পুলিশ প্রশাসনে বদলি ও ছুটির হিড়িকঃ কেমন হতে পারে আগামী ২৫ তারিখের পর দেশের পুলিশ প্রশাসনের আচারণ?

লিখেছেন লিখেছেন গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি ০৮ অক্টোবর, ২০১৩, ০৫:১৪:২০ বিকাল



সরকারের শেষ সময়ে ‘সুবিধাভোগী’ পুলিশ কর্মকর্তারা বদলি এবং ছুটির জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যেসব কর্মকর্তা পুলিশ প্রশাসনে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তারা এখন বদলি নিয়ে যেতে চাইছেন অন্যখানে অথবা যেতে চাইছেন দীর্ঘমেয়াদী ছুটিতে। এমন সুবিধাভোগী পুলিশ কর্মকর্তাদের ছুটির দীর্ঘতালিকা পড়েছে পুলিশ সদর দফতরে। অন্যদিকে এতদিন ‘লোভনীয়’ পদগুলোতে পোস্টিং নিতে পুলিশ কর্মকর্তারা দৌড়ঝাঁপ করলেও এখন দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। গাঁ বাঁচানোর জন্য অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব থেকেও স্বেচ্ছায় অব্যাহতি চাচ্ছেন। অনেকেই পদায়ন চাইছেন সিআইডি, এসবিসহ পুলিশ বিভাগের নতুন ইউনিটগুলোতে। ইতোমধ্যে অনেকেই রাজধানী ছেড়েছেন। আর যারা এখনও রাজধানীতে আছেন তারা যেতে চাইছেন জেলা শহরের কম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে। সুবিধাভোগী পুলিশ কর্মকর্তাদের এমন আচরণে খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি দাপুটে পুলিশ কর্মকর্তারা দ্বৈতনাগরিকত্ব রক্ষা কিংবা বিদেশে উচ্চতর শিক্ষার অজুহাতে পুলিশ সদর দফতরে ছুটির আবেদন করছেন। ছুটির আবেদনের তালিকায় আছেন ডিআইজি থেকে শুরু করে এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তারাও। সম্প্রতি ছুটির আবেদনের ‘হিড়িক’ পড়ার বিষয়টি নিয়ে খোদ পুলিশ বিভাগও বিভ্রান্ত। এমন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে ঘটনার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে তাদের ছুটির আবেদন প্রত্যাহারের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, পুলিশে নীতি নির্ধারকদের অন্যতম সদর দফতরে কর্মরত এআইজি (প্লানিং অ্যান্ড রিসার্স) প্রলয় কুমার জোয়ার্দার উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার কথা বলে দুই বছরের ছুটি নিয়েছেন। তার ছুটি চলতি মাসের ১৫ তারিখ কার্যকর হওয়ার কথা। গোয়েন্দা পুলিশের এক সময়ের দাপুটে কর্মকর্তা (বর্তমানে ওএসডি) ডিসি মোল্লা নজরুল ইসলাম, উপ-কমিশনার বিপ্লব সরকার, আবদুল্লাহ আরেফ, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মেহেদি হাসান ছুটির দরখাস্ত করেছেন। বহুল আলোচিত লালবাগ জোনের পুলিশের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদও রয়েছেন ছুটির আবেদনকারীদের তালিকায়। দ্বৈতনাগরিক হারুন অর রশীদ কারণ হিসেবে তার স্ত্রী-সন্তানের কাছে আমেরিকায় যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। ছুটিতে যেতে চান পুলিশ সদর দফতরে কর্মরত একজন ডিআইজি এবং রাজধানীতে কর্মরত আরও তিন উপ-পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তা।

ইতোমধ্যেই ছুটি নিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোয়েন্দা পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার মনিরুল ইসলাম। লন্ডনের নার্দামব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল পড়ার জন্য অর্জিত ছুটির ১১ মাস মঞ্জুরও হয় তার। তবে শেষ মুহূর্তে নানা সমালোচনার মুখে তিনি নিজেই ছুটি বাতিলের আবেদন করেছেন। আবেদনটি পুলিশ সদর দফতর হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা হয়েছে। এছাড়া সাংবাদিক পেটানো কোতয়ালি থানার বহুল আলোচিত সাবেক ওসি সালাউদ্দিন, কদমতলী থানার ওসি মাজহার, ওসি মনিরুজ্জামানও ছুটির জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছেন।

তাছাড়া রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সাবেক আর-১ আকবর ইতোমধ্যে বদলি নিয়ে সাভার থানায় অপারেশন অফিসার হিসেবে যোগদান করেছেন। অভিযোগ আছে, আকবরের দেশের বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ার পরও তিনি খুলনার টুটপাড়া ঠিকানা ব্যবহার করে চাকরি নিয়েছেন। পুলিশের এই কর্মকর্তা রাজধানীতে থাকাকালীন চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকারের শেষ সময়ে কর্মকর্তাদের দীর্ঘমেয়াদী ছুটির আবেদনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে পুলিশ সদর দফতর। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় সদর দফতর বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। এর ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডেকে তিরস্কার করে। অন্যদিকে, সরকারের শেষ সময়ে পুলিশের ‘লোভনীয়’ পদগুলো ফাঁকা হতে শুরু করেছে। কারণ সুবিধাভোগীরা গাঢাকা দিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যেই অনেক কর্মকর্তা সিআইডি, এসবি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, পিআইবি, এসপিবিএনসহ নবগঠিত বিভিন্ন ইউনিটে বদলি হয়েছেন। সুবিধাভোগী এসব কর্মকর্তার চাপে ইতোমধ্যেই পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি ও অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এখন কানায়-কানায় পূর্ণ।

ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ দেশের মেট্রোপলিটন পুলিশের থানাগুলোরও একই দশা। মেট্রোপলিটন থানাগুলোতে (গুরুত্বপূর্ণ) যোগদানের জন্য এতদিন পুলিশ কর্মকর্তাদের নানামুখী দৌঁড়ঝাপ থাকলেও এখন চিত্র উল্টো। পারিবারিক এবং শারীরিক অসুবিধাসহ নানা কারণ দেখিয়ে এসব কর্মকর্তা কমগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বদলির আবেদন করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হলে তাদের সমস্যা হতে পারে এমন ধারণার ভিত্তিতেই অনেকেই আখের গোছাতে ব্যস্ত। আবার অনেকই নির্বাচনী সহিংসতা এড়াতে বদলি হতে চাচ্ছেন।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোয়েন্দা পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পড়াশুনোর জন্য দেশের বাইরে যেতে চাইছিলেন। কিন্তু বিষয়টি অনেকেই ভিন্ন চোখে দেখছেন। তাই তিনি নিজেই ছুটি বাতিলের আবেদন করেছেন।’ তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি শহিদুল হক বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীতে এসপি থেকে তদুর্ধ্ব প্রায় দুই হাজার কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা নিজেদের পেশাগত সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করে থাকেন। এছাড়া মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তারা এমএস, এমফিল, পিএইচডি, ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল ডিগ্রি অর্জনের জন্য সরকারি বিধি মোতাবেক ছুটি নিয়ে থাকেন। এটি চলামান প্রক্রিয়া। তাই এ নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই।’

এই নিউজটির তথ্যসূত্রঃ এখানে লিংক দেয়া হল।

বিষয়: বিবিধ

২৬৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File