খেলা দুই নেত্রীর হাতে নেইঃ বহিঃশক্তির জটিল খেলায় অনিশ্চিত গন্তব্যে জাতি

লিখেছেন লিখেছেন গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি ২৪ অক্টোবর, ২০১৩, ১০:৪২:০৫ সকাল



বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ শেখ হাসিনা বা বেগম খালেদা জিয়ার হাতছাড়া হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে টেলিভিশনের পর্দায় গিয়ে যত বড় বড় বয়ানই দিন না কেন, রাজনীতির কোন অংকই এখন আর এই দুই নেত্রীর সমাধানের আওতায় নেই। বাংলাদেশের বিদেশী মিশনগুলোর এক একদিনের পরস্পর বিরোধী বক্তব্যগুলো পর্যালোচনা করলেই এর সারবর্তা বুঝতে বেগ পেতে হয় না। বর্তমানে বিবদমান পরিস্থিতিতে বহিঃশক্তিগুলোর বাংলাদেশ নিয়ে খেলাধুলা খুবই জোরে শোরে শুরু হয়েছে। স্ট্রাটেজিক কারনেই বাংলাদেশের অবস্থান সবাইকে মোহগ্রস্থ করে রেখেছে । প্রতিরক্ষার কারনে ভারতের জন্য বাংলাদেশকে করায়ত্ত রাখা যেমন জরুরী, এই এলাকায় নিজের উপস্থিতিও মার্কিনীদের মতে তাদের জন্য সমান জরুরী। চীন ও তার মিত্রদের জন্য এটি ঠিক তেমনি। তাই প্রথমবারের মতো চীন সরাসরি এখন মাঠে খেলছে।

শেখ হাসিনা তার সরকারের তরফ থেকে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবনা দিয়ে উত্তরের অপেক্ষা না করেই বিরোধী দলগুলোকে অবরুদ্ধ করে তার প্রস্তাব মানার জন্য আলোচনার টেবিলে আনার চেষ্টা করার পর পর বিরোধী নেতারা একের পর এক তাদের নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গণদাবীর সাথে থেকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অটল থেকে পাল্টা প্রস্তাব দেন। কিন্তু অতিউৎসাহী ও নির্দিষ্ট ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে মন্ত্রী হওয়াদের হুঙ্কারে শেখ হাসিনাও পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পারছেন না। এক্তিকে শেখ হাসিনা আলোচনার দাওয়াত দিচ্ছেন অন্যদিকে মখা আলমগীর পুলিশ পাঠিয়ে বেগম জিয়ার গাড়ীতে হামলা করিয়ে নাস্তানাবুদ করছেন। ঠিক তেমনি বেগম জিয়াও তার মাঠের নেতাদের মাঠে আনতে পারছেন না; তাই আক্ষেপ করেই বললেন কেউ না থাকলেও তিনি একাই মাঠে থাকবেন।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুতফুজ্জামান বাবর একাধারে ক্রসফায়ার দিয়ে আগেই সাফ করে দেন বিএনপির রাজপথের কর্মীদের। আজকে যারা প্রতিরোধ গড়তে পারতো তাদের পরপারে পাথানোর জন্যই সেদিন মাফিয়াদের প্রতিনিধি বাবরকে সরকারে ঢুকানো হয়। সেদিন অনেকেই সেটা বোঝেনি, আজো বোঝেন কিনা সন্দেহ। বাবরকে এখন কারাগারে রাখা হয়েছে পুনরায় বিএনপি যদি কখনো ক্ষমতায় আসে সেদিন পরীক্ষিত নেতা হিসেবে আবারো সরকারে নিয়ে বাকিদের অংকুরেই বিনাশ করার কাজটি করতে। এছাড়া আরও অনেক পরীক্ষিত ছাত্রনেতাদের দল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল, যারা আজকে হতে পারতো সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের হাতিয়ার। বিএনপিতে যারা আজ শত কোটি টাকার মালিক, আওয়ামী ব্যবসায়ীদের সাথে মিলে শেয়ার মার্কেট খেয়েছে, আন্দোলন দেখলেই যারা সম্পদের মায়ায় বাহানা দিয়ে পালিয়ে যায়, তাদের উপর ভরসা করে করে নিজেদের সব কিছুতে শক্তিহীন হিসেবে উপস্থাপন করছে। যদিও কেউ কেউ বিএনপির এই অবস্থানকে মেরুদণ্ডহীন নয় শান্তিকামি হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করছেন।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু রয়েছে জনগোষ্ঠীর ৯% কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই সরকারে ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে নিয়োগ দিয়েছে ৩২% ভারতের আদেশে ও প্রেসক্রিপশনে। বিচার বিভাগ পুরোটাই নিজেদের বানিয়ে দেশের ইতিহাস পর্যন্ত ধংস করে দিয়েছে ভারতের ইঙ্গিতে। নতুন প্রজন্মকে নৈতিক মূল্যবোধের তলানিতে নিতে নাস্তিক্যবাদের চূড়ান্ত করে দিয়েছে। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট এখন প্রাতিস্থানিকীকরন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে শুধুমাত্র নাগরিক খুনের ও নির্যাতনের সংস্থায় পরিনত করা হয়েছে। মিডিয়াগুলোকে করা হয়েছে মিথ্যার ডাস্টবিন। জাতির শেষ আশ্রয়স্থল প্রতিরক্ষা লাইনকে ধংস করে দেয়া হয়েছে। সবই করা হয়েছে ভারতের প্রেসক্রিপশনে।

এগুলো করা হয়েছে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে যেন দেশ ও জাতি কোন রাজনৈতিক দলের ছায়ায় না থাকতে পারে। সত্য বললে আজ দেশকে ঠিক করার ক্ষমতা যেমন শেখ হাসিনার নেই তেমনি নেই বেগম জিয়ার। আলাউদ্দিনের চেরাগ না হলে এটি ঠিক করা অসম্ভব। যারা বলেন সম্ভব তারা মতলববাজ।

ভারত বাংলাদেশকে চায় নিজের পন্যের বাজার ও চীনের বিরুদ্ধে সহযোগী হিসেবে, যে লক্ষ্য নিয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা দিয়েছে, আমাদের সেনাবাহিনীকে তাদের সহায়ক বাহিনী বানাতে সব কিছুই করছে। আজ ট্রানজিটসহ সব কিছুতে তাদের অবস্থান পরিস্কার। আমাদের গোয়েন্দাদের আঁচলের তলে থেকে বাংলাদেশে বহু ”র” এর অফিস পরিচালিত হয়। ২০০ এরও অধিক রুগ্ন শিল্পকে আমাদের ব্যাংক সহায়তা না করে ভারতীয়দের দ্বারা কিনে নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

চীন নিজেদের নিরাপদ রাখতে আরও বহু পূর্ব থেকেই আমাদের প্রতিরক্ষা লাইনকে শক্তিশালী করেছে সব কিছু দিয়ে। ভারতের অরুনাচল প্রদেশ চীনের অংশ দাবী করে আসছে তারা বহু পূর্ব থেকেই। সেই প্রদেশ পুনরুদ্ধার এবং বাংলাদেশকে ভারত যেন ব্যবহার করতে না পারে সে চেষ্টা তাদের বরাবরই। আমাদের নাগরিকেরাও চীনের প্রতি বন্ধু ভাবাপন্ন। এখন চীন গভীর সমুদ্র বন্দর চায়, বিনিময়ে জোট পদ্মা সেতু দরকার করে দেবে। চীনারা ভারতের মত কমিটমেন্টে শঠতা করে না বলেই প্রচারিত।

বিশ্বের এই অঞ্চলে মার্কিনী ন্যাটো জোটের একটি ঘাঁটির বড়ই প্রয়োজন। এই রাজনৈতিক সঙ্কটে তারা নিজেদের লোকজন ঢুকিয়ে সেই কাজটি ঠিক করে নেয়ার কাজটি করছে।

এতো খেলার ভেতরে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা জেটিই খেলার চেষ্টা করছেন তা শুধু লোক দেখানো। মূল খেলা অন্যত্র। কার সাথে ডিল ঠিক হবে কি ভাবে সেই মোতাবেক প্রতিদান আসবে। যদিও বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ৩০-৬০ পর্যন্ত আসন পাবে, আর বিএনপি পাবে ২০০ বা তার অধিক। কিন্তু বিএনপির হাতেও খেলা ার নেই। শেখ হাসিনার কিছু করার নেই প্রেসক্রিপশনের বাইরে এমনকি একটি কদম দেয়ারও। ঢাকায় ইতিপূর্বে ভারতীয় ‘র’এর যে সকল ঝানু ঝানু অফিসার কাজ করেছিলেন সেই ”মাথুর” বা ”শ্রিবাস্তব” এখন লন্ডনে কি করছেন কাদের সাথে যোগাযোগ করছেন সেটির উপর আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ লেখা হবে। এমনকি দেশে বেগম জিয়ার নিরাপত্তা পুরোটাই বিঘ্নিত হয়ে অঘটন ঘটানোর পরিকল্পনাও হচ্ছে বলে শোনা যায়।

জাতির জন্য যেটি ভয়াবহ তা হল আগামী ৩ মাসের মধ্যে আমাদের রেমিটেন্স কমে যাওয়ার সম্ভাবনা ৩ হাজার কোটি টাকা। সেই সাথে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাবে আরও ৭ হাজার কোটি টাকা। এই ১০ হাজার কোটি টাকার ধাক্কা জাতীয় অর্থনীতি সামলাতে পারবে কিনা সন্দেহ। এই ধাক্কা আরও কিছুদিন চলমান হলে দেশের অর্থনীতি পুরোটাই ভেঙ্গে পড়বে। সেই সাথে ইসলাম পন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে সন্ত্রাসের দিকে ঝুকে পড়তে বাধ্যকরার মতো অবস্থার সৃষ্টি করা হবে বলেও জানা যায়। এগুলো সফল হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ চিত্রটি এক লহমায় দেখে নেয়া যায় চোখ বুঝেই। সশস্ত্র বাহিনীর ভারতপন্থিদের দ্বারা কোন সমাধান করার চেষ্টা হলে প্রাথমিকভাবে তা সফল হলেও বহিঃশক্তির মদদেই পর পর পাল্টা কিছু অঘটন জাতিকে দেখতে হতে পারে। তবে বিচার বিভাগের অনেকেই তেমন অবস্থায় গা ঢাকা দেবেন বলেই জানা গেছে।

তবে বেগম জিয়া নিজের নিরাপত্তা ইস্যুটিকে প্রাধান্য না দিয়ে রাজপথে নেমে এলে একসময় নির্যাতিত নাগরিকদের ঢল নামবে বলেই ধারনা করা হচ্ছে, যদিও তিনি নামার সময়ে নেতাদের অনেককেই পাবেন না। তবে জনতার সম্পৃক্ততা হলে ইতিহাসের চাকা ঘুরেও যেতে পারে। ভেস্তে যেতে পারে আপাতঃ ভারতীয় পরিকল্পনা।

এই লেখাটি অন্য একটি অন লাইন পত্রিকা থেকে নেয়া হয়েছে। লিখেছেন শেখ মহিউদ্দীন আহমেদ।

এখানে লেখাটির লিংক দেয়া হল।

বিষয়: বিবিধ

১৯২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File