তা ধরুন অন্ততঃ ২-৩ মিলি সেকেন্ড সময় দরকার হয়।

এর পর বিদ্যৎ টা মেরুদন্ডের মধ্য দিয়ে কর্ম ক্ষেত্রে (পায়ের মাংস পেশী তে) পৌছাইতেও একটা গতিবেগ ব্যবহার করে, তা ধরুন এই গতিবেগটা হবে ১০-১০০ মিটার/সেকেন্ড।

ফুটবলে মাত্র একটা লাথি মারতে স্নায়ুতন্ত্রকে কী পরিমান মাল মসলা ব্যয় করতে হল দেখলেনতো? স্নায়ুতন্ত্রকে এভাবে ২৪ ঘন্টা কাজ করতে হয়। এমন কি আমরা ঘুমিয়ে গেলেও, স্নায়ুতন্ত্র আমাদের অজান্তে তার কাজ কাম চালিয়ে যেতে থাকে।

এই কারণে, আপনার মেরুদন্ডে আঘাতের দরুর্ন যদি আপনার পায়ের স্নায়ু ছিড়ে যায় তাহলে ঐ পা দিয়ে আর ফুটবলকে আঘাত করতে পারবেননা।

তা হলে দেখতে পেলেন তো স্নায়ুতন্ত্র এ ভাবে আমাদের জীবন টা চালাচ্ছে?

কোন কিছুই এমনি এমনি চলতেছে না। প্রতিটা ক্ষেত্রে শরীরকে এভাবে যথেষ্ঠ মূল্য গুনতে হচ্ছে।

আশা করি বৈজ্ঞানিকত্রয়ের আবিস্কার গুলী আপনাদের নিকট পরিস্কার হয়ে গিয়েছে।(১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮)

১৮ তম পর্বের সূত্র সমূহ-

১। NOBEL PRIZE

http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2013/press.html

২। MAGZINE/SEN.ACS

http://cen.acs.org/articles/91/i41/2013-Nobel-Prize-Physiology-Medicine.html

3. CNN

http://www.cnn.com/2013/10/07/health/nobel-prize-medicine/

৪. http://www.nytimes.com/2013/10/08/health/3-win-joint-nobel-prize-in-medicine.html

৫.INDEPENDENT/DELIVERY IN SYNAPSE AT RIGHT TIME

http://www.independent.co.uk/news/science/2013-nobel-prize-in-medicine-won-by-scientists-for-work-on-cell-delivery-system--james-rothman-randy-schekman-and-thomas-sdhof-8863851.html

৬. DAILY NEWS

http://www.nydailynews.com/news/national/americans-win-nobel-medicine-prize-article-1.1478303

৭. THREE SCIENTIS WITH PIC

http://www.globaltimes.cn/DesktopModules/DnnForge%20-%20NewsArticles/Print.aspx?tabid=99&tabmoduleid=94&articleId=815974&moduleId=405&PortalID=0

৮. DUMMIES

http://www.dummies.com/how-to/content/understanding-the-transmission-of-nerve-impulses.html

বিষয়: বিবিধ

১৩৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File