চেতনাহীন বিকারগ্রস্থ মানসিকতায় বিশ্বকাপের ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত জাতি!!
লিখেছেন লিখেছেন গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি ১৫ জুন, ২০১৪, ০৭:০০:৩০ সন্ধ্যা
বিশ্বকাপের ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত আমাদের অতি পাগল জাতি।
ফুটবল বিশ্বকাপের আমেজে ভূগছে গোটা দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষ। এবারের খেলাতে অংশ নেয়া তারকা দেশগুলো আছে বিশ্বকাপের নানান ধরনের আয়োজন ইভেন্ট নিয়ে ব্যস্ততাতে। সাথে ফুটবল খেলায় পিছিয়ে পড়া অনেক দেশে এ নিয়ে বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় মোটামোটি। কিন্তু ব্যতিক্রম ও অতি হৈ হুল্লোড় এবং বাড়াবাড়ি ধরনের পাগলামী বোধ হয় আমাদের বাংলাদেশেই বেশী হচ্ছে।
বিশ্বকাপের ফুটবল খেলার আসর বসার পনের বিশ দিন আগে থেকেই আমাদের দেশে যে পাগলামীর চর্চা অনুশিলীত হচ্ছে তাকে অতি বাড়াবাড়িই বলা যায়।
ফুটবল বিশ্বের আলোচিত দু’টি তারকা দেশ ব্রাজিল এবং আজের্ন্টিনা। এ দু’টি দেশ নিয়েই যতসব পাগলামী আর গাজাখুরী কাজ কারবার চলছে আমাদের দেশে। যত্রতত্র এ দু’টি দেশের পতাকা তৈরী করে, রঙ্গ বেরঙের বাহারী ব্যানার ফেস্টুন টাংগিয়ে তাদের প্রতি সমর্থন জানানোর যে প্রথা বেশ কয়েক দফা আগে থেকে চলে আসা নিয়মগুলো এবার মাত্রাতিরিক্ত তোগলকী আকার ধারণ করেছে। শহর বন্দর আর নগর ছাড়িয়ে এবার গ্রামে গঞ্জে পর্যন্ত বহুতল বিল্ডিংয়ের রং করা হয়েছে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকার আদলে।
কোন এক জাগায় দেখা গেল আর্জেন্টিনার সাপোর্টার এক মুদি দোকানদার তার গায়ের জামা কাপড় থেকে শুরু করে দোকানের ক্যাশ বাক্স পর্যন্ত সে দেশের পতাকা এবং খেলোয়াড়দের ছবি সম্বলিত ডিজিটাল স্টীকার দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে আরেকজন ব্রাজিল সমর্থক তার গোয়ালের বলদটাকে পতাকার আদলে ইউনিফর্ম পড়িয়ে হাল চাষ করতে নাঙ্গল নিয়ে মাঠে নেমেছে।
এসব উম্মাদনার প্রকাশ করতে গিয়ে কারো কারো ক্ষেত্রে নেমে আসছে জীবন প্রদীপ নিয়ে যাওয়ার মতো হৃদয় বিদারক ঘটনা। গত সপ্তাহে ফেইসবুকে একটি ছবি দেখে খুবই মর্মাহত হলাম। সম্ভবত রাজশাহী অঞ্চলেই ঘটনাটি ঘটেছে। বৈদ্যুতিক খুটির আগাতে আর্জেন্টিনার পতাকা উড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পর্শ হয়ে মুহুর্তেই বৈদ্যুুতিক আগুনে জ্বলে পুড়ে কাবাব বনে গেল একজন ফুটবলপ্রেমী আর্জেন্টিনার সমর্থক।
নব্বই দশকের শুরুতে আর্জেন্টিনার বিশ্ববিখ্যাত ফুটবল তারকা ম্যারাডোনার খেলা দেখার সময় বাংলাদেশের অনেক দর্শক অতি জোশের ঠেলায় শখের রঙ্গিন টিভি ভেঙ্গে ফেলার কাহিনী পত্রিকার পাতায় যেমন পড়েছি তেমনি নিজ চোখেও একবার এরকম বিরল দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। অথচ নিজে যে দেশে জন্ম গ্রহণ করলাম, নিজে যে দেশের আলো বাতাসের ঘ্রাণ নিয়ে বড় হলাম সে দেশের মান মর্যাদাকে উর্ধ্বে তুলে ধরার অনুভুতি একদম জাগলো না? অন্য দেশের বীরত্ব নিয়ে উম্মাদনায় মশগুল থাকার মধ্যে গোলামীর চরিত্রই যে প্রকাশ পাচ্ছে সেই বোধটুকুও বুঝার বিবেগ লোভ পেয়েছে। ষোল কোটি মানুষের বাংলাদেশ! অথচ এখনো পর্যন্ত আমরা ২২ জন বিশ্ব মানের ফুটবল প্লেয়ার তৈরী করতে পারলাম না! এমন নির্লজ্জ্ব জাতীয় চেতনাবোধহীন জাতি আমরা তা যেন একটু ভাবনারও সুযোগ নেই! অন্যেরা খেয়েই নাচছে আর আমরা ছাগলের তৃতীয় নাম্বার বাচ্চার মত না খেয়েই লাফাচ্ছি!
নিজের মাতৃভূমির মর্যাদাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার, নিজেদের বীরত্বগাথা সৌর্য-বীর্য দুনিয়াবাসীকে জানানোর জন্য আমাদের মধ্যে যেন যাবতীয় বিবেগবোধ সব হার মেনেছে তথাকথিত শাহবাগী চ্যাতনাবাজ আর মুক্তিযোদ্ধের ষোল এজেন্সীর একমাত্র ডিলারদের গোলামী চরিত্রের শাড়ীর আচঁলে।
বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশ যে পৃথিবীর বুকে আছে তা জানে কিনা সন্দেহ রয়েছে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় এবং জনগণের মধ্যে। জনশ্রুতি রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত ফুটবল তারকা দিয়েগো ম্যারাডোনাকে যখন বলা হলো বাংলাদেশে তার প্রচুর ভক্ত রয়েছে। তখন সে বিস্ময় প্রকাশ করে জানতে চাইলো এ নামে পৃথিবীতে কোন দেশ আছে কিনা? সারা দেশে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের জাতীয় পতাকা নিয়ে যেভাবে উম্মাদনা শুরু করেছে গোটা দেশময় তা ভেবে খুবই লজ্জা পাই। অন্য দেশের ফুটবল টিম নিয়ে এতো পাগলামী দুনিয়ার আর কোন জাতি করে কিনা আমার জানা নেই।
আজ আমাদের নবীন প্রজন্মকে জাতির অতীতের গৌবময় ইতিহাস জানতে দেয়া হচ্ছে না। যার ফলে তৈরী হচ্ছে অন্য জাতির আলোচিত সাফল্যগাথা ব্যাপারগুলোতে নিজেরা ন্যাংটো হয়ে নাচানাছি করার এক বিকৃত রুচির বিভ্রান্ত প্রজন্ম।
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৩ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কবে যে এইগুলার স্বঠিক বুজ-জ্ঞান হইব???
ধন্যবাদ সু্ন্দর মন্তব্য রেখে যাওয়ার জন্য।
আজকে আপনার পোস্টকৃত ধারাবাহিকটি পড়ে একান্নব্বই সালের সেই ভয়াল রাত্রের অনেক করুণ স্মৃতির কথা মনে পড়েছিল। মনের মত একটি মন্তব্য করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ একটু অফিসিয়াল ব্যস্ততার কারণে মন্তব্যটাই করতে পারলাম না।
বাদশা ভাই জিন্দাবাদ
হগলে মিলে দেশ করি আবাদ
ফুটবলোফেলিয়ায় আক্রান্ত জাতি
ধরছে বাজি, হচ্ছে অপচয়
বিবেগ হয়ে গেলো বরবাদ।
আন্নেরে উঞ্চ ধন্যবাদ দয়া করে, মেহেরবানী করে এক্কান মন্তব্য রেখে উৎসাহ দেওনের লিগ্যা।
আমরা খেলা পাগল জাতি। সকলেই কোনো না কোনো দলের সমর্থক। বিনোদনের কারণে এটা হতেই পারে। কিন্তু তাই বলে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটা স্পষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত। যেহেতু এর সাথে আমার সত্ত্বার প্রশ্ন জড়িত। আমি অন্তত এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখাতে চাই।
নিচের লিংক এর লেখা পড়তে পারেন্....
আপনার মন্তব্যের সাথে আমি সহমত পোষণ করছি।
এগুলো দেখে জাতীয় কবির সেই কবিতা মনে পড়ে-
থাকবো না আর কৈলাশপুরে
আই অ্যাম ক্যালকাটা গোয়িং
যতসব ইংলিশ ফ্যাশন
আহা মরি কি লাইটনিং........
হাচা কথা কইছেন মশাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মটা হয়ে উঠছে বোধ-বুদ্ধিতে সিরিয়াস মাগার বিবেগহীন এক দরখ্ত।
খৌব সুরাত মুন্তব্যের জন্য আন্নেরে অন্তরের গভীর থেইক্যা ধন্যবাদ। সাথে মামানীর মেয়েডারেও আমার পক্ষ থেকে একটি সালাম ও শুভেচ্ছা কইয়া দিয়েন হুজুর।
আপনাকে ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
এবার বলেন দেহি গতকাল সারাদিন ধান্ধা কেমন অইলো?
মন্তব্য করতে লগইন করুন