অবৈধ কারাবাস (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন অবুঝ ছেলে ৩১ অক্টোবর, ২০১৩, ১১:২৮:৪৯ রাত
মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে শিনুর। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে উঠবে কিনা। সামনে পরীক্ষা প্রাইভেট মিস দিতেও ইচ্ছে করছেনা। দেশের অবস্থাও খুব খারাপ। রাজনৈতিক দলগুলোর মারামারি,হরতাল হাবিজাবির কারনে পরিস্থিতি একবারে নরকতুল্য হয়ে আছে। এরমধ্যেই প্রাইভেট চালিয়ে যাচ্ছে সার। কোনো উপায় নেই সামনে যে পরীক্ষা।
আবার একবার ভাবলো শিনু উঠবে কি উঠবেনা। নাহ কষ্ট করে হলেও যাই,অন্তত কিছু নোট আনা যাবে,ভাবলো ও। অনেক মানসিক জোড় খাটিয়ে উঠে বসলো। বিছানা থেকে নামতে যাবে এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজ। শিনুর রুমমেট রাশেদ ভাই ঢুকেছে রুমে। উনার দিকে তাকিয়ে তো পুরাই আছাড় খেলো ও। একি অবস্থা রাশেদ ভাই...!! হাতপায়ে এতো রক্ত কেন..??! চেহারা দেখে মনে হচ্ছে জংলীরা তাড়া করেছিলো..!
মৃদু ভারাক্রান্ত একটা হাসি দিয়ে নিজের বেডে বসে পড়লেন রাশেদ ভাই।
মাথাব্যাথা ভুলে গেলো শিনু। জলদী উঠে গিয়ে ডেটলের বোতল নিয়ে আসলো। কাটাছেড়াগুলো মারাত্মক,অনেকগুলো থেকেই রক্ত গড়াচ্ছে। সব গুলো ডেটল দিয়ে মুছে দিয়ে তারপর রাশেদ ভাইয়ের সামনে বসলো প্রশ্ন করতে।
কি হয়েছিলো,ঘটনা কি...অনেক জিজ্ঞাসার পর বললেন তিনি।
শুরু থেকেই শুরু করি। রাশেদ ভাই অনেক মেধাবী একজন ছাত্র। পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালোনা। অনেক কষ্টে পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছেন। শিনুর সিনিয়র তাই শিনু অনেক সম্মান করে তাকে। অবশ্য সম্মান করার আরো অনেক কারন আছে। উনার মতো পরিশ্রমী,সচ্চরিত্র ছেলে ও খুব কমই দেখেছে। শুনেছিলো কি যেন একটা দলের সদস্যও তিনি। রাজনীতি নিয়ে তেমন একটা ইন্টারেস্ট নেই তাই কোনোদিন জিজ্ঞেস করেনি। আজকে এই ঘটনার পর শুনার পর জানলো উনি শিবির করেন। দলীয় মিছিলে অংশগ্রহন করেছিলেন সেখানে নাকি বিপক্ষ দলের লোকজন হামলা চালিয়েছিলো,অনেক কষ্টে সেখান থেকে রুমে ফিরেছেন।
বিষয়টা শুনে অনেক খারাপ লাগলো। যাহোক রেডি হয়ে প্রাইভেটের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো শিনু। প্রাইভেট শেষে রুমে ফিরে রুমের অবস্থা দেখে ওর তো চোখ কপাল ছেড়ে শূন্য উঠে যাওয়ার দশা। একি অবস্থা..! রুমের উপর দিয়ে যেন হ্যারিকেন বয়ে গেছে...!
দরজা হা করে খোলা,পুরা রুম বিছানাসহ সবকিছু উল্টাপাল্টা। ওর ছোট্ট অ্যাকুরিয়ামটা নিচে পড়ে চুরমার হয়ে আছে। মাছটা মরেও গেছে। কিছুই বুঝে উঠতে পারলোনা কিছুক্ষন। সম্বিত ফিরে এলে আশেপাশে খবর নিয়ে যা জানতে পারলো তাতে হার্টের গতি আরো তিনগুন বেড়ে গেল ওর। ও যাওয়ার পর পরই পুলিশ এসে নাকি রাশেদ ভাইকে ধরে নিয়ে গেছে। শিনুকেও খুজে ছিলো কিন্তু শিনু না থাকায় বেচে গেছে।
বিধ্বস্ত রুমের মধ্যে দাড়িয়ে কিছুক্ষন ভাবলো শিনু এখন কি করবে। সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো বাড়ি চলে যাবে,এখানে থাকা মোটেই নিরাপদ নয়।
ব্যাগট্যাগ গুছিয়ে স্টেশনে চলে আসলো শিনু। একটা বাসের টিকিটও পেয়ে গেল। ঠিকঠাক মতো বাস আসলো এবং বাড়ির দিকে রওনাও হয়ে গেল শিনু।
অনেকখন পর, ঘুমাচ্ছিলো শিনু। মনে হলো কোথায় যেন বাস থেমেছে। চোখ খুলে দেখলো বাসের গেটে সুপারভাইজারকে কে যেন ধমকাচ্ছে। অন্ধকারে ঠিক মতো দেখতেও পেলোনা ও।
একটু পর ভারি বুটের শব্দ বাসের ভিতরে উঠে আসতে লাগলো। লাইট গুলোও জ্বলে উঠলো। অবাক চোখে শিনু দেখলো দুইজন পুলিশ। এগিয়ে এসে ওকে বললো আপনাকে অ্যারেস্ট করা হলো ,চলুন। আকস্মিকভাবে এসব ঘটে যাওয়াই এখনো হতবাক হয়েই আছে শিনু।
দুইদিন শিনুর কোনো খোজখবর পেলোনা ওর পরিবার। তৃতীয় দিন থানা থেকে ফোন করে শিনুর পরিবারকে জানানো হলো আপনাদের ছেলে গ্রেফতার এবং তার রুমে বিষ্ফোরক দ্রব্য পাওয়া যাওয়ায় তাকে আটক করা হয়েছে। বিনা মেঘে বিজলি পড়লো বাড়িতে। তোলপাড় শুরু হয়ে গেল সবার মাঝে।
এদিকে থানায় বসে শিনু ভাবছে,ভয়ে কোনোদিন পটকাও ফুটাইনি আমি আর আমার উপর বিষ্ফোরকের মামলা.....!!
বাবা অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু তাকে বের করতে পারলোনা। পরীক্ষা মিস করলো শিনু,দশদিনের রিমান্ডেও নেওয়া হলো ওকে।
রিমান্ডে ও চিৎকার করে শিকার করলো,আমি বোমা বানাতে পারি....আমি ককটেল বানাতে পারি...আমি এগুলো বিষ্ফোরন করতেও পারি......আমিই সেদিন বোম মেরেছিলাম......
বিষয়: বিবিধ
১৪৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন